তৃণশয্যা পর্ব-১৯ এবং শেষ পর্ব

0
1143

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১৯তম_পর্ব{শেষ পর্ব}

থরথর করে কেঁপে উঠে ভু-খন্ড।উপর থেকে পড়তে শুরু করে মানুষের বৃষ্টি।সেই তালিকায় নাম থাকে আদনান ও চারু দুইজনেরই।উপর থেকে নিচে পড়ে‌ যায় দুজনেই।নিচে পড়ার সাথে সাথে জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলে তারা।

৩২.

দীর্ঘ ১০দিন পর আদনান চোখ খুললেও চারু চোখ চোখ খোলেনি।আদনান চোখ খুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে চারদিকটা।তার পাশে রিমি আর তার মা-বাবা বসে আছে।চারু পাশের বেডে শুয়ে আছে নিথর হয়ে।

ছেলেকে চোখ খুলতে দেখে হালিম সাহেব ও রাহিনা বেগমের মনে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়।রাহিনা বেগম কান্না করতে করতে আদনানকে জড়িয়ে ধরেন।রিমি গিয়ে বসে পড়ে চারুর পাশে।আদনান উঠে বসার চেষ্টা করলেও ব্যার্থ হয়।শরিরের মধ্যে প্রচুর ব্যাথা।আদনানকে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করলেও আদনান কো‌নো কথার উত্তর না দিয়ে চুপ‌ করে শুয়ে থাকে।সে মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে।চারুর যেন কিছু না হয়।এর মাঝে ডাক্তার এসে আদনানকে ঔষধ দিয়ে গেছে এবং চারুকে দেখে গেছে।ডাক্তারটাকে দেখে আদনান বুঝতে পারে তারা এখনো আমেরিকাতেই আছে।

আদনান এবার চোখ খুলে তার মা-বাবাকে জিজ্ঞাসা করে,

—‘ তোমাদের কে খবর দিল? ‘

হালিম সাহেব মুখের গম্ভীর ভাব ধরে রেখে বলে,

—‘ ইয়ট ম্যানেজমেন্ট।যারা যারা পাহাড়ে উঠেছে তাদের সবারই ক্ষতি হয়েছে।৮জন নাকি মারাও গেছে। ‘

আদনান চোখ দুটো বন্ধ করে বলে,

—‘ হঠাৎ ভুমিকম্প হওয়ার কারনে এতকিছু হয়েছে,না হলে কিছুই হত না। ‘

এই মুহুর্তে গোঙ্গানির আওয়াজ পায় আদনান।মুহুর্তের মধ্যে সে তার চোখ জোড়া খুলে ফেলে।মাথা ঘুড়িয়ে তাকায় চারুর দিকে।চারু চোখ খুলে‌ আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে।দুজনের মধ্যে চোখা-চোখি হয়ে যায়।দুজনের চোখের কোণেই পানি দেখা যায়।চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে থাকে।তাকে থামানোর চেষ্টা করে রিমি ও তার মা।সাথে যোগ দেয় হালিম সাহেবও।হালিম সাহেব ঘোষণা করেন,এরা দুজনই সুস্থ হলে আরো কয়েকটা দিন ছুটি কাটিয়ে চলে যাব আমরা।

৩৩.

দেখতে দেখতে কেটে যায় ৫দিন।মোটা-মুটি সুস্থ হয়ে ওঠে আদনান ও চারু।ঠিকভাবে চলাচল করতে পারে দুজনেই।হালিম সাহেব ও রাহিনা বেগমের মাথা থেকে অনেক বড় একটা চিন্তা নেমে যায়।রিমিতো এই ভেবে খুশি যে তারা আরো কয়েকটা দিন আমেরিকাতে থাকছে।চারু আর আদনানও ‌খুব খুশি।তারা দুজন দুজনকে পু‌নরায় ফিরে পেয়েছে।

পরেরদিন সকালেই হালিম সাহেব জানিয়ে দেন সমস্ত দিনের ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা।শুরুতেই তারা রেষ্টুয়েন্টে ব্রেকফাষ্ট করবে,তারপর ঘোরাঘুরি শুরু করবে।হোটেলে আরো দুটো রুম ভাড়া নেয়া হয়েছে।একটা রিমি আর তার মা।একটাতে হালিম সাহেব।আর আগের রুমেই রয়েছে আদনান ও চারু।

পরিকল্পনা অনুযায়ী সবাই বেড়িয়ে পরে রেষ্টুয়েন্টের উদ্দেশ্যে।রেষ্টুয়েন্টে গিয়ে খাবার অর্ডার করে হালিম সাহেব।পেটের মধ্যে ক্ষিধা থাকার কারনে সবাই তৃপ্তি সহকারে খাওয়া শেষ করে।খাওয়া শেষ করে তারা সবাই বের হয় রেষ্টুয়েন্ট থেকে।

হালিম সাহেব এর আগে আরো কয়েকবার এসেছিলেন এইখানে।অবশ্যই অফিস থেকে।তাই এখানকার অনেক জায়গাই হালিম সাহেবের চেনা।তাই তিনি সবাইকে নিয়ে রওনা দেন ম্যাজিক মাউনটাইনে।সেখানে অনেক বেড়ানোর জায়গা আছে।

একপর্যায়ে গাড়ি এসে তাদের নামিয়ে দেয় ম্যাজিক মাউনটাইনে।টিকিট কেটে এক এক করে ভিতরে প্রবেশ করে সবাই।ভিন্ন ভিন্ন রাইড দেখে সেখানে উঠার ইচ্ছাপ্রকাশ করে চারু ও রিমি দুজনে।এক এক করে প্রায় সব রাইডেই উঠে হালিম সাহেবের পরিবার।

একপর্যায়ে সূর্য কিরন দিতে শুরু করে মাথার ঠিক উপর থেকে।সবার পেটে ক্ষুধার ঘন্টা বেজে ওঠে টং টং করে।হালিম সাহেব সবাইকে নিয়ে সেখানকার একটা ভালো‌ রেষ্টুয়েন্টে প্রবেশ করেন।কয়েকবার এখানে আসার খাতিরে এখানকার একটা বাঙ্গালি ম্যাচিয়ারের সাথে ভাব জমে ওঠে হালিম সাহেবের।সেই লোকটা সবাইকে খাবার এনে দেয়।সবাই খাওয়া শেষ করে বের হয়ে আসে।

বাহিরে বের হয়ে হঠাৎ করে আদনান বলে ওঠে,

—‘ বাবা,আমি আর চারু ওদিকে যাই। ‘

হালিম সাহেব ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলেন,
—‘ যাও ‘

রিমি চারুর দিকে তাকিয়ে তার কানে কানে বলে,
—‘ কি ব্যাপার? ‘
রিমির কথায় চারু একটু একটু লজ্জা পায়।আদনান চারুর হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে অন্যদিকে।চারু আদনানের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,

—‘ এদিকে কেন আসতে চাইলেন? ‘

আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,

—‘ এমনি।আমার আর হাটতে ইচ্ছা করতেছে না।আসার সময় এদিকে একটা পার্ক দেখেছি।সেখানে গিয়ে বসবো‌ একটু। ‘

এই বলে চারুর হাত ধরে আবার হাটতে শুরু করে আদনান।চারুও আদনানের সাথে পা মিলিয়ে চলতে শুরু করে।একপর্যায়ে তারা এসে পৌছায় পার্কটাতে।চারু অবাক হয়ে পার্কটার দিকে তাকায়।এত সুন্দর জায়গা সে বাবা জন্মে,মায়ের জন্মে,কারো জন্মেই দেখেনি।কি সুন্দর সবুজ ঘাস?একেকটা করে ঘাসের উচ্চতা প্রায় ৩-৪ ইঞ্চি।

আদনান চারুকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।তাদের মতো‌ আরো অনেকেই বসে রয়েছে সেখানে।আদনান চারুকে নিয়ে বসে একটা গাছের নিচে।

চারু অবাক হয়ে চারদিকে তাকাতে থাকে।আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ সেদিন যদি ছেলেটাকে সাপের ভয় না দেখাতি তাহলে কিন্তু পালাতো ‌না ছেলেটা।আর আমিও তোকে পেতাম না। ‘

হঠাৎ আদনানের মুখে সাপের কথা শুনে খানিকটা চমকে যায় চারু।আদনান কিভাবে জানলো?আদনান যদি তার বাবা-মাকে বলে দেয় শেষ।চারু মনের কথা যেন বুঝতে পারে আদনান।তাই চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ ভয় নেই,ভয় নেই।বলবো‌ না। ‘

চারু এবার দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নেয়।আদনান চারুর কোলে‌ মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে।চারু আদনানের মাথাটা নিজের কোলের উপর নিয়ে আদনানের চুলগুলোতে বিলি কাটতে থাকে।একপর্যায়ে চারু আসতে আসতে আদনানের দিকে ঝুকে পড়ে।আদনান এক টানে চারুকে নিজের পাশে শুইয়ে দেয়।

দুজনে তাকায় উপরে থাকা আকাশটার দিকে।সম্পুর্ন তৃণভূমিকে ঘিরে রয়েছে নীল আকাশটা।আদনান চারুর দিকে তাকায়।চারুও তাকায় আদনানের দিকে।চারু আদনানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া,সারাজীবন যেন এরকম একসাথে শুয়ে থাকতে পারি। ‘

আদনান চারুর কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলে,
—‘ এরকম ঘাসের উপর শুয়ে থাকার ইচ্ছা আমার নেই।আমি বিছানায় থাকতে চাই। ‘
চারু হেসে বলে,–‘ কিন্তু আমি এই তৃণের উপরে শয্যা অবস্থায় থাকতে চাই।আই মিন তৃণশয্যা।ঘাসের উপরে থাকতে চাই আমি। ‘

আদনান জোর প্রতিবাদ করতে যায় এই কথার।কিন্তু ততক্ষনে চারু নিজের ঠোট দিয়ে আটকে ধরে আদনানের ঠোট।কোনো‌ কথা বলার সুযোগ দেয় না আদনানকে…

সমাপ্ত.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে