তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-৬

0
2521

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?
পর্ব-৬
ফাবিহা নওশীন

??
চৌধুরী বাড়িতে আয়োজন চলছে।রাতে আদির বন্ধুরা আসবে ডিনার করতে।তাই সার্ভেন্ট থেকে শুরু করে আদির মা,বোন পর্যন্ত ব্যস্ত।তারা লিভিং রুমে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে সার্ভেন্টদের কাজ তদারকি করছে।
তখনই আদি ঝড়ের বেগে বাড়িতে ঢুকে।তারপর নিজের রাগ কমাতে সামনের টেবিলে একটা লাথি মারে।টেবিলটা পড়ে কাচের অংশটুকু ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।তারপর সোফায় গিয়ে বসে পড়ল।
আদির মা দৌড়ে এসে বললো,
–আদি,বাবা কি হয়েছে।
আদি কোনো উত্তর না দিয়ে দরজার দিকে চেয়ে আছে।
নিশি এসে বললো,
–ভাইয়া,তুই এমন ভাবে রেগে আছিস কেন?কি হয়েছে সব ঠিক আছে তো?
এবারো উত্তর দিলোনা।এক ধ্যানে মেইন ডোরের দিকে চেয়ে আছে।
ওরা বুঝলো কোনো উত্তর পাবেনা।তাই চুপ করে দাড়িয়ে আছে এটা দেখার জন্য আদি কার জন্য অপেক্ষা করছে আর কেন?

তখনই সামান্তা কতগুলো শপিং ব্যাগ হাতে বাড়িতে ঢুকে।আদি উঠে সামান্তার হাত ধরে।সামান্তা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কি হয়েছে?
আদি কোনো উত্তর না দিয়ে ওকে নিয়ে যেতে লাগলো।আদিকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও অনেক রেগে আছে।ওর হাত কাপছে।সামান্তা ব্যাগগুলো নিচে রেখে দিয়ে যেতে যেতে নিশির দিকে তাকালো।
নিশি ইশারায় জানালো ও কিছু জানেনা।আদি সামান্তার হাত খুব জোরে চেপে ধরেছে আর জোরে জোরে কদম ফেলছে তাতে সামান্তা ওর সাথে তাল মিলাতে পারছেনা।কিন্তু আদির সেদিকে খেয়াল নেই।
আদির মার কাছে অবস্থা ভালো ঠেকছেনা তাই তিনি আদিকে বললো,
–আদি ওকে ছেড়ে দে।কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?
বলেই ওদের দিকে এগুতে নিলে সামান্তা নিজেই ইশারা করে না করে।
সামান্তার মনে হচ্ছে হাত ছিড়ে যাচ্ছে।আদি উপরের সিড়িতে সামান্তা ২সিড়ি নিচে থাকায় হাতে টান পড়ছে।
নিশি মাকে বললো, ভাইয়াকে যেমন দেখাচ্ছে তাতে সামুর কপালে শনি,রবি,সোম,মঙ্গল সব আছে।

আদি নিজের রুমে সামান্তাকে ছুড়ে ফেলে দরজা লক করে দেয়।সামান্তা ফ্লোরে পড়তে গিয়েও পড়লোনা।
আদি এসে সামান্তার সামনে দুহাত ভাজ করে শান্ত দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে।ওর দৃষ্টি শান্ত থাকলেও যে ও শান্ত নেই সেটা সামান্তা ভালোই বুঝতে পারছে।সামান্তা জিজ্ঞাস্যু দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে রইলো কিন্তু কোনো উত্তর পাচ্ছেনা।তাই জিজ্ঞেস করেই ফেললো,
–কি হয়েছে?আমাকে এভাবে এখানে কেন আনলেন?
আদি চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে চোখ খোলে বললো,
–এখনো বুঝতে পারছোনা কেন এনেছি?
–না,আমি কি করেছি?
–মনে করে দেখো কি করেছো?
সামান্তা মনে করার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুই মনে করতে পারছেনা।আজ সারাদিনে মাত্রই দেখা হলো তাহলে কি হলো,কিছুই তো করেনি।আর আগের কোনো ঝামেলাও অপূর্ণ নেই।তাহলে?
–কি করেছি?আজকে সারাদিনে এই মাত্র দেখা হলো তাহলে কি করতে পারি?

আদির মাথায় আবার ধপ করে আগুন জ্বলে গেলো।সামান্তার কাছে গিয়ে ওর দুবাহু চেপে ধরে চিতকার করে বললো,
–আমাকে কেন দেখবে?দেখার মানুষের কি অভাব আছে?আদিল চৌধুরীর বউ মার্কেটে গিয়ে অন্য পুরুষের সাথে ঢলাঢলি করবে আর তা আদিল চৌধুরী মেনে নিবে?
সামান্তা দু’হাতে কান চেপে ধরেছে।কানের সামনে এসে এত জোরে চিতকার করছে,মনে হচ্ছে কান ফেটে যাচ্ছে।রুমটা সাউন্ড প্রুভ হওয়ায় বাইরে শব্দ যাচ্ছেনা।
সামু কান থেকে হাত সরিয়ে ছলছল চোখে বললো,
–আমি ঢলাঢলি করেছি?
আদি দাতে দাত চেপে বললো,
–ঢলাঢলি করোনি করার সুযোগ তো দিয়েছো?ওই ছেলে তোমার শরীরে বারবার হাত দেয়নি?তুমি ওকে একবারো বাধা ফিয়েছো?
বিবাহিত একটা মেয়ে একটা অন্য পুরুষের সাথে কিভাবে শপিংয়ে যায়?বুঝাও আমাকে?
বলেই সামান্তার বাহু ছেড়ে দিলো।
সামান্তা ভয়ে ভয়ে বললো,ও আমার ফ্রেন্ড।খুব ক্লোজ তাই,,,
আদি আরো জোরে চিতকার করে বললো,
–ফ্রেন্ড মাই ফুট।তুই যদি আর ওই ছেলের সাথে কথা বলিস তোকে কি করবো নিজেও জানিনা।মেয়েদের গায়ে হাত দেয় তারা সভ্য পুরুষ হতে পারেনা।তুই আগামীকালই ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপ ব্রেক করবি।নয়তো আমি ওকে খুন করবো।

সামান্তা আতকে উঠলো।তারপর বললো,ঠিক আছে।
আদি সামান্তার মাথা দু’হাতে ধরে মুখের সামনে গিয়ে হিসহিসিয়ে বললো,
মনে থাকে যেন।আদার ওয়াইস,,
সামান্তা চোখ বন্ধ করে বললো, মনে থাকবে।
আদি সামান্তার মাথাটা ছেড়ে দিয়ে চিতকার করে বললো, নাও লিভ।
সামান্তা চোখের কোনের পানি মুছে আদির রুম থেকে বের হয়ে হনহন করে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো।নিশি আর মা ওকে দেখছে।ওকে খুব বিধস্ত দেখাচ্ছে।সামান্তা কিছু না বলে ব্যগগুলো তুলে নিজের রুমের দিকে আগাচ্ছে নিশি আর মা বারবার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে উত্তর দিচ্ছেনা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে কাদতে শুরু করলো।আর বলছে,

–আমাকে এসব কথা বলতে পারলো?কি করেছি আমি?ও আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড।ওর ছোয়ার মধ্যে আমি কখনো খারাপ কিছু অনুভব করিনি।ওকে আমি ছেলে ভাবিনা শুধু মাত্র বন্ধু ভাবি।তাই হয়তো?
যতই বন্ধু হোক,ছোয়ায় যতই পবিত্রতা থাকুক।আমার দূরত্ব বজায় চলা উচিত ছিলো।ভুলে গেলে চলবেনা আমি বিবাহিত।আমার হাসব্যান্ড কেন কোন হাসব্যান্ড এসব মানবেনা?কিন্তু ওনি কি আদো আমার হাসব্যান্ড?ওনি কি আমাকে ভালোবাসবে?
সামান্তা মাথা চেপে কাদছে,জানিনা আমি কিচ্ছু জানিনা।ওনি আমার সাথে এমন কি করে করলো।একটু কষ্ট হলো না।সুন্দর করে তো বুঝিয়ে বলতে পারতো?তা না করে এত রাগ,,রাগ তো আমারো আছে,,,,

নিশি ঘটনা বুঝার জন্য আদির রুমে চোখ বুলালো।আদি একটা স্পঞ্জের বল দেয়ালে ছুড়ে খেলছে।আদির কোনো অনুতাপ নেই।বরং ওর মনে হচ্ছে আরো কিছু করা উচিত ছিলো।

সামান্তা আর বিকেলে বের হয়নি।রাতে আদি লিভিং রুমে ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।বন্ধুদের সাথে ওদের গার্লফ্রেন্ডরাও আছে।নিশি টেনেটুনে সামান্তাকে লিভিং রুমে নিয়ে আসছে।
সামান্তার কথা আদির কানে ভেসে আসছে।
–আপু প্লিজ ছেড়ে দেও।ভালো লাগছেনা আমার।আমি ওখানে গিয়ে কি করবো?
,–বসে থাকবি।মন খারাপ করে ঘরে বসে থাকতে দিবো নাকি?
আদি আড়চোখে তাকালো।সামু কালো রঙের একটা ড্রেস পড়েছে।চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ।কারণও আদির অজানা নয়।আদি এখনো সামান্তার উপর রাগ করে আছে।তাই ওর দিকে খেয়াল না করে বন্ধুদের সাথে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।নিশি জোর করে ওর পাশে বসিয়ে দিলো।নিশি গার্লদের সাথে গল্প করছে।সামান্তা একবার আড়চোখে আদিকে দেখে নিলো সে হেসে হেসে বন্ধুদের সাথে গল্প করছে।
চুপ করে বসে রইলো কিছুক্ষণ তারপর বললো,
–আমি কফি নিয়ে আসি
বলেই উঠে কিচেনে গেলো।

সামু যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আদির এক ফ্রেন্ড বললো,
–আদি,হু ইজ দ্যা গার্ল?
নিশি কিছু বলার আগেই আদি বললো,
–কাজিন।আব্বুর ফ্রেন্ডের মেয়ে।
নিশি ভ্রু কুচকালো।সামান্তা কফির ট্রে হাতে সব শুনতে পেলো।
ওকে কাজিন হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে এটা ওকে খুব কষ্ট দেয়।তাই আর না এসে কিচেনে ফিরে যায় আর সার্ভেন্টকে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়।আদি সার্ভেন্টকে দেখে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,
–সামান্তা কই?
–ওনার নাকি শরীর ভালো লাগছে না তাই আমাকে দিয়ে পাঠালো।
আদি বলে উঠলো,
–শরীর ভালো না নাকি এভয়েড করে গেলো?
আরেক ফ্রেন্ড বললো,
–যাই বলিস আদি,তোর এই কাজিন কিন্তু দেখতে সেই?পুরাই স্টোবেরি!সিট খালি আছে নাকি,,,,
আদি হুট করে বলে উঠে,
–ওই,,,কি বলছিস এইসব?সামলে।

নিশি মনে মনে বলছে, এখন কেন জ্বলে,এবার বুঝো ঠেলা!!
উঠে চলে গেলো নিশি।

–কি হলো আদি?রেগে যাচ্ছিস কেন?তোর অন্য কিছু লাগে নাকি?
–আমার কি লাগে না লাগে তা তোদের ভাবতে হবেনা।আমার বোন লাগুক,বউ লাগুক,জিএফ লাগুক,যা খুশি লাগুক।তোরা একদম বাজে নজর দিবিনা।
অন্য এক মেয়ে ফ্রেন্ড বললো,
তলে তলে এত কিছু,আর আমরা কিছুই জানিনা?কবে থেকে চলছে এসব?
আদি বোকার মতো চেয়ে বলে,কিসব?
–কি আবার প্রেম?
বলেই সবাই জোরে হেসে উঠে।
–দেখ কোনো প্রেম ট্রেম চলছেনা।কবে চলবে জানিনা।তবে ও আমার কাছে অনেক স্পেশাল কেউ।আই লাভ হার।সো রেস্পেক্ট হার।
–স্পেশাল!!লাভ!!বুঝেছি।
–হুম অনেক স্পেশাল।

সামান্তা রুমে গিয়ে কাদছে।
আমি কাজিন?কাজিন লাগি আমি।আমার সামনে চিতকার করে নিজেকে বর বলে,আমাকে বউ বলে দাবি করে কিন্তু অন্যের সামনে কোনো স্বীকৃতি দিতে পারেনা।তারমানে এসব অভিনয়।টাইম পাসিং।আর আমি কি ভাবতে শুরু করেছিলাম,এতো বোকা কেন আমি।আমার আর এসব বর-বউ খেলা ভালো লাগছে না।সামু সব ভুলে যা নিজের লাইফ নিজের মতো চালা।আদিকে ভেবে কষ্ট পাসনা।

??

সামু ভার্সিটি যাচ্ছে।যাওয়ার আগে সার্ভেন্টকে দিয়ে আদির রুমে শপিং ব্যাগগুলো পাঠিয়ে দেয়।আদি ঘুম থেকে উঠে কতগুলো শপিং ব্যাগ দেখে।ব্যাগ খোলে অনেকগুলো টিশার্ট আর শার্ট পায়।
আদির মাথায় ঢুকছেনা এসব কে রেখে গেছে।প্রতিটা শার্ট,টি-শার্টই সুন্দর।কালার গুলোও সুন্দর।আদির খুব ভালো লাগছে।হটাৎ একটা চিরকুট পেলো তাতে লিখা,

“এগুলো কিনার জন্যই ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম যাতে হেল্প পাই।যাইহোক রাখার ইচ্ছে হলে রাখবেন নয়তো ফেলে দিয়েন।দেওয়ার জন্য এনেছিলাম তাই দিয়েছি।বাকিটা আপনার ইচ্ছে।”

আদি বুঝতে পারলো সামান্তা দিয়েছে।এটাও বুঝলো ছেলেটাকে কেন নিয়ে গিয়েছে।

বিকেলবেলা,,
জয়ের ফ্যামিলি এসেছে।জয় নিশির বিএফ।আর মায়ের বান্ধবীর ছেলে।বিদেশে ছিলো এতদিন পড়াশোনার জন্য।বিদেশ থেকে এসেই নিশির বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।নিশির পরিবার আগেই ওদের ব্যাপারে জানে।আর নিশির পছন্দ মেনেও নিয়েছে।তবে নিশির বাবা বলেছেন আপাতত এনগেজমেন্ট করে রাখবে।পরীক্ষা শেষে বিয়ে।তারাও মেনে নিয়েছে।সামনের ওইকে এনগেজমেন্ট।নিশি তো বেশ খুশি।
সামু বাসায় আসছেই নিশি ওকে জরিয়ে ধরে লাফালাফি করছে।
সামু কিছু বুঝতে পারছেনা।নিশি সবকিছু খোলে বলে।সামান্তা ওকে কংগ্রেস জানায়।নিশির জন্য আদি সামান্তার সাথে কথা বলার সুযোগ হারায়।সামান্তা নিজের রুমে চলে যায়।

সন্ধ্যা বেলা-
সামান্তা লিভিং রুমে বসে কফি খেতে খেতে পড়ছে।তখনই আদি ওর পাশে এসে বসলো।সামান্তা আড়চোখে একবার দেখে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজের পড়ায় মনোযোগ দিলো।
–সামান্তা?
–জ্বি বলুন।
বইয়ের দিকে চেয়েই।
–পাচ মিনিট কথা বলতে চাই।
–আমি এখন পড়ছি।
–ইটস আর্জেন্ট।
সামু ভ্রু কুচকে বললো,
–আর্জেন্ট,,আমার সাথে আপনার কি আর্জেন্ট কথা থাকতে পারে?আর্জেন্ট হওয়ার মতো কোনো সম্পর্ক কি আছে আমাদের?আমি এখন কথা শুনতে পারবোনা।প্লিজ যান।
–ইগনোর করছো?
–ইগনোর?
আদিকে এই মুহুর্তে ওর অনেক বিরক্ত লাগছে।
দেখুন মি.আদিল চৌধুরী।আমি অতি সামান্য সাধারণ একটা মেয়ে।আমার আপনার মতো এত বড়মাপের একজনকে ইগনোর করার যোগ্যতা আছে?
–সামান্তা,প্লিজ।আমি সেদিনের জন্য,,
–আমি আপনার কথা শুনতে কোনো দিক থেকে বাধ্য নই।না আপনার আমাকে বাধ্য করার অধিকার আছে।
–সত্যিই অধিকার নেই?
ভ্রু কুচকে বললো,
–কিসের?আমার তো মনে পড়ছেনা।
–সামান্তা আই এম ইউর হাসব্যান্ড।এটা তোমার ভুলে গেলে চলবেনা।
–হাসব্যান্ড বললেই হাসব্যান্ড হওয়া যায়না।একটা কাগজে সাইন করলেই বিয়ে হয়ে যায়না।না আপনি আমার হাসব্যান্ড না আমি আপনার ওয়াইফ।আমাদের একটাই পরিচয় কি বলছিলেন গতকাল ওহ হ্যা,আমি আপ্নার বাবার বন্ধুর মেয়ে আপনার কাজিন।
আদি এবার বুঝতে পারলো সামু খেপে আছে কেন।
–এটুকুই শুনেছো,পরের কথা শুনো নি?
–প্রয়োজন মনে করিনি।
–যদি শুনতে,,
–আমার আপনাকে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে।প্লিজ চলে যান আমাকে একটু পড়তে দিন।
আদির রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
–আদি তোমার প্রতি ইন্টারেস্ট দেখিয়েছে বলে তোমার ভাব বেড়ে গেছে তাইনা?
সামু তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
আপনাকে ইন্টারেস্ট কে দেখাতে বলেছে?আমার আপনার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই আর না আমি চাই আপনি আমার প্রতি ইন্টারেস্ট দেখান।আপনি আপনার মতো থাকুন আর আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।আমি আজ পর্যন্ত আপনার লাইফে ইন্টারফেয়ার করিনি আপনিও করবেন না।সে অধিকার আপনাকে দেইনি।

আদি দাঁড়িয়ে গেলো।তারপর চোখমুখ লাল করে বললো,
–আদিকে অধিকার দেওয়া লাগে না,আদি আদায় করে নিতে পারে।
বলেই টেবিলের উপরে রাখা কফির মগটা ছুড়ে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

এত রাগ,,বাবা এই দুনিয়ায় আর ছেলে পায়নি আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য,এই এরোগেন্টকেই পেলো।
সামান্তাও রাগে ফুসতে ফুসতে বই হাতে নিজের রুমে চলে যায়।

আদি নিজের রুমে পাইচারি করছে।কপালে হাত ঘষে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে চাইছে কিন্তু পারছেনা।তাই সজোরে দেয়ালে লাথি মারে।
কি ভাবে কি নিজেকে,,এতো দেমাক কিসের?আমি ওর কেউনা?আমাকে অধিকার দেয়নি?আমাকে অধিকার দিতে এসেছে?আমাকে অধিকার দেওয়ার অধিকার আমি কাউকে দেইনি।

???

আজকে নিশির এনগেজমেন্ট।এই এক সপ্তাহে আদি,সামু কেউ কারো সাথে কথা বলেনি।এমনিতেও নিশির এনগেজমেন্ট নিয়ে সবাই বিজি ছিলো।শপিং,প্লানিং এসব নিয়ে সামান্তা নিশির সাথে বিজি ছিলো।আদি আর সামুর দেখা হয়ে গেলেও দুজন দুজনকেই এড়িয়ে গেছে।এমন ভাব কেউ কাউকে চিনেই না বা দেখেইনি।
বাড়িতেই এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।সবাই কনের(নিশি)জন্য অপেক্ষা করলেও আদির দুচোখ সামান্তাকে খোজছে।সামান্তা নিশ্চয়ই আজ সেজেছে।ওকে আগে কখনো সাজে দেখেনি তাই ওকে দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছে।
হটাৎ ই আলো নিতে গেলো।সিড়ির উপর লাইটের আলো পড়ছে।দুজন পরী ধীর পায়ে হেটে হেটে আসছে।যেন মাত্রই আকাশ থেকে নেমে এসেছে।সেই পরী দুজন নিশি আর সামু।নিশি সামনে সামু পিছনে।আদি হা হয়ে দেখছে।ঘোর লাগা চোখে দেখছে।
–হায়,,মে তো মারজাবা।

নিশি মেজেন্টা কালার লেহেঙ্গা পরেছে।তাতে ডার্ক মেজেন্টা কালারের পাথর পুতির কাজ।সামু পড়েছে পিংক কালেরের মধ্যে গ্রিন আর গোল্ডেন কালারের পাথর পুতির কাজ।চুলগুলো সামনে ফুলানো বেনি করা।বেনির উপর মতির মালা,ছোট ছোট ফুল।ভাড়ি গয়না,ভারি মেকাপ।দুহাতে মেহেদী।নিশি আর সামুর সেইম সাজ।নিশিই বলেছে দুজনেই সেইম সেজে সবাইকে কনফিউজড করে দিবো।দুজনকেই অসাধারণ লাগছে।সৌন্দর্য যেন উপচে পড়ছে।
সামান্তার অনেক আনইজি লাগছে।এর আগে কখনো এমন পার্টি এটেন্ট করেনি।চারদিকে আলোর ছড়াছড়ি,তাক লাগানো ডেকোরেশন,কত নামি-দামি মানুষজন সব মিলিয়ে আনইজি লাগছে।আদি সামান্তাকেই দেখছে।পলক নিতেও ভুলে গেছে।নিচে নামতেই সবাই এগিয়ে এলো ওদের দিকে স্টেইজে নেওয়ার জন্য।নিশি সামান্তার হাত চেপে ধরলো।
–কি হলো আপু?
–তুই আমার সাথে যাবি।
–আমি ওখানে গিয়ে কি করবো?
–আমি জানিনা,তুই ও আমার সাথে বসে থাকবি।
সামান্তা নিশির সাথেই গেলো।

স্টেইজে উঠতেই একটা ছেলে বলে উঠলো,
–জয় তোর বউ কে ইনি না ওনি?
সামান্তা মুচকি হেসে নিশিকে দেখিয়ে বললো,
–নিশিতা আপু।
ছেলেটি বললো,
–সরি।আসলে সেইম সাজ তাই কনফিউজড ছিলাম।
সামান্তার কেন জানি হাসি পাচ্ছে।নিশি যা বলেছিলো তাই।অনেকেই কনফিউজড হচ্ছে।হেসেই ফেললো।
–ইটস ওজে।নিশিতা আপু ইচ্ছে করেই এমন করেছে।
–ওহ আচ্ছা।
আমি রাজ জয়ের কাজিন।আপনি?
–আমি সামান্তা নিশি আপুর,,,,
থেমে গিয়ে বলল কাজিন।
আদি দূর থেকে সামান্তাকে দেখছে।হটাৎ করেই ওর চকলেটের মতো চেহারাটা হাওয়া হয়ে গেলো।সামান্তাকে রাজের সাথে গল্প করতে দেখে ওর রাগ হচ্ছে।
সামু নিশির পাশেই বসে গেলো আংটি বদলের পর সবাই ড্রান্স ফ্লোরে যাচ্ছে।রাজ সামান্তাকে ড্রান্সের জন্য বলে।সামান্তা না করে দেয়।রাজ বলে,
–কেন আপনার সাথে ড্রান্স করলে আমাকে মানাবে না,আমি কি দেখতে এতটাই খারাপ?
–না তা হবেন কেন?আমার এমনিতেই ভালো লাগছে না।
নিশি সামুকে একপাশে নিয়ে বলে,
সানু ড্রান্স কর,ভাইয়াকে জ্বালানোর ভালো উপায়।
–কিন্তু,
–কোনো কিন্তু না।কেউ আপত্তি করবেনা কারণ আমাদের সুসাইটিতে এসব পান্তাভাত।না করিস না যা।
সামান্তা এমনিতেই আদির উপর রেগে ছিলো তাই রাজি হয়ে গেলো।

???

আদি সামান্তাকে রাজের সাথে ড্রান্সফ্লোরে দেখতে পেয়ে মাথায় যেন আগুন ধপ করে জ্বলে গেলো।বোনের এনগেজমেন্ট তাই কিছু বলতে পারছেনা।নয়তো সামান্তাকে শিক্ষা দিয়ে দিতো।ওয়াইনের বোতল নিয়ে চুমুক দিলো।এক চুমুকে সবটা শেষ করে ছুড়ে ফেলে দিলো।

সামান্তা একা এক জায়গায় বসে আছে।তখনই রাজ এসে পাশে বসলো।সামান্তা নড়েচড়ে বসে।
–একা বসে আছেন যে,,,
–এমনি,
–কি করেন আপনি পড়াশোনা?
–হ্যা,অনার্স ফার্স্ট ইয়ার।
–আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।
–বাহ!!
–জ্বী।
সামান্তা কথা বলতে গিয়ে অন্য দিকে চোখ পড়তেই দেখে আদি একদৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।আদিকে খুব কিউট লাগছে।একদম চকলেট বয়।এমনিতেই সুন্দর আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।সামান্তা ক্রাশ খেলো।কিন্তু ওর দৃষ্টি দেখে ক্রাশ খাওয়ার কথা ভুলে গেলো।ওর দৃষ্টি দেখে ওর কলিজা শুকিয়ে গেলো।
খুক খুক করে কাশতে লাগলো।
–রাজ, আমি পানি খেতে যাচ্ছি।বায়।
বলেই সামান্তা কেটে পড়েছে।সিড়ি দিয়ে উঠে নিশির রুমের দিকে যাচ্ছে এটাই আপাতত ওর জন্য সেইফ জায়গা।নিশির রুমে গিয়ে পানি খেতেই ঠাস করে দরজা লাগানোর শব্দে ঘুরে দাড়ালো।
–আআপপ,,,নি।
–কেন কাকে আশা করেছিলে?
ওই ছেলেকে?
(সামান্তার দিকে আগাতে আগাতে)
সামান্তা পিছাতে পিছাতে বললো,
–না,, মা, নে,,।আপনি আমার দিকে কেন আগাচ্ছেন?
–বর তার বউয়ের দিকে কেন আগায়?
–মা,,,নে,,?
দেয়ালে ঠেকে গেলো।অসহায় ভাবে আদির দিকে তাকালো।
আদি বাকা হেসে ওর একদম কাছে চলে গেলো।সামু খিচে দাড়িয়ে আছে।আদি বা হাতে সামুর কোমড়ের ডান পাশে হাত রাখে।সামান্তা কেপে উঠে।আদির দিকে অসহায় ভাবে চেয়ে আছে।আদি কোমড়ের হাত একটানে ডান পাশে নিয়ে চেপে ধরে সামান্তাকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।একজনের নিশ্বাস অন্য জনের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
সামান্তা কাপা কাপা গলায় বলল,
–কিহহহ,,করছেন,,,?
–বুঝতে পারছো না?
বলেই সামান্তার গালের পাশের চুলগুলো কানের পিছে গুজে দিলো।সামান্তা বার বার ওর ছোয়ায় কেপে উঠছে।চোখ বন্ধ করে ফেলল।
আদি ঘোর লাগা কন্ঠে বললো,
–তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।যেন আস্ত একটা ডল।আদির ডল।আমি তো পুরো সময় তোমাকেই দেখে যাচ্ছি।
বলেই আদি ওর ঠোঁটে আংগুল ছোয়ালো।সামু কিছু বলতে যাবে তখনই আদি ওর ঠোঁটের উপর আংগুল রেখে বললো,
–হিসস,,,।
সামান্তা আর কথা বলতে পারছেনা।পারে তো কেদে দেয় কিন্তু কাদতেও পারছেনা।ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে।
আদি টুপ করে ওর গালে একটা কিস করে।সামান্তা বড়বড় চোখ করে আদির দিকে তাকায়।পলক যেন পড়ছেই না।ফ্রিজ হয়ে গেছে তা দেখে আদি মুচকি হেসে ওর ঠোঁট থেকে আংগুল সরিয়ে বললো,
–একসাথে এত ডোজ নিতে পারবে না তাই আজকের মতো তোমাকে ছেড়ে দিলাম।তোমার লিপস্টিকটা নষ্ট করতে চাইনা।আর এত মানুষের মধ্যে ঠোটে লিপস্টিক নিয়ে ঘুরলে আমাকে লোকে কি বলবে?এটা পরেরবার।
সামান্তা গালে হাত দিয়ে কাদো কাদো হয়ে বললো, আপনি কাজটা ঠিক করেন নি,,আমি,,
–তুমি কি বাবাকে বলবে?বলো।চলো আমিও তোমার সাথে যাই।
–….
আদি সামান্তার মুখের সামনে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,আদি আদির অধিকার আদায় করে নেয়।তোমার উপর শুধু আমার অধিকার।
–আপনি কি কিছু খেয়েছেন?এমন গন্ধ,,,
–হ্যা,একটু তবে হুশে আছি।কেন খেয়েছি জানো তোমার জন্য।তুমি ওই ছেলেটার সাথে এত কি কথা বলছিলে?আর ড্রান্স করছিলে কেন?তুমি শুধু আমার সাথে ড্রান্স করবে।চলো এখনি ড্রান্স করবে।
বলেই আদি সামান্তার হাত ধরে ড্রান্স করতে রুমের মাঝখানে নিয়ে এলো।সামান্তা কোনো উপায় না পেয়ে ওর সাথে ড্রান্স করছে।না করলে আবার কি না কি করে?
সামান্তার আদির সাথে ড্রান্স করতে ভালোই লাগছে।আদির প্রতিটা নিশ্বাস,ছোয়া অনুভব করছে।তখনই আদির ফোন বেজে উঠলো।হাতে ফোন নিয়ে দেখে বাবা ফোন করেছে।রিসিভ করে,,,।
–….
–বাবা আমি এখনি আসছি।
সামুর দিকে চেয়ে বললো,নিচে চলো।মেহমানরা চলে যাচ্ছে।
–আপনি আগে যান।
আদি সামুর কাছে গিয়ে কিছু বুঝার আগেই অন্য গালে কিস করে মৃদ্যু হেসে বেরিয়ে গেলো।
সামু আবারো ফ্রিজড হয়ে গেলো।দুগালে হাত দিয়ে বললো,
“লুইচ্চা”

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে