#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
………{সিজন-২}
#ফাবিহা_নওশীন
পর্ব~৭
??
সামান্তা লিভিং রুমে পড়তে বসেছে।ওর বরাবরই খোলামেলা জায়গায় পড়তে ভালো লাগে।কিন্তু আজ আর পড়তে পারছেনা।সেই ঘটনা আর আদির কথাগুলোই বারবার মনের মাঝে উঁকি দিচ্ছে।
সামান্তা চোখ বন্ধ করে সোফায় মাথা এলিয়ে দিয়েছে।খুব ক্লান্ত লাগছে।
কিন্তু তখনই কিছু একটা পড়ার শব্দ পেলো।সামান্তা চট করে চোখ খোলে।একটা রাবারের বল ফ্লোরে বারবার বাড়ি খাচ্ছে।সেন্টার টেবিলের উপরে বাড়ি খেয়ে নিচে পড়ছে।সামান্তা বলের দিকে চেয়ে আছে।বলটা থামছেনা।
হটাৎ আদি বলের কাছে এসে বল তুলে নিলো।আর সামান্তার দিকে অদ্ভুৎ দৃষ্টি দিলো।সামান্তা ওকে দেখে চোখ নামিয়ে নিলো।আদি বল হাতে নিয়ে সরে গেলো।
সামান্তা দুম করে উঠে নিজের জিনিসপত্র নিয়ে রুমে চলে গেলো।
সামান্তা রাগে গজগজ করছে আর রুম জুড়ে পাইচারি করছে।রাগ কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছেনা।সামান্তা কোমড়ে হাত দিয়ে বিরবির করে বলছে,
“এই লোকের সমস্যা কি?কেন আমার পেছনে পড়ে আছে?সব সময় ইরিটেট করছে।কোথাও শান্তি দিচ্ছেনা।জিনা হারাম করে দিচ্ছে।যেদিন থেকে দেখা হয়েছে একটা না একটা ঝামেলা করেই যাচ্ছে।কিভাবে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে যাচ্ছি শুধু আমিই জানি।সিচুয়েশন আমাকে দূর্বল করে রেখেছে নয়তো চাপকে ছাল তুলে নিতাম।ঠাস ঠাস করে দুগালে দুচড় মারতে পারলে শান্তি পেতাম।
নাহ এভাবে নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে এখানে আমি আর থাকতে পারবোনা।এতো অপমান কি করে মেনে নিবো? আংকেল,আন্টি,নিশিপু এদের কেউ ঝামেলায় ফেলে দিয়েছি।এরাও আমাকে নিয়ে চিন্তিত।সবার সবকিছুর সমাধান আমার বিয়েটা করে নেওয়া।তাছাড়া রাজ ভালো ছেলে,,জানভির কথাগুলোও ঠিক।বিয়েটা আমি করছি।হ্যা করছি।”
.
সামান্তা নিশি আর নিশির মায়ের সামনে বসে আমতা আমতা করছে।কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছেনা।
তারপর দুম করে বললো,
—–আন্টি আমি বিয়েতে রাজি।
নিশি আর নিশির মা দুজনেই সামান্তার কথা শুনে বিস্মিত হলো।নিশি বললো,
—–সামু তুই ভেবেচিন্তে বলছিস তো? চাপে পড়ে কোনো ডিসিশন নিয়ে নিস না।
—–না আপু আমি ভেবেচিন্তেই বলছি।
নিশির মা বললো,
—-সামু তুমি রাজকে কতদিন ধরে চিনো?তোমরা কি একে অপরকে..
—–না আন্টি।আমরা জাস্ট ফ্রেন্ড।আমাদের মধ্যে এর বেশি কিছু নেই।কিছুদিনের চেনাজানা।ওর সাথে মিশে ওকে খারাপ মনে হয়নি।অনেক কেয়ারিং।বাকিটা আপনারা জেনে নিন।আমি ওর ফ্যামিলি সম্পর্কে কিছুই জানিনা।বন্ধুত্বের জন্য যতটুকু জানার ততটুকু জানি।জয় ভাইয়া নিশ্চয়ই আমার খারাপ চাইবেনা।
এখন আপনারা যদি চান আমি এই বিয়েতে রাজি।আমার কোনো আপত্তি নেই।
নিশির মা কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
—–ঠিক আছে।আমি তোমার আংকেলের সাথে কথা বলছি।
—–জ্বি আন্টি এখন আমি যাই।
নিশিও সামুর পেছনে পেছনে গেলো।
সামু দাড়া!!
সামু দাড়িয়ে গেলো।
—–সামু তুই কি মন থেকে এই বিয়ের প্রপোজাল একসেপ্ট করেছিস?
—–হ্যা আপু।
নিশি সামুকে জড়িয়ে ধরলো খুশিতে।
—–সামু সব ঠিকঠাক থাকলে আমরা জা হতে যাচ্ছি।ইয়াহ হু!!
—–হুম।
সামু নিজের রুমে যেতে যেতে ভাবছে,
“আল্লাহ তোমার হাতে সব ছেড়ে দিলাম।তুমি দেখো আমার সাথে যেনো খারাপ কিছু না হয়।আমি যেনো ভালো থাকি রাজের সাথে।”
নিশি জয়কে ফোন করে অলরেডি নিউজ দিয়ে দিয়েছে।
সামান্তার ফোন বেজে উঠলো।সামান্তা ফোন হাতে না নিয়েও বুঝতে পারলো রাজ ওকে ফোন করেছে।নিশিকে ও ভালো করে চিনে।নিশ্চয়ই নিশি ওদের জানিয়ে ফেলেছে আর সে কারণেই রাজ ওকে ফোন করেছে।
সামান্তা ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই রাজ উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,
—–নিশি ভাবি যা বললো তা কি সত্যি? তুমি বিয়েতে রাজি?
সামান্তা ছোট্ট করে উত্তর দিলো,
—–হুম।
এই হুম বলার মাঝে কোনো উচ্ছ্বাস নেই।কেন নেই সেটা সামান্তারও অজানা।
সামান্তা তারপর আবারো বললো,
—–বাট রাজ আমি আপনাকে ভালোবাসি না।শুধু বন্ধুই ভাবি এটাও সত্য।
—–সমস্যা নেই।আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না।বাট আজ বাসো না তো কি হয়েছে,একদিন বাসবে।এরেঞ্জ ম্যারেজে কিন্তু লাভ থাকেনা।বিয়ের পর ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।আমাদেরও হবে।
—–বাট আপনার ফ্যামিলি?
—–আই উইল ম্যানেজ।ডোন্ট ওরি।তুমি যখন হ্যা বলেছো তখন সবাই হ্যা বলবে।ট্রাস্ট মি।
সামান্তা আমতা আমতা করে বললো,
—–আরেকটা কথা।
—-কিহ!বলো, বিব্রত বোধ করোনা।
সামান্তা কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা বড় করে নিশ্বাস নিয়ে বললো,
—–আমি চাই বিয়েটা যত দ্রুত সম্ভব হয়ে যাক।মানে নিশি আপুর বিয়ের আগে।
রাজ সামুর কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।যেখানে সামু ওকে ভালোবাসেনা সেখানে বিয়ের এতো তাড়া কিসের?তাড়া তো রাজের হওয়ার কথা।কেননা ও সামুকে ভালোবাসে,সামুকে চায়।তবুও রাজের মনে লাড্ডু ফুটছে।ও যেনো হাতে আকাশের চাদ পেয়েছে।
সামু অধীর আগ্রহে কান পেতে আছে রাজের উত্তর শোনার জন্য।সাড়া না পেয়ে কিছুটা হতাশ হয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই রাজ বললো,
—–তুমি যা বলবে তাই হবে।আগামীকাল আমার আব্বু আম্মু আসবে বিয়ের কথা বলতে।
বিয়ের কথা শুনে সামু কিছুটা লজ্জা পেলো।লজ্জা মাখা মুখে বললো,
—–আচ্ছা রাখছি।
ওদের কথোপকথন শেষ হতেই সামু নিজেকে নিজে বারবার বলছে সামু ডোন্ট ওরি যা হবে ভালো হবে।
.
সামান্তা নীল রঙের শাড়ি পড়েছে।নিশি নিজের হাতে সামান্তাকে সাজিয়েছে।রাজের বাবা-মা এসেছে।নিশির মায়ের সঙ্গে কথা বলছে।সামান্তা নিশির পাশে বসে আছে।রাজ বারবার আড়চোখে সামান্তাকে দেখছে।
আদি অনেকক্ষন যাবত সিড়ির রেলিঙ ধরে ওদের দেখে যাচ্ছে।নিশিকে ইশারায় ডাকলো।
নিশি আদিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে বললো,
—–কেস কি বলো তো?আজকাল বাসায় এতো ঘনঘন দেখা যাচ্ছে।
আদি ভ্রু কুচকে বললো,
—–এভাবে বলছিস কেন?আমার বাড়িতে আমি থাকতে পারবোনা?
নিশি মুখ বাকিয়ে বললো,
—–যাক নিজের বাড়ি তো সম্ভোধন তো করলে…যাইহোক ডাকলে কেন?
আদি মেহমানদের দিকে চেয়ে বললো,
—–এরা কারা?
নিশি হাসিমুখে বললো,
—–রাজ আর রাজের বাবা-মা।বিয়ের কথা পাকা করতে এসেছে।
বিয়ে পাকা করার কথা শুনে আদির বুক ধুক করে উঠলো।
আদি আমতা আমতা করে বললো,
—–ডেট ফিক্সড হয়ে গেছে?
নিশি উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,
—–হ্যা।১৫দিন পর।
আদি আর কথা না বলে ওদের দিকে চোখ রাখলো।রাজকে ভালো করে দেখে নিলো।তারপর সামুর দিকে চোখ নিলো।সামুর দিকে ওর চোখ আটকে গেছে।সামুকে এ রুপে কখনো দেখেনি।শাড়ি পড়ায় ওকে অন্য রকম লাগছে।পূর্ণ বয়সী এক নারী।
আদি ওর ফ্রেন্ড অয়নকে খোজছে।অবশেষে ওকে খোজে পেলো।এক মেয়ের সঙ্গে চিপকে গল্প করছে।আদি বিরক্তি নিয়ে কিছু না বলেই ওকে টেনে নিয়ে এলো।
—–আরে ভাই টানছিস কেন?উফফ ভাই পাব্লিক প্লেসে অন্তত একটু সম্মান দে।
আদি রেগে বললো,চুপ শালা,ওখানে কি করছিলি?
অয়ন বললো,
—–ভাই বাই এনি চান্স তুই কি জেলাস?
আদি বিস্ময় নিয়ে বললো,
—–জেলাস!!আমি!! হোয়াট এ জোক!
আমি কাকে জেলাস ফিল করবো যার কিনা গতকাল ব্রেকাপ হয়েছে?
অয়ন একটু ভাব নিয়ে বললো,
—–তাতে কি আজকেই একটা সেটিং হয়ে যেতো কিন্তু তুই ঝামেলা বাধিয়ে দিলি।
—–আমি যন্ত্রণায় আছি আর তুই সেটিং করবি?এটা আমি কি করে হতে দেই?
অয়ন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,
—–তুই যন্ত্রণা!!ভাই কে দিলো যন্ত্রণা?কোনো মেয়ে নাকি?যদি তাই হয় তবে বেশ হয়েছে।এর জন্য পার্টি দিবো।
আদি কটাক্ষ দেখিয়ে বললো,
—–শাট আপ!!ফাও কথা বাদ দে।কাজের কথা শোন।একজনের সম্পর্কে ইনফরমেশন লাগবে।
—–ভাই তুই আবার কাকে বরবাদ করতে নামলি?
আদি বাকা হেসে বললো,
—–রাজ!!রাজ নামে এক ছেলের ইনফরমেশন চাই।এভ্রিথিং।ও আমার রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।কি ইনফরমেশন চাই যেটা বুঝতেই পারছিস।কোথায় কি ঘাপলা আছে,কোথাও কোনো অঘটন ঘটিয়েছে কিনা।ওর লাইফের নেগেটিভ ইনসিডেন্ট,উইক পয়েন্টের লিষ্ট চাই।মেয়েঘটিত ব্যাপার হলে জমে যাবে।তোকে ওর পিক আর ঠিকানা সেন্ড করে দিয়েছি।কাজে লেগে যা।কোনো ফাক ফুকর যেনো না থাকে।
—–ওকে মাই ডিয়ার দোস্ত।কাজ হয়ে যাবে এখন আমি যাই মেয়েটা ওয়েট করছে।
আদি ফিক করে হেসে বললো,
—–যাহ!আবার গিয়ে চিপকে যা।
আদি নিজের মনে হাসছে।
সামান্তা অনেকগুলো শপিং ব্যাগ নিয়ে বাড়িতে ঢুকছে।সামনে বিয়ে তাই কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছে।সামান্তার দুহাত ভর্তি অনেক ব্যাগ।সামনে আদি ভ্রু কুচকে দাড়িয়ে আছে।ওর মুখে রহস্যময় হাসি।সামু আদির থেকে একটু দূরত্ব বজায় রেখে ভেতরে ঢুকছে কিন্তু আদির মাথায় শয়তানি বুদ্ধি ঘুরছে।আদি ইচ্ছে করে ধাক্কা মেরে সামান্তার ব্যাগগুলো ফেলে দিলো।ব্যাগগুলো পড়ে ছড়িয়ে গেলো।সামান্তা বিরক্তি নিয়ে চেচিয়ে উঠলো,
—–সমস্যা কি আপনার?চোখ কি ভর্তা বানিয়ে ভাতের সাথে গিলে ফেলেছেন?
—–নো,একচুয়েলি বোর হচ্ছিলাম তাই একটু বিনোদন নিলাম।ইউ নো বিনোদন স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
সামান্তা দাতে দাত চেপে বললো,
—–আপনি একটা গন্ডার।সাদা হনুমান।অসভ্য লোক।
সামান্তা ব্যাগগুলো তুলে বললো,
—–মাত্র তো কয়দিন তারপর একা একা ফাকা মাঠে ফুটবল খেলবেন।হুহ,,যত্তসব আজাইরা পাব্লিক।
সামান্তা চলে যেতেই আদি বললো,
—–সরি বেবি আমি ফাকা মাঠে ফুটবল খেলবোনা।তুমিও আমার সাথে ফুটবল খেলবে।কজ তোমার বিয়েটা হচ্ছে না।
তারপর আদি মনের সুখে জোরে জোরে শিষ বাজাচ্ছে।
চলবে…..