পুতুল ছেলেটি পর্ব-০৭

0
774

#পুতুল_ছেলেটি
#Part_07
#Writer_NOVA

দুপুরের কাঠফাটা রোদের তেজে সব মানুষ অতিষ্ঠ। গরমের তীব্রতায় সবাই ঝিমিয়ে পরেছে।বাতাস তো দূরেই থাক গাছের পাতাগুলো একটুও নড়ে না।মাঠ-ঘাট চৌচির হয়ে আছে।কাজ থেকে হেঁটেই বাড়ি ফিরছে নীলাভ।রোদে ওর ফর্সা মুখটা টুকটুকে লাল হয়ে গেছে। মুখ দেখে মনে হচ্ছে টোকা দিলেই রক্ত ঝরবে।গরমে হাঁপিয়ে পরেছে সে।আশেপাশে কোন রিকশাও দেখা যাচ্ছে না। কিছু দূর যেতেই গাছের ছায়ায় একটা বসার জায়গা দেখলো।সেখানে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে পরলো।বড্ড পানির তেষ্টা পেয়েছে। ঠোঁট শুকিয়ে আসছে।

নীলাভঃ সূর্যি মামার আজ হলো কি? এত তেজ দেখাচ্ছে কেন?বারবার ঠোঁট শুকিয়ে আসছে। পানি পাবো কোথায়?আজ এতো গরম পরবে কে জানে?

বারবার আকাশে দিকে তাকিয়ে হাঁটু ধরে দাঁড়িয়ে পরে সাহিয়া।গরমে তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে।ব্যাগ থেকে পানি বের করে গলা ভিজিয়ে নিলো।আশেপাশে একটা রিকশা নেই। পুরো রাস্তা ফাঁকা। তাই হেঁটেই কলেজ থেকে ফিরছিলো।ওর বাবার আরো ক্লাশ আছে।তাই সাহিয়াকে একাই আসতে হয়েছে। সামনে এগুতেই একটা বসার জায়গা দেখতে পেলো।যেখানে একটা ছেলে দুই হাতে মুখ ঢেকে মাথা নিচু করে বসে আছে। সাহিয়া অনেকটা দুরত্ব রেখে বসে পরলো।

সাহিয়াঃ ছেলেটার বোধহয় অনেক খারাপ লাগছে।কিরকম ছটফট করছে। আমি কি তাকে জিজ্ঞেস করবো ওর কি হয়েছে? কি ভাববে ছেলেটা?মুখটাও তো দেখতে পাচ্ছি না। আমি এখন কি করবো বুঝতে পারছি না।

নীলাভের অনেক খারাপ লাগছে।এতক্ষণ রোদে থাকায় সারা শরীর জ্বলছে।সাথে পানির পিপাসা তো আছেই। সাহিয়া সেটা বুঝতে পেরে দ্বিধা-দ্বন্দে পরে যায়।একসময় কিছু না ভেবে সামনে এগিয়ে আসে।

সাহিয়াঃ আপনার কি অনেক খারাপ লাগছে? হ্যালো মিস্টার, আমি আপনাকে বলছি।

একটা মেয়ের কন্ঠ শুনে নীলাভ আঙুলের ফাঁক দিয়ে সামনে তাকালো।তাকিয়ে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো।সেই মেয়েটার সাথে আবারো দেখা হয়ে গেলো। শুধু মাথা নাড়িয়ে বুঝালো তার খারাপ লাগছে।

সাহিয়াঃ পানি খাবেন?আমার কাছে পানি আছে।

নীলাভ মাথা ঝাকালো।সাহিয়া ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে নীলাভের হাতে দিলো।নীলাভ অন্য দিকে ঘুরে বোতেলে থাকা অর্ধেক পানি খেয়ে নিলো।তারপর থুঁতনি থেকে মাস্কটা ওপরে উঠিয়ে নিলো।তারপর সাহিয়ার দিকে ঘুরলো।সানগ্লাসটা পরার কথা বেমালুম ভুলে গেলো।

নীলাভঃ ধন্যবাদ, পানি দিয়ে সাহায্য করার জন্য। এই নিন আপনার বোতল।

সাহিয়া কোন কথা না বলে ভ্রু কুঁচকে নীলাভের থেকে বোতলটা নিলো।তারপর কোন দ্বিধা না করে ফট করে জিজ্ঞেস করে ফেললো।

সাহিয়াঃ আপনি এই গরমে মাস্ক পরে আছেন কেন?ছিনতাইকারী নন তো।নিশ্চয়ই চোর,বাটপার কিংবা ছিনতাইকারী আপনি।নয়তো আপনার মুখটা আমাকে দেখে লুকাতেন না।

নীলাভ পরে গেল বিপদে।মেয়েটা শেষ পর্যন্ত ওকে চোর,বাটপার,ছিনতাইকারীর সাথে তুলনা করলো।এই দুঃখ নীলাভ কোথায় রাখবে?

নীলাভঃ এই জন্য বলে পৃথিবীতে ভালো মানুষের ভাত নেই। মিস আমার মুখের কোথাও কি লেখা আছে আমি এরকম? (কিছুটা রেগে)

সাহিয়াঃ আমি কি করে জানবো?আপনার মুখতো আটকানো।দেখলে বলতে পারতাম।

নীলাভঃ তাহলে একজনের বিষয় না জেনে এরকম উল্টো পাল্টা মন্তব্য কেন করলেন?মানুষের মুখ দেখে যদি তার চরিত্র সম্পর্কে জানা যেতো।তাহলে পৃথিবীতে এতো অপরাধ ঘটতো না। ওপর দেখে কখনো কারো ভেতর বিবেচনা করবেন না।এটা মারাত্মক ভুল।

নীলাভ উঠে চলে যেতে নিলো।সাহিয়া পেছন থেকে ডেকে বললো।

সাহিয়াঃ ওয়েট মিস্টার। আপনাকে আমার চেনা চেনা মনে হচ্ছে কেন?আপনার চোখ দুটো অনেক চেনা।কোথায় দেখেছি বলুন তো?আপনার মাস্কটা খুলুন।আমি আপনার চেহারা দেখতে চাই।

নীলাভ ঠিক এই ভয়টা পাচ্ছিলো।তাই জলদী করে এখান থেকে কেটে পরতে চেয়েছিলো।হার্ট খুব জোরে জোরে লাফাচ্ছে।এই মনে হয় ধরা পরে যাবে।নীলাভ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কোন কথা যে সাহিয়াকে শুনাবে তাও খুঁজে পাচ্ছে না। সাহিয়া কপাল কুঁচকে ওর পেছন এসে দাঁড়ালো। নীলাভ ঘুরে তাকালো।সাহিয়া হাত বাড়িয়ে যেই নীলাভের মাস্কে হাত দিবে।তখনি নীলাভ পেছনে ঘুরে এক ভো-দৌড়। সাহিয়া বেকুব হয়ে গেলো নীলাভের কাজে।আর নীলাভ আশেপাশে না তাকিয়ে দূর্বল শরীর নিয়ে প্রাণপণে দৌড়ে যাচ্ছে। এই মেয়েটা সামনে এলেই ওর মনটা পালাই পালাই করে।তা না চাইতেও নীলাভ ওর থেকে পালিয়ে বেরায়।যার কোন কারণ নেই।

💗💗💗

বারান্দায় চেয়ারে বসে আছে সাহিয়া।মাথায় এখনো ঐ ছেলেটার কথা মনে হচ্ছে। হুট করে ছেলেটা ঐভাবে দৌড় দিলো কেন?তার উত্তর খুঁজতেই বয়স্ত সে।কিন্তু কোন সঠিক উত্তর সে আদোও খুঁজে পেলো না।ছেলেটার নীল রঙের চোখ দুটো দেখে সাহিয়ার বারবার মনে হচ্ছে এটাই সেই পুতুল ছেলেটি। কিন্তু আন্দাজে তো ঢিল মেরে বসে থাকলে হবে না। কফির মগ থেকে ধোঁয়াগুলো নিমিষেই বাষ্পে মিশে যাচ্ছে। কফি ঠান্ডা হওয়ার পথে।মোবাইলে ইমরানের মুসাফির গানটা বাজছে।কিন্তু কোন দিকে হুশ নেই সাহিয়ার।সে তো তার ভাবনায় মত্ত।

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

তোর ঐ দু হাতের আলতো ছোঁয়াতে,
মন ছেয়ে যায় প্রেমের উষ্ণ ধোঁয়াতে।(×০২)
এসেছি তোর মনেরি দেশে,
আমি এক মুসাফির বেশে,
দে না ঠাঁই একটু হেসে, ভালোবেসে।(×০২)

একটা মন চাই,
যার পৃথিবী হবে শুধু ঘিরে আমায়,
মিশে রবো আমি সারাটা দিন যার চিন্তায়।
কেন এতো ভাবিস,
অনুভবে ঐ চোখ যদি এই চোখে রাখিস,
বুঝবি তবেই মনের কোথায় তুই থাকিস।
এসেছি তোর মনেরি দেশে,
আমি এক মুসাফির বেশে,
দে না ঠাঁই একটু হেসে, ভালোবেসে।(×০২)

যত দিন যায়,
পাবো কি পাবো না তোকে এই জটিল ধাঁধায়।
এই হৃদয়ে এসে যে ভীড় মনে জমায়।
ভুলে যা সবিই,
কথা দিলাম আজীবন তুই আমাতেই রবি,
এই হৃদয়ে আকা রবে শুধুই তোরি ছবি।
এসেছি তোর মনেরি দেশে,
আমি এক মুসাফির বেশে,
দে না ঠাঁই একটু হেসে,ভালোবেসে। (×০২)

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

সাহিয়ার মনেও এখন মুসাফির বেশে পুতুল ছেলেটির আগমণ হয়েছে। না চাইতেও তার কথা ভেবে সারাটা দিন কেটে যায়।সাজিয়ার চিৎকারে সাহিয়ার হুশ ফিরে।

সাজিয়াঃ এই তোর কি হয়েছে রে?কোন ধ্যানে থাকিস?কখন থেকে চেচিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তোর কোন রেসপন্স নেই।

কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে কপাল কুঁচকে সাহিয়া ওর বোনের দিকে তাকালো। এই সময়ে সাজিয়াকে চাইনি সাহিয়া।সে তো তার ভালো লাগার পুতুলটাকে নিয়ে বিভোর ছিলো।মাঝখানে সাজিয়া ওর ভাবনার মধ্যে ভিলনের মতো এন্ট্রি নিলো।মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে অনেকটা ঝাঁঝালো গলায় সাহিয়া বললো।

সাহিয়াঃ কি হয়েছে দিদিয়া?কানের পর্দা কি ফাটিয়ে ফেলবে নাকি?কানের সামনে এসে এভাবে চেচাচ্ছো কেন?আমাকে কি একটু আমার মতো থাকতে দিবে না?যা বলার জলদী বলো।

সাজিয়াঃ আমি খুঁজে পাচ্ছি না, তোর হয়েছেটা কি?আমি যতদিন এই বাড়িতে আছি ততদিন তুই নিজের মতো থাকতে পারবি না। আমি চলে গেলে মন মতো নিজের মতো থাকিস।তখন আর আমি জ্বালাতে আসবো না।

সাহিয়াঃ হুম বুঝলাম।কি বলতে এসেছো তাই বলো?

সাজিয়াঃ কফি যে ঠান্ডা হয়ে পানি হয়ে যাচ্ছে। সেদিকে খেয়াল আছে তোর? তুই এতো ভাবুক হলে কবের থেকে? কখন থেকে তোকে ডেকে চলছি।কিন্তু তুই এক ধ্যানে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছিস।

সাজিয়ার কথার মধ্যে সাহিয়ার মোবাইলের গান বেজেই চলছে।সাজিয়া বিরক্ত হয়ে গানটা বন্ধ করে দিলো।কিছুটা রেগে একটা চেয়ার জোরে টেনে তার মধ্যে বসে পরলো।

সাহিয়াঃ জানো দিদিয়া,আজ একটা অদ্ভুত মানুষের সাথে দেখা হয়েছে। তার চোখ দুটো গাঢ় নীল রঙের। তাকে দেখে সেদিনকার পুতুলের কথা মনে হয়ে গেলো।সে মাস্ক পরা ছিলো।আমি মাস্ক খুলতে বলতেই সে কিরকম ছটফট করছিলো।তার চোখে আমি ভয় দেখতে পেয়েছি। কিন্তু আমি যখন তার মাস্ক খুলতে হাতটা বাড়িয়ে দিলাম তখনি সে উল্টো দিকে দৌড় দিলো।যার কোন কারণ আমি খুঁজে পেলাম না।তুমি আমার কথা শুনছো তো দিদিয়া?

সাজিয়াঃ তোর আজকাল কি হয়েছে আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।একবার মনে হচ্ছে তুই প্রেমে পরেছিস,আরেকবার মনে হচ্ছে তুই পাগল হয়ে গেছিস।কোনটা যে সত্যি তাই বুঝতে পারছি না।কফির মগটা এদিকে দে।আমি গরম করে নিয়ে আসছি।

সাজিয়া কফির মগ নিয়ে চলে গেল।সাহিয়া তার বোনের কথা কিছু সময় ভেবে আপনমনে হেসে উঠলো। কারণ তার বোনের কথার উত্তর সে পেয়ে গেছে।সাহিয়া এখন সিউর।সে ঐ পুতুল ছেলেটির প্রেমে পরেছে।যার কারণে তার কথা ভাবতে ভালো লাগে। তার ভাবনা নিয়ে সারাদিন পরে থাকতে ভালো লাগে। কিন্তু সে জানে না আদোও কি সেই ছেলের দেখা সে পাবে কিনা?তবে আজকের ছেলেটাকে দেখে তার বারবার মনে হয়েছে এটাই সেই পুতুল ছেলেটি।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে