তোর_শহরে_ভালোবাসা পর্ব-২২

0
2144

#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
………{সিজন-২}
#ফাবিহা_নওশীন

পর্ব~২২

সামু ভ্রু কুচকে আদির দিকে চেয়ে বললো,
—–হোয়াটস ইউর প্রব্লেম?

—–আমি তোমাকে কিছু বলছি আর তুমি আমাকে এভয়েড করার চেষ্টা করছো?

—–নো একচুয়ালি আমি আপনাকে এভয়েড করার চেষ্টা করছি না এভয়েড করছি।আপনি কি সত্যিই বুঝতে পারছেন না?(চোখ ছোট ছোট করে)

আদি ভ্রু কুচকে সামুর দিকে চেয়ে আছে।এভাবে চেয়ে থাকা দেখে সামু মুখ ফিরিয়ে নিলো।
আদি দাতে দাত চেপে বললো,
—–ইউ নো হোয়াট….

সামু আদির দিকে ঘুরে জোরালো ভাবে বললো,
—–হোয়াট?? বলুন।
আদি চুপ করে আছে।

সামু আদিকে চুপ থাকতে দেখে বললো,
—–এই যে আমি আপনার ঘরে আছি তাই বলে এটা মনে করবেন না যে আমি আপনাকে ভয় পেয়ে আপনার ঘরে আছি।আছি আছি বাবা,মামনি আর নিশিপুর জন্য।তারা আমাদের জন্য অনেক হ্যাপি আর আমি তাদের হ্যাপিনেস নষ্ট করতে চাইনা।আমি তো আর আপনার মতো নই।আর এই যে চুপচাপ আমি আপনার সাথে আপনার গাড়িতে এসেছি কারণ নিশিপু ছিলো নয়তো আমি আপনার সাথে আপনার গাড়িতে কিছুতেই আসতাম না।আর হ্যা আপনার কথা শোনার বিন্দুমাত্র রুচি আমার নেই সো প্লিজ।

আদি সামুর শেষের কথাটা মেনে নিতে পারলো না।

আদি গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দিলো।সামু ভয় পেয়ে গেলো গাড়ির এতো স্পীড দেখে।
—–গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দিলেন কেন?আমাকে মারতে চান নাকি?

আদি ফুলস্পীডে গাড়ি চালাচ্ছে।ওর দৃষ্টি সামনের দিকে।সামু বারবার নানান কথা বলছে গাড়ির স্পীড কমাতে বলছে কিন্তু আদি কোনো কথাই কানে নিচ্ছে না।ওর চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।
আদি সামুর কথা শুনছেনা।সামুর এখন প্রচন্ড ভয় লাগছে।আদি রেগে গেলে ওর মাথা ঠিক থাকেনা।কোনো প্রকার হিতাহিত জ্ঞান থাকেনা।কি করতে কি করে ফেলে।এখন না একটা এক্সিডেন্ট ঘটিয়ে বসে।
সামু চোখ খিচে বন্ধ করে জোরে চিতকার করে বললো,
—-আদি গাড়ি থামান প্লিজ।

গাড়ি ব্রেক কষলো সামুর চিতকারে।হুট করে গাড়ি থামাতে গিয়ে জোরে ব্রেক হয় আদি এক হাতে সামুকে আগলে রেখে আরেক হাতে স্টেয়ারিং ধরে রেখেছে।
সামু ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।সামু চোখ খোলে দেখে গাড়ি থেমে গেছে।আদির দিকে তাকাতেই দেখে ও ডান হাতে কপাল ধরে রেখেছে।
আদি হাত সরাতেই সামু আঁতকে উঠে।

—–আপনার কপালে রক্ত!আমি আপনাকে বারবার বলছি আপনি আমার কথা শুনছেনই না।

সামু হাত বাড়িয়ে দিতেই আদি সরে গেলো।
তারপর বললো,
—–আমি ঠিক আছি।

সামু চুপ করে গেলো।বারবার আড়চোখে আদির দিকে তাকাচ্ছে।কিন্তু কিছুই করতে পারছেনা।
আদি সামুর ভার্সিটির গেটের সামনে গাড়ি থামালো।
—-নামো।

সামু নেমে দরজা ধরে বললো,
—–ব্যান্ডেজ করে নিবেন।

আদি দাতে দাত চেপে বললো,
—–আমি কি করবো সেটা তোমার বলার প্রয়োজন নেই।
তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সু করে চলে গেলো। যেনো গাড়ি না রকেট।
সামু বোকার মতো দাড়িয়ে আছে।

.

সামু দৌড়ে বাড়িতে ঢুকছে।ওকে কিছুটা ভীত আর আতংকিত লাগছে।দৌড়ে সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে হুচট খায় কিন্তু সেদিকে সামু পাত্তা না দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো।তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকতে গিয়ে দরজায় বাড়ি খায় কিন্তু এই আঘাত যেনো সামুর কাছে কিছুইনা।সামু এখন অন্য কিছুতে মত্ত।যা ওকে অস্থির করে তুলছে।
পেছন থেকে সবাই ওকে ডেকেছে কিন্তু সামু সবাইকে এভয়েড করে চলে এলো।
আদির মা আদিকে বললো,
—–গিয়ে দেখ তো ব্যাপারটা কি?

আদি উঠে নিজের রুমে এলো।সামু বেডের উপর বসে আছে।দু হাত একে অপরের মধ্যে মুষ্টিবদ্ধ।ঠোটে ঠোঁট চেপে রেখেছে যেনো কান্না আটকানোর প্রচেষ্টা।চোখ লাল হয়ে আছে।
আদি ওকে পর্যবেক্ষণ করে কিছুই জিজ্ঞেস করলো না।কারণ ও ভালো করে বুঝতে পারছে সামু ওকে কিছুই বলবেনা তাই চেষ্টা করে ওকে বিরক্ত না করাই ব্যাটার।অশান্ত মন শান্ত হলে পরে নিশিকে দিয়ে জেনে নিবে।

~ফ্ল্যাশব্যাক~
সামু ক্লাস শেষে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা শেষ করে লাইব্রেরী থেকে বের হচ্ছে।আর তখনই ওর বাবার সাথে সামনাসামনি দেখা।সামু কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়।ওর বাবাও সামুকে দেখে অবাক হয়ে যায়।এইভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি।তিনি ব্যাবসায়ীক কাজে প্রায়ই আসা-যাওয়া করেন।
সামুর বাবা সামুকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তখনই সামু দৌড়ে পালায়।পেছন থেকে অনেকবার ডেকেছে কিন্তু সামু আর পেছনে ঘুরে তাকায়নি।

আদি ওর মাকে গিয়ে বলেছে সামু কিছু বলার অবস্থায় নেই।ও নরমাল হলে ওকে জিজ্ঞেস করে নিবে।
—–তা নাহয় জানবো কিন্তু তুই কপাল কাটলি কিভাবে?

আদি মাথা চুলকে বললো,
—–ওই গাড়ি চালানোর সময় লেগে গেছে।

আদির মা বিচলিত হয়ে বললো,
——গাড়িতে?তুই আবারো গাড়ি এক্সিডেন্ট ঘটিয়েছিস?বাবা নিজের কথা না ভাব বাবা-মায়ের কথাও না ভাব এই বাচ্চা মেয়েটার কথা একটু ভাব।সামুর মুখের দিকে তাকালেও কি তোর মায়া হয়না?

—–মা এক্সিডেন্ট হয়নি।এমনিতেই লেগেছে।

.

সবাই খাবার টেবিলে ডিনার করছে।সামু খাবার নেড়েই যাচ্ছে।আর মাঝে মাঝে মুখে তুলছে।
আদির মা আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করলো,
——কি হয়েছে মা তোর?

সবার দৃষ্টি সামুর মুখের দিকে।সামু কি জবাব দেয় সেটা জানার জন্য সবাই অধীর আগ্রহে কান পেতে রেখেছে।

সামু সবার অবস্থা বুঝতে পেরে কৌতুহল মিটিয়ে দিলো।।
—–আসলে আজ বাবাকে দেখেছি।

সামুর কথা শুনে সবাই চমকে গেলো।
আদির বাবা জিজ্ঞেস করলো,
——তারপর?উনার সাথে তোমার সামনাসামনি দেখা হয়েছে?না তুমিই শুধু দেখেছো?

—–না বাবাও আমাকে দেখেছে।কিছু বলছিলো আমি চলে এসেছি।

—–কি বলতে চাইছিলো শোনা উচিৎ ছিলো।

——কি আর বলবে।
সামু সরি বলে খাবার টেবিল ছেড়ে চলে গেলো।

আদির মা বললো,
—–মেয়েটা বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে তাই হয়তো ভয় পেয়ে গেছে।

আদি খাবার শেষ করে রুমে গিয়ে দেখে সামু ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আচড়ে বাধছে।
আদি ওর সামনে গিয়ে বললো,
——তোমার বাবা কি তোমাকে ধরে নিয়ে যেতো?তোমার বিয়ে হয়ে গেছে চাইলেও সে তোমাকে নিতে পরবেনা।আর তাছাড়া তুমি যাবেনা।

—–মানে?

—–মানে তুমি বলেছিলে তোমার যাওয়ার জায়গা নেই।এর মানে তুমি ও বাড়িতে যাবেনা।

সামু চুল বাধা শেষ করে আদির সামনে এসে দাড়ালো তারপর বললো,
—–উনি যেমনই হোক আমার বাবা।আর ওটা আমার বাবার বাড়ি।আজ যাচ্ছিনা বলে যে কখনো যাবোনা তা নয়।চাইলে এখনো যেতে পারি।এখনি।

সামু আদিকে ছোট খাটো হুমকি দিয়ে দিলো।আদি চিন্তিত ভংগীতে দাড়িয়ে রইলো।তারপর মুচকি হেসে বললো,
—–এখুনি? নো বেব,কখনোই না।

মাঝরাতে সামুর ঘুম ভেঙে যায়।সামুর ঘুম আসছেনা।উঠে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়।চারদিকে আলো ফুটতে শুরু করেছে।পাখি কিচিরমিচির করে সকালকে স্বাগত জানাতে ব্যস্ত।

সামু জোরে শ্বাস নিয়ে রুমে ফিরে গেলো।চোখ গেলো আদির দিকে।আদির কপালের ব্যান্ডেজের দিকে।সামু অতি সাবধানে আদির কপালের ব্যান্ডেজের উপর থেকে চুল সরিয়ে দিলো।তারপর এক দৃষ্টিতে ব্যান্ডেজের দিকে চেয়ে আছে।
তারপর আদির গালের উপর হাত রাখলো।তারপর দ্রুত হাত সরিয়ে নিয়ে আদিকে ভালো করে দেখে নিলো।আদি জেগে যায় কিনা কিংবা কিছু বুঝতে পেরেছে কিনা।

“তুমি এলে সাঝের বেলায়
জড়ালে আমায় তোমার মায়ায়
আমি তোমাতেই আবদ্ধ
তোমাতেই আসক্ত
চেয়েও পারিনা দূরে যেতে
তোমার মায়ায় রেখেছো বেধে।”
–ফাবিহা নওশীন

আজকে সামুর ভার্সিটি অফ তাই লেট করে ঘুম থেকে উঠেছে।ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখে সবার নাস্তা কমপ্লিট।আদির বাবা অফিসে চলে গেছে,আদির মা নিশির বিয়ের জন্য ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে তিনিও বাড়িতে নেই।নিশিও নাস্তা সেড়ে ফেলেছে।সেও ব্যস্ত। সোফায় বসে জয়ের সাথে ফোনে কথা বলছে।সামু একা একাই নাস্তা করছে।আর বারবার নিশিকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।

সামু নাস্তা শেষ করে নিশির গা ঘেঁষে বসে টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
—-আপু এখুনি যদি এতো কথা বলো বিয়ের পর কি বলবে?তখন আর বলার মতো কিছু খোজে পাবেনা।

নিশি জয়কে বায় দিয়ে সামুর সাথে খুনসুটিতে মেতে উঠলো।
—–আচ্ছা তাহলে এখন তুই ভাইয়ার সাথে কি কথা বলিস?আমাকে একটু শিখা।তুই বিবাহিত এন্ড মাই ভাবী।তোর তো একটা দায়িত্ব আছে।বল।

সামু কাচুমাচু করছে।নিশি যে ওকে টিচ করছে বুঝতে পারছে।সামু কিছু বলতে যাবে তখনই একজন গার্ড এসে সামুকে বললো,
—-মেম কেউ একজন আপনার সাথে দেখা করতে এসেছে।

সামু গার্ডের কথা শুনে চিন্তিত ভংগীতে নিশির দিকে তাকালো।ওর সাথে কে দেখা করতে আসবে।ওর সাথে দেখা করতে আসার মতো কেউ নেই।নিশি সেটা বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলো,
—-কে এসেছে?নাম কি?

—–মেম নাম বলেনি।তবে একজন মধ্যবয়স্ক লোক আরেকজন ইয়াং ছেলে।

সামু চমকে উঠে দাড়িয়ে গেলো।ওর মন বলছে ওর বাবা এসেছে।কিন্তু তিনি এখানে কিভাবে আসবে?ঠিকানা পাবে কোথায়?
সামু গার্ডকে বললো,
—–ভেতরে আসতে বলুন।

গার্ড চলে গেলো।টেনশনে সামুর হাত-পা জমে যাচ্ছে।দাত দিয়ে নখ কাটছে আর দরজার দিকে তাকাচ্ছে।বুক ঢিপঢিপ করছে।
তখনই কোর্ট পড়া একজন মধ্যবয়স্ক লোক ভিতরে এলো।সাথে একটা ছেলে।এই ছেলেটা নাহিদ।

সামু মনে মনে ভাবছে সব মসিবত এক সাথে কেন আসে?
সামু যা ভেবেছিলো তাই।ওর বাবাই এসেছে।
সামু ওর বাবাকে দেখে মাথা নিচু করে নিলো।

সামুর বাবা সামুর সামনে এসে দাড়িয়ে মেয়েকে একবার ভালো করে দেখে নিলো।
তিনি কোনো কথা না বলে বললো,
—–চলো আমার সাথে।

নিশি শুধু দেখেই যাচ্ছে কিছু বুঝতে পারছেনা।কে ইনি কি বলছে কিছুই ওর মাথায় ঢুকছেনা।

সামু চুপ করে রয়েছে।সামুর বাবা সামুর হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
সামু নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর বলছে,
—–তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?আমি কোথাও যাবোনা।আমাকে ছাড়ো।

নিশি চেচিয়ে গার্ডদের ডাকলো।গার্ডরা ছুটে এলো।
সামু বাধা দিয়ে বললো,
—–নিশি আপু আমার বাবা ইনি।

নিশি সামুর কথা শুনে চমকে গেলো।
তারপর গার্ডদের থামিয়ে দিলো।
সামুর বাবা সামুকে নিয়ে প্রায় বাইরে বেড়িয়ে গেছে।
নিশিও পেছনে পেছনে যাচ্ছে।

সামু ওর বাবাকে বললো,
—–বাবা দু মিনিট সময় দেও আমাকে।আমি কিছু কথা বলতে চাই।আমার কথাগুলো শোনার পর যদি তুমি মনে করো আমাকে নিয়ে যাবে আই প্রমিস চলে যাবো।

সামুর বাবা সামুর হাত ছেড়ে দিলো।

নাহিদ বললো,
—–আংকেল আমাদের ফ্লাইটের সময় হয়ে যাচ্ছে।তাড়াতাড়ি করুন।

সামু নাহিদের দিকে অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে বললো,
—–আমাদের এখানে পারসোনাল কথা আছে।বাইরের মানুষ দূরে গেলেই ভালো মনে করি।

নাহিদ সামুর বাবার দিকে চেয়ে বাইরে চলে গেলো।
সামু ওর বাবাকে নিয়ে বসালো।তারপর কাচুমাচু কর‍তে করতে বললো,
—–বাবা তুমি কোনো ভাবেই আমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারোনা।আমি বিবাহিত এটা আমার শ্বশুর বাড়ি।
সামু শেষের কথা বলে মাথা নিচু করে নিলো।

সামুর বাবা মেয়ের কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।তার মুখে কথা সরছেনা।
—–বিয়ে?তুমি বিয়ে করেছো?মজা করছো আমার সাথে?

সামু চোখ তুলে আমতা আমতা করে বললো,
—–বাবা আমি সত্যিই বলছি।আমার বিয়ে হয়ে গেছে।

—–বাবাকে ছেড়ে বিয়ে করে নিয়েছো?

সামু ওর বাবার মুখের দিকে চেয়ে বললো,
—–বাবা তো তার স্বার্থের জন্য অপাত্রে আমাকে দান করছিলো।বাবা এখানে আমি সব পেয়েছি।যদিও বিয়েটা হুট করে হয়ে গেছে।এই বাড়ির প্রতিটি মানুষ আমাকে খুব ভালোবাসে।এখানে আমি যা পেয়েছি তোমার কাছে আমি তা পাইনি।বাবা মা বোন সুন্দর একটা পরিবার পেয়েছি।আর আমি তাদের চোখের মণি।তারা আমাকে এতটা ভালোবাসা দিয়েছে যার ঋণ আমি কোনো কিছু দিয়ে শোধ করতে পারবোনা।আমার একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিলো আর…

সামুর বাবা ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
—–এক্সিডেন্ট?

সামু সবটা খোলে বললো।তারপর বললো,
—–তোমার কি এখনো মনে হচ্ছে আমাকে নিয়ে যাওয়ার অধিকার তোমার আছে?বাবা আমি এখানে অনেক ভালো আছি।তুমি তো আমাকে ভালোবাসো নি যারা আমাকে ভালোবাসে তাদের সাথে আমাকে ভালো থাকতে দেও।প্লিজ।

সামুর বাবা কিছু না বলে উঠে দাড়ালো।তার চেহারায় অনুতাপ স্পষ্ট।
তিনি কিছু না বলে মেইন ডোরের সামনে গেলো।নাহিদ গাড়ির সামনে দাড়িয়ে ছিলো।সামুর বাবাকে দেখে এগিয়ে এসে বললো,
—–আংকেল কি হলো?

সামুর বাবা গম্ভীরমুখে উত্তর দিলো,
—–নাহিদ সামুর বিয়ে হয়ে গেছে।এটা ওর শ্বশুর বাড়ি।

—–কি বলছেন আংকেল?এসব ওর নাটক।মিথ্যা বলছে।ওকে নিয়ে চলুন।

—–নাহিদ আমার মেয়ে মিথ্যা বলেনা।ওর বিয়ে হয়ে গেছে।চলো এখান থেকে।

—–নো আংকেল আমি সত্যটা না জেনে যাবোনা।

“কোন সত্য জানতে চান?”

কারো কথায় সামুর বাবা আর নাহিদ ঘুরে দাড়ালো।
আদি ডার্ক গ্রিন টিশার্ট আর নেভি ব্লু টাওজার পড়ে এলোমেলো চুলে দাঁড়িয়ে আছে।বুঝাই যাচ্ছে মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে।

আদি আবারো প্রশ্ন করলো,
—–কি ভাই বলুন।

নাহিদ এগিয়ে এসে বললো,
—–আপনি কে?

আদি গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো,
—–আদিল চৌধুরী।এই বাড়ির মালিক।আর যাকে নিতে এসেছেন ওর হাসব্যান্ড।

নাহিদ আদিকে ভালো করে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে বললো,
—–আপনি ওর হাসব্যান্ড?

—–কোনো সন্দেহ?

—–হ্যা অবশ্যই।প্রুফ কি?

আদি ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
—–হু আর ইউ? আপনাকে আমার বিয়ের প্রমাণ দিতে হবে?কেন দেবো? আজব পাব্লিক তো আপনি একটা মেয়ে আপনাকে রিজেক্ট করলো।বিয়ে করবেনা বলে পালালো অনত্র বিয়ে করে নিলো তার জন্য এখনো বসে আছেন? আপনার কোনো আত্মসম্মান নেই?
এখানে আবার বিয়ের প্রুফ চাইছেন?প্রুফ না দিলে কি করবেন?নিয়ে যাবেন সামুকে?তারপর আগামীকাল যখন জানবেন আমার বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে তখন কি করবেন?আমার বাচ্চাকে আপনি লালন পালন করবেন?

আদির কথা শুনে সামু চোখ বড়বড় করে আদির দিকে চেয়ে আছে।এই ছেলে বলে কি।নিশি মুখ টিপে হাসছে।সামু নিশিকে ভেংচি কাটছে।

নাহিদ আর কোনো কথার উত্তর দিলো না।চূড়ান্ত অপমান হয়েছে।
নাহিদ সামুর বাবাকে বললো,
—–আংকেল আমি চলে যাচ্ছি।আপনি আপনার মতো আসবেন।

নাহিদ চলে গেলো।সামু হাফ ছেড়ে বললো,
বাবা আর নাহিদের চাপ্টার ক্লোজ।নিশ্চিন্ত হলাম।

সামুর বাবা আদির সামনে গিয়ে দাড়ালো তারপর বললো,
—–ওকে দেখো।আমি ওর প্রতি কখনো নজর দেইনি।

নিশি আদিকে ইশারা করছে সালাম করার জন্য।আদি কিছুই বুঝতে পারছেনা।নিশির দিকে জিজ্ঞাস্যুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।যখন বুঝতে পারলো তখনই সামুর বাবা বললো,
—–এর প্রয়োজন নেই।আমি দোয়া করি সুখে থাকো।ভালো থাকো।সবাইকে ভালো রাখো।

সামুর বাবা সামুর কাছে গিয়ে দাড়ালো তারপর বললো,
—-পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস আমি আসি।

নিশি সামনে এসে বললো,
—–আংকেল কোথায় যাচ্ছেন?বাড়িতে মা বাবা কেউ নেই।উনারা আসুক দেখা করে যাবেন।আর মা এসে যদি জানতে পারে আমরা আপনাকে থাকতে বলিনি আপনি চলে গেছেন তবে প্রচুর বকবে।কি সামু?প্লিজ থেকে যান।

সামু তাল মিলিয়ে বললো,
—–হ্যা বাবা।

সামুর বাবা মুচকি হেসে বললো,
—–ঠিক আছে।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে