নতুন ভোরের আগমন পর্ব-১০

0
701

#পর্ব১০
#নতুন_ভোরের_আগমন
#অর্ষা_আওরাত

পরিবেশ এখন স্তব্ধ, শান্ত। বৃষ্টিপাত শেষে প্রকৃতি তার ঠান্ডা বাতাস ছড়িয়ে দিয়েছে। কালো মেঘের আড়াল থেকে চাঁদ উঁকি দিচ্ছে। চাঁদের আলোয় কিছুটা উজ্জ্বল হয়েছে ধরনী! চারদিকে ঝি ঝি পোকার ডাক জানান দিচ্ছে তারা এখনো ঘুমায়নি। বৃষ্টি বর্ষন শেষে চারদিকে কনকনে মৃদু বাতাস ছড়িয়ে পড়েছে। গাছের পাতা গুলো বাতাসে দুলে ওঠছে। সেই সাথে পাতা থেকে পানির ছিটা এসে পড়ছে ইনসিয়ার গায়ে। ঠান্ডা বাতাস আর পানির ছিটে গায়ে লাগতেই শীত অনুভব করলো ইনসিয়া। সঙ্গে সঙ্গে আলমারি থেকে একটি পাতলা নমনীয় চাদর গায়ে জড়িয়ে নিলো। জানলার পাশ ঘেঁসে দাড়ালো ইনসিয়া। তাকিয়ে দেখতে লাগলো নিস্তব্ধ ধরনী! বাতাসে চুল গুলো গালে এসে বড্ড খোঁচা দিচ্ছে। চুলগুলোকে হাত খোঁপা করে আবার বাইরের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। মগ্ন হয়ে ধরনীর সৌন্দর্য উপভোগ করছে ইনসিয়া ঠিক সেই মুহুর্তেই কারো ডাকে ধ্যান ভাঙলো! পরমুহূর্তেই পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো রিহান ইনসিয়ার থেকে কিঞ্চিৎ পরিমান দুরত্বে দাঁড়িয়ে আছে! রিহান ইনসিয়াকে বললো,

–“এভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছো কেনো? ঠান্ডা লাগতে পারে তো।”

ইনসিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে সন্দিহান দৃষ্টিতে রিহানকে দেখলো। হঠাৎ করেই রিহান তার খেয়াল রাখছে। বিষয়টি খটকা লাগলো। ইনসিয়া পাল্টা উওর দিলো,

–“আমার ঠান্ডা লাগুক বা অন্যকিছু তাতে মনে হয় না আপনার কোনো সমস্যা হবে বলুন? আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই আমি এমনিভাবে দাঁড়িয়ে আছি। আমাকে নিয়ে আপনার অতো না ভাবলেও চলবে। কিছুদিন পর থেকে তো আমাকেই আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে বলুন? তো খামোখা আপনাকে আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।”

রিহানের মনে ইনসিয়ার প্রতি ক্ষোভের সৃষ্টি হলো! সে তো ভালোর উদ্দেশ্য বলেছে কিন্তু ইনসিয়া তাকে কতেগুলো কথা বলে দিলো! রিহানের মনঃক্ষুণ্ন হলো। সে রাগান্বিত দৃষ্টিতে ইনসিয়ার দিকে তাকালো কিছুক্ষণ। ইনসিয়ার সেদিকে মন নেই সে আপন মনে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রিহানের এতে ক্রোধ ক্রমশ বাড়ছে। সে ইনসিয়াকে বললো,

–“আশ্চর্য মেয়ে তো তুমি। তোমার ভালোর জন্যই তো বলেছি আমি এতে এতো কথা শোনাবার কি আছে? ”

ইনসিয়া আগের ন্যায় স্তব্ধা মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। যেনো রিহানের কোনো কথাই তার কর্ণকুহরে গিয়ে পৌছুতে পারে নি। সে ব্যস্ত তার কর্মে। রিহান বিষয়টি বুঝে আবারও বললো,

–“তোমাকে তো আমি কিছু বলেছি নাকি? কথার জবাব না দিয়ে কোন ভদ্রতা নিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো তুমি?”

এবার ইনসিয়ার টনক নড়লো। মস্তিষ্কে উদয় হলো রিহানের কিয়ৎক্ষন আগের বলা কথা গুলো। ইনসিয়া মলিন দৃষ্টি মেলে রিহানকে বললো,

–“আমি তো ভূল কিছু বলিনি। যা বলেছি পুরোটাই সঠিক বলেছি। আপনি যদি বলেন যে ভূল বলেছি তাহলে না মেনে নিবো আমি অভদ্র।”

রিহানের অবচেতন মস্তিষ্ক জানান দিলো মেয়েটি আদৌ কিছু ভূল বলে নি। সত্যিই তো সে তো আর ইনসিয়া কে সারাজীবন রাখবে না তার জীবনে। দু’দিন পরে চলেই যাবে তাহলে কি দরকার তাকে নিয়ে এতো ভাবার। যে যেরকম থাকুক। কিন্তু ইনসিয়ার কথার উওর দিলো রিহান,

–“সেটা ও ঠিক বলেছো। তবে মনে হয়েছিলো বলা দরকার তাই বলেছি।”

ইনসিয়া রিহানের কথার কোনো প্রতিউওর না করে আগের চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো। ঘড়ির কাঁটা জানান দিলো এগারো টা বেজে গেছে। এখন ঘুমাবার সময়। তার নেএপল্লবে নিদ্রা না আসলেও অপর ব্যক্তিটির হয়তো ঘুম আসছে। কালবিলম্ব না করে বিছানা তৈরী করতে লাগলো। রিহান ইনসিয়ার সাথে কথা বলেছে সোফায় বসেই তাই ইনসিয়া চুপচাপ ভাবে বিছানা তৈরী করছে আর রিহান সোফায় বসে মোবাইল নামক যন্ত্রটির দিকে তার দু-চোখ বোলাতে লাগলো। ইনসিয়ার বিছানা পরিপাটি করে রিহানকে ডাক দিলো শোয়ার জন্য। রিহান বিছানায় গা দোলাবে এর আগেই ইনসিয়াকে প্রশ্ন করে ওঠলো,

–“তুমি ঘুমাবে না?”

ইনসিয়া আঙুল দিয়ে আরো একটা ছোটো খাটো চৌকি দেখালো হাত দিয়ে। রিহান করে তাকিয়ে রইলো চৌকির দিকে। যার অর্থ হলো ইনসিয়া তাকে কি বোঝাতে চাইছে সেটা তার বোধগম্য হচ্ছে না! বাধ্য হয়ে ইনসিয়া মুখ খুললো,

–“এই চৌকিটাতে ঘুমাবো আমি। এটা ছোটোবেলা থেকে আছে আমার রুমে। এতে সবরকম বিছানা পএ করা আছে আমি ঘুমাবো একটু পর। আপনি শুয়ে পড়ুন।”

রিহান কথার পৃষ্ঠে আর কোনো কিছু না বলে চুপচাপ ভাবে খাটে শুইয়ে রইলো। ইনসিয়া কিঞ্চিৎ পরিমান তাকিয়ে রইলো মানুষটার দিকে তারপর নিজের চৌকিকে শুয়ে রইলো। চৌকিটা ঠিক জানলার পাশ থেকে একটু দূরে চৌকিতে বালিশে মাথা রেখে শুইয়ে রইলো। জানলা খোলা থাকায় বিধায় খোলা আকাশর এক ফালি চাঁদটাকে দেখতে বেগ পেতে হলো না ইনসিয়ার! আকাশের ওই চাঁদটাকে দেখতে দেখতেই অক্ষিজোড়া বন্ধ করে রাখলো ঘুমানোর চেষ্টা করলো ইনসিয়া। এক সময় পাড়ি দিলো নিদ্রার অতল জগৎে। কিন্তু চক্ষু জোড়া বন্ধ করতেই কল্পনায় আঁধার অতীত এসে হানা দিলো ইনসিয়ার! ধড়ফড়িয়ে চৌকি থেকে বসে ওঠলো। কালো অতীত যেনো চাইলেও পিছু ছাড়ছে না ইনসিয়ার। মন শান্ত করতে অযু করে এসে ধ্যান দিলো নামাজে
__________________________
সকাল হয়েছে অনেক আগেই। পাখিরা কিচিরমিচির করে ঘুমন্ত মানুষের ঘুম ভাঙাতে ব্যস্ত। প্রকৃতি শান্ত, নিস্তব্ধ। হালকা শীতল বিশুদ্ধ বাতাস ছড়িয়ে পড়ছে চারিপাশে। ম্যানশন পরিবারে সকাল থেকেই মিজানুর রহমান কেমন নিস্তব্ধ হয়ে আছে কোনো কথা বলছে না কারো সাথে। এরূপ দেখে মিতালী রহমান মিজানুর রহমানকে জিগেস করলো,

–“কাল বিকাল থেকে এখনো পর্যন্ত এরকম ভাবে চুপচাপ হয়ে বসে রয়েছো। কি হয়েছে আমাকে অন্ততো বলো?”

মিজানুর রহমান মলিন মুখটি উঁচু করে মিতালী রহমান এর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো! কপালে চিন্তার সরু ভাজ ফুটে ওঠেছে। তিনি বললেন,

–“ওদিকে কি হচ্ছে চিন্তায় কিছু ভালো লাগছে না মিতালী।”

–“রিহান ফোন করেছিলো সকালবেলা আমাকে। এখন আর তোমার থেকে কোনো কিছু লুকাবো না। ও বলেছে ও ফিরে এসেই ইনসিয়াকে ডির্ভোস দিবে।”

মিতালী রহমান এর এরূপ কথা শুনে চিন্তার ভাজ আরো বেড়ে গেলো! বিন্দু বিন্দু ঘামের উদয় হলো ললাটে! বোঝাই যাচ্ছে বেশ অনুতপ্ত হয়েছেন তিনি এখন। যার ফলে এতো চিন্তা। মিতালী রহমান আবার বললেন,

–“এখন আর চিন্তা করে লাভ নেই। এই চিন্তা টা যদি তুমি আগে করতে তাহলে দু’টো জীবন বেঁচে যেতো। সবকিছুর জন্য তুমিই দায়ী একমাএ!”

আর কিছু বলতে পারলো না মিজানুর রহমান। বুকে হাত দিয়ে কিছু একটা বলতে চাচ্ছেন কিন্তু পারলেন না! মিতালি রহমান বারবার ডাকছেন কিন্তু মিজানুর রহমান কোনো কথা বলতে পারছেন না! নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে ওনার। সর্বশেষে অজ্ঞান হয়ে গেলেন মিজানুর রহমান! মিতালী রহমান এর চিৎকারে বাড়ির সবাই এসে উপস্থিত হলো। সঙ্গে সঙ্গে মিজানুর রহমানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। বাড়িতে আর একজনও নেই সবাই হাসপাতালে চলে গেছে!

———————————————-

প্রায় আড়াই বছর পর ম্যানশন মহলে পা রাখলো ইনশাদ! বাড়িতে ঢুকতেই দেখতে পেলো কোলাহল পূর্ন বাড়িটি একদম নিস্তব্ধতায় গ্রাস করেছে! কোনো মানুষ নেই বাড়িতে! এতো বছর পর এসে বাড়ির এই হাল দেখবে সেটা মোটেও কল্পনা করেনি ইনশাদ! ভেবেছিলো আচমকা বাড়িতে এসে সবাইকে চমকে দিবে! কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সে নিজেই চমকে গেছে! আস্তে আস্তে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে সকলের রুমে গিয়ে দেখলো কেউ আছে কিনা বাড়িতে। কিন্তু ফলাফল শুন্য কেউই নেই বাড়িতে। হঠাৎই রান্নাঘর থেকে শব্দ আসলো! ইনশাদ গিয়ে দেখলো করিম চাচা রান্না করছে। করিম চাচা ম্যানশন মহলে অনেক দিন ধরে কাজ করছে। ইনশাদকে দেখা মাএই করিম চাচা কেঁদে ওঠলেন! করিম চাচার কান্না, নিস্তব্ধ বাড়ি সবকিছু মিলিয়ে যেনো ইনশাদের সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে! সে তো এতোবছর পর এসেছিলো পরিবারের মানুষগুলোকে চমকে দেবার জন্য। কিন্তু ঘটনাক্রমে সে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছে! কি অপেক্ষা করছে সামনে তার জন?

#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে