Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তোর_শহরে_ভালোবাসা পর্ব-২৮

তোর_শহরে_ভালোবাসা পর্ব-২৮

#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
……..{সিজন-২}
#ফাবিহা_নওশীন

পর্ব~২৮

সামু সেই কখন থেকে আদির জন্য অপেক্ষা করছে আদির আসার খবর নেই।একে তো সামু বিয়ের ড্রেস পড়ে আছে আর এখন তো সামুর ঘুম পাচ্ছে।সারাদিনে যা ধকল গেছে তাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে শরীর।
আদির বন্ধুরা আদিকে ছাড়ছেনা।আদি ঘরে যাওয়ার জন্য আকুপাকু করছে।

আদির বন্ধু সেটা বুঝতে পেরে বললো,
—–ভাই আজ নতুন বিয়ে করিস নি, পুরান বউ তোর।বাসর হয়ে গেছে।নতুন করে কিছুই বাকি নেই।

আদি ওর বন্ধুকে বললো,
—–হুট…. কিছু কিছু জিনিস কখনো পুরনো হয়না।আজীবন নতুনই থেকে যায়।তুই বুঝবি না।
থাক তোরা সামু আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

আদির বন্ধুরা আদিকে নিয়ে মজা করছে আদি সেসব পাত্তা না দিয়ে ছাদ থেকে নেমে এলো।

সামুর ঘুম পাচ্ছে।ভালো লাগছেনা।সামু ফোন হাতে নিয়ে ফোন ঘাটাঘাটি করছে যাতে ঘুমটা কিছুটা হলেও চলে যায়।সামু ওয়াইফাই অন করতেই মেসেঞ্জার টুন বেজে উঠলো।
অচেনা একটা আইডি থেকে মেসেজ রিকুয়েষ্ট এসেছে।সামু কৌতুহল নিয়ে ওপেন করলো।
মেসেজটি ছিলো এরকম~
“প্রথমে শুভকামনা তোমার নতুন জীবনের জন্য।সব সময় ভালো থাকো,হ্যাপি থাকো।তুমি আমাকে সব জায়গা থেকে ব্লক করেছো তাই অন্য আইডি থেকে মেসেজ দিলাম।বিরক্ত করার জন্য দুঃখীত।তবে কিছু কথা না বললেই নয়,শান্তি পাচ্ছিলাম না।আমাকে কি মাফ করা যায়না?আমি জানি আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি।তোমার ঘর ভাংগার চেষ্টা করেছি।কিন্তু কিছুতেই সফল হইনি।কারণ তোমার নিজের প্রতি নিজের ভালোবাসার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো।আমি বারবার হেরে গেছি।আর হারতে হারতে বুঝতে পেরেছি আমি কতটা ভুল ছিলাম।আমি ভুল করেছি সামান্তা।এর জন্য আমি অনুতপ্ত।জানি আমাকে ক্ষমা করা তোমার জন্য ইজি হবেনা।তবুও বলছি চেষ্টা করো আমাকে ক্ষমা করার তবেই আমি নিজেকে ক্ষমা করে নিজের জীবনে এগিয়ে যেতে পারবো।আমি এখানে আর থেমে থাকতে চাইনা।তাই প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিও।আমি অপেক্ষায় থাকবো উত্তরের।”
~~~রাজ।

সামু মেসেজ পড়াকালীন সময়ে ওর মনে হয়েছিলো এটা রাজ হবে।আর শেষে নাম দেখে শিওর হলো।
সামু মেসেজটা আরেকবার পড়ে ভাবতে লাগলো কি করা যায়।
সামু টাইপ করতে লাগলো।
“আপনি যা করেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য।আমি অন্য সব মানুষের মতো এতো মহান নই যে আমার সাথে এতকিছু করার পরেও আমি সব ভুলে ক্ষমা করে দিবো।তবে আপনি যদি আর আমার সামনে না আসেন,আমার পথে না আসেন,আমাকে বিরক্ত না করেন তবে সময়ের সাথে সাথে হয়তো আমি সব ভুলে আপনাকে ক্ষমা করে দিবো।আমার সাথে আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না প্লিজ।এটাই শেষ কথা।”

সামু মেসেজ টাইপ করায় এতোটা ব্যস্ত ছিলো যে আদি দরজা খোলে ঘরে ঢুকেছে সেদিকে ওর খেয়াল নেই।আদি ঘরে ঢুকে দেখে সামু খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু টাইপ করছে।কাউকে মেসেজ করছে বুঝায় যায়।
সামু মেসেজ সেন্ড করে ব্লক অপশনে আংগুল রাখতেই আদির কন্ঠস্বর শুনতে পেলো।আদি বললো,
—–সামু!!

সামু হটাৎ করে আদির কন্ঠস্বর শুনে চমকে যায়।এতোটা ঘাবড়ে যায় যে ওর হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায় মেঝেতে।আদি পড়ে যাওয়া ফোনের দিকে একবার চেয়ে সামুর দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এলো।
সামুর মুখ কেমন থমথমে,ফ্যাকাসে হয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে চোর চুরি করে ধরা পড়ে গেছে।সামু একটা ঢুক গিলে জোরপূর্বক একটা শুকনো হাসি দিলো।তারপর ফোন তুলতে নিলে সেটা আদি তুলে নিলো।সামুর এভাবে ঘাবড়ে যাওয়া,ভয় পাওয়া ওর মনে সন্দেহ সৃষ্টি করছে।

ফোনের দিকে একবার চেয়ে সামুকে বললো,
—–কাকে মেসেজ করছিলে?

সামু যা ভেবেছিলো তাই।এখন যদি রাজের নাম বলে তো আদি কিছু না শুনেই রিয়েক্ট করবে।তাই সামু আগে আদিকে পুরো কথা বলতে চায়।
সামু নিজের অস্বাভাবিক ভাবটা দূর করে বললো,
—–আমি কাকে মেসেজ করছি তার আগে পুরো কথাটা শুনো।

আদি ফোন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বললো,
—–আমি শুধু জানতে চাই কাকে মেসেজ করেছিলে?

সামু কয়েক সেকেন্ড থেমে বললো,
—–আদি ফেসবুকে হটাৎ একটা…

আদি এতোক্ষণ শান্তস্বরে বললেও এখন চিতকার করে বললো,
—–তোকে এতো কাহিনি জিজ্ঞেস করেছি?আমি শুধু জিজ্ঞেস করেছি কে ছিলো?এতো ড্রামা করছিস কেন নাম বলতে? তুই তার নাম বলবি কিনা বল।

সামু আমতা আমতা করে বললো,
—–আদি রাজ আমাকে মেসেজ করেছিলো…

রাজের নাম শুনে আদির মাথায় যেনো ধপ করে আগুন জ্বলে গেলো।যা ভেবেছিলো তাই।এই নামটা ওর লাইফ থেকে যাচ্ছেইনা।এত চেষ্টা করছে কিন্তু কোথাও না কোথাও রয়ে গেছে।
আদি হাতে রাখা সামুর মোবাইল ফোনটা দেয়ালে ছুড়ে মারলো।
তারপর আদি শুকনো হেসে বললো,
—-সব নষ্ট করে দিলি না।খুব ভালো।

আদি তারপর দরজার কাছে এগিয়ে যেতেই সামু সামনে গিয়ে দাড়ালো।সামু বাধা দিয়ে বললো,
—-আদি পুরো কথা শুনো।না শুনেই এমন রিয়েক্ট করছো কেন?

—–আমার কিছু শোনার নেই।এই নামটা শুনুলেই আমার সব শেষ হয়ে যায়।

সামুকে সামনে থেকে সরিয়ে আদি বেড়িয়ে গেলো।সামু কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।সামু গিয়ে ফোন তুলে নিলো।ফোনটা অন করার
চেষ্টা করছে কিন্তু ফোন অন হচ্ছে না।আদি যেভাবে ছুড়ে মেরেছে তাতে ফোনের লাইফ ডেড হয়ে গেছে।এখন আদিকে কিভাবে বুঝাবে।
সামু আয়নার সামনে গিয়ে সব ঠিকঠাক করে ফোন হাতে নিয়ে আদিকে খোজতে লাগলো।সামু অবশেষে আদিকে ছাদে খোজে পেলো।আদি সিগারেটের ধোয়া উড়াচ্ছে।সামু লেহেঙ্গা দুই হাতে ধরে আদির দিকে এগুচ্ছে।
আদি কারো আসার শব্দে না ঘুরেই বললো,
—–লিভ মি এলোন।

—-আদি তুমি কি আমাকে অবিশ্বাস করছো? তুমি না আমাকে ভালোবাসো?আমার প্রতি একটু বিশ্বাস রেখে আমার কথাগুলো শোনো।

আদি হাতের সিগারেট ফেলে নাক মুখ দিয়ে ধোয়া ছেড়ে বললো,
—–এখন আমার কিছু ভালো লাগছেনা।আমি কিছু শুনতে চাইনা।

সামু লেহেঙ্গা ছেড়ে দিয়ে আদির পাশে দাড়িয়ে ওকে নিজের দিকে ঘুরালো।আদি ঝাড়া মেরে অন্য দিকে ঘুরে গিয়ে বললো,
—–দেখ আমাকে রাগাস না।চলে যা ভালো চাস তো…

সামু শক্ত গলায় বললো,
—–না গেলে কি করবে?মেরে ফেলবে?
আমি যাবোনা।আমি দেখতে চাই তুমি কি করো।

আদি ঘুরে সামুর গাল চেপে ধরে বললো,
—–রাজ কেন মেসেজ দিয়েছে হা?আর তুই ওর সাথে কি কথা বলছিলি?ও কেন আমার লাইফ থেকে যাচ্ছেনা।কেন বারবার আমার সুন্দর মুহুর্তগুলো নষ্ট করে দিচ্ছে?আমার দোষটা কোথায়?

সামু আদির হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,
—–ও যাতে আর আমাদের লাইফে না আসে সেটাই বলেছি।ও ফেক একটা আইডি থেকে মেসেজ করে সরি বলেছে।বিশ্বাস না হলে তুমি ফোনটা অন করে দেখো।

সামু আদির হাতে ফোন দিয়ে হনহন করে হেটে চলে গেলো।আদি ফোনটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছুক্ষণ পর আদি নিচে নেমে গেলো।রুমে গিয়ে দেখে সামু ফ্রেশ হয়ে বের হচ্ছে।মুখ ভার করে আছে।
আদি সামুর সামনে গিয়ে ওর হাতে ফোন ধরিয়ে দিলো।
সামু বললো,
—–দেখা শেষ?

আদি মাথা নাড়িয়ে বললো,নাহ..আমি দেখতে চাইনা।

সামু ফোন হাতে নিয়ে অন করার চেষ্টা করছে।আদি সামুকে বললো,
—–সামু রাখো আমি কিছু দেখতে চাইনা।

সামু জোর গলায় বললো,
—–বাট আমি তো তোমাকে দেখাবোই।

সামু ফোনের ব্যাটারি খোলে রিসেট করে।বারবার চেষ্টা করছে।আদি সামুর হাত থেকে ফোন নিয়ে বললো,
—–এটার হায়াত শেষ।
আমি কিছু দেখতে চাইনা।আই ট্রাস্ট ইউ বাট তখন রাজের নামটা শুনে প্রচুর রাগ হয়েছিলো।জানিনা কেন ওর নাম শুনলে আমার এতো রাগ হয়।ইচ্ছে করে সব গুড়িয়ে দেই।ও কেন বারবার আমাদের মাঝে চলে আসে?

সামু শীতল কণ্ঠে বললো,
—–চলে গেছেন উনি।চিরতরে চলে গেছে।

সামু আর কথা না বাড়িয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।সাথে চাদর গায়ে জড়িয়ে নিলো।
আদি সামুর পাশে গিয়ে বসে বললো,
—–চলে গেছে মানে?

সামু চোখ খোলে বললো,
—–বলবোনা।কারণ আমি এতোক্ষণ বলার ট্রাই করেছি তুমি শুনোনি।আর তাই এখন আমি আর বলবোনা।

সামু চাদর মুড়ি দিয়ে মুখ ডেকে নিলো।
আদি সামুর চাদরে ঢাকা মুখের দিকে কিছুক্ষণ চুপ করে চেয়ে থেকে উঠে দাড়ালো।
ওর খুব জানতে ইচ্ছে করছে রাজ কি বলেছে।আদি সামুর ভাংগা ফোনটা অন করার চেষ্টা করছে।অবশেষে অন হয়ে গেলো।আদির সামুর ফোনের লক আগেই জানা ছিলো।লক খোলে মেসেঞ্জার চেক করে মেসেজ দেখতে পেলো।
আদি মেসেজ পড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—–কেনো যে এমন হুটহাট রেগে যাস?
কি করবো রাজের নামটায় আমার প্রচুর এলার্জি শুনলেই রাগ উঠে যায় কন্ট্রোল হয়না।

আদি ফোনটা রেখে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর সামুর কাছে এলো।সামুর মুখের উপর থেকে চাদর সরাতেই সামু চাদর চেপে ধরে।।
আদি মুচকি হাসে এটা দেখে সামু তখনো জেগে আছে।
আদি সামুকে কোলে তুলে নেয় চাদরসহ।আচমকা তুলে নেওয়ায় সামু ঘাবড়ে যায়।আদি ওকে বারান্দায় নিয়ে গেছে।খোলা বারান্দা।সামুর পছন্দ মতো সিঙ্গেল বেড এনেছে।আকাশে বড় গোলাকার চাদ উঠেছে।চাদের আলোয় চারপাশ ঝলমল করছে।বারান্দায় চাদের আলো এসে পড়েছে।শুভ্র সাদা মেঘের ভেলার সাথে চাদ লুকোচুরি খেলছে।
সামুকে বেডে শুইয়ে দিতেই সামু চোখ পাকিয়ে তাকালো আদির দিকে।।

—–আমাকে এখানে কেন এনেছো?আমি এখুনি ঘরে যাবো।ছাড়ো আমাকে।

আদি মুচকি হেসে বললো,
—–আজ আমাদের বাসর রাত।এমনে এমনেই যাবে নাকি?

সামু উঠে বসে বললো,
—–তাই নাকি?আজ বাসর রাত?
তুমি আমার গাল চেপে ধরেছো ভুলে গেছো?নো বাসর।

—–তাহলে আমি একা একা কি করবো??

সামু ভাবার ভংগী করে বললো,
—–উম্ম সিগারেট খেতে পারো।না থাকলে এক প্যাকেট এনে নিতে পারো।

সামুর খোচা মেরে বলা কথা আদির বুঝতে দেরী হয়নি।
—–সামু আমি সিগারেট সাধারণত খাইনা। বাট আজ…

সামু থামিয়ে দিয়ে বললো,
—–কৈফিয়ত চেয়েছি?চাইনি তো…।
সামু ধপ করে শুয়ে পরলো।আদি সামুর পাশে গিয়ে শুতেই সামু মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো।

আদি আকাশের দিকে চেয়ে আছে।তারপর সামুকে বললো,
—–দেখো চাদ কত সুন্দর।

সামু না ঘুরেই বললো,
—-চাদ সব সময় সুন্দর হয় এখানে দেখার কিছু নেই।।

কিছুক্ষণ নীরবতা তারপর আদির দীর্ঘশ্বাস।
আদির দীর্ঘশ্বাস সামুর কান পর্যন্ত পৌছে গেলো।
—–জানো সামু,আমার খুব ভয় হয়।না জানি তুমি কবে আমাকে ছেড়ে চলে যাও।

সামু আদির কথা শুনে আদির দিকে ঘুরলো।আদির এই কথার মাঝে যথেষ্ট সংশয় ও ভয় ছিলো।
সামু আদির দিকে চেয়ে আছে।সামুকে চেয়ে থাকা দেখে আদি বললো,
—–এই যে আমি হুটহাট রেগে যাই।তাও ভয়ংকর রাগ।সবাই বলে আমার রাগ প্রচন্ড ভয়ংকর।এই রেগে যাওয়ার কারণে তুমি আমার উপর অভিমান করে আছো।আজ হয়তো অভিমান করে আছো কিন্তু কাল হয়তো আমার এই রাগটা আর নিতে পারবেনা।তখন কি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববে?

আদির দৃষ্টিতে কিছু একটা ছিলো যা সামুর বোধগম্য হয়নি।তবে সামুর প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। এই মানুষটা যেমনই হোক ওর ভালোবাসার মানুষ।ওকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতে পারেনা।সামু প্রতিউত্তরে আদিকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রাখে।ওর বুকে মুখ গুজে চুপ করে রইলো।একে অপরের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পারছে।

সামু তারপর জিজ্ঞেস করলো,
—–তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো।

আদি উত্তর দিলো,
—–কতটা ভালোবাসি তা জানিনা।গভীরতা মেপে দেখিনি।মাপতে চাইনা।শুধু জানি তোকে ছাড়া চলবেনা।তু মেরে লিয়ে সের্ফ এক লারকি নেহি,মেরে জিন্দেগী তো।

—–কেন ভালোবাসো?

—–কারণ খোজিনি।শুধু জানি ভালোবাসি।আই নিড ইউ।

—–আমি তোমাদের সোসাইটির মতো তথাকথিত মর্ডান মেয়ে নই।আমি আমার মতো।তুমি চাইলে সেরকম কাউকে….

আদি থামিয়ে দিয়ে বললো,
—–তুমি তোমার মতো।তোমার মধ্যে কোনো কিছু ফেক নেই।তোমার কথা বলা,চালচলন সব রিয়েল।কাউকে ভয় না পেয়ে মনে যেটা আছে সেটা বলে ফেলা এই গুণগুলো আমাকে মুগ্ধ করেছে।
আমি বলবোনা তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী।আমি তোমার থেকে বেশী সুন্দরী মেয়ে দেখেছি।কিন্তু তাদের সৌন্দর্য বাহ্যিক ছিলো,মেকি ছিলো।তাদের দেখে আমার তেমন ফিলিংস হয়নি।তোমাকে দেখে যেটা হয়েছে।তোমাকে পাওয়ার জন্য তোমাকে পর্যন্ত ধোকা দিয়েছি।
এখন তুমি বলো তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো?

সামু আদির প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললো।কারণ ও ব্যাখ্যা করতে পারবেনা।
সামু ছোট করে উত্তর দিলো,
—–প্রকাশ করার জন্য আমি উপযুক্ত শব্দ খোজে পাচ্ছিনা।

আদি পরের প্রশ্ন করলো,
—–কেন ভালোবাসো?

—–কারণটা অজানা।
হয়তো অকারণেই ভালোবাসি।সবকিছুতে কারণ থাকা আবশ্যক নয়।

আদি মুচকি হেসে বললো,
—–তুমি তো আমাকে প্রথম থেকেই সহ্য করতে পারতেনা।

সামু কিছুটা নড়ে-চড়ে উঠলো আদির কথা শুনে।কিছুটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বললো,
—–আসলেই।আমি তোমাকে দুচোখে দেখতে পারতাম না।দেখলেই রাগ উঠে যেতো।

আদি বাকা হেসে বললো,
—–আর এখন দেখলেই প্রেম জাগে।

সামু লজ্জা পেয়ে গেলো।লজ্জা মাখা মুখে বললো,
—–বলেছে তোমাকে।

আদি ছোট করে সামুর গালে চুমু খেলো।
সামুর পরের প্রশ্ন,
——আমাকে কিছু দিবেনা?

আদি সামুর হটাৎ চাওয়া বুঝতে পারলো না।তবুও বললো,
——কি চাই তোমার?

সামু ইতস্তত করে বললো,
—–থাক বাদ দেও অন্য সময় বলবো।

বাট আদি এখনি জানতে চায় সামু ওর কাছে কি চায়।
—–না এখুনি বলো কি চাও?

—–রাগ করবে না তো?
রাগ করলে দরকার নেই।

—–আরে বলো রাগ করবোনা।

—–প্রমিস?

—–বাহ! আজকাল দেখি আমার বউও আমাকে ভয় পায়।

সামু ভেংচি কেটে বললো,
—–না ভয় পাইনা।বাট তুমি রাগ করলে সব বরবাদ করে দেও।তাই,,
তুমি রাগ করলে আমি চুপ করে থাকি কারণ একজন আগুন হলে অন্য একজনকে পানি হতে হয়।দুজনে আগুন হলে সে আগুন শুধু ঘরে না পুরো বাড়িতে জ্বলে।

আদি ভাবছে সামুর কথা ঠিক।ওর নিজের রাগ খুব ভয়ানক।কন্ট্রোল করা যায়না।
আর তখন সামু চুপ থাকে বলেই সিচুয়েশন ঠিক থাকে।সব সামলে নিতে পারে।

—–সামু আমাকে সব সময় এভাবে সামলে নিও।তুমি ছাড়া আমাকে কেউ সামলাতে পারবেনা।

—–ওকে,,সব সময় সামলে নিবো।

—–এখন বলো কি চাও?

আদি এইবার আর সময় নিলোনা।চট করে বলে দিলো,
—–আমি চাই তুমি বিজনেসটা বুঝে নেও।পরিবারের দায়িত্ব নেও।বাবাকে অবসর দেও।বাবা আর কত করবে?
তারও তো বয়স হয়েছে।

আদি সামুর কথা শুনে চুপ করে আছে।অনুমান করতে পেরেছিলো এমন কিছুই বলবে তাই হলো।

আদিকে চুপ দেখে সামু বললো,
—–রাগ করলে?
প্রত্যেক মেয়ে চায় তার স্বামীর সাকসেসে নিজেকে গর্বিত করতে।আমিও চাই আমার হাসব্যান্ডের নাম হোক,সে জীবনে কিছু একটা করুক।
ভুল কিছু বলেছি?

—–না ভুল কিছু বলোনি।তবে আমার আর কিছুদিন সময় দরকার।

—–হ্যা নেও সময়।নিজেকে বুঝে তারপর সবটা বুঝে নেও।আর আরেকটা কথা এসব আজেবাজে নেশা ছেড়ে দেও।তুমি যথেষ্ট শিক্ষিত।তুমি জানো তুমি নিজের কতটা ক্ষতি করছো।তুমি হয়তো ভাবছো সামু দুদিন ধরে আমার লাইফে এসে আমাকে বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছে।হ্যা করছি কারণ তোমাকে আমি ভালোবাসি,তুমি আমার হাসব্যান্ড।তোমার ক্ষতি আমি কিভাবে মেনে নিবো?
তাই চেষ্টা করো।

.

সকালের আলো ফুটতে শুরু করেছে।বারান্দা হওয়ায় হালকা আলোটা চোখে বিধছে।সামুর চোখ কুচকে আসছে।সামু চোখ মেলে তাকালো।আদি ওর গলার উপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে।ওর এক পা বেডের বাইরে,আরেক পা সামুর উপরে।
আদি বেডের কিনারে মনে হচ্ছে আরেকটু নড়লেই নিচে পড়ে যাবে।সামু নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আদিকে টেনে এদিকে আনতেই আদির ঘুম ভেঙে গেলো।
—–পড়ে যাচ্ছিলে।তাই টেনে এদিকে আনলাম।

আদি ঘুমঘুম চোখে বললো,
—–আচ্ছা,এদিকে এসো।
আদি সামুকে টেনে শুইয়ে দিয়ে ওকে জাপ্টে ধরে ওর গলায় মুখ ডুবিয়ে ঘুমিয়ে রইলো।

আদির নিশ্বাস গলায় পড়ায় সামুর সুরসুরি লাগছে।
সামু নড়েচড়ে আদিকে সরানোর চেষ্টা করছে।
—–আদি সরো আমার সুরসুরি লাগছে।

আদি মাথা তুলে সামুর দিকে চেয়ে হেসে ফেললো,
—–কি লাগছে?

সামু লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নাক মুখ কুচকে ফেললো।
আদি সামুর ঠোঁটে টুপ করে চুমু খেয়ে মুখ কাধের উপর রেখে ঘুমিয়ে পরলো।

চলবে….

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ