#তোকে_ভালোবেসে_খুব
#পার্ট_৭
writer:#সারা_মেহেক
আয়ান বেডের দিকে তাকিয়ে দেখলো মৌ শুয়ে এক পায়ের উপর পা তুলে বেশ আরামসে ফোন গুতাচ্ছে।মৌ এর গায়ে বিয়ের শাড়ী বা গহনা নেই।সে তো এজ ইউজুয়াল যা পরার তাই পরেছে।অর্থাৎ থ্রিপিছ এর উপর সোয়েটার পরে সে ফোন গুতাতে ব্যস্ত।
আয়ান মৌ এর এমন রূপ দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।সে ভেবেছিলো বিয়ের শাড়ী পরিহিতা এক মৌ কে দেখবে সে।লজ্জায় নুয়ে পরা এক মৌ কে দেখবে সে ।মাথায় ঘোমটা দিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করা এক মৌ কে দেখবে।যদিও এসব তার অবচেতন মনটা চেয়েছিলো।
কবুল বলার পর আয়ান মৌ কে যখন একসাথে আনা হয়েছিলো তখন আয়ান মৌ কে দেখেনি রাগবশত।আবার গাড়ীতে পাশাপাশি বসার পরও আয়ান মৌ এর দিকে তাকায়নি।বাসায় আসার পর পুলক,রাহুল আর দাদি যখন তাকে জোর করে বাসর ঘরে পাঠায় তখন সে মনে মনে ভেবে এসেছিলো, মৌ বাকি সব নতুন বউদের মতো বসে থাকবে।স্বামীর জন্য অপেক্ষা করবে।এ সুযোগে আয়ান কিছু কথাও শুনিয়ে দিবে মনমতো।পরে মৌ মন খারাপ করে থাকবে আর সে মজা নিবে।কিন্তু আফসোস, সে তো ঠিক প্ল্যানিংই করে এসেছিলো কিন্তু মৌ সে প্ল্যানিং এ আগে থেকেই পানি ঢেলে দিয়ে বসে ছিলো।
ফোন চালাতে চালাতে চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় মৌ উঠে তার ফোন চার্জে দিতে গেলো।আর তখনই তার চোখ গেলো আয়ানের দিকে।আয়ান তখনও দরজার কাছে দাঁড়ীয়ে আছে।আয়ানকে দাঁড়ীয়ে থাকতে দেখে মৌ স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
—“এতোক্ষনে এলেন আপনি!যাই হোক ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরুন।”
আয়ান মৌ এর কথা হয়তো শুনেনি।তাই তখনও দাঁড়ীয়ে ছিলো।মৌ আয়ানকে এভাবে দেখে তার সামনে গিয়ে একটা তুড়ি বাজিয়ে বললো,
—“কি হলো?এভাবে মিররের মতো স্টিলভাবে দাঁড়ীয়ে আছেন কেনো?ওহহো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম, আপনি তো মিস্টার মিরর।”
মৌ এর কথায় আয়ান এবার স্বাভাবিক হয়ে বললো,
—“এর আগেও তোর মুখে এটা শুনেছি।আমাকে এটা বলিস কেনো??”
মৌ ভেঙচি কেটে বললো,
—“আপনি আমাকে মৌমাছি বলেন কেনো?”
—“তুই মৌমাছি তাই তোকে ওটাই বলি।”
—“তো আপনি মিস্টার মিরর তাই আপনাকে ওটাই বলি।”
—“হাহ….তুই এতো তাড়াতাড়ি ড্রেস চেন্জ করে ফোন নিয়েও বসে পরেছিস!!”
—হুম।ইউ নো…আই এম সো ফাস্ট।”বলে একটা গর্বিতময় হাসি দিলো মৌ।
আয়ান এটা দেখেও না দেখার ভান করে বললো,
—“বাসর ঘরে মেয়েরা বিয়ের সাজে সজ্জিত হয়ে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে।স্বামী এলে সালাম করে।আর তুই তো দেখি পুরাই উল্টো।”
মৌ আবার ভেঙচি কেটে বলে,
—“আপনার মতো স্বামী নামক অপদার্থের জন্য আমি ওয়েট করবো!!এটা কি করে ভাবলেন আয়ান ভাইয়া!!”
আয়ান এবার রেগে বললো,
—“কি বললি আমাকে!!!অপদার্থ!! ”
—“হুম…তো কি বলবো পদার্থ??সে যাই হোক আমার বিয়ের সাজ আর অপেক্ষা করা নিয়ে আপনার এতো মাথা ব্যাথা কেনো?”
মৌ এর প্রথম কথা শুনে আয়ান রেগে কিছু বলার আগেই মৌ এর শেষ কথাটা শুনে ভিজা বিড়ালের মতো চুপসে গেলো আয়ান।এখন এমন কঠিন প্রশ্নের সে কি জবাব দিবে?সে তো নিজেও জানে না তার এতো কিসের মাথা ব্যাথা।এসব না জানলে সে উত্তর দিবে কি করে!!তারপরও তার উত্তর দিতে হবে।কারন সে জানে এখন মৌ এর প্রশ্নের জবাব না দিলে মৌ তার কানের কাছে প্যানোর প্যানোর করতে থাকবে।তাই সে বললো,
—“আমার মাথা ব্যাথা হতে যাবে কেনো?অস্বাভাবিক কিছু দেখলে তো বলবোই।”
আয়ানের কথাটা মৌ এর বিশ্বাস হতে চাইলো না।তাই সে সন্দেহের সুরে বললো,
—“আপনি আবার হাজবেন্ড হাজবেন্ড ফিলিং পাচ্ছেন নাকি?”
আয়ান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাস করলো,
—“এটা আবার কেমন ফিলিংস??”
—“আপনি কি নিজেকে আমার স্বামী মনে করছেন নাকি?”
মৌ এর কথা শুনে আয়ান হেসে বললো,
—“মনে করার কি আছে?আমি তো তোর স্বামীই।”
মৌ এবার চোখ চোখ বড় বড় করে রেগে গলার আওয়াজ জোরে করে বললো,
—“খবরদার……আমার উপর স্বামীর অধিকার ফলাতে আসবেন না।এমন করলে আপনাকে ল্যাং মেরে বিছানা থেকে ফেলে দিবো।”
মৌ এর গলার আওয়াজ শুনে আয়ান আঁতকে উঠে তাড়াতাড়ি গিয়ে মৌ এর মুখ চেপে ধরে বললো,
—“আল্লাহ গো আল্লাহ….এতো জোরে চিল্লায় কে!!মানুষজন কি ভাববে বলতো?একে তো রাত তার উপর বাসর ঘরে আমরা।ছিঃছিঃ।”
আয়ানের কথা শুনে মৌ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।কিন্তু পারলো না।তাই নিজের পা দিয়ে আয়ানের পায়ের উপর লাথি দিয়ে দিলো।
আয়ান ব্যাথায় সাথে সাথে মৌ কে ছেড়ে দিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে এলো।
মুখ চেপে ধরায় মৌ লম্বা কয়েকটা শ্বাস নিয়ে বললো,
—“মানুষ কি চিন্তা ভাবনা করলো সেটা নিয়ে আপনি ভাবুন। আমি আবারো ওয়ার্নিং দিলাম।আমার কাছে একদম আসবেন না।আর আমাকে মোটেও ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না।”
আয়ান মুখ বাঁকিয়ে বললো,
—“এহ…..তোকে তো ছোঁয়ার বড়ই শখ জেগেছে মনে হচ্ছে আমার তাইনা??তোর মধ্যে এতো কি সোনাদান রয়েছে যে তোর মতো মেয়েকে ছুঁতে যাবো আমি?হুহ..নিজেকে এতো প্রিশিয়াস ভাবিস না। ”
মৌ ভাব নিয়ে বললো,
—“ভাবার কি আছে?আই নো আই এম প্রিশিয়াস।আপনার মতো ক্যারেক্টার ঢিলা টাইপের মানুষ না আমি।”
আয়ান রেগে গিয়ে বললো,
—“কি বললি তুই!!আমার ক্যারেক্টার ঢিলা!!”
—“বলার কি আছে?আপনি নিজেই তো স্বীকার করলেন আপনার ক্যারেক্টার ঢিলা।”
আয়ান অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে বললো,
—“কখন বললাম!!”
—“কিছুক্ষন আগেই তো বললেন।আপনি তো আর প্রশ্ন করেননি।করলো তো বুঝাই যেতো।আপনি তো নিজের চরিত্র স্বীকার করলেন।”বলে মুখ টিপো হাসতে লাগলো।
মৌ এর হাসি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে আয়ানের।সে মৌ কে চুপ করানোর জন্য দুষ্টু হাসি দিয়ে মৌ এর দিকে এগুতে এগুতে বললো,
—“আমার চরিত্রের প্রমান দিবো তোকে?”
আয়ানের কথা শুনে মৌ একটা শুকনো ঢোক গিললো।কয়েক সেকেন্ড আয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেকে ঠিক করে আমতা আমতা করে বললো,
—“খবরদার….আমি কিন্তু ক্যারাটে জানি।এমন এমন জায়গায় মারবো যে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পারবেন না।”
মৌ এর কথার কোনো প্রভাবই পরলো না আয়ানের উপর।সে আগের মতোই বললো,
—“পারবি না।কজ আমার শক্তি তোর চেয়ে বেশি।”
মৌ আবারো একটা ঢোক গিলে বললো,
—“আপনার শরীরের শক্তি বেশি তো কি হয়েছে।আপনার চেয়ে আমার চিৎকারের শক্তি বেশি।এমন চিৎকার দিবো….”বলে মৌ হা করতে নিলেই আয়ান নিজেকে দ্রুত সামলে নিয়ে বললো,
—“এই এই…একদম চিৎকার করবি না বলে দিলাম।মাইকের মতো গলা একটা।ফাজিল মেয়ে কোথাকার।”
আয়ানের কথায় মৌ আবারো ভেঙচি কেটে বললো,
—“চিল্লাবো না।এক শর্তে,যদি আপনি এখনই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে চুপচাপ শুয়ে পরেন তাহলে চিল্লাবো না।”
আয়ান ছোট্ট একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
—“আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি। “বলে আয়ান বারান্দা থেকে তোয়ালে নিয়ে এসে ওয়াশরুমে ঢুকলো।আর মৌ ফোন চার্জ থেকে খুলে নিয়ে আবারে চালাতে লাগলো।
শাওয়ার শেষে আয়ান শুধু তোয়ালে পরে ওয়াশরুম থেকে বের হলো।কারন সে ভুলে নিজের কাপড়চোপড় নিয়েছিলো না।তাই তোয়ালে পরেই বেড়িয়েছে সে।
হঠাৎ দরজা খুলার আওয়াজে মৌ সামনের দিকে তাকাতেই একটা আর্তচিৎকার দিয়ে উঠে।মৌ এর আর্তচিৎকারে নিজেকে সামলাতে না পেরে আয়ানও চিৎকার দিয়ে উঠে।তবে গলার আওয়াজ মৌ এর তুলনায় কম।দুজনের চিৎকারেই এক বেহাল অবস্থা রুমের দেয়ালগুলোর।বেচারাগুলোর কানটাই শেষ।
আয়ান নিজেকে সামলে নিয়ে দেখলো মৌ দুহাত দিয়ে চোখমুখ ঢেকে আছে।আয়ান ভয় পাওয়া কণ্ঠে বললো,
—“এভাবে চিৎকার দিলি কেনো?আমার তো জানই বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো।”
মৌ চোখমুখ ঢেকে রেখেই বললো,
—“ছিঃ আয়ান ভাইয়া ছিঃ। আপনি কি করে পারলেন এমন বেহয়ার মতো কাজ করতে?”
আয়ান অবাক হয়ে বললো,
—“কি করলাম আমি?”
—“কি করেননি তাই বলেন।একটা মেয়ের সামনে খালি গায়ে এভাবে হাফ ড্রেস পরে আসেন কি করে?।উঁহু, ড্রেস না তোয়ালে, পরে আপনি কি করে আমার সামনে এলেন?ছিহ।লাজশরম দুনিয়া থেকে উঠে যাচ্ছে দেখছি।”
মৌ এর কথা শুনে আয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
—“আমার রুম আমি যেভাবে আসি এতে তোর কি?”
মৌ সামান্য রেগে নিজের মুখের থেকে হাত সরিয়ে বললো,
—“এটা এখন আমারও রুম।ভুলে যাবেন না।বেহায়া একটা।ছিহ।”
আয়ান মৌ এর কথায় সামান্য হেসে আলমারির দিকে এগুতে এগুতে বললো,
—“হক তো ভালোই ফালতে পারিস দেখছি।এতোই যখন হকের কথা বলছিস তখন এটাও জেনে রাখ,আমি এমন করেই শাওয়ার নিয়ে বের হবো রোজ রোজ।সো এসবের অভ্যাস করে নে।”
মৌ রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজায় টোকা পরলো।আয়ান আর সে ভ্রু কুঁচকে একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দরজা দিকে তাকালো।
এসময়ে কে হতে পারে ভাবতে ভাবতে আয়ান গিয়ে দরজা খুললো।দরজা খুলেই সে অহনাকে দেখতে পেলো।চোখেমুখে শয়তানি একটা হাসি ফুটে উঠেছে।আয়ান তা দেখে সন্দেহের সুরে বললো,
—“এতো রাতে এখানে কেনো?”
—“কি এতো রোমান্স করছিলি ভাইয়া?যে একবার তোর চিৎকার তো একবার মৌ এর চিৎকাী শুনতে পেলাম হুম??বল বল।”
আয়ান রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
—“ধরে কয়েকটা থাপ্পড় দেওয়া উচিত।কতো বড় সাহস তোর তুই আমাকে এসব প্রশ্ন করিস!!”বলেই আয়ান অহনার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো।অহনাও একটা ভেঙচি কেটে যেতে যেতে জোরে করে বললো,
—“কর কর,জমিয়ে রোমান্স কর।আর আমাকে তাড়াতাড়ি ফুপ্পি হওয়ার সুযোগ করে দে।”
অহনার কথা শুনে আয়ান রেগে আলমারির কাছে যেতে যেতে বললো,
—“দেখলি তো?এসব শুনতে ভালো লাগলো বুঝি?কে বলেছিলো ওমন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে?”
মৌ অপরাধীর সুরে বললো,
—“আপনার কাজকাম বলেছিলো।”
আয়ান বিরক্তি নিয়ে বললো,
—“উফ….এ মেয়েটা অলওয়েজ ত্যাড়া জবাব দিবেই।”বলে সে আলমারির দরজা খুলে থ বনে গেলো।আলমারির অর্ধেকের বেশি জায়গা জুড়ে মৌ এর কাপড়চোপড়।আর তার কাপড়চোপড় এক প্রকার অবহেলিত হয়ে কোনার দিকে পরে আছে।এসব দেখে আয়ান রেগে দাঁতে দাঁত চেপে মৌ কে ডাক দিলো।
—“মৌ এক্ষুনি এদিকে আয়।”
মৌ স্বাভাবিক ভাবেই ফোনটা রেখে আলমারির দিকে গেলো।সে জানে আয়ান কেনো ডেকেছপ তাকে।তাই সে মুখে এক বিশ্বজয়ের হাসি এনে বললো,
—“কি হয়েছে বলুন।”
আয়ান কটমট করে তাকিয়ে বললো,
—“এসব কি?”
মৌ স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
—“কাপড়চোপড়। আপনার চোখ কি নষ্ট? ”
আয়ান চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ সংযত করার চেষ্টা করে বললো,
—“জানি কাপড়চোপড়।আমার প্রশ্ন হচ্ছে,আমার কাপড়চোপড় সরিয়ে তুই কাপড়চোপড় রেখেছিস কেনো?”
—“তো আমি কোথায় কাপড় রাখতাম?”
—“সেটা তুই জানিস।কিন্তু তাই বলে এভাবে আমার ড্রেসগুলো এককোনায় রেখে দিলি!!”
—“তো কি করতাম?আমার ড্রেস বেশি।আর আপনার ড্রেস কম।তো যার কম তারটা এভাবেই তো রাখতে হবে।নাহলে বেশির জায়গা হবে কি কসে?”
আয়ান রেগে একটা বড় শ্বাস টেনে নিয়ে বললো,
—“আমি কিছু জানি না,তোকে তোর ড্রেস সরাতেই হবে।”
মৌ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
—“সরানোর জন্য রাখিনি এসব।এটা আমারও রুম।আর আমারও আলমারি।সো ড্রেস আমি এভাবেই রাখবো।”
—“থাপ্পড় চিনিস?”
আয়ানের প্রশ্নের প্রতিউত্তরে মৌ বললো,
—“ঝাড়ুর বারি চিনেন?”
আয়ান অবাক হয়ে বললো,
—“কি বললি তুই!!”
—“যা শুনলেন তাই বললাম।”
—“স্বামীর সাথে এমন করে কথা বলিস কোন সাহসে?”
—“ওয়াইফের সাথে এমন করে কথা বলেন কোন সাহসে?”
#চলবে
(বানানের ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।