নীড় পর্ব-১২+১৩

0
759

#নীড় #দ্বাদশ_পর্ব

#সুহা

তা কি ভাবলে বলো। (মৌমিতা)

তোমার কথাটা আমি ভেবে দেখলাম তোমার কথায় যুক্তি তো আছে। কিন্তু করবোটা কিভাবে ইন্সুরেন্স এর লোকেরা তো বিনা যাচাই করেই আমায় টাকাটা দিয়ে দিবে না। তদন্ত করবে আর তাতে ধরা খাওয়ার চান্স ৯৮%। (আবির)

আমি বলছি কি করতে হবে। শুনো………….(মৌমিতা)

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

আনিক এক ক্লাইন্টকে তার অর্ডার দিয়ে বাড়ির পথে ফিরছিলো এমন সময় তাদের রিকশা কে সজোরে এক প্রাইভেট কার ধাক্কা দিলে রিকশা উল্টে পরে যায়। এতে আনিক আর রিকশাচালক দুজনই ব্যাথা পায়।কিন্তু রিকশা চালক বেশিই ব্যাথা পায় বলে আনিক নিজের ব্যথার তোয়াক্কা না করে দ্রুত তাকে ধরে। এর মধ্যেই চারিদিকে ভীড় পরে একটা কোলাহল এর সৃষ্টি হয়ে যায়। গাড়ির মালিক ও বেরিয়ে চিল্লাতে চিল্লাতে এগিয়ে আসে।

কোন ফক্কিনী রে? রাস্তায় এত্ত জায়গা থাকতে আমার গাড়িতেই তোদের ধাক্কা খেতে হয়? পুরো সামনের দিকে দাগ পরে গেসে! এটা ঠিক করতে কত টাকা লাগবে জানিস? টাকাগুলো কে দিবেরে ?

আনিক সামনে তাকিয়ে দেখে আবির কিন্তু আজ আর তার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। কেননা আবির ঠিক কোন পর্যায়ে চলে গেছে সেটা আনিকের বুঝতে বাকি নেই।

আবির আনিকের এমন গা ছাড়া ভাব দেখে অবাকই হলো বটে।কিন্তু আপাতত ওদিকে মন না দিয়ে পূর্ণরায় রিকশা চালককে শাসাতে লাগলো সে। আবির নানান অকথ্য ভাষার প্রয়োগ করতে লাগলে আনিক তার প্রতিবাদ করলো।

আপনি কি দেখতেসেন না উনি অনেক ব্যাথা পাইসে, তার উপর আপনার গাড়িতে ছোটো একটা দাগ পরসে খালি আর ওনার তো পুরা রিকশা টাই ভাইঙ্গা গেসে। তো আপনি ক্ষতিপূরণ চান কোন আক্কেলে? (আনিক)

এরকম ছোটোলোকদের এই অবস্থাই হওয়া উচিৎ। আরে এরা………(আবির)

আবির আর কিছু বলবে তার পূর্বেই আনিক পকেট থেকে দশ হাজার টাকা বের করে আবিরের পকেটে রেখে দেয়।

আশা করি আপনার গাড়ি এই টাকায় ঠিক হয়ে যাবে। আমরা হয়তো গরিব কিন্তু মন আমাগো ছোটো না।এবার আপনার ক্ষতিপূরণ পাইসেন না তো আর রাস্তায় তামাশা না কইরা চইলা জান। এরকম রাস্তাতে তামাশা করা কোনো ভদ্র লোকের কাজ না।(আনিক)

আবির আনিকের কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। সে আনিকের গায়ে প্রহার করতে নিলে জনগণ তার উপর চড়াও হয় কিন্তু আনিক সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলে –

গ্রাম বাংলায় একটা প্রবাদ আসে- “অতি বাড় বেরো না ঝরে পরে যাবে।”
আপনিও কিন্তু অতি বার বেড়ে যাইতেসেন এর আগে কি বড় কোনো ঝরে পইড়া জান নিজেরে সামলায় নেন। আর আপাতত এখানে থিক্কা যান নয়তো পাবলিক বার বার আমার কথায় থাইমা থাকবো না।

আবির অগ্নিদৃষ্টিতে একবার চারিদিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে যায়। আর আনিক রিকশা চালককে নিয়ে হাসপাতাল এ যায়।

এই নেন এখানে হাজার টাকা আসে আপনি এটা দিয়া কিছু ভালো খাবার কিনা খাইয়েন আর দুইদিন আরাম করবেন কাজে যাওয়া লাগবো না।(আনিক)

রিকশা চালক ছলছল চোখে আনিকের দিকে তাকালে আনিক হেসে বলে-

যা হইসে তা একটা দুর্ঘটনা সিলো এটা নিয়া আর ভাইবেন না। আচ্ছা আইজ আসি আল্লাহ চাইলে আবার দেখা হইবনে। বলে আনিক বেরিয়ে পরে হাসপাতাল হতে হাতে তার ব্যাণ্ডেজ লেগেছে সেটায় বেশ ভালোই ব্যাথা উঠেছে, একটু আরাম দরকার তার। তাই কোনোমতে একটা গাড়ি ভাড়া করে বাড়ির উদ্দেশ্য ছুটলো।

বাড়িতে এসে আনিক লুকিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে কম্বল মুড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো,খুব খারাপ লাগছে তার।নাইমা হয়তো কারখানায় আছে তাই ধরা পরে নি। চোখ গুলো তার জ্বলছে খুলে রাখতে বেশ কষ্ট লাগছে তাই চোখ গুলো বন্ধ করে সে হারিয়ে গেলো ঘুমের অতলে।

কপালে ঠান্ডা কিছুর অস্তিত্ব পেলে চোখ পিটপিট করে তাকায় আনিক। ভালো করে দেখে নাইমা তার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে, মুখ জুড়ে তার চিন্তার ছাপ। আনিক আস্তে করে উঠে বসে শরীরে শক্তি পাচ্ছে না সে। তাকে উঠে বসতে দেখেলে নাইমা দ্রুত চাচা-চাচিকে ডেকে আনে। চাচা-চাচি রুমে এসেই আনিক কে কয়েকদফা বকাবকি করে। একেতো এক্সিডেন্ট এর কথা লুকিয়েছে তার উপর জ্বর এর কথা কাউকে জানায় নি। তাদের মাধ্যমেই আনিক জানতে পারলো সে কাল সারারাত অজ্ঞান ছিলো, জরুরি ভিত্তিতে ডক্টর ও এনেছিলো তার জন্য। এসব শুনে আনিক নিজেই বোকা বনে যায় সে বুঝতে পারেনি তার এত্ত ভয়ঙ্কর অবস্থা হবে। সবাই মিলে আনিক কে মন ইচ্ছা মত বকা-ঝকা করে পরে আবার তার সেবা করতে লাগে। আনিকের বেশ হাসিই পায় তাদের এহেন আচরণে কিন্তু আর বকা খেতে ইচ্ছুক না বলে সে আর হাসলো না। এভাবেই কিছু খুঁনশুটিতে কেটে গেলো আরও একটা দিন।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

অনিমা আজ না তোমার ডক্টর এর কাছে নেয়ার ডেট । চলো আমি নিয়ে যাই তোমাকে। (আবির)

পিছনের ৬ মাস আমি একাই গিয়েছি আজকেও চলেই যাবো। তোমায় আমার আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।(অনিমা)

এসব কেমন কথা বলছো তুমি অনিমা? হ্যা মানছি একটু বেশি কাজের চাপ পড়ায় গত কয়টা মাস তোমায় সময় দিতে পারিনি, কিন্তু তাই বলে তো এই নয় যে আমার তোমাকে নিয়ে কোনো চিন্তাই নেই। আমার পুরো জীবন জুড়েই তো তুমি তাই তোমায় নিয়ে আলাদা করে ভাবা লাগে না। আমার জীবনের একমাত্র ভাবনাই তো তুমি।(আবির)

অনিমা আরও নানান বাহানায় চেষ্টা করে আবির যেন তার সাথে না যায় কিন্ত আবিরের জোরাজুরিতে তাকে আবিরের সাথেই যেতেই হচ্ছে। আবির অনিমাকে রাজি করিয়ে গাড়ি বের করতে বেরিয়ে পরে আর অনিমা রেগে বলে-

তোর নাটকের কোনো প্রভাবই পড়ছে না আবির। তোর সত্যি আমি আগেই জেনে গেছি এখন শুধুই সুযোগের অপেক্ষা।

বস্তুত অনিমা আজকে ডক্টর এর বাহানায় আবিরের বিপক্ষে কেস করে রাখতে চেয়েছিল কিন্তু সেগুড়ে বালি।আবির পূর্ণরায় অনিমাকে ডাকলে অনিমা বিরক্তি নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

চলবে………………

#নীড় #ত্রয়োদশ_পর্ব

#সুহা

এখানে আনিক মাহমুদ নামের কেউ কি থাকেন?

হটাৎ এক আগন্তুক এর মুখে নিজের নাম শুনে আনিক বেশ ও অবাকই হয় বটে। কিন্তু সেটা সে প্রকাশ করলো না, এগিয়ে গিয়ে আগন্তুক কে নিজের পরিচয় প্রকাশ করে বললো-

জি আমিই আনিক বলতেসি, আপনি কে?

লোকটি একটা মাঝারি আকৃতির বাক্স আনিকের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো-

আপনার নামে এই পার্সেলটা এসেছে নিন।

আনিক বাক্সটার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করলে লোকটা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয় সে কিছুই জানে না, তার কাজ ছিলো বাক্সটা পৌঁছানোর সে পৌঁছে দিয়েছে এর বেশি কিছু তার জানা নেই। আনিক বাক্সটা নিতে চায়নি কিন্ত লোকটার জোড়াজুড়িতে বাধ্য হয়ে বাক্সটা হাতে নিলো। সে বাক্সটা হাতে নেয়ার সাথে সাথেই লোকটি ঝড়ের বেগে ছুটে চলে যায়। আনিক কিছুক্ষন বোকার মতন লোকটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো অতঃপর বাক্সটি নিয়ে দোকানের ভিতরের নিরিবিলি একটা জায়গায় বসে বাক্সটি খুললো। প্রথমেই কয়েকটা শুকনো গোলাপ পেলো ওগুলোকে পাশে রেখে নিচে তাকালে অতি সুন্দর নকশা করা ২টি খাম পেলো যার একটা খাম অনেক পুরোনো কিন্তু নিজের হাতে নকশা করা। আনিকের খামটা বেশ পরিচিত লাগলো তাই খুলে পড়তে লাগলো। কাগজটায় গোটা গোটা অক্ষরে রঙীন কালি দিয়ে সুন্দরী করে লেখা-

~ওহে অজানা চিঠিদাতা আমার অজান্তেই আমার মনে তুমি বেঁধেছো বাসা!
তোমায় নিয়ে ভাবলেই যে পাই অজানা এক সুখের দেখা!
তোমাকে নিয়ে ভেবে হৃদয় যে আমার ছারখার!
হবে কি তুমি আমার রঙীন দুনিয়ার সর্দার?~

এলোমেলো এই ছন্দটুকুতে একজন মানুষ কতোটা নিখুঁত ভাবে তার প্রণয়ের প্রকাশ এবং প্রস্তাব রেখেছে। যেই কেউ এটা দেখলে ক্ষণিক এর জন্য হলেও তার হৃদয় এ এক রাশ মুগ্ধতা ছেয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু আনিক মুগ্ধ হতে পারলো না। ২০ বছর আগেও না আজও না। সেদিন তাকে ক্রোধ কাবু করেছিল আর আজ আশ্চর্যতা। এতদিন পর এই চিঠি ঠিক কিভাবে.…………….। তার খেয়াল হয় আরও একটা খামও এসেছে, ওটা দ্রুত খুলে পড়তে লাগলো সে,

আজ ঠিক কি বলে আপনায় আমি সম্মোধন করবো আমার জানা নাই তাই শিরোনামহীন ভাবেই চিঠিটা শুরু করলাম।

প্রথম খামটা পরেই আপনার মনে পরে যাওয়ার কথা এই অজানা ব্যক্তিটার কথা। যার সাথে একসময় প্রতিদিন লাইব্রেরির বইয়ে লুকিয়ে রেখে চিঠির আদান-প্রদান করতেন।নিতান্তই সেটা ছিলো একজন বন্ধুরুপে।

বাবা-মায়ের থেকে সর্বদা অবহেলার পাত্রী হয়ে আমার এক নিঃসঙ্গ জীবন চলতে লাগলো। ঠাম্মি ছিলো কিন্ত তাও কোথাও না কোথাও নিঃসঙ্গতা ছিলই। এমনই একদিন হুট্ করে ঝোকের বসেই একটা চিঠি লিখে লাইব্রেরির বইয়ের ভিতর রেখে দেই। যে চিঠিতে ছিলো এক বন্ধুর জন্য আকুল আবেদন।

পরদিন লাইব্রেরিতে গিয়ে নিদিষ্ট জায়গাতেই একটা চিঠি পাই কিন্তু ওটা আমার লেখা চিঠিটা ছিলো না ছিলো। ছিলো আমার বন্ধুত্বের আবেদনে সারা দেয়া বিপরীত মানুষটার ছিলো। ঐদিন কতোটা খুশি হয়েছি বলে বুঝানো যাবে না। অতঃপর চলতে থাকলো আড়ালে লুকিয়ে থেকে চিঠি আদান-প্রদানের বন্ধুত্ব। কিন্তু হয়তো আবেগ নয়তো ভালোবাসাই ছিলো। আমার মনে আপনাকে নিয়েই সব জল্পনা-কল্পনা করতে লাগলাম। ধর্মের দেয়াল এই প্রণয়ে বাধা হবে জেনেও আমি সাহস করে প্রেমের প্রস্তাবটি রাখি। এর পর কেটে যায় টানা কয়েক ঋতু কিন্তু আমার প্রস্তাবের কোনো জবাব আসে না! প্রতিদিন আশা নিয়ে বইয়ের পাতাটা খুলি কিন্ত নিজের লেখা সেই চিঠিটাই পাই! আমার বুঝতে বাকি রয় না যে আমি প্রত্যাক্ষত হয়েছি। সেদিন প্রত্যাখন হয়ে যতটা না কষ্ট লাগছিলো তার চেয়েও কয়েকগুন বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম একটা ভালো বন্ধুকে হারিয়ে। তারপরেও একটাবার শেষ চেষ্টা করতে হবে এই ভেবে আপনার খোঁজ নেই আপনার সম্পূর্ণ পরিচয় পেলেও আপনাকে পাই নি। আপনি আর ছিলেন না কলেজএ আর আপনার সাথে যোগাযোগ করার কোনো মাধ্যম পাওয়ার আগেই আমাকে বিদেশে পড়তে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর একবার জীবন থেকে কেটে যায় বহু বসন্ত কিন্তু আমার প্রণয় থেকে যায় অসম্পূর্ণ। পূর্ণরায় দেশে ফেরত আসলাম জীবনটাও নিজের গতিতে চলতে লাগলো ভাবতাম আমি যার প্রণয়ে রাত-দিন দগ্ধ হই সেও কি হয় নাকি। তার সাথে দেখা করতে মন চাইতো কিন্তু সুযোগ পাইনি। অতঃপর ভাগ্যর জোরে একদিন তার সাথে দেখাও হয় প্রথমে তাকে না চিনলেও পরে ঠিকই চিনি। কিন্তু আফসোস! সে আমায় চিনলো না বেশ কয়েকদিন এ আমি এটাও বুঝতে পারলাম যে তার জীবনে আমার বিন্দুমাত্রও অস্তিত্বও নেই হয়তো কোনোদিন ছিলোও না। তাই আমিও তাকে মন থেকে মুছে দিতে উদ্যোত হই, সহজ ছিলো না কিন্তু পরেও আমি চেষ্টা করি। আর এক আগন্তুকের কারণে সফল ও হই। কিন্তু এটাও সত্যি যে আজকের তারিখে আমার মনে আর তার জন্য কোনো প্রণয় এর অস্তিত্ব নেই। আমার নতুন এক জীবনের সূচনা হয়েছে। তাই পুরোনো এই অধ্যায়ের ইতি টানাই আমার কাছে শ্রেয় মনে হলো। যেহেতু আপনি আমার এই অধ্যায়েরই একটা অংশ ছিলেন তাই আপনাকে সব খুলে বললাম। আর গোলাপ গুলো আপনায় দিবো বলে বড়োই শখ করে কিনেছিলাম কিন্তু দেয়া হয়নি তাই আজ দিয়েই দিলাম।আশীর্বাদ করবেন যেন আমি আমার জীবনের নতুন অধ্যায়ে সুখী হই।

চিঠিটা পরেই আনিক ডুব দেয় সেই রঙীন পাঠশালার দিনগুলোতে। কলেজ এর লাইব্রেরিতে বই পড়তে গিয়ে তার ভিতরে একটা চিঠি পেলে সেটা পরে সে। চিঠিতে ছিলো বন্ধুত্বের আবেদন , তার বেশ ভালোই লাগলো সেও সারা দিতে লাগলো। ভালোই চলছিলো এই বন্ধুত্ব কিন্তু একদিন হটাৎ করেই চিঠিতে সে প্রণয় প্রস্তাব পেলে তার রাগ সর্বোচ্চ পর্যায় পার করে যায়। ক্ষোভে আর উত্তরই দেয় না সে। কয়েকদিন পর এটা সে ভুলেও যায় কিন্তু আজ এতদিন পর এসব…………

আনিক এর ভাবনার মাঝে নাইমার ডাকের আওয়াজ পেলেই দ্রুত সব লুকিয়ে ফেলে। পুরোনো অতীত যা তার জীবনে কোনো মূল্যই রাখে না সেটার রেশ ধরে সে তার বর্তমান নষ্ট করতে রাজি নয়। অতঃপর নাইমার ডাকে সারা দিয়ে সে ছুটলো নাইমার পানে। আর চিঠিগুলো আড়ালেই রয়ে গেলো।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

নিজের কেবিনের জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি অবলোকনে ব্যস্ত অঙ্কিতা। সিঁথি তার রাঙা গাঢ় লাল সিঁদুরে হাতে শাখা-পলা পড়া। নিজের এই অগোছালো জীবনটাকে নিয়েই গভীর ভাবনায় ডুবে ছিলো সে, তার ভাবনার ব্যাঘাত ঘটিয়ে উচ্চস্বরে মোবাইল বেজে উঠলে তার মনোযোগ সেদিকে স্থির হয়। মোবাইল হাতে নিলে স্ক্রিনে বর বেশে রবির হাস্যজ্জল মুখশ্রীর ছবিটা দেখে সে। সে ফোনটি তুলে যেই না কথা বলতে নিবে অমনি দরজায় কেউ কড়া নারলে সে “পরে কথা বলছি” বলেই ফোন কেটে দেয়।
ওপরপাশে রবি হাসতে হাসতে নিজেকেই বলে-

বাবা রবিই দুনিয়ার সব মেয়ে ফেলে ডক্টর করেছে বিয়ে তাই এসব তো মেনে নিতেই হবে।

কথাটা বলে নিজেই হেসে ফেললো সে অতঃপর পূর্ণরায় নিজের কাজে মন দিলো সে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

রাজধানীর **** এলাকায় একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। জানা যায় দ্রুতগামী ট্রাকের প্রাইভেট কারকে চাপা দেয়ার ফলে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনায় গাড়িতে অবস্থানকারী আবির মাহমুদ ও তার স্ত্রী অনিমা সিকদার এর মধ্যে অনিমা সিকদার যে সাত মাসের অন্তসত্তা ছিলো তার মৃত্যু ঘটনাস্থলেই হয়েছে এবং আবির মাহমুদকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

টিভির সকল নিউজ চ্যানেল এর পর্দাতে এই একটা খবরই প্রচার হচ্ছে পাশে আবির আর অনিমার ছবিও দেখানো হচ্ছে। এসব দেখেই নাঈমা আনিককে ডাকতে লাগলে আনিক এসে সম্পূর্ণ নিউজ সেও দেখলো কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।

এই দেখসো খবরে এগুলা কি কইতাসে আমার সহ্য হইতেসে না এসব। চলো দ্রুত হাসপাতাল চলো আবিরের আমাগো দরকার আসে। (নাইমা)

আনিক দেখলো নাইমার অবস্থা কাঁদতে কাঁদতে নাজেহাল। এতটা অপমানের পরও নাইমা কিভাবে এই মানুষগুলোর জন্য চোখের জল ফেলছে টা আনিক বুঝতে পারলো না। আনিকের কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে নাইমা নিজেই একা চলে যেতে লাগলে আনিক তাকে টেনে ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বললো –

মাইনষের পাপের ঘড়া পূর্ণ হইয়া গেলে তার শাস্তির সময় শুরু হয়। তাদের ও তাই হইতেসে তাই বাধা দিবা না। যা হওয়ার হোক তুমি ওদিকে তাকাইবাও না। আজ পর্যন্ত আমি আমার কথা তোমারে মানতে বাধ্য না করলেও আজ করমু। আমার কথাটা আজকে তোমারে মানতেই হইবো নয়তো আজীবনেও আমার দেখা আর পাইবা না তুমি। কথাটা মনে রাইখো।

এই বলে আনিক বেরিয়ে যায় আর নাইমা ভাবতে থাকে লোকটা এমন পাথর মনের অধিকারী হলো ঠিক কবে! আনিক বেরিয়ে পরার পর কিছুদূর আগালেই চোখ ছলছল করে উঠে তার। খবরটা দেখে তার ভিতরে কি তোলপাড়টাই না হচ্ছে সেটা সে প্রকাশ করতে পারছে না কিন্তু তার যে কিছুই করার নেই। সে জানে আজও তারা গেলে আবির তাদের পরিচয় দিবে না। আর এটা হয়তো নাইমা মানতে পারবে না, তাই তাকেই কঠোর হতে হলো। আনিক দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলে নিজেকে ঠিক করে দোকানের দিকে ছুটলো।

চলবে…………….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে