তুমিই আমার পূর্নতা পর্ব-০৩

0
843

#তুমিই আমার পূর্নতা– [৩]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
_____________________________

সকাল বেলা আগের ন্যায় সাগর তার সকল কাজ কর্ম সেড়ে অফিসে চলে গেলেন। আমিও আমার কাজ মানে রান্নাঘরের সকল কাজ সেড়ে নিজের রুমে বসে আছি এমন সময় একটা কল আসলো অপরিচিতো নম্বর থেকে।

-‘ তোর স্বামীকে বলে দে যাতে আমাদের ব্যাপারে বেশি নাক না গলায়। তাকে যা করতে বলা হয়েছে সে যেনো শুধুমাত্র সেটাই করে। যদি বেফাঁস কিছু করে তো তার প্রানপ্রিয় বোন আছে না? ওর বাড়োটা বাজিয়ে দিবো তাও ওর বাচ্চা সমেত বুঝেছিস?’

আমি কিছু প্রতিত্তোর করবো তার আগেই ফোন কে’টে দেওয়া হলোম যার দরুন আমি কিছু জিগেস করবার কোনো সুযোগ অব্দি পেলাম না। তবে লোকটির বলা কথা কিছুই ই বুঝতে পারছি না। ননদ বলতে আমার এক ননদ তো বাসায়ই ছিলো কালকে শশুড়বাড়ীতে চলে গেছে আর ছোটো ননদের তো রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়েছে এখনো ধুমধাম করে বিয়ে হওয়া বাকি আছে। আমার ননদের হবু শাশুড়ী মা অসুস্থ ছিলেন সে জন্য আরো কয়েক মাস আগে রুশা সেখানে ছিলো কিন্তু এখন তো পড়াশোনার জন্য আবারো বাহিরে চলে গেছে তাহলে ওর কি ক্ষতি হয়েছে? মনের মধ্যে থাকা ভয় আরো ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। এতো চিন্তা নিয়ে থাকতে পারছি না। রুশা এখন ওর শশুড়বাড়ীতে নেই। সেখান থেকে আরো কয়েক মাস আগে চলে গেছে তাহলে এখন কোথায়? কলেজে যাবার জন্য রুশা ঢাকায় ওর কাজিনের সঙ্গে থাকতো। ওর কাজিনও একাই ছিলো রুশা জেদ ধরে সেখানে গিয়েছে ওখান থেকে কলেজ কাছে হয় বলে। রুশা আমাকে কল করে আমার সঙ্গে কথা বলে সবই ঠিকঠাক আছ কিন্তু আজ প্রায় তিন চার দিন হয়ে যাচ্ছে রুশার কোনো খোঁজ নেই। ওর কাজিনকে ফোন দিতেই ফোন বন্ধ বললো। আমি উপায় না পেয়ে সেই অচেনা নম্বরে কল করতেই ফোন বন্ধ বলছে। এবার মনের মধ্যে থাকা ভয়টা বেশ তীব্র হলো। বাধ্য হয়ে সাগরকে কল করলাম কিন্কু কল বেজে যাচ্ছে সাগরের ফোন রিসিভ করার কোনো নাম নেই। এদিকে আমি স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছি না। বাড়িতে কাকে বলবো? আমান জা আর দেবর বেড়াতে গেছে ননদও বাহিরে মা ঘুমাচ্ছে! এতো ভয় চিন্তা নিয়ে থাকা সম্ভব নয় বাধ্য হয়ে আমি সাগরের অফিসের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।।

-‘ সাগর তোমার সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে একটু শোনো?’

‘ সাগর কাজ করছিলো। প্রিয়তাকে এভাবে অফিসে কোনো ভাবেই কাম্য করেনি সে।

-‘ কিছু কি হয়েছে প্রিয়তা?’

-‘ তোমার ফোন এরকম কেন? কতোবার ফোন করেছি ধরোনি!’

-‘ মিটিংয়ে ছিলাম তাই ধরতে পারিনি।’

সাগর প্রিয়তার চিন্তিত মুখ দেখে বুঝে গেলো ঘটনাটা বেশ অনেকদূর এগিয়েছে। প্রিয়তার কথা মতন প্রিয়তাকে নিয়ে বাহিরে গেলো।

-‘ এবার বলো কি হয়েছে? তুমি এরকম করছো কেনো?’

প্রিয়তা সাগরকে সবটা খুলে বললো। সবটা শুনে সাগরের মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই। সে জানে তার ছোটো বোন রুশা যেখানে থাকবার কথা সেখানে নেই। আছে এক ভয়ংকর লোকের কাছে। যে সাগরকে দিয়ে কলির সঙ্গে বিয়ের চক্রান্ত করিয়েছে। অবশ্য সাগর সেটা বিয়ের নাটক বলে উতরে দিয়েছে। কিন্তু রুশা সদ্য জানতে পারে সে মা হতে চলেছিলো। সেদিন যখন উৎকন্ঠা মন নিয়ে সাগরকে সবটা জানিয়েছিলো তার কিছুক্ষণ পরেই রুশাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। প্রিয়তার মতন সাগররর কাছেও ফোন এসেছিলো। সাগরও প্রথমে কিছু বুঝতে পারেনি। কিন্তু যখন তার বোন আর তার অনাগত বাচ্চার প্রানের হুম’কি দিলো তখন আর স্থির থাকতে পারেনি সাগর। ওই লোকটির শুধু সাগরকে নয় কলির অসুস্থ মা’কে ও আটকে রেখেছে। কলি বলতে গেলে অনাথ প্রায়। মা ছাড়া তার কেউ নেই কোনো রকমে মা মেয়ে দিন যাপন করতো কিন্তু সেই মায়ের যখন বিপদ কলিও বাধ্য হয়েই বিয়ের নাটকটা করতে সায় দেয় সাগরের সঙ্গে। লোকটি সাগরকে দু’টো পথ দেখিয়েছিলো হয় বিয়ে করে আরেকটা বউ নিয়ে যাও প্রিয়তার সামনে নতুবা নিজের বোনের লা’শ নিয়ে যাও বাড়িতে। সাগর সেদিন বাধ্য হয়েই বিয়ের নাটকটা করে রুশার প্রান বাঁচাতে। মিথ্যা বিয়ের ছবি আর কলিকে ওই বাড়িতে নিয়ে যায় সাগর। ওসব বধু বেশে থাকা ছবি আর কলিকে ওই বাড়িতে নিয়ে যাওয়ায় লোকটি ভেবেছিলো সাগর হয়তো সত্যিই কলিকে বিয়ে করে নিয়েছে। লোকটির কথা অনুযায়ী বাড়িতে কাউকে কিছু বলে না। এর পর যখন সাগর ওই লোকটির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে। কলির সঙ্গে বিয়ের নাটক করবার আগে সাগর চেয়েছিলো পুলিশকে সবটা জানাতে কিন্তু সেই ধুরন্ধর লোক তৎক্ষনাৎ একটা ভিডিও পাঠায় সাগরের ফোনে যে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিলো রুশার হাতের উপর টগবগে গরম পানি ফেলানো হচ্ছে আর রুশা ব্যাথায় আর্তনাদ করে ওঠছে! বোনের এই অবস্থা দেখে সাগরের সাহসে কুলোয়নি আর পুলিশের কাছে যাবার। সে তখন এেবারে বাধ্য হয়ে বিয়ে বিয়ে নাটকটা করে। আর তারপর সেই হাতে ব্যান্ডেজ করে ছবি তুলে আবার সাগরের ফোনে দেয়। সাগর বুঝতে পারে ওই লোকটিকে ধরা অতো সহজ নয়। সে সবসময় সাগরেরর উপর নজর রাখে। তাই সাগর এখন বেশ সাবধানে থাকছে। সেদিন সাগরকে ফোনো সব বলেছিলো কখনো সামনে আসেনি সে। যা বলার ফোনেই বলতো তারপর সিম কার্ড বন্ধ করে দিতো। এই সব যন্ত্রনা নিয়ে আছে সাগর কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না। বাড়িতেও কিছু জানায়নি মা বাবা সবাই চিন্তা করবে বলে। কিন্তু বিয়ে হয়েছে কালকে আজকে সহো দু দিন হয়ে যাচ্ছে! আজকের ভেতর যদি রুশাকে ভালোয় ভালোয় বাড়িতে ফিরিয়ে না দেওয়া হয় সাগর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে এবার পুলিশ স্টেশনে যাবে না। ওরই এক বন্ধু পুলিশ সেখান থেকে সাহায্য নিবে। আপাততো এই বিয়ের চক্করে প্রিয়তা বেশ কষ্টে আছে তাই এসব বিষয়ে না বলাই ভালো।

-‘ তুমি চিন্তা করো না প্রিয়তা, রুশা ঠিকআছে। ওর ফোনটা প্রবলেম দেখা দিছে ও আমাকে অন্য কারোন ফোন দিয়ে ফোন করে জানিয়েছে। আমি টাকা পাঠালেই ও নতুন ফোন কিনবে। এই তো তুমি আসার আগেই ওর সঙ্গে কথা হয়েছে। হয়তো কেউ তোমার সঙ্গে মজা করেছে বুঝলে?’

-‘ কিন্তু রুশার রুমমেট? সে ফোন ধরলো না কেনো?’

-‘ ও তো সেখানে নেই আজকে গ্রামে গেছে তাই নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না বোধহয়। তুমি অতো চিন্তা করো না তো। ‘

-‘ কিন্তু সাগর

-‘ কোনো কিন্তু নয় প্রিয়তা বললাম তো রুশার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে ও ঠিকআছে। এখন অযথা চিন্তা না করর বাড়িতে না যাও। আমাকে কাজ করতে দাও।’

প্রিয়তা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু সাগর ধ’ম’কে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় প্রিয়তাকে। সাগরও জানে সে মিথ্যা বলছে কিন্তু আপাততো তার হাতে মিথ্যা বলা ছাড়া আর অন্য কোনো উপায় ও নেই।
————————–

প্রিয়তা বাড়িতে এসে টিভি দেখছিলো, ঠিক তখুনি ওর শাশুড়ী মা কটু কথা শোনাতে শুরু করে। কাজ করার জন্য! যেহেতু উনার ছোটো বউমা নেই তাই প্রিয়তার উপর এসে চটেছেন বিনা কারনেই! যেনো প্রিয়তাকে দেখতেই পারেন না! উপর থেকে সবটা অবলোকন করছিলো কলি। এবার নিচে নামলো।

-‘ আচ্ছা শাশুড়ি মা যদি শুনেন আপনার বংশধর আসবে তখন কেমন লাগবে আপনার?’

কলির কথা শুনে এক মুহুর্তের জন্য পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো! মানে সাগরের কলির সঙ্গে সম্পর্কটা গভীরে বেশ অনেক আগেই গড়িয়েছে!

-‘ কেমন লাগবে মানে! তুমি যা বলবে আমি তা-ই করবো বুঝেছো বউমা? তুমি দেখতে এতো সুন্দর তোমার বাচ্চা কাচ্চাও অনেক সুন্দর হবে দেখো।’

-‘ হু তো ঠিকআছে মা শুনুন, আমি চার তিন মাসের গর্ভবতী। তাহলে প্রিয়তা ভাবিকে যে কাজ গুলো করার জন্য বকছিলেন সে গুলো বাদ দিয়ে এখন আমার জন্য আমের আচার তৈরী করুন তো। জানেনই তো এই সময় আচার খেতে কতোটা ভালো লাগে। আর আমি কাজ করতে পারবো না যদি বাচ্চার ক্ষতি হয? প্রিয়তা ভাবি কেমন যেনো তাই আমি চাই আপনিই আচার করবেন। আর শুনুন,আমের মোরব্বা, টক ঝাল সব রকমের আচার করবেন কেমন মা?’

কলির কথা শুনে সাগরের মায়ের মুখ নিমিষেই কালো হয়ে গেলো!

-‘ সবগুলো আমি করবো বউমা?’

-‘ হু সুন্দর টুকটুকে বংশধর চাইলে এটা তো করতেই হবে তাই না বলুন?’

-‘ আচ্ছা যাচ্ছি।’

-‘ বউমা এবার দেখিস তোর শাশুড়ী বুঝবে কতো ধানে কতো চাল! বলছিলাম না বুঝবে? বোঝার পালা এসে পড়েছে।’

শাশুড়ী মা চলে যেতেই আমি নিজের রুমে এসে বসে রইলাম। এই পর্যন্ত ভাতটুকুও বেড়ে খেতে হয়নি আম্মাকে অথচ আজকে কলি উনাকে আচার বানাতে বললেন!

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে