প্রণয় পর্ব-১১

0
1008

#প্রণয়
#১১তম পর্ব
#Abir Hasan Niloy

দরজার ওপাশ থেকে অর্ন তোয়ালে ধরে রেখেছে। এপাশে অবনি। কেউ টানছেও না। অবনি কর্কশ গলায় বললো..

– কি হচ্ছে তোর? সমস্যা টা কি? এমন কেনো করছিস? (অবনি)
– কেমন করছি? (অর্ন)
– আমাকে কেনো জ্বালাচ্ছিস? (অবনি)
– ভালো লাগছে তাই। (অর্ন)
– ঢং করছিস কেনো? এগুলো একদমই অসহ্য লাগছে। এত ঢং কিসের তোর? দুইদিন আগেও তো ঠিক ছিলি। এখন এত ঢং আসছে কোথা থেকে? বিরক্ত হচ্ছি আমি। তুই যা তো এখান থেকে ভালো লাগছে না আমার। অসহ্য লাগছে সব। (অবনি)

অর্ন নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে দরজার দিকে। ভিতরে থাকা অবনির কথাগুলো ওর বুকে এসে লাগে যেন। দুই কান লাল হতে শুরু করেছে। অর্ন রেগে নেই, তবে অপমানে লজ্জায় তার কান আর নাক লাল হওয়া শুরু করেছে। কিছু মানুষ থাকে, যারা কখনো অপমান হয়নি, এমনকি তারা অতিব সামান্য অপমান সহ্যও করতে পারেনা, তারা কখনো অপমানিত হলে, তাদের চোখ কান নাক লাল হওয়া শুরু করে। অর্ন তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো…

– এহ, চুপ কর। তুই আমার এখন বউ। আমি যা খুৃশি করার অধিকার রাখি। (অর্ন)
– হাহাহা.. হাসাচ্ছিস অর্ন। তুই আমার বর? আমি তোর বউ? বলি প্লিজ.. এভাবে হাসাবি না। জোকসটা শুনে হাসি থামাতে কষ্ট হচ্ছে। কিসের বউ আমি তোর? বউ বলতে আসছিস। তোর থেকে রাস্তার খারাপ ছেলেরা অনেক ভালো। ওদের সামনে একটু ওড়না সরিয়ে হাঁটলেও ফিরে তাকাবে। আর তুই? কখনো তাকিয়ে দেখেছিস আমাকে? আসছিস বউ বলতে। আর অধিকারের কথা বলছিস? অধিকার তো আমার ছিল। আমি ভালোবাসতাম বলে। তুই কিসের অধিকার দেখাবি? তোর মত ছেলে অধিকারের কথা বললে তা মানায় না। কিভাবে বললি তুই? অনেক অপমান সহ্য করেছি। আত্বমর্যাদা হারিয়েছি। এখন তুই প্লিজ মজা করিস না।

অর্ন একদম চুপ হয়ে গেলো। সে তোয়ালে ছেঁড়ে দেয়। আর কিছু বলার সাহস পায়না অর্ন। এত অপমান সে কখনো হয়নি। অবনির থেকে এমনটা আশাও করেনি কোনোদিন। অবনি এতকিছু বলতে পারে, অর্ন ম্বপ্নেও ভাবেনি। অর্ন তোয়ালে ছেঁড়ে কাপড়ের শোকেজে আসে। অবনির জন্য ড্রেস পেঁড়ে এনে দরজার কাছে রেখে দেয়। ফিরে আসতে যাবে,তার আগে বললো “সন্ধ্যায় আমার বন্ধুর বিয়ের পার্টি। রেডি থাকিস।” অর্ন কথাটা বলে ফিরে আসতে যায়। কিন্তু অবনি তার আগেই বলে “হাসির পাত্রী বানাতে নিয়ে যাবি? বন্ধুরা তো কম অপমান করেনি। চুপচাপ শুনেছিস। এখনো স্বাদ মেটেনি? আমি যাবো না।”

অর্ন আর কথা বাড়ায় না। সে বাড়ি থেকে বের হয়। অবনি আরো কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে ভিতরে। অর্নের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা খুললো। দরজার পাশে অবনির পছন্দের ড্রেস রাখা। অর্ন ছাড়া কেউ রুমে ছিল না। অবনি অবাক হয়। মনে মনে বলে ‘অর্ন আবার কবে আমার পছন্দগুলো খেয়াল করেছে? যত্তসব ঢং।’ অবনি ড্রেস পরে নিল।
.
অর্ন অফিসে এসেছে। বাবারই অফিস। আনাফ থাকতো আগে এখানে। আনাফ নেই, সে জন্য অর্ন না চাইলেও নিজ থেকে করতে হচ্ছে অফিসের কাজ। অফিসে বসে আছে। কিছুই ভালো লাগছে না ওর। বারবার অবনির কথা মনে পড়ছে। অর্ন রুমের মধ্যে পায়চারি করছে আর ভাবছে “আচ্ছা আমি কি অবনিকে একবার কল দেবো? না. থাক। কল দিয়ে কি বলবো? কখনো তো কল করিনি। আর সে যদি ভাবে আবার ঢং করছি তাহলে? ধুর আমার কি হল? অবনির কথা আমি কেনই বা এত ভাবছি? সে আমাকে কত অপমান করলো, তবুও যেন আমার ওর কথা ভাবতেই বেশি ভালো লাগছে। অবনি কি যে করলো আমাকে। আমার না কিছু একটা হয়েছে। সিফাতের সাখে অবনির কিসের এত গাঢ় সম্পর্ক? রাগ কেনো হয় আমার, ওদের একসাথে দেখলে? ইরার কথাও এখন ঠিকমত মনে পড়ছে না আমার। উফ, কি যে অসহ্য লাগছে।”

অর্ন ভাবতে ভাবতে ফোন হাতে নিল। কল দিয়েও ফেলেছে অবনিকে। প্রথমবার রিং ঢুকতেই সে কল কেঁটে দেয়। বুকের ভিতর ঢিপ ঢিপ শুরু হয়ে গেছে। কি বলবে সে, অবনিও কি বলবে এটা ভেবে ফোন আর দেওয়ার সাহস পায়না অর্ন। কিন্তু ঠিকিই অবনির কলের অপেক্ষা করতে থাকে। অবনি রুমের মধ্যেই ছিল। ফোন হাতে নিয়ে দেখে অর্নের কল। প্রথমে অবাক হলেও ফোন হাতে নিয়ে বিড়বিড় করে বলে “হয়ত, কোনো দরকারে ফোন দিয়েছে। না হলে সে ভুলেও আমাকে কখনো কল করবে না।” কথাগুলো ভাবতে থাকে ফোনের দিকে তাকিয়ে।

ওদিকে ফোন হাতে নিয়ে থাকা অর্ন, অবনির থেকে কল না পেয়ে ফোন পকেটে রেখে দিল। সাথে সাথেই ফোন বেজে ওঠে। হাতে নিয়ে না দেখেই রিসিভ করে বলে.. “আমি জানি অবনি, তুমি আমাকে কল করবে। আমি অপেক্ষাতে ছিলাম তোমার ফোনের। আমার কি হয়েছে বুঝতে পারছিনা। সবসময় তোমার কথা মনে পড়ছে।” ওপাশ থেকে কিছু শোনার জন্য অর্ন প্রস্তুত হয়। তখনি সে শোনে “গুড… ভাবছিলাম তোকে নিজের করে নেওয়ার একটা শেষ সুযোগ দেবো। আমার কেনো জানি মনে হচ্ছিল, তুই শুধু আমারই। কিন্তু না, আমি ভুল। আমি সত্যিই বোকা, তোর মত একটা খারাপ ছেলেকে ভালোবেসেছিলাম। শোন, আমি শিহাবকেই বিয়ে করবো। ভালো থাকিস তুই।”

ওপাশ থেকে ফোন কেঁটে দেয়। অবনি স্ক্রীনে থাকা নামটা দেখে।ইরার নাম্বার থেকে কল এসেছে। অর্ন বোকার মত দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু এখন একটুও খারাপ লাগছে না ওর। তবে বুকের ভিতর হালকা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব তো হবেই। হাজার হোক, সত্যিকার ভাবে ইরাকে অর্ন চাইতো। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে, হাজার ভালোবাসা, চাওয়ার উন্মাদনা থাকলেও দুজনের মধ্যে বিরাট ব্যাবধান হয়ে গেছে। এখন যতই কাছে আসার ট্রাই করুক না কেনো কেউ। কাছে আসা তো দূরে থাক, দুজনে আরো দূরে সরে যাচ্ছে। এ জন্য প্রেমিক প্রেমিকার কোনো সম্পর্ক, একবার ভেঙে গেলে, দ্বিতীয়বার সেটা জোড়া লাগানো উচিৎ নয়। প্রথমবার যা হয়েছে, দ্বিতীয় বার তা হবেনা। প্রথমবার যেভাবে দুজন দুজনকে ভালোবেসেছিল, দ্বিতীয়বার ফিরে আসার পর সেইভাবে ভালোবাসা গড়ে উঠবে না। দুজনেই পরিবর্তন হয়ে যাবে। ছেঁড়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না। আর কোনো সম্পর্কে যদি হারানো কিংবা ছেঁড়ে যাওয়ার ভয় না থাকে, তাহলে সেই সম্পর্ক বেশিদিন টিকে না। দায়সাড়া ভাব চলে আসে সম্পর্কের নিয়মে।
.
অর্ন ইরার কথা ভাবছে। হঠাৎ আবার ফোন বেজে ওঠে। সে আবারো ফোনের দিকে না তাকিয়ে রিসিভ করে। মন খারাপ করে অর্ন বলে। “ইরা.. আমি এখন তোমাকে…।” অর্ন পুরো কথা বলতে পারেনা। তার আগেই ওপাশ থেকে বলে “এখনো ইরাকেই ভালোবাসিস তুই তাইনা? জানতাম এটাই সত্য কথা। আমাকে ডিভোর্স দিতে পারিস তুই। আমি জানি তোর মধ্যে যে ভালোবাসা আছে, তা সবটা ইরার জন্য। সকালে কত নাটক করলি। তোর মত নাটকবাজ আর দেখিনি। আরে বাবা, ভালোবাসবি না আমাকে সেটা নিয়ে তোকে কখনো অভিযোগ রেখেছি? যা ইরা তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”

ফোন কেঁটে দেয়। এবার অবনিই কল করেছিল। আর ইরা মনে করে অর্ন বলতে চাচ্ছিল ‘সে এখন তাকে রেখে অবনিকে স্মরণ করে সবসময়।’ কিন্তু অর্ন তা বলার আগেউ অবনি ফোন কেঁটে দেয়। দুইবার ফোন না দেখে রিসিভ করায় এটা হয়েছে। দুজন মানুষ ভুলটাই বুঝলো। অর্ন বোকার মত বসে থাকে ফোন হাতে নিয়ে। অবনিকে কিছু জানানোর আগেই সে আবার অর্নকে ভুল বুঝলো। অর্ন এখন যা করছে তা সবটাই যেন অবনি বিরোধী। ধুর আর অফিস করতে ওর ভালো লাগছে না। সে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
.
অবনিরও বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না। সে উঠে সিফাতকে খুজতে থাকে। সিফাতের রুমের সামনে এসে কয়েকবার পায়চারি করলো অবনি। সিফাতকে দেখতে পাচ্ছে না। সাহস করে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে অবনি। রুমে কেউ নেই। কিন্তু বিছানা পত্র অগোছালো হয়ে আছে। অবনি বিড়বিড় করে বলে “উফ এই ছেলেগুলো এত অগোছালো কেনো হয়? রুম সবসময় ডাস্টবিন বানিয়ে রাখবে। কেউ নেই, গুছিয়ে রাখি।”

অবনি বিছানা গোছাতে শুরু করে। বালিশ দুটো ঠিকভাবে রাখতে যাবি, তখনি কে যেন পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে অবনিকে। অবনি চমকে যায়। কখনো এমন স্পর্শ সে পায়নি। পিছনে ঘুরতেও পারছে না। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে পিছন থেকে কেউ একজন। অবনি বলে..

– কে.. ছাঁড়ো বলছি। কে তুমি?

পিছনে থাকা কেউ একজন অবনিকে সোজা করে, জোরে একটা ধাক্কা দেয়। বিছানায় ছিটকে পড়ে অবনি। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা হল সিফাত। অবনি অবাক হয়। সিফাত অবনির পাশে যেয়ে শুয়ে পড়ে। এক হাত দিয়ে অবনির খোলা পেট পেঁচিয়ে ধরে সিফাত। জোরে একটা খামচি দিয়ে অবনিকে নিজের কাছে টেনে নেয় সে। অবনি সাথে সাথেই বিছানা থেকে উঠে বসলো। সিফাত কিছু সময় অবনির দিকে বোকা দৃষ্টিতে তাকালো। অবনি বলে..

– কি হচ্ছে এসব সিফাত?
– জানিনা। আমার তোমার মায়াতে মিশতে ইচ্ছে করে খুব। (সিফাত)
– কিন্তু… কেনো? আমি তোমার চেহারার সাথে বিপরীত। (অবনি)
– কিন্তু আমার তো এতে কোনো সমস্যা নেই। আচ্ছা আমার কাছে আসতে হবেনা। তুমি এমনিতেই ভাবো অনেক সময় নিয়ে। তাহলেই বুঝতে পারবা। আর আমি এসব সমাজের নিয়ম কানুনও মানিনা। মানি তবে যেগুলো বেমানান, তা কখনো না। তাই তুমি একটু সময় নাও, ভাবো। আমার চাওয়াটাকে উপলব্ধি করো। তবেই এসো আমার কাছে। আমি সর্বদা আছি তোমার জন্য অপেক্ষায়। (সিফাত)

অবনি কিছু বললো না। দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো অবনি। মাথার মধ্যে এখন অনেকটা চিন্তা ঘুরছে। সিফাতের সাথে কথা বলাটা হয়ত ওর ঠিক হচ্ছে না। সিফাতকে সব জানানো দরকার। সে অর্নের বউ। কিন্তু অর্ন যদি এসবে রাগ করে? অর্ন যদি রিএক্ট করে? না না অর্নের কোনো সমস্যা হোক এমন কিছু অবনি করবে না। কিন্তু সিফাতের কথা কেনো অবনির বারবার মনে আসছে? এতটা প্রায়োরিটি কেউ কখনো অবনিকে দেয়নি। হঠাৎ করে একটা অচেনা মানুষের এতটা গুরুত্ব, এতটা আকর্ষনতা দেখাচ্ছে, যা অবনির মনকে বারবার অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। অবনি বুঝতেই পারছে না, সিফাতের নিয়ে সে ঠিক কি ভাববে। সিফাতকেই বা সে কেনো অপশন হিসেবে দেখছে? তার তো হাজবেন্ড আছে। কিন্তু অর্ন? যে কিনা অবনিকে কোনোদিন বোঝেইনি। অবনি এতটা ভালোবাসা দেওয়ার পরও অবনিকে গুরুত্ব দেয়নি অর্ন। তাহলে কি কেবল কাগজ কলমের সম্পর্কটাই বড়, মনের সম্পর্ক কি কিছুই না?

অবনি আর বেশি কিছু ভাবতে পারেনা। কেমন যেন মাথা চিনচিন অনুভব হচ্ছে। রুমের দরজা হালকা আটকে, সে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে। অর্ন যেখানে ঘুমায়, সেখানেই সে শুয়ে পড়ে। কখন যে চোখ লেগে আসে অবনির খেয়াল নেই।
.
একটু আড়ামোটা ছাঁড়তেই অবনির ঘুম ভেঙে গেছে। চোখ বন্ধ করে সে মনে করার চেষ্টা করে কোথায় আছে। কেনো আছে। মনে পড়ে সে অর্নের জায়গাতে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিল। অবনি উঠতে যাচ্ছিল, তখনি সে অনুভব করে গায়ে কাঁথা দেওয়া। এসিটাও অন করা আছে। কিন্তু অবনির খুব ভালো করেই মনে আছে, সে এসি অন করেনি। ফ্যান ছাড়া ছিল, বিছানায় কাঁথাও ছিল না। তাহলে কে দিয়েছে? সিফাত? ঘুম জড়ানো কণ্ঠে অবনি বলে “উফ সিফাত.. এত কেয়ার কেনো নিচ্ছো তুমি? এতকিছু খেয়াল করতে বলিনি তো। আমার সবদিক তোমার নজরে থাকে।”

অবনির গায়ে কাঁথা সিফাত দেয়নি। এসিটাও অন সিফাত করেনি। সবকিছু করেছে অর্ন। অর্ন সোফাতে বসে ছিল। পাশে রাখা ছিল অবনির প্রিয় বেলী ফুল। অর্ন অনেক কষ্টে অবনির জন্য বেলীফুল, চকলেট নিয়ে বাড়িতে এসেছিল। রুমে এসে দেখে অবনি ঘুমিয়ে পড়েছে। অবনিকে ডাকেনি অর্ন। অবনিকে নিয়ে অর্ন ভেবেছে অনেক। মনে মনে নিজেকে বলেছে “অবনির প্রতি এখন ওভাবে ভালোবাসা না আসলেও একটা নাম না জানা অনুভুতি ওর প্রতি টান সৃষ্টি করছে। আস্তে আস্তে অবনিকে ভালোবেসে ফেলবো আমি। পারতেই হবে। অবনিকে ঠকানো ঠিক হবেনা। যাইহোক, সে তো আমাকে ভালোবাসে। আমার উচিৎ, তার ভালোবাসাটাকে মেনে নেওয়া। অবনির প্রতি আস্তে আস্তে আমি আসক্ত হতে চাই। আমি পারবোই।”

অর্ন এসব ভেবে বেশ খুশিই ছিল। তাই সে অনেক কষ্টে ফুলগুলো ম্যানেজ করে। তারপর বড় একটি চকলেট বক্স নিয়ে বাড়িতে আসে। রুমে এসেই দেখে অবনি ঘুমিয়ে আছে। গরম লাগবে ভেবে, সে অবনির জন্য এসি ছেঁড়ে দেয়। তারপর একটা পাতলা কাঁথা অবনির গায়ের উপর দিয়ে কিছুটা দুরে রুমের সোফাতে এসে বসে থাকে। অবনির ঘুম ভাঙার সাথে সাথেই দেখবে টেবিলে চকলেট বক্স রাখা। সে অবাক হয়ে দেখবে অর্ন বসে আছে। অর্ন ঘুম ভাঙতেই অবনির দিকে বেলীফুলগুলো ছু্ঁড়ে দেবে, চুলের মধ্যে দিয়ে দেবে। একটু খুনশুটি করবে। তাই সে প্রস্তুত হয়েই ছিল। অবনির ঘুম ভাঙতেই অর্ন এগিয়ে যায় সেদিকে। কাছে যেতেই অবনির মুখে সিফাতের কথা শুনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।

অবনির চোখ খোলার আগেই টেবিলে ফুলগুলো রেখে দিয়ে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রুম থেকে বেরিয়ে দেখে সিফাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়ি সিফাতের কাছে যেয়ে বলে.. “অবনি হয়ত তোকে খুজছিল। দেখ সে কোথায় আছে।” অবনির কথা শুনতেই সিফাতের মুখে একটা সুখকর হাসি ফুটে উঠল। সে ওখান থেকে দ্রুত চলে আসে। অবনি বিছানা ছেঁড়ে উঠে দাঁড়ালো। টেবিলের উপর প্রিয় বেলী ফুল দেখেই কয়েক মিনিট চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল অবনি। চকলেট বক্সও রাখা। সে অবাক আর খুশিতে বোবা হয়ে গেছে যেন। সিফাতের কথায় মনের ভিতর উঁকি দিতে শুরু করেছে। ঠিক তখনি সিফাতের গলা শুনতে পায় অবনি।

রুম থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসলো অবনি। সিফাতের সাথেই দেখা হয়ে গেলো। সিফাত বলে “তুমি কি আমাকে…” সিফাত কথাটা শেষ করতে পারেনা। তার আগেই অবনি সিফাতকে জড়িয়ে ধরে। খুশিতে অবনির চোখে পানি এসে পড়েছে। কারন কেউ এতটাও গুরুত্ব অবনিকে দেয়নি। অবনি কয়েক সেকেন্ড সিফাতকে জড়িয়ে ধরে, রেখে আবার ছেঁড়ে দেয়। হাসি হাসি মুখে বলে..

– ধন্যবাদ সিফাত। আমি সত্যিই ভাবিনি, আমি এতটা গুরুত্বপূর্ণ কারো কাছে। তুমি না থাকলে হয়ত জীবনের মানেটা কি তা জানতে পারতাম না।

অবনি কথাটা বলেই আবারো দৌড়ে রুমে প্রবেশ করে। সিফাত নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আঁড়াল থেকে অর্ন সবটা দেখছিল। অর্ন দ্রুত হেঁটে এসে দাঁড়ায় সিফাতের পাশে। কাধে হাত দিয়ে বলে…

– অবাক হচ্ছিস? মেয়েটা ওরাকমই। ছোট থেকে কেউ যদি একটু আদর করে, মানে অতি সামান্য আদর করে ডাকলে সে অনেক খুশি হতো। আর তুই তো অনেক কিছু মোটিভেট করে বলেছিস। তাকে গুরুত্ব দিয়েছিস। সে অনেক খুশি। আমিও চাই সে সবসময় এমন খুশি থাকুক। ছোট থাকে অবনিকে মজা করে ডাকতাম অবন বলে। অবন বলে বলে লবণ বানিয়ে দিয়েছিলাম। সে এতেই খুশি হয়ে বলেছিল ‘আমার এমন নাম ধরে ডাকলে খুব ভালো লাগে, খুশি খুশি লাগে, কেউ তো আমাকে অন্য নামে ডাকছে, এটাই তো অনেক বড় পাওয়া।’ যাইহোক, তোরা দুজনেই অনেক খুশি দেখছি।
– থ্যাংকস দোস্ত…

সিফাত অর্নকে জড়িয়ে ধরে, সেখান থেকে চলে যায়। অর্ন জোরে একটা নিঃশ্বাস নিল। ওর চোখের কোণে পানি জমা শুরু করেছে। বুকের ভিতরটা কেমন মোঁচড় দিয়ে উঠল। অর্ন এখন পুরোপুরি অবনির জন্য মনের মধ্যে ভালোবাসা অনুভব করা শুরু করেছে। সে রুমের মধ্যে যাওযার জন্য পা বাড়ায়। তখনি কে যেন পিছন থেকে হাত টেনে ধরে অর্নের। ঘুরে তাকিয়ে দেখে শেফা দাঁড়িয়ে আছে। শেফা অর্নের হাত ধরে, নিজের রুমে নিয়ে যায়। শেফা দরজা আটকে দিয়ে, অর্নের সামনে এসে দাঁড়ালো। অর্ন অবাক হয়ে শেফার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর..

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে