তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-০৯

0
1909

#তোমাকে আমার প্রয়োজন ??
#মেঘ পরী??।

??পর্ব-৯??
.ঙঢ
?
.
.
তিথি খুশিতে গদগদ হয়ে নিজের জামাকাপড় গোছাতে লাগলো।তিথি এ বাড়িতে এসেছিল খালি হাতে,,আর এখন এক ট্রয়লি জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে নিজের সাথে। নিলয়ের দেওয়া চারটে বড় বড় টেডি,,জামা কাপড়, তিথির পছন্দের খাবার।কাল রাতে নিলয়কে বলে মামির জন্যে একটা সয়েটার ও আনিয়ে নিয়েছিল,,,যাতে কেউ সন্দেহ না করে। আর মিশু কেও ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে,,,যে কেউ তাকে ফোন করলে সে যেন বলে যে তারা আজই বাড়ি ফিরবে। এরমধ্যে দু-একবার মামি মিতুকে ফোন করে তার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়েছে,,মিতু প্রত্যেকবার বিভিন্ন ধরনের অজুহাত দিয়ে তা কাটিয়ে দিয়েছে। আজ তিথি তার বাড়ি যাবে একথা ভেবে তিথি খুব খুশি হচ্ছে,,,,তার সাথে একটু মন খারাপও হচ্ছে যতই হোক এতদিন সে এ বাড়িতে ছিল। তিথি এবাড়ির সবাইকে খুব মিস করবে,,,হয়তো কখনো কোন এক সময় নিজের মনের অজান্তেই নিলয়কেও মিস করবে,,,লোকটা যতই লুচু,,রাগী,,বদমেজাজি লোক হোক না কেন,,,সে তো এতদিন ‌তাকে নিজ দায়িত্বে এ বাড়িতে রেখেছিল,,,যখন যা চেয়েছে তখন তাই দিয়েছে। অন্য কিডন্যাপার হলেও কী তাকে নিলয়ের মতোন এভাবেই যত্ন
করতো,,হয়তো হ্যাঁ আবার হয়তো বা না।এসব কথা ভাবতে ভাবতে তিথি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

কিছুক্ষণ পর নিলয় তিথির রুমে এসে দেখে তিথি নিজের জিনিসপত্র গোছাচ্ছে।।নিলয় তিথির কাছে গিয়ে তিথিকে জিজ্ঞেস করল-;

-: তোমার সবকিছু গোছানো হয়ে গিয়েছে,, তুমি ‌কী রেডি।। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা বেরোবো।

তিথি নিলয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলল-;

-; হ্যাঁ আমার সব রেডি হয়ে গেছে।।

নিলয় কিছুক্ষণ তিথির দিকে তাকিয়ে,, কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল।তারপর তিথি কে বলল-;

-: তুমি নিচে এসো আমি গাড়িতে ওয়েট করছি।

-:জি।।

তিথি আরো একবার রুমের সবকিছু‌তে নিজের হাতের স্পর্শ দিয়ে দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে গেল।। যাওয়ার আগে শেফালী,, রামু চাচা,,রাফিক চাচা(মালি) সবাইকে বিদায় জানিয়ে এলো।।তিথির যাওয়াতে সবারই মন খারাপ,,, এতদিন তিথি কতইনা দুষ্টুমি করেছে তাদের সাথে,,,ঝগড়া করেছে,,হেসেছে,,খেলেছে।।আর আজ তিথি তাদের কাছ থেকে চলে যাচ্ছে,, আবার আসবে কি কেউ জানে না।। প্রত্যেকেরই চোখ ছল ছল করছে,, এমনকি তিথির নিজেরও।আর নিলয় তো অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছে। তিথি যাবার সময় রামু চাচার গাল নিজের এক হাত দিয়ে চেপে ধরে বলল-;

-: এইযে বুড়া আমার ড্রেসতো ভুলভাল এনেছিলে ঠিক আছে কিন্তু অন্যকারোর ড্রেস আবার এরকম ভুল করে আনো না যেন।সবাই কিন্তু আমার মত ভালো হবে না।।(কিছুটা ভাব নিয়ে)

তারপর শেফালী দিকে তাকিয়ে বলল-;

-: এইযে ভিতুর ডিব্বা,, আমাকে তো ফাঁসিয়ে দিয়েছিলে তোমার স্যারের কাছে,,,চাকরি হারানোর ভয়েতে।আমি যদি কোনোদিন শুনেছি তুমি অন্য কারো সাথেও এমন করেছ,, তাহলে তোমার খবর করে ছেড়ে দিব বলে দিলাম।

তারপর রফিক চাচার দিকে তাকিয়ে নিজের দুই হাতে নিজের কান ধরে বলল-;

-:সরি!!এখানে সব থেকে বেশি আমি তোমাকেই জালিয়েছি,,, তুমি যতবার ফুল তুলতে নিষেধ করেছ আমি ততোবারই ফুল তুলেছি। ফুল তুলতে নিষেধ করেছিলে বলে,,তোমার জামার ভিতর লাল পিঁপড়া ও ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম।।

কথাগুলো মজার ছলে তিথি সবাইকে বলছিল,,,যাতে সবাই একটু হাসে।কিন্তু হাসার পরিবর্তে সবাইদের চোখের কোন দিয়ে জল গড়িয়ে পরল। তিথি নিজেকেও সামলে নিল,,, তারপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে গেল। গাড়িতে উঠে নিলয়ের দিকে তাকাতেই তিথি ঘাবড়ে গেলো,,, নিলয়ের চোখ লাল টকটকে হয়ে আছে,,, ফর্সা চেহারায় রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মনের বেদনাকে লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা। কিন্তু তিথির মতো গাধী পৃথিবীতে মনে হয় অনলি ওয়ান পিস ই তৈরি হয়েছে,,, নিলয় কে দেখে তিথি জিজ্ঞাসা করল-;

-: আচ্ছা আপনার কি রোদে এলার্জি আছে।না মানে আপনার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে,,, তাই আর কি।।আপনি সানসস্ক্রিম ইউস করতে পারেন,,, তাহলে আর আপনার কোন প্রবলেম হবেনা।।

তিথিকে দেখে নিলয়ের মনে হচ্ছে এক্ষুনি তাকে গুনে গুনে তিন-চারটে থাপ্পর মারতে,,,তার বিরহে নিলয়ের যায় যায় অবস্থা,, অনেক কষ্ট নিজেকে সামলাচ্ছে,,,,আর তার উপর তিথির এমন জোকার মার্কা উদ্ভট প্রশ্ন। এখন নিলয়ের নিজের কপাল নিজেরই চাপড়াতে ইচ্ছে করছে,,,,কেন সে এমন পিচ্চি মেয়েকেই ভালোবাসতে গেল,,দুনিয়াতে কী মেয়ের অভাব পড়ে ছিল।।নিলয় তিথিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে,,,ড্রাইভ করাতে কনসেনট্রেট করল।

আধাঘন্টার মধ্যে তিথিদের বাড়ির অনেক টা সামনে তারা পৌঁছে গেল,,,আরেকটু সামনে যেতেই তিথি চিৎকার দিয়ে উঠলো,,, নিলয় সঙ্গে সঙ্গে জোরে ব্রেক মারলো,,, তারপর তিথির দিকে তাকাতেই তিথি বলল-;

-: আসলে বাড়ির লোক জানে আমি মিতুর সাথে ঘুরতে গিয়েছি আমি যদি বাড়িতে যান তাহলে বাড়ির লোক সব জেনে যাবে।।তাই আপনি আমাকে এখানেই নামিয়ে দিন আমি একা চলে যেতে পারবো,,,,এইতো সামনেই আমার বাড়ি।।

-:তার কোন প্রয়োজন নেই।।আমি তোমাকে তোমার বাড়িতেই পৌঁছে দিয়ে আসবো।।আর সব সত্যি কথা ও তাদেরকে জানিয়ে আসবো,,,,সত্যি কথাটা তাদের জানা প্রয়োজন।।

-: প্লীজ এমন করবেন না বাড়িতে জানলে সবাই অনেক কষ্ট পাবে।।

নিলয় কিছুক্ষণ তিথির দিকে তাকিয়ে থেকে,,বলল-;

-: ওকে বাট আমি তোমার পিছু পিছু তোমার বাড়ি পর্যন্ত যাবো,,,,তুমি তোমার বাড়িতে ঢুকে গেলে তবেই আমি ব্যাক করব,,,রাজী।।

তিথি কিছু একটা ভেবে বলল-;

-:ওকে ঠিক আছে,,,কিন্তু কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে আসবেন যাতে কেউ সন্দেহ না করে,,,ওকে।।

-:হুম।

-:তাহলে আসছি আমি,,,,আপনি আপনার খেয়াল রাখবেন ঠিক আছে টাটা।

বলে গাড়ি থেকে বেরুতে নিলেই,,, তিথি নিজের হাতে একটা টান অনুভব করলো।পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখলো নিলয় তার এক হাত টেনে ধরে আছে,,,আর মাথাটা ড্রাইভিং সিটের উপর রেখে,,,,একহাত কপালের উপর রেখে,,,,চোখ বন্ধ করে আছে।। কিছুক্ষণ পর নিলয় চোখ খুলে,,,তিথিকে একটানে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। তারপর নিজের বাম হাতে তিথির কোমরের সাথে পেঁচিয়ে নিল আর ডান হাতে তিথির সামনে থাকা ছোট ছোট চুলগুলোকে কানের পিছনে গুজে দিল।। তারপর তিথির গালে হাতে রেখে শান্ত কণ্ঠে বলতে লাগলো-;

-:তিথু পাখী নিজের খেয়াল রাখবে,,, সময়মতো ডিনার করবে আর খবরদার রাতে উল্টোপাল্টা জিনিস খাবে না ডিনার না করে ঠিক আছে। ভালো করে পড়াশোনা করবে,,,দুষ্টুমি করবে তবে কম,,ঠিক আছে।আচ্ছা তিথু পাখী তোমার আমার কথা মনে পড়বে না,,, আমার জন্য কষ্ট হবে না।যানো তিথু পাখী আমার না এই জায়গাটাই আজ প্রচন্ড ব্যাথা করছে(নিজের বুকের বাম তিথির হাত চেপে ধরে),,,মনে হচ্ছে আমার কোন প্রিয় জিনিস আমার কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছে।তুমি এতো পিচ্চি কেন তিথু পাখী,,,একটুও কী বুঝবে না আমার কষ্টটা।

কথাগুলো বলতে বলতে নিলয় গলা বারবার কেঁপে উঠছিল।তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার তিথি কে বলল-;

-:কিন্তু তুমি যদি ভেবে থাকো যে তুমি আজ বাড়ি যাচ্ছো বলে আমার কাছ থেকে সারা জীবনের মতো মুক্তি পেয়ে যাচ্ছ,,,তা তোমার সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।।দিনের কোনো এক মুহূর্তে তোমার ছায়াও তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে,,কিন্তু নিলয় চৌধুরী দিনের ২৪ ঘন্টাই তোমার পাশে থাকবে।তুমি কোথায় যাচ্ছ,,,কি করছো,,,কার সাথে মিশছো,, সব খবর আমার কাছে টাইমলি চলে আসবে। সো বি কেয়ারফুল তিথু পাখী।ছেলে বন্ধুদের সাথে প্রয়োজন ছাড়া বেশি কথা বলবে না,, আর নিজের খেয়াল রাখবে ঠিক আছে।।

নিলয়ের এমন কথা শুনে তিথি ফ্যাল ফ্যাল চোখে নিলয় এর দিকে তাকিয়ে আছে। আর নিলয় তো তার মায়াপরীকে দেখতে ব্যস্ত,,, আবার কবে দেখা পাবে তার কোনো ঠিক নেই। আর কিছু না ভেবে নিলয় তিথির কপালে গভীর উষ্ণ ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে তিথিকে শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরল নিজের সাথে।।কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে,,,তিথির গালে নিজের হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল-;

-: ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াট আই টেল???

-:জি…জি।।

তারপর তিথি গাড়ি থেকে বেরিয়ে,,, নিজের বাসার দিকে হাঁটা দিল,,,,আর নিলয় তিথির পিছু পিছু তিথির বাসা পর্যন্ত তিথিকে এগিয়ে দিল,, আর সাথে তিথির বাসাটাও চিনে নিল।। তারপর তিথি বাসায় ঢুকে গেলে,,,নিলয় আবার নিজের গাড়িতে বসে নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।।
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে