প্রণয় পর্ব-০৬

0
928

#প্রণয়
#৬ষ্ট পর্ব
#আবির হাসান নিলয়

ইরার কথা শুনে অবনি অনেকটাই রেগে যায়। অবনিকে কিছু বললে হয়ত অবনি মেনে নিতো। কিন্তু অর্নকে করা অপমান অবনি একদমই সহ্য করতে পারেনি। সে বসা থেকে উঠে আসে। ইরাকে বলা শুরু করে..

– কে তুমি? আমার অর্নকে কেনো বকছো? সে কি করেছে? তাকে বকার অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে? এটা ভদ্র লোকের বাড়ি। তোমার মত মেয়ে এসে চিৎকার করবে, তাও বাড়ির ছোট কর্তাকে, এটা তো হবে না। বেরিয়ে যাও। (অবনি)
– তুই আমাকে ভদ্রতা শেখাচ্ছিস? জানিস আমি কে? আমি কি হই অর্নের? অর্ন তুমি চুপ করে আছো কেনো? আমাকে কথা শোনাচ্ছে, তুমি দেখছো না? (ইরা)
– সে কি বলবে? সে অসুস্থ। সে কথা বলতে পারবে না। তুমি বেরিয়ে যাও। কে তুমি সেটা জানার কোনো দরকার নেই। আমার সামনে আমার অর্নকে কেউ কোনো বাজে কথা বলতে পারবে না। (অবনি)
– তোকে আমি…

ইরা অবনির দিকে এগিয়ে যায়। অবনির গালে চড় দিতে য়াচ্ছিল। অর্ন দ্রুত এসে ইরার হাত ধরে। ইরাসহ বাকি বন্ধুরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। ইরা হাত ছাঁড়িয়ে নিয়ে বলে..

– বাহ অর্ন বাহ.. এক রাতে এত পরির্তন? তোমার মত খারাপ ছেলে আমি আর দেখিনি। (ইরা)
– থামো ইরা। তুমি যা ভাবছো তা এমন কিছুই না। (অর্ন)
– লজ্জ্বা করছে তোমার? আমাদের সবার সামনে মিথ্যে কিভাবে বলতে পারো? (ইরা)
– বললাম তো, এমন কিছুই না। (অর্ন)
– তাহলে কেমন? (ইরা)
– আমি রাতে প্রচন্ড দূর্বল ছিলাম। বাড়িতে কেউ ছিল না। অবনি ডক্টর ডেকে আমাকে সুস্থ করার সব রকম চেষ্টা করে। আমি সোফাতে বসে ছিলাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি জানিনা। তারপর উঠে দেখি তোমরা আসছো। (অর্ন)
– বাহ.. কি সুন্দর গল্প। জানতাম এটাই বলবি। আমার সামনে কখনো আসবি না তুই। (ইরা)

ইরা কথাটা বলে বের হয়ে যাচ্ছিল। অর্ন দৌড়ে ইরার হাত টেনে ধরে। ইরা জোরে হাত ঝটকা দিয়ে ছাঁড়িয়ে নিল। অর্ন পিছন থেকে ইরাকে ডাকাডাকি শুরু করে। কিন্তু ইরা আর সেখানে দাঁড়ায় না। অর্ন ওর বন্ধুদের কাছে আসে। সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো..

– তোরা কিছু বল ইরাকে। আমি ইরাকে ভালোবাসি। অবনির সাথে আমি কিছুই করিনি। (অর্ন)
– চোখের সামনে এমন কিছু দেখেও কিভাবে ইরাকে আটকাবো? এখন তো মনে হচ্ছে, তুই তোর বউ পেয়ে বেশ আছিস। ইরাকে শুধু শুধু কেনো কষ্ট দিলি অর্ন। (সিমি)
– শিহাব, সিমি এসব কি বলে? ইরা চলে গেলো, প্লিজ আটকা ওরে। (অর্ন)
– থাম অর্ন। প্লিজ এবার ওকে একটু শান্তি দে। ইরাকে আর কত কষ্ট দিবি। ভালোবাসা দেখিয়ে ইরাকে কষ্ট দিয়ে, তুই অবনিকে বিয়ে করলি। ভাবছিস সে কষ্ট পাবেনা? ইরার কান্না আমরা দেখেছি। মাফ করে দে। আর যা করছিলি বউয়ের সাথে, সেটাই কর। (শিহাব)

সবাই চলে গেলো বাড়ি থেকে। অর্ন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইল ওদের চলে যাওয়ার দিকে। অর্নের পিছনে অবনি দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণ সে কোনো কথা বলেনি। কেবল চুপচাপ দাঁড়িয়ে এতকিছু দেখছিল। ইরাকে আজ প্রথমবার দেখলো অবনি। সত্যিই ইরা রূপবতী। ইরার উজ্জ্বল রূপের মাদকতায় অবনি কিছুই না। সে অতি তুচ্ছ এক মানবী। ইরার হাতের রঙ এর কোনো সৌন্দর্যও অবনির মধ্যে নেই। ইরা এটা ভেবেই কষ্ট পাচ্ছে যে… ‘ইশ..! ইরা মেয়েটা কতই না মিষ্টি রূপবতী। আমি যদি একটু ফর্সা হতাম। হায়! আফসোস। আমি কেনো কালো হলাম? উপরওয়ালা আমার তো রূপ নিয়ে কোনো অভিযোগ ছিল না। এভাবে পরীক্ষা কেনো নিচ্ছো? আমার সামনে হ্যান্ডস্যাম হাজবেন্ড। তার কতিপয় বান্ধবি নতুবা গার্লফ্রেন্ড এর এত সৌন্দর্য, যা দেখে আমার যে বড্ড হিংসে লাগছে, বড্ড বেশিই তুচ্ছ মনে হচ্ছে আমার নিজেকে। আমার কোনো যোগ্যতাই যে নেই অর্নের সামনে দাঁড়ানোর।’

অর্ন কাঁদছে। ইরাকে খুব বেশিই ভালোবেসেছে অর্ন। যথোচিত না হয়ে অনুচিত হয়েছে তার সাথে। বন্ধুরাও তাকে ছেঁড়ে চলে যাচ্ছে কালো মেয়েটি তার বউ বোলে। এত কষ্ট অর্ন কোথায় রাখবে? সে উঠে দাঁড়ায়। পিছনে ঘুরতেই অবনিকে দেখতে পায়। অর্ন কিছু না বলে ভিতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। অবনি বলে..

– অর্ন, আমি ইচ্ছে করে তোমার কাছে আসেনি। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তোমার পায়ের কাছে। তুমিই রাতে আমাকে…
– চুপ কর তুই। তোকে আমার এক মুহুর্তও সহ্য হইনা। কেনো বুঝিস না তুই? আর কি করলে তুই বুঝবি? আমার তো সব শেষ করে দিলি। দেখলি না, আমার ভালোবাসাটাও আজ হারিয়ে গেলো। (অর্ন)
– আমি বুঝিনি এতকিছু হবে। কেনো বিয়ের দিন সবকিছু বলোনি পরিবারকে? (অবনি)
– ফাজলামো করিস? কিভাবে বলতাম আমি? দেখিসনি সবাই আমার দিকে কিভাবে আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিল? আমার দোষটা কোথায় বলতে পারিস? (অর্ন)
– তোমার কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমার। আমি কেনো তোমার সাথে জড়িয়ে গেলাম। আমার মত মেয়ে তোমার সাথে জড়ানোর যোগ্যতা নেই। জড়ানো দূরে থাক, কথা বলারও যোগ্যতা নেই। ঠিক তো, তোমার কোনো দোষ নেই। (অবনি)
– চুপ কর, আমার কোনো কিছুই সহ্য হচ্ছে না। আমি হারিয়ে যাবো বহুদুরে। (অর্ন)
– না, তুমি কেনো হারাবে? আমিই তার আগে হারিয়ে যাবো। আমার জন্য তোমার অপমান হচ্ছে, এটা আমি কখনো চাইনি, আর না চাইবো। (অবনি)
– প্লিজ আমাকে একা থাকতে দে।

অর্ন কথাটা বলে রুমে চলে যায়। অবনি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সেখানেই। অবনি বালিশে মুখ গুজে কান্না করতে থাকে। একটা কালো মেয়েকে বিয়ে করে অর্ন না পারছে কারো সামনে যেতে, আর না পারছে বউকে প্রেজেন্ট করাতে। গর্ব করে কাউকে কিছুই বলতে পারছে না অবনির ব্যাপারে। সবকিছু ওর অসহ্য লাগছে।
.
ইরা গাড়িতে বসে আছে। পাশে শিহাব। শিহাব গাড়ি চালাচ্ছে। ইরা বসে বসে কাঁদছে। শিহাব ইরার দিকে তাকিয়ে বললো..

– মন খারাপ করো না। অর্ন এমন একটা কাজ করবে, কোনোদিস ভাবতেই পারিনি। বিয়ের আগে অনেকবার বারণ করেছিলাম। তোমার কথাও বলেছিলাম। সে তোমার কথা শুনে পাত্তায় দেয়নি। বারবার মনে করিয়েছিলাম অর্ন বিয়েটা করিস না, ইরা তোর ভালোবাসা। সবটা হারিয়ে যাবে। কিন্তু কে শুনলো কার কথা। সবসময় মানুষ ভুল মানুষকেই ভালোবাসে। অর্নকে ভালোবাসাটাই তোমার ভুল হয়েছিল। (শিহাব)
– আমার কি হবে? আমি কাকে নিয়ে থাকবো ভাইয়া? (ইরা)
– তোমার আবার কি হবে? তুমি জানো, তুমি কতটা সুন্দরী? তোমার চোখে এত বেশি মায়া যে, ছেলেরা পাগলের মত পড়ে আছে। তোমার হাসি দেখলে মনের মধ্যে সব কষ্ট কখন যে চলে যাবে সে টেরও পাবে না। তুমি কেনো কাঁদবে? আর ভাইয়া কি হা? যাইহোক, কেউ তোমার পাশে না থাকলে আমি আছি। তোমার যখন মস খারাপ হবে, আমাকে বলবে। আমি তোমাকে সাপোর্ট করবো, মন ভালো করার জন্য সবকিছু করবো। চিন্তা করো না। আমি আছি তো তোমার পাশে।

শিহাব কথাটা বলে ইরার দিকে টিস্যু পেপার বাড়িয়ে দিল। ইরা চোখ মুছতে থাকে। শিহাব মনে মনে অনেক খুশি। কোথায় ইরা, আর কোথায় অবনি। ইরার জন্য সব ছেলে উন্মাদ। আর সেই ইরাকে অবনির জন্য অর্ন ছেঁড়ে দিল। শিহাবের কাছে অর্ন বড্ড বোকা। সুন্দরী ললনা ছেঁড়ে অর্ন বিয়ে করেছে কয়লাময় এক নারীকে। হাস্যকর। শিহাব বললো..

– চলো কোথাও ঘুরতে যাই। তোমার মন ভালো হবে।
– কোথায় যাবো? কিছুই ভালো লাগছে না। আপনি শুধু শুধু এগিয়ে দিতে আসলেন। (ইরা)
– এটা আর এমন কি? ভাবছিলাম যদি কিছু হয় তোমার। টেনশন হচ্ছিল, এ জন্য এগিয়ে দিতে আসলাম। (শিহাব)
– অন্যদিন ঘুরবো। আজকে বাড়িতে যাবো। (ইরা)
– ওকে।

শিহাব আর কথা বাড়ায় না। ইরার বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো। তারপর নিজে নেমে দাঁড়ালো। ইরা বায় জানিয়ে ভিতরে চলে আসে। শিহাব মনে মনে হাসে। ইরাকে নিজের করে নেওয়ার একটা বিরাট সুযোগ তার কাছে ধরা দিচ্ছে। বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড ইরা, তাকে এখন নিজের করে নিতে চাইছে শিহাব। এ জন্য অর্নকে কোনো ভাবেই ইরার ধারে কাঁচে ঘেষতে দেবে না সে।
.
অর্নের ঘুম ভাঙে। বাড়ি ভর্তি লোকজনের চিৎকার শুনতে পেলো সে। মা বাবারা বাড়ি এসেছে। অর্ন চোখ মেলে তাকায়। রুমের টেবিলের চেয়ারে বসে আছে অবনি। সামনে খাবারের প্লেট। টেবিলের উপরের ঔষধগুলো গুছিয়ে রাখা। অর্ন দেয়ার ঘড়ির দিকে তাকায়। বিকেল চারটা বাজতে গেছে। অর্ন আবার অবনির দিকে তাকালো। সকালে যে শাঁড়ি পরে ছিল, ওটা এখনো পরা। অর্ন প্রশ্ন করে..

– কি ব্যাপার তুই এখানে কেন?
– রুমটা তো আমার বরের, তাই কোথায় থাকবো আমি? (অবনি)
– মানে এখানে বসে কি করিস? (অর্ন)
– তোমার খাবার নিয়ে বসে আছি। রান্না অনেক আগেই শেষ হয়েছিল। (অবনি)
– তো, রেখে যাবি। তোকে কে বসে থাকতে বলেছে? (অর্ন)
– আসলে, তোমার হাতে ব্যান্ডেজ। রেখে গেলে খায়তা কিভাবো? এ জন্য বসে ছিলাম। (অর্ন)
– তোর কি আর শাঁড়ি, কাপড় নেই? অসহ্য। (অর্ন)
– হুম আছে তো। আসলে খাবার নিয়ে আমি তিন ঘন্টা ধরে বসে আছি। ১টার সময় এসে দেখি তুমি ঘুমাচ্ছো। ডাকিনি। যদি ঘুম ভাঙার পর তোমার কষ্ট হয়, বা রাগ হয়। আমাকে বকা দিতে যেয়ে যদি তোমার আবার কষ্ট হয়। তোমার মন খারাপ হবে ভেবে আর ডাকিনি। এ জন্য অপেক্ষা করছিলাম কখন তোমার ঘুম ভাঙবে। ভেবেছিলাম খাইয়ে, তারপর গোসল করবো। কিন্তু তোমার ঘুম ভাঙেনি। চারটার সময় ঘুম ভাঙলো। এভাবেই বসেছিলাম। এক মুহুর্তের জন্যও নড়িনি। দিনে খাওয়ার আগে যদি কেউ ঘুমায় তাহলে ঘুম ভাঙার পর তার অনেক খুধা লাগে আমি জানি। তোমারও লাগবে, আর তাছাড়া তোমার তো ঔষধও খেতে হবে। এ জন্য ঘুম ভাঙলে যদি খাবার না পাও, ঔষধ দিতে যদি দেরি করি তাহলে তো তুমি সুস্থ হবানা। এ জন্য বসেই ছিলাম। উঠিনি একবারো। সরি.. বকা দিও না এখন। পরে দিও। আগে খেয়ে নাও।

অবনির কথা শুনে অর্ন যেন হা হয়ে যায়। কিন্তু এত ভালোবাসার কথা ওর মাথায় ঢুকছে না। মাথাটা তখনো ইরার জন্য তালগোল পাকিয়ে চলেছে। তবে অবনি এতক্ষণ ধরে যে বকবক করলো, সেটা শোনেনি এমন নয়। অর্ন প্রথমে বিরক্তি নিয়ে শুনলেও পরে হা হয়ে গেছে সবটা শোনার পর। অর্ন প্রশ্ন করে..

– কেনো করছিস এগুলো? জানিস না তুই.. তোকে আমি বউ হিসেবে মানিনা। যতটুকু কথা বলি, তা ছোট বেলার বন্ধু হিসেবে। তাও অতটা আগ্রহ নেই। (অর্ন)
– আমি জানি তো সবটা। এ জন্য তোমার থেকে কোনো কিছুই চাওয়ার আমার নেই। তুমি অবহেলা দিলেও সেটা আমি গ্রহন করে নিতে পারবো, অবহেলাটাকে ভালোবেসে গুছিয়ে রাখতে পারবো। আমার এখন আফসোস নেই। আমি যে তোমার সাথে কথা বলছি এটাই তো বিশাল ভাগ্যের ব্যাপার স্যাপার। নাও হা করো। খাইয়ে দিই।

এরিই মধ্যে অবনির ভাত মাখানো শেষ। অর্ন হা করে। অবনি গালে স্পর্শ পেতেই দেখে অর্নের গায়ে অনেক জ্বর। অবনি খাবার এগিয়ে দিতে দিতে বলে..

– তোমার গায়ে এত জ্বর.. আমাকে কেনো বলোনি? (অবনি)
– তুই আমাকে টাচও করিস নি? (অর্ন)
– নাহ.. যেখানে কাছে আসা বারণ, সেখানে স্পর্শ করাটাই তো চাঁদ হাতে পাওয়ার মত খুশির ব্যাপার। তুমি আমার কাছে সত্যিই একটা চাঁদ। যাকে দূর থেকে দেখা যাবে, কিন্তু স্পর্শ করার ক্ষমতা আমার নেই। আমার কাছে এমন রকেটও নেই যে তুমি নামক চাঁদে যেয়ে তোমাকে আশ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখবো। সে ক্ষমতা আমার নেই। সে যোগ্যতাও আমার নেই। অনেক জ্বর তোমার।।তাড়াতাড়ি খাও। (অবনি)
– তুই এতক্ষণ এখানে কিভাবে বসেছিলি? আমি হলে তো দুই মিনিটেই চলে যেতাম। (অর্ন)
– হাহাহা.. রোগে পড়েছো কখনো? এটা একটা রোগ। যে রোগে আমি বহু বছর ধরে আক্রান্ত। রোগের নামটা তোমাকে বলবো না। যাইহোক, বললাম না তুমি সত্যিই একটা চাঁদ। আর চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে কি কারো ক্লান্ত, অসহ্য, এসব হয়নাকি? হয়, যাদের চাঁদ দেখার সময় থাকেনা। আমার তো তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে যদি এমন দু তিনটে রাতের ন্যায় সময় এনে দেয় কেউ, তবুও আমি এভাবে বসে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবো। (অবনি)
– দু তিনদিন…! (অর্ন)
– কেনো কম হয়ে গেলো? আরে আমি এভাবে বসে মাসের পর মাস থাকতে পারবো। তোমাকে দেখবো শুধু, এতেই চলবে। কিন্তু দু তিনদিন বলেছি কারন মানুষ খাবার/পানি ছাড়া কতদিনই বা বেঁচে থাকবে? আমি তো সবকিছু ছেঁড়ে তোমাকে দেখবো বলেই বসেছিলাম। জানি বিশ্বাস করবে না, আমি এখনো অবদি কিছু না খেয়েই বসে আছি।

অর্ন চুপ হয়ে গেলো। অবনির মুখের দিকে তাকাচ্ছে না। অবনির তাতে কিছুই যায় আসেনা। সে অর্নকে ভালোবাসে। যতদিন বাঁচবে এমন অবহেলার ভালোবাসা নিয়েই অবনি বেঁচে থাকবে। করুক অর্ন যতখুশি অপমান। তবুও সে ভালোবাসা দেখিয়ে যাবে। খাবার খাওয়ানো শেষ হয়। অবনি বলে..

– দাঁড়াও জ্বরের ঔষধ আনি। তুমি একটু অপেক্ষা করো। (অবনি)
– হুম।

অবনি বাইরে চলে যায়। অর্ন বিছানা ছেঁড়ে উঠল। ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কিন্তু প্রচন্ড জ্বর আর মাথাব্যাথার কারনে একপা আগালে টলে পড়ার জন্য ধীরে ধীরে পা ফেলতে শুরু করে। কিন্তু বেশিক্ষণ সে হাঁটায় মনোনিবেশ করতে পারেনি। একটু লম্বা পা ফেলতেই টলে পড়তে যাচ্ছিল। আর তার আগেই অবনি এসে শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরে অর্নকে। অর্ন অবনির শাঁড়ি খোলা পেটে হাত নিয়ে কোমর খাঁমচি দিয়ে ধরে। অবনি একটু কেঁপে উঠলো। এই প্রথমবার কোনো পুরুষ তার পেট স্পর্শ করে কোমর জড়িয়ে ধরেছে। অর্ন টাল সামলানোর জন্য কোথায় ধরেছে সে খেয়াল তাৎক্ষণিক তার নেই। অবনি বকা দেওয়া শুরু করে..

– আরে কি সমস্যা তোমার? বারণ করলাম না, উঠবে না। তবুও শুনলে না তো? সে সাইডে পড়তে যাচ্ছিল, সে সাইডে টেবিল। মাথাটা লাগলে কেঁটে যেতো। সবসময় বেশি বেশি করো তুমি। (অবনি)
– আমি বাথরুমে যাবো। (অর্ন)
– হুম চলো।

অর্নকে জড়িয়ে ধরে অবনি নিয়ে যায় ওয়াশরুমে। অর্ন যখন অবনিকে ছেঁড়ে দিয়ে প্যান্ট নামাতে যাচ্ছিল। তখনি অবনি বলে..

– ঐ থামো থামো.. এসব কি হা? আমি যে আছি সে খেয়াল আছে? (অবনি)
– ওহ, সরি.. উলটো দিকে তাকিয়ে থাক। তবে আমাকে ধরে রাখ।

অর্ন কথাটা বলে এক হাত পিছনে বাড়ায় কিছু ধরে সাপোর্ট পাওয়ার জন্য। কিন্তু তেমন কিছু নেই পিছনে। অবনি পিছনে তাকাচ্ছে না। সে ঘুরে রুমের দিকে তাকিয়ে আছে। অর্ন হাত আরেকটু লম্বা করে। কিছু একটা সাপোর্ট পায় অর্ন। কিন্তু অবনি সাথে সাথেই চমকে উঠে। অর্ন অবনির পেট থেকে কিছুটা উপরের কোমর হাতের মধ্যে খামচি দিয়ে ধরে। আরেকটু উপরে হাত তুললেই অর্ন অনেক কিছুর সন্ধান পাবে। অবনি নিজেকে ছাঁগানোর চেষ্টা করতে যাচ্ছিল, কিন্তু অর্ন আবার পড়ে যাওয়ার উপক্রম হওয়াতে ছাঁড়ায় না। অর্নের কাজ শেষ হলে বের হয়। অবনি বলে..

– ঘোরের মধ্যে আছো তাইনা?
– হুমম, জ্বরে কিছুই মনে পড়ছে না আমি কে? শুধু তোকে চিনতে পারছি। তুই অবনি। (অর্ন)
– তাই নাকি? ঢং.. বেয়াদব ছেলে, ঘরে বউ রেখে বাইরের মেয়ের জন্য কান্না করে। ইচ্ছে করছিল ছুঁরি এনে গলায় দিই একটান। খুন করবো একদিন তোমাকে। আমাকে তো চেনো না। মেয়েদের জন্য কান্না তাইনা? থাঁপড়িয়ে সব দাঁত ফেলবো বেয়াদব কোথাকার।
– কি বলছিস, তোর কথা আমি বুঝতে পারছিনা। (অর্ন)
– এ জন্য তো বলছি। এখন তো কিছুই বুঝবা না। তাই বকা দিলাম। (অবনি)
– ওহ, তাহলে আরো দে। মনে হচ্ছে আরো খুধা লাগছে। (অর্ন)
– এহ. বকা খাওয়ার জন্য নাকি তার খুধা বাড়ছে। ফাজিল..

অর্নকে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে ঔষধ খাওয়ালো অবনি। তারপর শুইয়ে দিয়ে দৌড়ে ওয়াশ রুমে আসলো। আয়নার সামনে নিজের কোমর রাখে। অর্ন যেখানে যেখানে ধরেছে, সেখানে নখের দাগ বসে কেঁটে গেছে। কিন্তু অবনির কোনো কষ্ট হচ্ছে না। সে এটা দেখে হাসতে থাকে। মনে মনে বলে “যাক ছেলেটা আমাকে স্পর্শও করতে পারে। হিহিহি…” তারপর…
চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে