নব্যদিনের সূচনা পর্ব-০৪

0
860

#নব্যদিনের সূচনা
হুমাইরা হুর
(৪)

রীতি আপু যেতে না যেতেই বুড়ো লোকটা আমার কাছে এগিয়ে আসতে লাগল। আমার গায়ে থেকে ওড়না টান দিয়ে ফেলে দিলো মাটিতে।তাহলে কি মৃত্যু ঘটবে আমার আত্মার?

বুড়ো লোকটা ধীরে ধীরে কাছে আসতে লাগল।তখনই রীতি আপু এসে পিছন থেকে বুড়ো লোকটার মাথায় লাঠিতে দিয়ে আঘাত করতে শুরু করল।ক্রমাগত কয়েক আঘাতে বুড়ো লোকটা জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। রীতি আপু যে আমাকে এভাবে সাহায্য করবে আমি ভাবতে পারিনি।কিছুক্ষণের জন্য আমি যেন নির্বাক হয়ে দাড়িয়ে ছিলাম।রীতি আপু তাড়াহুড়ো করে একসেট বোরকা আমার হাতে দিয়ে আমাকে পড়তে বলে।সেখান থেকে তড়িহড়ি করে সেখান থেকে চলে গেল।আমি সেখানে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।সামনে লোকটা পড়ে ছিলো।যে কোনো মুহূর্তে লোক টার জ্ঞান ফিরতে পারে।যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।আমি তাড়াতাড়ি বোরকা পড়ে নিলাম।ততক্ষণে রীতি আপু ফিরে এসেছে। রীতি আপু আমি হাতে একটা বাটন ফোন আর ৫ হাজার টাকা গুজে দিলয়ে পালাতে বলেন। ।রীতি আপুর এই রুপ দেখে যেনো আমি হতভম্ব। যে রীতি একটু আগে আমাকে অন্য লোকের কাছে বেচে দিল সেই রীতি আপু এখন কিনা আমাকে সাহায্য করছে ভাবতেই অবাক লাগছে।এ যেন আমার আগের রীতি আপু।আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া করলাম।

রীতি আপু আমাকে বললেন আমাকে তিমি নিজের বোনের মত ভেবেছিলেন। কখনো আমার ক্ষতি হোক সেটা তিনি চাইনি। কিন্তু আমি রীতি আপুর বাসায় চলে এসেছিলাম তাকে না জানিয়েই,এটাই ভুল ছিলো আমার। আমার উপর সোহানের কুদৃষ্টি পড়ে।তার কোনো মতেই আমাকে চাই।এজন্যই এতদিন সে আমার সাথে প্রেমের নাটক করেছিলো।রীতি আপু বাধ্য ছিলেন তাই সোহানের প্রতিবাদ করতে পারেন নি এতদিন। তিনি সোহানকে যতটা সম্ভব আমার থেকে দুরে সরিয়ে রেখেছেন।সোহানের চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি এখন আমাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করছেন।

তিনি চান না তিনি একসময় যে পরিস্থিতি পড়েছিলেন এখন সেই পরিস্থিতিতে আমিও পড়ি। তার মত অসহায় যেন আমি না হয়ে পড়ি। একদিন তিনি আমার জায়গা ছিলেন কিন্তু তিনি কিছু করতে পারেননি তাই তিনি আজ আমাকে সাহায্য করছেন।

রীতি আপুর কথা শুনে চোখ গুলো ধাপসা হয়ে আসল। রীতি আপু আমাকে তাড়াতাড়ি পালিয়ে যেতে বললেন।না হলে বুড়োর জ্ঞান ফিরে আসবে এবং সোহান চলে আসবে।

আমি রীতি আপুর দেওয়া টাকা আর বাটন ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম নতুন গন্তব্যে।পিছন ফিরে একবার রীতি আপুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার চোখে পানি টলমল করছিলো।সেও যে ভাগ্যের কাছে পরাজিত। না পাড়ছে গিলতে না পারছে বের হতে।

তবে কি এখন সুখ আসবে? নাকি অপেক্ষা করছে আরেক নতুন বিপদ?

যতদূর এ শহর ছাড়তে হবে যে করেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে নাহলে সোহান আমাকে খুঁজে বের করবে। চলে আসার আগে রীতি আপু জানালেন আমার নাকি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আর জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আমার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়।ছোটবেলা থেকে ভেবেছিলাম আমি বড় হয়ে সেখানে পড়বো। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর এ পড়লে সোহান আমাকে দ্রুতই খুঁজে বের করবে। যত দ্রুত ঢাকা থেকে দূরে চলে যেতে হবে। সব চিন্তা-ভাবনা বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি রাজশাহী যাওয়ার।

গভীর রাত।চারিপাশে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। বাতাসে শো শো শব্দ হচ্ছে।উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন গন্তব্য,নতুন ঠিকানা।ট্রেনে বসে জিবনের হিসেবে মিলচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম নতুন জীবন কেমন হবে। ছেড়ে আসা হীবনে যেনো আর ফিরতে চাইছিলাম। কিন্তু প্রশ্ন একটাই ভাগ্য কি আমার প্রতি সহায় হবে আদৌ? একা একটা মেয়ে জীবনে কি চালনা করব? যার বাবা নেই,মা থেকেও নেই তার মত অসহায় কি কেউ আছে? আর দাদাবাড়ী কথা মনেও নেই,সেই ছোট বেলায় তাদের দেখেছিলাম।তারা সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার পরে তাদের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি আমার। শুধু এটা জানি আমার দাদাবাড়ী নাকি রাজশাহী। আমিও তো রাজশাহী যাচ্ছি তাদের সাথে কি আদৌ দেখা হবে? ভাবতেই মনে খুশি ঝলক দিয়ে উঠল।কিন্তু তাদেরকে তো আমি চিনি ই না।কিভাবে খুজে পাবো তাদের?আর রাজশাহী বা আমি কোথায় থাকব যেয়ে?

ভাবতে ভাবতে ই চোখ লেগে গিয়েছিলো আমার।হটাৎ এক অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ এ ঘুম ভেঙে গেলো আমার। ভয় পেয়ে উঠলাম।সোহান নয় তো। সে কি আমায় খুজে পেয়ে গেছে?

ভয়ে ভয়ে পাশে তাকিয়ে দেখলাম একটা টুপি পড়া ছেলে।চারিপাশে তাকিয়ে দেখলাম সকাল হয়ে গিয়েছে।এখন ট্রেন থেকে নামার সময়। প্রায় যাত্রী নেমে গিয়েছে। আমি আর ঐ ছেলে টা বাদে গুণা কয়েকজনই ট্রেনে অবস্থান করছে।ছেলেটা আমাকে এই জন্য ডাকছে। কারণ যারা ট্রেনে অবস্থান করছে তাদের মতিগতি সুবিধার লাগছে না।ছেলেটাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ট্রেন থেকে নেমে গেলাম । এখন যাবো কোথায়? কি আমার গন্তব্য?

হটাৎ দেখলাম ছেলেটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে।মনে মধ্যে ভয় জেকে বসেছে।এই ছেলেও কি সোহানের মত তার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে?ছেলেটা কাছে এসে রীতি আপুর দেওয়া সেই বাটন ফোনটা দিয়ে চলে কোনো কথা না বলে চলে গেলো।

ছেলে অপরিচিত হয়েও আমায় সাহায্য করল।এই ফোনটা আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। আমার আছে ফোন আর সেই ৫ হাজার টাকা ছাড়া কিছু ছিলো না। এ নতুন শহরে কি ভাবে টিকে থাকব আমি? দুর থেকে ছেলেটার চলে যাওয়া দেখছিলাম। মাথায় টুপি কাধে গিটার। অদূরেই যেন মিলিয়ে গেলো।

এখন আমার গন্তব্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলায়।নিজেকে যে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। না হলে সমাজের চোখে আঙুল তুলে দেখাতে পারে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক মানুষের স্বপ্নের জায়গা।এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বড় বিশ্ববিদ্যালয়। ভাবতেই অবাক লাগছে আমার এখানে চান্স হয়েছে।চারিপাশে জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।হটাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম।চারপাশ তাকিয়ে দেখলাম।যে যার যার কাজে ব্যাস্ত। কারো দিকে যেনো কারো লক্ষ নেই।হটাৎ দেখি কেউ একজন আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।।তাকিয়ে দেখি সকালের সেই ছেলেটা।যে কিনা আমাকে ট্রেনে সাহায্য করেছিলো।কিন্তু এই ছেলেটা এখানে কি করছে?

ছেলেটা আমার অন্যমনস্ক ভাব দেখে আমার হাতে চিমটি কাটল। আশ্চর্য অচেনা অপরিচিত ছেলে কিনা আমার হাতে চিমটি কাটে ভেবে মাথার উপর রাগ চড়ে বসলো। আমি তাড় হাতে না ধরেই উঠে দাড়ালাম।মুখ ঘুরিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম। অফিসরুম খুজতে লাগলাম। পেয়েও গলাম।অনলাইনে সকল তথ্য থাকায় আমার ঝামেলা পোহাতে হয় নি।মেধা যাচাই ৯ তম হওয়ায় আমার ভর্তি হয়ে গেলো।

আমাকে হলে থাকতে দেওয়া হলো। এদিক টায় টাকার সমস্যা না থাকলে? বই খাতা,খাওয়া খরচ এগুলোর টাকা কোথায় পাবো আমি।এটা ভাবতে ভাবতেই চোখের কোণে জল চলে আসলো। এত অভাব কোনো বুঝিনি।আজ বুঝতে পারছি সমাজে একা চলা কতটা কঠিন।

হলে আমাকে যে রুম দেওয়া হলো তা ছোট হলেও পরিপাটি করে সাজানো।নিশ্চয়ই রুমেমেট অনেক গুছানো।এখানে আমি বাদেও একজন আছে।জানি না তার আচরণ কেমন হবে?

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে