প্রিয় রাগান্বিতা পর্ব-১১

0
547

#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-১১
________________
পাত্রপক্ষের সামনে শাড়ি গহনাগাটি পড়ে বসে আছে রাগান্বিতা। চুপচাপ আর লাজুক লাজুক ভাবটা মুখে থাকলেও ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড রকমের রেগে আছে রাগান্বিতা। তবে সে বুঝতে পেরেছে কালকে রাগের চোটে করা পাগলামিটা আর বাবাকে প্রেমপত্রখানা দেখানোর জন্যই আজ এমনটা হয়েছে। রাগান্বিতা চুপটি করে বসে আছে, তাকে দেখতে আসার মতো তেমন কিছু নেই সবাই জানে তালুকদার বাড়ির দুই রূপবতী কন্যার কথা। তারা তো এসেছে সোজা পাকাকথা বলার জন্য খুব শীঘ্রই বিয়ে পড়িয়ে তারা তাদের বউমাকে ঘরে উঠাতে চাইছেন। পাত্রের নাম মাহাদ। পড়াশুনায় বিএ পাস বর্তমানে বাবার বিশাল ব্যবসা সামলায়। দেখতে শুনতে মোটামুটি। মাহাদের বাবা কাদের ব্যাপারী টেবিলের ওপর থাকা মিষ্টির বাটি থেকে একটা মিষ্টি মুখে পুড়ে বললো,
“তালুকদার সাহেব তাইলে সামনের একখান ভালো দিন দেইখাই রাগান্বিতা আর আমার পোলা মাহাদের চাইরহাত এক কইরা দেই।”

রাগান্বিতার বাবা বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বললেন,
“ঠিক আছে।”

রাগান্বিতার বাবার কথা শুনে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ উচ্চারণ করলো মাহাদের বাবা। পকেট থেকে একটা সুন্দর সোনার আংটি বের করে পড়িয়ে দিল রাগান্বিতার হাতে। রাগান্বিতা নীরবে হজম করে নিলো পুরো বিষয়টা।
—–

প্রকৃতিতে বিকেলের লগ্ন চলছিল। বর্ষণ হচ্ছিল সারাগ্রাম জুড়ে। রাগান্বিতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ বর্ষণের খানিক ফোঁটা ফোঁটা এসে লাগছে তার মুখে শরীরও ভিজাচ্ছে অল্পস্বল্প। রাগান্বিতার মন ভালো নেই। তার বিয়ে হতে চলেছে সাতদিনের মধ্যে এত দ্রুত সবটা হয়ে যাবে এ যেন কল্পনাও করতে পারে নি রাগান্বিতা। রাগান্বিতার মন খারাপটা ঠিক কোন জায়গায় তাই বুঝচ্ছে না বাবাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে এটার জন্য দুঃখ হচ্ছে নাকি অন্যকোনো কারণ এটাই ধরতে পারছে না সে। তবে তার জানামতে পরিবারকে ছেড়ে যেতে হবে এই জন্য খারাপ লাগতে পারে এছাড়া আর তো কোনো কারণ দেখছে না। সাইকেলের বেল বাজলো রাগান্বিতা চমকে উঠলো তবে ভাবলো না চরম রাগ হচ্ছে। এই চিঠির জন্যই আজ তার এভাবে বিয়ে হতে চলেছে। রাগান্বিতার ভাবনার মাঝেই ওর মাথায় হাত বুলালো দাদিমা। রাগান্বিতা পাশ ফিরে তাকালো বললো,
“আচ্ছা দাদিমা বাবা কি এভাবে হুট করে আমার বিয়ে ঠিক করে কাজটা ঠিক করলো। আমার তো সামনে এসএসসি এক্সাম ছিল বাবার তো স্বপ্ন ছিল অনেক আমায় নিয়ে। তাহলে এমনটা কেন করলো?”

দাদিমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“ভয়ে!’

দাদিমার কথা শুনে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো রাগান্বিতা,
“ভয়ে! কিসের ভয়ে?”
“ঠিক ভয়ও কওন যাইবো না দুশ্চিন্তাও হইতে পারে।”

দাদিমার কথা শুনে আর একটু অবাক হলো রাগান্বিতা। বললো,
“আমায় একটু বুঝিয়ে বলবে কি নিয়ে দুশ্চিন্তা করছে বাবা?”
“মাইয়া মানুষদের বেশি স্বপ্ন দেখতে নাই। বিয়া কইরা স্বামী সংসার এসব নিয়াই থাকতে হয়। বিয়ার সময় বিয়া না করলে পরে ঝামেলা হয় তুমি বুঝবা না।”

রাগান্বিতা কি বলবে বুঝচ্ছে না। অনেকক্ষণ চুপ থেকে আচমকাই বলে উঠল,
“বুবু কিভাবে মারা গেল তুমি তা জানো?”

সঙ্গে সঙ্গে চোখে মুখে ভয়ের আতংক ফুটে উঠলো দাদিমার। দাদিমার রিয়েকশন দেখে আবারও বললো রাগান্বিতা,
“কি হলো দাদিমা বলো আমায় সেদিন সকালে বুবুর রুমে তুমি তো আগে গিয়েছিলে বুবু কি সত্যি আত্মহত্যা করেছিল নাকি,

রাগান্বিতা আরো কিছু বলবে এরই মাঝে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ধমকের স্বরে বললো রাগান্বিতার বাবা,
“রাগান্বিতা।”

বাবার চিৎকার শুনে রাগান্বিতা থমকে গেল এর আগে কখনোই তার বাবা তার সাথে এতটা উচ্চস্বরে কথা বলেনি। রাগান্বিতা তাকিয়ে রইলো তার বাবার মুখের দিকে। রাগান্বিতার বাবা এগিয়ে আসলেন কড়া কণ্ঠে বললেন,
“এক সপ্তাহ পর বিয়ে কে কি করলো কিভাবে মরলো সেটা নিয়ে না ভেবে তোমার আগামী জীবনটা কিভাবে হবে তা নিয়ে ভাবো। কুহুর বিষয়টা নিয়ে আমি আর কোনোদিন তোমার মুখে কিছু শুনতে চাই না।”
“কিন্তু বাবা,,

রাগান্বিতার বাবা হাত দেখিয়ে রাগান্বিতাকে থামিয়ে বললো,
“চুপ করো কোনো কিন্তু নেই এক সপ্তাহ পর তোমার বিয়ে তুমি সেই বিয়ে নিয়েই থাকবে। বিয়ের পর মাহাদ চাইলে তুমি পড়াশোনা করবে নয়তো করবে না এটাই আমার শেষ কথা।”

বাবার কথা শুনে অনেক বড় আঘাত পেল রাগান্বিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“ঠিক আছে তুমি যা বলবে তাই হবে।”

রাগান্বিতা চলে গেল। দাদিমা ছলছল দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ রাগান্বিতার বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে তিনিও চলে গেলেন। আর রাগান্বিতার বাবা আকাশ পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। কি যে শুরু হলো তার সংসারে?’
——-

চুংগা দিয়ে নিভে যাওয়া মাটির চুলায় ফুঁ দিচ্ছে ইমতিয়াজ। বাহিরে ঝিরিঝির করে অল্প বৃষ্টি পড়ছে। আগের চেয়ে রেশ অনেক কম। বর্ষার মৌসুমে খিচুড়ি খাওয়ার দারুণ স্বাদ। তাই ইমতিয়াজ খিচুড়ি রান্না করছে। ফুঁ দেওয়ার পর চুলা জ্বলতেই ইমতিয়াজ শুঁকনো ডাল দিলো চুলার মুখে সঙ্গে সঙ্গে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো আগুন। এমন সময় তার বাড়ি ছুটে আসলো মোকলেস হতভম্ব গলায় বললো,
“জানো ইমতিয়াজ ভাই কি হইছে?”

ইমতিয়াজ খিচুড়ি নাড়তে নাড়তে বললো,
“কি হয়েছে?”
“আইজগো রাগান্বিতা আফারে দেখবার আইছিল ওনার নাকি বিয়া হইবো কয়দিন পর।”

মোকলেসের কথা শুনে একটুও চমকালো না ইমতিয়াজ। উল্টো বললো,
“ভালো তো। সুন্দরী মেয়েদের বেশিদিন বাপের বাড়ি রাখতে নাই বিয়ে দিয়ে শশুর বাড়ি পাঠানো উচিত নাইলে কার নজর লেগে যায় বলা যায়।”
“তাই বইল্লা এতো হয়ালে বিয়া দিয়া দিবো।”
“ভালো ছেলে পেলে দিবো না। তা নাম কি ছেলের?”
“মাহাদ।”
“নিশ্চয়ই জমিদারের ছেলে?”
“হ।”
“ভালো। আচ্ছা শোন খিচুড়ি রান্না করছি তোর চেনাজানা যত ছেলেপেলে আছে নিয়া আয় আজ সবাই একসাথে খিচুড়ি খাবো।”

মোকলেস খুশি হলো। বললো,
“আচ্ছা ভাই।”

ইমতিয়াজ আর কিছু বললো না জোরে জোরে খিচুড়ি নাড়তে লাগলো। চোখ মুখের ভঙ্গি খুবই স্বাভাবিক তার।
——

পরেরদিন সকাল ৭টা,,
চুপিচুপি বাড়ি থেকে বেরিয়ে নদীর পাড়ে হাঁটতে গেল রাগান্বিতা। তার কিছু ভালো লাগে না, বার বার মনে হচ্ছে দাদিমা আর বাবা বুঝি তার থেকে কিছু লুকাচ্ছে। কিন্তু কেন কিছু লুকাচ্ছে। রাগান্বিতার হাঁটতে হাঁটতেই নজরে আসলো নদীর এক কোনায় নৌকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইমতিয়াজের দিকে তবে আজ আর লুঙ্গি ফতুয়া পড়ে নি। শহুরে পোশাক পড়েছে চোখে চশমা গায়ে পাতলা চাদর।রাগান্বিতার এই ছেলেটাকে বড্ড ভালো লাগে, কেন লাগে জানা নেই। ওই যে কথায় বলে না ‘নিষিদ্ধ জিনিসের উপরই মানুষের ঝোঁক বেশি’! রাগান্বিতা চুপচাপ চলে যাচ্ছিল হঠাৎই ইমতিয়াজ বলে উঠল,
“কথা না বলেই চলে যাচ্ছেন যে?”

রাগান্বিতার পা আঁটকে গেল। সে বুঝে না এই ছেলেটা তাকে না দেখেও তার উপস্থিতি টের পায় কি করে? রাগান্বিতা পিছন ঘুরলো। বললো,
“না বাড়িতে বলে আসি নি বাবা জানলে রাগ করবে।”
“ওহ আচ্ছা। শুনলাম বিয়ে নাকি ঠিক হয়ে গেছে।”
“হুম দাওয়াত রইলো আসবেন কিন্তু।”
“জি অবশ্যই সময় থাকলে আপনার বিয়ে খেয়েই আমি গ্রাম ছাড়বো মানে চলে যাবো।”

খানিকটা খারাপ লাগলো রাগান্বিতা। নিশ্চুপ স্বরে বললো,
“চলে যাবেন গ্রাম দেখা হয়ে গেছে?’
“হুম আর কত থাকবো ওদিকে শহরে আমার ব্যবসা লাটে উঠছে।”

ইমতিয়াজের কথা শুনে রাগান্বিতা হেঁসে ফেললো। বললো,
“তাইলে তো আপনায় দ্রুতই যেতে হয়।”
“হুম সপ্তাহ খানেকের মতো আছি তার মধ্যে আপনার বিয়েটা হলে খেতে পারবো নয়তো আমায় যেতে হবে।”

ইমতিয়াজের কথা শুনে রাগান্বিতার হাসি থেমে গেল। গম্ভীর এক আওয়াজে বললো,
“চিন্তা নেই সপ্তাহের মধ্যেই হয়ে যাবে সেটা আপনি খেয়েই যেতে পারবেন।”
“ওহ আচ্ছা তাইলে তো দারুণই খবর।”
“নৌকা নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?”
“কোথাও যাচ্ছি না এখানেই দাঁড়িয়ে আছি চুপচাপ।”
“ওহ। আচ্ছা যাই এখন বাবা জেনে গেলে সমস্যা হবে।”
“ঠিক আছে যান।”

রাগান্বিতা আর দাঁড়ালো না দ্রুত চলে আসতে নিলো নদীর পাড় থেকে। হঠাৎই ইমতিয়াজ ডেকে উঠলো। মধুর কণ্ঠে শুধালো,
“রাগান্বিতা শুনছেন একটা কথা ছিল?”

#চলবে…..

#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-১২
________________
হঠাৎই ইমতিয়াজের কণ্ঠটা কানে বাজতেই রাগান্বিতা থেমে গেল। তার পা আঁটকে গেল ওখানেই সে নীরবে পিছন ঘুরে বললো,
“জি বলুন,

ইমতিয়াজ সময় নিলো দু’মিনিট চার’মিনিট করে কতক্ষণ সময় গেল। রাগান্বিতা খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বললো,
“কি হলো আপনি কিছু বলছেন না কেন?”

ইমতিয়াজ আর দ্বিধা করলো না ফট করেই বলে উঠল,
“আপনি বেশি ঘর থেকে বের হবেন না। আপনাকে দেখলেই আমার বড্ড বাজে অনুভূতি হয়।”

ইমতিয়াজের কথা শুনে রাগান্বিতা কি বলবে বুঝতে পারলো না। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে মুচকি হেঁসে বললো,
“আমি কোনো সাহায্য কারী নই যে আপনার বাজে অনুভূতি কমানোর জন্য বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিবো।”
“তাহলে সবসময় কাছে থাকুন না।”
“আপনি রাখতে পারলে ঠিক থেকে যেতাম।”

বলেই রাগান্বিতা আর দাঁড়ালো না ফট করে কি বলে ফেললো তার কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে। অন্যদিকে রাগান্বিতার কথা শুনে ইমতিয়াজ হেঁসে ফেললো। রাগান্বিতার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে নিম্ন স্বরে বললো,
“কদিন পর যার বিয়ে সে রাখতে পারার কথা বলছে বিষয়টা দারুণ তো।”

ইমতিয়াজ নদীর দিকে ঘুরে তাকালো ঢেউয়ের পানে চাইলো, বাতাস হচ্ছে প্রকৃতি জুড়ে কি সুন্দর হৃদয়টাকে ফুড়ফুড়ে করছে। ইমতিয়াজ তার চোখ বন্ধ করে মনে মনে আওড়ালো,
“কাছে আসলে যে সব জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাবে তুমি কি তা সইতে পারবে রাগান্বিতা?”
——

সন্ধ্যার দিকে নিজ রুমে ল্যাম জ্বালিয়ে বসে আছে রাগান্বিতা। ল্যামের বিন্দু বিন্দু আলোর পানে চেয়ে আছে নীরবে। কি যেন ভাবছে? ইমতিয়াজ নামটা যেন খুব বেশিই হৃদয়ে গেঁথে গেছে। কি এক জ্বালায় পড়লো রাগান্বিতা! ছেলেটা কেন আসলো তাদের গ্রামে। আর কি কোনো গ্রাম ছিল না তাদেরটাই দেখলো। রাগান্বিতার কিছু ফিল হচ্ছে মন বড্ড চাইছে ইমতিয়াজ থাকুক সারাক্ষণ, সর্বক্ষণ তার পাশে। ছেলেটা বুঝি পাগল করে দিলো রাগান্বিতাকে। আচ্ছা প্রেমে পড়া কি এত সহজ। সেই ক’দিন আগে প্রথম দেখলো বিকেলের লগ্নে বাঁশি বাজাতে থাকা সেই ইমতিয়াজকে না শুধু ইমতিয়াজ না ইমতিয়াজ সিকদারকে। রাগান্বিতা আনমনে হেঁসে ফেললো। এমন সময় তার রুমে কড়া নাড়লো তার বাবা। সঙ্গে বললেন তিনি,
“রাগান্বিতা তুমি কি ঘরে আছো?’

রাগান্বিতা পুরো দমে চমকে উঠলো। নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে হতভম্ব হয়ে বললো,
“জি বাবা।”

রাগান্বিতার বাবা ভিতরে ঢুকলেন বিছানায় বসে নিশ্চুপে বলতে লাগলেন,
“আমারে ভুল বুঝিস নারে মা এই বিয়েটা হওয়া খুব দরকার। তোকে যে এই গ্রাম ছাড়তেই হবে। তোর ভালোর জন্যই এই বিয়েটা দিচ্ছি। মাহাদ খুব ভালো ছেলে দেখবি তুই ভালো থাকবি সুখেও থাকবি। পড়াশোনা করার তোর ইচ্ছে থাকলে মাহাদ পড়াবে তোকে বলেছে আমায়। তুই রাগ করিস না রে মা। বাবা তোর ক্ষতি চায় না রে।”

বাবার কথা শুনে বড্ড খারাপ লাগলো রাগান্বিতার কতক্ষণ আগে ইমতিয়াজকে নিয়ে তার ভাবনার কথা মনে পড়তেই ভিতরটা কেমন করে উঠলো সে ভুলেই গেছিল তার যে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। রাগান্বিতা টেবিল ছেড়ে বাবার দিকে এগিয়ে গেল আলতোভাবে বাবার পায়ের কাছে বসে বললো,
“কিসের ভয় পাচ্ছো বাবা আমায় বলো না?”
“সব কথা যে জানতে নেই মা।”
“আমায় বলো বাবা আমি বিয়ে করবো কিন্তু তার আগে আমায় সবটা বলো বাবা! লুকানোর বিষয়টা কি বুবুকে নিয়ে?”

রাগান্বিতার বাবা মাথা নাড়ালেন যার অর্থ হ্যাঁ। রাগান্বিতা যেন পুরোদমে অবাক হলো বাবার কথা শুনে তার মানে তার আন্দাজটা ঠিক ছিল। রাগান্বিতা আরেকটু জোর দিয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো,
“বুবু কি তবে আত্নহত্যা করে নি বাবা?”

রাগান্বিতার বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“জানি না।”

রাগান্বিতা হতাশ হলো উত্তেজিত কণ্ঠে বললো,
“তুমি কি কাউকে সন্দেহ করছো?”
“না।”
“তাহলে কি বিষয় নিয়ে বুবুর কথা বলবে।”

রাগান্বিতার বাবা কিছু বলবে এরই মাঝে তাকে ডাকলো রেজওয়ান। চেঁচিয়ে বললো,
“বাবা, বাবা কোথায় তুমি?”

রেজওয়ানের কথা শুনে রাগান্বিতা, রাগান্বিতার বাবা দুজনেই যেন চমকে উঠলো। দ্রুত বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“রেজওয়ানের আবার কি হলো?”

রাগান্বিতা আর রাগান্বিতার বাবা দুজনেই হন্তদন্ত হয়ে রুম থেকে বেরুলেন। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে বললো রাগান্বিতার বাবা,
“কি হয়েছে তুমি এভাবে চেচাচ্ছো কেন?”
“কেন চেচাচ্ছি সেটা তোমার গুনোধর ছোট মেয়েকেই জিজ্ঞেস করো।”

রাগান্বিতা যেন অবাক তার ভাইয়ের কথা শুনে বিস্ময়কর চেহারা নিয়ে রেজওয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি করেছি আমি দাদাভাই?”
“তোর নামে কোথা থেকে ঘন ঘন চিঠি আসে রাগান্বিতা?”

রাগান্বিতার পিলে যেন চমকে উঠলো ভাইয়ের কথা শুনে। তার নামে চিঠি আসে এটা তার ভাই কি করে জানলো সে ঘন ঘন চিঠি আসার কথাটা তো কাউকে বলে নি। শুধু ওই একটার কথাই বলে ছিল শুধু বাবাকে। রাগান্বিতার বাবা রাগান্বিতার দিকে একপলক তাকিয়ে রেজওয়ানের দিকে মুখ করে বললো,
“ঘন ঘন কই ওর নামে তো একটাই চিঠি এসেছে।”

উত্তরে বাবার দিকে একটা চিঠি এগিয়ে দিয়ে বললো,
“শুধু একটা না বাবা ওর নামে আরো চিঠি এসেছে।”

রাগান্বিতার বাবা এবার রাগান্বিতার দিকে এগিয়ে গেল বাবার চাহনী দেখে রাগান্বিতা মাথা নিচু করে ফেললো। রাগান্বিতার বাবা রাগান্বিতার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“এসব কি সত্যি রাগান্বিতা?”

রাগান্বিতা চুপ। রাগান্বিতাকে চুপ থাকতে দেখে ধমকের স্বরে জিজ্ঞেস করলো রাগান্বিতার বাবা,
“কি হলো কথা বলছো কেন এর আগেও চিঠি পেয়েছো তুমি?”

রাগান্বিতা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো সঙ্গে সঙ্গে তার গালে স্ব-জোরে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো মোতালেব তালুকদার। উপস্থিত সবাই যেন স্তব্ধ বনে গেল এমনকি রেজওয়ানও সে ভাবে নি চিঠির জন্য রাগান্বিতার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিবে বাবা। রাগান্বিতার বাবা রেগে গিয়ে উচ্চস্বরে বললেন,
“তোমার নামে বার বার চিঠি এসেছে অথচ তুমি আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করো নি। বেশি বড় হয়ে গেছো নাকি।”

রাগান্বিতা ছলছল দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে রইলো বাবার মুখের দিকে। সামান্য কয়টা চিঠি আসার জন্য তার বাবা তাকে মারলো। এখানে তার কি দোষ সে কি কাউকে বলেছিল তার নামে চিঠি পাঠাতে। রাগান্বিতার বাবা চেঁচিয়ে কাশেমকে ডাকলো। কাশেম দরজার সামনেই দাড়ানো ছিল তাই দেরি না করে দৌড়ে ছুটে এসে বললো,
“এই তো আমি কন সাহেব?”
“তুই এক্ষুণি মাহাদদের বাড়ি যাবি ওর বাবাকে বলবি বিয়ে একসপ্তাহ পর নয় কাল বাদে পরশুই দিয়ে দিবো। রাগান্বিতাকে পরশুদিন এ বাড়ি থেকে বিদায় দেয়া হবে। কোনো কিছু নিয়ে যেন তারা চিন্তা না করে সবটা আমি বুঝে নিবে।”

কাশেম মাথা নুড়িয়ে বললো,
“আইচ্ছা সাহেব।”

কাশেম আর দাঁড়ালো না দ্রুত পা চালালো মাহাদদের বাড়ির যাবার জন্য। রাগান্বিতার বাবা রাগান্বিতার দিকে তাকিয়ে বললো,
“এই বিষয় নিয়ে আমরা আর কোনো কথা বলবো না যে যার ঘরে যাও।”

রাগান্বিতার বাবা চলে গেলেন। বাবা যেতেই রেজওয়ান তার হাতের চিঠিটা টেবিলের উপর রাখলো ছুটে গেল বাবার পিছু পিছু বাবা এত তাড়াহুড়ো করছে কেন বিয়েটা নিয়ে?”

রাগান্বিতা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। দূরের রন্ধনশালা থেকে বেরিয়ে দাদিমা অনেক আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি রাগান্বিতার দিকে তাকিয়ে রইলেন অনেকক্ষণ কিন্তু এগিয়ে গেলেন না দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেল। আর রাগান্বিতা মাথা তুলে তাকিয়ে এগিয়ে গেল চিঠিটার দিকে।

কতক্ষণ আগে ডাকপিয়ন এসেছিল তাদের বাড়ির সামনে কিন্তু আজ রাগান্বিতার কাছে চিঠি পৌঁছানোর আগেই রেজওয়ান বাড়ির ভিতর ঢুকে ডাকপিয়নকে জিজ্ঞেস করে এখানে কি? তখনই বলে রাগান্বিতার নামে চিঠি এসেছে। রেজওয়ান চিঠিটা নেয় অন্যকেউ থাকলে দিতো না। কিন্তু রেজওয়ানের রাগ সম্পর্কে ডাকপিয়ন অবগত ছিলেন তাই দিয়ে দেন। ডাকপিয়ন যেতে নিলেই রেজওয়ান প্রশ্ন করে “এমন চিঠি কি আরো এসেছে রাগান্বিতার নামে?” তখন ডাকপিয়ন “হয় আরো আইছিল” বলে দেয়। ব্যস তাতেই রেজওয়ান রেগে যায়। তার বোনের নামে বার বার চিঠি আসে অথচ তারা জানেই না।”

রাগান্বিতা কতক্ষণ চিঠিটার দিকে তাকিয়ে থেকে চিঠিটা হাতে নিলো খাম খুলে দেখলো। সেখানে লেখা,
“কি এক অদ্ভুত ব্যাপার! একখানা মুখ দেখার জন্য হৃদয়টা করছে বড্ড হাহাকার। দেখা কি দিবে সখি? নাকি না দেখেই যৌবন করবো পার!’

রাগান্বিতা লেখাটা পরেই চিঠিটা দুমড়ে মুচড়ে ফেললো। শক্ত করে চেপে ধরে ছুট লাগালো নিজের রুমে। এই চিঠিদাতাকে খুঁজে বার করতেই হবে তাকে। যেভাবে হোক বার করতেই হবে! কে বার বার চিঠি পাঠাচ্ছে তার নামে?”

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে