তুমিই আমার পূর্ণতা পর্ব-০৪

0
1214

#তুমিই_আমার_পূর্ণতা
#মেহরাফ_মুন (ছদ্মনাম )
#পর্ব ৪

বাসায় পৌঁছেই মিমের মায়ের সাথে কৌশলাদি শেষ করে আমি আর মিম রুমে আসলাম। রুমটা বেশ সাজানো-গুছানো।বোধহয় মিম আসবে তাই পরিপাটি করেই রেখেছে। এই রুমে আমি আর মিম একসাথেই থাকব। দুইতলার একদম শেষ কর্নারেই রুমটা।জানালা দিয়ে বেশ বাতাসও আসে, পরিবেশটাও বেশ উপভোগ করা যাবে এদিক থেকে।সব মিলিয়ে আমার মনে হলো এই বাড়িতে রুম এটাই সবচেয়ে বেশি সুন্দর, বেশ বড়োও।

-‘মুন, তুই আগে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় তারপর আমি যাব। ততক্ষনে আমি আমাদের কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখি।’ বলল মিম।

-‘আচ্ছা ।’


ফ্রেশ হয়েই বের হতেই দেখি আমার সব কাপড়ই ব্যাগ থেকে বের করে আলমারিতে গুছিয়ে রেখেছে মিম। সত্যিই এই মেয়েটাও না একদম বোনের মত সব ভাববে।

বিছানায় বসতেই দরজা নক করার শব্দ। তাকিয়ে দেখি আন্টি দাঁড়িয়ে।

-‘আরে আন্টি, ভিতরে আসুন। বাইরে কেন দাঁড়িয়ে আছেন।’

আন্টি একটা মুচকি হাসি দিয়েই ভিতরে ঢুকল। মিমের মত এই পুরো পরিবারটাও অনেক ভালো। অবশ্য পরিবার বলতে শুধু ওর মা-বাবাই আছে, আর কেউ নেই।

-‘মা, তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো এখানে? মিমের কাছ থেকে তোমার সব কথা শুনেছি। কোনো কিছুতে মন খারাপ করে থাকবে না। এখন থেকে আমরা আছি তোমার সাথে। নিজেকে আর একা ভাববে না, ঠিক আছে? মিম যেমন আমাদের মেয়ে তেমনি তোমাকেও আমাদের মেয়ের মতোই ধরে নিব। আর তুমিও সব শেয়ার করবে আমাদের সাথে। মনে করো আমরাই তোমার আরেকটা মা বাবা।’

আন্টির কথা শুনে মনে হলো নিজেরই মায়ের ঘ্রান পাচ্ছি। চোখ দিয়ে ২ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। এই কান্না যে খুশির।
‘কে বলেছে? জীবন কঠিন। এইতো জীবনকে মানিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারলেই জীবনের মানে পাওয়া যায়। জীবন এত সুন্দর তা আজকের আগে মনে হয়নি। এই দেখুন আমি একটা পরিবার পেলাম আবার। মায়ের মত আন্টি আর বাবার মত একটা আঙ্কেল পেলাম আর একটা বোন সমান বান্দবি পেলাম।’

আন্টি এসে আমার মাথায় পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিতেই আমি আন্টিকে জড়িয়ে ধরলাম।

-‘আমি মাকে জড়িয়ে ধরার অনুভূতিটা পায়নি কিন্তু আপনাকে জড়িয়ে ধরার পরই এই অনুভূতিটা অনুভব করতে পারলাম আন্টি।’

-‘এই পাগলী। আমিও তোর আরেকটা মা ভেবে নে। মিম যেমন আমার মেয়ে ঠিক তেমন তুইও আমার আরেকটা মেয়ে। তুই করেই বলছি এজন্য কিছু মনে করিস না । তুইও তো এখন থেকে আমাদের আরেকটা মেয়ে।

আমি আন্টির কোলে মাথাটা রেখে পরম আবেশে চোখ বন্ধ করলাম।এইতো আমার নিজের মায়ের মতোই স্বাদটা পাচ্ছি।



-‘কী হচ্ছে এখানে আমাকে ফেলে। এইযে মা তোমার যে আরেকটা মেয়ে আছে সেটা কী মনে নেই। একজনের মাথা কোলে নিয়ে বসে আছো! মুন সর সর,আমার জন্যও জায়গা রাখ, তুই একদিকে আমি আরেকদিকে। দুইমেয়ের দুইদিকে জায়গা। দেখি দেখি।’ ওয়াশরুম থেকে বের হতে হতেই বলে উঠলো মিম।

এসেই আমার পাশে আন্টির কোলে আরেকদিকে মাথা রেখে বসে পড়লো মিম।

-‘মা আমার মাথায়ও মুনের মত হাত বুলিয়ে দাও।’

আন্টিও পরম মমতায় ২হাত দুইজনের মাথায় বুলিয়ে দেন।
এখন মনে হচ্ছে, এইতো এটাই আমার পরিবার।আজ-কাল এমন ভালোমনের মানুষ পাওয়া বড্ড কঠিন। সেইদিক দিয়ে আমি ভাগ্যবতী। এত অল্পতে এত সুন্দর নিজের মত করে একটা পরিবার পাবো কোনোদিন ভাবিইনি!


-‘হয়েছে। এবার উঠ। সারারাত জার্নিতে তো তোরা কিছু খাসনি মনে হয়। আমি নিচে গিয়ে খাবার তৈরী করছি।তোরা আয়।’ আন্টি দাঁড়িয়ে বলে উঠলো।

-‘আচ্ছা,আসতেছি আমরা।’ মিম বলে উঠল।


নিচে গিয়ে খাবার খেয়ে মিমের সাথে রুমে এসে গেলাম।আঙ্কেলও বলেছেন, নিজের মত করেই থাকতে এখানে। আর ভার্সিটির এডমিশন নিয়ে যা করার উনিই করবেন।আপাতত কয়েকদিনের জন্য টেনশন ফ্রি আছি।এখন দুইজনেই একটা জম্পেশ ঘুম দিব। রাতে গাড়িতে ভালো ঘুম হয়নি।

-‘মুন শোন, ঘুম থেকে উঠেই বিকেলে আমরা বাইরে যাব, কেমন? তোকে দেখাবো আমাদের চট্টগ্রাম। আপাতত একটু এদিকেই যাব ঘুরতে, এখন ঘুমা ।’মিম বলে উঠলো।

আমিও একটা মুচকি হাসি দিয়ে শুয়ে পড়লাম।শোয়ার সাথে সাথেই চোখে এক রাজ্যের ঘুম এসে ধরা দিল।আস্তে আস্তে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম।

————————–

কারো ধাক্কায় নিজের অর্ধঘুমটা ভেঙে গেল। চোখ-মুখ কুচকিয়ে দেখি মিম কেবলাকান্ত মার্কা হাসি দিয়ে সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।

-‘মিমের বাচ্চি। দিলি তো আমার এত সুন্দর ঘুমটার বারোটা বাজিয়ে। তোরে এখন আমি এক বালতি পানিতে চুবাতে পারলেই রাগ কমবে।’

-‘তোর রাগ আগে ফেল। আমি তোকে বালতি ভরে পানি মারিনি এটার শোকর কর। কতক্ষন ধরে ডাকছি তোকে, তোর ঘুম থেকে উঠার নামই নেই।আরও বলিস, অর্ধঘুম? সেই খেয়ে শুইছিলি এখন বিকেল ৫টা বাজে। ‘

-‘দূর, তোর এসব ফালতু পেচাল বাদ দেয়। কী জন্য ডেকেছিস ঐটা বল।আমি আবার ঘুমাবো।’

-‘মা ডাকে নাস্তা করার জন্য। আর কীসের এত ঘুম? নাস্তা করেই তোকে নিয়ে ফুচকা খেতে যাব।’

অগত্যা মিমের টানা-হিচড়ানোতে উঠতেই হলো। ঘুমু ঘুমু চোখে ফ্রেশ হতে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েই দেখি মিম দুইসেট কাপড় নিয়ে বিছানার ওপর বসে আছে।

-‘কিরে মিম ! দেবদাসের মত ঐভাবে বসে আছিস কেন। কী হলো?’

-‘এই নেয়। এই কুর্তিটা পড়ে তৈরী হয়ে নেয়। খেয়েই বের হবো। বেশি না, এইতো দশমিনিট দশমিনিট করে বিশমিনিট লাগবে মাত্র। খেয়েই চলে আসবো।’

——————————

নাস্তার পর্ব সেড়েই আন্টিকে বলে বেরিয়ে গেলাম মিমের সাথে।
রিকশায় উঠেই চট্টগ্রামের আশ-পাশ দেখতে লাগলাম। এক অন্যরকম শহর। আর মিম যেখানে আনল ওই জায়গাটা একদম নিরিবিলি। চারিদিকেই গাছপালা। প্রতি গাছের নিচেই কয়েকজন মিলে মিলে একটা আড্ডাখানা। জায়গাটাতে প্রকৃতির ছোঁয়া।চারদিক থেকেই সবসময় বাতাস। বোঝায় যাচ্ছে, এখানকার মানুষদের এই জায়গাটা ভীষণ প্রিয়। কেউ কেউ একলা বসে প্রকৃতিটা উপভোগ করছে আর কেউ কেউ দুই-পাঁচজন বন্ধু নিয়ে আড্ডা দিতে দিতে উপভোগ করছে। এর ভেতর আবার ফুচকা, ঝালমুড়িও বসে। সবমিলিয়ে জায়গাটা অনেক সুন্দর।
পুরু এলাকার পরতে পরতে হাজারো শতবর্ষি গাছের সমারোহ। যা জায়গাটিকে ছায়া সুশীতল করে রেখেছে। সবুজ গাছগাছালি আর পাহাড় ঘেরা এই মনোরম পরিবেশটি যে কারোই মন কাড়তে বাধ্য । চারদিকেই দর্শনার্তি, জোয়ান-বৃদ্ধ, কপোত-কপোতীর মিলন মেলায় এক মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মাঝখানের মাঠে আবার খুদে খুদে ক্রিকেটারও দেখা যাচ্ছে, আর অন্যান্য ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও খেলছে এই মাঠে। চিত্ত বিনোদনের পাশাপাশি নির্মল বায়ু, খোলা মাঠ, ওয়াক এওয়েই, সবুজ পাহাড়ের জন্য এটি একমাত্র শ্বাসক্রিয়া গ্রহণের জায়গা বলে মনে হলো আমার। সব মিলিয়ে এই পরিবেশটা যে কারো মন ভালো করে দিতে বাধ্য।

মিম ঝাল ঝাল ২প্লেট ফুচকা নিয়ে সামনে আরেকটা গাছের নিচে গিয়ে বসল সাথে আমিও গেলাম। আমার দিকে ১প্লেট বাড়িয়ে দিল।

-‘আসলেই জায়গাটা অনেক সুন্দর। মনে হচ্ছে এটা প্রকৃতির কোনো রাজ্য।’

-‘হুম, অনেক সুন্দর। জানিস? ঢাকা যাওয়ার আগে আমি এখানে সবসময় আসতাম। মন খারাপ হলেই চলে আসতাম। এটা আমার মন ভালো হওয়ার টনিক। একা একা বসে প্রকৃতি দেখতাম।তোকে আরেকটা জায়গা দেখানোর আছে, যেই জায়গাটা সবারই প্রিয়। সন্ধ্যার দিকে ওই জায়গায় খুব বেশিই ভালো লাগে।যাওয়ার সময় একটু ঐদিকে যাব।’ ফুচকা মুখে পুরতে পুরতে বলল মিম।


আসার সময় আরেকটা জায়গাতে নামল মিম।এই জায়গাটাও অনেক সুন্দর। প্রায় জায়গাতেই মনে হলো প্রকৃতির ছোঁয়া।

মিম গিয়েই রেলিং এ পা দুলিয়ে বসে পড়লো সাথে আমাকেও ডাকলো। আমিও গিয়ে বসে পড়লাম।

-‘জানিস মুন, আমার মন ভালো করার আরেকটা জায়গায় হচ্ছে এটা। এখানে রেলিং বসে পা ঝুলিয়ে বসে থাকার মত মজাই আলাদা। সন্ধ্যা কিংবা বিকেলের নেভালের ওয়েদারটা আরও বেশি জোস্! যেমনকী এখন। চুপচাপ বসে সামনের দিকে তাকিয়ে থাক। আসলেই কত সুন্দর এক অনুভূতি!’

আমিও মুচকি হাসি দিয়ে সামনের দিকে তাকালাম। বুঝতে পারছি না, চট্টগ্রাম সুন্দর না কি এই জায়গাগুলি সুন্দর!

——————————-

রাতে ফ্রেশ হয়ে খাবার সেড়ে দুইজনেই বিছানায় শুইলাম।

-‘তো বল, কেমন কাটলো আমাদের চট্টগ্রামের প্রথম দিন।’বলল মিম।

-‘অন্নেক ভালো। মনে হলো অনেকদিন পর শান্তির ঘুমাবো।’

——————————

এভাবেই কেটে গেল তিনদিন। এই তিনটা দিন আমার জীবনের সেরা দিন মনে হলো। চট্টগ্রামে আসার পর মনে হচ্ছে আমার মত সুখী আর কেউ নেই। ২দিন পর নতুন ভার্সিটিতে যাব। আঙ্কেল সব ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। এখন শুধু যাওয়ার পালা।


মুন কী পারবে তাঁর জীবনের সব ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে? আর আদ্রাফই বা অফিসে এসে মুনকে না দেখলে কেমন করবে? খুঁজে কী বের করতে পারবে? এই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এতদূরে পথ পাড়ি দিয়ে কী জানতে পারবে?

#চলবে ইনশাআল্লাহ।
(ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন , কিছু ভুল হলে দয়া করে ধরিয়ে দিবেন সংশোধন করার চেষ্টা করব, ধন্যবাদ )

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে