তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-৫

0
2743

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?
পর্ব-৫
ফাবিহা নওশীন

সামু গার্ডেনে দাঁড়িয়ে বিরবির করে কবিতা পড়ছেঃ

তুমি হবে ভীষণ একরোখা
একবার প্রেমে পড়েছো তো ব্যস পড়েছো
সাধ্যি কার এই জন্মে সেই প্রেম থেকে তোমায় ফেরায়!

আমি হবো চরম বেহায়া
দিনের মধ্যে চৌদ্দ বার ঝগড়া করবো
রাত্রি নামলে আদুরে গলায় তোমার কাছেই ফিরবো!
#কলি_ফাহমিদা

তখনই নিশি এসে বললো,
সামু,,সাইকেল আনার পর তো তোকে আর সাইকেল চালাতে দেখলাম না।

–সময় পেলাম কই?

–গতকাল তো ভার্সিটি অফ ছিলো কিন্তু তুই ঘরবন্দী হয়ে বসে ছিলি।আমি সাইকেল নিয়ে এসেছি।

সামু ঘুরে দেখে নিশি সাইকেলটা ফুল আর বেলুন দিয়ে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে।সাইকেল দেখেই মন ফুরফুরা হয়ে গেলো।
সাইকেল হাত দিয়ে ছুয়ে দিলো তারপর চুলগুলো খোপা করে সাইকেলে উঠে বসে।পুরো গার্ডেন জোরে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে।আর নিশি ওর পিছে পিছে দৌড়ে হাপিয়ে দাড়িয়ে যাচ্ছে।

আদি কফির মগ নিয়ে বারান্দায় এসে দাড়িয়ে হা করে আছে।
আরে দজ্জাল বউ সাইকেল চালাচ্ছে।
আদি কফি রেখে নিচে আসছে।

–সামু থাম,থাম।
সামু সাইকেল নিয়ে নিশির কাছে এলো।
–কি হয়েছে?
–আমি উঠবো প্লিজ প্লিজ আমাকে উঠা।
সামান্তার ওকে পিছে নিয়ে সাইকেল চালাতে সমস্যা হবে।তবুও বললো,
— ঠিক আছে উঠো।শক্ত করে ধরো।তবে পরে গেলে আমাকে দোষারোপ করতে পারবেনা।
–ওকে ডান।
নিশি খুশিতে গদগদ হয়ে উঠে বসে।
সামান্তা সাইকেল চালাচ্ছে আর নিশি দুহাত মেলে চোখ বন্ধ করে আছে।
–আপু,আমাকে ধরো নয়তো পরে যাবে।
–আরে কিচ্ছু হবেনা।

আদি নিচে নেমে দেখে সামান্তার পিছনে নিশি।
এই শুকনো পাতা আটার বস্তাকে সাইকেলে উঠিয়েছে না পরে গেলেই হয়।
নিশি দুহাত মেলে কাত হচ্ছে,এদিক সেদিন নড়ছে।এমনই কাত হলো ধপাস করে দুজনেই,,,

আদি হাত দিয়ে চোখ ঢেকে বললো,,
–ওহহ,নো।
চোখ মেলে দেখে দুটোই নিচে পড়ে আছে আর সাইকেল ওদের উপর।
আদি দৌড়ে গিয়ে সাইকেল সরালো।তারপর সামুর হাত ধরে টেনে তুলে।তখনই নিশি বলে,,
–ভাই,,আমিও পড়েছি।
–ওহহ,,সরি সরি
বলেই নিশিকে তুলে।সামু জামাকাপড় ঝাড়ছে তখনই হাতের কনুইতে টান লাগলো আর জ্বলে উঠে।হাত সামনে এনে দেখে ছিলে রক্ত বের হচ্ছে।
আদি ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,
আরে তোমার তো কেটে গেছে।
নিশি বললো,
–সামু,রক্ত বের হচ্ছে।
আদি তখন নিশির দিকে রেগে বললো,
সব তোর দোষ,তুই আটার বস্তা এই পিচ্ছি মেয়ের পিছনে উঠেছিস কেন?তারউপর ঢং করে হাত মেলে নাচছে।

–ভাইয়া তুমি আমাকে বকছো কেন?আমি কি ইচ্ছে করে সামুকে ফেলে দিয়েছি।

–তোর সেন্স নেই।এত বড় মেয়ে,,,

হয়েছে হয়েছে,,সামান্তা থামিয়ে দিলো।
আমার হাতে সামান্যই ছিলেছে মেডিসিন লাগালেই ভালো হয়ে যাবে।
আদি বললো,হ্যা চলো।
সামান্তা হাটতে গিয়েই আহ বলে হাটুতে হাত দিলো।
আদি বড়বড় চোখ করে বললো,
ওখানেও কেটেছো?
–সামু ভেরি সরি,আমার জন্য এমন হলো।
নিশি মন খারাপ করে বললো।
–বাদ দেও।চলো।
বলেই পা টেনে টেনে হাটতে লাগলো।
আদি আচমকা সামুকে কোলে তুলে নিলো।সামু বড়বড় চোখ করে আদিকে দেখছে।
–আরে মিয়া,,কি করছেন?ছাড়ুন।
নামার জন্য ছটফট করছে।
–শোন আরেকবার হাত-পা নড়াবে তো উপরে তুলে আছাড় মারবো।তখন আর উঠে দাড়ানোর অবস্থায় থাকবেনা।কোমড়,পা ভেঙে সোজা হসপিটালে।
সামান্তা আর কিছু না বলে নিশির দিকে অসহায় ভাবে চাইলো।নিশি মুচকি হেসে চোখ মারলো।

আদি লিভিং রুমে গিয়ে সার্ভেন্টকে ডেকে ফার্স্ট এইড বক্স আনালো।তারপর বক্স খোলে তুলো নিয়ে স্যাভলন নিতেই সামান্তা বললো,
আমি করে নিতে পারবো।
–তোমাকে কে জিজ্ঞেস করেছে?
বলেই আদি ওর বা হাতে ধরে ডানহাত তুলো ছুয়াতেই সামু আহ করে নড়ে উঠে।
–বাঘিনী এই সামান্য আঘাতেই কুকড়ে যাচ্ছে।
–আরে আমার জ্বলে যাচ্ছে আর আপনি মজা করছেন?
–মজা কই করলাম?আমি তো মেডিসিন লাগাচ্ছি।
বলেই মেডিসিন আবার লাগালতেই সামু আদির বাহাত জোরে চেপে ধরে ইচ্ছে করে খামচি দেয়।
আদি আহ করে উঠে।সামু হাত সরিয়ে নেয়।
নিশি বলে,
কিরে ভাইয়া,বউয়ের ব্যথায় তুই ও কি ব্যথিত?
আদি চোখ পাকিয়ে তাকাতেই নিশি চুপ হয়ে গেলো।সামান্তা মিটিমিটি হাসছে।
–হাসো হাসো,,সামান্তারানী।আমিও এর শোধ নেবো।
–পাজামা তুলো,,হাতের কাজ শেষ।
–কি??
–ওপস সরি।নিশি বাকিটা তুই করে দিস।আমি ওকে রুমে দিয়ে আসি।
বলেই আদি সামুকে কোলে তুলে নিলো।তারপর পায়ের মধ্যে চিমটি কাটলো।
সামান্তা আউচ বলতে গিয়েও থেমে গেলো নয়তো নিশিকে এর উত্তর দিতে হবে।
চোখ পাকিয়ে আদির দিকে তাকাচ্ছে।আদি মুচকি হাসছে।

আদি শাওয়ার নিয়ে আলমারি খোলছে।তখনই ওর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো সামুকে খেপানোর।আজও টকটকে হলুদ পড়বে আর সামুর আসেপাশে ঘুরে বেরাবে।সামু হলুদ কালার একদম পছন্দ করে না।

আদি নিচে গিয়ে দেখে সামান্তা টিভি দেখায় ব্যস্ত।কোনো দিকে তার হুশ নেই।আদি টিভির সামনে গিয়ে দাড়িয়ে যায় আর সামান্তার টিভি দেখায় ব্যাঘাত ঘটে।রেগে আদির দিকে তাকায় কিন্তু আদির দিকে চেয়ে ওর মেজাজ আরো বিগড়ে যায়।আজকেও হলুদ পড়েছে।
–সমস্যা কি?সামনে থেকে সরুন।
–কেন সরবো,আমার বাড়ি আমার ঘর,আমার টিভি যা ইচ্ছে করবো।
সামান্তা রিমোট রেখে এগিয়ে গেলো।
–তাই বলে টিভির সামনে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রা দেখাচ্ছেন।
–যাত্রা মানে কি হাহ?
–যাত্রা মানে কি এটাও জানেন না মি.সরিষা ক্ষেত?
–তুমি আমাকে আবারো সরিষা ক্ষেত বললে?
–আপনি যতবার হলুদ পড়বেন আমি ততবারই বলবো,,,,,মি.সরিষা ক্ষেত।
কেন আপনার কি অন্য রংয়ের জামাকাপড় নেই?
আদি মুচকি হেসে বললো,
–না নেই,,তুমি কিনে দিও।
–ইশশ,,,আমার তো ঠেকা পড়ছে?সরুন তো টিভি দেখতে দিন।

দূর থেকে আহনাফ চৌধুরী সবটা দেখছে।ওদের এভাবে কথা বলতে দেখে তিনি অবাক।আদি সামুর সাথে কথা বলছে?
নিশি পিছনে থেকে বললো,
–বাবা তুমি কি অবাক হচ্ছো?
–কেন তুই হচ্ছিস না?
–নাহহ,কারণ এসব আমি কয়েকদিন ধরেই দেখে আসছি।তোমার ছেলে সামুর পিছু পিছু ঘুরঘুর করে।
আহনাফ চৌধুরী খুশি হয়ে বললো,
তাই নাকি?

নিশি প্রতিউত্তরে ছোট্ট করে হাসি দিলো।

সামান্তা ভার্সিটির ক্লাস শেষে শপিংয়ে গেছে রাহুলের সাথে।রাহুল ওর খুব ভালো ফ্রেন্ড।আদির জন্য শপিং করবে।কিন্তু ছেলেদের পছন্দ সম্পর্কে ওর কোনো আইডিয়া নেই।আর তাছাড়া আদি হাইক্লাস ফ্যামিলির ছেলে।নিশ্চয়ই সবকিছু ব্যান্ডের পড়ে।এসব সম্পর্কে রাহুলের ভালো অভিজ্ঞতা আছে।তাই রাহুলকে নিয়ে যাচ্ছে।বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে ফিরতে দেরি হবে।
বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে শপিং করছে।আদির জন্য কিনাকাটা শেষ হলে নিজের কিছু কেনাকাটা আছে তাই গার্লস স্টলে ঢুকে সাথে রাহুলও ছিলো।আদি তখনই পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো আজ ওর বন্ধুরা ডিনারে আসবে তাই ওদের জন্য গিফট কিনতে এসেছে।সামুকে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে বলতে স্টলে ঢুকতে দেখে।আদি ওদের ফলো করে।সামুর সাথে কেউ নেই শুধু একটা ছেলে ছাড়া।একটা ছেলের সাথে শপিংয়ে এসেছে এটা দেখে রাগে ওর কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।চোখমুখ লাল বর্ন ধারণ করেছে।ও চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে ওদের দেখছে।ওর রাগ আরো বেরে যায় যখন দেখে ছেলেটা বারবার ওর গায়ে হাত দিয়ে কথা বলছে,পিঠে হাত রাখছে কিন্তু সামান্তা কিছুই বলছে না।নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা।ওর ইচ্ছে করছে ওই ছেলেকে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে সামুকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে কিন্তু সিনক্রিয়েট হবে,এতে সামুর বদনাম হবে তাই হাতের মুঠো শক্ত করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে ওখান থেকে বের হয়ে সোজা গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয় আর বিরবির করে বলে,
এর শোধ আমি বাড়িতে তুলবো।

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে