নিয়তি পর্ব-১৪

0
1129

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(কন্ঠ)
#পার্ট১৪

আজ সিঁথির সাধ।সাধারণত গর্ভধারণের পাঁচ বা সাত মাসে বাঙালি সমাজে সাধ নামে একটা উৎসব পালিত হয়।এই উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু থাকে গর্ভধারিণী মা।তার পছন্দ মতো খাবারের পদ রান্না করা হয়।আমন্ত্রিত অতিথিরা গর্ভবতী মায়ের জন্য বিভিন্ন রকমের উপহার সামগ্রী আনে।হৃদি সকাল সকালই এসে পড়েছে সব আয়োজন করতে।সিঁথি সাম্যের বিয়ের কাজ সব হৃদি করেছে তো এটা কেন বাদ যাব?
হৃদি আর সাম্যের যে সামনাসামনি দেখা হয় নি তা কিন্তু নয়!কিন্তু হৃদি সাম্যকে এড়িয়ে চলে গেছে।মামা মামি ছাড়া কারও সাথে খুব একটা কথাও বলে নি।থানায় যাওয়ার আগ দিয়ে বিভোর হৃদিকে রেখে যায়।মিসেস ছায়া দুপুরের দিকে আসবেন।হৃদিকে সালাম সাহেবের বাসায় নিয়ে আসার সময় পথে হৃদিকে বিভোর বলে,,

-আচ্ছা আপনি সিঁথির বরের সামনা সামনি পড়বেন।তো তখন কষ্ট হবে না?
-আপনাদের সাথে কতদিন ধরে থাকছি বলতে পারবেন?
-ছয় মাস তো হলোই।
-এই ছয়মাসে সাম্যদার প্রতি যত মায়া ছিলো সব কাটায় উঠছি।একটা কথা কী জানেন?মানুষ বলে না যে তোমায় ছাড়া আমি বাঁচবো না!এটা সম্পুর্ন মিথ্যা।ছেড়ে চলে গেলে কেউ মরে যায় না।শুধু মায়া কাটাতে একটু সময় লেগে যায়। ঠিক যেমনটা আমার আপনার সাথে হয়েছে।

হৃদির কথা শুনে বিভোর হেসে দেয়।এই মুহুর্তে বিভোরের খুব হাসি পাচ্ছে কারণ একসময় বিভোর আর সিঁথিও বলেছিলো যে তারা একেঅপরকে ছাড়া বাঁঁচবে না।অথচ এখন দুজনেই দিব্বি ভালো দিন কাটাচ্ছে।

-জানেন আমি আর সিঁথিও না একসময় একেঅপরকে বলেছি যে আমরা একেঅপরকে ছাড়া বাঁচবো না।অথচ আমরা দুজনেই এখন সুস্থ স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছি।

বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে যাওয়ার আগে হৃদি বিভোরকে জিজ্ঞেস করে সে সিঁথির সাধে আসবে কি না।জবাবে সে বলে যে সে চেষ্টা করবে।অনেক দিন ধরে বিভোর সিঁথিকে দেখে না।আজ না হয় সাধের অনুষ্ঠানের বাহানায় প্রথম প্রেমকে চোখের দেখা দেখবে।

সালাম সাহেব ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ছিলেন।হৃদি এই ঘর থেকে ঐ ঘর দৌড়াচ্ছে।এই বাসায় আসলে কাজ যেন হৃদির পিছু ছাড়ে না।ঠিক মায়ের মতোই হয়েছে।

দুপুরের দিকে বিভোর আর মিসেস ছায়া আসেন।প্রথম দেখায়ই বিভোর সিঁথিকে চিনে ফেলেছে।গ্রামীন বধুর মতো শাড়ী পড়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে।কৈশোরের চেহারা আর বর্তমান চেহারার সাথে বিভোরের চেহারার কোনো মিল নেই।খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। শ্যাম গায়ের রঙ। বলিষ্ঠ চেহারা।সব মিলিয়ে আগেকার হেংলা পাতলা বিভোরের আর এখনকার অফিসার বিভোরের অনেক পার্থক্য।

বিভোর নিজে পছন্দ করে এক জোড়া ঝুমকো কিনে এনেছে সিঁথির জন্য।ঝুমকো সিঁথির খুব পছন্দ ছিলো স্কুল জীবনে।এখন হয়তো তার পছন্দেরও পরিবর্তন হতে পারে।যেহেতু মানুষ পরিবর্তনশীল।

-শুভকামনা এবং দোয়া রইলো আপনার নতুন জীবনের জন্য আর ভালোবাসা ও দোয়া রইলো নতুন সদস্যের জন্য।

কথাটা বলে বিভোর সিঁথির হাতে বক্সটা দেয়। সিঁথি বক্সটা ওর মায়ের হাতে দিয়ে বিভোরকে ধন্যবাদ জানায়।
সালাম সাহেব হৃদিকে জোর করেই বিভোর আর মিসেস ছায়ার সাথে খেতে বসিয়ে দেন।তাদের সাথেই হৃদি বেরিয়ে যাবে নি।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হৃদিকে তিনি বিদেয় করবেন।এম্নেতেই মেয়েটা বেশ কয়েকবার সাম্যের মুখোমুখি হয়েছে।সালাম সাহেব চাননা হৃদির কষ্ট আরও বাড়ুক।তিনি কখনোই হৃদিকে এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানাতেন না।কিন্তু তার স্ত্রী…!যাক গে ওসব কথা বাদ দেয়া যাক।সালাম সাহেব হৃদিকে ডাক দিয়ে খেতে বললে হৃদি বলে,,,

-মামা সবাই খেয়ে নিক।তারপর না হয় আমি।
-এখনই যাবি তুই।বিভোর তুমি ওকে নিয়ে যাও তো!এম্নেতে যাবে না।মেয়েটা বড্ড জেদি।

বিভোর বিনয়ীর সাথে হৃদিকে খেতে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু হৃদি সেই এক কথা।সবার খাওয়া হলে সে খাবে।

-হ্যাঁচকা টান দিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে যাও তো বিভোর।আমি অসুস্থ। তা না হলে আমিই করতাম।

বিভোর কী করবে বুঝতে পারছে না।হাত বাড়িয়ে আবার ফিরিয়ে নেয়।হঠাৎ করে বিভোরের কী হলো সে নিজেও বুঝতে পারলো না।হ্যাঁচকা টানে হৃদিকে খাবারের জায়গায় নিয়ে যায়।বিশাল আয়োজন করেছেন বিলকিস বেগম সিঁথির সাধ উপলক্ষে। সাম্যের কাজিন আর সাম্য খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে আছে।খেতে খেতে একসময় হৃদির গলায় খাবার আটকে যায়। সে কাশতে লাগে।সাম্য দৌড়ে পানি নিয়ে আসে।কিন্তু তার আগেই দেখে বিভোর হৃদিকে পানি এগিয়ে দিয়েছে।সাম্যের পানি আনা আবার হৃদির চোখ এড়ায়নি।সাম্যের হয়তো ধারণা হৃদি কিছুই জানে না।তাই হয়তো আলগা দরদ দেখাতে এসেছিলো।


রাত তখন প্রায় ১টা। হৃদির ঘুম আসছে না।কি জন্যে হৃদিও জানেনা।বেলকনিতে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে কানে ইয়ারফোন গুজে আনমনে চেয়ে আছে আকাশের পানে।মাঝে মাঝে চোখ বুঝছে তখন চোখের কার্ণিশ থেকে দু ফোটা জল গাল বেয়ে মেঝেতে পড়ছে।এমনিতে হৃদির ইমোশনাল গান ভাল্লাগে না।তবে ইদানীং তানভীর ইভাবের অভিমান গানটা খুব শুনছে।সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ ঝড় তুলেছে গানটা।অজান্তেই হৃদি গানের সাথে গলা মিলিয়ে বসে।

“কখনো যদি আনমনে চেয়ে আকাশের পানে,, আমাকে খুঁজো,,কখনো যদি হঠাৎ এসে জড়িয়ে ধরে বলো ভালোবাসো,,,,আমি প্রতিরাত হ্যাঁ প্রতিক্ষণ খুব অজানায় খুব অভিনয়,,,করে বসি তো তোমায় ভেবে,,,”

পাশের বেলকনি থেকে বিভোরও ওর গলার সাথে গলা মেলায়।সেও আনমনে আকাশের পানে চেয়েছিলো।বিভোরের গলা শুনে হৃদি গান থামায়।

-থামলেন কেন? গান!খারাপ তো গান না।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে