Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তোকে ভালোবেসে খুব পার্ট- ১১

তোকে ভালোবেসে খুব পার্ট- ১১

#তোকে_ভালোবেসে_খুব
#পার্ট_১১
writer:#সারা_মেহেক

আয়ান হতাশাজনক একটা শব্দ করে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে মৌ কে বললো,

—“আচ্ছা আমাকে কি কিছু সময় দেওয়া যাবে?”

মৌ ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাস করলো,

—“কিসের জন্য সময় দিবো?কি করবেন আপনি?”

—” আমার ভালোবাসাটাকে তোর সামনে প্রকাশ করবো।আমার অনুভুতিগুলোকে তোর সামনে জাহির করবো।আমার অনুভুতিগুলোকে আরো গাঢ় করবো।তুই তো আমাকে বিশ্বাস করতে চাইছিস না।তাই কিছু সময় তুইও নে।আমাকেও দে।”

—“শুধু শুধু সময় দেওয়া নেওয়া করে মায়া বাড়িয়ে লাভটা কি?পরে যদি আপনার অনুভুতিটাই একটা মরিচিকা থাকে তবে?পৃথিবী নামক এ মরুভূমিতে আমি “ভালোবাসা” নামক মরিচিকার পিছনে ছুটতে চাইনা।বড্ড কষ্টে এটা।”

আয়ান করুন চাহনিতে মৌ এর দিকে তাকিয়ে বললো,

—” যদি আমার ভালোবাসা, আমার অনুভুতি মরিচিকা না হয়ে সত্যি সত্যি জলের আধার হয় তবে?”

—” ভরসা করতে পারছি না।”

—” একবার করেই দেখ।তোকে নিরাশ করবো না।”

—-” যদি করেন তখন?”

আয়ান এবার মৌ এর হাতের উপর হাত রেখে বললো,

—” এই যে আমি ওয়াদা করছি। আমি তোকে কখনো নিরাশ হতে দিবো না।একটিবারের জন্য আমাকে বিশ্বাস করে দেখ।”

মৌ চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।আয়ান মৌ এর দিকে আশাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার মনে ক্ষুদ্র এক আশার আলো জ্বলে উঠেছে এই ভেবে যে এবার হয়তো মৌ তাকে বিশ্বাস করবে।সময় দিবে।
মৌ কয়েক সেকেন্ড পর চোখ খুলে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

—” দিলাম আপনাকে সময়।শুধু এই ভরসায় যে আপনি আমাকে ওয়াদা করেছেন। আশা করছি ওয়াদার বরখেলাফ করবেন না।”

মৌ এর কথা শোনার সাথে সাথে আয়ানের চোখমুখ খুশিতে চকচক করতে লাগলো।মনটা তার খুশিতে নাচতে লাগলো।সে আজ বড়ই খুশি।বড়ই।
আয়ান উৎফুল্ল হয়ে বললো,

—” কখনোই না।কখনোই আমি ওয়াদার বরখেলাফ করি না।আর করবোও না।”

মৌ এবার আয়ানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,

—” সবই বুঝা যাবে আগামী এক মাসে।আপনার ভালোবাসা কতোটা সত্য,কতোটা পাকাপোক্ত তা বুঝতে পারবো সামনের দিনগুলোতে।”

আয়ান আশার দৃষ্টিতে মৌ এর দিকে তাকিয়ে বললো,

—“এক মাস অনেক সময়ই আমার ভালোবাসার সত্যতা বুঝানোর জন্য।৩০টা দিন আমার ভালোবাসা তোর জন্য গভীর থেকে গভীরতর করে দিবে।আর এটাও বলে রাখি,এই ৩০ টা দিনে তুইও আমাকে ভালোবেসে ফেলবি।”

মৌ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

—“আমার অনুভুতিগুলো এতোটা সস্তা না যে আপনাকে এতো তাড়াতাড়ি ভালোবেসে ফেলবো।”

আয়ান মৌ এর কথায় কিছুটা কষ্ট পেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

—“মৌমাছি রে….অনুভুতির কখনো মূল্য হয়না।সেটা সবসময় অমূল্য থাকে।তো সেটাকে সস্তা বা দামী বলে শুধু শুধু অনুভুতিগুলোকে অপমান করার দরকার কি?”

—” এতো গভীর কথাবার্তা শিখলেন কোথা থেকে?নেট থেকে বুঝি?”

আয়ান মৃদু হেসে বললো,

—“এসব কথা নেট থেকে শিখতে হয়না।এমনিই চলো আসে।আর ভালোবাসলে তো এসব শব্দগুচ্ছ প্রকাশ করা কিছুই না।আমি নতুন নতুন তোর প্রেমে পরেছি বলে হয়তো কথার গভীরতা গুলো কম। কিন্তু তোর প্রেমে যখন আমি পুরোপুরি নিজেকে হারিয়ে ফেলবো তখন আমার কথার গভীরতা লক্ষ করিস।এমনিতে আমার প্রেমে না পরলেও হয়তো কথাগুলোর প্রেমে পরে যাবি।”

মৌ আর কিছু না বলে আয়ানকে একটা ভেঙচি কেটে রুম থেকে বের হয়ে যায়।আয়ান মুচকি হেসে মৌ এর উদ্দেশ্যে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,

—“তুই তো আমার প্রেমে পরবিই।আমার প্রেমে পরে যে একদম হাবুডুবু খাবি সে ব্যবস্থাটাও আমি করবো।”বলে সে বাঁকা হেসে বেডে গিয়ে শুয়ে পরলো।

ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ীয়ে আছে মৌ।চোখজোড়া তার আকাশপানে।উদাস ভঙ্গিতে দাঁড়ীয়ে নিরবে চোখেরজল বিসর্জন দিচ্ছে সে।মৌ জানে না এটা কিসের কান্না।আয়ান তাকে ভালোবাসে এটার কান্না নাকি আয়ানকে আর আয়ানের ভালোবাসাকে বিশ্বাস করতে পারছে না এটার কান্না।
স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য প্রতিটা মেয়েই ব্যাকুল হয়ে থাকে।কে না চায় যে তার স্বামী তাকে ভালোবাসুক,পৃথিবীর সকল সুখ এনে তার হাতের মুঠোয় পুরে দিক?সবাই চায়।মৌ ও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়।সেও তো চায় যে আয়ান তাকে ভালোবাসুক।তার স্বামী আয়ান তাকে পুরোটা মন জুড়ে বসিয়ে রাখুক।একটা সাধারন মেয়ের এই ইচ্ছাটা প্রবল থাকে,দিনকে দিন তীব্র হতে থাকে।সবাই তো আর স্বামীর ভালোবাসা পায়না।এক্ষেত্রে মৌ তার স্বামীর ভালোবাসাটা পাচ্ছে। তবে সে বিশ্বাস করতে পারছে না।নাহ,কিছুতেই সে বিশ্বাস নামক বস্তুটাকে আয়ানের সাথে মিলাতে পারছে না। বারংবার তার মনে ভয়ের দামামা বাজছে।অনুভুতিগুলোও ভয়ে চুপসে আসছে।মনটাও কেমন যেনো নিজের প্রতি বিষিয়ে উঠছে,এই ভেবে যে,স্বামীর ভালোবাসাকে কেনো বিশ্বাস করছে না সে।কেনো পারছে না সে আয়ানের প্রতি বিশ্বাস রাখতে?
পারবেই বা কি করে।সে তো আয়ানকে চিনে।যে আয়ান তাকে সহ্য করতে পারতো না,সে আয়ানই তাকে ভালোবেসে ফেলেছে, তাও আবার এতো তাড়াতাড়ি!আচ্ছা?এটা কি আয়ানের কোনো প্ল্যান তাকে কষ্ট দেওয়ার?যেহেতু বিয়েটা আয়ানের মতের বিরুদ্ধে হয়েছে,সেহেতু মৌ কে কষ্ট দেওয়ার একটা কারনও বের হয়ে এলো।
আচ্ছা?এসব কষ্ট দেওয়ার প্ল্যান যদি আয়ানের না থাকে?যদি আয়ান সত্যি সত্যি তাকে ভালোবাসে তখন?নাহ,কিছুতেই মনটাকে একত্র করতে পারছে না সে।বারবার ভয় হচ্ছে তার এটা ভেবে যে,আয়ান যদি তাকে ভালোবাসার নামে ধোঁকা দেয় তখন?আর সেও যদি আয়ানকে ভালোবেসে ফেলে তখন তো সে আয়ানের ধোঁকাবাজিকে সহ্য করতে পারবে না।ভালোবাসার কষ্টটা বড়ই কাঁদায়।যে কষ্ট, কান্না থেকে সহজে বের হয়ে আসা যায় না,সেটার নাম ভালোবাসা।ভালোবাসা যেমন হাসায়, ঠিক তেমনি কাঁদায়ও।
চারপাশের তপ্ত বাতাসে কষ্টের এক নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখের কোনায় জমে থাকা নোনা পানিগুলোকে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে ছাদ থেকে চলে এলো মৌ।

____________

—“বলেছিলাম না…. তুই মৌ কে ভালোবেসে ফেলবি?দেখলি তো আমার বলা কথাগুলো কতোটা ঠিক ছিলো?”

আয়ান মৃদু হেসে পুলকের কথায় মাথা দোলালো।রাহুলও সামান্য হেসে পুলকের কথার সাথে কথা মেলালো।
তিন বন্ধু পুকুরপাড়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে।রওনক তাদের সাথে নেই।সে বাসায় অসুস্থতার ভান ধরে বসে আছে।কারন সে আয়ানের সামনে যেতে চাইছে না।আয়ানের সামনে গেলেই মৌ এর কথা মনে এসে যাবে তার,এই জন্যই মূলত সে আসেনি বন্ধুদের সাথে দেখা করতে।

আয়ানের মুখ থেকে হাসিটা মিয়িয়ে গেলো মৌ এর কথা চিন্তা করে।চেহারায় নেমে এলো বিষণ্ণতার ছাপ।মৌ যে তার ভালোবাসাটা মেনে নিচ্ছে না এটাই তার জন্য কষ্টের বিষয়।
হঠাৎ আয়ানের মুখের বিষণ্ণতার ভাব দেখে পুলক চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞাস করলো,

—” কি ব্যাপার?ঠোট থেকে হাসি চলে গেলো যে?”

আয়ান ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বললো,

—” আমি বুঝতে পারছি না, কি করলে মৌ আমার ভালোবাসার উপর বিশ্বাস করবে।”

রাহুল ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাস করলো,

—“কেনো?মৌ তোর ভালোবাসা মেনে নিচ্ছে না?”

—“না।ও ভাবছে, আমার ভালোবাসাটা শুধু দেখানো।কয়েকদিনের মধ্যেই আমি আমার ভুল বুঝতে পারবো।ও ভাবছে,আমি ওর সাথে ভালোবাসার নাটক করছি।”

পুলক বললো,

—“চিন্তা করিস না দোস্ত।তোর ভালোবাসা মৌ মেনে নিবে। দেখে নিস।আর তোর ভালোবাসা কি মিথ্যা নাকি যে মৌ এর সন্দেহের কাছে হেরে যাবে।তোর ভালোবাসায় সত্যতা আছে।সো নো টেনশন।”

পুলকের কথা শুনে আয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

—” দেখা যাক মৌ আমার ভালোবাসাকে মেনে নেয় নাকি।”

_________________

২০দিন কেটে গিয়েছে দেখতে দেখতে। যেনো চোখের পলক ফেলার সাথে সাথেই নতুন একটা দিন এসে উপস্থিত হয়েছে।সময়গুলো দেখতে দেখতে চলে গেলেও আয়ানের কাছে এক একটা দিন কাটা পাহাড় সমান হয়ে দাঁড়ীয়েছে।এই ২০দিনে মৌ এর প্রতি আয়ানের ভালোবাসা অাগের তুলনায় অনেকগুন বেড়ে গিয়েছে।আয়ানের কাছে মনে হয়েছে,এই কয়দিনে সে মৌ এর প্রেমে পুরোই বিভোর হয়ে গিয়েছে। নিত্যদিনে সে মৌ এর প্রেমে নিত্যনতুনভাবে পরেছে।এ বিষয়টা তাকে বেশ ভাবায়।এখনো তাকে ভাবাচ্ছে।সে ভাবছে,একটা মেয়ের উপরই রোজ রোজ প্রেমে পরা ব্যাপারটা বেশ আজব।আচ্ছা,মৌ তো একটাই মানুষ,তাহলে আয়ান তার প্রেমে প্রতিদিন কি করে পরতে পারে?আচ্ছা?এটাই কি ভালোবাসার সার্থকতা?প্রতিদিন একই মেয়ের জন্য মনে নতুন নতুন প্রেমানুভুতিটা জেগে উঠা কি আনন্দের?হয়তো আনন্দের। কারন একটা দিনও তার কাছে মনে হয়নি সে মৌ কে ভালোবেসে ভুল করেছ।কারন মৌ অজান্তেই নিজের কাজের দ্বারা আয়ানকে তার প্রেমে পরতে বাধ্য করেছে।
আয়ান এখনো জানে না যে মৌ কি আদৌ তাকে ভালোবাসতে পেরেছে নাকি তার থেকে দূরে চলে যাওয়ার অপেক্ষা করছে।এসব হাজারো ভাবনা চিন্তা করতে করতে চিন্তার এক শ্বাস ছাড়লো আয়ান।
বারান্দায় বসে বসে সে মৌ এরই কথা ভাবছিলো।কিছুক্ষন আগেও সে মৌ এর সাথে ঝগড়া করে এসেছে। ঝগড়ার বিষয়বস্তু হলো আলমারিতে কাপড়চোপড় ঠিক করে না রাখা।আয়ান বেশ অগোছালো একটা মানুষ,এ ব্যাপরটা মৌ মেনে নিতে পারছে না কোনোমতেই।এর আগেও এ বিষয়ের উপর বেশ কবার ঝগড়া হয়েছে তাদের মধ্যে।মৌ ঝগড়টাকে বিরক্তির আর রাগনিয়ে উপভোগ করলেও আয়ান মোটেও সেটাকে মৌ এর মতো উপভোগ করে না।সে তো বেশ মজা নিয়ে মৌ এর প্রতিটা কথা শোনে।সেই হয়তো পৃথিবীর প্রথম স্বামী হবে, যে বউ এর সাথে মজা নিয়ে ঝগড়া করে।মৌ যেখানে রেগে একটা প্রশ্ন করবে,আয়ান সেখানে হাসিমুখে মজা নিয়ে তার জবাব দিবে।আয়ান নিজের কাজটা বেশ পছন্দ করলেও মৌ এটাকে নিতান্তই একটা বিরক্তিকর কাজ মনে করে।

আয়ান বারান্দা থেকে উঠে এসে বেডে গিয়ে শুয়ে পরে। এখন রাতের প্রায় ১১টা বাজে।খাওয়াদাওয়া করে এসে সে বেডে গিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে লাগলো।সারাদিনের অফিস শেষে বেডে যাওয়ার সাথে সাথে রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করলো আয়ানের শরীরে।আগে যখন অফিসে খুব একটা যেতো না সে,তখন শরীরটা এতো ক্লান্ত লাগতো না তার কাছে।এতো ক্লান্তির জন্য সে অবশ্য মৌ কেই দায়ী করে।কারন মৌ এর তীর্যক কথাবার্তায় সে অফিসে যাওয়া শুরু করেছে।একদিন সকালে নাস্তা খাওয়ার সময় আয়ানের বাবা আয়ানের অফিসের কাজকর্ম নিয়ে বেশ কথাবার্তা শুনিয়েছিলো।আয়ান সেসব কথাবার্তা তেমন আমলে না নিলেও মৌ যখন সবার সামনে আয়ানকে ছোটো করে,অপমানজনক বেশ কিছু কথা শুনিয়ে দেয়,সেগুলো একদম বিষাক্ত তীরের মতো গিয়ে বিঁধেছিলো আয়ানের মনে।নিজের বাবা যখন সবার সামনে তাকে অপমান করে কথা বলে,সেগুলো তার তেমন গায়ে বাঁধে না।অথচ নিজের বউ যখন সবার সামনে এমন করে কথা বলেছিলো সেটা খুবই কষ্টদায়ক লেগেছিলো আয়ানের কাছে।মৌ এর কথাগুলো শোনার পরই ঐদিন ডাইনিং এ বসেই সে সিদ্ধান্ত নেয় যে সে প্রতিদিন
অফিসে গিয়ে কাজ করবে।
আয়ানের এ সিদ্ধান্তে বাসার সবাই খুশি হয়েছিলো,যদিও সে মূহুর্তে বলা মৌ এর কথায় তারা কেউই তেমন খুশি হয়নি।তবুও মৌ এর সেই তীর্যক কথাই যে আয়ানকে অফিসের কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে সেটাতে সবাই খুশি হয়েছে।

সব কাজ শেষে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো মৌ।দরজা লাগানোর আওয়াজে আয়ানের কাঁচা ঘুমটা ভেঙে গেলো।সে একরাশ বিরক্তি নিয়ে সামনের দিকে তাকালো।সামনো তাকানোর সাথে সাথেই তার বিরক্তিভাবটা নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো মৌ এর চেহারা দেখে।সারাদিনের ক্লান্তিকর ভাবটাও নিমিষেই উধাও হয়ে যায়,যদি ভালোবাসার মানুষটাকে একান্তই শুধু নিজের চোখের সামনে দেখা যায়।

মৌ লাইট অফ করে বেডে গিয়ে শুয়ে পরে।আয়ান তখনও মৌ কে দেখেই যাচ্ছে।যদিও মৌ এ ব্যাপারটা খুব একটা খেয়াল করেনি।
মৌ কে দেখে হুট করেই আয়ানের মনে তীব্র এক বাসনা জেগে উঠলো।তার মনটা বড্ড আকুপাকু করেছে মৌ কে নিজের বুকে জড়িয়ে ঘুম পারিয়ে দিতে।এতোদিনও এ ইচ্ছাটা হয়েছে তার।তবে আজকে একটু বেশিই মন চাইছে তার।কেনো যেনো তার মনে হচ্ছে আজকে মৌ কে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে না ঘুমাতে পারলে হয়তো কোনোদিনও পারবে না সে এটা করতে।
তাই নিজের মনের সাথে ছোটোখাটো এক যুদ্ধ শেষে আয়ান বেশ উৎকণ্ঠা নিয়ে আকুতির স্বরে মৌ কে বললো,

—“মৌ….আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবি?”

মৌ চোখ বন্ধ করে ছিলো।হুট করে আয়ানের এমন কথায় যে ঝট করে চোখজোড়া মেলে তাকায়।হঠাৎ করে আয়ানের এমন মায়াভরা আকুতি শুনে মৌ এর বুকের ভেতরটা মোচরে উঠলো।আয়ানের এ ডাকটা মোটেও উপেক্ষা করার মতো মনে হলো না মৌ এর কাছে। তার মনটা বলছে আয়ানের প্রশ্নের জবাব “হ্যাঁ” দিতে।আর মনটা এমন বলবেই না বা কেনো।সে যে আয়ানকে ভালোবেসে ফেলেছে।তবে এটা সে মানতে চাইছে না কোনোমতেই।না মানারও অবশ্য একটা কারন আছে,আর সেটা হলো আয়ানের প্রতি বিশ্বাসের খুঁটিটা এখনো বেশ শকহয়নি।যদিও আয়ান তার সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছে মৌ এর মনে ভরসা আর ভালোবাসা দিয়ে জায়গা করে নিতে। সে সফলও হয়েছে তবে পুরোপুরি নয়।
আয়ান তার প্রতিটা কাজে,কথায় বুঝিয়েছে যে সে মৌ কে ভালোবাসে।শুধু মৌ ই তার কথা,কাজ দ্বারা আয়ানকে তার মনের কথা বুঝায়নি।কারন সে এক ভয়ে ছিলো,যদি তার মনের কথা জানার পর আয়ান বলে যে সে তার সাথে ভালোবাসার নাটক করছিলো তখন?যদিও এ পর্যন্ত আয়ানের ব্যবহারে তা মনে হয়নি তার কাছে।তবুও খুতখুতে স্বভাবের মৌ কিছুতেই আয়ানের প্রতি তার ভালোবাসাটা মেনে নিতে পারছে না।

মৌ এর কোনো জবাব না পেয়ে আয়ান একটু দ্বিধা নিয়ে মৌ এর কাছে গিয়ে বললো,

—“আমার এ রিকুয়েস্টটা কি রাখার মতো না?”

নানা ভাবনায় বিভোর মৌ কিছু একটা ভেবে আয়ানের দিকে ফিরে কোনোপ্রকার কথাবার্তা ছাড়াই আয়ানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরে।
কোনো সাড়াশব্দ ছাড়াই মৌ আয়ানের বুকে মাথা রাখায় আয়ান চমকে উঠে।সে ভেবেছিলো হয়তো মৌ তাকে হাজারটা কথা শুনিয়ে তার ইচ্ছাটাকে মাটি দিয়ে দিবে।কিন্তু না,এমন কিছুই হয়নি।মৌ নিজের ইচ্ছাতেই এমনটা করেছে।
আয়ান এবার মৌ কে দুহাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।আয়ানের থেকে পাওয়া এ স্পর্শে সামান্য কেঁপে উঠে মৌ।এই প্রথম সে আয়ানের এতোটা কাছাকাছি এসেছে। এই প্রথম সে আয়ানের ছোঁয়া পেয়েছে।মনের মধ্যে হাজারো উৎকণ্ঠার মাঝেও গুটি কয়েক ভালোলাগার অনুভুতি জেগে উঠছে তার।সেই হাজারো উৎকণ্ঠার ভীড়ে সংখ্যা হিসেবে অনুভুতিগুলো খুব নগন্য হলেও সে অনুভুতিগুলোর জোর খুব বেশি।
বেশকিছুক্ষন চুপচাপ শুয়ে আছে দুজনে।বাইরে দিয়ে চুপচাপ হলেও মনের মধ্যে দুজনেরই এক ভালোলাগার স্রোত বয়ে যাচ্ছে। আয়ানের ভালোলাগাটা কাজ করছে মৌ কে নিজের বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে পারায়।আর মৌ এর ভালোলাগাটা কাজ করছে আয়ানের বুকের ধুকপুকানি আওয়াজটা শুনতে পারায়।।তার মন বলছে হৃৎপিন্ডটার এ আওয়াজে হয়তো কোনো লুক্কায়িত কথা লুকিয়ে আছে।আচ্ছা? এ আওয়াজটা কি তাকে বলছে যে আয়ান তাকে ভালোবাসে?এ আওয়াজ কি তার প্রতি আয়ানের ভালোবাসার গভীরতা মাপছে?আয়ানের বুকে মাথা রেখেই এসব ভেবে যাচ্ছে মৌ।এখন কেনো যেনো তার মনে হচ্ছে,আয়ানকে সে খুব ভালোবাসে খুব।আর এটা তার স্বীকার করে নেওয়া উচিত এবং আয়ানকে তার মনের কথাও বলে দেওয়া উচিত।শুধু শুধু আয়ানের প্রতি ভালোবাসাকে না মেনে,উপেক্ষা করে কি হবে?যেখানে এখন তার মনে হচ্ছে আয়ানের ভালোবাসাটা হয়তো সত্যি।এতোদিন তার প্রতি পালন করা দায়িত্বগুলো,তার প্রতি কেয়ারিংগুলো সত্যি।
আচ্ছা?আজকে ্আয়ানের এতো কাছে এসে কি সে নিজের অনুভুতিগুলো উপলব্ধি করতে পেরেছে? নাকি আজকে সে এ বিষয়গুলো বেশি ভাবছে বলে এসব উপলব্ধি করতে পেরেছে? উফ…আর এতো চিন্তাভাবনা করা সম্ভব হয়ে উঠছে না তার জন্য।মাথাব্যথাটা জানান দিলো,আজকের জন্য অনেক চিন্তা হয়েছে।এখন ঘুমাও আরাম করে।একটা শ্বাস ফেলে সে চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
মৌ এর চোখ বন্ধ করার কিছুক্ষন পরই আয়ান মৌ এর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

—“কোনো প্রশ্ন বা ঝগড়া ছাড়াই যে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমালি?”

আয়ানের আলতো পরশে চোখ মেলে তাকিয়ে মৌ বললো,

—“আপনার কি সবসময় ঝগড়া করতে ভালো লাগে?”

আয়ান মৃদু হেসে বললো,

—“উঁহু। ভালো লাগে না।তবে মাঝে মাঝে তোর সাথে ঝগড়া করতে বেশ মজাই লাগে।”বলে সে কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে করুন সুরে বললো,

—“মৌ….আমার ভালোবাসার উপর কি তোর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না?আমার প্রতি কি তুই একটুও ভরসা করতে পারছিস না?আর তোর মনে কি আমার জন্য একটুও ভালোবাসা জাগেনি এতোদিনে?”

মৌ কিছু না বলে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।এরপর কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললো,

—“এসব বিষয়ে কালকে কথা বলি?আমার এখন খুব ঘুম পাচ্ছে। ”

—“কালকে যদি বলার সুযোগ বা শোনার সুযোগ না পাই?”

মৌ এবার আয়ানের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে ভ্রু কুঁচকে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

—“কেনো কালকে আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”

—“কোথাও না।কিন্তু মনটা কেমন যেনো করছে।মনে হচ্ছে এখন সবটা না জানলে হয়তো পরে আর জানতে পারবো না।বেশি দেরি হয়ে যাবে।”

মৌ মুখ বাঁকিয়ে বললো,

—“মনের এসব কথা শোনা বাদ দিয়ে এখন ঘুমান।আমার বড্ড ঘুম পাচ্ছে।আমি এখন ঘুমাবো।”বলে মৌ আবারো আয়ানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরলো।আয়ানও হাল ছেড়ে দিয়ে মৌ কে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

_____________

—“হেই ব্রো….কেমন আছিস?”
দরজার কাছে অপরিচিত এক কণ্ঠ শুনে সবাই ফিরে তাকায়।বিকাল বেলা সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছিলো।এরই মাঝে তানভীর এসে আয়ানের উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা করে।তানভীর আয়ানের চাচাতো ভাই।দুজনেই সেইম এজের।তানভীর কয়েক মাসের জন্য বিদেশে গিয়েছিলো কিছু কাজে।গতকালই সে দেশে ফিরে।আর আজকে সে আয়ানদের বাসায় এসেছে আয়ানের সাথে দেখা করার জন্য।
তানভীরকে দেখে আয়ান একদম চমকে যায়।তার মনে হুট করে ভয়ের ঝড় বয়ে যেতে থাকে।
তানভীরকে দেখে আয়ানের বাবা হাসিমুখে বললো,

—“ওখানে দাঁড়ীয়ে আছিস কেনো?ভিতরে আয়।”
তানভীর চাচার কথায় মুচকি হেসে পা বাড়িয়ে সোফায় এসে বসে।সবার সাথে সেখোশ গল্পে মেতে উঠে।সবার সাথে কথা বলতে বলতে তার চোখ যায়,রান্নাঘর থেকে আসা মৌ এর দিকে।মৌ কে দেখে তানভীর অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলো,

—“কি ব্যাপার?মৌ এসময়ে এখানে কি করছে?আর ওর হাতে খাবার ট্রে কেনো?”

তানভীরের কথা শুনে আয়ান একটা শুকনো ঢোক গিললো।আয়ানের মা কিছুটা অবাক হলেন তানভীরের প্রশ্নে। তিনি জিজ্ঞাসকরলেন,

—“এটা আবার কেমন প্রশ্ন?মৌ এখানে থাকবে না তো থাকবে কোথায়?”

তানভীর স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলো,

—“কেনো?নিজের বাড়ীতে থাকবে।”

অহনা তানভীরের কথায় ফিক করে হেসে দিলো।সে হাসতে হাসতে বললো,

—“তানভীর ভাইয়া দেখছি পাগল হয়ে গিয়েছে। মেয়ে নিজের শ্বশুর বাড়ী না থেকে কোথায় থাকবে?”

অহনার কথা শুনে তানভীর বিস্মিত হয়ে বললো,

—“শ্বশুরবাড়ী মানে!!”

দাদি এবার বললেন,

—” কি ব্যাপার?তুই জানিস না যে আয়ান আর মৌ এর বিয়ে হয়ে গিয়েছে??”

তানভীর দাদির কথায় এবার অবাকের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেলো।সে আর কিছু না বলে তার সামনে বসা আয়ানকে টানতে টানতে নিচের গেস্টরুমে নিয়ে গেলো।তানভীরের এমন কাজে সবাই থ বনে গেলো।আয়ানের বিয়ের কথায় তানভীরের এমন অবাক হওয়া আর আয়ানকে টেনে নিয়ে যাওয়া সবটাই সবাইকে অবাক করে দিলো।বিশেষ করে মৌ কে।
মৌ কিছুক্ষন দাঁড়ীয়ে থেকে বললো,

—“আমি না হয় দেখে আসি।দুজন কি কথা বলছে।”
মৌ এর কথা শুনে সবাই মাথা দোলালো।
মৌ ধীর পায়ে গেস্ট রুমের বাইরে এসে দাঁড়ালো। সেখানে দাঁড়ীয়ে আয়ান আর তানভীরের কথোপকথন শুনে মৌ এর মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরলো।

চলবে
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ