#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
……….{সিজন-২}
#ফাবিহা_নওশীন
পর্ব~২৩
লাঞ্চ শেষে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে।সামুর বাবা আদির বাবা-মার সাথে কথা বলছে।সামু আজ অনেক খুশি।
আদি এক দৃষ্টিতে সামুকে দেখছে।আর ভাবছে,
“তোমার এই মুখের হাসি,তোমাকে খুশি দেখলে আমার নিজেকে এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়।তোমার এই এক টুকরো হাসি আমার পুরো পৃথিবী আলোকিত করে দেয়।আমার চারপাশের সবকিছু আলোয় ঝলমল করে।”
হটাৎ সামুর আদির দিকে চোখ পড়ে আদি ওর দিকে চেয়ে আছে সেটা দেখে ভেংচি কাটে।
আদি সামুর ভেংচি খেয়ে মুচকি হাসে।
“এই পাগল তারছিড়া মেয়ে আমাকেও পাগল করে দিবে।দিবে কি অলরেডি দিয়েছে।শুধু ধরাই দিচ্ছেনা।”
সামুর বাবা আদির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে মুগ্ধ হচ্ছে।যতই ওদের কথা শুনছে ততই অবাক হচ্ছে।এত ভালো মানুষও পৃথিবীতে আছে তা উনাদের না দেখলে বুঝতে পারতেন না।
বাড়ি পালানো অজানা অচেনা মেয়েকে আশ্রয় দিয়েছে।ভালোবাসা দিয়েছে।নিজেদের একমাত্র ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে সম্মান দিয়েছে।অথচ তিনি মেয়েকে ভালোবাসা তো দূর সময় দেয়নি।
উনাদের আচার ব্যবহার,মিষ্টি কথা উনাকে বারবার মুগ্ধ করছে।
আদির বাবা বলে উঠলো,
—-ভাই তিনদিন পর আমার মেয়ের বিয়ে আপনি বিয়ের আগে যেতে পারবেন না।
সামুর বাবা হুট করে এখানে এসেছে।কিন্তু তার এখানে আসার কারণ ব্যবসায়ীক।
তাই তিনি বললেন,
—-না ভাই আমি থাকতে পারবোনা।আমি ব্যবসায়ীক কাজে এখানে এসেছি।আমাকে যেতে হবে।ইটস আর্জেন্ট।সকালের ফ্লাইট ক্যান্সেল করে রাতের টিকিট বুক করেছি।আজ আমাকে যেতেই হবে তবে কথা দিচ্ছি বিয়ের দিন অবশ্যই দোয়া করতে আসবো।
আদির বাবা-মা আপত্তি থাকা স্বত্তেও বললো,
—–ঠিক আছে তবে আসবেন কিন্তু।
—–অবশ্যই।
সামু আজ প্রচন্ড খুশি।তার বাবাকে ফিরে পেয়েছে।আর ও যেমনটা ভেবেছিলো তেমন কিছুই হয়নি।হাতে হাত ঘষতে ঘষতে হাসি মুখে রুমে প্রবেশ করলো।
আদি পা মেলে ল্যাপটপ নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলো।সামু রুমে ঢুকতেই দুজনের চোখাচোখি হলো।সামুর মুখ থেকে হাসি ভ্যানিশ হয়ে গেলো।
আদি ল্যাপটপ রেখে সামুর সামনে এসে দাড়ালো।
তারপর দুহাত ভাজ করে বললো,
—–এতোক্ষণ তো হাসছিলে যেই আমাকে দেখলে হাসি মিলিয়ে গেলো।মুখটা প্যাঁচার মতো করে নিলে।
সামু চোখ ছোট ছোট করে বললো,
—–কারণ আপনার এই হনুমান মার্কা চেহারা আমার পছন্দ না।তাই আপনাকে দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
আদি ভ্রু কুচকে সামুর দিকে চেয়ে বললো,
—–নিজের চেহারা আয়নায় দেখেছো?একদম পেত্নী।
——তো আমি কখন বললাম আমি মিস বাংলাদেশী।আমি পেত্নী আই নো দিস।
আদি হতাশ হলো।ভেবেছিলো সামু তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবে।কিন্তু না।
আদির প্রচন্ড রাগ হচ্ছে এটা ভেবে সামুর কেন রেগে গেলো না।
—–তুমি একটা….
সামু ভ্রু কুচকে বললো,
—–আমি একটা কি?হু?
সরুন তো ভাল্লাগছে না।
সামু সরে ড্রেসিং টেবিলের কাছে যাচ্ছে।আদি পেছনে পেছনে যাচ্ছে আর বলছে,
তোমার এতো ঝাঝ কেন?তোমার সব কথা গায়ে জ্বালা ধরানোর মতো।
সামু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
—–তো কথা বলবেন না।
আদি রাগ দেখিয়ে বললো,
—–ওকে ফাইন বলবো না কথা।
আদি ধপ করে বিছানায় শুয়ে পরলো।
সামুর বাবা চলে যাচ্ছে।যাওয়ার আগে সামুর কাছে অনেক বার ক্ষমা চেয়েছে।সামুর বাবা সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।সামু তখনো দাঁড়িয়ে আছে।
আদির মা সামুর কাধে হাত রাখলো।সামু ঘুরে প্রশান্তির হাসি দিলো।
“মামনি আমি ভেবেছিলাম বাবা বিয়েটাকে নিয়ে অন্যরকম রিয়েক্ট করবে কিন্তু না তিনি বিয়েটা মেনে নিয়েছেন আর বারবার ক্ষমা চেয়েছে।আজ আমি অনেক খুশি।মামনি।”
.
সকাল সকাল বাগান,বাড়ি সব সাজানো হচ্ছে।সামু জানালার গ্রিল ধরে বাগান দেখছে।বাগানে লাইটিং করা হচ্ছে।আর তখনই পানির ছিটা গায়ে লাগলো।পেছনে ঘুরে দেখে আদি ভেজা চুল ঝাকাচ্ছে।
আদি যে ইচ্ছে করে এমন করছে সেটা সামুর বোধগম্য হচ্ছে।সামু কোনো রিয়েক্ট না করে আবারো গ্রিলের দিকে ঘুরে বাগান দেখছে।
আদি সামুকে বিরক্ত করার জন্য আরো সামনে এসে চুল ঝাকাচ্ছে।
সামু বিরক্তি নিয়ে ঘুরে কপাল কুচকে বললো,
—–কি হচ্ছেটা কি?বাচ্চামো শুরু করে দিলেন কেন?
আদি মুচকি হেসে বললো,
—–ইয়াহু,,মে জিদ গায়া।
সামু আদির কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।জিতে গেছে মানে কি?আর চেয়ে চেয়ে বেশি অদ্ভুত লাগছে আদির এই বাচ্চামি।
সামু প্রশ্নবোধক চিহ্ন ঝুলিয়ে আদির দিকে চেয়ে রইলো।
আদি সামুর আরো সামনে এসে বললো,
—–বুঝলে না তো? অবশ্য বুঝার কথাও নয়।মাথায় তো শুধু গোবর যেখানে লাল মরিচ চাষ করা হয়।
সামু আংগুল তুলে কিছু বলবে তখনই আদি সামুর আংগুল ধরে ফেলে।আংগুলে একটা কামড় দিয়ে বললো,
—–আংগুলেও মরিচ,এতো ঝাল যে মুখ পুড়ে যাচ্ছে।
সামু আংগুল টান দিয়ে পিছিয়ে গেলো।তারপর সরে আসতে নিবে আদি সামুর দুপাশের গ্রিলে হাত রাখে।সামু পারে তো গ্রিলের সাথে মিশে যায়,গ্রিল ভেদ করে বেরিয়ে যায় কিন্তু সেটা তো সম্ভব না।
সামু আমতা আমতা করে বললো,
—–চাপা দিয়ে মারবেন নাকি?চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছি তো।
আদি সামুর কথা শুনে মুচকি হাসলো।আদি কোনো কিছু না বলে সামুর গলায়
নাক ডোবায়।ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে।
সামুর হাত পা জমে যাচ্ছে।
আদি সামুর গলায় গভীর ভাবে চুমু আকছে।হুট করে সামুর কাছ থেকে সরে যায়।তারপর রুম থেকে বের হয়ে যায়।সামুর চোখ বন্ধ ছিলো।হাত মুষ্টিবদ্ধ ছিলো। সামু চোখ খোলে দেখে আদি রুমে নেই।হটাৎ কি হলো কিছুই সামুর মাথায় ঢুকছেনা।
সামু জোরে একটা নিশ্বাস নিলো।তারপর আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো।গভীর ভাবে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে।
সামু নিচে নামতেই কতগুলো মেয়েকে দেখতে পেলো।ওরা নিশির গায়ের মাপ নিচ্ছে।টেবিলের উপরে বিভিন্ন ড্রেস ছড়ানো।
সামু যেতেই নিশি ইশারায় ডাকলো।সামু নিশির কাছে যেতেই নিশি বললো,
—–এরা দেশের টপ ডিজাইনার।তোর জন্য একটা ড্রেস চুজ করেছি।আমার কিছু ড্রেস আর তোর ড্রেস দুজনে এক সাথে চুজ করবো।যেহেতু বিয়ে,রিসিপশন আর হলুদের ড্রেস নেওয়া হয়ে গেছে আরো আগেই।
সামু আর নিশি অনেকক্ষণ যাবত নিজেদের ড্রেস দেখছে।অবশেষে সামু হলুদের জন্য একটা গোল্ডেন কালার লেহেঙ্গা,বিয়ের দিনের জন্য পার্পল কালার লেহেঙ্গা আর নিশির রিসিপশনের জন্য নিশির পছন্দ করা স্পেশাল ডিজাইনের ব্লু কালার ড্রেস নিয়েছে।
আদি এতোক্ষণ এসব দূর থেকে দেখছিলো।
আদি একটা শাড়ি দেখেছে।শাড়িটা দেখেই ওর পছন্দ হয়ে গেছে।এ শাড়িতে সামুকে কেমন লাগবে তা মনের মাধুরি মিশিয়ে কল্পনা করে নিয়েছে।কিন্তু সামুর তো ড্রেস নেওয়া শেষ।তবুও আদি সেই শাড়িটা সামুর জন্য অর্ডার দিয়েছে।
আদি শাড়িটা রুমে নিয়ে বেডের উপর রেখে দিয়েছে।
সামু এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে শাড়ির দিকে।এই রুমে শাড়ি কে রাখবে।সামু শাড়িটা হাতে নিয়ে দেখছে।পেস্ট কালার শাড়ির মধ্যে কারুকাজ আর দামী পাথর বসানো।সামু নেড়ে চেড়ে দেখছে শাড়িটা।শাড়িটা বেশ সুন্দর।
আদি সামুর সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,
—–পছন্দ হয়েছে?
সামু হটাৎ করে কারো কথা শুনে চমকে যায় আর হাত থেকে শাড়িটা পড়ে যায়।
সামু আদির দিকে চেয়ে বললো,
—–কে যেনো শাড়িটা এখানে রেখে গেছে।
আদি সামুর পাশে বসে শাড়িটা হাতে নিয়ে বললো,
—–আমি রেখেছি তোমার জন্য।
তুমি বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন এই শাড়ি পড়বে।
—–কিন্তু আমি তো লেহেঙ্গা নিয়ে ফেলেছি।তাছাড়া শাড়ি পড়া অনেক ঝামেলার।তার চেয়ে বেশি ঝামেলা শাড়ি ক্যারি করা বিশ্বাস না হলে আপনি ট্রায় করে দেখুন।
সামু শাড়ি রেখে উঠে দাড়ালো।আদি শাড়ি হাতে নিয়ে বললো,
—-শাড়ি তো তুমি পড়বেই।এটা আদির চ্যালেঞ্জ।
নিশির মেহেদী অনুষ্ঠান হচ্ছে।সামুর মেহেদী সব সময় পছন্দ।দুহাতে মেহেদী দিয়েছে।নিশি দুহাতে মেহেদী দিয়ে কানে ব্লুটুথ দিয়ে জয়ের সাথে কথা বলছে।
সামু অপেক্ষায় আছে কখন মেহেদী শুখাবে।আদি সামুর পাশে এসে আয়েশ করে বসে।
সামু আদিকে দেখে নড়ে-চড়ে বসলো।আদি সামুর হাত ধরতেই সামু চিতকার দিলো।
—–ওই ষাড়ের মতো চেচাচ্ছো কেন?
—–আপনি আমার হাত ধরেছেন কেন?
আমার মেহেদী নষ্ট হবে।হাত ছাড়ুন।
আদি একটা মেহেদী বের করে বললো,
——চুপ করে বসো।নড়লে মেহেদী নষ্ট হয়ে যাবে।আমি তোমার হাতে মেহেদী দিয়ে দিবো।হাত টান করো।
সামু নিজের হাত টান মেরে সরাতে চাইলে আদি শক্ত করে ধরে রাখলো।
—–আপনি কি কানা দেখুন আমি মেহেদী দিয়েছি।আপনি আবার কি দিবেন?
—–চুপ!!
আদি সামুর হাতে মেহেদী ছোয়াতেই সামু চোখ বন্ধ করে নিলো।আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে।
সামু চোখ খোলতেই দেখলো আদি সামুর মেহেদীর উপর ইংরেজি A অক্ষর লিখেছে।
আদির কাজ শেষ হতেই আদি উঠে দাড়ালো।সামুর ভরকে যাওয়া মুখের দিকে চেয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো।
.
.
নিশিকে হলুদ দেওয়া হচ্ছে।আদি ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।
সামু নিশিকে হলুদ ছুইয়ে আসছে আর তখনই আদিকে দেখে থমকে গেলো।
আদি বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মত্ত।
সামু সামনে গিয়ে দাড়ালো তারপর বললো,
—–এক্সকিউজ মি।
আদি সামুর কন্ঠ শুনে সামুর দিকে তাকালো।পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে মনে মনে শ’খানেক ক্রাশ খেলো।
—–হ্যা বলো।
—–আপনাকে মামনি খোজছে।ফোন কই আপনার?
আদি ফোন বের করে দেখে মিসড কল উঠে আছে।
——মা কেন খোজছে?দরকারী কিছু।
——আমি জানি না মামনি কেন খোজছে।আমাকে জিজ্ঞেস করলো আপনার কথা বলেছি জানিনা।এখন দেখলাম তাই বললাম।আপনি গিয়ে দেখুন।
সামুকে কেউ ডাকছে।সামু ব্যস্ততা দেখিয়ে সেদিকে পা বাড়ালো।
আদিও বন্ধুদের রেখে পা বাড়াতেই অয়ন আদির হাত চেপে ধরে বললো,
—–কেসটা কি বস?এই মেয়ে কে?আর আন্টি মানে তোর মাকে মামনি কেন বলছে?
আদি অয়নের কাধে হাত দিয়ে বললো,
——ভাই শুনে স্ট্রোক করিস না।তাহলে বোনের মেহেদী অনুষ্ঠান রেখে তোকে হসপিটালে নিতে পারবোনা।দেন অকালে মরবি।
সি ইজ মাই ওয়াইফ।সামান্তা চৌধুরী।
আদি বাকা হেসে অয়নের কাধে চাপকে চলে গেলো।
অয়ন হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে।তার বন্ধু বিয়ে করেছে বউ আছে আর সেই জানেনা।
চলবে….