#তুমি_এলে_তাই
#ইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ১৪
“আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন আন্টি মানে আপনার মা আমাদের বিয়ে নিয়ে ভাবছেন!”
শুভ্রের কথা শুনে চৈতি মাথা নাড়ালো।শুভ্র জিহ্বা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলল,
“দেখুন!আমি মানছি আপনি একজন অত্যন্ত ভদ্র -নম্র মেয়ে। আপনার মাঝে সব গুনই আছে যা একজন ছেলে তার বউয়ের মধ্যে দেখতে চায়।কিন্তু আমি আপনাকে জাস্ট আমার ফ্রেন্ডই ভাবি।ভালোবাসার মানুষ হিসেবে আপনাকে কল্পনা করিনি কোনদিন।জাস্ট ফ্রেন্ড হিসেবেই আপনার সাথে চলা ফেরা করা,কথা বলা।আপনি নিশ্চয়ই আমাকে ভুল বুঝছেন তাই তো?কিন্তু আপনিই বলুন আমি আর আপনি দুজনেই তো দুই পৃথিবীর মানুষ রাইট?আমাদের মধ্যে বিয়েটা হলেও না আপনি সুখী হবেন আর না আমি!তাই বলছিলাম কি…..
” বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিতে হবে তাই তো?”
“ইয়েস।”
“আপনি কোন টেনশন করবেন না।আমি আম্মুকে বলব।আপনাকে আমার বিয়ে করতে হবে না।”
“আপনি আবার আমার উপর ভুল ধারনা…..”
“নাহ নাহ,আপনি যা বলছেন ঠিকই বলছেন!আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়ে আপনার জীবন নষ্ট করার তো কোন মানে হয় না।ঠিকই বলেছেন।”
বিড়বিড় করতে করতে চৈতি ছাদ থেকে নেমে গেল।শুভ্র একটা প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিলো।যাক সব চিন্তা ভাবনা শেষ।
পরেদিন,
“চৈতি,আশরাফ স্যার যে রিজাইন নিয়েছে শুনেছিস?”
“হুম।”
“হুট করে রিজাইন কেন নিলেন উনি আমি তো সেটাই বুঝলাম না!কারনস্বরূপ নাকি নিজের পার্সোনাল প্রবলেমের কথা বলেছেন।”
“হুম।”
“তুই শুধু কথায় কথায় হুম বলছিস কেন?কিছু কি হয়েছে?”
“নাহ,কি হবে?”
“কিছু তো নিশ্চয়ই হয়েছে।তুই কি আমার উপর রাগ করে আছিস?”
“রাগ কেন করব?”
” কয়দিন তোর সাথে কথা বলিনি দেখে!”
“সেটা তো আমার জন্যই। আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই তো কথা বলিস নি।সেটা নিয়ে রাগ করার কোন মানে হয় না!”
“তাহলে কেন রাগ করে আছিস?”
“রাগ করিনি। এমনিই জাস্ট ভালো লাগছে না।কিছু মনে না করলে একটু চুপ থাকবি প্লিজ?কথা বলতে ভালো লাগছে না।”
“হুম।”
দুজনের মধ্যে আর কোন কথা হলো না।ক্লাস শেষে কলেজ থেকে বের হতেই দেখল শুভ্র গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ওয়েট করছে বোধ হয় ওর জন্য।সকালে না হয় তাড়াতাড়ি বের হয়ে গিয়েছল।কিন্তু এখন কি করবে?শুভ্রের সামনে যেতেই কেমন যেন লাগছে।ইশ কেন যে তখন আম্মু কে মানা করলো না।তাহলে তো আম্মু শুভ্রের কাছে বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলতো না আর না এমন পরিস্থিতির স্বীকার হতো।এখন কি করে শুভ্রের সামনে যাবে?নিজের অস্বস্তিটাকে দুরে রেখে শুভ্রকে না দেখার ভান করে চলেই যাচ্ছিলো। কিন্তু শুভ্র হঠাত সামনে এসে বলল,
“কোথায় যাচ্ছেন?গাড়ি তো পিছনে।আমাকে দেখেন নি?”
এখন কি উত্তর দিবে?নিজেকে সামলিয়ে বলল,
“ওহ,ওখানে আপনি দাঁড়িয়ে ছিলেন? দেখিনি তো!”
“সমস্যা নেই।এখন চলুন।”
“না!”
শুভ্র ভ্রু কুচকে বলল,
“কেন?”
“ইয়ে মানে…আমার একটু কাজ আছে অইদিকে।আমি এখন বাসায় যাব না।”
“তাহলে আপনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই আমি আপনাকে নামিয়ে দিচ্ছি!”
“চৈতি আমাদের বাসায় যাবে।”
আরশি চৈতির কাধে হাত রেখেই বলল।চমকে চৈতি পাশ ফিরে তাকাতেই আরশিকে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
“আসলে পড়া নিয়ে একটু কথা ছিল ওর সাথে।তাই আমাদের বাসায় ওকে ইনভাইট করেছি।শুভ্র ভাই আপনি চলে যান।”
“কিন্তু….”
“চৈতি চল!দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের।”
শুভ্রকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চৈতি আর আরশি একটা রিকশায় উঠে পরল।
“কিরে?এখনো কি বলবি কিছু হয়নি?যেতে চাইছিলি না কেন?”
“তুই মিথ্যা কথা বললি কেন?”
“দুর থেকেই তোদের কথা বার্তা শুনেই বুঝলাম তুই শুভ্র ভাইয়ের সাথে বাসায় যেতে চাচ্ছিস না।তাই বুদ্ধি খাটিয়ে মিথ্যা বললাম।এবার তুই বল কি হয়েছে?”
“আম্মু উনাকে আমার সাথে বিয়ের ব্যাপারে বলেছিলেন।”
“বাহ,ভালো তো!শুভ্র ভাই নিশ্চয়ই হ্যা বলেছেন?অহ তুই লজ্জায় উনার সাথে যেতে চাচ্ছিলি না।আর আমি কি না কি ভাবলাম।”
“এসব কিছুই না।উনি মানা করে দিয়েছেন।”
“কিহ?”
“হ্যা!উনি আমাকে আলাদা করে ডেকে বলেছেন আমাকে উনি জাস্ট ফ্রেন্ডই ভাবেন। অইভাবে কোনদিন ট্রিট করেননি আমাকে।তাই উনি আমাকে বিয়ে করতে পারবেন না।এতে আমরা কেওই সুখী হবো না।”
“মানে কি ভাই?এতদিন উনি তোরে জাস্ট বন্ধু ভাবছে?তোর জম্মদিনের আইডিয়া তো শুভ্র ভাইই আমাকে দিয়েছিলেন!ইভেন সব কাজ উনি নিজ হাতে করেছেন।আমাকে হাত লাগাতেও দেননি।কেকটা পর্যন্ত উনি নিজে বানিয়েছেন।কোন বেকারি সপ থেকে কিনেননি।তোর যদি বাইরের খাবার খেয়ে শরীর খারাপ হয় এই ভেবে।টানা ৪ ঘন্টা লাগিয়ে কেকটা বানিয়েছেন।কেও কি এতসব শুধু তার জাস্ট ফ্রেন্ডের জন্য করে?তুইই বল?”
“উনি তো তাইই বললেন।”
“ঘোড়ার ডিম বলছে।এত কেয়ার,চিন্তা ভাবনা আমি আমার লাইফে উনার বন্ধুদের জন্য করতে দেখি নি।মিথ্যা বলেছেন তোকে!”
“মিথ্যা কেন বলবেন? ”
“সেটা আমি কি করে জানব?তুইই খুজে বের কর।তোর কাজ এটা।”
.
.
আরশিদের বাসা বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে আরশির বলা কথাগুলো ভাবছে।আচ্ছা আরশির কথা গুলা কি ঠিক?কিন্তু উনি কেন মিথ্যা বলবেন আমায়?আমাকে বিয়ে করতে উনার কি সমস্যা?
ভাবতে ভাবতে বাসায় পৌছে ঘরে ঢুকতেই আশরাফের মা কে দেখল।ওরা কি আবার ওর বিয়ে নিয়ে কথা বলতে এসেছে?চৈতিকে দেখেই আশরাফের মা চৈতির কাছে এসে বললেন,
“আমাকে ক্ষমা করে দাও মা!আমার ছেলেটাকে একটা সুযোগ দাও।ছেলেটা আমার এ পর্যন্ত ভালোভাবে একটা খাবারও মুখে তুলেনি।তুমিই বলো এভাবে চলতে থাকলে তো ও অসুস্থ হয়ে যাবে!চাকরিটাও ছেড়ে দিয়েছে।প্লিজ তুমি বিয়েতে রাজি হয়ে যাও!”
“কিন্তু আন্টি….”
“হাত জোর করে বলছি প্লিজ রাজি হয়ে যাও।তুমি বললে তোমার পায়েও পরব।আমার ছেলেটাকে আমি আর এ অবস্তায় দেখতে পারছিনা।এভাবে চলতে থাকলে ও মানসিক ভাবে অসুস্ত হয়ে যাবে।আমার ছেলেটার ভালোর কথা ভেবে রাজি হয়ে যাও।”
চৈতির মা আশরাফের মায়ের সামনে এসে বললেন,
“দেখুন!আপনি কিন্তু এখন আমার মেয়েকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করছেন!আমি আপনার ছেলেকে যা বলার বলে দিয়েছি।তাহলে আপনি কেন…. ”
“আমি বিয়েটা করতে রাজি মা।”
লেখাটা পড়ে চৈতির মা অবাক হয়ে বলল,
“চৈতি!তুই যা বলছিস ভেবে বলছিস তো?”
“হ্যা মা।আমার জন্য মানুষ এত পাগলামি করছে তাকে আমি কি করে মানা করি?ভুল তো সবাইই করে।আমাদের উচিত উনাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া।আর আন্টি আপনি আশরাফ স্যারকে চিন্তা করতে মানা করেন।উনাকে বলুন আমি এই বিয়েতে রাজি।”
“আলহামদুলিল্লাহ। তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিব?তুমি আমার ছেলেটার প্রান বাঁচালে মা!আগামি শুক্রবারে বিয়ের ব্যাবস্তা করি?”
“আপনার ইচ্ছা।আমার কোন অসুবিধা নেই।”
আশরাফের মা খুশি হয়ে চৈতিকে দোয়া করে চলে গেলেন।
“চৈতি তুই নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে মতামতটা দিলি না তো?”
মার কথা শুনে চৈতি বলল,
“মা আমি সজ্ঞানে মতামতটা দিয়েছি।”
“কিন্তু….”
“আমি এখন একটু রেস্ট নিবো।”
বলেই নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পরল।
পরেরদিন কলেজে গিয়ে আরশির পাশে বসতেই আরশি বলল,
“কি শুনলাম আমি?”
“কি শুনলি?”
“তুই নাকি আশরাফ স্যারকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিস?”
“হুম।”
“কিন্তু তুই এমন একটা মানুষকে বিয়ে করবি?তুই কি ভুলে গিয়েছিস উনি তোকে প্রতিদিন খোটা দিয়েছে! তোকে সবার সামনে হাসির পাত্র বানিয়েছে।কি করে তুই রাজি হচ্ছিস?”
“তোকে আমি একদিন একটা কথা বলেছিলাম মনে আছে?রিকশাওয়ালা হলেও আমি বিয়ে করব?সেখানে উনি তো অনেক ভালো। উনি উনার ভুল বুঝতে পেরেছেন!আমার কি উচিত না উনাকে ক্ষমা করে দেওয়া?”
“কিন্তু শুভ্র ভাই….”
“উনি তো আমাকে মানা করে দিয়েছেনই।”
“চৈতি,তুই শুভ্র ভাইয়ের উপর রেগে বিয়েটা করতে চাইছিস তাই না?”
“তেমন কিছুই না।আমার জাস্ট মনে হলো আশরাফ স্যারকে সুযোগ দেওয়া উচিত।”
“তোর যা ইচ্ছা তুই তাই কর।আমি কিছু বলব না আর!”
.
.
বাসার গেটে ঢুকতেই শুভ্রের সাথে দেখা।শুভ্রকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই শুভ্র বলে উঠল,
“বিয়ে করছেন শুনলাম।”
“হুম।”
“ভালো!এবার অন্তত সুখী হবেন আপনি।”
কিছুক্ষন থেমে বলল,
“আমাকে এভয়েড করছেন?”
“কই না তো!”
“বাই দা ওয়ে,Congratulation.দোয়া করি এবার অন্তত জীবনে সুখী হন।অনেক কষ্ট করেছেন লাইফে।”
#চলবে…..