#তুমি_এলে_তাই
#ইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ১৫ (শেষ পর্ব)
বাসার গেটে ঢুকতেই শুভ্রের সাথে দেখা।শুভ্রকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই শুভ্র বলে উঠল,
“বিয়ে করছেন শুনলাম।”
“হুম।”
“ভালো!এবার অন্তত সুখী হবেন আপনি।”
কিছুক্ষন থেমে বলল,
“আমাকে এভয়েড করছেন?”
“কই না তো!”
“বাই দা ওয়ে,Congratulation.দোয়া করি এবার অন্তত জীবনে সুখী হন।অনেক কষ্ট করেছেন লাইফে।”
বলেই গেট থেকে বেরিয়ে দিলো।শুভ্রের যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চৈতি।হাসি আসছে ওর আরশির কথাগুলা মনে করে।এই ছেলে নাকি ওরে ভালোবাসে?বিয়ে হয়ে যাবার কথা শুনে যে ছেলে হাসিমুখে বলতে কংগ্রাচুলেশন বলতে পারে সে আর যাই হোক ভালোবাসতে পারে না।ও মনে হয় লাইফের বেস্ট ডিশিসনটাই নিয়েছে।আশরাফকে বিয়ের ডিশিসনটা নিয়ে ও একদমই ভুল করেনি।হঠাত গালে ভেজা অনুভব হতেই হাত দিয়ে স্পর্শ করল।আশ্চর্য ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে কেন?ওর তো খুশি হবার কথা ওর বিয়ে হচ্ছে এই কথা ভেবে।তা না করে কিনা সে কান্না করছে?না না একদমই চোখের পানি মানায় না।তাও আবার শুভ্রের জন্য। চোখের পানি মুছে ঘরে ঢুকতেই চৈতির মা বললেন,
“দেখ তোর জন্য আশরাফ শাড়ি,গয়না,সাজগোজ সবকিছুই নিজের হাতে কিনে দিয়ে গিয়েছে। তোর সাথে দেখা করতে চাইছিলো কিন্তু বেশি দেরি হয়ে যাবে তাই চলে গেলো।”
কিছুক্ষন থেমে চৈতির কাছে গিয়ে গালে হাত দিয়ে বলল,
“তুই কি এই বিয়েতে সত্যিই খুশি?”
“কি যে বলো না?আমার বিয়ে আমি খুশি হবো না তো কে হবে?কত শত বিয়ে ভাংগার পর এই বিয়েটা হচ্ছে আমার থেকে তো তোমার বেশি খুশি হবার কথা মা?তুমি তো চেয়েছিলে আমার বিয়ে হোক!”
চৈতির কথা শুনে চৈতির মা মাথা নিচু করে ফেললেন।
“বাদ দাও।আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি।”
.
.
“শুভ্রভাই,আজকে চৈতির বিয়ে।”
“হুম জানি তো!”
“আপনার কি চৈতির প্রতি কোন অনুভূতিই নেই?এতদিন জাস্ট ফ্রেন্ড ই ভেবেছেন?এছাড়া আর কোন অনুভূতি জম্মায়নি আপনার মনে?”
“নাহ!”
“শুভ্র ভাই,চৈতি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছে।ও রাগের মাথায় বিয়েটা করছে।আপনি প্লিজ বিয়েটা আটকান!”
“ওর ডিশিসন ও নিয়েছে।আমি আটাকানোর কে?”
“আপনি থাকুন।আর অইদিকে চৈতির বিয়েটা হয়ে যাক।দেখবেন পরে আবার যেন না আফসোস করেন।”
বলেই আরশি কল কেটে দিল।
ফোনটা টেবিলের উপর রেখে চেয়ারে সোজা হয়ে বসে রইল কিছুক্ষন।আচ্ছা ও কোন ভুল করে ফেলছে না তো?ও কি চৈতিকে শুধুই ফ্রেন্ড ভাবে?চৈতির জন্য ওর মাঝে কোন অনুভূতি নেই?ও কি চৈতিকে ভালোবাসে না?
একটার পর একটা এমন হাজারটা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরঘুর করছে।চুলগুলো খামচে মাথা নিচু করে বসে রইল শুভ্র।ও এখনো নিজের অনুভূতিটাকেই বুজতে পারছে না।
.
.
চৈতির ঘরে এখন বিয়ের শাড়ি আর গয়নায় ভরপুর।আরশি সেদিনের পর আর কথা বলেনি ওর সাথে।হয়তবা রাগ করেছে।শুভ্রের সাথেও সেদিনের পর আর দেখা হয়নি।চৈতির মা সারাদিন ব্যাস্ত। এদিক থেকে সেদিক দৌড়াচ্ছে।কখনো যেখানে রান্না হচ্ছে সেখানে গিয়ে তদারকি করছেন আবার কখনো ফুল দিয়ে যেখানে সাজানো হচ্ছে সেখানে গিয়ে তদারকি করছে।একটু পরেই পার্লার থেকে মেয়ে আসলো ওকে সাজাতে।
“বেশি ভারী সাজ দিবেন না।হালকা করে মেকাপ করে দিয়েন।”
“আচ্ছা।”
টানা ২ ঘন্টা পর সাজ একদম কমপ্লিট।
“বাহ,আপনাকে পুরা পরীর মতো লাগছে।”
মেয়েটার কথা শুনে চৈতি হালকা করে হাসলো।বিয়ের সময় হয়ে গিয়েছে।পাত্র পক্ষ এসে গিয়েছে অলরেডি চৈতির কাজিনরা চৈতিকে ধরে বিয়ের আসরে নিয়ে গেল।চৈতি মাথা নিচু করে আছে।সব নিয়মকানুন শেষে কবুল বলতে বলা হলো চৈতিকে। চৈতি সামনে আশেপাশে তাকালো।কাংখিত মুখটিকে সে খুজে পেল না।
“কিরে কবুল বলছিস না কেন?”
কবুল কথাটা লিখতেই যাবে এমন সময় হঠাত কেও ওর হাত ধরল।চমকে উপরে তাকাতেই শুভ্রের শুকনো মুখটা দেখলো।শুভ্র কিছু না বলে এক ঝটকায় হাত টান দিয়ে চৈতিকে বসা থেকে দাঁড় করালো।অতঃপর হাত টেনেই হাঁটা ধরল সামনের দিকে।
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনি চৈতিকে?আপনাকে এত বড় সাহস কে দিয়েছে?”
“চৈতি আপনাকে মন থেকে বিয়েটা করছেনা।”
বলেই আর কোন কথায় কান না দিয়ে বিয়ের আসর ছেড়ে বেরিয়ে আসল।চৈতি এখনো একটা ঘোরের মাঝে আছে।শুভ্র হাত ধরেই রাস্তা দিয়ে হেঁটে নিয়ে যাচ্ছে ওকে।রাস্তার সবাই ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।শুভ্রের এতে কোন মাথা নেই।ও সামনে তাকিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।কিছুদুর পার হতেই হাত ছাড়লো।
“আমাকে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?আপনি জানেন কি কাজ করেছেন আপনি?”
“জানি!কিন্তু আপনি কি করতে যাচ্ছিলেন?যাকে ভালোবাসেন না তাকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলেন?”
“তো কি করব আমি?যাকে ভালোবাসি সে তো আমাকে মানাই করে দিয়েছে।আর কি করার আছে আমার?”
“আমি একটু কনফিউশানে ছিলাম আপনাকে নিয়ে। আপনার প্রতি আমার অনুভূতিটাকে নিয়ে।আদৌও আমি আপনাকে ভালোবাসি কিনা সেটা নিয়ে।তাই মানা করে দিয়েছিলাম।এখন বুঝতে পারছি আমি কত বড় ভুল করেছি।আমি আপনাকে ভুঅঅ বলেছি আমি আপনাকে বন্ধুর মতো কোনদিনই ট্রিট করিনি।আমি যা করেছি তা শুধু আপনার পাশে থাকার জন্য করেছি।আপনার মুখে হাসি ফুটাবার জন্য করেছি।দেরিতে হলেও আমি এটা বুঝেছি যে আপনাকে ছাড়া আমার জীবন অচল। এই কয়টাদিন আমি একটা ফোটাও শান্তি পাইনি জানেন?বারবার চিন্তারা আমাকে কুঁড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো।এতদিন ভুল করলেও আজকে আমি কোন ভুল করিনি।আমি নিজের মনের কথাটাকে শুনেছি।”
“কিন্তু…..”
“দুঃখিত আমার অনুভূতি বুঝতে দেরি হবার জন্য।ভালোবাসি আপনাকে।অন্য কারোর কি করে হতে দেই?”
ভেবেছিল শুভ্রকে কয়েকটা কঠিন কথা বলবে।কিন্তু শুভ্রের মুখে এমন কথা শুনে থমকে গেল।
“আমাকে কি আশরাফের মতো একটা সুযোগ দেওয়া যায়না?”
চৈতি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
“আপনার যদি অমত থাকে তাহলে আমি আবার আপনাকে বিয়ের আসরে পৌছে দিব।তাও প্লিজ চুপ করে থাকবেন না!”
“ভুলেও এই কথা বলবেন না।একে তো বিয়ের আসর থেকে তুলে এনেছেন এখন যদি আবার গিয়ে দিয়ে আসেন একটা মারও পিঠের বাইরে পরবে না।”
“চলুন।”
“কোথায়?”
“কাজি অফিসে!বিয়ে করে মার কাছে যাবো।গিয়ে দোয়া নিয়ে আসব।”
“এক্ষুনি?”
“হ্যা!পরে যদি আপনি অই আশরাফকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যান? আমি একবার রিস্ক নিয়েছি আর রিস্ক নিতে চাইনা।”
“আপনার কোন অসুবিধা হবে না?”
“কিসের অসুবিধা? ”
“আপনিই তো বলেছিলেন আপনি আর আমি দুজন দুপ্রান্তের মানুষ। ”
“চৈতি সেটা আমি না বুঝে বলেছি।”
“আমি তো আপনার কোন আত্মীয় -স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কথা বলতে পারব না?তারা আপনাকে হাসবে না?”
“হাসলেও আমার কি?আমি আপনার কন্ঠ হব, শ্রবনশক্তি হবো!কেও যদি আপনাকে কিছু বলে তা আপনাকে আমি বলব।আবার আপনার কথা তাদের কাছে আমি পৌছাবো।”
“সত্যি?পরে আফসোস করবেন না তো?”
“প্রশই আসে না।”
.
.
দেখতে দেখতে প্রায় কয়েকমাস পার হয়ে গিয়েছে।শুভ্রের মা প্রথমে চৈতিকে মেনে না নিলেও এখন চোখে হারায়। উনি নিজোে ভাগ্যবতী মনে করেন এমন একটা বউমা পেয়ে।চৈতি প্রেগন্যান্ট।আর দুদিন পর ওর অপারেশনের ডেট।রান্না করছিলো রান্না ঘরে দাড়িয়ে। হঠাত পেটে আচমকা ব্যথা টের পেলো।প্রথমে পাত্তা দিলো না সে।কিন্তু আস্তে আস্তে ব্যাথার পরিমান বাড়তে লাগলো।একসময় সামান্য ব্যাথা অসহ্যনীয়তে পরিনত। হলো।নিচে বসে পরল সে পেটে হাত দিয়ে।অপারেশনের তো ডেট ছিল দুদিন পর তবে আজকে এমন ব্যথা করছে কেন।শুভ্রের মা নিজের রুম থেকে পোড়া গন্ধ পেয়ে দৌড়ে আসলেন রান্নাঘরে।এসে দেখলেন চৈতি মেঝেতে বসে আছে। ব্যাথায় কাতরাচ্ছে।দেরি না করে দৌড়ে নিজের রুমে এসে অ্যাম্বুলেন্স ডাকলের।অতঃপর শুভ্রকে কল করে জানালেন।শুভ্র অফিসে বসে কাজ করছিলো।জরুরি একটা মিটিং আছে ওর।সেটারি প্রিপারেশন নিচ্ছিল।পকেটে ফোন বাজতেই রিসিভ করে হ্যালো বলতেই তার মা বললেন,
“চৈতির অবস্তা বেশি একটা ভালো। আমি ওকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি।তুই ও তাড়াতাড়ি আয়।”
শুভ্র বসা থেকে উঠে যাওয়ার এসিস্ট্যান্টকে বলল সবগুলা মিটিং ক্যান্সেল করতে বলতে এসিস্ট্যান্ট অবাক হয়ে বলল,
“স্যার আপনি সিউর তো?না মানে কয়েক কোটি টাকার ডিল ছিল।এখন এই মুহূর্তে মিটিং ক্যান্সেল করলে তো সবগুলা টাকাই…. ”
“টাকা জাহান্নামে যাক।টাকার চেয়ে আমার স্ত্রীর গুরুত্ব আমার কাছে বেশি।”
বলেই অফিস থেকে বেরিয়ে পরল।হাসপাতালে পৌছাতেই দেখল শুভ্রের মা বসে আছে। কাছে গিয়ে বলল,
“আম্মু!”
“ওটিতে নিয়ে গেছে একটু আগে।”
শুভ্র মার পাশে বসে পরল।টেনশন হচ্ছে খুব।একটু পরেই ডাক্তার বেরিয়ে আসতেই শুভ্র দৌড়ে গিয়ে বলল,
“আমার স্ত্রীর অবস্তা… ”
“সুস্থ আছেন।সাথে আপনার ছেলেও।”
“আলহামদুলিল্লাহ। দেখা করতে পারি এখন?”
“হ্যা!তবে একজন জাস্ট।”
শুভ্রের মা শুভ্রকে যেতে বলল।শুভ্র ধীর পায়ে প্রবেশ করতেই দেখল চৈতি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।কাছে গিয়ে মাথায় হাত রাখতেই চৈতি চোখ খুলে বলল,
“আমার বাচ্চা!”
“আম্মুর কাছে।”
“ওকে একটু নিয়ে আসবে?”
শুভ্র গিয়ে মার থেকে বাচ্চাটাকে নিয়ে চৈতির কাছে নিয়ে আসলো।
“ওর কানের কাছে একটু শব্দ করো তো!”
“কেন?”
“আহা!করো না।”
শুভ্র শব্দ করতেই বাচ্চাটা নড়ে উঠল।বাচ্চাটাকে নড়ে উঠতে দেখে চৈতি প্রশান্তির একটা হাসি দিল।
“হাসছো কেন?আর শব্দ করতে বললে কেন?”
“চেক করে দেখলাম বাচ্চাটা আমার মতো হয়েছে কিনা!”
“তোমার মতো মানে?”
“কানে শুনতে পায় কিনা!”
“চৈতি!তোমাকে কয়বার বলেছি এসব নিয়ে কথা বলবে না।ও যদি তোমার মতো হতো তবুও আমি ওকে যত্নে রাখতাম।কারন ও আমার সন্তান।”
“তোমার না বলো আমাদের।”
“হুম।ধন্যবাদ আমাকে এত সুন্দর একটা উপহার দেওয়ার জন্য। ”
“ধন্যবাদ তো আমার তোমাকে দেওয়া উচিত।তোমার কারনেই আমি আজ সুখী।সমাজের কথা -বার্তাকে দুরে ঠেলে আমাকে আপন করে নিয়েছো। আমার জীবনটা আজকে অন্যরকম হতে পারতো!কিন্তু তোমার কারণেই আমি পরিপূর্ণ হয়েছি।শুধু #তুমি_এলে_তাই আমার জীবনে আশার আলো খুঁজে পেয়েছ যে জীবনের ভবিষ্যত আমার কাছে অনিশ্চিত ছিল।ধন্যবাদ আমার লাইফে আসার জন্য। আমার বাচ্চার বাবা হবার জন্য। ”
এরমধ্যেই বাচ্চা চিৎকার করে উঠলো।
“দাও দাও আমার কাছে দাও।একটা বাচ্চাও রাখতে পারো না।”
#সমাপ্ত