তুই আমারই থাকবি part-29

0
2020

#তুই_আমারই_থাকবি?
#Esrat_Jahan?
#Part_29
!
‘আজ শুক্রবার। আপু আর আরহাম ভাইয়ার রেজিষ্ট্রি ম্যারেজ!কি থেকে কি হয়ে গেলো চোখের পলক ফেলার আগেই।সবাই সবকিছু জানতো।কিন্তু আমিই একমাত্র আব্বু-আম্মুর অবুঝ মেয়ে যে কি না কিছুই জানতাম না।

আমাদের বাসাটা খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে।বাসায় মেহমানদের ভিড়।খুব আহামরি করে বিয়েটা হচ্ছে না,তাও ছোট খাটো করে যা আয়োজন করা হয়েছে তাতেই জনা তিনশো গেস্ট হাজির।দমবন্ধকর অবস্থা।

আজ তেরোদিন।আমি আমাদের বাসায় এসেছি।যেদিন জানতে পারলাম যে,আপি আর আরহাম ভাইয়ার মধ্যে সম্পর্ক আছে তার পরদিন থেকেই আমার গুন্ডা বর আপুর বিয়ে নিয়ে হুলস্থুল কান্ড বাধিয়ে দিলেন।বাসার সবাইকে একপ্রকার জোর করে বিয়ের ডেইট ফিক্সড করে ফেলেছে। যদিও সবাই জানতো তাও চাইছিলো যাতে কয়েকমাস পর বিয়েটা হোক।কিন্তু গুন্ডা আবরার আগুন চৌধুরী বলে কথা!তাঁর উপর কি আর কারোর কথা বলা সাজে?

সন্ধ্যা সাতটা। বাসায় গিজগিজ করছে মেহমান।ভিড় আমার একদমই পছন্দ না।তাই আপুর রুমে বসে আছি।পার্লারের মেয়েরা আপুকে সাজাচ্ছে।খুবই হালকা সাজ।সাদা লেহেঙ্গা আর টকটকে লাল ওড়না।আপু আমার চেয়েও সুন্দরী। ডার্ক রেড কালার লিপস্টিক আর হালকা গয়না,এটুকুই।ফেইস পাউডার, ব্লাসন,আই-লাইনার, আই-শ্যাডো, টিপ,কাজল এসমস্ত কসমেটিকস আপু একদম পছন্দ করে না।তাই এসব দেওয়াও হলো না।তাতেই আপুকে লাগছিলো অপ্সরা!

আমি বসে বসে এসবই দেখছিলাম হা করে।সবাই সাজগোজ করছে এমনকি আম্মু,মামানি, মামা,আব্বু সহ সবাই প্রায় রেডি!বিয়েটা আমাদের বাসাতেই হচ্ছে তাই মামানিরাও এখানে।সবাই রেডি কিন্তু কপাল!

আমি,শুভ্রতা জান্নাত খুশবু যে ফকিন্নি সেজে ঘুরছি সেটা কারো চোখে পড়লো না।আসলে,মানুষ শুধু নিজেরটাই দেখবে,আমি কে?নিজের একমাত্র বড় বোনের বিয়ে আর আমার দিকেই কেউ নজর দিচ্ছে না!রাগে দুঃখে কান্না পাচ্ছে আমার।আর এদিকে উনি আরেক কান্ড করে বসে আছেন।সাদাফ ভাইয়া আর আনিকার বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন।আবরার গুন্ডার পরামর্শ নিয়ে সাদাফ ভাইয়া জোর করে আনিকাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলেছেন।যদিও আনিকার আব্বু-আম্মু আগে থেকেই রাজি ছিলো তাই তারাও মেনে নিয়েছেন বিয়েটা।সবাই সবকিছু কত সহজেই মেনে নেয় বুঝি না।

যেদিন আনিকার সাথে সাদাফ ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে সেদিন রাতে আমি জানতে পারলাম এসব।আনিকা বেচারি আমাকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,সুগন্ধা! তুই জানিস কি হয়েছে?

আমি ওর কান্নায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম,কি?কাঁদছিস কেন?

-আমার সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে!

-কি হয়েছে?

-আমার বিয়ে হয়ে গেছে!

-কিহ?তোর বিয়ে দিলো আর আন্টি আমাকে একবারও জানালো না?

-আম্মুরা নিজেই জানতো না!!

-মানে? তুই পালিয়ে বিয়ে করছিস আনু? অবাক হয়ে বললাম আমি!

-না রে!ওই বিলাই সাদাইফফফফফা আমাকে…..

-সাদাফ ভাইকে বিয়ে করেছিস তুই?ইয়া আল্লাহ!! তুই না ওনাকে পছন্দ করতি না?

-আরে শোন!ওই সাদাইফফফফফা আমাকে জোর করে তুলে এনে তেলাপোকার ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছে রে জানু!কাঁদতে কাঁদতে বললো।

-কিহ????তেলাপোকা দেখিয়ে বিয়ে?আর তুই ও ভয়ে বিয়ে করে ফেলছিস?আজব!অবাক হয়ে বললাম আমি।

-হুম!আর জানিস?বাসার সবাইও এ ঘটনা দেখে কিছু বলে নাই।বরং খুশি হয়েছে রে!আমাকে মনে হয় ওরা কুড়িয়ে পেয়েছিল রে!!

-তুই এখন কোথায়?

-বাসর ঘরে!আর তুই জানিস ওই সাদাইফফফা আমার সাথে কি খারাপ কাজ করেছে? আমার সব শেষ রে…. কাঁদতে কাঁদতে বললো!

-আমি ভ্রু কুঁচকে সন্দেহী চোখে বললাম, কি করেছে?

-ওই সাদাইফফফা আমার ঠোঁটে চুমু দিয়েছে! আর জানিস কতবার?তিনশো সাতানব্বই বার!

আমি এই বেলাজ মাইয়ার কথা শুনে নিজেই লজ্জা পেলাম।ও আবারও বলতে লাগলো…

-সাদাইফফফা এখন নাই।আমি লুকিয়ে ফোন করেছি তোকে।জানিস,আমার ঠোঁটে এতবার ওই চরিত্রহীনটা টাচ করেছে তেলাপোকার ভয় দেখিয়ে! আর এসবের মূল মাস্টারমাইন্ড হলো তোর জামাই।উনার বুদ্ধিতেই এই সাদাইফফফফা আমাকে তুলে এনে বিয়ে করেছে!

আমি ফোনের এপাশ থেকে আনিকার বাচ্চামো কথায় হাসছি।আনিকাকে ফোন রেখে দিতে বলে দিলাম।আমিও ফোনটা রেখে আমার পাশে ঘুমিয়ে থাকা মাস্টারমাইন্ডের দিকে তাকালাম।ব্যাটা সারাদিন এসব কাজ করব ঘুমুচ্ছে শান্তিতে! আমার হঠাৎ কি হলো জানিনা,ফট করে উনার ঠোঁটে চুমু এঁকে দিলাম।গুন্ডাটা খারাপ হলেও অনেক বেশীই ভালো!রাগটা যা একটু বেশী।

এসব হাজারো ভাবনা কাটিয়ে আপুর দিকে চোখ পড়লো আমার।ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমিও বললাম, কি?

-কি মানে? সবাই রেডি আর তুই?এখনো রেডি হসনি?

-আমি রেগে গেলাম আচমকা।বললাম,,এতক্ষণে এসেছে খোঁজ নিতে!লাগবে না।আমি সাজবো না।যাও…

-সাজবি না মানে? আজব।কি হয়েছে তোর?

-কিছু হয়নি।তুমি যাও!তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।

বলেই নিজের রুমে চলে এলাম।গিজগিজ করছে মেহমান। তার মধ্যে একপলক গুন্ডাটাকে দেখলাম শুধু।আরহাম ভাইয়ার সাথে দাঁড়িয়ে আছেন।গোল্ডেন শার্ট ইন করা,কালো প্যান্ট আর কালো সু।খুবই সুন্দর দেখাচ্ছিলো উনাকে। কিন্তু উনি তো আমার খোঁজ একবারও করলেন না।যাইহোক, সবাই থাকুক নিজের মতো করে।





রুমে এসে দরজা লাগিয়ে হাত পা মেলে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।

-একটু পর দরজায় কে যেন ঠকঠক শব্দ করছে।বিরক্ত হয়ে দরজাটা খুলে দিলাম। কিছু বুঝে উঠার আগেই আবরার গুন্ডা রুমে ঢুকে তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ
করে দিলেন। বিছানায় বসে বললেন, যাক বাবা!বাঁচা গেছে।এত চিৎকার বাবা!

-হঠাৎ আমার দিকে নজর পড়তেই উনি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, এখনো রেডি হওনি?কেন?

-আমি কিছু বললাম না।চুপচাপ বসে পা দুলাচ্ছি।

-কি?কালা হয়ে গিয়েছো?শুনতে পাচ্ছো না?

-আমি এবারেও চুপ।

-উনি এবার রেগে বললেন,হোয়াট দ্য খুশবু? আমি ডাকছি, কথা বলছি শুনো না?

-আমি কেঁপে উঠলেও কিছু বললাম না।শুধু মুখ তুলে তাকালাম উনার পানে!

-উনি ধৈর্যের বাঁধ ধরে রাখতে না পেরে চিৎকার করে বলে উঠলেন, খুশবু…….

-আমি এবার ভয়ে বলে উঠলাম,জ্বি জ্বি বলুন!!!!

-এতক্ষণ বলছি উত্তর দাওনি কেন?

-শুন…তে পা…ইনি….

-রেডি হওনি কেন?

-ভালো লাগছে না, তাই।আপনি যান।আমি যাবো না।

-কিহ?যাবেনা?

-হুম!

-কেন?

-এমনিই!

-বললেই হলো নাকি?দু’মিনিট দিচ্ছি রেডি হও।ওই কালো শাড়িটা পড়বে!

-আমি রেগে বললাম,যাবো না তো বলেছি আপনাকে, শুনতে পাননি?

-আমার সঙ্গে উঁচু গলায় কথা বলা?দাঁড়াও যাবে না,রেডি হবে না তো?

-জ্বি রেডি হবোনা।আপনি যান।ভাব নিয়ে বললাম আমি।

-তুমি রেডি না হলে কি হবে আমি তো রেডি করিয়ে দিতেই পারি,তাই না?

-কীহহহ???’

-জানি আজকের পার্ট ভালো হয়নি।স্যরি?

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে