প্রিয় রাগান্বিতা পর্ব-১০

0
565

#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-১০
________________
আকাশটা মেঘলা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হবে হবে এমন। গাছের ভিড়ে কেউ বসে বাঁশি বাজাচ্ছে। সেই কেউটা হলো ইমতিয়াজ। রাগান্বিতা ইমতিয়াজের থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে কিছু বলছে না চুপচাপ শুনছে শুধু ইমতিয়াজের বাজাতে থাকা বাঁশির সুর। বেশ লাগছে তার। বেশ কিছুক্ষণ সময় পার হতেই ইমতিয়াজ তার বাঁশি বাজানো থামালো চার সেকেন্ড যেতেই বলে উঠল,
“এতক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে আছেন আপনার কি পা ব্যাথা করছে না?”

রাগান্বিতা যেন চমকে উঠলো। সে দেখেছে, সে যতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে ছিল তার একবারও ইমতিয়াজ পিছনে ঘুরে তাকায় নি তাহলে বুঝলো কি করে সে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল। রাগান্বিতা কৌতুহলী কিছু বলবে এরই মাঝে ইমতিয়াজ পিছন ঘুরলো। বললো,
“কি হলো কথা বলছেন না যে।”

রাগান্বিতা আশেপাশে তাকিয়ে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে গেল ইমতিয়াজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,
“সরুন।”

ইমতিয়াজ বিনা বাক্যে গাছের আড়াল থেকে সরলো ইমতিয়াজ সরতেই রাগান্বিতা ইমতিয়াজের বসার স্থানটি দখল করে নিলো। বললো,
“আপনি বুঝলেন কি করে আমি আপনার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম?”

ইমতিয়াজ হাসে রাগান্বিতার কথা শুনে। বলে,
“আমার যে হৃদয় কাঁদে।”

ইমতিয়াজের কথার অর্থ না বুঝে রাগান্বিতা বললো,
“মানে?”
“সব মানের অর্থ বুঝিয়ে দিলে আপনি কি করবেন।”
“দেখুন আপনি সব কথা ঘুরিয়ে বলবেন না তো সেই শুরু থেকেই দেখছি আপনি কথা বলেন কেমন একটা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে।”

ইমতিয়াজ উচ্চস্বরে হেঁসে বলে,
“আপনি হয়তো জানেন না আমার প্যাচাতেই ভালো লাগে।”

রাগান্বিতা কথার প্রসঙ্গ পাল্টানো। বললো,
“এখানে কি করছেন?”
“আপনার আসার অপেক্ষা।”
“আমার অপেক্ষা?”
“হুম।”
“কেন বলুন তো?”
“কেন করবো না বলুন তো।”

চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো রাগান্বিতা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“আপনি একটা বাজে লোক।”

ইমতিয়াজ হেঁসে মৃদু স্বরে জবাব দিল,
“আমি জানি।”

—–
সন্ধ্যার আলাপনে মুখরিত চারপাশ। ঝিঁঝি পোকারা ডাকছে উচ্চস্বরে। বিকেল জুড়ে মেঘলাময় আবহাওয়া থাকলেও বৃষ্টি আর নামে নি। রাগান্বিতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ, মৃদু বাতাসে তার চুলগুলো উড়ছে কিছু একটা অনুভব করতে চাইছে হৃদয় কিন্তু পারছে না। রাগান্বিতা কি ইমতিয়াজের কথা ভাবছে, শুরু থেকেই রাগান্বিতার ইমতিয়াজকে ঠিক কেমন যেন লাগছে অদ্ভুত ভয়ংকর বলে একটা মনে হয়। আচমকাই রাগান্বিতার বারান্দায় সেদিনকার মতো একটা কবুতর ছুটে আসলো এসে বসলো সোজা বারান্দায় রেলিংয়ের সামনে। রাগান্বিতা চমকে উঠলো আচমকাই। কবুতর তার কাছে এসেই জোরে জোরে শব্দ করতে লাগলো। রাগান্বিতা খানিকটা ঘাবড়ে গেল কিন্তু পরমুহূর্তেই এগিয়ে গেল সামনে পুনরায় সেদিনকার মতো কবুতরটার পায়ে কাছে একটা চিঠি পেল। রাগান্বিতা সেদিনকার ভেবে খানিকটা কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠিটা নিল। জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে চিঠিটা খুললো। চিঠিটা খুলতেই সেখানে লেখা দেখলো,

“সে কি জানে তার হাসিটা কত সুন্দর?
তার মায়াবী আঁখিতে প্রেমে পড়ছি প্রতিনিয়ত।”
আমি যা চাই সে কি তা দিবে আমায়
ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছি যে,
একটু বাঁচিয়ে নিবে তো প্রিয়। শোনো না একটা কথা, বিরহে যে অন্তর পুড়ে হচ্ছে ছাই।”

~ ইতি,
নিষ্ঠুর এক প্রেমিক পুরুষ!’

ব্যাস আর কিছু লেখা নেই। রাগান্বিতা হতভম্ব এবার বাড়াবাড়ি হচ্ছে। রাগে চোয়াল শক্ত হলো রাগান্বিতার। কে এই চিঠিদাতা তাকে যে করেই হোক জানতে হবে। কাল গ্রামের প্রতিটা শিক্ষিত পুরুষের হাতের লেখা দেখবে রাগান্বিতা। তাকে জানতেই হবে কে এই প্রেমিক পুরুষ। রাগান্বিতা দৌড়ে তার রুম থেকে বের হলো। বাবাকে জানালো গ্রামের প্রতিটা ছেলের হাতের লেখা দেখতে চায় এমনকি ইমতিয়াজেরও। মেয়ের আচমকা এমন রক্তচন্ডি মুখ দেখে চরম অবাক রাগান্বিতার বাবা। মেয়ের কাছে কারণ জানতে চাইলেও বলে নি কিছু।’

অতঃপর কথা মতো সকাল হতে না হতেই গ্রামের সব শিক্ষিত ছেলেদের হাতের লেখা পরীক্ষা করা হলো কিন্তু কারো হাতের লেখার সাথেই রাগান্বিতার কাছে আসা চিঠিটা মিললো না। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো, দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা কিন্তু তাও কারো হাতের লেখা রাগান্বিতার চিঠিটার সাথে মিললো না। রাগান্বিতা হতাশায় পঞ্চমুখ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো বাড়ির সদর দরজার সামনে। গ্রামের প্রায় সবাইকে দিয়েই কিছু লেখানে হলো কিন্তু কিছুই মিললো না। পরিশেষে তালুকদার বাড়িতে আসলো ইমতিয়াজ। সবার তার দিকে চেয়ে রইলো ইমতিয়াজ জানে না এখানে গ্রামের সব ছেলেদের হাতের লেখা কেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। ইমতিয়াজ ঢুকেই সোজা চলে গেল রাগান্বিতার সামনে। রাগান্বিতার বাবা পাশেই দাঁড়ানো ছিল।

গ্রামের সবাই একে একে চলে গেলেন যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে। ইমতিয়াজ রাগান্বিতার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“আমাকে এখানে কেন ডাকা হয়েছে জমিদার সাহেব?”

রাগান্বিতার বাবা কিছু বলার আগেই রাগান্বিতা বলে উঠল,
“আপনার হাতের লেখা দেখতে চাই।”

ইমতিয়াজ যেন চরম অবাক হলো, এইটা কোনো কথা। গ্রাম শুদ্ধ পুরুষদের হাতের লেখা নেওয়ার কোনো মানে হয় নাকি। ইমতিয়াজ বললো,
“কারনটা কি জানা যায়?”

রাগান্বিতা গম্ভীর আওয়াজে বলে,
“না।”
“তাইলে আমি আমার হাতের লেখা দিবো না।”

এবার রাগান্বিতার বাবা বললো,
“কেন দিবে না?”

ইমতিয়াজ এবার তাকায় রাগান্বিতার বাবার মুখের দিকে। বলে,
“এটা পুরোই অযুক্তিকর একটা বিষয়। কারণ ছাড়া হাতের লেখা কেন নিবেন? আর এই যে সকাল থেকে আপনারা গ্রামের শিক্ষিত ছেলেদের হাতের লেখা নিচ্ছেন কেন নিচ্ছেন এটা বলবেন না।”

রাগান্বিতা বললো,
“একটা ছেলে আমায় মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে তাই কে পাঠিয়েছে জানার জন্য হাতের লেখা পরীক্ষা করা হচ্ছে।”

ইমতিয়াজ যেন চরমভাবে চমকে উঠলো রাগান্বিতার কথা শুনে। অদ্ভুত স্বরে বললেন,
“কি?”
“হ্যাঁ এটাই এর জন্য কারণ বলতে চাইছি না আপনিও কাউকে বলবেন না এবার হাতের লেখা দিন।”

ইমতিয়াজ আর দ্বিধা করলো না। সামনে টেবিলের ওপর রাখা থেকে কাগজ নিলো। কলম ধরে বললো,
“কি লিখবো?”

রাগান্বিতা অনেকক্ষণ চুপ থেকে নিজের হাতে থাকা চিঠিটাই দিয়ে বসলো ইমতিয়াজকে। বললো,
“এটাই লেখুন পুরোটাই লেখুন।”

ইমতিয়াজ চিঠিটা দেখলো, পড়লো অদ্ভুত দৃষ্টিতে চাইলো রাগান্বিতার দিকে। ইমতিয়াজের চাহনী দেখে আবারও বললো,
“কি হলো লেখুন?”

ইমতিয়াজ দোনোমনা করলো। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বললো,
“লিখছি।”

রাগান্বিতা তাকিয়ে রইলো ইমতিয়াজ লেখার দিকে পরেই চোখ সরিয়ে ফেললো। ইমতিয়াজ কলম নাড়াতে নাড়াতে ধীরে ধীরে লিখলো রাগান্বিতার দেয়া পুরো কথাটা।

অনেকক্ষণ সময় গড়ানো। ইমতিয়াজের লেখা শেষ হলো সে কাগজটা ভাজ করে কলমটা টেবিলের উপর রেখে এগিয়ে গেল রাগান্বিতার দিকে। বললো,
“নিন।”

রাগান্বিতা নিলো। ইমতিয়াজ চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো নিচের দিকে তাকিয়ে। রাগান্বিতা পর পর লেখাগুলো মেলালো। অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো লেখাগুলোর দিকে। রাগান্বিতাকে এত মনোযোগ দিয়ে লেখা পড়তে দেখে বললো রাগান্বিতার বাবা,
“লেখা কি মিলিছে?”

রাগান্বিতা ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে বললো,
“না বাবা।”

রাগান্বিতা চলে গেল ইমতিয়াজ দেখলো তা। রাগান্বিতা যেতেই রাগান্বিতার বাবা ইমতিয়াজের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
“আমি খুব দুঃখিত মেয়েটা কাল রাত থেকেই কেন যেন পাগলামি করছে। না কিছু বলছে, না কিছু শুনছে। ওর হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।”

ইমতিয়াজ দু’কদম এগিয়ে গিয়ে বললো,
“আরে আরে কি করছেন আপনি? সমস্যা নেই আমি কিছু মনে করি নি। ভালো থাকবেন আজ যাই।”

বলেই ইমতিয়াজ আর না দাঁড়িয়ে চলে গেল বাহিরে। জোরে নিশ্বাস ফেললো মুহুর্তেই। যেতে যেতে আওড়ালো,
“মেয়েটা পাগল হলো নাকি।”

অন্যদিকে, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে ইমতিয়াজের লিখে যাওয়া আবার দেখলো। হাতের লেখা মেলে নি এটা সত্যি কথা৷ তবে ইমতিয়াজ লেখাগুলোর পরে আরো দু’লাইন লিখেছিল তা হলো,

“প্রেমপত্র উন্মোচনের বুদ্ধিটা দারুণ। কিন্তু সে যে এই গ্রামেরই তা জানলেন কি করে?”
—-

আজ বৃহস্পতিবার। জমিদার বাড়িতে কিসের যেন তোড়জোড় চলছে। রেজওয়ান এখন পুরোপুরি সুস্থ। ভেবেছিল দুতিনদিনের মাঝে শহরে চলে যাবে কিন্তু তার বাবা কোন এক কারণের জন্য আরো কিছুদিন থাকতে বলছে। তাই থেকে গেছে।

রাগান্বিতার ঘুম ভাঙলো সকাল আটটার দিকে আজ নামাজ সেরে একটু ঘুমিয়েছিল রাগান্বিতা। সকালে ঘুম ভাঙে দাদিমার ডাকে আর উঠেই শুনে কোন গ্রামের চেয়ারম্যান বাড়ির ছেলে নাকি তাকে দেখতে আসবে। হুট করে এমন খবর শুনে রাগান্বিতার ভিতরটা যেন কেমন করে উঠলো? থমথমে গলায় বললো,
“হুট করে বাবা এ কেমন সিদ্ধান্ত নিল? আর কেনই বা নিল?”

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে