নীরা পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0
987

#নীরা
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#শেষ_পর্ব
আমি ভাবতে লাগলাম,
তবে কি এই মেয়েই নীরার মা?
এই মেয়ে নীরার মা হলে,
স্কুলের খাতায় নীরার মায়ের নামের জায়গায় ন্রিতা রাহমান লিখা কেন?

মেয়েটা রাজকে ডাকার পর রাজ এসে ফোন টা ধরলো।

_হ্যালো,কে বলছেন?

এপাশ থেকে আমি স্তব্ধ।

_কথা বলছেন না কেন?
কে বলছেন?

_আ আ আমি।

_ন্রিতা…

আমি অবাক হয়ে গেলাম,ও আজো আমার কণ্ঠস্বর ভোলেনি।অথচ আমাকে ঠিক ভুলে গেছে।

_হ্যাঁ।ন্রিতা বলছি।

_কেমন আছো?
_আমি কেমন আছি তা তোমার না জানলেও চলবে।
বলছিলাম যে,নীরা আমার কাছে।
ও তোমার কাছে যেতে চাইছে।
আমি কিভাবে তোমার কাছে ওকে পৌছে দেবো?
একটু বললে ভালো হতো।

রাজ আমাকে ওর বাসার ঠিকানা দেয়।
আমি ন্রিতাকে নিয়ে রাজের বাসার দিকে যাচ্ছি।

কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে,রাজ নীরার কথা শুনে একটুও অবাক হলোনা।
অথচ ওর তো কান্নায় ভেঙে পড়ার কথা ছিলো,আবেগে আপ্লুত হয়ে যাবার কথা ছিলো।এত দিন পর হারিয়ে যাওয়া মেয়ের সন্ধান পেয়েছে।

কিছুই বুঝতেছিনা আমি।
কোন বাবা এমন কিভাবে হয়?

আমি নীরাকে নিয়ে রাজের বাসায় পৌছালাম।

আমার পা যেন চলছেনা।
এত বছর পর সেই চেনা মুখ,সেই কন্ঠস্বর।
কিভাবে যাবো ওর সামনে আমি।

আমি ওর বাসার সামনে পা রাখতেই ও বেড়িয়ে আসে।

_আমি জানতাম তুমি চলে আসবে,তাই তোমাকে রিসিভ করতে এলাম।

নীরা দৌড়ে রাজের কাছে ছুটে গেলো।

রাজ নিচে বসে নীরাকে জড়িয়ে ধরে অনেক গুলো চুমু খেলো।আদর করলো।

আমার কান্না পাচ্ছে ওকে দেখে।
ইচ্ছে করছে যদি একটা বার অন্তত ওকে জড়িয়ে ধরতে পারতাম।
তাহলে হয়তো এত গুলো বছরের ক্ষোভ রাগ জেদ কষ্ট সব নাই হয়ে যেতো।
বুকটা হালকা হয়ে যেতো।

আমি পেছন ফিরে দাঁড়ালাম।

_ন্রিতা দাঁড়াও।যেও না।

আমি চোখ মুখ খুব শক্ত করে বন্ধ করে রাখার চেষ্টা করছি,যাতে কোন ভাবে ও বুঝতে না পারে আমি উইক হয়ে যাচ্ছি।
আমার চোখে যে জল চলে আসছে।

রাজ আমার কাছাকাছি এলো।

আমি ওর দিকে না ঘুরেই ওকে প্রশ্ন করতে লাগলাম।

_কেমন বাবা তুমি?মেয়ে হারিয়ে গেছে আর তোমার কোন খেয়ালই নেই সেদিকে।
একটু খোঁজ পর্যন্ত করোনি।

খোঁজ করোনি ভালো কথা।
এই যে এখন যে আমি কল করে বললাম নীরা আমার কাছে।
কই একটু খুশিও তো হলেনা।
অথচ তোমার আবেগে আপ্লুত হবার কথা ছিলো।
মেয়েকে ফিরে পেতে যাচ্ছো।

আর স্কুলের টিচারকে বলেছো ও বেড়াতে গেছে।
বুঝলাম না কেমন বাবা মা তোমরা।
এই মেয়েটার জন্য একটুও কি মায়া লাগেনা তোমাদের?

এ কয়দিনে আমিই তো ওর মায়ায় আটকে গেছি।
কিভাবে এই মায়া কাটাবো বুঝে উঠতে পারছিনা।
আর তোমরা?

লজ্জা হওয়া উচিৎ তোমাদের।
জন্ম দিয়েছো আর কর্ম শেষ?

আমি এক নিশ্বাসে একের পর এক বলেই যাচ্ছি।

_তোমার বলা শেষ হলে এবার আমি বলি?

_হুম বলো।

_নীরাতো হারায়নি,তো ওকে খোঁজার তো কোন প্রশ্নই আসেনা।
ও হারালেতো আমি খুঁজবো।
আর আমি যখন জানিই আমার মেয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে আছে।
সেহেতু আমার চিন্তার কি কারণ?
আর আমি আবেগে আপ্লুত হইনি,কারণ তোমার কাছে ছিলো ও।
খারাপ তো অবশ্যই রাখোনি ওকে।
তাছাড়া আমি আমার মেয়েকে প্রতিদিনই তো দেখেছি।
আর যেখানে জানি আমার মেয়ে ভালো আছে,ভালো ছিলো।
সেখানে এত চিন্তা মাথায় নেয়ার দরকারই বা কি?

_তার মানে তুমি জানতে নীরা আমার কাছে?

_জানতাম আবার কি,
আমি নিজেই তো ওকে তোমার কাছে পাঠিয়েছি।

আমি রাজের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম।

_বাহ!আমাকে কষ্ট দিতে?
মায়া বাড়ানোর জন্য?যাতে পরে ওকে নিয়ে এসে আমাকে যন্ত্রণা দিয়ে মারতে পারো?
সারাটা জীবন যন্ত্রণা দিয়েই গেলে।
এছাড়া আর পারোই বা কি তুমি।

_হয়েছে অপবাদ দেয়া?
_না,হয়নি।
আমার আরেকটা প্রশ্ন ওর মায়ের নামের জায়গায় ন্রিতা রাহমান কেন?

প্রথমত,
আমি তোমাকে যন্ত্রণা দিতে নীরাকে তোমার কাছে পাঠাইনি।
আর ২য়,
ওর মায়ের নাম ন্রিতা রাহমান,তাহলে ন্রিতা রাহমান থাকবেনাতো অন্য নাম থাকবে?

_যন্ত্রণা দিতে পাঠাও নি তাহলে কিসের জন্য পাঠিয়েছো?
আর ওর মায়ের নাম ন্রিতা রাহমান কিভাবে?
তোমার ওয়াইফ এর নামও কি ন্রিতা নাকি?

_নীরা ওর মায়ের কাছে যাবার জন্য বায়না করছিলো।
স্কুলে গিয়ে দেখতো সবার মা আছে ওর মা নেই,তখন খুব কান্না করতো।
তাই তোমার কাছে পাঠিয়েছিলাম।
আর আমার ওয়াইফের নাম তো ন্রিতা ই।
তুমি কি জানোনা?

আমি অবাক হয়ে রাজকে জিজ্ঞেস করলাম।

তাহলে কি নীরা আমার মেয়ে?
কিন্তু তা কি করে সম্ভব?
আমার বাচ্চা তো জন্মের সময় ই..

_জন্মের সময় ই কি?
অনাথ আশ্রমে দিয়ে এসেছো?
নাকি মেরে ফেলেছো?

_রাজ প্লিজ।
এসব কি বলছো তুমি?

_কি বলছি মানে কি?

তুমি তো কখনো চাও ই নি আমাদের মেয়েকে তোমার কাছে রাখতে।
কিংবা জন্ম দিতে।

_বাহ্! তুমি বলছো এ কথা?
যে কিনা আমাকে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছিলে,মরার জন্য।

_ন্রিতা,রাগের মাত্রা ছাড়িয়ো না আমার।

_কি রাগ দেখাবা তুমি আমার সাথে আর?

কি বলেছিলে তুমি যেন?
ন্রিতা বাইরে যাবার আগে বিয়ে করে রেখে যাই।
কাউকে জানানোর দরকার নেই আপাতত।
তুমি পড়াশোনা করতে থাকো।
আমি দু বছর পর এসে বাসায় জানিয়ে অনুষ্ঠান করে ঘরে তুলবো তোমায়।
তখন শুধু আমাদের পরিবার জানবে,আমাদের আগে বিয়ে হয়েছিলো।
আর কেউ জানবেনা।

আর আমিও তোমার কথায় তাই করলাম।
বিয়ে হলো,তুমিও চলে গেলে।

কিন্তু কে জানতো,আমি যে ছোট্ট একটা প্রাণ আমার দেহে লালন করছিলাম।

যখন তোমাকে জানালাম তুমি কি করলে?

আমার সাথে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলে,
একটা বার ভেবেছিলে আমার কি হবে?
আমি কোথায় যাবো?

_আমি তোমার সাথে ইচ্ছে করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করিনি ন্রিতা।
মনে করে দেখো,তোমার প্রেগন্যান্ট এর কথা শুনে আমি কতটা খুশি হয়েছিলাম।
আর আমি বলেছিলাম,যেভাবেই হোক আমি দেশে চলে আসবো।
আমার এখন তোমার পাশে থাকা প্রয়োজন।

আর দেশে এসেই সবাইকে আমাদের বিয়ের কথা জানিয়ে দেবো।

বলিনি আমি?

_হ্যাঁ বলেছিলে,কিন্তু তারপর কি করেছিলে?
চোরের মত পালিয়েছিলে।
_আমি পালাইনি ন্রিতা।
আমি তোমার সাথে এরপর যোগাযোগ করতে পারিনি কারণ আমি জেলে ছিলাম।
পুলিশ আমাকে ভুল বুঝে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো।

আমি নতুন ছিলাম সেখানে।
তাই কিছুই করতে পারিনি তখন।
অনেক চেষ্টা করেছি,অনেক অনুরোধ করেছি একটা বার যোগাযোগ করতে চেয়েছি দেশে।
কিন্তু পারিনি।

আর কেউ আমাকে ছাড়াতেও আসেনি।
দুই দিনের এক ছেলের জন্য কার এত মাথা ব্যথা।

তারপর যখন আমি বহুদিন পর ছাড়া পেলাম।
তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম।ফোন করলাম,
তোমার বাড়ীর লোকজন বল্লো,মানে তোমার কাকা বল্লো,তুমি আমার সাথে কোন রকম যোগাযোগ করতে চাওনা।

খুব কষ্টে আমি দেশে ফিরলাম।
তোমরা তোমাদের বাসাটাও ছেড়ে কোথায় যেন গিয়েছো।

কি করবো তখন আমি বলো?

আমি কোন ভাবেই তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না।

আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছিলো,তুমি কেমন আছো আমাদের সন্তান কেমন আছে।

আমি বার বার তোমাদের নাম্বারে ট্রাই করলাম।
যেই নাম্বারটাতে কল ঢুকেছিলো,সেই নাম্বারটাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো।

তোমরা কোথায় আছো কেমন আছো কেউ বলতে পারছিলোনা।
শুধু বলেছে,তোমরা এখন আর এ বাসায় থাকোনা।

_তুমি একটা বার ভেবে দেখো তো,সেই সময় আমার কি পরিস্থিতি হয়েছিলো?
না পারছিলাম সইতে,না পারছিলাম মরতে।
কারণ আমার গর্ভে যে আমাদের সন্তান ছিলো।
আর একজন বাবার পরিচয় ছাড়া সন্তানকে জন্ম দেয়া কতটা কষ্টের ব্যাপার চিন্তা করেছো একবার?

আমি তোমার বাসায় অব্দি গিয়েছিলাম।আমার সাথে তুমি যোগাযোগ বন্ধ করে দেবার পর।
কিন্তু গিয়ে দেখি,সবাই নাকি গ্রামে চলে গেছেন।

আর আমি তোমার গ্রামের বাসাটাও চিনিনা।
আর না আছে কারো নাম্বার আমার কাছে।

তখন আমি মরণ ছাড়া কোন পথ দেখতে পাচ্ছিলাম না।

সবাই বলেছিলো বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলতে।
আমি আমার সবাইকে তোমার কথা বললাম,
বললাম আমরা বিয়ে করেছি।
কিন্তু তুমিই তো নাই।
তারাই বা কি করবে?
কত জনের মুখ আটকাবে?
কিভাবে সবাইকে বিশ্বাস করাবে আমার যে সত্যি সত্যি তোমার সাথে বিয়ে হয়েছে।

যেখানে তোমারই উপস্থিতি নেই।

আমি সবার সাথে যুদ্ধ করে আমাদের বাচ্চাটা রেখেছিলাম জানো?
আর এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায়ও গিয়েছিলাম।
যাতে আমাদের সন্তান টাকে আমি বাঁচাতে পারি।

যখন সময় ঘনিয়ে এলো হসপিটালে ভর্তি হলাম।তখন কাকা কাকীরা বল্লো আমার নাকি,মৃত সন্তান হয়েছে।আমি মৃত সন্তান জন্ম দিয়েছি।

_কিন্তু আমিতো শুনেছি অন্য কথা ন্রিতা।

দেখো,ভাগ্যের কি পরিণতি।

আমি সেদিন আমার এক বন্ধুকে নিয়ে ওই হসপিটালেই গিয়েছিলাম ওর অপারেশন এর জন্য।
যেখানে তুমি এডমিট হয়েছিলে।

আমি তোমাকে দেখতেই এগিয়ে যাচ্ছিলাম খুশিতে।
কিন্তু হঠাৎ তোমাকে কেবিনে নিয়ে যায়।
আর আমি লুকিয়ে পড়ি,
যাতে তোমার বাসার লোকজন কোন সীনক্রিয়েট না করতে পারে।
আম্মুকেও দেখতে পাচ্ছিলাম না,শুধু তোমার কাকা কাকীদের দেখতে পাচ্ছিলাম।

আর আমি তাদের সামনে যাইনি কারণ যেখানে আমি নিজে তোমার সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছি,তারা করতে দেন নি।
বরং ফোন নাম্বার টাও অফ করে রেখেছেন।
সেখানে আমি তুমি ছাড়া কাউকে ভরসা করতে পারছিলাম না।

তাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
এক নার্সকে বললাম,কোন সমস্যা?
_সে বললেন বাচ্চা ডেলিভারি হবে।

আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম আর দোয়া করতে লাগলাম।

কিছু ক্ষণ পর দেখি নার্স আমার বাচ্চাটাকে নিয়ে কোথায় যেন চলে যেতে লাগলো।
আমি তার পিছু পিছু যেতে লাগলাম।

গিয়ে বললাম,

_কি হয়েছে সিস্টার?ওই পেশেন্টের কি বাবু হয়েছে?
পেশেন্ট ভালো আছে?
_নার্স আমাকে তার কোলে থাকা ফুটফুটে বাচ্চাটা দেখিয়ে বললেন,এই যে মেয়ে বাবু হয়েছে।

আমি নার্সের কোল থেকে আমার পরীটাকে কোলে নিলাম।
চুমু খেতে খেতে বললাম,

ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন আপনি?

তখন নার্স বল্লো,
ওকে তারা রাখবেন না।
ওর বাবার পরিচয় নেই।
কোন অনাথ আশ্রম কিংবা যাদের বাচ্চা হয়না,তাদের কাছে বা কোথাও দিয়ে দিতে বলা হয়েছে।

ওর মা ও তাই চায়?

_হ্যাঁ। সবাই তাই চায়।
তাইতো নিয়ে যাচ্ছি।

সেদিন আমি আমার নীরাকে ওখান থেকে নিয়ে আসি।

আর মনে মনে ভাবি,জীবনে কোন দিন আর তোমার সম্মুখীন হবোনা।
যে কিনা আমার সন্তানকে অন্য কাউকে দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আর আমার মেয়ের মুখও তোমায় কোন দিন দেখতে দিবোনা।

_অথচ আমি সেদিন জানতেও পারিনি রাজ,আমার একটি জীবিত মেয়ে সন্তান হয়েছে।কারণ আমি প্রায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম ব্যথায়।
কি অদ্ভুত না?
আমার রাজকুমারী হয়েছে,আমি জানতে পারিনি।
আম্মুকে সেদিন বলা হয়েছিলো,আমরা ওকে হসপিটালে নিয়ে যাই।
আপনি কাপড় চোপর আরো যা যা লাগে সব কিছু নিয়ে পরে আসেন।

জানোইতো কাকা কাকীর সংসারেই মানুষ আমি।
তাই তাদের কথাই শুনতে হয়েছে আম্মুরও।
এমন কি আম্মুও জানে,আমি মৃত সন্তান জন্ম দিয়েছি।

আমি বাচ্চা জন্ম দেয়ার কিছু ক্ষণ পরই তারা আমাকে ওখান থেকে নিয়ে আসেন।
বলেন,এখনই বাসায় চলে যেতে বলা হয়েছে।

অথচ তখন আমি অসুস্থ।
অসুস্থ শরীরে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় চলে যাই আমি।আম্মুকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকি।
আমি আর আম্মুতো চেয়েছিলামই আমাদের সন্তানকে দুনিয়ায় আনতে।
নইলে কি এত গুলো মাস পেটে রাখতাম বলো?

একটা বার যদি আমার সামনাসামনি হতে তুমি।
তাহলে এত গুলো বছর আমাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি থাকতোনা।
আমার নীরা মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হতোনা।

আমার কাকা কাকীতো চেয়েছিলেন আমি সব ভুলে যেন তাদের ছেলেকে বিয়ে করি।
আমি করিনি।
তারা ছোট থেকেই চাইতেন আমার সাথে তাদের ছেলেকে বিয়ে দিতে।
কারণ তাহলেই আমার বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি যা আমার নামে আছে তা সব তাদের দখলে এসে যেতো।

আর সেই জন্যই হয়তো তারা এত কিছু করেছেন।
তোমার সাথে আমার যোগাযোগও হতে দেন নি।

বাসার সবাই না গ্রামে চলে গিয়েছিলো?
তাহলে এখানে কিভাবে আসলে আবার?

_নীরাকে নিয়ে গ্রামেই চলে গিয়েছিলাম।
এইতো বছর এক হয় ওকে নিয়ে এখানে এসেছি,তোমাকে খুঁজতে।
যখন জেনেছি তুমি আবার তোমার আগের বাসায় ফিরে এসেছো।
তখন পাশেই বাসা নিয়ে নিলাম।

আর আমি কিন্তু হসপিটালে গিয়েও পরে তোমার খোঁজ করেছিলাম।যখন আমার রাগ কমেছিলো।
কিন্তু পাইনি।
কোথাও পাইনি তোমায়।

_এই রাগ টাই এক সময় তোমার জীবনে অনেক ক্ষতি করবে,বলেছিলাম না একদিন আমি?

_বাদ দাও এখন এসব।

_মা,ও মা তুমি কাঁদছো কেন?

_তোমার মেয়েতো পুরাই নাটক বাজ হয়েছে,
আমার কাছে যখন গেলো তখন,মা নেই,কেউ নেই কিচ্ছু নেই।এই কথা ছাড়া তার মুখে আর কথা নেই।
এখন দেখি সে সব কথা বলতে পারে।

_আরে আমিই তো শিখিয়ে দিয়েছিলাম বেশি কথা না বলতে।
শুধু বলতে, মা নেই কেউ নেই কিচ্ছু নেই।
আর তোমাকে দেখিয়ে বলেছিলাম,ওটাই তোমার মা।
আর বলেছিলাম,বেশি কথা বললে কিন্তু মা ফেরত পাঠিয়ে দেবে আমার কাছে।

_তোমার কি একটুও কষ্ট হয়নি এত দিন নীরাকে ছাড়া থাকতে?
_আমি প্রতিদিন গিয়ে নীরাকে দেখে এসেছি দূর থেকে।
কিন্তু তুমি দেখোনি।

এত দিন তো ছিলোই আমার কাছে।
তাই ভাবলাম তোমার কাছেও থাকুক না কিছু দিন।

_ন্রিতা,
_জ্বী বলো।
_এখন কি নীরাকে ওর মা বাবার আদর এক সাথে দেয়া যায়না?
বাকি টা জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়না আমার সাথে?

আমি রাজকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
যায় তো।
তবে রাগ কমাতে হবে,আর রোমান্টিক হতে হবে।
আমি যদি জিজ্ঞেস করি,
আমার গায়ের ঘ্রাণ কি তুমি পাওনা?
তখন বলতে পারবানা পাইতো,পারফিউম এর ঘ্রাণ।

_কিন্তু ন্রিতা,
_কি?
_আমি যে এখনো তোমার গায়ে পারফিউম এর ঘ্রাণ ই পাচ্ছি।

নীরা হাসতে হাসতে বল্লো,
বাবা আমিও।

আমি রাগী চোখে রাজের দিকে তাকিয়ে বললাম,
যাও ব্রেকাপ।

নীরা আমাকে আর রাজকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি নীরার কপালে চুমু খাচ্ছি,
আর রাজ আমার কপালে।
আর সেই মুহূর্তে পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর দৃশ্য টা মোবাইলে ধারণ করলো নীরার ছোট ফুপ্পি,রাজের ছোট আপু যে কিনা একটু আগেই আমার কল টা রিসিভ করেছিলো।

(সমাপ্ত)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে