#জল্লাদ বয়ফ্রেন্ড❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ (রোজ)
#পর্ব- ১২
আমি শুভ্রর কাঁধে হাত রাখতেই। শুভ্র আমার দিকে ফিরলো। চোখে পানি ঠিকই বাট মুখে হাসি। আমি কিছু বুঝতে না পেরে বললাম।”
—-” শুভ্র কি হয়েছে?”
শুভ্র কাঁপা, কাঁপা গলায় বললো,
—-” রোজ ও আআআমমার ভভভাই!”
আমি হা করে তাকিয়ে আছি। বুঝতে পারছি শুভও আমার মতো অবাক হয়েছে। আমি শুভ্রর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম,
—-” তোমার ভাই তো মরে গিয়েছ তাই না?”
শুভ্র চট করে রেগে গিয়ে বললো।”
—-” না, না, না আমার ভাই মরেনি। সেদিন আমরা কেউই ওর লাশ দেখিনি। এই শুভই আমার ছোট ভাই। আর ওর নাম শুভ্র না ওর নাম নিরব,
শুভ চোখ ছোট, ছোট করে বললো!”
—-” এসব কি বলছো তুমি?”
শুভ্র শুভকে বসা থেকে উঠিয়ে। নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” ঠিকই বলেছি তুই আমার ভাই। আমার নিজের আপন ভাই তুই। তুই থাক আমি আম্মুকে ডেকে আনছি।”
বলেই শুভ্র বেরিয়ে গেলো। শুভ্র বেরিয়ে যেতেই শুভর বাবা, মা এসেই বললো,
—-” শুভ তুমি এখনি চলো!”
শুভ বেডে বসতে বসতে বললো,
—-” হোয়াই? এখনো তো ডক্টর বলেনি বাসায় যেতে।”
ওনারা শুভর কাছে এগিয়ে বললো,
—-” ডক্টরের বলতে হবে না তুমি চলো!”
আমি একটা জিনিষ কিছুতেই বুঝতে পারছি না। ওনারা এত তাড়াহুড়ো করছে কেন? তাহলে কি সত্যি শুভ নিরব ভাইয়া?” এরমাঝে শুভর মা শুভর হাত ধরে বললো,
—-” তুমি এখনো বসে আছো কেন? চলো এক্ষুণি চলো।”
আমি কিছু বলবো তারআগে শুভ বললো,
—-” ওফ মম তুমি এমন করছো কেন?”
এরমাঝে কেবিনে শুভ্র এলো। শুভ্রর সাথে মামনি আর ভাইয়াও আছে। মামনি এসেই শুভর ডান হাত দেখলো। মামনিও শুভ্রর মতো কেঁদে দিয়ে বললো!”
—-” নিরব আমার নিরব,
শুভর মা এগিয়ে এসে বললো।”
—-” কে নিরব? কি সব বলছেন? ও আমার ছেলে শুভ,
মামনি চট করে বললো!”
—-” না ও আমার ছেলে নিরব। সেটা ওর হাতের এই দাগই বলে দিচ্ছে। নিরবের বয়স যখন ১বছর। তখন শুভ্রর বয়স ৪বছর। আর এই দাগটা তখনকার। নিরবকে কোলে নিয়ে শিরি দিয়ে নামতে গিয়ে। শুভ্র নিরবকে ফেলে দিয়েছিলো। শুভ্র হওয়ার ৩বছর পরই নিরব হয়েছিলো। কিন্তুু এক অগ্নি দূর্ঘটনা। নিরবকে আমাদের থেকে কেড়ে নেয়। ওই দূর্ঘটনায় সবাই মারা গিয়েছিলো। এটাই জানিয়েছিলো পুলিশ। তাই এই ২০টা বছর আমরা ভেবেছি। আমাদের ছোট ছেলে নিরব মৃত। আপনারা প্লিজ বলুন ওকে কোথায় পেয়েছেন?” মিথ্যে বলবেন না দয়া করে। নিরব মৃত জেনে শুভ্র শকড পায়। এতটাই শকড পেয়েছিলো ৫বছর বয়সে। যে ওর ব্রেইনে প্রবলেম হয়ে গিয়েছে,
শুভ্র সাথে সাথে চমকে বললো।”
—-” আম্মু এসব কি বলছো তুমি? আমার ব্রেইনে প্রবলেম?”
আমি শুভ্রকে বললাম,
—-” শুভ্র এখন এসব কথা থাক না। আগে আমাদের জানতে হবে। যে ওনারা নিরব ভাইয়াকে কোথায় পেয়েছে?”
এবার ওই মহিলা কেঁদে দিয়ে বললো!”
—-” হ্যা ওকে আমরা কুড়িয়ে পেয়েছিলাম,
এটা শুনে নিরব ভাইয়া ছলছল চোখে বললো।”
—-” মম এসব কি বলছো তুমি?”
উনি কাঁদতে, কাঁদতে বললো,
—-” সেদিন যেই মলে আগুন লেগেছিলো। পুরোটায় আগুন লাগলেও মলের পিছন দিকে। তখনো পুরোপুরি আগুন লাগেনি। আমরাও সেদিন ওই মলে গিয়েছিলাম। মলে গেলে পিছন দিক দিয়ে যেতে হতো আমাদের। তাই আমরা পিছন দিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। এরমাঝে এত আগুন দেখে ফিরে আসতে চাই। আর তখনি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাই। আমরা চারপাশে খুজতে থাকি। হঠাৎ চোখে পড়ে শুভ দাড়িয়ে কাঁদছে। সম্ভবত আগুন লাগার আগেই। ও কোনভাবে বেরিয়ে এসেছিলো। তবে হ্যা ওর মাথায় চোট ছিলো। আর ও ছিলো ভাঙা জানালার কাছে। যেটা একদম নিচু জানালা। এটাও হতে পারে ও পড়ে গিয়েছিলো। ওই অবস্থায় আমরা ওকে হসপিটালে নিয়ে যাই। এরপর জানতে পারি পুলিশ জানিয়েছে। মলের সবাই নাকি সেদিন মারা গিয়েছে। মলটা খুবই ছোট ছিলো তবুও কষ্ট হচ্ছিলো। আমরা ভাবি ওর বাবা, মা ও তাহলে মারা গিয়েছে। আমাদের কোন ছেলে, মেয়ে ছিলো না। তাই আমরা শুভকে বাড়ি নিয়ে যাই। আস্তে, আস্তে ও আমাদের মা, বাবা ভাবে!”
নিরব ভাইয়া অবাক হয়ে বলে,
—-” তোমরা আমার আসল বাবা, মা না?”
উনি চোখ মুছে বলে।”
—-” তোকে হয়তো পেটে ধরিনি। কিন্তুু তুই আমার ছেলে শুভ,
মামনি নিরব ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে। নিরব ভাইয়াও মামনিকে জড়িয়ে ধরে বলে!”
—-“আম্মু,
শুভ্র এসে নিরব ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে।”
—-” এরজন্যই তোকে দেখলে মনে হতো। তুই আমার অনেকদিনের চেনা,
নিরব ভাইয়াও বলে ওঠে!”
—-” আমারও মনে হতো ভাইয়া,
নিরব ভাইয়ার পালিত বাবা, মা যেতে গেলে। নিরব ভাইয়া ওনাদের সামনে গিয়ে বলে।”
—-” তোমরা কোথায় যাচ্ছো? শোনো মম, শোনো ড্যাড। ওরা যেমন আমার পরিবার। তোমরাও আমার পরিবার ছিলে, আছো, থাকবে। সেদিন তোমরা আমাকে না বাঁচালে। তোমাদের সাথে না নিয়ে গেলে। এই নিরবের কোনো অস্তিত্ব থাকতো না। আমি যেমন আম্মুর ছেলে নিরব। তেমন তোমাদের ছেলে শুভ,
মামনিও এগিয়ে গিয়ে বলে!”
—-” নিরব একদম ঠিক বলেছে,
শুভ্র নিরব ভাইয়ার থেকে হেডফোন নিয়ে বলে।”
—-” আজতো ডক্টর তোকে রিলিজ দেবে। চল আমরা বাড়ি যাই বাবাই তোকে দেখলে অনেক খুশি হবে,
নিরব ভাইয়া অস্ফুট আওয়াজে বলে!”
—-” বাবাই আমার বাবাই,
শুভ্র ভাইয়া মুচকি হেসে বলে।”
—-” হ্যা রে ভাই তোরও বাবাই,
এরপর আমরা বাড়ি চলে আসি। নিরব ভাইয়া ওনাদের আসতে বলেছিলো। ওনারা বলেছেন পরে আসবেন। নিরব ভাইয়া ঘুরে, ঘুরে বাড়ি দেখছে। বাবা নিরব ভাইয়াকে দেখে বলে!”
—-” ও কে?”
শুভ্র ভাইয়া হেসে বলে,
—-” বলো তো কে হতে পারে?”
বাবা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিরব ভাইয়া হুট করে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে।”
—-” বাবাই আমি নিরব, আমি মরিনি বেঁচে আছি,
বাবার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। বাবা নিজের ছেলেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। আমরা সবাই এই দৃশ্য দেখছি। যাকে মৃত জেনে এতটা বছর কষ্ট পেয়েছে। আজ সেই ছেলে বাবার বুকে। এর চেয়ে সুখ আর কি হতে পারে? চৌধুরী বাড়ি আজ পরিপূর্ণ। কতক্ষণ পর নিরব ভাইয়া বলে ওঠে!”
—-” এই ভাইয়া এটা কে?”
আমি হা করে তাকিয়ে আছি। শুভ্র একহাতে আমাকে ধরে বলে,
—-” এটা তোর বড় ভাবী। আবার সাথে ছোট বোনও হয়।”
নিরব ভাইয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে,
—-” মানে?”
মামনি মুচকি হেসে বলে!”
—-” মানে ও হচ্ছে রোজ। তোর ছোট খালামনির মেয়ে। শুভ্র তাকে মামনি বলে। তুইও মামনিই বলিস। আর রোজ শুভ্রর বউ। রোজ কিন্তুু তোর ৩বছরের ছোট,
নিরব ভাইয়া দাত কেলিয়ে বলে।”
—-” ও তাহলে ভাবী বলবে কে?”
আমি এবার ভেংচি কেটে বললাম,
—-” তাহলে তোমাকেই বা ভাইয়া কে বলবে?”
নিরব ভাইয়াও মেয়েদের মতো মুখ বাঁকিয়ে বললো!”
—-” তোকে কি আমি বলেছি? যে রোজ আমাকে ভাইয়া বল,
আমি রেগে বললাম।”
—-” তোমাকে কি বলেছি? যে নিরব আমাকে ভাবী বলো,
শুভ্র মামনির কাছে গিয়ে বললো!”
—-” নাও আম্মু রোজের মতো আরেকজন চলে এসেছে,
এদিকে আমার আর নিরবের তুমুলঝগড়া চলছে। মামনি এসে আমাদের থামালো। ভাইয়ার সাথেও নিরব ফান করলো। এরপর শুভ্র আর ভাইয়া নিরবকে উপরে নিয়ে গেলো। মামনি সবাইকে ফোন করে জানাচ্ছে। যে ওনাদের ছোট ছেলে বেঁচে আছে। আর আজই তাকে পেয়ে বাড়ি নিয়ে এসেছে। মামনির মুখ খুশিতে চকচক করছে। আমিও রুমে চলে এলাম রেস্ট নিতে। রুমে এসে ডাইরেক্ট শুয়ে পড়লাম। শুতেই ঘুমপরী আমাকে টেনে নিলো তার কোলে। জানিনা কতক্ষণ এভাবে ঘুমিয়েছি। পরে শুভ্র আমাকে ডেকে ওঠালো। ঘুম থেকে উঠে আলসেমি ঝেড়ে বললাম।”
—-” আমাকে ওঠালে কেন?”
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” কয়টা বাজে দেখেছো?”
ক্লান্তি মনে বললাম!”
—-” কয়টা বাজে হু?”
শুভ্র আমার মাথা ধরে। আস্তে করে ঘড়ির দিকে ফেরালো। ঘড়ির দিকে ফেরাতেই আমি অবাক হয়ে বললাম,
—-” এতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি? তুমি আমাকে আগে ডাকোনি কেন?”
শুভ্র মুখ বাঁকিয়ে বললো।”
—-” এখন আমার দোষ সব তাই না?”
আমি ভেংচি কেটে ফ্রেশ হতে চলে এলাম। এরপর আমি আর শুভ্র নিচে নেমে এলাম। ভাইয়া আর নিরব আড্ডা দিচ্ছে। নিরব হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে। আমি সোফায় বসতে বসতে বললাম,
—-” এত কি কথা হচ্ছে হুম?”
ভাইয়া আর নিরব একসাথে বললো!”
—-” তোকে কেন বলবো?”
আমি গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম। মামনি এসে কাছে বসে বললো,
—-” এই একদম রোজকে রাগাবী না। ভুলে যাবিনা রোজ কিন্তুু একা না।”
নিরব ভ্রু নাচিয়ে বললো,
—-” একা না মানে?”
মামনি মুচকি হেসে বললো!”
—-” ও তোকে তো বলাই হয়নি। আমাদের শুভ্র বাবা হচ্ছে, আর তুই চাচ্চু,
নিরব লাফ দিয়ে বলে উঠলো।”
—-” ওহ মাই গড রিয়েলি?”
শুভ্র নিরবের পাশে বসে বললো,
—-” একদম সত্যি!”
নিরব শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” কংগ্রাচুলেশেন্স ভাইয়া।”
এভাবেই কয়েকদিন কেটে গিয়েছে। আমি আর নিরব বেস্ট ফ্রেন্ডের মতো হয়ে গিয়েছি। কে কাকে কিভাবে পচাতে পারে। সেই ধান্ধা খুজতে থাকি আমরা। আমার প্রেগন্যান্সিও ৪মাস গিয়ে ৫মাসে পড়ছে। ড্রয়িংরুমে বসে আমি কার্টুন দেখছিলাম। এরমাঝে কোথা থেকে নিরব এসে। টুস করে রিমোট নিয়ে চ্যানেল পাল্টে দিলো। আমি নাক ফুলিয়ে বললাম,
—-” চ্যানেল পাল্টালে কেন?”
নিরব ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো!”
—-” ২দিন পর বাচ্চার মা হবি। আর এখনো নিজের বাচ্চামি যায়নি?”
আমি রেগে ফোস ফোস করে বললাম,
—-” কার্টুনে দাও কিন্তুু।”
নিরব মুখটা বাঁকিয়ে বললো,
—-” এত দেখতে মন চাইলে রুমে যা!”
ওর চুল ধরে টেনে বললাম,
—-” তুমি যাও।”
নিরব চুল ছাড়িয়ে বললো,
—-” বেদ্দপ বড় ভাইয়ার চুল টানিস?”
আমিও কপি করে বললাম!”
—-” বেদ্দপ বড় ভাবীর সাথে ঝগড়া করিস?”
নিরব হা করে থেকে বললো,
—-” কি তুই আমাকে তুই করে বলছিস?”
আমি রিমোট টেনে নিয়ে বললাম।”
—-” উগান্ডার প্রেসিডেন্ট আর রিমোট নিবি না। তাহলে তোকে মাথা থেকে তুলে আছাড় দেবো,
নিরব ভেংচি কেটে বললো!”
—-” তোকে কি আমি ছেড়ে দেবো? তোর চুল টেনে বেল করে দেবো। ঘুষি দিয়ে নাক ফাটিয়ে দেবো। দাত সব তুলে ফোকলা করে দেবো হু,
বলে সোফা থেকে উঠে দাড়ালো। এদিকে আমি হা হয়ে আছি। এতো মেয়েদের মতো ঝগড়া করে। এত বড় ইনসাল্ট? তাও আমাকে করলো? নিরব হাটা দিতেই আমি ল্যাং দিলাম। ওমনি ধপাস করে নিচে পড়ে গেলো। এতক্ষণে আমার চোখ গেলো। দুরে দাড়িয়ে থাকা মামনি আর শুভ্রর দিকে। ওদের দেখে বেক্কল মার্কা হাসি দিলাম।”
#চলবে…