তবুও তুমি পর্ব-০৩

0
1187

#তবুও_তুমি💖
#পর্ব_০৩
#লেখিকাঃলামিয়া রহমান মেঘলা
রোদ ছোঁয়ার গলাটা খুব শক্ত করে চেপে ধরেছিল যার ফলে ছোঁয়ার দম বন্ধ হয়ে আসছিল।
সেটা বুঝতে পেরে রোদ ছোঁয়া কে ছেড়ে দেয়।
ও আমার গলা ছাড়াতে আমি কাশি শুরু করি।
অনেকটা সময় পর যেন আমি দম ফিরে পেলাম।
ভিশন কষ্ট হচ্ছে আমার তাও।
একটু পানি প্রয়োজন আমার।
কিন্তু আমি দিশাহারা হয়ে গেছি আশে পাশের কিছুই আমার উপর প্রভাব ফেলতে পারছে না,
কেমন কেমন হয়ে যাচ্ছে সব।
তখনি আমার সামনে কেউ পানির গ্লাস ধরে আমি সেটা এক চুমুকে শেষ করি।
কিছুটা স্থির হয়ে সামনে দেখি রোদ দাঁড়িয়ে।
আমাকে তাকাতে দেখে এক সেকেন্ড ও লেট না করে ঘরে থেকে বেরিয়ে যায়৷
আমি বিছনায় বসে হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকি।
মনে পড়ে পুরোনো দিনের কথা,
সে দিন মুষলধারে বৃষ্টি ছিল,
কলেজে পড়ি ,
যখন রোদ আমার থেকে বিদায় নিতে এলো শেষ বারের মতো,
অতিত,
–ছোঁয়া রানি ছোঁয়া রানি কই তুমি?
–এই তো আপনি এতো জোরে কেন চিৎকার করছেন।
–তোমাকে না দেখতে পেলে আমার ভয় হয় তো কি করব।
–আমি এখানেই ছিলাম বৃষ্টি হচ্ছে জালানা দিচ্ছিলাম।
–আমার আর ১ ঘন্টা পর ফ্লাইট এখন যেতে হবে এয়ারপোর্টে চলো তুমিও যাবে।
–আমিও এই বৃষ্টিতে,
–ছোঁয়া গত ১ বছরের জন্য তোমার দেখা পাবো না এই সময় টুকু অন্তত আমাকে তোমার সাথে কাটাতে দেও।
আমি জানি কোন কথা বলে লাভ নাই তাই গিয়ে একটা জামা পরে বেরিয়ে এলাম চুল গুলো ঠিক করে,
–চলুন।
–হুম।
ওনার সাথে গাড়িতে বসে আছি উনি আমার হাতটা খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে যেন ছেড়ে দিলে হারিয়ে যাবো।
মনে হচ্ছে এক বছর না দশ বছরের জন্য কোথাও চলে যাচ্ছে।
কিছু সময় রাস্তায় থাকার পর আমরা এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলাম।
গাড়ি থেকে নেমে ছাতা তুলে এয়ারপোর্টের বাইরে দাঁড়ালাম।
সে আমার কপালে চুমু একে দিলো,
–তোমায় খুব মিস করবো ছোঁয়া শুধু মাত্র দাদা জানের ইচ্ছে ছিল তাই বাইরে যাচ্ছি খুব জলদি ফিরে আসবো খেয়াল রেখো নিজের৷
আমার ছোঁয়া এখন তোমার দায়িত্বে ওর যত্ন তুমি নিবা। কলেজে গিয়ে কোন ফাজলামো না সোজা ক্লাস করবা বাসায় আসবা।
ভালো মেয়ে হয়ে থাকবে সব থেকে বড়ো কথা নিজের যত্ন নিবে।
খুব মিস করবো ছোঁয়া তোমায় ছাড়া একটা দিনও আমার ভালো কাটবে না।
কথা গুলে বলার সময় তার চোখে পানি এসেছিল।
আমি নিরব দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
কিছু সময় পর সে আমার হাতটা ছেড়ে ভেতরে চলে গেল।
যতোটা দুর পর্যন্ত আমাকে দেখতে পাওয়া যায় ততোটা দুর পর্যন্ত আমাকে দেখেছে সে।
সে এক দম ভেরতে চলে গেলে আমি চলে আসার জন্য পা বাড়ালাম।
হটাৎ দমকা হাওয়া এলো আমার ছাতাটাকে উড়িয়ে নিয়ে গেল।
পুরো বৃষ্টির মাঝে পড়লাম আমি।
হায় আল্লাহ এবার কি হবে।
আমি দৌড়ে গাড়ির কাছে আসতে গেলে উল্টো দিক থেকে একটা গাড়ি আমার সামনে চলে এলো।
প্রচন্ড ভয়ে হাত দিয়ে চোখ আঁটকে নিলাম।
তখনি মনে হলো কেউ ঝড়ের গতিতে এসে আমাকে টান মারলো।
আমি তার সাথে লেপ্টে গেলাম বৃষ্টির মধ্যে।
মুখ তুলে তাকিয়ে দেখি এক জন ২২-২৩ বছর বয়সের ছেলে লম্বা ফর্সা মতো করে।
ছেলেটার মুখে বোধহয় মায়া আকা ছিল।
না হলে আমার দৃষ্টি তার দিক থেকে সরছিল না কেন খোদাই জানে
হটাৎ ছেলেটা শুকনো কাশি দিলে,
–এই যে ম্যাম এখানে এভাবে রাস্তা দিয়ে চললে তো যে কোন গাড়ি নিমিষেই আপনাকে বেটে দিবে।
আমি তার থেকে সরে এলাম।
আর কোন কথা বললাম না।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে ছেলেটা আবার বললো,
–কি হলো ম্যাম আপনার জীবন বাঁচালাম আর আপনি দেখি আমাকে উল্টে ভাব দেখাচ্ছেন।
–কি বলেন ভাব কেন দেখাবো ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য করার জন্য।
আমি এখন আসি।
–আরে আরে অপেক্ষা করুন বৃষ্টিতে ভিজে আপনার অবস্থা খারাপ এই অবস্থায় আপনি লোকের মধ্যে যাবেন না।
এই কোর্ট টা পরে নিন।
আমি পাশে থাকা একটা গ্লাসে দেখতে পেলাম সত্যি ও আমার অবস্থা ভিশন খারাপ।
তাই তার দেওয়া কোর্ট টা পরে নিলাম।
–ধন্যবাদ আবারো।
–বাই দ্যা ওয়ে এই বর্ষার দিনে আপনার বর্ষনের সাথেই দেখা হলো।
আমি বর্ষন আপনি?
–আমি ছোঁয়া।
–ছোঁয়া বাহ খুব মিষ্টি নাম আপনার।
–ধন্যবাদ।
–আপনি তো দেখি ধন্যবাদ এর দোকান খুলে রেখেছেন যা বলছি তাতেই ধন্যবাদ।
তা ধন্যবাদ বুঝি ফ্রি তে বিক্রি হয়।
ছেলেটার প্রতিটি কথা আমি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছি বেশ হাস্য রসিক মানুষ সে।
–ও ম্যাম কই গুম হয়ে গেলেন।
–জি আমার মনে হয় এখন বাসায় যাওয়া উচিত।
–হ্যাঁ চলুন আমি আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি।
–জি না তার দরকার নেই আমার গাড়ি আছে।
–আচ্ছা তো মিস ছোয়া এয়ারপোর্টে আপনার কি কাজ? তাও এই মুষলধারে বৃষ্টির মাঝে
ওনার এই প্রশ্ন টা শুনে আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে উত্তর দিলাম,
–কিছু না সামান্য কাজ আরকি আমি এখন আসি আল্লাহ হাফেজ।
কথাটা বলে আমি গাড়িতে উঠলাম।
–মামা চলো।
–জি ম্যাম।
গাড়ির কাচের ওপাশে ছেলেটাকে বেশ সুন্দর করেই দেখা যাচ্ছে।
পকেটে হাত দিয়ে আমার গাড়ির দিকেই তাকিয়ে আছে।
আমি আর বেশি সময় তাকে না দেখে সোজা হয়ে বসলাম।
বর্তমান,
ছোঁয়া সব কিছু ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে চলে গেছে,
এদিকে রোদ তার সমস্ত রাগ একটা বালিশের উপর খাটাচ্ছ বালিস টাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে ।
তাও যেন রাগ কমছে না।
–কি করে পারলে ছোঁয়া আমার জায়গা টা অন্য কাউকে দিতে কি করে পারলে এটা তুমি কেন করলে ছোঁয়া আমার কথাটাকি একটা বারের জন্য ও মনে হয় নি ।
রোদ খুবই ক্লান্ত আজ।
জীবনের সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করছে সে।
দাদা জানের পরে যাকে জীবন দিয়ে ভালোবাসলো সেই ধোঁকা দিলো।
এ ক্লান্তি কোন পানিতে মিটবে না এ ক্লান্তি কোন কিছুতেই মিটবে না এটা চিরস্থায়ী ক্লান্তি।
দু চোখ বুঝে শুধু ছোঁয়া কেই ফিল করে রোদ।
ওর জীবনের মূল্যবান মানুষ গুলো কেন এমন করে ধোঁকা দেয় তা রোদের জানা নেই।
কিন্তু হৃদয়ের যে কষ্ট তা তো ভুলবার মতো নয়।
,
,
,
,
বিকাল গড়িয়ে রাত হলো।
দুই রুমে দু’জন আলাদা হয়ে আগের মতোই শুয়ে আছে,
কিন্তু তফাত একটা ছোঁয়া কাঁদে বর্ষন এর জন্য আর রোদ কাঁদে ছোঁয়ার জন্য।
কি অদ্ভুত ব্যাপার তাই না।
,
,
রোদ উঠে ছোঁয়ার রুমে আসে ছোঁয়াকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে,
কি মিষ্টি একটা বাচ্চার মতো ঘুমিয়ে আছে সে।
এতো মায়াবী মুখটা দেখে কেউ কি আন্দাজ করতে পারবে এই মেয়েটা এতোটা কষ্ট দিয়েছে রোদ কে।
রোদ ছোঁয়ার পাশে গিয়ে বসে।
চুপচাপ তার ছোঁয়া কে দেখতে থাকে মন ভরে।
কিছু সময় পর ছোঁয়া নড়াচড়া করে ওঠে।
সেটা দেখে রোদ ছোঁয়ার থেকে সরে আসে।
★★★
চোখ খুলতে সামনে রোদকে দেখে ভয় পেয়ে যাই।
কারন সকালের কথা মনে পড়ে,
গলায় এখনো প্রচন্ড ব্যাথা এখনো।
–ছোঁয়া খেতে এসো।
–জি।
কথা না শুনলে না জানি কি করে ওনার সব কথা শুনে চলতে হবে তাই মনে হচ্ছে।
কিছুই করার নেই,
বর্ষনকে বাঁচাতে হলে আমাকে ওনার সব কথা শুনতে হবে,
চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে