তোমাকেই_ভালোবাসি পর্বঃ_০৪

0
2279

#তোমাকেই_ভালোবাসি❤
#পর্বঃ_০৪❤
#Writer_Safan_Aara❤

অননের চিৎকারে এক প্রকার কেপে উঠলো রকি। অননের বুক থেকে উঠে দাড়ালো অদিতি। পিছনে ঘুরে রকিকে ঠাস করে চড় লাগিয়ে দিলো সে।কথা এখানে থেমে থাকলেই ভালো হতো।কিন্তু তা কি আর হয়! কথা পৌছে গেলো প্রিন্সিপাল পর্যন্ত। রকিকে চড় দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ডাক পরে গেলো তাদের। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনজনই হাজির হলো প্রিন্সিপালের রুমে।

-“অদিতি! তুমি কি জানো না সিনিয়রদের সাথে বেয়াদবি করা ভার্সিটির রুলস্ এর বাইরে?”

মুখ গম্ভীর করে বললেন প্রিন্সিপাল।

-“আসলে স্যার……….!”

তাকে আর বাকিটুকু বলার সুযোগ দেয়া হলো না।চেচিয়ে ধমক দিয়ে চেয়ার থেকে দাড়িয়ে গেলেন প্রিন্সিপাল।

-“কি আসলে?”

-“স্যার,একটু আগে এই সিনিয়র ভাইয়া তার আন্ডারে থাকা একটা বেয়াদবকে দিয়ে আমাকে ধরিয়ে নিয়ে এসেছিলো।আর কাল আমি ভার্সিটিতে এসে দেখি উনি কয়েকজন ছেলে কে কান ধরিয়ে উঠ-বোস করাচ্ছেন। র‍্যাগিং এর নামে এতো বড় বড় ছেলেদের এভাবে সবার সামনে লজ্জা দেয়া কি ঠিক স্যার?

-“র‍্যাগিং! তাও অনন! হতেই পারে না।”

-“কেন হতে পারে না? ”

-“কারণ টা আমি তোমাকে বলছি।অনন এই ভার্সিটিতে চার বছর ধরে পড়ছে। এই সময়ের মধ্যে আমরা কখনই এমনটা শুনতে পাই নি। কিছুদিন পর ওর মাস্টার্সও কমপ্লিট হয়ে যাবে। ও আমাদের ভার্সিটির প্রত্যেক টিচার,স্টুডেন্ট ইভেন সবাইকেই সম্মান করে। সে ছোট হোক কিংবা বড়।তাই সকলেই ওকেও সম্মান করে। কিন্তু কোনো অন্যায় ও কখনও সহ্য করে না। অন্যায় কারীকে এমন শাস্তি দেয় যাতে তারা সেই ভুল দ্বিতীয়বার না করে। অনন, তুমি বলো কি হয়েছিলো কাল!”

-” স্যার কাল ওই ছেলেগুলো ভার্সিটির ক্যাম্পাসে সবার সামনে একটা মেয়েকে টিজ করছিলো। আমার কাজটা একদমই ভালো লাগে নি। তাই সবার সামনেই ওদের উচিত শিক্ষাটা দিয়ে দিলাম। লজ্জা থাকলে তারা আর কখনই এমন কাজ করবে না।”

-” কি বলছো কি!”

অবাক হয়ে বললেন প্রিন্সিপাল।

-“অবাক হওয়ার কিছুই নেই স্যার। নিজে বাচতে অন্যকে ফাসানো হচ্ছে স্যার!”

বলেই বাকা হাসলো অদিতি। অনন নিজের রাগ চেপে বলল-

-“না স্যার তেমন কিছুই না। আপনি অনুমুতি দিলে আমি তাদের ডাকিয়ে আনতে পারি।”

স্যার মাথা নাড়িয়ে নিজের সম্মতি জানালেন।

-“রকি! ডেকে নিয়ে আয় তো ওদের।”

.

.

কিছুক্ষণের মধ্যেই রকি আসামীদের নিয়ে হাজির হলো। তাদের প্রিন্সিপাল সবটা জিজ্ঞাসা করলে তারা তাদের অন্যায় স্বীকার করলো। কেননা তারা জানে তারা যদি আজ মিথ্যা বলে তাহলে তাদের হাড্ডিও আর খুজে পাওয়া যাবে না।

-“অননকে সরি বলো অদিতি!”

গম্ভীর মুখে বললেন প্রিন্সিপাল।

-“সরি। সরি স্যার।”

অদিতি অনন আর প্রিন্সিপালকে সরি বলে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো। অনন অদিতির যাওয়া দেখছে আর ভাবছে মেয়েটাকে এবার সত্যি সত্যি টাইট দিতে হবে। সরিটাও কি রুডলি বলে চলে গেলো। অননও সেখান থেকে চলে এলো।

ভার্সিটি ছুটির পর অদিতি বাড়িতে ফেরার জন্য গেটের বাইরে দাড়িয়ে রিকশা খুজছিলো। আজ পুষ্পিতা আসে নি। আর মনিকার কাজ ছিলো বলে ও ব্রেক টাইমেই চলে গিয়েছিলো। তাই অদিতিকে একাই যেতে হবে। প্রায় আধঘন্টা হতে চললো কিন্তু একটা রিকশাও সে পেলো না। পুরো রাস্তা প্রায় ফাকা বললেই চলে। তাই অদিতি হেটে যেতে লাগলো। কিছুদুর এগোতেই কোত্থেকে যেন অনেকগুলো পানি এসে পড়লো অদিতির শরীরে। পুরো কাকভেজা হয়ে গেছে সে। এদিক ওদিক, পুরো রাস্তায় খুজে দেখলো সে। কিন্তু পানিটা আসলো কোত্থেকে আসলো বা কে মারলো পানি টা তাকে আর খুজে পেলো না অদিতি। মনে মনে কয়েকটা গালি আওড়াতে আওড়াতে আবার হাটতে শুরু করলো অদিতি।আরেকটু দূর যেতেই আবারও একই কান্ড। শরীরের যতোটুকু অংশ ভেজার বাকি ছিলো তাও ভিজে গেলো। এবার আর নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারলো না অদিতি। এমন হলে কে ই বা পারবে!

-“ওই! কে রে? কে পানি মারছে বার বার? সাহস থাকলে সামনে আয়। দেখি! তোর চেহারাটা দেখা আমাকে! একটা চড় মেরে কান লাল করে দিবো। বেয়াদব কোথাকার! অসভ্য! অভদ্র! আয়, সামনে আয় পারলে।”

এতোকিছু বলার পরও যখন কেউ কোথা থেকেও বেরিয়ে এলো না তখন আবার হাটতে লাগলো অদিতি। কিছুদুর এগোতেই দেখলো অনন বাইকে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। অননের ঠোটে ফুটে আছে এক অন্যরকম হাসি। সয়তানি হাসি! তা দেখে অদিতির রাগ আরো বেড়ে গেলো।

-“ও……..! তাহলে এটা আপনার কাজ ছিলো! আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো এটা আপনার মতো গুন্ডা টাইপ অসভ্য ছেলেই করতে পারে। আর কে করবে।কি? কথা বলছেন না কেন? কোন অলক্ষুণে সময়ে যে আমি আপনার চেহারাটা দেখেছিলাম! আল্লাহ! এই মানুষটার চেহারা যেন আমাকে আর কখনই না দেখতে হয়।আমার এ দোয়াটাও তুমি কবুল করে নাও। (আমিন)”

বলে অননকে ক্রস করে চলে যাচ্ছিলো অদিতি। কিন্তু তা কি আর অনন হতে দেয়। অদিতির হাত চেপে ধরে ওকে টেনে নিজের বরাবরে দাড় করিয়ে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে-

-“এটা তো জাস্ট ডেমো ছিলো। আগে আগে দেখো হোতা হে কেয়া!”

বলে নিজের সানগ্লাসটা পড়ে নিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে আবারও তাকালো অদিতির দিকে।

-“জাস্ট ওয়েট এন্ড সি!”

বলেই চলে গেলো। আর অদিতি রাগে নাক-মুখ লাল করে কিছুক্ষণ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর নিজে আবার হাটা শুরু করলো।

কিছুক্ষণ পর বাড়িতে পৌছে গোসল করে নিলো অদিতি। মা ওকে ভেজা অবস্থায় দেখে অনেক অনেক প্রশ্ন করে যাচ্ছিলো। সব প্রশ্নের একটা মাত্র উত্তর দিয়েছে ও-“একটা গুন্ডা টাইপ অভদ্র ছেলের কাজ মা। একটা উচিৎ শিক্ষা আমিও দিবো তাকে।”

বাড়িতে ঢুকেই আগে ওর চোখ গেলো টমির উপর। টমিকে দেখতে পেয়েই চেচিয়ে উঠলো অনন।

-“নীড়! নীড়! কোথায় তুমি? নীড়!”

নিজের রুমে ছিলো নীড়। ভাইয়ার ডাকে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে দৌড়ে এলো সে।

-“কি ভাইউ?”

-“এটা এখনো এখানে কেনো?”

-“উপস্…………! ভুলেই গিয়েছিলাম ভাইউ। আচ্ছা তুমি থাকো আমি ওকে দিয়ে আসি আমার মিষ্টিপুর কাছে।”

বলেই দৌড় লাগালো নীড়।

-“মিষ্টিপু! এটা আবার কে? কোথায় যাচ্ছে মেয়েটা এখন একা একা!”

এসব ভেবে অননও ছুটলো নীড়ের পিছু। নীড় লিফটের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে ভাবলো মা ওকে একা লিফট ইউজ করতে নিষেধ করেছেন। তাই লিফটে না উঠে সিড়ি দিয়ে উঠতে লাগল। ওর সাথে সাথে অননও।

-“নীড়! কোথায় যাচ্ছো তুমি? নীড়!”

বলতে বলতে যাচ্ছিলো অনন। এক পর্যায়ে নীড়ের দৌড় শেষ হলো। থেমে গেলো ৭ম ফ্লোরের ফ্ল্যাট টার সামনে। অননও দাড়িয়ে ছিলো ওর সাথে। কিন্তু নীড় হাইটে এখনো ছোট বলে কলিং বেলটার নাগাল পাচ্ছিলো না। অনুরোধের দৃষ্টিতে ভাইউর দিকে তাকালো সে। অনন তার চাহনির মানেটা বুঝতে পেরে কলিংবেল বাজালো। অপেক্ষা করার মুড নেই তার। তাই একটানা বাজিয়েই যাচ্ছে সে।
ওদিকে অদিতি সবে গোসল করে বেড়িয়েছে। রায়হান সোফায় বসে গেম খেলছিলো। এতো বার বেল বাজার শব্দেও তার কোনো নড়চড় না দেখতে পেয়ে অদিতি বললো-

-“কিরে! শুনতে পাচ্ছিস না? দড়জাটা খুলে দে।”

বলার পরও তার মাঝে কোনো হেলদোল লক্ষ্য করলো না অদিতি। তাই টাওয়ালে চুল পেচাতে পেচাতে সেই গেলো দড়জা খুলতে। দড়জা খুলতেই ছোখদুটো স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশিই বড় হয়ে গেলো। পাশাপাশি নাক আর গাল দুটিও লাল হয়ে গেলো তার।

অননের মুখের হা টাও একটু বেশিই বড় হয়ে গেলো। অবাকের চরম পযার্য়ে উঠে গেলো সে। দুজনেই একসাথে বলে উঠলো-

-“আপনি…..!”

চলবে…..…………..❤।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে