তুই আমারই থাকবি part-31

0
2014

#তুই_আমারই_থাকবি?
#Esrat_Jahan?
#Part_31
!
রুম থেকে বেরিয়েই খেলাম এক ধাক্কা। নিজেকে সামলে সামনে তাকাতেই দেখি একটা ছেলে আমার দিকে বাজেভাবে তাকিয়ে আছে।আমি চলে যেতে নিলেই লোকটা বলল,হাই বেবি!
!
আমি বিরক্তি নিয়ে পেছনে ফিরে বললাম,রাসকেল কোথাকার!
!
ওহহ…বেবি!তোমার কথাগুলো কি মিষ্টি!
!
আমি রেগে কিছু না বলেই অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে সামনের দিকে পা বাড়াতেই লোকটা আমার শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো। আমি হতবাক হয়ে গেছি এমন কান্ডে।
!
বাক্যহারা হয়ে কিছু বলার আগেই দেখি,আবরার গুন্ডা এক ধাক্কা দিয়ে লোকটাকে নিচে ফেলে দিলো।রেগে চিৎকার করে বললো, ইউ ডাফার!তোর সাহস কি করে হয় আমার ওয়াইফের আঁচল ধরার?
!
লোকটা নিচ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে শয়তানি নোংরা একটা হাসি দিয়ে বললো, ও মাই গড আবরার!এই সুন্দরী তোমার বউ?তাই জন্যই তো আমার ওকে এতো পছন্দ হয়েছে।জানোই তো,তোমার সবকিছুতেই আমার নজর একটু বেশি!
!
উনি রেগে ঠাস করে এক থাপ্পড় দিয়ে বললেন, আএ একটা কথা বললে তোকে কি করবো তুই ভাবতেও পারবি না।
!
আমি আকস্মিক এসব কান্ড দেখে চুপ করে রইলাম।

তোমার বউকে যদি আমি আমার করে নিতে না পারি তাহলে আমার নামও রাফাত নয়!
!
উনি রেগে ওই লোকটার কলার ধরে দেয়ালে চেপে ধরে বললেন, কিহ?তুই কি বললি?তোর এতো বড় স্পর্ধা?তুই এই কাজ কেন তোর মুখ থেকে যদি এমন কথা আর একটাও বের হয় তাহলে তোকে আমি জ্যান্ত পুতে দেব!বলে এমন জোরে ধাক্কা দিলেন যে,দরজার সাথে বারি খেয়ে মাথা ফেটে গেলো।লোকটা মাথা চেপে ধরে আহ শব্দ করে মাটিতে পড়ে রইলেন।
!
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।হতভম্ব ভাবটা কাটিয়েই আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি উনার মাথা ফাটিয়ে দিবেন,এটুকু কথায়!
!
অফকোর্স দেবো।আরে তুমি জানো না ও কে…
!
কে ইনি?
!
এই শয়তানটার কথাই বলেছিলাম তোমাকে।
ওর মতো খারাপ একটা লোক কখনো মানুষ হবার নয়।
!
কিহ?এটাই এই লোকটা? এতো খারাপ? ছিহ!

শুধু ওর এটুকু রুপ দেখলে আর সবটা যদি শুনো তাহলে ঘেন্নায় ওর দিকে তাকাতেই ইচ্ছা হবে না তোমার।

আমি আর কিছু না বলে চুপ হয়ে গেলাম।মেহমানরা সবাই সামনের দিকের ড্রইংরুমে আর আমরা যেখানে আছি সেদিকে কেউ নেই,তাই রক্ষা।আমি ভ্রু কুঁচকে উনাকে বললাম,এই ফাজিল লোকটাকে বাসা থেকে বিদায় করেন প্লিজ।আমি চাইনা আপুর বিয়েতে কোনো সিনক্রিয়েট হোক!

উনি কিছুক্ষণ ভাবলেন,তারপর মাটিতে পড়ে থাকা শয়তান লোকটাকে তুলে একপ্রকার থ্রেট দিয়ে বাসা থেকে বিদায় করলেন।যাবার আগে শয়তানটা ও হুমকির ভাষায় কিছু একটা বললেন যেটা আমি শুনতে পাইনি।





এতবড় একটা ঘটনা ঘটার পর নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলাম।আপুর বিয়ে বলে কথা।

যাইহোক আমি ভাবনা চিন্তা দূর করে একমনে বিয়ে এনজয় করছি।আর উনাকে এভয়েড করার চেষ্টা করছি।যত বারই উনি কথা বলার চেষ্টা করছে আমি ততবারই নানা বাহানায় উনাকে এভয়েড করার চেষ্টা করছি।

একসময় বিয়ের পর্ব শেষ হলো। আমি চোরাচোখে আশেপাশে দেখলাম উনি কোথায়,কিন্তু দেখতে পেলাম না।আসলে অনেকক্ষণ ধরেই দেখছি না।

উনাকে অনেকক্ষণ ধরে খুঁজেও যখন পেলাম না তখন হাল ছেড়ে দিলাম।সবাই আপু আর আরহাম ভাইয়াকে নিয়ে হাসাহাসি করছে,কথা বলছে।আমিও সেদিকে যাবার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই একটা মেয়ে এসে বললো, আপনাকে একজন বাইরে যেতে বলেছে।

কে?সন্দিহান গলায়।

তা বলতে পারবো না,নিষেধ আছে।

কেন?

স্যরি।বলেই মেয়েটা হুট করে চলে গেলো।

আমি ভাবছি আমাকে আবার কে ডাকবে?এতো রাতে?আর বাইরেই বা কেন যেতে বলেছে? কেউ কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে….. না না। এসব আবার কি ভাবছি?ধুর….

ঠিক করলাম যাবো না।কে না কে ডেকেছে তাতেই হুট করে বাইরে চলে যাবো এতোটা বোকাও আমি নই।যার দরকার সে নিজে থেকে আসবে।হুহ…

প্রচুর খাবার দাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।সারাদিনে পেটে কিছু পড়েনি আমার।আম্মু জোর করে খাইয়ে দিলো।

সোফায় বসে চোরাচোখে তাকিয়ে খুঁজছি গুন্ডাটাকে,কিন্তু উনি লাপাত্তা।আজব!কোথায় উনি?

ঠিক এমন সময় রোগা-সোগা একটা মেয়ে এসে আগের মেয়েটার মতোই এক কথা বললো।

এবার আমার সন্দেহ হচ্ছে।তাও ভাবলাম যাই,দেখে আসি,কার এতো দরকার আমাকে।

যেই ভাবা সেই কাজ।আম্মুকে কিছু একটা বুঝিয়ে অনেক কষ্ট করে বেরিয়ে এলাম।বাসার সামনের রাস্তাটায় কাউকে দেখতে পেলাম না।একটু সামনে গিয়ে খুঁজে আসলাম বাট কেউ নেই।ফিরতে গেলেই পেছন থেকেই হাতে টান অনুভব করলাম।চেনা চেনা অনুভূতি আরো গভীরভাবে চেনা হয়ে বুকে গিয়ে লাগলো। উনি ভ্রু কুঁচকে নাক উঁচু করে মন উজাড় করা প্রিয়ময় অদ্ভুত রঙ্গিন হাসিটা দিয়ে বললো,এতক্ষণে এলে?কখন খবর পাঠিয়েছি?দুবার ডাকার পর এলে?

ওহহ…যে সে যখন তখন ডাকবে আমি সুড়সুড় করে চলে আসবো, তাই না?রেগে।

যে সে না,তবে আমি ডাকলে যে আসতে হবেই।

আজব! আমি কি জানতাম নাকি যে আপনি ডেকেছেন?

বুঝো না?যে আমি ডেকেছি?কানেক্টিভিটি আছে তো তোমার আমার মাঝে!আমি কিন্তু বুঝি।

কচু বুঝেন।

উনি গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বললেন, বাই দ্যা ওয়ে,চলো।

কোথায়?

কচু দেখাতে!

এখন?

কেন?

না মানে, এতো রাতে?

এটা কোনো প্রবলেমই না!

তাহলে আসুন।

চলো।আচ্ছা,তোমার মন কি খুব খারাপ?

কেন?
।।
না ওই শয়তানটা যা বিহেভ করলো তোমার সাথে,সেজন্য জানতে চাইছি।

প্রথম প্রথম মন খারাপ লাগছিল।এখন ওই লোকের উপরই রাগ হচ্ছে।শালা বজ্জাত।

উনি হেসে বললেন, বাহ!কি গালি!

আচ্ছা,ওই বজ্জাত যাবার সময় আপনাকে মিনমিনিয়ে কি বলছিল?

এই কথা শুনে উনার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো।একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, কিছু না।

মিথ্যা কথা।

যা মনে হয়!

আমি ভেংচি কেটে দিলাম।

উনি হেসে বললেন, আসলেই তুমি সো কিউট!একটা চুমু খেতে ইচ্ছে হচ্ছে।

উনার কথা শুনে রেগে বললাম, ফাজলামো করেন?

নাহ।বউয়ের কাছ থেকে আদর…..

উনার কথা শেষ হওয়ার আগেই আমরা কচু বাগানে চলে এসেছি। আমিও উনাকে থামিয়ে বললাম,এইতো চলে এসেছি কচু বাগান।

এটা?

হুম।তারপর একটা কচু পাতা হাতে নিয়ে বললাম,এই যে এই লাভ শেইপের যে পাতাটা দেখছেন এটাই কচু পাতা।এই পাতার উপর পানি লাগে না কখনো। বৃষ্টি হলে এরউপর পানি পড়লেও সেগুলো গড়িয়ে পড়ে যায়,কিন্তু কখনোই ভিজে না।অনেকে এটাকে ছাতা হিসেবে ইউজ করে,তবে সেটা একান্তই কোনো বিপাকে পড়লে আরকি।

উনি মুগ্ধ হয়ে আমার কথা শুনে বললেন,তুমি কি ভার্সিটির লেকচারার?যেভাবে বলছো!

হুহ!আমার ঠ্যাকা পড়ছে।আমি আসলে বুঝাচ্ছিলাম।

বাদ দাও।এটা তো মানে এই কচু গাছ তো নিজের জীবন নিয়েই বিপাকে, শুকনো কাঠি,বাতাস একেই উড়িয়ে নিয়ে যাবে।তাহলে সবাই এই গাছের সাথে ফাঁসি লাগতে বলে কেন?হাউ?এতো মানুষের ভারই নিতে পারবে না!

আমি উনার বেক্কল মার্কা কথায় হেসে দিলাম।বললাম…..’
!

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে