#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
……..{সিজন-২}
#ফাবিহা_নওশীন
পর্ব~১৬
??
এক রাতেই আদির লাইফ সামুকে ছাড়া বিষাদে পরিনত হয়েছে।রাতে ঘুম হয়নি।সকাল সকাল ড্রয়িংরুমে এসে হাজির হয়েছে।
গতকাল আদির মা আদিকে বলে দিয়েছে সামুকে ভার্সিটিতে আর আনা নেওয়া করতে হবেনা।নিশি যাওয়ার সময় ড্রপ করে দিবে।আদি মায়ের কথা শুনে আরেক দফা ছেকা খেলো।
সামু রেডি হয়ে যেই রুম থেকে বেড়িয়েছে তারপর দুপা পিছিয়ে নিজের রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালো।আদি ড্রয়িংরুমে বসে আছে।
“উফফফ,,বর মশাই এখানে বসে আছে কেন?আমি এখন কিভাবে যাবো?আমাকে দেখলে যদি কিছু বলে?”
সামু নিজের পিঠে কারো স্পর্শ পেয়ে লাফিয়ে উঠলো।পেছনে চেয়ে দেখে নিশি দাঁড়িয়ে আছে।বুকে থু দিলো দুইবার।
—–কিরে চোরের মতো উকি ঝুঁকি দিচ্ছিস কেন?
সামু ইশারায় আদিকে দেখালো।
নিশি আফসোসের ভংগীতে বললো,
—–আহারে বেচারা ভাই আমার বউ ছাড়া এক রাতেই কেমন শুকিয়ে গেছে?
চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে সারারাত ঘুমায়নি।বউকে এক নজর দেখার জন্য সকাল বেলায় ড্রয়িংরুমে এসে বসে আছে।
—–আপু!!!
আমাদের যেতে হবে।
নিশি বললো,হ্যা চল।তোকে কে নিষেধ করেছে যেতে?আমি কি কোলে তুলে নিয়ে যাবো?
সামু নাক ফুলিয়ে বললো,
—–মজা করছো?
আমি তোমার ভাইয়ার সামনে দিয়ে যেতে পারবোনা।
—–কেন তুই কি ভয় পাচ্ছিস?সামুও ভয় পায় মাই গড।
—–আপু!
নিশি আদির পাশে গিয়ে বসে বললো,
—–ভাইয়া সকাল সকাল এখানে বসে আছো কেন?
—–এমনি।কেন আমি এখানে বসে থাকতে পারিনা?এখানে বসার জন্য এখন আমাকে তোর পারমিশন নিতে হবে?(কিছুটা রেগে)
নিশি বুঝতে পারলো কার রাগ কার উপর ঝাড়ছে।
নিশি মুখ ভেংচি কেটে বললো,
—–বসে থাকো সারাদিন বসে থাকো।কে নিষেধ করেছে?
আদি নিশির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।তারপর উঠে চলে গেলো।
নিশি সামুর কাছে গিয়ে বললো,তোর জন্য ঝাড়ি খেয়ে এলাম।
সামু নিশির দুগাল টিপে বললো,
—-আমার কিউট ননদিনী।এই মাসুম বাচ্চা ভাবির জন্য এটুকু করাই যায় কি বলো?
—–জ্বালা!
অপরদিকে জয় চাইছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওর আর নিশির বিয়েটা হয়ে যাক।রাজের ঝামেলার কারণে যদি ওদের বিয়েটা ভেঙে যায়।এ আশংকায় থাকতে পারছেনা।সারাক্ষণ ওর মাথায় এসব চিন্তা-ভাবনাই ঘুরপাক খায়।
জয় তাই ওর মা-বাবার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছে।
ওরাও আজ নিশিদের বাসায় বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে এসেছে।
নিশি সেই কখন থেকে কেদেই যাচ্ছে।হুট করে বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি।ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষার পর বিয়ের কথা ছিলো কিন্তু ওরা সামনের মাসের ডেট দিয়েছে।
—–ওহ আপু কান্না থামাও তো।এভাবে কাদছো কেন?একদিন আগে আর পরে তো বিয়েটা হবেই।আর তাছাড়া তুমি জয় ভাইয়াকে ভালোবাসো না?
—–তাই বলে এত তাড়াতাড়ি…
(কান্নারত অবস্থায়)
সামু নিশিকে কিছুতেই থামাতে পারছেনা।সামু বাধ্য হয়ে জয়কে ফোন করলো।
—–জিজু আপি তো ভিষণ কাদছে।
কথা বলুন।
সামু নিশির কানে ফোন দিয়ে দিলো।
—–নিশি কাদছো কেন হুহ?তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?আমার সাথে থাকতে চাওনা?
—–চাই কিন্তু হটাৎ করে…
—–সবকিছুই মানুষের জীবনে হটাৎ করেই হয়।তোমাকে কি আমি আটকে রাখবো?তুমি ও বাড়িতে যাবে আসবে সমস্যা কি?এখন কান্না থামাও।চলো ফ্যামিলি প্ল্যানিং করি।আগে ছেলে হবে না মেয়ে?
—–ফাজিল ছেলে রাখো ফোন।
নিশি ফোন রেখে হাসছে।অপর পাশে জয়ও হাসছে।
আদি রুম জুড়ে পাইচারি করছে।ওর প্রচুর রাগ হচ্ছে।সামুর দেখা নেই ২দিন।বাড়িতে কি সারাক্ষণ গা ঢাকা দিয়ে থাকে।আদি সামুর নাম্বার ডায়াল করলো।
সামু ফোন রিসিভ করে হ্যালো হ্যালো বলছে।অপরিচিত নাম্বার দেখে সামুর খটকা লাগছে।রাজ নয়তো।
তাই সামু রাগ মিশিয়ে বললো,
“ওই কথা বলিস না কেন?ফোন দিয়ে চুপ করে থেকে তামাশা করিস?জুতা মেরে চাপার হাড্ডি ভেঙে ফেলবো।বেয়াদব।মানুষ চিনিস না।”
—–চিনি খুব ভালো করে চিনি বাকিটা সময় মতো চিনে নিবো।
ফোন কেটে দিলো।সামু ফোন কান থেকে সরায়নি।কন্ঠ কেমন পরিচিত লাগছে।তবে রাজ নয়।কে হতে পারে?ব্রেইনে সর্বোচ্চ প্রেশার দিচ্ছে বুঝার জন্য।
সামু শুয়ে শুয়ে কানে হেডফোন গুঁজে ইউটিউব ঘাটছে।আদি ঠাস করে দরজা খোলে ভেতরে ঢুকে গেলো।আদিকে দেখে সামু কানের হেডফোন খোলে আদির দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে।আদিকে দেখে ওর ভালো লাগছে কিন্তু ভয়ও লাগছে।দুম করে ঘরে ঢুকলো কেন?
সামু কাচুমাচু করে বললো,
—–আপনি!!
আদি সামুকে টেনে দাড় করিয়ে বললো,
—–তুমি আমাকে এভয়েড করছো?আদিল চৌধুরীকে?
সামু দ্রুত মাথা নাড়ালো।
—–আবার না করছো?তোমার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি।
সামু মুখ খুললো।
—-আমি আপনাকে এভয়েড কেন করবো? আমি আপনাকে বিরক্তও করছিনা,এভয়েডও করছিনা।
—–ফোনে গালাগাল দিলে কেন?
সামু ডান হাতে নিজের মুখ চেপে ধরেছে।তারপর আদির দিকে অসহায় ফেস করে তাকালো।মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো,
—–ওই ফাজিল মানে ওটা আপনি ছিলেন? আসলে আমি বুঝতে পারিনি।এই নাম্বার আমার কাছে নেই।তাই বখাটে ছেলে ভেবে…আমি কি করে জানবো আপনি রাতের বেলায় এক বাড়িতে থেকে ফোন করে বখাটেদের মতো চুপ মেরে থাকবেন?
আদি আচমকা সামুকে জড়িয়ে ধরলো।
সামু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।আদি চুপ করে আছে।কিছুই বলছেনা।তারপর সামুকে ছেড়ে দিয়ে সামুর গলায় জোরে কামড় দিলো।
সামু ওমাগো বলে চিতকার করে উঠলো।
আদি মুচকি হেসে বললো বখাটে বলার শাস্তি।
আদি দরজার কাছে গিয়ে বললো,
—–আজকে ভালো ঘুম হবে।
আদি যেতেই সামু দৌড়ে আয়নার সামনে গেলো।গলায় দাত বসিয়ে দিয়েছে।
সামু কাদো কাদো হয়ে বিরবির করে বললো,
ভ্যাম্পায়ার নাকি?কেমন লাল হয়ে দাগ পড়ে গেছে।দাত ভেঙে পড়বে।হুহ।
জয় ওর বিয়ের খুশিতে পার্টি দিয়েছে।সামু বারবার বলছে যাবেনা।
সেটা শুনে আদি বললো,
—–কেনো যাবেনা?
—–এমনি আমি যাবোনা।
—–তুমি যাবে।অবশ্যই যাবে।আমার সাথে যাবে।
সামু কিছু বলতে যাবে নিশি থামিয়ে দিয়ে বললো,
—-সামু রাজকে ইনভাইট দেয়নি।সো ডোন্ট পেনিক।
সামু আদির দিকে একবার চেয়ে নিশিকে বললো,
—–ঠিক আছে আমি যাবো।
আদি হুট করে বললো,
—–আমি যাবোনা।
তারপর উঠে হনহন করে চলে গেলো।
সামু বললো,যা বাবা এর আবার কি হলো?এতোক্ষণ যাওয়ায় জন্য তো লাফাচ্ছিলো।
নিশি সামুকে বললো,আরে বোকা মেয়ে তোমার হাব্বি রাগ করেছে।এতোক্ষণ যাওয়ার কথা বললো না করলি আর এখন রাজ যাবেনা তাই হ্যা বলেছো তাই সে মাইন্ড করেছে।যাও রাগ ভাংগাও।
——আমি কি করে রাগ ভাংগাবো?তার রাগ কি কাচের টুকরো যে ইট মেরে ভেঙে ফেলবো?
নিশি চোখ ছোট ছোট করে সামুর দিকে তাকাতেই সামু উঠে দাড়িয়ে বললো,
—–যাচ্ছি।আমার প্রতি তো আর তোমার দয়া মায়া নেই।একটা ভাবী গেলে আরেকটা পাবে।সমস্যা কি??
—–হ্যা তাই!
সামু,আদির রুমের সামনে অনেকক্ষণ যাবত দাঁড়িয়ে আছে।ঢুকবে ঢুকবে করে ঢুকতে পারছেনা।
আদি ভেতর থেকে বলল,
দরজার সামনে কে ঘুরঘুর করছে চোরের মতো?
—–আমি..
আমি বলে সামু চুপ করে গেলো।কারণ পরের ওয়ার্ড ওর ব্রেইনে মাত্র প্রবেশ করলো।সামু আদির রুমে ঢুকে বললো,
—–আপনি আমাকে চোর বললেন?
আদি ভ্রু কুচকে বললো,
—-আমি কই চোর বললাম?আমি তো বলেছি চোরের মতো।তুমি যদি নিজেকে চোর মনে করো আমার কি করার আছে?
সামু আংগুল তুলে বললো,দেখুন..।
আদি বাকা হেসে বললো,
—–কি দেখবো তোমার মতো ধানীলংকাকে দেখার কি আছে?সারা গায়ে তো মরিচ।এন্ড আই ডোন্ট লাইক মরিচ।
সামু রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
——শুধুমাত্র নিশিপুর জন্য।নয়তো আমি আপনাকে এক মিনিটও সহ্য করতাম না।
যাইহোক আপনি আমাদের সাথে পার্টিতে যাচ্ছেন।কিছুদিন পর নিশিপুর বিয়ে।শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে তাই তাকে আপনি কষ্ট দেবেন না আশা করি।তাই আপনি যাচ্ছেন।
আদি ভ্র কুচকে বললো,
—–তুমি কি আমাকে মানাতে এসেছো না থ্রেট করতে এসেছো?
সামু কনফিউজড হয়ে গেলো।মাথা চুলকাতে-চুলকাতে বিরবির করে বললো,
—–এসেছিলাম মানাতে বাট থ্রেট হয়ে যাচ্ছে।
আদি কান পেতে মাথা কাত করে ছিলো।তাই শুনতে পেয়ে বললো,
——তাহলে মিষ্টি করে মানাও।কড়া কথায় আমি ভিজবো না।
সামু কিভাবে মানাবে।মিষ্টি কথা তো কখনোই মুখ দিয়ে বের হয়না।
—–আমি কোনোদিন কারো তোষামোদি করিনি।মিষ্টি করে কথাও বলতে পারিনা।কখনো কাউকে মানাইনি আর কোনো ছেলেকে তো না ই।তাই জানা নেই কিভাবে কথা বললে ছেলেরা খুশি হয়।ছেলেদের তো আজীবন পিটিয়ে এসেছি।
(শেষের কথাটা বিরবির করে বলল)
আদি শুনতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো,
—–ছেলেদের কি করেছো?
—–পিটিয়েছি প্রচুর পিটিয়েছি।তবে নিজে নই আমার টিমের মেম্বার দিয়ে।আমি ছুচো মেরে হাত নষ্ট করিনা।আমার বাবা একজন নেতা আর সব জায়গায় আমি নেতার মেয়ে হিসেবে পরিচিত ছিলাম।আর এর প্রচুর ফয়দা তুলেছি।এলাকায় একটা টিম ছিলো আর কলেজেও একটা টিম ছিলো আর আমি ছিলাম সেই টিমের…..
—–লিডার।
সামুর কথা কেড়ে নিয়ে আদি বললো।
—–ইয়ে মানে হ্যা।যেসব ছেলে বেশি ত্যাড়িং ব্যাড়িং করতো তাদের কেলানো হতো।তাই সব ছেলেরা আমাকে ভয় পেতো।এখন আপনি বলুন যাবেন কিনা?
(আংগুল তুলে)
আদি ভয় পাওয়ার ভান করে বললো,
—–আমাকেও কেলাবে নাকি?
সামু নিজের আংগুলের দিকে চেয়ে আংগুল নামিয়ে বললো,
—–মজা করবেন না।ভালো লাগে না।বলুন যাবেন।
আদি একটু ভাব নিয়ে বললো,
—–তুমি যখন এতো করে বলছো ঠিক আছে যাবো।
সামু খুশি হয়ে গেলো।তারপর এক দৌড়ে নিশির রুম।
.
সামু পার্টিতে যাওয়ার জন্য ড্রেস জিনিসপত্র গুছিয়ে বেডে রেখে ফ্রেশ হতে গিয়েছে।ফ্রেশ হয়ে বেরুতেই দেখে আদি ওর বিছানার উপর বসে ওর জিনিসপত্র নেড়েচেড়ে দেখছে।মেকাপের জিনিসপত্র অদ্ভুত ভাবে দেখছে।যেনো আজ প্রথম বার দেখছে।
আদি সামুকে দেখে বললো,
—–আমি ভাবছি পার্টিতে হলুদ পড়বো।তুমিও হলুদ পড়বে।হলুদ কাপল।কেমন লাগবে বলো তো?
সামান্তা নাক ফুলিয়ে আদির দিকে চেয়ে আছে।আদি ঠোঁটের কোনে দুষ্ট হাসি ফুটিয়ে ভ্রু নাচাচ্ছে।
সামু তারপর বললো,
——জঘন্য লাগবে।আপনি যদি হলুদ পড়েন তবে আমি আপনার সাথে যাবোনা।নওমী আপুকে নিয়ে যান।একদম ভালো মানাবে।কাপল পিক তুলে ফেসবুকে আপলোড দিবেন।ক্যাপশন দিবেন,
“ওই আর সরিষা ক্ষেত।”
আদি সামুকে ক্ষেপাতে এসে নিজেই কপোকাত।
চলবে….