তোমাকেই_ভালোবাসি পর্বঃ_০৬

0
1998

#তোমাকেই_ভালোবাসি❤
#পর্বঃ_০৬❤
#Writer_Safan_Aara❤

-“আউউউউউউউউউউচ!”

অননের চিৎকারে সবাই ঘুড়ে তাকালো ওর দিকে। নিচ থেকে পা তুলে চেয়ারের উপর রাখলো সে। কারো আঁচড়ের দাগ স্পষ্ট তার পায়ে। কিন্তু কোথা থেকে লাগলো দাগটা! কে দিলো আঁচড়টা! সবাই একসাথে তাকালো টমির দিকে। টমি যেন নিজের অসহায় দৃষ্টির মাধ্যমে সবাইকে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানান দিচ্ছে। সবার ভাবনায় ছেদ পড়লো অননের ডাকে।

-“আরে আরে! ওর দিতে তাকাচ্ছো কেন তোমরা? ও তো কুকুর! বেড়াল না যে খামচি কাটবে।”

সবাই ভাবলো”তাই তো”। কিন্তু কাজটা কার হতে পারে।অদিতি নিজের কারসাজি লুকাতে সবাইকে খাবার খাওয়ার জন্য তাগাদা দিতে লাগলো।

-“আররে! আন্টি, আংকেল। কি নিয়ে ভাবছেন এতো বলেন তো! ছোট্ট একটা আঁচড়-ই তো।এই ভাইয়াটা তো আর এতোটাও উইক না যে এখন বসে বসে কান্নাকাটি করবে। তাই না? এটা কোনো ব্যাথা হলো!”

সবাই অদিতির সাথে সহমত পোষণ করলো।খাবার খেতে শুরু করলো আবার।অদিতি যেন হাফ ছেড়ে বাচলো।কিন্তু সহমত পোষণ করতে পারলো না অনন। খাবার আধটুকু রেখেই উঠে হনহনিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে।সেদিকে কেউ খুব একটা খেয়াল না দিলেও কাজটা মিসেস সালেহার খুব একটা ভালো লাগলো না।তার ছেলে যাই হয়ে যাক কেন কখনই খাবার আধটুকু রেখে উঠে যায় না। আজ কি হলো তার। শুধুই কি পায়ে ব্যাথা পেয়েছে বলে নাকি অন্যকিছু! আনমনে এসব ভাবছিলো সে। মিসেস রোকেয়ার ডাকে স্বাভাবিক হলো সে। তাদের মধ্যে চলতে থাকলো নিজস্ব কথোপকথন। আর ওদিকে অদিতি নীড়কে খাইয়ে দিচ্ছিলো। মুখে লোকমা তুলে দিতেই আবারও পায়ে সেই খোচা অনুভব করলো। এবার এক প্রকার ভয় ই পেয়ে গেলো সে। কিছুক্ষণ লাগাতার খোচাটা লাগছিলো পায়ে। পরে পায়ের দিকে তাকালো সে। দেখলো নীড় তার ছোট্ট পা দুটি নাড়িয়ে যাচ্ছে। আর তা এসে লাগছে অদিতির পায়ে।

-“দ্যাটস মিন, কাজটা তার নয় নীড়ের ছিলো। ইসসস! শুধু শুধু আমি ছেলেটাকে এভাবে ব্যাথা দিলাম।”

বিরবির করে বললো অদিতি।

-“কিছু বললে আপু?”

-“কককই! না তো!”

নীড় কে খাইয়ে দিয়ে অদিতিও খেয়ে নিলো। খুব বেশি অপরাধী অপরাধী টাইপ ফিল হচ্ছে তার। কাজ টা সে ঠিক করে নি। তাই ভাবলো যখনই দেখা হবে সরি বলে দেবে। খাওয়া শেষ করে সবাই কথা-বার্তা বলে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।কিন্তু পুরোটা সময় অনন নিজের রুম থেকে বেরই হলো না। ওদিকে অদিতি মনে শান্তিই পাচ্ছে না। শুধু শুধু বেচারা ছেলেটাকে এতো ব্যাথা দিলো।

সকালে আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছিলো অদিতি। এমন সময় আবার তার কানে বেজে উঠলো অনননের সেই চিৎকার “আউউউউউউউউচ”। অদিতির খুব খারাপ লাগছিলো। সরি বলতে ইচ্ছে হচ্ছে তার খুব। যেন সরি বললেই তার সব অশান্তি দূর হয়ে যাবে।সারারাত তেমন ভালো ঘুম হয় নি অদিতির। রেডি হয়ে বের হলো অদিতি।
ওদিকে অননও রেডি হয়ে বেড়িয়েছে। লিফটে উঠেছে সে। ২ ফ্লোর নিচে নামতেই লিফটের দড়জা খুলে গেলো।অদিতির জন্য। লিফটের দড়জা খুলতেই অদিতি কেউ আছে কি না তা না দেখেই উঠে গেলো। ফার্স্ট ফ্লোরের বাটনে ক্লিক করে পেছনে তাকাতেই চমকে উঠলো সে।

-” আপনি!”

-“আপনি!”

-“হ্যা আমি! এমন ভাবে দেখছেন যেন ভুত দেখেছেন!”

বলেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো অনন।

-“না মানে এমনি।”

বলে অন্যদিকে ঘুরে দাড়ালো অদিতি।

-“এখনই সরিটা বলে দেই? না কি পরে বলবো? না না! এখনই বলে দেই। যদি মাইন্ড করে! আরে ধুর! এখানে মাইন্ড করার কি আছে। বলেই দেই।”

কথাগুলো মনে মনে আওড়াতে আওড়াতে লিফটের দড়জা খুলে গেলো। অদিতিকে একপাশে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অনন চুপচাপ বেরিয়ে গেলো। ভাবছে”মেয়েটা বোধহয় পাগলই হবে। মানসিক রোগী কোথাকার! এখনো দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি যেন ভাবছে লিফটে। বিএফ বকেছে মনে হয়। আর না হয় প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে তার কথা ভাবছে। যাই করুক।আমার কি। আমি যাই বাইক নিয়ে আমার গন্তব্যে।”

আর অদিতি অননকে চলে যেতে দেখে নিজেও বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলো বাইরে। আজ কোনো রিকশাই পাচ্ছে না সে। অথচ এতোদিন রিকশার অভাব ছিলো না রাস্তায়। হেটেই যেতো। কিন্তু আজ সূর্য মামা একটু বেশিই রেগে আছেন। যার দরুন তাপও দিচ্ছেন বেশি। তাই হেটে গেলে ওকে হয়তো আর মাঝপথ থেকে খুজেই পাওয়া যাবে না।এদিক ওদিকে তাকাতে তাকাতে অননকে দেখতে পেলো সে। দৌড়ে চলে গেলো ওর কাছে।

-“একটা কথা বলার ছিলো?”

হাপাতে হাপাতে বললো অদিতি। অদিতির দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো অনন।

-“আমাকে?”

-“তো আর কাকে?”

-“আচ্ছা বলেন। তবে হ্যা, লিফট চাইলে দিতে পারবো না। এই সিটটা শুধুমাত্র আমার গার্লফ্রেন্ডের জন্য বরাদ্দ। ”

-“এই যে থামেন থামেন। আপনার আজাইরা বকর-বকর শুনতে আসি নাই আমি। আসলে, আই ওয়ান্টেড টু সেই দ্যাট, আই’ম সরি।”

-“কি! কি বললেন আরেকবার বলেন তো।”

-“আই’ম সরি”

-“ইউ…… আর…….. সরি! বাট হোয়াই?

-“কাল আপনার পায়ে আঁচড় টা আমিই দিয়েছিলাম! ”

ভয়ে ভয়ে বললো অদিতি। তবে সরি বলে মনকে একটু সান্ত্বনা দিতে পেরেছে সে।

-“হোয়াট! কিন্তু কেনো? আমি কি করেছিলাম।”

-“আসলে কাল নীড় আমার পায়ে বারবার পা লাগাচ্ছিলো। আমার বরাবরে তো আপনি বসেছিলেন। আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো কাজটা বারবার করছেন।তাই ……….।”

আর কিছু বলতে দিলো না অনন।

-“তাই আপনি আপনার পায়ের বড় বড় নখ দিয়ে আমার পায়ে এভাবে ব্যাথা দিয়ে দিলেন। বাহ! কি কমন সেন্স! পায়ের নখগুলোও তো শাকচুন্নির থেকে কম না।”

-“কিহ! আপনি আমাকে শাকচুন্নির সাথে তুলনা করলেন!”

-” আরে আরে! সরি সরি। বলতে একটু ভুল হয়েছে। আপনি শুধু শাকচুন্নিই নন পাশাপাশি পেত্নীও।”

-“হোয়াট। দাড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা।”

বলেই অননকে ধরে মারতে শুরু করলো অদিতি।

-“শুধু কি তুই-ই মজা দেখাতে জানিস।আমি কি কম নাকি?”

বলে অনন ও শুরু করলো। দুজনে দুজনের চুল ধরে টানতে টানতে একসময় দুজনেই ক্লান্ত হয়ে একে অপরকে ছেড়ে দেয়।নিচে বসে হাপাতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর দুজনের দিকে তাকিয়ে নিজেদের অবস্থা দেখে দুজনেই একসাথে হেসে দেয়।

-“আজ ছেড়ে দিলাম। এর পর আবার আমার সাথে পাংগা লাগতে আসলে চুল একটাও রাখবো না তোর।”

-“আমার চুলের চিন্তা না করে নিজের চুলের চিন্তা কর। যেই ছোট্ট ছোট্ট চুল তোর!”

-“তোর গুলো তো ইয়া বড় বড়। তাই তো তুই একটা পেত্নী!”

-“কিহ! তুই আমাকে আবারও পেত্নী বললি। তোর এতো বড় সাহস! ”

বলেই অদিতি ছুটলো অননকে ধরতে। কিন্তু অননকে আর পায় কে।অননও দিয়েছে ভো ছুট। সিড়ি দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে উঠে যাচ্ছে অনন। আর তার পিছনে অদিতি। দৌড়াতে দৌড়াতে কখন যে ওরা ৫ম ফ্লোরে উঠে গেছে তা খেয়ালই করে নি অদিতি। অনন ফ্ল্যাটের দড়জা খুলে ভেতরে ঢুকে দড়জা লাগিয়ে দড়জাতেই হেলান দিয়ে দাড়িয়ে হাপাতে লাগলো।আর ওদিকে অদিতি ওখানে দাড়িয়ে অননকে হাজারটা গালি উপহার দিয়ে আবার চলে গেলো নিজের ফ্ল্যাটের দিকে।

-“কি রে! এভাবে হাপাচ্ছিস কেন অনন?”

-“একটা শাকচুন্নি কম পেত্নী পেছনে পড়েছিলো মা।”

-“কি আবল-তাবল বকছিস। আর নিজের কি অবস্থা করেছিস! কি করছিলি এতোক্ষণ বলতো!”

-“যুদ্ধ। পেত্নীর সাথে যুদ্ধ।”

-“যুদ্ধ…..! পেত্নীর সাথে!”

অবাক হয়ে বললেন মিসেস সালেহা।

চলবে………….❤।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে