প্রজাপতির রং পর্ব-১৬+১৭

0
985

#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_16
#Writer_NOVA

আজও একঘেয়েভাবে কানের কাছে টেবিল ঘড়িটায় এলার্ম বেজে যাচ্ছে।বালিশের ওপর হাতড়ে সেটাকে নিয়ে ঘুমের মধ্যেই বন্ধ করে দিলাম।ঘুমের রেশ কাটেনি।মাথাও ঝিমঝিম করছে।হাত-পাগুলো অবশ হয়ে আসছে।উঠতে চাইলেও উঠতে মন চাইছে না।বালিশে আবার মাথাটা হেলিয়ে দিতেই এলার্ম বেজে উঠলো।এই ঘড়ি আমাকে শান্তিতে ঘুমতে দিবে না। এবার বন্ধ না করে বালিশের নিচে মাথা দিয়ে দুই কান চেপে ধরলাম।এলার্ম বন্ধ না করলে কি ও থামবে।এক বস্তা বিরক্তি নিয়ে উঠে বসতেই হলো।ঘড়ি হাতে নিয়ে এলার্ম বন্ধ করলাম।আমি পরপর ৫ মিনিট পর চারটা এলার্ম দিয়ে রাখি।একটা শেষ হলেই আরেকটা শুরু হয়ে যায়।দূর থেকে আজানের সুর ভেসে আসছে।ডিম লাইট জ্বালিয়ে দেখলাম আমার পুত্রধন বালিশে পা দিয়ে মাথা পায়ের দিকে দিয়ে উল্টো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। ওকে ঠিক করে শুইয়ে দিলাম। এর কাজই হলো ঘুমের মধ্যে সারা খাট ঘুরা।চুলগুলো খোপা করতে করতে রওনা দিলাম ওয়াসরুমের দিকে।

এরিনঃ কি রে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আজ না তোর অফিসের প্রথম দিন।এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে তো দেরী হয়ে যাবে।রান্না করবি,শো করবি তারপর আবার অফিস।আজ থেকে আবার আরেকটা যুদ্ধ শুরু হলো তোর।নিজেকে শক্ত কেন তৈরি কর তার জন্য।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে সকালের ফ্রেশ বাতাস উপভোগ করছিলাম।নামাজ পরে বারান্দায় দাঁড়াতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। তখন চারিদিকে একটা আবছা আলোতে ঘিরে থাকে পৃথিবী। অন্ধকার বিদায় নিয়ে আলোর আগমন হয়। যেটা উপভোগ করতে আমার অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে।এরিন আমার পাশে দাঁড়িয়ে এসব কথা বললো।আমি ঘাড় ঘুরিয়ে নিষ্পলক চোখে ওর দিকে তাকালাম।

এরিনঃ কি হয়েছে তোর?

আমিঃ আমার আবার কি হবে?

এরিনঃ তুই কি আমাদের থেকে কিছু লুকাচ্ছিস?ইদানীং তোকে প্রায় আপসেট দেখা যায়।

আমিঃ তুই আজ এতো তাড়াতাড়ি উঠে গেলি?হিমি কি ঘুমোচ্ছে? তোর ক্লাশ কয়টায়?

এরিনঃ কথা ঘুরিয়ে ফেললি।তুই আজকাল বড্ড অদ্ভুত হয়ে গেছিস।

আমি ওর কথার উত্তর দিলাম না।মুচকি করে হেসে বাইরের দিকে মন দিলাম।পূর্ব দিগন্তে রক্তিম আভা দেখা যাচ্ছে। কিছু সময়ের মধ্যে সূর্যি মামাকেও হয়তো দেখা যাবে।আন্ধাকারের কোন রেশ থাকবে না। আমাদের জীবনটাও যদি এমন হতো।সূর্যের আলো দিয়ে সব অন্ধকার দূর করা যেতো।তাহলে হয়তো এতটা অসহ্যকর জীবন অতিবাহিত করতে হতো না।

এরিনঃ রান্না করবি না?

আমিঃ হুম।

এরিনঃ চল তোকে সাহায্য করি।আজ তোকে এমনি অনেক ধকল সহ্য করতে হবে।

আমিঃ আমি সামলে নিতে পারবো।তোর কিছু করতে হবে না।

এরিনঃ বেশি কথা বলিস না তো। চল আমার সাথে।

এরিন জোর করে আমাকে টেনে কিচেনের দিকে যেতে লাগলো।আজ বেশি কিছু করবো না। সকালের জন্য পাউরুটি টোস্ট, ডিম অমলেট ব্যাস শেষ। এই শর্টকাট রান্নার বুদ্ধিটা অবশ্য এরিনেরই।এই মেয়ে দুটো না আমাকে এতটা বুঝে যে ততটা আমিও বুঝতে পারি না।এরিন,হিমি আর তায়াং ভাইয়া না থাকলে যে আমি নাভানকে নিয়ে কোথায় থাকতাম তা একমাত্র আল্লাহ জানে।নিজেকে এদের জন্য খুব ভাগ্যবতী মনে হয়। মিনিট পনেরোর মধ্যে সব কাজ হয়ে গেলো।টেবিলে খাবার সাজিয়ে আমি খেতে বসে পরলাম।আর এরিন আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

এরিনঃ কি রে খাচ্ছিস না কেন?কখন থেকে খাবার নিয়ে বসে আছিস।খেয়ে তৈরি হয়ে নে।শো করতে কি যাবি না?

আমিঃ আমার কিছু খেতে মন চাইছে না। জানিস, এরিন আমার না মনে হচ্ছে আমার সাথে খুব খারাপ কিছু হতে চলেছে। আমি আগাম ঝড়ের পূর্বাভাস পাচ্ছি। মনটা বড্ড আনচান করছে।

এরিনঃ আরে তেমন কিছুই না।সারাদিন নানা কিছু নিয়ে অযথা চিন্তা করতে থাকিস তাই এমন হচ্ছে। কাজে ব্যস্ত থাকলে দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে।

আমিঃ সেদিন রাতে নাভানকে নিয়ে খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছি। ওকে নিয়ে অনেক ভয় করছে। ওকে একটু সাবধানে রাখিস।গতকালে তায়াং ভাইয়া বললো ওকে নাকি গত দুইদিন ধরে কেউ ফোলো করছে।আমার ভীষণ ভয় করছে এসব চিন্তা করে।নাভান,তায়াং ভাইয়ার কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না রে।তোরা তো জানিস এই ভাইটা আমার জন্য কি কি করেছে। ও যা করেছে আজকাল আপন ভাইও এমন করে না।এনাজ মারা যাওয়ার পর আমাকে একমাত্র তায়াং ভাইয়া সামলিয়েছে।ও ছিলো বলেই আজ আমি ও নাভান বেঁচে আছি।এখনো সবার আগে আমাদের কথা ভাবে।নিজের জীবনের পরওনা না করে আমাদের জন্য পাগল হয়ে যায়।কোথাও যাতে আমার বা নাভানের কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল ওর।এতে যদি নিজের জীবনও বাজি রাখতে হয় তাতেও দ্বিধা করে না।যে আমাদের মা-ছেলের জন্য এতকিছু করছে তার বিপদে আমি কিছু করতে পারছি না। নিজেকে এখন ইউসলেস মনে হচ্ছে।

এরিনঃ তুই খামোখা চিন্তা করছিস।আল্লাহ আছে তো আমাদের সাথে। উনি যা ভালো মনে করবে তাই আমাদের সাথে ঘটবে।

আমিঃ হুম তাও ঠিক।আমি উঠছি।গোসল সেরে তৈরি হতে হবে।

এরিনঃ কিছুই তো খেলি না।আমি কি টিফিনবক্সে করো দিয়ে দিচ্ছি।শো এর মাঝে খেয়ে নিস।

আমিঃ আমার গলা দিয়ে কিছু নামছে না।আর মনে হয় না নামবে।

এরিনঃ চুপচাপ খেয়ে নিবি।চিন্তা করতে করতে নিজের কি হাল করেছিস দেখছিস।আমি টিফিনবাক্সে দিয়ে দিলাম।

আমি কৃতজ্ঞতার হাসি দিয়ে এরিনকে জড়িয়ে ধরলাম।এই মেয়েটার আমার সবদিকে নজর।আমি কিসে ভালো থাকবে, কোনটাতে আমার ভালো হবে তার দিকে খেয়াল রাখবে।এরিনকে ছেড়ে ধীর পায়ে রুমের দিকে হাঁটতে লাগলাম।

🦋🦋🦋

—– আসসালামু আলাইকুম। হ্যালো লিসেনার।শুভ সকাল সবাইকে।আপনারা শুনছেন ঢাকা এফএম 90.4।আমি RJ নোভানাজ আছি আপনাদের শো ভোরের পাখি নিয়ে। সকাল ৭টা থেকে ১০ টা অব্দি আমি থাকছি আপনাদের সাথে। সবাই ভালো আছেন তো? দিনকাল কেমন কাটছে? আমার তো সবকিছু বোরিং লাগে।মুক্ত বাতাসে মনভরে নিঃশ্বাস নিতে পারলে ও পাখির কিচিরমিচির শুনে ঘুমের থেকে উঠতে পারলে হয়তো সব ঠিক হয়ে যেত।কিন্তু এই ব্যস্ত নগরীতে সেই ফ্রেশ বাতাস তো নেই।সেখানে পাখির দেখা মেলাই ভার।গ্রামে থাকতে প্রতিদিন সকালে পাখির ডাকে ঘুম ভাংতো।সেই দিনগুলো ভীষণ মিস করি।শহরটাতো বড্ড মনমরা ও বিষন্ন। চারিদিকে বিভিন্ন দূষণে আজ আমাদের বেঁচে থাকার অক্সিজেনও দূষিত হয়ে পরছে।এর পেছনে দায়ী কিন্তু আমরা।এই স্বার্থপর শহরে তো কোন পাখির দেখাও মিলে না।পাখির কিচিরমিচির যে নিমিষেই মন ভালো করে দিতে ক্ষমতা রাখে।এখানে শুধু কাকের দেখা পাবেন।সেখানে আমি এসে হাজির হয়েছি ভোরের পাখি নিয়ে। কেমন আছেন আপনারা? তা জলদী জলদী করে আমাকে টেক্সট ও কমেন্ট করে জানিয়ে দিন তো।আমাকে টেক্সট করতে হলে আপনাকে যা করতে হবে।আপনার ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে আপনার নাম, লোকেশন ও মনের কথা টাইপ করে পাঠিয়ে দিতে হবে ২৬৯৩৬৯ এই নাম্বারে।কমেন্ট করতে হলে জয়েন হতে হবে আমাদের অফিসিয়াল পেইজে। কথা না বলে চলুন ঘুরে আসি গানে।আপনাদের পছন্দের গানের কথাও কিন্তু আমায় জানিয়ে দিতে পারেন।আমি তা বাজিয়ে দিবো।সকাল সকাল এক কাপ চায়ের সাথে নিজের পছন্দের গান হলে কিন্তু মন্দ হয় না।কথা না বাড়িয়ে আমি গানে চলে যেতে চাইছি।কোন গানটা শোনা যায়?কোন গানটা? হুম পেয়ে গেছি।আমার প্লে লিষ্টে সবার আগে আমার প্রিয় একটা গানই আছে।এতক্ষণ পাখি নিয়ে কথা বলছিলাম।আর প্লে লিষ্টে দেখছি সর্বপ্রথমে বেলাল খান ও লিজার নিউ সং “পাখি” আছে।দেরী না করে চলুন শুনে আসি।

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

মনের ঘরে বসত করে,ছোট্ট একটা পাখি
সেই পাখিরে যতন করে,মনেই বেঁধে রাখি।

উড়াল পাখি করে আমায় বড় জ্বালাতন
সেই জ্বালাতে ধিকিধিকি জ্বলে সারাক্ষণ
সুযোগ পেলে চতুর পাখি উড়াল দিতে চায়
মনটা আমার খা খা করে ভীষণ যাতনায়।

ও পাখি, পাখিরে তোরেই শুধু ডাকিরে
রোদে রাঙা ভোর, নিশি ঘনঘোর
তোরেই শুধু ডাকিরে

ও পাখি, পাখিরে তোরেই শুধু ডাকিরে
রোদে রাঙা ভোর, নিশি ঘনঘোর
তোরেই শুধু ডাকিরে

(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন।লিখতে ইচ্ছে করছে না।)

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

গান চলছে নিজের মতো করে। কিন্তু আমার সেদিকে মন নেই। চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে দিলাম।শো শেষ করে আবার অফিসে যেতে হবে এটা মনে হতেই কান্না আসছে।এত ঝামেলা আর ভালো লাগে না। আমি একটু শান্তি চাই। ঐ তাজের সাথে দেখা হওয়ার আগেই থেকে মানসিক অশান্তিতে ভুগছি।তারপর একটার পর একটা ঘটছে।দরজায় টোকার শব্দ পেয়ে চট করে সেদিকে তাকালাম।

সাইমনঃ আসতে পারি মিসেস আহমেদ ?

আমিঃ হুম।

সাইমনঃ কফি!!!

আমিঃ আপনি কি ইদানীং আরজে ক্যারিয়ার ছেড়ে পিয়নে যোগ দিলেন নাকি মিস্টার সাইমন?

সাইমনঃ হঠাৎ এরকম কথা কেন?

আমিঃ না ইদানীং প্রায় খেয়াল করছি সকালের কফিটা আপনি সবাইকে দিয়ে যান।তাই আমার সন্দেহ হচ্ছে। আপনি আরজে ক্যারিয়ার বাদ দিয়ে অফিসের পিয়নের চাজরীটা লুফে নিলেন না তো।

সাইমনঃ আপমান করছেন?

আমিঃ একদম না। প্রশ্নই উঠে না।

সাইমনঃ আমার কিন্তু তেমনি মনে হচ্ছে।

আমি কথা না বলে কফির মগে চুমুক দিলাম।ছেলেটা ভীষণ ধুরান্দাজ।এর বায়োডাটার কিছুই আমি জানি না। শুধু আমি নই এই এফএম অফিসের কেউই জানে না। উনাকে জিজ্ঞেস করলেও নানা টালবাহানায় এড়িয়ে যায়।অন্যের পার্সোনাল বিষয় নিয়ে জীবনেও আমার মাথাঘামানোর প্রয়োজন পরেনি।আসলে আমার এই বিষয়টা ভালো লাগে না।তাই আমি এসব করি না।কিন্তু এই মানুষটাকে আমার মনে হয় অনেক বড় ঘাপলা আছে তার মধ্যে।

আমিঃ একটা কথা বলবো আপনাকে?

সাইমনঃ নিশ্চয়ই মিসেস আহমেদ।

আমিঃ আপনি নিজেকে যতটা বোকা প্রকাশ করেন আপনি কিন্তু মোটেও সেরকম নন।আপনি অনেক রহস্যঘেরা একটা মানুষ।এটা আমি ভালো করেই জানি।এবং আপনিও ভালো করে জানেন।তাই এসব বোকা ভাবটা না আমার সামনে প্রকাশ করবেন না।আমার এটা পছন্দ নয়।

সাইমনঃ আপনি সিবিআই অফিসারের বউ ম্যাডাম।আপনার স্বভাবটা তাই স্বামীর মতো হয়ে গেছে। সবকিছুতেই সন্দেহ করেন।

আমিঃ আপনি কথায় কথায় আমার স্বামীকে কেন টানেন বলেন তো? প্রত্যেকটা টপিকে ওর কথা আপনাকে বলতেই হবে।কিন্তু কেন?

সাইমনঃ আপনার স্বামীকে অনেক ভালোবাসতেন তাই না???

আমিঃ আগেও ভালোবাসতাম, এখনো বাসি আর ভবিষ্যতেও বাসবো।কিন্তু আপনি আমার কথা ঘুরানেন কেন?

সাইমনঃ নাহ্ তেমন কিছু না।আপনার মুখে আপনার স্বামীর অনেক কথা শুনেছি। তার ব্যক্তিত্ব আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। এমন একটা গুড পার্সোনালিটি মানুষের বউয়ের সাথে আমি কথা বলতে পারি তাতে আমি আনন্দিত।তাকে ভালো লাগে বলেই কথায় কথায় আমি তার নাম নেই।

আমিঃ আমি জিজ্ঞেস করলাম কি? আর আপনি উত্তর দিলেন কি?

সাইমনঃ আমি আসলে আপনার মতো এত গুছিয়ে কথা বলতে পারি না।শো করেন।আপনার লেট হচ্ছে।

কথাগুলো একদমে বলে দ্রুত বের হয়ে গেলো সাইমন।একে আমার দিনকে দিন রহস্যময় মনে হচ্ছে। এর মধ্যে বড় কোন ভেজাল নিশ্চয়ই আছে। আমি আর একে নিয়ে মাথা ঘামালাম না।এমনি টেনশনে শেষ। নতুন করে অন্য কোন টেনশন মাথায় নিতে চাই না। কফির মগে ধীরে সুস্থে চুমুক দিলাম। ব্যাকগ্রাউন্ডে নেহা কাক্করের “ইস ম্যে তেরা ঘাটা, ম্যারা কুছ নেহি যাতা” সং টা বাজছে।

🦋🦋🦋

রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে লিফটের কাছে চলে এলাম।আজ অফিসে প্রথম দিন।একটা চাপা ভয় ও উত্তেজনা কাজ করছে।প্রথম দিনই অলরেডি পাঁচ মিনিট লেট।যামে পরেছিলাম।জয়েনিং লেটারটা সাইড ব্যাগেই আছে।এরিনের দেওয়া টিফিনবক্সটা যেভাবে দিয়েছিলো সেভাবেই আছে। ভুলেও খুলিনি।লিফটে এসে দেখলাম আগের থেকে মানুষ ছিলো।

আমিঃ আমাকেও নিয়ে যান।

লিফট মাত্রই বন্ধ হতে শুরু করেছিলো।আমার কথা শুনতেই একজন দরজার মাঝখানে হাত দিয়ে তা থামালো।আমি দ্রুত ভেতরে ঢুকে পরলাম।ঢুকতেই ২৬/২৭ বছরের একটা ছেলেকে দেখতে পারলাম।

—- হাই!!!!

অদ্ভুত তো।চেনা নাই, জানা নেই আমাকে হাত নাড়িয়ে হাই জানালো।আমি কপাল কুঁচকে তার দিকে তাকালাম।তার পরনে কোর্ট-প্যান্ট, চোখে চশমা।আর মুখে চুইংগাম নিয়ে গরুর জাবরকাটার মতো করে চাবাচ্ছে। মাঝে মাঝে জিহ্বা দিয়ে বাবল বানাচ্ছে। তার বাবলগুলো যখন ফাটছে তখন টাস টাস শব্দ সৃষ্টি করছে।যেটা আমার বিরক্ত লাগছে।কে জানে কে ছেলেটা?পুরো লিফটে সে আর আমি।আমি চোখ নামিয়ে সামনে দৃষ্টি দিলাম। আমি আল্লাহ আল্লাহ করছি যাতে অফিসের বস কিছু না বলে।তাজরানকে তো ভালো করেই চিনি।কিন্তু আরিয়ান যদি কোন ভেজাল করে।টুইং শব্দ করে লিফটের দরজাটা খুলে গেল।আমি আর সে একসাথেই লিফট থেকে নেমে গেলাম ৪র্থ ফ্লোরে। আমি দ্রুত পায়ে সেদিনের সেই হলরুমে চলে গেলাম।

আমিঃ আসতে পারি???

আমার কথা শুনে সবাই আমার দিকে নজর দিলো।আদর সবাইকে কিছু একটা বুঝাচ্ছিলো।আমার দিকে না তাকিয়ে সে মুখে একটু বিরক্তি প্রকাশ করলো।কিন্তু আমার দিকে তাকাতেই তার বিরক্তি ফুস।হাসি মুখে আমাকে বললোো।

আদরঃ জলদী আসুন।নয়তো দেরী হয়ে যাবে।

আমিঃ শুকরিয়া।

আমি ভেতরে প্রবেশ করে একটা চেয়ার টেনে বসলাম।এখনো অনেকে আমার দিকে কিরকম করে যেনো তাকিয়ে আছে। আমি সেদিকে খেয়াল না করে সামনের দিকে মন দিলাম।আদর খুব মনোযোগ সহকারে কতগুলো প্রেজেন্টেশন বুঝিয়ে দিচ্ছে।

—– আদর, তোমাকে তাজরান ভাই ডাকছে।তুমি একটু শুনে আসো।ততক্ষণে আমি এদিকটা সামলাই।

মৃদুস্বরের একজন কণ্ঠ শুনে চট করে দরজার দিকে তাকালাম।লিফটের সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। সে শান্তপর্ণে ভেতরে ঢুকলো।

আদরঃ সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।এ আমাদের কোম্পানির আরেক ওনার। উনার নাম আরিয়ান আজওয়ার।তাজ স্যারের ছোট ভাই। (আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে) স্যার, আপনি একটু এখানে থাকুন।আমি আসছি।

আমিঃ ওহ্ এই চুইংগাম খাওয়া জাবরকাটা গরুটাই তাহলে আরিয়ান।এটা কোনভাবে আমার দেবর এনাম নয় তো? চাল-চলনে তো মনে হয় না। আল্লাহ ভালো জানে।দুই ভাই চেহারা পাল্টিয়ে ঘুরছে কিনা।আমি এদের চক্করে পাগল হয়ে যাবো।(মনে মনে)

আদর মিনিট চারের মধ্যে ফিরে এলো।এসেই সামনের টেবিলে কতগুলো ফাইল এলোমেলো করতে লাগলো।একসময় সবুজ রঙের একটা ফাইল হাতে নিয়ে আমাকে ডাকলো।

আদরঃ মিসেস নোভা ইসলাম কে?

আমিঃ জ্বি আমি।(দাঁড়িয়ে)

আদরঃ আপনাকে তাজ স্যার ডাকছে।এই ফাইলটা নিয়ে উনার সাথে দেখা করে আসুন।

আমি ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলাম।এই তাজ কি আমাকে বের করে দিবে নাকি? যদি বের করে দেয় তাহলে হাতেনাতে ধরবো কি করে আমার এনাজকে।আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ফাইলটা নিয়ে এগুতে লাগলাম। পেছন থেকে আদর ডাকলো।

আদরঃ ম্যাডাম শুনুন।

আমিঃ জ্বি বলুন।

আদরঃ এখানে একটা ছোট টুকরো কাগজ আছে। সেটাও নিয়ে যান।

আদরঃ জ্বি দিন।

আদরঃ ম্যাম, আপনি কিন্তু আবারো সেদিনের মতো ভয় পাচ্ছেন।এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমার স্যার বাঘ বা ভাল্লুক নয় যে আপনাকে খেয়ে ফেলবে।

আমিঃ তেমম কিছু নয়।একটু নার্ভাস লাগছে।প্রথম প্রথম তো তাই।

আদরঃ অল দ্যা বেস্ট ম্যাম।

আমিঃ শুকরিয়া।

চার ভাজ করা কাগজের টুকরোটা নিয়ে আমি ভীরু পায়ে তাজের কেবিনের দিকে যেতে লাগলাম।যত এগুচ্ছি ততই আমার হৃৎপিণ্ডটা ধপধপ করছে।এত নার্ভাস হওয়ার তো কথা নয়।তবুও কেন হচ্ছি জানি
না। কে জানি এত ভয় এসে কোথা থেকে ভর করছে। আলতো হাতে ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই যা হলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।ভেতরে যেতেই ___________

#চলবে

#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_17
#Writer_NOVA

চোখ বন্ধ করে দুই হাতে জামা খামচে ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমি।তাজ আমার মুখের দিকে ঝুঁকে আছে। ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস আমার চোখ-মুখে উপচে পরছে।এখন আমার আর তাজের দূরত্ব মাত্র কয়েক ইঞ্চির।সারা শরীর কাঁপছে আমার।তাজের কোন শব্দ না পেয়ে পিটপিট করে ওর দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম সে আমার দিকে ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার চোখ দুটোতে আমি অন্যরকম একটা তৃষ্ণা দেখতে পাচ্ছি। বহুদিন পর আমাদের প্রিয় জিনিসটা যখন আমরা কাছে পাই তখন আমাদের চোখ, মুখে যেই উচ্ছ্বাসটা থাকে তাও খুঁজে পাচ্ছি তাজের মুখে। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় তাকে বলে উঠলাম।

আমিঃ একটু সরুন আমি তো নিশ্বাস নিতে পারছি না। আমার নিশ্বাস নেওয়ার অক্সিজেন তো আপনার বিশাল জলহস্তীর মতো দেহ দিয়ে আটকে রেখেছেন।

তাতেও তার হুশ নেই। সেই মাদকতার চোখে আমার কাঁপা কাঁপা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে। তার হাব-ভাব আমার ভালো ঠেকছে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে আছে আমার।আর সে দুই হাত দেয়ালের দুই দিক দিয়ে আমাকে আটকে রেখেছে। চাইলেও আমি এখন কোথাও যেতে পারবো না। ইচ্ছে তো করছে তার পায়ে টাইট করে, একটা পা দিয়ে মাড়িয়ে এখান থেকে ছুটে পালাতে।

আমিঃ মিস্টার তাজ🥶!!!!
তাজঃ হু।
আমিঃ আমাকে কেন ডেকেছিলেন?
তাজঃ হু।
আমিঃ আমি আপনাকে কিছু বলছি।
তাজঃ হু।
আমিঃ কি হু হু শুরু করছেন?(রেগে)
তাজঃ হু।

উফ, অসহ্যকর।আমি এতো কথা বলে যাচ্ছি আর উনি আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে হু হু করেই যাচ্ছে। এখন প্রচন্ড রাগ উঠছে। তখন ভেতরে ঢুকতেই এক ঝাটকায় আমাকে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে সেই যে দাঁড়া করিয়ে রেখেছে এই অব্দি আমি দাঁড়ানো। তার চোখের সামনে আমি হাত নাড়ালাম। এতে তার কোন ভাবান্তর দেখা গেল না।সে আমার দিকে আরেকটু ঝুঁকে গেলো।তার ঠোঁট দুটো আমার ঠোঁটের দিকে বাড়িয়ে দিতেই আমি এক হাত দিয়ে আমার ঠোঁট আটকে,আরেক হাতে তাকে ধাক্কা দিলাম।এতক্ষণে মহাশয়ের টনক নরলো।দেয়ালের থেকে দুই হাত সরিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে গেলো।

আমিঃ লুচি,পরোটা বেডা।অফিসের কেবিনে ডেকে এনে লুচ্চামি শুরু করছে।আমার এনাজ না হলে এতক্ষণে গাল দুটো লাল করে ফেলতাম।সামান্য কমোন সেন্স নেই। এসব করতে আমাকে এখানে ডেকে আনছে।একদম চোখ তুলে লুচুগিরি ছুটায় ফালামু। এতদিন খবর ছিলো না।এখন বউয়ের ওপর ভালোবাসা উথলে উঠছে।(বিরবির করে)

বিরবির করে আপন মনে তাজকে বকছিলাম।সামনের দিকে তাকাতেই চুপ হয়ে গেলাম।কারণ তাজ আমার দিকে বাজপাখির নজরে তাকিয়ে আছে। আমি ভয় পেয়ে দমে গেলাম।কিন্তু সে আমাকে এক হাতে টেনে আবারো দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।

আমিঃ আশ্চর্য, সমস্যা কি আপনার? কি শুরু করছেন? কথা নেই বার্তা নেই হুটহাট করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরছেন।ছাড়ুন আমায়।(বিরক্তির সাথে)

তাজঃ আমি কিছু বলেছিলাম সেদিন।(শান্ত কণ্ঠে)

আমিঃ আপনি আমাকে ছাড়ুন।আমার লাগছে।

আমি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করা শুরু করলাম।কিন্তু এই জলহস্তীরটার থেকে নিজেকে একচুলও সরাতে পারলাম না।আমার দুই হাত শক্ত করে সে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আছে।আমি জানি এটা এনাজ।কিন্তু আমার কাছে কোন শক্ত প্রমাণ নেই। তাই এর থেকে আমার এখন দূরে থাকাই ভালো।যদি আমার কোন ভুল হয়।এই ছেলে এনাজ না হয়।তাহলে তো আমি পরবো বিপদে। তবে আমি চোখ বন্ধ করে বলতে পারি এটা আমার এনাজ।

আমিঃ আপনি কি অফিসে আসা প্রত্যেক নতুন কর্মচারীর সাথে এমনি করেন মিস্টার তাজ?

তাজঃ হোয়াট????

আমিঃ বয়রা নাকি।কানে কি কিছু শুনতে পান না?

তাজঃ আমি সেদিন সুন্দর করে একটা অনুরোধ করেছিলাম।কিন্তু তুমি সেটা রাখোনি কেন? ওহ আমি তো ভুলেই গেছিলাম।তুমি আবার ভালো কথা শোনার মানুষ নয়।তোমাকে আমার স্টাইলে বুঝাতে হবে।

আমিঃ আপনি কিসের অনুরোধের কথা বলছেন? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

তাজঃ তুমি আবার কেন সাদা রঙে নিজেকে সাজিয়েছো? আমি সেদিন বলেছিলাম এই রঙ পরবে না।কান দিয়ে কি ঢুকেনি সেটা?

আমিঃ আপনার কথা কেন শুনবো? কে হোন আপনি আমার? আমার স্বামী মারা গেছে তাই আমি সবসময় সাদা রঙের কাপড় পরে থাকি।আপনি আমাকে মানা করার কে?

তাকে বাজিয়ে দেখার জন্য উপরোক্ত কথাগুলো বললাম।কিন্তু তার রিয়েকশনে আমি মনে মনে বেশ খুশি হলাম।কারণ সে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠছে।চোখ মুখ শক্ত করে আমাকে বললো।

তাজঃ আমি কে? ওহ আচ্ছা। এখন আমায় খুলে বলতে হবে আমি কে?

🦋🦋🦋

রাগে কথাগুলো বলে আমার মুখের দিকে ঝুঁকে পরলো।আমি চোখ বন্ধ করে মুখ ঘুরিয়ে ফেললাম।উনি আমার কানের সামনে মুখ এনে লো ভয়েজে বললো।

তাজঃ নিজের মানুষটার কাছে কখনও নিজের পরিচয় দিতে হয় না।কারণ সে আমায় ঠিক চিনে নিবে।যে মানুষটা পুরোটাই আমার,তাকে আমি হাজার বাহানায় ফাকি দিলেও কাজ হবে না।সে আমাকে ঠিক ধরে ফেলবে।যে আমায় চিনে ফেলেছে তার কাছে নিজের পরিচয় উল্লেখ করা নিত্যান্ত বোকামি ছাড়া কি অন্য কিছু মিসেস আহমেদ??

তার নিশ্বাস আমার কানে থেকে থেকে বারি খাচ্ছে। আমার অস্বস্তি লাগছে।তার কণ্ঠস্বর, তার বলার ভঙ্গি,সেই পুরোনো ভালো লাগার অনুভূতি আড়াই বছর পর এসে আমার কাছে ধরা দিয়েছে। আমার শ্বাস-প্রশ্বাস ভারী হচ্ছে। সে কথাগুলো শেষ করে আমার কানে হালকা করে একটা ফুঁ দিলো।তাতে আমি কেঁপে উঠলাম।আমার মুখ দিয়ে টু শব্দও বের হচ্ছে না। তাকে যে আমি নিজের থেকে সরাবো সেই শক্তিটুকুও আমি খুঁজে পাচ্ছি না।

তাজঃ এরপরের থেকে সাদা রঙে নিজেকে রাঙিয়ে আসলে সারা শরীরে রং ঢেলে দিবো মিসেস এনাজ আহমেদ।সেটা প্রজাপতির রং ও হতে পারে অথবা দেয়ালের রং হতে পারে। মনে রেখো কথাটা।

প্রজাপতির রং বলতে উনি যে ভালোবাসার রং-এর কথা বলেছে সেটা আমি সিউর।কিন্তু এর মতিগতি ভালো ঠেকছে না আমার কাছে।আমি বুঝেও না বোঝার ভান করে বললাম।

আমিঃ মানে??

তাজঃ মানেটা তুমি খুব ভালো করেই জানো বাটারফ্লাই। যে না বুঝে তাকে বোঝানো যায়।কিন্তু যে বুঝেও না বোঝার ভান করে তাকে তো বোঝানো যায় না। তাহলে তোমাকে কি করে বুঝাই বলো?

বাটারফ্লাই ডাকটা শুনে সারা শরীরে ঠান্ডা একটা শিহরণ বয়ে গেলো। কত বছর পর সেই চিরচেনা ডাকটা শুনলাম।তাও আবার নিজের প্রাণপ্রিয় স্বামীর মুখে। আমি মুখ খুলে কিছু বলতে নিলেই আমার ঠোঁট তার এক আঙুল দিয়ে আটকে বললো।

তাজঃ হিশশশশশশশ!!! আর একটা কথাও নয়।আমাকে মন ভরে তোমাকে একটু দেখতে দেও।সবসময় শুধু আমাকে জ্বালানোর ধান্দা তোমার।

বলেন তো এগুলো কি সহ্য হয়? নিজের কেবিনে ডেকে সে রোমান্টিক কথাবার্তা শুরু করে দিছে।সে এখন হেব্বি রোমান্সের মুডে আছে। কিন্তু কেউ দেখে ফেললে তো কেলেংকারী হয়ে যাবে।সেদিকেও খেয়াল নেই তার।আমি ধাক্কিয়েও তাকে সরাতেও পারছি না।

কানের কাছ থেকে মুখ এনে গালে টুপ করে একটা চুমু বসিয়ে দিলো।আমি ৪৪০ ভোল্টেজে শর্কড খেলাম।বিস্ফোরিত চোখে তার দিকে তাকাতেই সে এক চোখ মারলো।তারপর কোন ভুমিকা না করেই আমার ওড়না টেনে নিয়ে নিজের মুখের ঘামগুলো মুছে নিলো।আমি এর কান্ডে ফ্রিজের মতো জমে গেলাম।মুখ মোছা শেষ হতেই সেই ঘামের জায়গা দিয়ে আমার মুখ মুছে দিলো।আমার মুখ তো মুছলো না তার ঘামগুলো আমার মুখে মাখলো।ওয়াক ছিঃ🤢। এর এসব শয়তাইন্না অভ্যাস এখনো যায়নি।আমার ওড়নাটাই নষ্ট। এটাকে আজই ইচ্ছে মতো ধুতে হবে।কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে আমাকে রেখেই মুখ টিপে হাসতে হাসতে হনহন করে কেবিনের বাইরে চলে গেল। আমার এখন নিজের কাছে কিরকম খিটখিটে লাগছে।ওড়নাটা নাকের সামনে নিতেই ঘামের গন্ধ নাকে এসে বারি খেলো।খাচ্চোর বেডা।আগের সেই বদঅভ্যেসটা এখনো আছে। আগেও কোথা থেকে এলে ঘামে ভেজা শার্ট বা টি-শার্ট খুলেই আমার মুখে ছুড়ে মারতো।কখনো বা আমার ওড়নায় মুখের ঘাম মুছে সেই জায়গায় দিয়ে আমার মুখ মুছে দিতো।এর অন্যতম বদঅভ্যেস ছিলো এটা।আজ আবার সেই কাজটা করলো।আজকে আমার সারাদিন খিটমিট লাগবে।

আমিঃ ওয়াক🤮।আমার দিনটাই নষ্ট করে দিলো।এসব খাচরামি করার জন্য আমাকে কেবিনে ডাকছে।আমি এই কানে ধরছি ভুলেও এর সামনে আর আসবো না। কিসের জন্য ডাকছে তার খবর নেই। মাঝখান থেকে সে রোমান্স করে নিলো।আমি তোকে ছাড়বো না খাচ্চোর বেডা।ইস, আমার ওড়নাটাই নষ্ট।

ওড়নার অন্য সাইড দিয়ে মুখ ডলতে ডলতে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলাম। বিরবির করে বকতে বকতে নিজের কাজের স্থানে চললাম।সারাদিনে ভুলেও এর সামনে আসিনি।নিজের মতো কাজ করে নিয়েছি।যথাসম্ভব এর থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি নিজেকে।যদি আবার কোন বদমাশি করে সেই ভয়ে।যে কাজগুলো বুঝিনি সেগুলো আদরের থেকে বুঝে নিয়েছি।কিন্তু ভুলেও তাজের কেবিনমুখী হয়নি।যেচে ওর কাছে যাওয়ার কোন মানে হয় না।দিনটা আমার ভালোই কাটলো।কাজে ব্যস্ত থাকায় অনেক দ্রুতই চলে গেল।বিকালের শো শেষ করে আর তায়াং ভাইয়ার সাথে দেখা করিনি।শরীরে কুলচ্ছিলো না।তাই তায়াং ভাইয়াকে আসতে মানা করে দিলাম।বাসায় গিয়ে কোনরকম ফ্রেশ হয়ে নাভানকে খাইয়ে নামাজ পরে নিলাম।তারপর বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজত্বে কখন যে হারিয়ে গেছি নিজেও জানি না। নাভানের বাকি কাজ আজ এরিন ও হিমি সামলাবে।আমি আর পারবো না। বহু ধকল গেছে শরীরের ওপর।আজ আমার সবকিছু থেকে ছুটি।

কিন্তু পরেরদিন ঘটলো এক বিপত্তি …………

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে