তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-০২

0
2820

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-২??

?

নিলয় কিছু বলতে যাবে কি তার আগে নিলয়ের ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। একবার তিথির দিকে তাকিয়ে ফোনটা রিসিভ করল। ফোনের অপর পাশ থেকে রাফি বলল,-

-: স্যার মিনিস্টার এর মেয়ে বলছে তার নাকি খুব গরম লাগছে এখানে নাকি এসির ব্যবস্থা করতে হবে।নইলে সে খাবে না।

-: তাই নাকি। (কিছুটা বাঁকা হেসে নিলয় বলল)
আজকে রাতে তার জন্য যে খাবারের ব্যবস্থা করেছিস সেটা বরং তোরা খেয়ে নে। তাকে দিতে হবে না।একদিন না খেয়ে থাক তাহলেই বুঝবে কত ধানে কত চাল।

বলে ফোনটা রেখে দিল নিলয়। তার পর তিথির দিকে তাকিয়ে বলল-

-: এই মেয়ে শোনো ভালো করে আমার কথা, এখানে থাকতে হলে চুপচাপ থাকবে,আমার কথা শুনবে। নইলে তোমার অবস্থাও মিনিস্টারের মেয়ের মত হবে। ইস দ্যাট ক্লিয়ার।(কিছুটা রেগে নিলয় বলল)

-: আরে রাগ তোর ক্লিয়ার ফ্লিয়ার। চুপচাপ খেতে দে।আমার খুব খিদে পেয়েছে।না খেতে দিতে পারলে না তোর যা অবস্থা করবো তুই নিজেও ভাবতে পারবি না।(কিছুটা রাগের অভিনয় করে তিথি বলল)

-: এই মেয়ে কখন থেকে তুমি আমাকে তুই তুই করে বলে যাচ্ছ। মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেই ভদ্রতাটুকু তুমি শেখোনি। বাড়ির লোক তোমাকে কি শিখিয়েছে।(রেগে নিলয় বলল)

-:ভালো মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা বাড়ির লোক শিখিয়েছে। কিন্তু একজন কিডনাপারের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা বাড়ির লোক আমাকে শেখায় নি। ঠিক আছে বয়স কতো আগে শুনি।

-: মানে আমার বয়স জেনে তুমি কি করবে। (কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে নিলয় বলল)

-:আরে গাধু আগে জেনে নেব না তুই আমার থেকে কত বড়। তারপরে তো তোকে তুমি করে বলবো। শোন যদি তুই আমার বয়সের থেকে তিন বছরের বড় হস, তাহলে তোকে আমি তুই করেই বলব।আর যদি তার থেকেও বেশি বড় হস তাহলে আমি তোকে তুমি করেই বলবো। এবার খুশি।

নিলয় তিথির কথা শুনে কি রিয়াক্ট করবে কিছু ভেবেই পাচ্ছে না।তাই কিছুক্ষণ তিথির দিকে তাকালো তারপরে বলল-

-: তুমি আমার বয়স যেনে তারপরে আমাকে তুমি করে বলবে।(ভ্যাবলাকান্তর মত তাকিয়ে থাকলো নিলয় তিথির দিকে)

-: উফ্ পোলা তো দেখছি বকরবকর করেই যাচ্ছে। তোর বয়স বলতে ইচ্ছা করলে বল,নইলে তুই থাক।আমার খুব খিদে পাচ্ছে খাবার ব্যবস্থা জলদি কর।

-: এই মেয়ে চুপচাপ বসে থাকো, আমি এক্ষুনি খাবার ব্যবস্থা করছি। আর আমার বয়স ২৬। তোমার থেকে আমি গুনে গুনে ৮-৯ বছরের বড় তো হবই। তুমি আমাকে তুমি করেই ডাকবে।

-:??? এত বড় আপনি। আমার তো মোটে ১৭ বছর বয়স।

-:?????

-: আজ থেকে আপনাকে আপনি করেই ডাকতে হবে। এত বড় একজন মানুষকে তুই করে বা তুমি করে ডাকা উচিত নয়।

-: অতটাও বেশি বয়স নয় আমার।???

এই বলে নিলয় আবার ফোন হাতে নিল এবং একজনকে ফোন করে বলল যে-

-: শোনো গেস্টরুমে ডিনারটা পাঠিয়ে দাও। হারি আপ।

এই বলে নিলয় নিজের রুমে চলে গেল, গেস্ট রুমের দরজাটা বন্ধ করে। তারপর সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে গেস্ট রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেল। গিয়ে দেখল সার্ভেন্ট প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে দরজার পাশে।নিলয় সার্ভেন্টের হাত থেকে প্লেটটা নিল এবং দরজাটা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো। তারপর তিথির সামনে খাবারটা রেখে,তিথি কে বলল-

-: নাও খেয়ে নাও।

-: এই আপনি কোন স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন বলুনতো।

-: কেন (কিছুটা অবাক হয়ে নিলয় উত্তর দিল)

-: এত বড় ধামসা ছেলে হয়েও এইটুকুনি কমন সেন্স নেই যে হাত-পা,চোখের বাঁধন না খুললে খাবার খাবে কি করে মানুষ। আর তাছাড়া হ্যান্ডুওয়াশ দিয়ে হাত না ধুয়ে খাবার খেতে নেই আপনি জানেন না। এই আপনার মতলব কি বলুন তো আপনি কি চান আমার করোনাভাইরাস হোক।

-: উফ কি মেয়ে রে বাবা, আমাকে একদিনেই পাগল করে ছাড়লো।এই এই মেয়ে চুপ করে থাকতে পারো না ।আমি খুলে দিচ্ছি তোমার হাতের বাঁধন পায়ের বাঁধন। দয়া করে একটু চুপ করো যত্তসব ভালো লাগেনা।(দাঁতে দাঁত চেপে বললো নিলয় )এইসব লোকেদের কাজে রাখতে আছে নাকি, ভুলভাল মানুষকে তুলে আনে আর যত প্যারা আমাকে পোয়াতে হয় যত্তসব।

এই বলে নিলয় তিথির হাতের বাঁধন এবং পায়ের বাধন খুলে দিল।সবার শেষে চোখের বাঁধন খুলে তিথির দিকে তাকিয়ে নিলয় হাঁ হয়ে গেল এমন ও মেয়ে হয়। নিলয় তো খেয়ালই করিনি এতক্ষন যে তার সামনে জলজ্যান্ত একটা মায়াপরী বসে আছে। হরিণীর মতো কাজলনয়না দুটি চোখ,আর্চ করা ভ্রু যেন চোখের উজ্জ্বলতা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। তার গভীর চোখের রহস্য ভেদ করা যেন সাধারন মানুষের কাম্য নয়।দুধে আলতা গায়ের রং এ যেন উপচে পড়ছে তার সৌন্দর্য।আর ডান গালে, ঠোঁটের নীচে মাঝ বরাবর জায়গার আর গলার নীচের তিল টা যেন তার সৌন্দর্যকে আরও একধাপ উপরে নিয়ে গিয়েছে। দুদিকে বাধা ঘন কালো কেশরাশি, বসা অবস্থাতেই কোমর ছুঁয়ে যাচ্ছে। উফ এ কোন রাজ্যের মায়াপরীকে আমি দেখছি,আমি যে হারিয়ে যাচ্ছি তার এই মায়াময় চেহারায়। চোখেমুখে এখনো তার বাচ্চা-বাচ্চা ছাপটা রয়েই গেছে। কতই বা হবে বয়স তার ১৬ কিংবা ১৭। আমি যে প্রথম দেখাতেই তার মায়ার জালে আটকে পড়ছি। যে মায়া থেকে নিস্তার পাওয়া অতটাও সহজ হবে বলে মনে হচ্ছে না। নিলয় এক ধ্যানে তিথির দিকে তাকিয়ে এসব কথা ভেবছিল। তিথির ডাকে তার ধ্যান ভাঙ্গল।

-: আর ও মশাই আপনি কোথায় হারিয়ে গেলেন। আমার মুখে কি সিনেমা দেখতে পাচ্ছেন যে, এরকম ক্যাবলাকান্তের মত তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। জানি আমি দেখতে সুন্দর সবাই তাই বলে আমাকে।(কিছুটা ভাব নিয়ে তিথি বলল)

-: কি তুমি আর সুন্দর।হাউ ফানি নিজের রূপ টা নিয়ে একবার আয়নায় ভালো করে তাকাও। আর কি বললা তুমি আমি ক্যাবলাকান্ত, ওকে নো খাওয়া-দাওয়া ঘুমাও তুমি শুধু পানি খেয়ে যত্তসব।

এই বলে নিলয় উঠে দাঁড়িয়ে, খাবারের প্লেটটা হাতে নিতে যাবে কি,তখনই তিথি খাবারে প্লেটটা ছো মেরে নিয়ে নিল। আর বলল-

-: সরি সরি আর হবে না।বিশ্বাস করুন পেটের মধ্যে অলরেডি চারবার ইঁদুর দৌড় হয়ে গেছে। আমি আর চাইনা ইঁদুর দৌড়াক আমার পেটে। আমার খুব খিদে পেয়েছে। ওয়াশরুম টা কোথায় একটু বলবেন প্লিজ।

নিলয় হাতের ইশারায় ওয়াশরুম টা দেখিয়ে দিল তারপর তিথি ঘরের সাথে লাগোয়া ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেল।তারপর ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলো আর নিলয় সোফায় বসে তিথিকে দেখতে লাগল। আর মনে মনে ভাবতে লাগল কি আছে তোমার মধ্যে যে একদিনেই এক মুহুর্তের মধ্যে নিলয় চৌধুরীকে বশ করে নিলে। এই কথাগুলো ভেবেই নিলয় নিজের মনে হেসে ফেলল। যে নিলয়ের মনে অনুভূতির ছিটাফুটোও ছিল না, সেই নিলয় কে এই মেয়ে তার মায়ার জালে ফেলে দিল,তাও আবার একদিনেই, ভাবা যায়।যাকে বলে #love at first sight। তারপর তিথির খাবা হলে প্লেটটা হাতে নিয়ে নিলয় সবেমাত্র বেরোতে যাবে কি,তিথি পিছন থেকে নিলয় কে ডাক দিল।

-: শুনুন একটু।

-:what!! দেখো তোমার ফালতু কথা শোনার জন্য এখন আমার সময় নেই। আই এম টু টায়ার্ড সো লেটস স্লিপ।

-: প্লিজ দুই মিনিট একটু শুনুন আমার কথা।

-: জলদি বলো। ইউ হ্যাভ অনলি ফাইভ মিনিটস।

-: বলছি কি আপনার গুন্ডা গুলোতে এক নম্বরে বলদ মার্কা,ভুল করে একটা ভালো বাচ্চা মেয়েকে তুলে এনেছে।তার ওপর সারা দিন খেতে দেয়নি, এই রাত দুপুরে খেতে দিলেন আপনি।বলছি কি আমার বাড়ির লোকতো টেনসন করছে আমাকে নিয়ে তাইনা।আমাকে একটু বাড়িতে পৌঁছে দেন না দয়া করে।প্রমিস করছি আমি কাউকে বলবো না যে আপনারা কিডনাপার নামের কলঙ্ক একটা কিডনাপ ও আপনারা ঠিক মতো করতে পারেন না। আর যেন কেউ আপনাদের ঘুষ দিয়ে কিডন্যাপ করানোর জন্য ফালতু টাকা নষ্ট না করে। প্লিজ প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।(এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলল তিথি)

-: জাস্ট শাট আপ।(প্রচন্ড রেগে চিল্লিয়ে বলল নিলয়) নো মোর ওয়ার্ডস।কোথাও যাওয়া হবেনা তোমার।যতক্ষণ না আমার কাজ সাকসেসফুল হচ্ছে।ডু ই হিয়ার হোয়াট আই সে।

-:হ্যাঁ…হ্যাঁ শুনেছি শুনেছি সব শুনেছি। ঠিক আছে আমি এখানেই থাকবো,চিন্তা নেই আপনার।

প্রচন্ড ভয়ে তিথি বললো।আসলে তিথি বুঝতে পারিনি নিলয় এতটা রেগে যাবে।চোখ বাঁধা অবস্থায় যখন নিলয়ের কথা শুনছিল তখন অতটাও ভয় লাগেনি তিথির।কিন্তু সামনা সামনি নিলয়ের রক্তিম লাল চোখ দেখে মুহূর্তেই বীরনারীর হাওয়া ফুস হয়ে গেছে। নিলয় আর কিছু না বলে রুমের দরজা বাইরে থেকে লক করে নিজের রুমে চলে গেল। এইদিকে তিথি কি করবে ভেবে না পেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল বেডের উপর। সকালবেলা নিলয় ঘুম থেকে উঠে অবাক হয়ে গেল!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে