#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৩
চৈতি ঘুম থেকে উঠেই দেখলো ৮ঃ৩০ বাজে।অথচ তার ক্লাস ৯ টায়।বড্ড লেট করে ফেলেছে সে।ফাস্ট ক্লাস আবার আশরাফ নামক অসহ্য ব্যাক্তিটার।যে কিনা সময় অসময়ে ওকে খোটা দেওয়ার জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে আজকে কি বলবে আল্লাহই জানে।বিছানা থেকে ওঠে হাত মুখ ধুয়ে ড্রেস চেন্জ করে চুলগুলো আচড়িয়ে বেধে নিল যে করেই হোক ৯ টার মধ্যে পৌছাতে হবে।ব্যাগ কাধে নিয়েই দৌড়ে বেরিয়ে গেল।চৈতির মা তখন রান্নাঘরে রান্না করছিল।তাই দেখতে পায় নি যে চৈতি কলেজে চলে গিয়েছে।
বাস স্টেশনে দাঁড়াতেই ৫ মিনিট পরেই ভাগ্যক্রমে একটা বাস পেয়ে গেল।সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাসে উঠতেই সামনে তাকাতেই দেখল বাসে ভীড়।অন্য দিনও যে ভীড় থাকে তা না।তবে আজকে একটু বেশিই ভীড়।এত ভীড় যে মানুষের মাঝে পিপড়ার সমানও জায়গা নেই।মন খারাপ হয়ে গেল ওর।বাস তো ঠিকমতো পেল।কিন্তু এখন দাঁড়িয়ে যাওয়া লাগবে।একটা সিটও খালি না থাকায় অগত্যা দাঁড়িয়েই থাকতে হলো।হঠাত চৈতি ওর পিঠে কারোর স্পর্শ পেয়ে চমকে পিছনে তাকালো।দেখল একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।চৈতি কিছু না বলে ছেলেটার থেকে একটু দুরে গিয়ে দাঁড়ালো।কিন্তু কিছুক্ষন পর আবার অই ছেলেটা ওর কোমড় স্পর্শ করছে।এইবার দুরে যাওয়ার আর কোন রাস্তা নেই।পাশে আরও লোকজন আছে।আজকে সে কথা বলতে পারলে নিশ্চয়ই উচিত একটা জবাব দিত।নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল আর কখনও ভীড় বাসে উঠবে দরকার হলে হেঁটে যাবে।
একটু দুরে দাঁড়িয়েই শুভ্র সবটা দেখলো।প্রথমে রাগ উঠেছিল চৈতির উপর কিছু না বলে চুপচাপ সহ্য করছে বলে।পরক্ষনেই মনে পড়ল।মেয়েটাতো বোবা।ও কি করে প্রতিবাদ করবে?ভীড় ঠেলে ছেলেটার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“এইযে ভাই! একটু পিছনে গিয়ে দাঁড়ান।”
“কেন? আমি আগে আসছি।আমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে দাঁড়াবো আপনার সমস্যা কি?”
“সামনের যে মেয়েটাকে দেখছেন ও আমার পরিচিত একজন।অপরিচিত মানুষের মাঝে ও কমফোর্টেবল ফিল করে না।তাই বলছি।আপনি একটু সরে দাঁড়ালে ভালো হতো।”
“পরিচিত মানুষ হলে কি হইছে?আপনি তো উনার আর জামাই লাগেন না যে পাশে এসে দাঁড়াবেন!”
শুভ্রর ইচ্ছা করছে ছেলেটার নাক বরাবর ঘুষি দিতে।একে তো অন্যায় করছে তার উপর আবার মুখে মুখে তর্ক করছে।নিজের রাগটাকে দমানোর জন্য দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ঠিক বলেছেন।আমি উনার জামাইই লাগি তাই বলছি।সরে দাঁড়ান।নইলে ভালো হবে না।”
শুভ্রর কড়া চাহনি দেখে ছেলেটা ভয় পেয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো।চৈতি অনেকক্ষন ধরে কোন বাজে স্পর্শ পাচ্ছে না দেখে পিছনে ফিরে তাকাতেই শুভ্রর মুখটা দেখল।অবাক হয়ে ইশারায় বলল,
“আপনি?”
শুভ্র পকেট থেকে মোবাইল বের করে লিখল,
“হ্যা,একটা কাজে যাচ্ছিলাম। আপনি কোথায়
যাচ্ছেন?”
চৈতিও নিজের মোবাইলে লিখে শুভ্রকে দেখাল।
“কলেজে।”
“অহ আচ্ছা।এখন থেকে আর বাসে উঠবেন না।”
চৈতি অবাক হয়ে বলল,
“বাসে না আসলে কিভাবে আসব?আমার কলেজ তো অনেক দুরে। রিকশা ভাড়া ১০০ টাকা চায়।”
শুভ্র কিছুক্ষন ভেবে বলল,
“আচ্ছা। পরে এ ব্যাপারে পরে দেখা যাবে।”
“হুম।”
কলেজের কাছে আসতেই চৈতি শুভ্রকে বিদায় দিয়ে দৌড়ে কলেজের ভিতর ঢুকল।ওর ক্লাস ৫ তলায়।সিড়ি দিয়ে তাড়াতাড়ি করে উঠতে যেতেই একজনের সাথে ঢাক্কা খেয়ে পরে গেল।
আশরাফ ক্লাসে ঢুকেই সারা ক্লাসে চোখ বুলালো।পরিচিত মুখ না দেখতে পেয়ে ভ্রু জোড়া কুচকে এলো।কই এতদিন ক্লাস নিচ্ছে একদিনও তো সে চৈতিকে লেট করে আসতে দেখে নাই।সবসময় ক্লাসে এসেই চৈতির মুখটা দেখেছে তবে আজকে কেন চৈতি আসে নি?ও কি অসুস্ত?নাকি আসবে না?এত চিন্তা করছে কেন সে অই মেয়েটাকে নিয়ে?কই অন্য স্টুডেন্ট না এলে তো এত চিন্তা করে না।তবে চৈতিকে নিয়েই কেন?তবে কি ও চৈতির প্রেমে পরে গিয়েছে?নাহ,এ অসম্ভব।ও অই বোবা,বধির মেয়ের প্রেমে পরতেই পারে না।কি আছে ওর মধ্যে?কাঠের মতো শুকনা এক শরীর,লম্বাও তো না এত।ফর্সাও না।শ্যামলা গায়ের রঙ।আর একটুর জন্য কালো হয় নাই।আরেকটু চাপা হলেই কালো বলা যেত।কি আছে ওর৷ মধ্যে?কিছুই নেই।তবে কি দেখে ও প্রেমে পরল ওর?মা তো কিছুতেই মেনে নিবে না।নাহ,নিজেকে আটকাতে হবে।নইলে বড় সর একটা ঝামেলা হয়ে যাবে।আচ্ছা মেয়েটাকি ওকে জাদু করল?ডিজিটাল যুগে এসে কিনা সে এখন জাদুটুনায় বিশ্বাস করছে?এত অধঃপতন কি করে হলো তার?
.
.
সামনে তাকাতেই মেয়েটা সরি বলে চলে গেল।চৈতি ফ্লোর ধরেই বসা থেকে কোনমতে উঠে দাড়ালো। অনেক জ্বলছে পা টা।দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে ৫ তলা বেয়ে উঠে ক্লাসের সামনে আসতেই দেখল আশরাফ অলরেডি ক্লাসে ঢুকে গিয়েছে।চৈতি কিছু না বলে দরজায় হাত দিয়ে নক করল।আশরাফ মনে মনে ভাবছিল। হঠাত নকের শব্দ শুনে তাকাতেই চৈতিকে দেখল।
“এত দেরি হলো কেন?”
চৈতি লিপ রিডিং করে পরে খাতায় লিখে আশরাফকে দেখালো
।
“সরি স্যার,ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছিলো।”
“তাহলে ক্লাসে আসার দরকার কি ছিল?বাসায় বসে ঘুমাতেন।”
“সরি স্যার।আর এরকম হবে না।”
“আপনাকে এখন যদি আমি কোন পানিশমেন্ট না দেই তাহলে আপনি মাথায় উঠে বসবেন।আজকে লেট করেছেন।কালকেও লেট করবেন।পরশুদিনও লেট করবেন।বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন।আমার ক্লাস শেষ না হওয়া অবদি ক্লাসের ভিতর ঢুকবেন না।”
চৈতি মাথা নাড়িয়ে ক্লাস রুম থেকে বাইরে গিয়ে দাঁড়ালো।চোখ থেকে পানি পরছে ওর। আজ পর্যন্ত কোনদিন ও এভাবে ক্লাসরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে নি।আজকেই প্রথম পা টাও বড্ড জ্বালা করছে।মনে হয় চামড়া ছিলে গিয়েছে।দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে খুব।ক্ষিধেও পেয়েছে।ব্যাগ থেকে পানির বোতল নিয়ে পানি খেতে নিতেই পাশ্ব আরশিকে দেখল।অবাক হয়ে ইশারায় বলল,
“কিরে?তুই এখানে?”
আরশি হেসে বলল,
“তোর জন্য এলাম।তোকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কষ্ট হচ্ছিল।তাই ইচ্ছা করে পিছনের মেয়েটাকে ডিস্টার্ব করাতে ও স্যারকে বিচার দিয়েছে।আর স্যারও আমাকে বের করে দিল।কত চালাক না আমি?”
“আমার জন্য তুই ক্লাসরুম থেকে চলে আসবি?”
“তো?তোকে একা একা দাঁড় করিয়ে রাখতাম?তুই বোরিং হতি না?”
চৈতি নিজেকে আর আটকে রাখতে পারল না।নিজের বাবা মা ওকে এত বুঝে না। যতটা আরশি নামক মেয়েটা বুঝে।
“তোকে এত ভালো হতে কে বলেছে?আমার কথা চিন্তা করতে কে বলেছে।অন্য সবার মতো কেন হলি না তুই?
“আরে আরে কান্না করছিস কেন?আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড।তোর কথা আমি চিন্তা করব না তো কে করবে?আমার বিশ্বাস আমার জায়গায় তুই হলে আমাকেও তুই এভাবেই সাহায্য করতি।এবার চোখের পানি মুছ।তোকে কান্না করলে অনেক বিশ্রি লাগে।হায়,আমার ভবিষ্যতের দুলাভাই ঝগড়ার পরে তোর কান্নারত মুখটা দেখে না জানি কবে হার্ট এট্যাক করে!”
চৈতি কান্না মুছে চোখ বড় বড় করে ইশারায় বলল,
“হইছে।তোর আর আমাকে পঁচাতে হবে না।”
“চল ক্যান্টিনে যাই।”
“কেন?”
“মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে কিছু খাসনি।তাই।”
“কিন্তু স্যার?”
“আরে কিছু হবে না।চল তো!”
“হুম চল।”
ক্যান্টিনে,
খাবার অর্ডার দিয়ে টেবিলে বসতেই আরশি বলল,
“কালকে আমার জম্মদিন।একটা পার্টি রেখেছি। তুই আসবি। ”
“আমি এসে কি করব?প্লিজ আমি যাব না।”
“তুই আমার জম্মদিনে আসবি না?”
“কিন্তু….”
” আমি কিছু শুনতে চাই না।তুই আসবি মানে আসবি।”
“আচ্ছা দেখি।”
“দেখি না আসতেই হবে।”
“আচ্ছা আসব।খুশি?”
“অবশ্যই ”
হঠাত আরশির মোবাইলে কল আসাতে আরশি ইশারায় বলে,
“চৈতি,ক্লাসে যা।আমি একটু পরে আসছি।”
.
.
“মিস চৈতি,আপনার পায়ে কি হয়েছে?এভাবে খুড়িয়ে হাটছেন কেন?”
চৈতি খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছিল।হঠাত সামনে আশরাফকে দেখে থেমে গেল।আশরাফের কথা চৈতি বুঝেনি।তাই হা করে তাকিয়ে ছিল।আশরাফ বিরক্ত হয়ে বলল,
“আমিও না!আপনি তো শুনতেই পান না।কাকে কি বলছি।”
মোবাইল বের করে লিখে চৈতিকে দেখালো।চৈতিও লিখে বলল,
তেমন কিছু না।জাস্ট আসার সময় একজনের সাথে ঢাক্কা খেয়ে পরে গিয়েছিল।”
“আমার কেবিনে আসুন।”
লেখাটা দেখিয়েই আশরাফ চলে গেল।
#চলবে…..