#জল্লাদ বয়ফ্রেন্ড❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ (রোজ)
#পর্ব- ৬
শুভ্রর কোন সারা শব্দ না পেয়ে। এবার আমার হাত, পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। রাস্তায় ইতিমধ্যে মানুষ জড়ো হয়ে গিয়েছে। শুভ্রর মাথাটা কোলে নিয়ে বললাম।”
—-” শুভ্র প্লিজ চোখ খোলো। প্লিজ আমার সাথে কথা বলো। আমি আর কোনদিন তোমাকে ছেড়ে যাবো না। আমিতো সামিরের কথা রেগে বলেছি। তুমি যা বলবে আমি সব শুনবো। আমাকে মারলেও আমি রাগ করবো না। আমিও তোমাকে ভালবাসি শুভ্র। প্লিজ চোখ খোলো শুভ্র,
রাস্তার লোকজন বলাবলি করছে। ছেলেটা মনে হয় বাঁচবে না। শুভ্রকে নিয়ে ইমিডিয়েটলি হসপিটালে যেতে হবে। সবাইকে ধমক দিয়ে বলে উঠলাম!”
—-” চুপ করুন আপনারা প্লিজ। দেখছেন একটা ছেলে এভাবে পড়ে আছে। আপনাদের উচিত ওকে হসপিটালে নিতে আমাকে হেল্প করা। কিন্তুু আপনারা সেটা না করে ও বাঁচবে কি না সেটা বলছেন?”
এরমাঝে একটা ছেলে এসে বললে,
—-” আপনি ওনাকে আমার গাড়িতে নিয়ে আসুন।”
তাকিয়ে দেখলাম একটা ছেলে। বয়স খুব বেশী না ২১ বা ২২হবে। তাড়াতাড়ি শুভ্রকে ধরে ওর গাড়িতে ওঠালো। আমি মামনিকে আর সবাইকে ফোন করে বলে দিয়েছি। কিন্তুু বুঝতে পারছি না কিভাবে সবাইকে বলবো? যে শুভ্রর এক্সিডেন্ট আমার জন্য হয়েছে। ভাবনার মাঝেই হসপিটালে এসে পৌছালাম। ছেলেটা গিয়ে ডক্টর, ওয়ার্ডবয়কে ডেকে আনলো। ওরা শুভ্রকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো। আমি পিছনে যেতে নিলেই ছেলেটা বললো,
—-” চিন্তা না করে দোয়া করুন। ওনার যেন কিছু না হয়!”
আমি থেমে গিয়ে বললাম,
—-” আপনি ভেতরে যাবেন না?”
ছেলেটা মুখটা ছোট করে বললো।”
—-” সরি আমি যেতে পারবো না। একচুয়েলি আজকেই লন্ডন থেকে ফিরেছি। বাসায় পৌছানোর কথা ১১টায়। আর এখন সেখানে ১টা বেজে গিয়েছে। বাসার সবাই আমাকে নিয়ে খুব প্রসেসিভ। আর একটু লেট হলেই টেনশন করবে। ফোনে চার্যও নেই যে জানিয়ে দেবো আসি হ্যা?”
ছেলেটাকে থ্যাংকস জানিয়ে চলে এলাম। কিছুক্ষণ পরই সবাই চলে এলো মামনি এসেই বললো,
—-” রোজ এসব কি করে হলো?”
ভয়ে আমি কোন কথা বলছি না। শুধু কান্না করে যাচ্ছি। আর আল্লাহকে ডাকছি শুভ্রর যেন কিছু না হয়। মামনি কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। ভাইয়া আমাকে টেনে একটু দুরে এনে বললো!”
—-” রোজ এসব কিভাবে হলো?”
ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। ভাইয়াও আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” আমাকে এটলিস্ট বল রোজ।”
ভাইয়াকে এক এক করে সব বললাম। আমার কথা শুনে ভাইয়া হতাশ হয়ে বললো,
—-” তুই এটা কি করলি রোজ? শুভ্রকে এভাবে হার্ট করলি? শুভ্র তোকে অনেক ভালবাসে। সেটাও অনেক আগে থেকে রোজ!”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
—-” তুমি এসব জানো ভাইয়া?”
ভাইয়া জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বললো।”
—-” হ্যা আমি সব জানি,
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম!”
—-” তাহলে আমাকে কেন জানাওনি?”
ভাইয়া কিছু বলবে তারআগে ডক্টর এলো। ডক্টরকে বের হতে দেখে আমি চলে এলাম। তবে ডক্টর মুখটা কালো করে রেখেছে। যেটা দেখে আমার শরীর কাঁপছে। আমার শুভ্র ঠিক আছে তো? ডক্টরকে চুপ থাকতে দেখে বললাম,
—-” ডক্টর আপনি চুপ করে আছেন কেন? শুশুভ্র ঠিক আছে তো? ওর কিছু হয়নি তো? আমরা দেখা করতে পারি ওর সাথে? প্লিজ চুপ না থেকে বলুন।”
ডক্টর একটু চুপ থেকে বললো,
—-” দেখুন অপারেশন আমরা করেছি। ২৪ঘন্টা গেলে ওনার সেন্স আসবে!”
ডক্টরের কথায় সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। কিন্তুু একটুপরই ডক্টর আবার বললো,
—-” তবে একটা প্রবলেম আছে।”
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
—-” কি প্রবলেম ডক্টর?”
ডক্টর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো!”
—-” ওনার ব্রেইনে আগে থেকেই প্রবলেম ছিলো। আর এটা আপনারা সবাই মেবি জানেন। যেটাকে ব্রেইন ডিসঅর্ডার বলা হয়ে থাকে। আর আজকের এক্সিডেন্ট ওনার ব্রেইনে এফেক্ট ফেলেছে। যার কারনে আজ হোক বা কাল। ইনফ্যাক্ট যে কোন সময় ওনার মেমোরি লস হয়ে যেতে পারে,
ডক্টরের কথায় মামনি ধপ করে বসে পড়লো। সবার মাঝে পিনপনতা বিরাজ করছে। আর আমি দু পা পিছিয়ে গেলাম তখনি ডক্টর বললো।”
—-” রিল্যাক্স যদি ভাগ্য ভাল হয়। তবে ওনার মেমোরি লস নাও হতে পারে। এখন সবটা ভাগ্যর ব্যাপার। উনি এখন এরকম একটা জায়গায় দাড়ানো। প্রতিটা মোমেন্টে ভাগ্য কি চায় মনে রাখতে হবে। ভাগ্য সহায় থাকলে মেমোরি লস হবে না। আর যদি ভাগ্য ওনার সাথে খেলে। তবে ওনার মেমোরি লস যখন, তখন হবে। সেটা হোক আজ, কাল বা কয়েক বছর পর। আর মেমোরি লস হলেই বোঝা যাবে। উনি আসলে কি, কি ভুলে গিয়েছে। অনেক কিছু মনে থাকবে। আবার অনেক কিছুই ভুলে যাবে। এখন আপনারা আল্লাহকে ডাকুন, যেন ভাগ্য সহায় থাকে। আর একটা কথা ওনার পিঠে আঘাতের দাগ। মেবি বেল্ট বা অন্যকিছুর আঘাত। আমি মেডিসিন দিয়ে দেবো ঠিক হয়ে যাবে,
বলে ডক্টর চলে গেলো। মামনি এতক্ষণে সেন্সলেসও হয়ে গিয়েছে। আঙ্কেলও নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে। আমার আম্মুও তখন থেকে কাঁদছে। বাসায় দিদা আছে দিদা যদি এসব জানে। এই সবকিছুর জন্য একমাএ আমি দায়ী। হঠাৎ ভাবলাম ভাগ্য যদি সহায় থাকে বললো ডক্টর। আল্লাহ হয়তো আমাদের উপর রহম করতে পারে তাই বললাম!”
—-” শুভ্রকে প্লিজ এই ব্যাপারে কেউ কিছু বলো না। ডক্টরতো বললো ভাগ্য সহায় থাকলে। শুভ্র ভাইয়ের কিছু হবে না তাই জানিয়ো না। ভাগ্য হয়তো সহায় থাকতেও পারে,
আমার কথায় সবাই হ্যা বললো। পরেরদিন সকালে শুভ্রর সেন্স এলো। শুভ্র চোখ না খুলেই আস্তে বললো।”
—-” রেড রোজ,
আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। সবাই আমার দিকে তাকানো। আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি। শুভ্র আস্তে আস্তে চোখ খুলতেই মামনি বললো!”
—-” শুভ্র এখন কেমন লাগছে?”
শুভ্র সবার সাথেই কথা বললো। আমি শুভ্রর কাছে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। এরপর একে একে সবাই বেরিয়ে গেলো। আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে শুভ্র বললো,
—-” এখান থেকে বেরিয়ে যা রোজ। তোকে আমি মুক্তি দিয়ে দিয়েছি, তুই মুক্ত। এখন থেকে তুই যা ইচ্ছে তাই করতে পারবি। আমার সামনে থেকে চলে যা প্লিজ। আজ থেকে আমাদের রিলেশন জাস্ট কাজিন।”
আমি দাড়িয়ে কান্না করতে লাগলাম। শুভ্র চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
—-” জাস্ট গেট আউট!”
আমি দৌড়ে বেরিয়ে এলাম। এটাতো হওয়ারই ছিলো আমি যা করেছি। তারপর শুভ্র কেন আমার সাথে রিলেশন রাখবে? আর আমি নিজেই তো সব শেষ করেছি। তবে এটা ভেবে শান্তি পাচ্ছি যে শুভ্রর সব মনে আছে। আবার ডক্টরতো বললো যে কোন সময়। না না কোন বাজে থিংক মনে আনবো না। কিছু হবে না আমার শুভ্রর কিছু না,
৪দিন পর শুভ্রকে বাড়ি নিয়ে গেলো। ইদানিং কিছুই ভাল লাগে না শুভ্রকে ছাড়া। আগের দিনগুলো খুব মিস করি। দেখতে দেখতে ১মাস কেটে গিয়েছে। এই ১মাস শুভ্র আমার সাথে কথা বলেনি। আমি মাঝে মাঝেই গিয়েছি ওকে দেখতে। আজকে মামনি বলায় আবার এসেছি। শুভ্র সোফায় বসে ফোন চাঁপছে। আগের মতো চেহারায় উজ্জলতা নেই। কেমন চোখ, মুখ ফোলা চোখের নিচেও স্পট। এরমাঝে মামনি এসেই বললো।”
—-” চল রোজ, শুভ্র চল,
আমি কিছু বুঝতে না পেরে বললাম!”
—-” কোথায় যাবো?”
মামনি আমার হাত ধরে বললো,
—-” তোর আর শুভ্রর জন্য ড্রেস কিনবো।”
বলে টেনে এনে গাড়িতে বসালো। শুভ্রর চেহারায় রাগটা স্পষ্ট। হয়তো আসতে চায়নি মামনি জোর করে এনেছে। গাড়ি চলছে আপনমনে কতক্ষণ পর এসে পৌছালাম। মামনি শপিং করেই যাচ্ছে কিন্তুু কেন বুঝতে পারছি না। এরমাঝে শুভ্র একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খেলো। মামনি কেনা কাটা করছে আমি বেরিয়ে এলাম। আরে এটাতো ওইদিনের ছেলেটা তাই বললাম,
—-” আরে আপনি?”
ছেলেটা মুচকি হাসি দিলো শুভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আমি বললাম!”
—-” শুভ্র সেদিন উনিই তোমাকে ওনার গাড়িতে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলো,
আমার কথায় শুভ্র তাকিয়ে বললো।”
—-” থ্যাংক ইউ,
ছেলেটা আবারো মুচকি হেসে বললো!”
—-” এটা আমার রেসপন্সিবিলিটি,
শুভ্র ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটাও তাই আমি হেসে বললাম।”
—-” কোথায় হারিয়ে গেলেন?”
শুভ্র মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
—-” আজ আসি কেমন?”
আমিও বাই দিয়ে হাটা দিতেই ছেলেটা বললো!”
—-” ভাইয়া,
ওমনি শুভ্র দাড়িয়ে গেলো। ছেলেটা দৌড়ে এসে বললো।”
—-” আরে তোমার নাম বলে যাও। দেখো আমি কাউকে আপনি করে বলতে পারিনা। তাই তুমি করেই বললাম আর আমার ভাই নেই। এছাড়াও তুমি আমার বড় হবে তাই ভাইয়া বললাম,
আমি হা করে তাকিয়ে আছি। এই ছেলেটা এত কথা বলে? শুভ্র হাসি দিয়ে বকলো!”
—-” আমার নাম শুভ্র চৌধুরী, তোমার নাম কি?”
ছেলেটাও মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
—-” শুভ খাঁন এখন আসছি। আল্লাহ চাইলে আবার দেখা হবে।”
বলে চলে গেলো শুভ্র শুভর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। মামনি ডাক দিতেই আমরা চলে গেলাম। মামনি শপিং করেছে ইচ্ছেমতো। এখান থেকে মামনিদের বাড়িতেই গেলাম। বাড়িতে এসে আরেকদফা অবাক হলাম। শুভ্রর ফুপি আর চাচ্চুরাও এসেছে। এরমাঝে এখানে রাহি এসে বললো,
—-” এখানে কি হচ্ছে আন্টি?”
আন্টি কিছু বলতে যাবে রাহি আবার বললো!”
—-” আমি আপনাদের একটা কথা জানাতে এসেছি। আপনারা কি জানেন? শুভ্রর এক্সিডেন্ট কার জন্য হয়েছে?”
আমি চমকে উঠলাম রাহি কি জানে? শুভ্র রাহির কাছে গিয়ে বললো,
—-” কার জন্য হয়েছে মানে? আমার এক্সিডেন্ট আমার ভুলে হয়েছে।”
রাহি মুখটা বাঁকিয়ে বললো,
—-” আসলেই ভুল রোজকে ভালবেসে ভুল করে। তোমার এত বড় একটা এক্সিডেন্ট হলো!”
মামনি রাহির সামনে এসে বললো,
—-” মানে? এসব কি বলছো তুমি?”
রাহি একে একে সবটা বললো। আমি আর শুভ্র অবাক ও জানলো কি করে? রাহি সবটা বলতেই মামনি বললো।”
—-” রোজ তুই?”
আমি মাথা নিচু করে আছি শুভ্রর ফুপি বললো,
—-” কি অলক্ষী মেয়ে দেখেছো? আমাদের ছেলেটাকে মারতে বসেছিলো?
এরমাঝে শুভ্রর আরেক ফুপি বললো!”
—-” এ তো অপয়া মেয়ে ভাবী। এরসাথে আপনি শুভ্রর বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন?”
আমি অবাক হয়ে তাকাতেই মামনি বললো,
—-” হ্যা এর জন্যই এত শপিং করেছি। ভেবেছিলাম তোকে আর শুভ্রকে এখন বলবো। কিন্তুু তুই এটা কি করে করলি রোজ?”
শুভ্রর ফুপি আবার বললো।”
—-” এই মেয়ে এখনো দাড়িয়ে আছিস কেন? এক্ষুণি এখান থেকে বেরিয়ে যা। তোর মতো অলক্ষীর ছায়াও শুভ্রকে মারাতে দেবো না,
আমি নিরবে চোখের পানি ফেলছি হঠাৎ শুভ্র চেঁচিয়ে বলে উঠলো!”
—-” স্টপ ইট আই সেইড স্টপ ইট। হাউ ডেয়ার ইউ ফুপি? সাহস কি করে হলো রোজকে এসব বলার?”
শুভ্র আমার হাত ধরে বললো,
—-” এই মেয়েটাকে দেখছো রোজ। এই মেয়েটা আমার প্রান ভোমরা। আর তোমরা ওকে অলক্ষী বলছো? আমার সামনে বসে আমারি বাড়িতে বসে। আমার গার্লফ্রেন্ড ওপস সরি আমার হবু বউকে অপয়া বলছো? এত বড় সাহস কে দিয়েছে তোমাদের? আর আমাকে রোজের ছায়া মারাতে দেয়ার তোমরা কে? কসম আল্লাহর তোমাদের জায়গায় অন্য কেউ থাকলে।আর রোজকে এসব বলার সাহস করলে। তার জিহ্বাটা আমি টেনে ছিড়ে ফেলতাম। এসেছো মেহমান হয়ে সেভাবে থাকো। বিয়েতে মজা করো খাও, দাও এরপর চলে যাও।”
শুভ্রর কথা শুনে চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি পড়লো। তবে সেটা আনন্দের আমি হারাইনি। ইয়েস আমি হারিয়ে ফেলিনি আমার শুভকে। আমি জানতাম শুভ্র এখনো আমাকে ভালবাসে। আমার জল্লাদ বয়ফ্রেন্ড আমার স্বামী হবে। শুভ্র চিরদিনের জন্য আমার হবে। আমি আর কোনদিন শুভ্রকে কষ্ট দেবো না। এটা নিজের কাছে নিজেই প্রমিস করলাম। যত যাই হয়ে যাক না কেন শুভ্রকে কষ্ট দেবো না,
#চলবে…