#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৭
মার থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে লিফট থেকে নেমে দৌড়াতে লাগল।আজকেও লেট হয়ে গেছে।সামনেই গাড়ির সামনে শুভ্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পায়ের স্পিড আরও বারিয়ে দিল।আর মার দেওয়া হিল জুতা পরার ফলেই একটা অঘটন ঘটে গেল। তাড়াতাড়ি করে হাঁটতে গিয়ে চৈতি জুতার সাথে পা লেগে গিয়ে একদম শুভ্রের উপর পরল।এই ঘটনাই চৈতি যেমন অবাক হয়েছে তেমন শুভ্রও অবাক হয়েছে।চৈতি তাড়াতাড়ি সরি বলে শুভ্রের থেকে উঠে এলো।শুভ্র এখনও ঘোরের মধ্যে আছে।একটু আগের ঘটা ঘটনাটা থেকে বেরুতে পারছে না।শুভ্রকে স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চৈতি একটু সামনে এগিয়ে শুভ্রের মুখের সামনে নিজের হাত নাড়ালো।হুশ ফিরে আসতেই নিজেকে সামলে চৈতির জন্য দরজা খুলে দিল।চৈতি গাড়ির ভিতর ঢুকতে যেতেই গাড়ির উপরের অংশের সাথে জোরে ঢাক্কা খেল।কপালে হাত দিয়েই ব্যাথায় চোখ মুখ কুচকে ফেলেছে সে।যে সময়ই তাড়াহুড়া করতে যায় সেময়েই হাজারটা অঘটন ঘটে।যেমন আজকেরটাই ধরা যাক,এই পর্যন্ত কতবার বাজে ঘটনা ঘটল।প্রথমে হোচট খেয়ে শুভ্রের উপর পরা আর তারপর গাড়ির সাথে এমন জোরে ঢাক্কা খাওয়া।চৈতিকে ব্যাথা পেতে দেখে শুভ্র জিজ্ঞেস করল,
“কপাল তো ফুলে গেছে।বরফ আনব?’
এমনিতেই আজকে দেরি হয়ে গিয়েছে।তার উপর এখন বরফ এনে কপালে দিলে আর কলেজে যাওয়া লাগবে না।আশরাফ স্যার নিশ্চয়ই ভাবছে আমি উনার পড়ায় ফাকি দেবার জন্য ইচ্ছা করে দেরি করে আসছি!শুভ্রকে মানা করে দিল চৈতি।শুভ্রও কিছু না বলে নিজের সিটে বসে গাড়ি চালাতে লাগল। কিছুক্ষন পর ব্যাথা ঠিক হতেই শুভ্রের কাছে টিস্যু চাইলো।পিছনের সিট থেকে টিস্যুর বাক্সটা এনে চৈতিকে দিল শুভ্র।লিপস্টিকটা মুছা লাগবে তার। এভাবে কলেজে কেও লিপস্টিক দিয়ে যায় নাকি?তাও আবার লাল লিপস্টিক।নিজের কাছেই কো কেমন যেন লাগছে।নুড কালার বা হালকা কালারের হইলে নাহয় মানা যেতো। কিন্তু লাল লিপস্টিক?ও কি বিয়ে বাড়ি নাকি কোন অনুষ্ঠানে যাচ্ছে যে তাকে লাল লিপস্টিক ইউজ করা লাগবে।ব্যাগ থেকে আয়না বের টিস্যু দিয়ে ঠোটে লেগে থাকা লিপস্টিকটুকো মুছতে লাগলো।লিপস্টিক মুছা শেষ হলে টিস্যু বাইরে ফেলে পাশের দিকে তাকাতেই দেখল শুভ্র তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।চৈতি হুট করে তাকাবে তা সে কল্পনাই করেনা।হকচকিয়ে ড্রাইভিংয়ে মন দিল সে।কলেজের সামনে আসতেই চৈতি তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমেই দৌড় দিল ক্লাসের দিকে।চৈতির যাবার দিকে তাকিয়ে থেকে শুভ্রও গাড়ি ঘুরালো।
.
.
ক্লাসে ঢুকতেই চৈতি দেখল আশরাফ এখনো ক্লাসে আসেনি।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে।
“কিরে দৌড়ে এসেছিস নাকি?”
আরশির কথা শুনে চৈতি আরশির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল।
“দৌড়ে আসতে কে বলেছে তোকে?কিছু যদি হয়ে যেতো?দেখছিস কিভাবে হাপাচ্ছিস?পানিও তো খেতে পারবি না।রোযা রেখে কি দরকার দৌড়ানোর?”
আরশির কথা শুনে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলিয়ে বলল,
“আরে ঠিক আছি আমি।চিন্তা করিস না।আর অইদিন তো দেখলিই দেরি করে আসার কারণে স্যার কি করল।এরপরও কি দেরি করে আসতে ইচ্ছা হয় তুইই বল!”
“হুম তাও ঠিক।যাইহোক, আজকে আসবি তো?”
“কোথায়?”
আরশি অবাক হয়ে বলল,
“কোথায় আবার আমার বাসায়!”
“তোর বাসায় কেন যাব?”
আরশি রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই চৈতি হেসে বলল,
“আরে মজা করছিলাম!এত সিরিয়াস হয়ে যাস কেন?একটা কথা বলব?”
আরশি ভ্রু কুচকে বলল,
“কি কথা?”
চৈতি জিহ্বা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলল,
“না গেলে হয় না?তুইই দেখ আমি কথাও বলতে পারি না কানেও শুনিনা।তোকে হ্যাপি বার্থডে বলতে পারব না।তোকে গানও শুনাতে পারব না।আবার মানুষের কথাও কিছু বুঝব না।ধর কেও আমাকে জিজ্ঞেস করল তোমার নাম কি?তুমি আরশির কি হও? আমি নাহয় উনার লিপ রিডিং করে উনার জিজ্ঞেস করা প্রশ্ন বুঝলাম।কিন্তু উত্তর দিব কি করে?আমি তো চাইলেও বলতে পারব না.আবার খাতা কলমে লিখেও দেখাতে পারব না।তাই না?মানুষ আরও আমার উপর বিরক্ত হবে।কি দরকার মানুষকে বিরক্ত করার?তার চেয়ে বরং তুই তোর কেক কাটার মোমেন্টটা ভিডিও করে রাখিস ক্লাসে এসে আমি দেখব। তাহলেই তো হয়ে গেল। সব ঝামেলা শেষ তাই না?”
“কোন ঝামেলা শেষ হবে না।আমি তোর সাথে সাথে থাকব। কেও কিছু জিজ্ঞেস করলে তাকে আমি তোর হয়ে এন্সার দিব।আর আমার তোর মুখের হ্যাপি বার্থডে শুনা লাগবে না।তোর হাত দিয়েই নাহয় আমি শুনে নিব।কেও তোকে কিছু বলবে না।বলতেই দিব না আমি।আর কিছু বলে ফেললেও তাকে উচিত জবাব দেওয়ার ক্ষমতা আমার আছে।এখন তুই যদি মন থেকে যেতে না চাস তাহলে তো আমার কিছু করার নেই।সবার সাথে যুদ্ধ করতে পারলেও তোর মনের সাথে তো যুদ্ধ করতে পারব না।তুই না চাইলে না হয় থাক।জোর তো আর করতে পারি না।”
“তুই কি রাগ করেছিস আমার উপর?”
“নাহ,রাগ করব কেন?”
চৈতি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আশরাফ প্রবেশ করল ক্লাসরুমে।আর কিছু বলতে পারল না চৈতি। শুধু ইশারায় সরি বলল।আরশি উত্তরে কিছু বলল না।মুখ ফুলিয়ে ক্লাসে মনযোগ দিতে দেখে চৈতিও মন খারাপ করে মনযোগ দিল ক্লাসে।মনে হয় ওর কথাগুলো বলা উচিত হয় নাই।কেন যে বলল?দুর ভাল্লাগে না।
ক্লাস শেষে ছুটি হওয়ার পর,
চৈতির মন খারাপ দেখে শুভ্র জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে? মন খারাপ?”
শুভ্রকে পুরো ঘটনা খুলে বলতেই শুভ্র বলল,
“এক কাজ করুন না আপনি আপনার বান্ধবীর বার্থডেতে গিয়ে সারপ্রাইজ দিয়ে দিন।সব রাগ গলে পানি হয়ে যাবে।”
“যদি কথা না বলে?”
“আরে বলবে না কেন?উনি তো আপনার সাথে রাগ করেছে না যাওয়া নিয়েই তাই না?এখন আপনি যদি গিয়ে সারপ্রাইজ দেন তাহলে তো রাগ থাকবার কোন প্রশ্নই থাকে না। ”
“হুম!”
“তাহলে যাবেন?”
“হুম।”
“গুড গার্ল।”
.
.
চৈতি আরশিদের বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে ১০ মিনিট হলো।ওর মধ্যে একটা অসস্তি কাজ করছে।কিন্তু এসে যখন পরেছেই তাহলে তো যাওয়া লাগবেই।তাও সে যেতে পারছে না।টানা ১৫ মিনিট নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে গেটের ভিতর ঢুকলো।দরজায় গিয়ে নক করতেই একটা মধ্য বয়স্কা মহিলা এসে চৈতিকে দেখেই ভ্রু কুচকালো।এতে চৈতির মধ্যে অসস্তি দ্বিগুন হারে বেরে গেল।
“কে তুমি?এখানে কি করছ?”
এখন সে কিভাবে উত্তর দিবে?
“কি হলো?কথা বলছ না কেন?”
চৈতি কাধে থাকা ব্যাগ থেকে খাতা কলম বের করতেই যাবে তার আগেই শুভ্র এসে বলল,
“আম্মু, উনি হলেন আরশির বান্ধবী।এক সাথেই পড়ে উনারা।”
শুভ্রকে দেখেই যেন চৈতি চোখ বড় হয়ে গেছে বিস্ময়ে।এই ছেলে এখানে কি করছে?মধ্য বয়স্কা মহিলা বিরক্ত হয়ে বললেন,
“তো এই কথা কি এই মেয়ে বলতে পারে না?তোর কেন বলা লাগল?আর তুই কি করে চিনিস এই মেয়েকে?”
“আমি যেখানে থাকি সেখানের নিচতলায় থাকেন উনি।আর আমি আরশির সাথে অনেকবার দেখেছি উনাকে।”
“ভিতরে আসো।আমি আরশিকে ডেকে দিচ্ছি।”
চৈতি মাথা নাড়িয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে রুমে থাকা সোফায় বসে পড়ল।শুভ্রকে ইশারায় বলল,
“পানি হবে?আমি ইফতারের পর থেকে আর পানি খাইনি।”
“একটু অপেক্ষা করুন। আমি আনছি।”
শুভ্র কিছুক্ষন পর এক গ্লাস পানি এনে চৈতির সামনে রেখে সামনের সোফাটায় বসে পরল।চৈতি এক ঢোকে পুরো পানি খেয়ে খালি গ্লাসটা সামনে থাকা টেবিলে রাখতেই শুভ্র বলল,
“আপনি অবাক হন নি?জিজ্ঞেস করবেন না আমি এখানে কি করছি?”
“হুম অবাক তো হয়েছি বটে।আরশিকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গিয়েছি।বাই দা ওয়ে,আরশি আপনার কে হয়?”
“ছোট বোন।”
“কই আরশি তো আমাকে কোনদিন বলেনি যে ওর একটা বড় ভাই আছে।”
“আপন না।ফুফাতো।”
“অহ আচ্ছা।আপনি জানলেন কি করে আরশি যে আমার বান্ধবী? ”
“আগে জানতাম না।আপনি তো বলেছিলেনই আপনার বান্ধবীর জম্মদিন।হঠাত আপনাকে দেখে বুঝলাম আরশিই আপনার বান্ধবী যার কথা আপনি বলছিলেন।আন্দাজ করেই বলেছি।”
“বাহ,আপনার ধারনাশক্তি ভালো তো।”
“সবাই বলে।”
ওদের কথা শেষ হতেই…….
#চলবে….