Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তাহার উম্মাদনায় মত্ততাহার উম্মাদনায় মত্ত পর্ব-৩০+৩১

তাহার উম্মাদনায় মত্ত পর্ব-৩০+৩১

#তাহার_উম্মাদনায়_মত্ত
#লাবিবা_আল_তাসফি

৩০.
কোয়েন্সিডেন্স! রিয়েলিটি অবজারভ করলে এই কোয়েন্সিডেন্স এর ও দুটো ধরণ আছে। প্রথমত ইন্টেনশনাল কোয়েন্সিডেন্স এবং দ্বিতীয়ত কোয়েন্সিডেন্টাল কোয়েন্সিডেন্স। তন্নির সাথে যেটা ঘটেছে সেটা এই দুটোর ভেতরের ঠিক কোন পর্যায়ে পড়ে তা তার জানা‌ নেই। এই মুহূর্তে তারা রয়েছে পুরান ঢাকার স্বনামধন্য একটা কফিশপে। কেবল কফি খাওয়ার জন্য সুদূর মিরপুর থেকে পুরানঢাকা আসার রহস্যটা তন্নিকে খুব ভাবাচ্ছে। তবে আপাতত সে উক্ত বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে চাচ্ছে না। তাদের সামনে ইতিমধ্যে ধোঁয়া ওঠা চার মগ কফি চলে এসেছে। তন্নির পাশে বসা তানিয়া সুন্দর করে কিছু ছবি ক্লিক করছে কফির। তাদের সামনে বসে আছে দুজন পুরুষ। একজন সম্পর্কে তন্নির হবু দুলাভাই। গোলগাল মুখের মোটামুটি সুদর্শন দেখতে লোকটার নাম নিবারস। তানিয়ার সাথে তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক তার। এই তিন বছরে তন্নি নিবারসের পরিবার সম্পর্কে অনেক কিছু শুনলেও তার যে একজন বড় ভাই রয়েছে এ ব্যাপারে পুরোপুরি ভাবে অজ্ঞত ছিলো সে। নিবারসের পাশে বসে থাকা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিধারি ব্যক্তিটাই নিবারসের একমাত্র বড় ভাই নুহাশ খন্দকর। নুহাশকে দেখার পর থেকেই তন্নি অন্যমনস্ক হয়ে আছে। তার বারবার কেন যেন মনে হচ্ছে নুহাশ জেনেশুনেই এখানে এসেছে। এটা কোনোভাবেই কোয়েন্সিডেন্স হতে পারে না।

‘তুই হঠাৎ এমন জমে গেলি কেন? কোনো সমস্যা?’

তানিয়াকে চিন্তিত দেখালো। তন্নি ক্ষুদ্র হাসার চেষ্টা করলো।

‘সমস্যা কেন হবে? আ’ম ওকে।’

‘তবে খাচ্ছিস না কেন? কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছ।’

তন্নি আড় চোখে নুহাশকে পর্যবেক্ষণ করে পুনরায় হেসে জবাব দেয়,

‘ঠান্ডা হলেই খাবো। গরম খেলে জিভে লাগে।’

কথাটা পুরোপুরি ভাবে মিথ্যা। ধোঁয়া ওঠা গরম কফি ছাড়া সে কখনোই কফি খায় না। ঠান্ডা হলে কফির স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। ফু দিয়ে দিয়ে গরম কফি পান করার মতো স্বাদ কিছুতে নেই। কিন্তু তাকে মিথ্যা বলতে হচ্ছে। কেন এই মিথ্যা গুলো সে বলছে সেটা তার অজানা। নুহাশ নামক ব্যক্তিটাকে দেখে কিছুটা নার্ভাস সে। তার বডির নার্ভ সিস্টেমে কিছুটা মুর্ষে পড়েছে। এজন্যই হয়তো। কিন্তু নুহাশের মতো একটা মানুষের জন্য মিথ্যা বলে তার মনে অশান্তি হচ্ছে খুব। এমন ফালতু ধরনের মানুষের জন্য নিজের কাঁধে পাপ নেওয়াটা বাড়াবাড়ি ধরনের বোকামি হয়ে গেলো। কিন্তু এতটা বোকা তো তন্নি না!

পুরোন ঢাকার এক রোড সাইড হোটেল থেকে দুপুরে লাঞ্চ করা হবে। রোড সাইড হোটেল হলেও ওখানকার বিরিয়ানি লোভনীয়, এমনটাই শুনেছে তন্নি। লোকেশনে পৌঁছাতে রিকশায় বিশ মিনিটের পথ। হাইওয়ে ধরে গেলে আরো একটু দ্রুত পৌঁছানো যেতে। এই রুটে জ্যাম নেই। কিন্তু তানিয়ার মতে পুরোন ঢাকার অলিগলিতে রিকশা করে ঘোরাটা মজার। এজন্য দুটো রিকশা ঠিক করা হয়েছে। তন্নি এ ব্যাপারে নিজের মতামত প্রকাশ করতে চাইলেও তাকে পুরোপুরি ভাবে অগ্রাহ্য করা হলো। তানিয়া ও নিবারস এক রিকশায় গেলে তাকে যেতে হবে নুহাশের সাথে একত্রে। যেটা তন্নি কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

তানিয়াদের রিকশা এগিয়ে চলছে। যেতে যেতে তানিয়া রিকশা থেকে পেছনে উঁকি দিয়ে তন্নিকে হুঁশিয়ারি করে বলছে,

‘সাবধানে বসবি। কোনো সমস্যা হল ভাইয়াকে বলবি। ওকে?’

তন্নি ছোট মুখে মাথা নাড়ল কেবল। বাঘের মুখে ফেলে রেখে সাবধানে থাকতে বলাটা তার বোনকে দিয়েই হয়তো সম্ভব।
নুহাশ আগে উঠে বসেছে। তন্নির দিকে হাত বাড়িয়ে ছোট করে বলে,

‘উঠে এসো।’

তন্নি পুরোপুরি ভাবে নুহাশকে উপেক্ষা করে একাই উঠে বসে। নুহাশ মাথা চুলকে হাসে। এই বোকা রমনীর যে এত জেদ রয়েছে সেটা সে জানতো না।
রিকশা চলতে শুরু করেছে। পরিবেশের ঠান্ডা বাতাস এসে নাক মুখ ধাক্কা খাচ্ছে। তন্নির সাদা মুখ লাল হয়ে এসেছে। নুহাশ লক্ষ্য করে নিচু গলায় শুধায়,

‘হুড তুলে দিব?’

‘না।’

‘ঠান্ডা লাগছে তো!’

‘লাগুক! তবুও অপরিচিত কারো সাথে রিকশার হুড তুলে ঘোরার মুড নেই আমার।’

নুহাশ ঠিক তন্নির মতো করেই জবাব দেয়,

‘রিকশার হুড তুলে এক অসহায় মেয়ের সাথে রোম্যান্স করার মুডে নেই আমি। তুমি চাইলে অবশ্যই সেই মুডে ট্রান্সফার হবো। চাও?’

তন্নির মুখ রাগে আরো লাল হয়ে আসে। ক্ষিপ্ত গলায় বলে ওঠে,

‘আপনি ভিষণ অসভ্য।’

‘তাহলে অসভ্যতা করার পার্মিশন দিচ্ছ?’

নুহাশের হেঁয়ালি কথায় রাগ বাড়ে তন্নির। আরো খানিক চেপে বসতে গেলে নুহাশ তার বাহু ধরে কাছে টেনে আনে। ধমকের সুরে বলে,

‘আর একবার চেপে গেলে রাস্তায় নামিয়ে দিব। এভাবে বসো। বল্লাম তো যেসব ভাবছো সেসবের মুডে নেই আমি।’

তন্নি রাগি চোখে তাকায়। নুহাশ তাতে থোরাই কেয়ার করে। এক হাতে তন্নিকে নিজ বাহুতে আটকে রেখেই হুড তুলে দেয়। এতে বাতাস কম লাগলেও বসার জায়গা চেপে আসে। তন্নিকে না চাইতেও নুহাশের সাথে লেগে বসতে হয়। নুহাশের মুখ থেমে নেই। সে বিভিন্ন কথা বলে চলেছে। এই যেমন,

‘তোমার মনে হয়না আমার বয়সটা প্রেমের জন্য একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে? আই মিন এখনি শেষ সময় প্রেম করার।’

তন্নি না চাইতেও অবাক গলায় শুধালো,

‘কেন? এরপর কি হবে?’

‘কিছুই হবেনা। তবে প্রেমের একটা বয়স আছে বুঝলে। সেই বয়সের লাস্ট স্টেজে আছি আমি। এখন আশপাশ থেকে সুন্দরী দেখে একটা মেয়ে পটিয়ে ফেলতে পারলেই হয়।’

‘ওহ! ওকে।’

‘কিসের ওকে?

তন্নি থতমত খেয়ে যায়। নিভু গলায় বলে,

‘আই মিন পটান!’

‘তুমি কেন পটছো না?’

‘আপনিকি আমাকে পটাতে চাইছেন?’

নুহাশ দু ভ্রুর মাঝে ভাঁজ ফেলে বলে,

‘সন্দেহ আছে?’

‘সন্দেহ নেই। তবে আপনার প্রেমে পড়ার মতো ইচ্ছাও নেই।’

‘তাহলে বিয়ে করো? প্রেমটা নাহয় বিয়ের পর হবে।’

‘আপুর আগে আমার বিয়ে অসম্ভব।’

‘চলো পালাই।’

‘আপনার সাথে?’

‘হুম।’

‘ইম্পসিবল।’

. . . . . . .
______________

‘আপা চা নেন। ‘

চা নিতে বললেও পারু চায়ের কাপটা বারান্দার রেলিংয়ের উপর রাখলো। অন্তি এখানে দাঁড়িয়ে শীতল পরিবেশ উপভোগ করছিল। এই সুন্দর সময়টা এক কাপ চা খেতে খেতে পার করলে মন্দ হয়না। এজন্যই পারুকে ডেকে চা আনালো। পারু কেবল তার জন্য চা এনেছে এমন নয়। সে নিজের জন্য ও এক কাপ চা এনেছে। সাথে দুটো বিস্কুট ওড়নার পাড়ে বেঁধে এনেছে। অন্তি তা দেখে মুচকি হাসে। চায়ের কাপ তুলতেই তার কপালে ভাঁজ পড়ে।

‘দুধ চা কেন? রং চা খাব বলেছিলাম।’

অন্তির কথায় পারু বিশেষজ্ঞদের মতো করে বললো,

‘আপনের রং চা খাওয়া চলবে না আপা। আপনের গায়ের রং চাপা। রং চা খাইলে গায়ের রং আরো ময়লা হবে। এহন থেইকে আমি নিজ দায়িত্বে আপনেরে দুধ চা বানায় দিব। দুধ চা খাবেন আর দুধের মতো টসটসে সাদা হবেন।’

‘তোমাকে এ কথা কে বললো?’

‘কেউ বলে নায় আপা। আমি বুজদার মানুষ ছোটসময় থেইকে। কার কি দরকার তা আমি বুঝবার পারি।’

‘আমার মনে হয় আমিও তোমাকে বুঝতে পারছি পারু।’

‘কি বুঝতাছেন আপা?’

‘এই যে তুমি মায়ের হাত থেকে বাঁচতে আমাকে জোর করে দুধ চা খাওয়াচ্ছ। মূলত তোমার দুধ চা পছন্দ।’

পারুর মুখটা ছোট হয়ে আসে। অন্তি যে সত্যিই বুঝে ফেলবে সে বোঝেনি। পারুকে নিভে যেতে দেখে অন্তি মুচকি হেসে বলে,

‘পরিবেশটা সুন্দর পারু। এমন পরিবেশে মন খারাপ করতে নেই। চিন্তা করো না, আমি মা কে বলবো না। তবে তুমি যাওয়ার আগে আমার বুক সেলফ টা ক্লিন করে দিও। বহুদিন ওটায় হাত লাগাও না।’

‘আরো কিছু থাকলে তাও করতে রাজি। আপনের মা নামক জল্লাদ মানুষটার থেইকে বাঁচাইছেন এরজন্য শুকরিয়া।’

অন্তি জবাব দেয় না কেবল হাসে। তার মায়ের সাথে পারুর বোনাবুনতি হয়না। সবসময় ঠোকাঠুকি লেগে থাকে। অথচ পারুল একদিনের জন্য কোথাও গেলে তার মায়ের চিন্তার শেষ থাকে না। পারুটা কোথায় গেল? কি করছে? কি খাচ্ছে?আবার কোথায় কোন অঘটন ঘটালো কিনা! দুনিয়ার চিন্তায় সে নিজের খাওয়ার কথাই ভুলে যায়।

দিহানের সাথে অন্তির দেখা হয়না আজ প্রায় সপ্তাহ হয়ে এসেছে। প্রতিদিন রাতে কথা হয় ওদের। ভিডিও কলে কথা বলার থেকে দুজনের চোখের কথা হয় বেশি। দিহানকে বাসায় সিফ্ট করা হয়েছে। বাদবাকি ট্রিটমেন্ট বাসায় থেকে নেওয়া হবে। দুদিন পরপর ডক্টর এসে চেক করে যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই সুস্থতার পথে ফিরবে বলে আশাবাদী সবাই।

প্রতিদিন নিয়ম করে দিহানের সাথে ভিডিও কলে কথা হলেও সামনে থেকে দেখার তৃষ্ণা অন্তিকে পাগল করে দিচ্ছে। তার এই প্রাণ ধুকপুক করা বিষয়টা সমাধান করতে বিপজ্জনক একটা উপায় বের করেছে অন্তি। তার সাহস বরাবরই সহ্য সীমার বাইরে। এবারো সীমা অতিক্রম করে সে কাউকে না জানিয়ে দিহানের বাড়িতে হানা দিয়েছে। দিনের এই সময়টা রেজওয়ান মির্জা বাহিরে থাকেন। কথায় কথায় দিহানের থেকে সেটা জানতে পেরেছে অন্তি। তাই এই সময়টাকেই উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নিয়েছে সে। মহিলাদের মন হয় নরম মাখনের মতো। চাইলেই গলানো যায়। কিন্তু পুরুষ মন পাথরের ন্যায়। এরা এতো সহজে গলে না। তাই অন্তি দিহানের মাকে নিজের টার্গেট করেছে। তার দক্ষতা দিয়ে দিহানের মাকে প্রথম দশ মিনিটের মধ্যে নিজের মা বানিয়ে ফেলা কোনো ব্যাপার না। বাবার ব্যাপারটা পরে হ্যান্ডেল করা যাবে।
_______________

‘এটা দিহান মির্জার বাড়ি না?’

একখন্ড সোনালী রোদের নিচে টুল পেতে ঘুমের মতো পড়েছিল দারোয়ান। এ বাড়িতে পরিচিত মানুষ ব্যতীত সচারচার কেউ আসে না। বড় সাহেব বাহিরে যাওয়ার পর পরিচিত মানুষ আসার সম্ভাবনাও কমে যায়। এই সময়টুকু বসে বসে নিদ্রার মাঝে কাটে তার। দারোয়ান নিভু নিভু চোখ চেয়ে জবাব দেয়,

‘হুম। কি চাই?’

‘কিছু চাই না। গেট খুলে দিলে ভেতরে যেতাম আরকি।’

দারোয়ান খানিক বিরক্ত হলো বোধহয়। বললো,

‘লেখিত কাগজ আছে? দেখান।’

অন্তি আকাশ থেকে টুপ করে পড়ার মতো করে বললো,

‘কি সাংঘাতিক ব্যাপার! বাড়িতে ঢুকতেও লেখিত দরকার বুঝি?’

‘এ বাড়িতে লাগে। এখানে বাহিরের লোক ঢোকা নিষেধ।’

‘আপনি কাকে বাহিরের লোক বলছেন? আপনার আইডিয়া আছে আমি কে?’

‘কে আপনি?’

অন্তি তৎক্ষণাৎ ফোন বের করে দিহানকে কল করলো। প্রম কলেই দিহান লিসিভ করলো। অন্তি কল লাউডে দিয়ে বললো,

‘দিহান বলুন তো আমি আপনার কি হই?’

হঠাৎ এমন কথায় দিহান খানিক ভরকালো বোধহয়। কিন্তু তাতে অন্তির আসে যায় না। সে পুনরায় বললো,

‘আমি আপনার প্রেমিকা এ কথা কি সত্যি?’

ওপাশ থেকে ছোট জবাব এলো,

‘হুম। সত্যি।’

‘আমি আপনার হবু বউ এ কথা সত্যি?’

‘হুম সত্যি।’

‘তাহলে আমি আপনার পরিবারের একজন সদস্য তাই না?’

‘হুম তাই।’

‘আচ্ছা রাখি এখন।’

‘কিন্তু……’

চলবে……….

#তাহার_উম্মাদনায়_মত্ত
#লাবিবা_আল_তাসফি

৩১.
দিহানের রুমের দক্ষিণ পাশ জুড়ে বিশাল এক খোলা বারান্দা রয়েছে। বারান্দা থেকে দিনের আলো রুমটাকে সর্বদা উজ্জ্বল করে রাখে। বারান্দার থাই খোলা। রেহানা খুলে রেখে গেছে। দু একখন্ড কোমল রোদ এসে পড়েছে বিছানায়। নরম রোদ শরীরে লাগায় বেশ আরাম অনুভব হচ্ছিলো দিহানের। কিন্তু এই আরামকে হারাম করে দিয়েছে অন্তির একটা ফোন কল। দিহান ভেবে পায়না মেয়ে মানুষ এত অশান্ত হয় কিভাবে। মেয়েরা হচ্ছে এক মুঠো কাদার দলার মতো। যেমন ভাবে রূপ দেওয়া হবে তেমন ভাবেই থাকবে সারাজীবন। কিন্তু এই মেয়ে হচ্ছে সকল কিছু ছাপিয়ে এক ভিন্ন জাতের। কোনো কিছুতে পরোয়া নেই তার। হুট করে তার বিপি কখনো হাই করে ফেলে কখনো বা ডাউন। এক দন্ড শান্তি নেই কোথাও। চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে দিহানের। না জানি কোথায় কি অঘটন ঘটাচ্ছে তাকে নিয়ে! কলটাও রিসিভ করছে না। চিন্তিত ভঙিতে দিহান কল করলো নুহাশকে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে নুহাশ কল রিসিভ করলে না। এমনটা সচরাচর হয় না। সচরাচর বলতে কখনই হয় না। দিহানের কুঁচকানো কপাল আরো খানিক কুঁচকে এলো। অন্তির খোঁজ নেওয়ার শেষ মাধ্যম হিসেবে দিহান পারুকে কল করলো। দু বার রিং হওয়ার পর পারু কল ধরলো। দিহানকে কিছু জিজ্ঞেস করতে হলো না। তার পূর্বেই পারু বলতে শুরু করলো,

‘আপা ঘুম ভাঙার পর থেইকেই কেমন অদ্ভুত আচরণ করতাছিল বুঝলেন ভাই? মনেহয় মনে রংটং লাগছে। বয়সটাতো বোঝেন। খালা….’

দিহান পারুকে কথা শেষ করতে দিলো না। মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বললো,

‘ও কোথায় এখন?’

কথার মাঝে বাঁধা দেওয়ায় পারু কিছুটা বিরক্ত। ভালো অংকের টাকা দেয় দেখে এসব পারু সহ্য করে নেয়, নয়তো এসব মানুষের ধার ধারে না পারু। মুখের কথা গিলে ফেলে পারু জবাব দেয়,

‘ঘন্টাখানেক আগে বাইরে গেছে। কোতায় তা এই পারু জানে না। সেই খবর রাখার কতা আমার ছিলো না। পারুর কাজ পারু ঠিকঠাক করছে। পারু একবার যে কাজ হাতে….’

দিহান খট করে কল কেটে দিলো। প্রয়োজনের সময় কোনো কিছুই ঠিক থাকে না। এই মুহূর্তে অন্তি কোথায় আছে জানাটা দরকার ছিলো। দিহান ছোট করে শ্বাস ফেলে। বিয়ের পর এই মেয়েকে চব্বিশ ঘন্টা সে ঘরে আটকে রাখবে। নয়তো যে কোনো মুহূর্তে সে দমবন্ধ হয়ে মারা যাবে।
______________

মিণু সুপারির ছোলা ছুলছে মেঝেতে বসে। রেহানা বারবার তাকে মেঝেতে বসতে মানা করেছে। এই ঠান্ডায় মেঝেতে বসে থেকে ঠান্ডা বাঁধিয়ে পরে দিন রাত কাশতে থাকবে। এজন্য রেহানা তাকে বারবার বলেছে,

‘মিনু সোফায় বসে তোর যা কাজ করার কর। মেঝেতে যেন বসতে না দেখি।’

কিন্তু সে কথা তার মনে থাকে না। মেঝেতেই বসে পরে। তখন কিছু বললে মুখখানা আঁধার করে বলবে,

‘সোফায় বসার অভ্যাস নাই তো তাই বারবার ভুল হয়।’

রেহানাও তাই তাকে কিছু বলা ছেড়ে দিছে। আর যাই হোক প্রতিবেলায় মিনুকে সোফায় বসতে বলা তার পক্ষে সম্ভব না।

কলিং বেল বাজছে। রেহানা রান্নাঘরে স্যুপ রান্নার জন্য চিকেন ছোট ছোট পিস করছে। সে রান্নাঘর থেকেই গলা উঁচু করে মিনুকে ডাকে।

‘দরজা খোল। দেখ কে এলো।’

মিনুর কোনো শব্দ পাওয়া গেলো না। রেহানা নিজেই হাত ধুয়ে বের হয়ে এলো। দরজা খুলতেই হাসি উজ্জ্বল মুখের একটা মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। দু হাত ভর্তি তার বিভিন্ন ফল। তাকে দেখতেই মিষ্টি হেসে সালাম দিলো। হঠাৎ তার বাড়িতে একটা মেয়ের আগমনে রেহানা খানিকটা বিস্মিত হয়। রেহানা তাকে ভেতরে আসতে না বললেও অন্তি টুপ করে ঘরে ঢুকে পড়ে যেন এটা তার বাড়ি। ততক্ষণে মিনুও এসে দাঁড়িয়েছে কাছে। অন্তি ফলের ব্যাগ দুটো মিনুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বেশ স্বাভাবিক ভাবে রেহানাকে বলে,

‘মা দিহান কি খেয়েছে?’

এত চমক হজম করতে না পেরে রেহানা বোবা বনে গেলো যেন। কে এই মেয়ে? কোথা থেকে এলো এসব প্রশ্ন ভাবার সময়টুকু ও পেলো না সে। সম্মোহিতর মতো মাথা নেড়ে না জানালো। অন্তি মুচকি হেসে গলার ওড়না সুন্দর করে কোমরে পেঁচিয়ে বললো,

‘রান্নাঘরটা কোন দিকে?’

মিনু হাতেল ইশারায় রান্নাঘর দেখিয়ে দিলো। অন্তি মিষ্টি করে হেসে ধন্যবাদ জানিয়ে সেদিকে চলে গেলো। তার পিছু পিছু রেহানাও যেয়ে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়ালো।

‘মা এই মাংস দিয়ে কি হবে?’

‘স্যুপের ভেতর দেওয়া হবে।’

‘স্যুপটা আমি রান্না করি?’

‘পারবে?’

‘খুউউব পারবো। আপনি শুধু বলে বলে দিবেন কখন কি করতে হবে।’

রেহানা হঠাৎ ফিক করে হেসে ফেলে। মেয়েটার চঞ্চলতা তার ভালো লেগেছে। চেনা নেই জানা নেই এমন একটা মেয়ে তাকে মা মা বলে ডেকে চলছে এই ব্যাপারটাও তার ভালো লাগছে। তবে মেয়েটার সাহস তাকে অবাক করেছে খুব। এই যে এসেই মা ডাকা শুরু করেছে কয়টা মেয়ে পারে এমন সাহস করতে?

‘তোমার নামটা তো বললে না মা।’

অন্তি জিভ কাটে। আলতো হেসে বলে,

‘ইসস! একদম ভুলে গিয়েছিলাম। আমি রূপন্তি নওয়াজ খান। বাবা সাহেদ নওয়াজ খান। আমি এবার দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠবো।’

রেহানা বেশ উচ্ছ্বসিত গলায় বলে,

‘তাহলেতো তুমি বেশ ছোট!’

হঠাৎ করেই অন্তি মুখটা বাংলার পাঁচ বানিয়ে ফেলে। এমন পরিবর্তনে রেহানাও কিছুটা থতমত খেয়ে যায়। সে তো এমন কোনো কথা বলেনি যার জন্য মেয়েটার মুখে এমন আঁধার নামবে!

‘আপনার বাউন্ডুল ছেলেটা আমাকে ছোট ছোট করে মাসের পর মাস ঘুরিয়েছে জানেন মা? আপনিতো জানেন না। জানলে অবশ্যই আমাকে ছোট বলতেন না। আমি দেখতে ছোট হলেও আমার মন অনেক বড়।’

রেহানার মুখ থেকেও যেন মেঘ কেটে যায়। হাসি হাসি মুখে বলে,

‘তোমার সাথে আমার বাউন্ডুল ছেলেটার সম্পর্ক কি মা?’

অন্তি বেশ প্রফুল্ল চিত্তে জবাব দেয়,

‘আমি তার অফিসিয়াল প্রেমিকা। বিয়েটা হলেই বউ উপাধি পেয়ে যাব। আমাকে আপনার পুত্রবধূ হিসেবে কেমন লেগেছে মা?’

রেহানা হতবাক হয়ে অন্তির দিকে তাকিয়ে আছে। এইযে একের পর এক কথার চমক দিয়ে চলেছে মেয়েটা এতে যেন মেয়েটার মুখভাবের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। কত সহজ স্বাভাবিক ভাবে প্রতিটা জবাব দিচ্ছে। যেন রেহানার সাথে তার বহুদিনের পরিচয়। রেহানা একটু কেশে কথা ঘুরিয়ে নিতে চায়। ছেলেকে না জানিয়ে বউ পাকাপোক্ত করে ফেলাটা অন্যায় হবে। রেহানা একটা বাটি এনে অন্তির সামনে রাখে।

‘মা তুমি এবার এপাশ হয়ে দাঁড়াও। আমি স্যুপটা ঢেলে দিচ্ছি। অনেক গরম, তুমি এটা পারবে না।’
________________

অন্তিকে দিহানের রুম দেখিয়ে দিয়ে সেখানেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল মিনু। সে কিছুতেই দিহানের রুমে একটা মেয়েকে একা রেখে যেতে পারবে না। এই মেয়ের যে রূপ দেখেছে সে তাতে এই মেয়ের পক্ষে দিহানকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপার না। মিনু থাকতে মির্জা পরিবারে এতবড় ঘটনা সে ঘটতে দিবে না। কিছুতেই না‌। তাছাড়া নিচে যেয়ে এ ব্যাপারে রেহানাকে তার আপডেট দিতে হবে।

দিহান বিছানায় আধবসা হয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে। তার স্বভাবসুলভ ভ্রুদুটো সামান্য কুঁচকে আছে। দাঁত দিয়ে নিন্মাংশের ওষ্ঠদ্বয় কামড়ে ধরে আছে। যেন কোনো কিছু নিয়ে খুব ভাবনায় বিভোর সে। অন্তি আগাগোড়া দিহানকে পর্যবেক্ষণ করে খুব নিরবে স্যুপের ট্রেটা তার পাশের টেবিলে নামিয়ে রাখলো। দিহান রুমে কারো উপস্থিতি টের পেয়েছে। তবে তার রুমে এ সময়ে রেহানা ছাড়া অন্য কারো আসার কথা না। মিনু কখনোই তার রুমে আসে না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই সে ধরে নিয়েছে রেহানা এসেছে। দিহান ল্যাপটপে নজর রেখেই বললো,

‘এক গ্লাস পানি দাও তো মা।’

অন্তি কোনো বাক্য ব্যায় না করেই পানি এগিয়ে দিলো। দিহানের কানের নিকট মুখ এগিয়ে ফিসফিস করে বললো,

‘পানিটা মা নয় বউ দিয়েছে। কল মি বউ।’

দিহান মাত্রই গালে পানি নিয়েছিলো। পানিটা তার গলা দিয়ে প্রবেশ করার সুযোগ পেলো না। তার পূর্বেই তীব্র গতিতে ছিটকে পড়লো। কাশি উঠে গেছে তার। অন্তি তৎক্ষণাৎ দ্রুত গতিতে দিহানের পিঠে চাপড় দিতে দিতে বলতে লাগলো,

‘এত কেয়ারলেস কেন? সামান্য পানিটাও ঠিক ভাবে খেতে পারেননা দেখছি।’

দিহানের চোখ মুখের অবস্থা করুণ। যেন তার ভেতর সত্তা বলতে চাইছে,’নিজের কেয়ার নিতে পারছি কোই? তোমার চমক আমার এই প্রাণ আর নিতে পারছে না। ক্ষমা দাও এবার।’

চলবে…….

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ