প্রণয় আসক্তি পর্ব-০৪

0
1186

#প্রণয়_আসক্তি
লেখিকাঃমাহযাবীন
পর্বঃ০৪

“ভাইটু,তুমি কি ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাও?”
মিয়ামির এমন আজগুবি প্রশ্নে তার দিকে বিরক্তিমাখা দৃষ্টিতে তাকায় আর্শ।মুহূর্তেই আবার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে আয়নায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সে। নিজের আগে থেকেই আঁচড়ানো চুলে আবারও চিরুনি ছুঁইয়ে ভ্রু কুঁচকে মিয়ামিকে উদ্দেশ্য করে আর্শ বলে ওঠে,
-এ বাসায় কি তোমার?কেনো এসেছো?
-আর্শি ডেকেছে। বললো আমায় নিয়ে বাইরে যাবে।
মিয়ামির কথার উত্তরে আর কিছু না বলে নিজের অফিসের ব্যাগে নিজের প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র নিয়েছে কিনা তা দেখায় মনোনিবেশ করে আর্শ।কিছুটা সময় চুপ থেকে মিয়ামি আবারও প্রশ্ন করে ওঠে,
-আমার প্রশ্নের উত্তর?
নিজের কাজ করতে করতেই আর্শ বলে ওঠে,
-কি প্রশ্ন?
-এই যে,আপনার ঠোঁট যে এমন কালো তার কারণ তা কি?কালো লিপস্টিক লাগান?
বলেই ঠোঁট চেপে হাসে মিয়ামি।এবার মিয়ামির দিকে দৃষ্টি স্থির করে আর্শ। এক শীতল চাহনি নিয়ে সে মিয়ামির দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। আর্শের এভাবে তার দিকে অগ্রসর হওয়ার কারণ বোধগম্য হচ্ছে না মিয়ামির।সে ও আর্শের চোখে চোখ রেখে স্থির দাঁড়িয়ে আছে নিজের অবস্থানে।
ধীরে ধীরে আর্শ মিয়ামির একদম কাছে চলে আসে।এতো টাই কাছে যে উভয়ই একে-অপরের নিঃশ্বাস টি অনুভব করছে।এ মুহূর্তে দু’জনের মাঝে শুধু মাত্র কয়েক আঙুলের দূরত্ব।দু’জনের দৃষ্টিই স্থির ও অপলক তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে।একটু সময় নিয়ে আর্শ নিন্ম স্বরে বলে ওঠে,
-ছেলেদের ঠোঁট লিপস্টিকে কালো হয় না,মিয়ু।
কথাটি বলে একটু থেমে আর্শ আবারও বলে ওঠে,
-যেকোনো জিনিস পোড়ালে তা কয়লা হয়ে যেমন কালো বর্ণ ধারণ করে ঠিক সেভাবেই এ ঠোঁটের রং কালো।
-তোমার ঠোঁট পুড়ে গিছেয়ে,ভাইটু?
-হু।
চিন্তিত ও ভীত চাহনিতে আর্শের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে নিজের ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী দিয়ে আলতো করে আর্শের ঠোঁট স্পর্শ করে মিয়ামি বলে ওঠে,
-তাহলে তো মলম লাগাতে হবে।লাগিয়েছো?
মিয়ামির এমন বোকা প্রশ্নে আর্শের ঠোঁটে একটু হাসি ফুটে ওঠে। মেয়েটিকে সে বোঝাতে চাইলো কি আর মেয়েটা বুঝলো কি!
ঠোঁটে হাসি নিয়েই মিয়ামির কাছ থেকে সরে এসে আবারও নিজের কাগজ-পত্রের কাছে যেয়ে আর্শ বলে ওঠে,
-এর কোনো মলম হয় না।
আর্শের কথায় ভ্রু দু’টি কুঁচকে মিয়ামি জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-কেনো?
-এতো কিছু বুঝার বয়স তোমার এখনো হয়নি। আমাকে আর বিরক্ত কইরো না তো!যাও আর্শির কাছে যাও।
কথাগুলো বলার সময় আর্শের চেহারায় বিরক্তি স্পষ্ট প্রকাশ পেয়েছে।তাই মিয়ামি আর কথা না বাড়িয়ে সোজা কক্ষ ত্যাগ করলো।আর মিয়ামি যেতেই আর্শও একটি দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো।

!!
কোচিং এ একই বেঞ্চে আর্শি,মিয়ামি ও নিশি বসে আছে।নিশি হচ্ছে আর্শি ও মিয়ামির সাথে একই কোচিং এ পড়ে,ওদের কোচিং এর বান্ধবী। অর্থাৎ নিশি শুধু কোচিং এই তাদের সাথে পড়ে,কলেজ ভিন্ন।
একই বেঞ্চে মিয়ামি, আর্শি ও নিশি বসেছে।মিয়ামি বেঞ্চের মাঝে বসে আছে এবং তার ডান দিকে আর্শি,বাম দিকে নিশি।প্রতিদিন তারা ঠিক এভাবেই বসে।৩ জন মিলে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে এখন।কারণ তাদের শিক্ষক এখনো আসেননি।কথার এক পর্যায়ে একটি কথা মনে পরতেই মিয়ামি, আর্শিকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-দোস্ত শোন,তোর এফবিতে ‘বি’ দিয়ে শুরু হয় এমন নামের কোনো ছেলে এড আছে?
মিয়ামির প্রশ্নে সাথে সাথেই আর্শির বিহানের কথা মনে পরলো।ছেলেটার কথা ভাবলেই মন টা কেনো যেনো ভালো হয়ে যায় তার।কিন্তু মিয়ামি হটাৎ তাকে এমন প্রশ্ন কেন করলো ভাবতেই ভ্রু কুঁচকে আর্শি বলে ওঠে,
-হ্যা।কিন্তু কেন?
-ছেলেটা এক নাম্বারের লুচ্চা।গত কাল উল্টো-পাল্টা ম্যাসেজ দেওয়ায় ব্লক দিছি আমি।
অবাকের চরম শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে আর্শি। কি শুনছে সে!অবাক কন্ঠেই বলে ওঠে,
-তোর কোথাও ভুল হচ্ছে।
-মানে?
-মানে উনি মোটেও ঐ টাইপের ছেলে না।
-মানে তুই বলতে চাইতেছিস আমি তোরে মিথ্যা বলতেছি?এর মানে তুই আমার থেকেও বেশি ঐ ছেলেরে বিশ্বাস করিস?
-আরেহ নাহ।তুই আগে বল ছেলের নাম বিহান খান?
-ঠিক মনে পরতেছে না।ওতো খেয়াল করিনি।কিন্তু ‘বি’ দিয়ে শুরু নাম আর শেষে খান আছে।
এবার একটু চিন্তা করতে সময় নেয় আর্শি।তার ফ্রেন্ডলিস্টে বিহান ছাড়া ‘বি’ দিয়ে আর কার নাম শুরু হয় ভাবতেই এক ছেলের কথা মনে পরে যায়।ছেলেটির নাম বিদ্বান খান।এবার আর্শি মিয়ামিকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-ছেলেটির নাম বিহান খান নাকি বিদ্বান খান?
-ওহ হ্যা,এইবার মনে পরছে।বিদ্বান ই ছিলো নাম।
মিয়ামির কথায় আর্শি ঠোঁটে হাসি টেনে বলে ওঠে,
-দেখছিস বলছিলাম না,বিহান নাহ।
এবার আর্শির দিকে সন্দেহের নজরে তাকিয়ে মিয়ামি বলে ওঠে,
-এতো বিশ্বাস! প্রেমে পরছিস নাকি?
মিয়ামির কথা কানে আসতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো আর্শির মুখমণ্ডল।সে মিয়ামির কথায় অস্বীকৃতি জানিয়ে বলে ওঠে,
-না না এমন কিচ্ছু না।
আর্শি অস্বীকার করলেও মিয়ামি তা ঠিক বিশ্বাস করতে পারলো না।সে আর্শিকে আর কিছু না বললেও সন্দেহ টা নিজের মাঝেই রেখে দিলো।

!!
ভালোবাসার বেশ কয়েকটি চিহ্ন রয়েছে।তার মাঝে অন্যতম একটি হচ্ছে “ঈর্ষানুভূতি”।নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের মাঝেই এ অনুভূতিটি কাজ করে।প্রতিটি মানুষই চায় তার ভালোবাসার মানুষটি একান্তই তার হয়ে থাকুক।প্রতিটি মানুষই চায় একটি মানুষ একদমই তাদের ব্যক্তিগত একজন হয়ে থাকুক।এমন একটি মানুষ চায় যার উপর তাদের পূর্ণ অধিকার থাকবে,তারা অধিকার ফলাতে পারবে নিরদ্বিধায়।এমন একটি মানুষ চায় যাকে নিজের রং এ রাঙিয়ে নিতে পারবে এবং নিজেকেও তাদের রং এ রাঙিয়ে নিতে পারবে।প্রতিটি মানুষই চায় তার এই ব্যক্তিগত মানুষটির মনে একা রাজত্ব করতে।আর তাদের এই ব্যক্তিগত মানুষটি অবশ্যই তাদের প্রচন্ড ভালোবাসার মানুষটিই হয়।হায়!প্রিয় মানুষটিকে একান্তই নিজের করে পাবার প্রবণতা নিজের মাঝে অনুভব না করলে কিভাবে প্রেমিক বা প্রেমিকা সে হয়?
বারান্দায় পেতে রাখা একটি চেয়ারে বসে আছে আর্শি।মনে তার হাজারো জল্পনা-কল্পনা।হটাৎ তার মনে পরে যায় কয়েকমাস আগের একটি কাহিনি।

আর্শি বিহানকে প্রায় ১ বছরেরও বেশি সময় ধরেই চিনতো তখন কিন্তু তাদের প্রতিদিন কথা বলা শুরু হয় এ কাহিনির ৪-৫ মাস আগে থেকে।বিহানের সাথে আর্শি ফেসবুকে আগে থেকেই এড থাকলেও ইন্সটাগ্রামে তখন নতুন এড হয় তারা।এড হওয়ার পর একদিন বিহানের আইডিতে ঢুকে বিহানের প্রতিটি পোস্ট দেখতে থাকে আর্শি।হটাৎই একটি ছবিতে চোখ আঁটকে যায় তার।
ছবিটিতে বিহান ও একটি মেয়ে একই সিএনজিতে।দু’জনের মাঝে দূরত্ব নেই বললেই চলে।এমন একটি ছবি দেখে কেনোই যেনো আর্শির ভিষণ খারাপ লাগা অনুভব হতে থাকে।এতোটাই খারাপ লাগছিলো তার যে নিজের অজান্তেই কখন তার এক চোখ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরেছে তা সে টেরই পায়নি।কিছুটা সময় ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকাকালীনই গালে ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভব হওয়ায় সে এক হাত দ্বারা নিজের গাল স্পর্শ করে।ওমনি চমকে উঠে আর্শি।সে কাঁদছে? কিন্তু কেনো?শুধু মাত্র বিহানকে অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখে?

এই স্মৃতিটি মনে পরতেই ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো আর্শির।এটিই ছিলো তার প্রথম ঈর্ষানুভূতি।এ দিনই প্রথম বারের মতো আর্শির মনে হয়েছিলো সে বিহানকে পছন্দ করতে শুরু করেছে।কারণ আর্শির মতে,ভালোবাসা হতে অনেক অনেক সময়ের প্রয়োজন। মাত্র ৪-৫ মাস কথা বলে ভালোবাসা হয় না।ভালোবাসা একটি গভীর অনুভূতি।আর তাই এ অনুভূতি তৈরি হতে অনেক সময় লাগে।এসব ভেবে সে বিহানের প্রতি তার অনুভূতিগুলোকে পছন্দ হওয়া পর্যন্তই ভেবেই রেখে দিলো।
এই ঈর্ষানুভূতির কাহিনির পর কোনো একদিন কথায় কথায় আর্শি জেনেছিলো যে বিহানের সাথে যে মেয়েটি সিএনজিতে ছিলো সে মেয়েটি আসলে বিহানের খালাতো বোন।কিন্তু তাও আর্শি এখন অব্দি সেই মেয়েটিকে বিন্দু পরিমাণ পছন্দ করে না।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে