তোমার আঁচলের উঠোনে পর্ব ০২

0
1963

তোমার আঁচলের উঠোনে পর্ব ০২

ধ্রুব খানিকটা ধমকের সুরে বলে,
— কি বললাম শুনতে পাও নি? কান কি কারো কাছে রেখে এসেছো??
বিভাবরী কাঁপা গলায় উত্তর দেয়,
— জ্বি, কি.. বলে..ছিলেন??
ধ্রুব মুখে বিরক্তিকর একটা শব্দ করে ছাদের কার্নিশে আঘাত করে বলে,
— দেখো বিভাবরী, আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। বুঝলে, বুঝলে তুমি?? এক্ষুণি তুমি নিচে গিয়ে সবাই কে বলবে কথাটা..
— আমার তো কোনো সমস্যা নেই আপনাকে বিয়ে করতে। সমস্যা যেহেতু আপনার, তাই আপনিই বলেন না!
— বিভাবরী, তুমি কি চাও আমি তোমার গায়ে হাত তুলি? আমার রাগ কিন্তু এবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



দুই দুই বারের ভয়ঙ্কর রিজেকশনে বিভাবরীর মনে জেদ চেপে গেল। ছেলেটা কি জানে, বিভাবরী যেদিন একটু সেজেগুজে বাইরে যায়, সেদিন কতগুলো প্রপোজ তাকে রিজেক্ট করতে হয়? কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গুলোতে তার চোখের দিকে তাকিয়েই কতগুলো ছেলে ধড়াম করে তার প্রেমে পড়ে যায়?? আর সেই বিভাবরীকে ছেলেটা ফিরিয়ে দিচ্ছে…হাহ্! বিভাবরী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে শক্ত মুখে বলে দেয়,
— আপনি আমার সামনে থেকে যান তো। একদম সহ্য হচ্ছে না আপনাকে আমার।
ধ্রুব শান্ত গলায় জবাব দেয়,
— সিগারেট টা শেষ করে নেই। তারপর যাবো।
ধ্রুব অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই সিগারেট শেষ করলো। এতগুলো কথার মাঝে সে একবারও পেছন ফিরে বিভাবরীর দিকে তাকায়নি। শুধু যাওয়ার আগে নরম সুরে বললো,
— বিভাবরী, শুধু রূপ থাকলেই হয় না। পড়াশোনাও জানতে হয়। বিবাগী বাতাসে না উড়ে বাস্তবতা বুঝার চেষ্টা করো।
বিভাবরী প্রত্যুত্তরে কিছুই বলেনি। নিজেকে শক্ত রেখে দাঁড়িয়ে ছিল।

সেদিন ধ্রুব চলে গেলে বিভাবরী আর তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে না। ধ্রুবকে নিয়ে রূপকথার বাড়িতে পাড়ি জমায় না। তাকে ভুলার জন্য পড়াশোনায় মন দেয় সে। তার অনিহার দরুন বিয়ে কথাবার্তাও বন্ধ করে দেয় তার বাবা। তবে তাদের গল্প সেখানেই আটকে থাকেনি…
ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর দীর্ঘ ছুটিতে বিভাবরীর জন্মদিন চলে আসে। বন্ধু দের সাথে সময় কাটাতে রেস্টুরেন্টে ট্রিট দিতে গিয়ে সেখানেই ধ্রুবর দেখা মিলে। আগের মতোই বিষন্ন দৃষ্টিতে সে কফির মগে সীপ দিচ্ছে। কিছুই বদলায়নি তার। বিভাবরী দেখেও না দেখার মতো করে চলে যেতে চাইতেই পরিচিত ডাকে থমকে যায় সে। ছেলেটা তাকে এমন ভাবে ডাকলে সে গোটা দুনিয়া জলাঞ্জলি দিয়ে দিতে পারে। তার মুখে নিজের নাম শুনেই বিভাবরী নিজের নামকে ভালোবেসেছিল। ধ্রুব গম্ভীর গলায় ডাকলো,
— বিভাবরী, শুনতে পাচ্ছো তুমি??
— জ্বি..
— হটাৎ এখানে এলে যে! সবাই কে নাকি ট্রিটও দিচ্ছো। আমাকে দিবে না??
— হু! আপনার বিল আমি দিয়ে দিবো।
কথাটা শুনে ধ্রুব বিভাবরীর সামনে দাঁড়ায়। তাকে দেখে মনে হলো সে রেগে আছে। বিভাবরীর ধারণা সত্যি করে দিয়ে ধ্রুব ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,
— তোমার কি আমাকে ছ্যাঁচরা মনে হয়??
— না..না! মানে আমি..
বিভাবরীর কথা আটকে গেছে। এ্যাজ ইউজ্যুয়াল তার মাথা ঘুরতে শুরু করলো। ধ্রুব তার হাত টা যে টেনে ধরেছে, সে কি করে ঠিক থাকবে! ধ্রুব তাকে টেনে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে নিজেই খাবার অর্ডার দেয়। বিভাবরী নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। তার মনে হচ্ছে সে স্নপ্ন দেখছে…
তার ধ্যান ভাঙে নিজের পায়ের উপর অন্য কারোর পায়ের অস্তিত্বে। ধ্রুব তার পায়ের উপর নিজের পা রেখে বসে আসে। ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে দেখে সে খুব স্বাভাবিক ভাবেই খাবার খাচ্ছে। বিভাবরী বুঝতে পারছে না ধ্রুব ইচ্ছে করে করছে নাকি ভুলবশত।
— বিভাবরী, খাচ্ছো না কেন তুমি??
— খা..চ্ছি.. তো..!!
ধ্রুব বেশ আয়েশ করেই তার খাবার শেষ করলো। কিন্তু বিভাবরী ছুঁয়ে দেখার শক্তিও পায়নি। খাওয়া শেষে ধ্রুব বললো,
— তোমাকে কি গিফট দেই, বলো তো? আমি তো আর জানতাম না তুমি আমাকে এভাবে ট্রিট দেবে।
বিভাবরী ঠোঁটের কোণে হাসি এনে মনে মনে বললো,
— কিচ্ছু না। কিচ্ছু দিতে হবে না আপনাকে। আপনি মিষ্টি করে আমাকে একবার উইশ করেন তো। এতেই আমার চলবে।
ধ্রুব টিসুতে হাত মুছে তার প্যান্টের পকেটে হাত দিতেই বিভাবরী চমকে উঠে। দ্রুত বললো,
— প্লিজ প্লিজ! টাকা বের করবেন না। আমি নিতে পারবো না।
— আমি ততটাও নিচু মানসিকতার নই, বিভাবরী।
ধ্রুব পকেট থেকে সিগারেটের পেকেট বের করে বিভাবরীর দিকে বাড়িয়ে দেয়।
তারপর লম্বা ঢেকুর তুলে বলে,
— নাও বিভাবরী, তোমার বার্থডে গিফট!
বিভাবরী হতবুদ্ধি হয়ে তাকায় ধ্রুবর দিকে। ছেলেটা কি সত্যি সত্যিই তাকে সিগারেট গিফট করছে?? বিভাবরী কিছু বলতে যাবে তখনি একটা মেয়ে সেখানে উপস্থিত হয়। ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
— চলো ধ্রুব, যাওয়া যাক। আ’ম ডান!
ধ্রুবও প্রত্যুত্তরে মুচকি হেসে সিগারেট প্যাক টা তার হাতে দিয়ে বলে,
— আসছি বিভাবরী! খুব ভালো ট্রিট করেছো। থ্যাংক্স ফর দেট!
ধ্রুব এক মুহুর্তও দেরি না করে মেয়েটির সাথে চলে যায়। আর বিভাবরী হা করে তাদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। না চাওয়া সত্ত্বেও গড়গড় করে চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। ছেলেটা এত নিষ্ঠুর কেন?? বিভাবরী সিগারেটের পেকেটটা মুচড়ে ধরে হেঁচকি তুলে ফেলেছে…

চলবে…

#তোমার_আঁচলের_উঠোনে
আবরিয়ার জান্নাত

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে