#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৩৯
আকাশটা বড্ড মেঘলা! গুটিগুটি বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে পিচঢালা রাস্তা, মানুষজন দৌঁড়ে এদিক ওদিক যাচ্ছে আশ্রয়ের খোঁজে। শীতকালে বৃষ্টি হওয়া অমাবস্যায় চাঁদ দেখা, কেউ হয়তো কল্পনাও করেনি অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির! সেই গুটিগুটি বৃষ্টির ফোঁটা ভিজিয়ে দিচ্ছে চন্দ্রিকার, চুল, দেহ এমনকি মনও।আকাশে থাকা কালো মেঘ বৃষ্টিরুপে জমিন ছুলেও ওর মন খারাপের কালো মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে নামছে না। হয়তো কোন ভারী বর্ষনের অপেক্ষায়!
এই মুহুর্তে নিজেকে নিঃস্ব ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে, এতিমদের জন্য তো আশ্রয় হিসেবে এতিমখানা রয়েছে কিন্তু ওর জন্য তাও নেই। নিজের হাতের ফোনটাও শাহেদের গাড়িতে ফেলে এসেছে তাড়াহুড়ায় তাই কাউকে কন্টাক্ট করতে পাচ্ছেনা। যদিও কন্টাক্ট করার কেউ নেইও শাহেদ ছাড়া! ও আনমনে হাঁটছে, একদম গন্তব্যহীন ভাবে। এই চলার না আছে শুরু না আছে শেষ তবুও ও চলছে অজানা পথে! চন্দ্রিকা আনমনে হাটলেও বেশ কিছুক্ষণ ধরে হর্নের তীব্র আওয়াজ ওর কানে আসছে তাই ভাবলেশহীন ভাবে সেদিকে তাকালো আর একটা কালো কালার গাড়ি দেখতে যা কিছুটা পরিচিত মনে হলো কিন্তু পাত্তা না দিয়ে আবার হাটা শুরু করলো!
কিছুক্ষণ বাদে খেয়াল করলো গাড়িটা ওর সাথে স্লোলি চলছে আর অনবরত হর্ন দিয়ে যাচ্ছে। ও থেমে গেলো আর সেদিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো, গাড়ির সামনের কাঁচ নামাতেই একজন সুদর্শন ছেলেকে সানগ্লাস পরে বসে থাকতে দেখলো সিটে, তার দৃষ্টি সামনের দিকে যেনো ওর দিকে তাকালেই পান খসে চুন পড়ে যাবে।এটা দেখে ওর প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হলো কিন্তু ঝগড়া করার মুডে ও নেই তাই আবারও হাঁটা ধরলো। এতে যেনো হর্নের আওয়াজ আরো বেড়ে গেলো, চন্দ্রিকা বিরক্তি নিয়ে পেসেঞ্জার সিটে গিয়ে বসলো। কারণ এই ছেলেকে হারে হারে চিনে যা একবার করতে চাইবে তা করেই ছাড়বে তাই ঝামেলা করে বিশেষ লাভ নেই। চন্দ্রিকার এসব ভাবনার মাঝেই সে ওর দিকে ঝুকে গেলো আর সিটবেল্ট বেধে দিলো। চন্দ্রিকা নিজের অবস্থান থেকে একটুও নড়লো না যেনো এমনকিছু হবে আগে থেকেই জানতো! চন্দ্রিকাকে স্বাভাবিকভাবে বসে থাকতে দেখে সে বাঁকা হাসলো তারপর বললো
“এখন আর আমাকে ভয় পাওনা দেখছি!”
“তোমাকে আমার ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই শাহেদ,মানুষ ভয় তখনি পায় যখন তার হারানোর কিছু থাকে!আমার হারানোর কিছুই অবশিষ্ট নেই তাই আমার ভয় পাওয়ারও কোন কারণ নেই, না তোমাকে না অন্যকাউকে”
“বাহ বেশ কথা বলা শিখেছো দেখছি!আমি তো জানতাম তোমাকে যা শিখিয়ে দেয়া হয় তাই শুধু বলতে পারো তুমি, নিজের থেকে তো তোমার বলার মতো কিছু থাকেই না”
“মানুষের একটা বটম লাইন আছে সেটা জানেন?যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন আর পেছনে যাওয়ার সুযোগ থাকে না বরং সামনের দিকেই এগুতে হয়। আমারও সামনে অগ্রসর হওয়া ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই!”
“কেনো?তোমার সায়ান তোমাকে নিজের কাছে রাখেনি?ছুড়ে ফেলে দিয়েছে?অথচ তোমার মতো মেয়েকে এর থেকে বেশি আর কি করা যায়?সায়ানের লাইফে যে তুমি ফার্স্ট প্রায়োরিটি নও সেটা তো বুঝেই গেছো তবে আমি তোমার জীবনের সেকেন্ড অপশন হয়েই রইলাম! যেমন তোমার কললিস্টের মতো, সবার আগে কলটা সায়ানের কাছেই দিয়েছিলে তুমি!”
চন্দ্রিকা জবাব দিলো না হয়তো বলার মতো কিছু নেই তা শাহেদ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো তারপর বললো
“আর আমাকে দেখো! এতোকিছুর পরও তোমাকে একা ফেলে যেতে পারিনি, তিনবার গাড়ি স্টার্ট দিয়েও যাইনি। বরং এভেবে বসে ছিলাম যে যদি সায়ান তোমাকে কোন ব্যাবস্থা না করে দেয় তাহলে তুনি কোথায় যাবে?হোয়াট ফুল আই এম!”
বলেই স্টেয়ারিংয়ে বারি দিলো, কিন্তু চন্দ্রিকার কোন ভাবান্তর হলো না। ও সেদিকে তাকিয়েই রইলো। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর বললো
“প্রয়োজন আর প্রিয়জন পার্থক্য বুঝ? তুমি কারো প্রয়োজন মানে হচ্ছে লোহার মতো!ব্যাবহার শেষে ফেলে দেয় আর প্রিয়জন হচ্ছে স্বর্ণের মতো। মানুষ সেটাকে তুলে রাখে, রং চলে গেলে আবারও রং করায় বা সেভাবেই যত্ন করে রেখে দেয় কিন্তু কখনো ফেলে দেয়না। আমার আর ওই লোহার মাঝে বিশেষ পার্থক্য নেই, আমি সবার প্রয়োজনই ছিলাম আজীবন কিন্তু কারো প্রিয়জন হতে পারলাম না। হয়তো যোগ্যই না তাই!ভালোবাসা নামক বস্তুটা আমার কপালে নেই।আমার রুশির প্রতি খুব হিংসে হয়! ওতো আমার মতোই অনাথ কিন্তু ওকে কেউ প্রথমে একজন এডপ্ট করে নিয়েছে আর বাবার মতো ভালোবেসেছে। খান বাড়িতে আসার একজন মা পেয়েছে আর এখন সায়ানের মতো স্বামী! কিন্তু আমি কারো ভালোবাসাই পাইনি বরং সবার জীবনের ভ্যাম্প হয়ে আছি। আমার খারাপ দিকটা সবাই দেখেছে কিন্তু আমি কেনো খারাপ সেটা কেউ দেখার প্রয়োজন বোধ করেনি। মাঝেমাঝে মনে সুইসাইড করলেই হয়তো সব মিটে যাবে কিন্তু পারিনা। বাঁচার বড্ড লোভ আমার!সুইসাইড করতেও সাহসের প্রয়োজন হয় সেইটুকু সাহসও নেই আমার মাঝে। আম জাস্ট আ পুশওভার!”
চন্দ্রিকার গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো কিন্তু ও স্থির হয়ে বসে আছে! কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো
“কিন্তু এইসব কিছুতে আমার কোন দুঃখ ছিলো না যদি আমি আমার বেবিকে বাঁচাতে পারতাম কিন্তু এতোকিছু করার পরও আমি কেনো ওকে বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি বলতে পারো?সায়ান বলেছে আমি নারী হিসেবে কি করে রুশিকে একটা ছেলের রুমে পাঠালাম! কিন্তু আমাকেও যে একই ভাবে পাঠানো হয়েছে তার বেলা?আমি কি কাউকে বলতে পেরেছি?রুশি তো জানে যে ওর সন্তানের বাবা সায়ান, সায়ান ওকে বিয়েও করেছে কিন্তু আমি?আমিতো জানিই না ওইদিন ওই বদ্ধঘরে কে ছিলো!সেই শিকলে বেঁধে রাখা অবস্থার কাটানো রাত সম্পর্কে আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করেছে?নাহ করেনি।কারণ আমিতো কারো প্রিয়জন নই প্রয়োজন যাকে প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়াতে অস্তিত্ব বিলিন করে দেয়ার চেষ্টায় আছে সবাই।”
শাহেদ চন্দ্রিকার দিকে তাকালো তারপর বললো
“তুমি নিজ থেকে এবর্শন করাও নি?”
“তোমার কি আমাকে এতোটাই জঘন্য মনে হয় যে মা হিসেবে নিজের সন্তানকে মেরে ফেলবো?এবর্শন করার থাকলে তো প্রথম মাসেই করিয়ে ফেলতাম, দীর্ঘ চারটি মাস লুকিয়ে রাখতাম না সবার থেকে!যাইহোক আমাকে নিজের সাথে নিচ্ছো?আমাকে দিয়ে তোমার কোন কাজে আসবে না, এর চেয়ে ভালো দূরে থাক আমার থেকে”
“আমি কি করবো না করবো তার জ্ঞান তোমার থেকে নিবো না। চুপচাপ বসে থাকো আর একটা কথাও বলবে না। পারলে একটু ঘুমাও ভালোলাগবে”
“এতো কেয়ার করে মনে মিথ্যে আশা জাগাবেন না মি.শাহেদ। ছুড়ে ফেলে দিলে বড্ড কষ্ট পাবো! যদিও কেউ মানুষ ভাবে না আমায়!”
“সবকিছু নিয়ে এতো মাথা ঘামাও কেনো তুমি?চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করো। ওকে…”
চন্দ্রিকা আর কথা বললো না, কথা বলার শক্তি আর নেই ওর। ধীরেধীরে কোনসময় ঘুমিয়ে পড়লো ওর জানা নেই।
______________________
রুশি আর সায়ান বাসায় ফিরে এসেছে,এমনভাবে এসেছে যাতে কেউ বুঝতে না পারে ও হসপিটালে ছিলো।গাড়িতে থাকা সময় ছাড়া বাকি রাস্তা সায়ান রুশিকে কোলে করেই এনেছে। প্রেগন্যান্সির কারণে রুশির ওজন তো কম হয়নি কিন্তু তবুও সায়ান কোলে করেই আনবে। রুশি অনেকবার না করেই বিশেষ ফল পায়নি তাই হাল ছেড়ে দিলো,সোফায় বসার কিছুক্ষণ পরই রুশির বাবা ওকে দেখতে এলো। প্রায় পাঁচমাস পর বাবাকে দেখলো! রুশিতো খুশিতে আটখানা, বাবার সাথে গল্প জুড়ে দিলো আর সায়ান অসহায় দৃষ্টিতে সে দিকে তাকিয়ে আছে। বাবাকে পেয়ে ওর ভুলেই গিয়েছে যে এখানে আরেকজন ব্যাক্তিও আছে যে ওর এটেনশন চাচ্ছে!
সায়ানের মন খারাপ হয়তো রুশির বাবা আন্দাজ করতে পেরেছে কিছুটা,তাই রুশিকে উপরে গিয়ে ফ্রেশ হতে বললো। রুশিও সায়ানের সাহায্যে উপরে গেলো আর ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গেলো। সায়ানও চেঞ্জ করে বসে রইলো, রুশি বেরুতেই ওর কাছে এসে মাথার পানি মুছে দিতে লাগলো তোয়ালে দিয়ে আর রুশি বলে উঠলো
“আরে আরে আমি করতে পারবো দিন না!”
“তোমাকে করতে হবে না, ডাক্তার কি বলেছে মনে নেই?সম্পুর্ণ বেড রেস্টে থাকতে হবে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত আর বেবি হওয়া পর্যন্ত কোন কাজ করা যাবে না। তাই আজ থেকে তোমার সব কাজ আমি করবো আর তুমি রেস্ট করবে!
“আর অফিস কে দেখবে?আপনার ভুত?”
“সবকিছুর জন্য এতো চিন্তা তোমার নিজের জন্যও তো করতে পারো তাইনা?আর অফিস ভুত চালাতে যাবে কেনো? অলরেডি সম্পুর্ণ অফিস আমার বাড়িতে শিফট হয়ে গেছে, এখন থেকে বেবির একবছর হওয়া পর্যন্ত আমি বাড়িতেই থাকবো”
“একবছর! আর ইউ মেড?লোকে কি বলবে আর এতোদিন গ্যাপ দিলে চাকরী থাকবে?”
“আমার চাকরী কে খাবে শুনি? যেখানে আমি সবার চাকরী খাই?আর আমাদের বেবির সাথে বেশি সময় কাটাতে চাই তোমার কোন সমস্যা?”
“নাহ!আমার কোন সমস্যা নেই কিন্তু মি.খান হঠাৎ এতো কেয়ার করার মানে কি?প্রেমে টেমে পড়ে গেলেন নাকি আমার?”
“স্যরি মিসেস খান!আমার বউ আছে তাই অন্যের প্রেমে পড়া বারণ আমার জন্য আর আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বউ!তার কেয়ার করবো নাতো কার কেয়ার করবো?”
“তা মনেপ্রাণে সেই বউটাকি চন্দ্রিকা?”
কথাটা শুনতেই সায়ানের মুখ কালো হয়ে গেলো, রুশির মুখ থেকে এমন কথা এই মুহুর্তে আশা করেনি যদিও বলাটা স্বাভাবিক। রুশি নিজেও বুঝতে পারলো ভুল জায়গার ভুল কথা বলে ফেলেছে কিন্তু সায়ানের মুখ থেকে তো ওর বের করতে হবে যে সে শুধু রুশিকে চায়। কিন্তু সায়ান তেমন কিছুই বললো না বরং তোয়ালে পাশে রেখে বললো
“টেক কেয়ার। আমি খাবার নিয়ে আসছি, খাট থেকে নামবে না”
সায়ান যেতেই রুশি ভেংচি দিলো,বিড়বিড় করে বললো
“হুহ ভাঙবে তবু মচকাবে না। আমিও দেখি কি করে নিজের মনের না বলে থাকতে পারে!আমাকে তো চিনেনা।
সায়ান নিচে এসে খাবার পাঠিয়ে দিলো উপরে আর রুশির বাবার সামনে বসলো। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তারপর বললো
“আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই, জানিনা করা ঠিক হচ্ছে কিনা! তবে আমার জানা খুব জরুরী!রুশি আগুনে ভয় পায় কেনো?ও আগুন দেখলে এতোটা ডেস্পারেট হয়ে যায় কেনো?”
#চলবে
#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_ ৪০
সায়ানের হঠাৎ প্রশ্নে রুশির বাবা হচকিয়ে গেলো তারপর নিজেকে সামলে বললো
“হঠাৎ এই প্রশ্ন? কিছু হয়েছে কি বাবা?”
“না তেমন কিছু হয়নি আব্বু! আসলে রুশির রান্নাঘরে যেতে ভয় পায় তাই কিউরিসিটি থেকে জিজ্ঞেস করলাম ও আগুন দেখলে কেমন যেনো করে। আমি ওকে ভয় জিজ্ঞেস করিনি যদি রিয়াক্ট করে তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করছি!”
“ওহ আচ্ছা, আসলে কিভাবে যে বলি। তুমি হয়তো জানোনা কিন্তু রুশি আমার মেয়ে না। ওর বয়স যখন ছয়বছর তখন আমি ওকে এতিমখানা থেকে নিয়ে আসি!খুব জীর্ণশীর্ণ দেহ ছিলো ওর আর আতংকিত অবস্থায় ছিলো। মানুষ দেখলেও ভয়ে গুটিয়ে যেতো!আমি পরে ওকে সেখান থেকে পালক নিয়ে আসি আর নিজের কাছে রাখি।তবে কর্তৃপক্ষের কাছে শুনেছি আমি যাওয়ার দুমাস পুর্বে সেখানে ভয়াবহ আগুন লেগেছিলো আর রুশি সেই আগুনের মাঝে পড়ে গিয়েছিলো। এরপর থেকেই ও ভয় পেতো আগুনকে হয়তো। আমি নিয়ে আসার পর ধীরেধীরে স্বাভাবিক হয়!”
“আচ্ছা আপনি কি জানেন রুশি সেখানে মানে সি অরফানেজ এ কিভাবে এসেছিলো, ওকে কোথা থেকে পেয়েছিলো?”
রুশির বাবার হঠাৎ করে কি হলো বুঝতে পারলো না সায়ান,এই নিয়ে কয়েকবার উনি কপালের ঘাম মুছেছেন কিন্তু এই প্রশ্নে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে তাই বুঝলো না সায়ান। ও তার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো, আন্দাজ করতে পারছে যে উনি কিছু লুকাচ্ছে কিন্তু কেনো?উনি কি তবে আরো কিছু জানে যা জানাতে চাচ্ছেন না?সায়ান পরিস্থিতি বুঝতে পেরে হাল্কা হেসে বললো
“আব্বু আসলে আমি কিউরিসিটি থেকে জানতে চাইছি,আপনি যদি বলতে না চান তাহলে কোন সমস্যা নেই!”
“নাহ স্ সমস্যা কেনো থাকবে?ওইখানের কয়েকজন বলেছে যে ওকে এতিমখানার দরজায় কেউ ফেলে গিয়েছিলো আর ওনারা তাকে ভেতরে নিয়ে যায়”
“ওহ আচ্ছা! সেই অরফানেজের নাম কি?”
“মাধবপুর চাইল্ড কেয়ার!”
“জি ধন্যবাদ। আব্বু আপনিতো কিছুই নিচ্ছেন না। আম্মু আসলে অফিসে গিয়েছিলো কিছুক্ষনের মাঝে চলে আসবে। আমি গিয়ে রুশিকে একবার দেখে আসি,এই সাহিল! তুমি আব্বুর সাথে বসে গল্প করো!”
“জ্বি বস!”
সায়ান রুমের দিকে এগুলো, ও রুশির বাবার কথা পুরোপুরি সত্য বলে মানতে পারলো না বরং ওর ভেতরে সন্দেহ থেকেই গেলো। আগুনের ব্যপারটা নাহয় আকস্মিক কিন্তু দরজায় ফেলে যাওয়াটা?যদি কেউ তার সন্তানকে ফেলে দেয়ার ইচ্ছে থেকে তবে ডাস্টবিন বা হাসপাতালে ফেলে যায়।তা না করে এতো ভিতরের একটা অরফানেজ সেখানে কেনো ফেলে যাবে আর আশ্চর্যজনক ভাবে এই অরফানেজ ও চিনে! খুব করে চিনে কিন্তু সেখানে রুশি কেনো থাকবে!ও সিদ্ধান্ত নিলো বিষয়টি ঘাটিয়ে দেখবে। রুমে ঢুকতেই ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো, খাবারের প্লেটের একটু খাবারও শেষ করা হয়নি তারউপর রুশি ফোনের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। ও ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে হুট করে হাত থেকে ফোন নিয়ে গেলো আর দেখলো রুশি একজনকে “আই লাভ ইউ” লিখে পাঠিয়েছে আবার সেটা একটা ছেলে!সায়ানের মাথা ধপ করে গরম হয়ে গেলো। ও রুশিকে ফোন দেখিয়ে বললো
“এসব কি?তুমি একটা ছেলেকে এসব বলে বেড়াচ্ছো?”
“তো!”
রুশির খাপছাড়া জবাবে সায়ানের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো, ও তুলে দিলো ফোনটাকে একটা আছাড়। সেটা দুইতিন টুকরো হয়ে পড়ে রইলো আর রুশি রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
“এটা কি হলো? আপনি আমার ফোন ভাঙ্গলেন কেনো?”
“ভেঙ্গেছি বেশ করেছি, দরকার হলো আরো ভাঙ্গবো! তোমার সাহস কি করে হয় একটার ছেলের সাথে ওইসব লুতুপুতু কথা বলার?”
“মানে কি? আমার লাইফ আমার ডিসিশন! আমি যার ইচ্ছে তার সাথে কথা বলবো আপনার কি?শুধু আপনিই কি প্রেম করতে পারবে নাকি আমি পারবো না?”
“নাহ পারবে না,তুমি অন্যছেলের সাথে কথা বলবে মানে কি?তারউপর কিসব বলছো!”
“তো ভবিষ্যতে আমার লাইফ পার্টানারের দরকার পড়বে না?”
“কেনো আমাকে কি চোখে পড়ে না?আমি কি ইনভিসিবল?”
“চোখে তো পড়ে কিন্তু তাতে কি?কে আপনি আমার?”
“আমি তোমার হাজবেন্ড ডেমিট! তোমাকে কি এখন ভুলে যাওয়ার রোগে ধরেছে?”
“নাহ আমার সব মনে আছে, আর আপনি আমার হাজবেন্ড সেটা তো আমি মানলাম তবে সেটাতো তিনবছরের জন্য!তিনবছর পর তো আমার কাউকে লাগবে তাইনা?তাই আগে থেকেই জোগাড় করর রাখছি!”
“এর মানে এই ছেলে তোমার বয়ফ্রেন্ড?”
“হুম, যেমন চন্দ্রিকা আপনার গার্লফ্রেন্ড উপস স্যরি বাগদত্তা!”
“আজ শেষবারের মতো বলছি আমার সামনে ওইমেয়ের নাম নিবে না আর!”
“আহারে…কেনো? ছেঁকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে বসে আছেন?”
“হোয়াট দ্যা…আমি ছেঁকা খেয়েছি?সায়ান জামিল খান কখনো ছেঁকা খায়না বুঝলে!বরং আমি ছেঁকা দিয়েছি!”
“ওর তারমানে ব্রেকয়াপ হয়ে গেছে, আচ্ছা তাহলে আপনার ওই ওয়াদার কি হবে?গম্ভীর কন্ঠে যে বলতেন ‘আমি তোমার সকল দায়িত্ব নিতে পারবো কিন্তু তোমাকে কখনো স্ত্রী হিসেবে মানতে পারবো না কারণ আমি কারো কাছে ওয়াদাবদ্ধ’ তার কি হবে?”
“যে প্রমিসের শুরু ভুল মানুষ দিয়ে তা বেশিদূর এগোয় না আর আমাদের টাও এগোয় নি”
“ওহ তারমানে আপনি ছেঁকা মানে আপনাদের ব্রেকয়াপ হয়ে গেছে আরকি!”
“আমাদের মাঝে কোন সম্পর্কই ছিলো না তাহলে ব্রেকয়াপ হবে কোথা থেকে?”
“আসতাগফিরুল্লাহ! সম্পর্ক না থাকলে এমনি এমনি আপনার ফিয়ন্সি হয়ে গেলো?কি মিথ্যে বাদি রে বাবা!”
“আমি মিথ্যে বলিনা যদি বিশেষ দরকার না হয়। আর তোমাকে কে বলেছে সম্পর্ক ছাড়া বাগদত্তা হওয়া যায়না?যারা এরেঞ্জ মেরেজ করে তাদেরও তো সম্পর্ক ছাড়াই এংগেজমেন্ট হয় তাইনা?আমাদেরটাও তেমন ছিলো যেটা থেকে মুভ অন করা দরকার। এনিওয়ে এই ছেলের সাথে তুমি কোন সম্পর্ক রাখবে না”
“শুনুন আপনার নিজের গার্লফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকয়াপ হতে পারে কিন্তু আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে। আমরাতো তিনবছর পরেই বিয়ে করবো! আর আপনি আমাদের সম্পর্কে না বলার কে?”
“ভুলে গেলে কি বলেছি?আমি তোমার হাজবেন্ড, তোমার সন্তানের বাবা!”
“জানি কিন্তু সেটা তিনবছরের জন্য!তিনবছর পরতো আর থাকবেন না”
“সেই কখন থেকে তিনবছর তিনবছর বলে যাচ্ছো! কে বলেছে আমাদের সম্পর্ক তিনবছরের?”
“ওমা ভুলে গেলেন?’তুমি আমার সন্তান দুবছর হওয়া পর্যন্ত থাকবে তারপর ইউ আর ফ্রি’ নিজে বলে আবার নিজেই খেয়ে ফেললেন!মনে নেই আমাদের তিনবছরের চুক্তির কথা?”
“কিসের চুক্তি আমার তো মনে পড়ছে না! কাগজ দেখাও তাহলে মেনে নিবো। তুমি কি এমন কোন কাগজে সাইন করেছো যাতে আমাদের চুক্তির কথা উল্লেখ আছে?”
“মানে কি?আপনি নিজের মুখের কথা ফিরিয়ে নিচ্ছেন?আপনি কি মিথ্যে বাদি!”
“ওই ছেলের সাথে যদি আর কথা বলতে দেখি তাহলে একদম সারাজীবনের জন্য তুমি আর ফোন ইউজ করতে পারবে না বলে দিলাম”
“আপনি আমাকে এসব বলার কে?”
“তোমার হাজবেন্ড, তোমার অর্ধাংশ! বুঝেছো?”
“হুহ মানে কে?”
“তুমি মানো আর না মানো আমি তোমার হাজবেন্ড এটা তুমি বদলাতে পারবে না তাই যতো তাড়াতাড়ি মাথায় ঢুকাতে পারবে ততই মঙ্গল”
“মি.খান! বাই এনি চান্স আর ইউ জেলাস?”
সায়ান থমকে গেলো তারপর রুশির দিকে কিছু ঝুঁকে বললো
“অফ কর্স আমি জেলাস! আমার বউ অন্য ছেলের সাথে প্রেম করছে আর আমি জেলাস ফিল করবো না?”
সায়ানের এই সহজ স্বিকারোক্তিতে রুশি অবাক হলো, আসলেই নিরামিষ একটা। কই বলবে ‘না আমি জেলাস না, তুমি ভুল ভাবছো’ তারপর ব্লাস করবে আর আমি এটা নিয়ে পচাবো যে ‘তাহলে আপনি টমেটোর মতো লাল কেনো হয়ে আছেন?’ কিন্তু না তাতে একবালতি জল ঢেলে দিলো!কিন্তু এতোসহজে তো তাকে জিততে দেয়া যাবে না তাই রুশি হুট করে বলে উঠলো
“কেনো এতো জেলাস কেনো হবেন? আমি অন্যকারো হলে আপনার কি যায় আসে?আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন?”
“যদি বলি হ্যা?তাহলে কি করবে?”
“তাহলে ভাববো আমি দিবাস্বপ্ন দেখছি। দ্যি গ্রেট সায়ান জামিল খান আমার মতো সাধারণ মেয়ের প্রেমে পড়বে তা কি করর সম্ভব? প্রকৃতি তো মেনে নিবে না”
“প্রকৃতি না মানলে কার বাপের কি?আর দিবাস্বপ্ন তো সত্যিই হবে তাইনা? কারণ সেটা সজ্ঞানে দেখা হয় তাই সেটা পুরণ হওয়ার চান্স বেশি যেখানে রাতের স্বপ্নে নিজের হাত থাকে না আর না সেটা সজ্ঞানে দেখা হয় তাহলে তা কি করে সত্যি হবে?আর আমি বরাবরই সাধারণতায় মুগ্ধ হই সেটা কোন জিনিস হোক কিংবা মানুষ! এটা অসম্ভব কিছু নয়!
“এটা কি ইন্ডিরেক্টলি আমাকে কিছু বুঝানো হচ্ছে?”
“থ্যাংক গড তুমি এইটুকু তো বুঝতে পেরেছো আমি তোমাকে কিছু বুঝানোর চেষ্টা করছি! যাইহোক বাবার সাথে যদি দেখা করতে চাও তাহলে সব খেয়ে শেষ করো নাহয় এই রুম থেকে একপাও বের হতে পারবে না”
রুশি বুঝতে পারলো সায়ান যা বলেছে তা করে ছাড়বে!আচ্ছা সরাসরি বললে কি হয় ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি!’ তা না পেঁচিয়ে বলবে। তারউপর আমার স্বাদের ফোন ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেলো অথচ কাজের কাজ কিছু হলো না। ধ্যাৎ সামুকে আবার বলতে হবে অন্যকোন আইডিয়া দিতে।ও মুখ ফুলিয়ে খাবার চিবোতে লাগলো এদিকে সায়ান কিছুক্ষণ পুর্বে সাহিলকে মেসেজ করে বলেছিলো এই আইডির মালিককে খুঁজে বের করতে,আর এখন জানতে পারলো এটা সামুর ফেক আইডি! এরমানে রুশি ওকে টেস্ট করতে চাইছে, ঠিক আছে তুমি যখন খেলতে চাইছো আমিও নাহয় তোমার সাথে খেলবো!
সায়ান বাঁকা হাসি দিয়ে রুশির দিকে তাকালো,,,
______________________
রুশির বাবা বসে বসে সাহিলের সাথে কথা বলছিলো এমন সময় নারীকন্ঠ শুনতে পেলো
“আপনি নিশ্চই রুশিমার বাবা! কেমন আছেন ভাই সাহেব?”
রুশির বাবা তাকাতেই থমকে গেলো,উনি এখানে কি করছে? আর রুশিকে মা বলছে মানে রুশির শাশুড়ি? রুশির বাবা সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলো
“আপনি সায়ানের মা?মানে ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট জামিল খানের ওয়াইফ?”
“জি! আপনি জামিল কে চিনতেন?”
“নাহ নাহ ব্যাক্তিগত চিনতাম না কিন্তু টিভিতে তো দেখেছি আর কি!আসলে আমার কিছু কাজ বাকি আছে তাই আর থাকা সম্ভব হচ্ছেনা। আপনারা ভালো থাকবেন আর রুশির দিকে খেয়াল রাখবেন”
“সেকি রুশিকে না বলেই চলে যাবেন?”
“আরেকদিন আসবো ওকে দেখতে, আজ আসি আমি”
বলেই রুশির বাবা উঠে দ্রুতপায়ে বেরিয়ে পড়লো, সাহিল কিছুটা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো। কেনো যেনো মনে হচ্ছে উনি সায়ানের মা কে আগে থেকে চিনে!সাহিল তার বসকে জানাবে বলে ঠিক করলো!
এদিকে রুশির বাবা গেট থেকে বেরিয়ে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। যার থেকে পালাচ্ছিলো সেটা আজ তার সামনে! নিয়তি! বড্ড জটিল বিষয়। মানুষ আর যাইহোক নিয়তি থেকে পালাতে পারে না, যার ভাগ্যে যেখানে যাওয়ার থাকে দিনশেষে সে সেখানেই যায়। হাজার চেষ্টা করেও তাকে সেখান থেকে সরিয়ে রাখা যায়না।রুশির ভাগ্যে হয়তো এমনটাই হওয়ার ছিলো তাইতো ও এই খান বাড়িতেই এসেছে ঘুরেফিরে।
#চলবে
#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_ ৪১
বদ্ধকামরার চেয়ারে একজন হেলান দিয়ে বসে আছে, পাশে থাকা লোকদুটো থরথর করে কাঁপছে। বন্দুক হাতে লোকটি এক ধ্যানে মনিটরের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে, বন্দুকে বুলেট লোড করা
যেকোন সময় এই গুলি ওদের দেহ বিদ্ধ করতে পারে,ওদের জীবন সম্পুর্ণ নির্ভর করছে সামনে থাকা ব্যাক্তিটির মনের ভাবের উপর। তাদের কাঁপাকাঁপি দেখে লোকটি বাঁকা হাসলো,ওদের এইরুপ ভয় পাওয়া যেনো ওকে পৈশাচিক আনন্দ দিচ্ছে!সে চায় তার আশেপাশের মানুষ তাকে ভয় পাক, তার কাছে নিজের প্রাণের ভিক্ষা করুক এমনকি স্ক্রিনে থাকা খান বাড়ির সন্তানও!
মুহুর্তেই হাসিমাখা মুখ মিলিয়ে গেলো, চোখমুখে প্রকাশ পেলো তীব্র ক্ষোভ,রাগ আর ঘৃণা! সামনে থাকা কি বোর্ড সজোরে আছাড় মারলো নিচে, সেটা ভেঙ্গে কয়েকভাগ হয়ে গেলো।তবুও রাগ যেনো এক অংশও কমে নি বরং বেড়েছে! কোনরুপ ওয়ার্নিং না দিয়েই হঠাৎ পাশে থাকা দুজনের মাথায় গুলি করে দিলো আর তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। এই দৃশ্য যেনো তার আনন্দ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিলো, সামনের লোকদুটোর মতোই একই অবস্থার কল্পনা করলো স্ক্রিনে থাকার সদ্য আর্লি টুয়েন্টিতে থাকা ছেলেটাকে নিয়ে। তাকে এই মুহুর্তে মেরে ফেলতে পারলেই যেনো শরীরের সকল ক্ষোভ মিটে যাবে!
বাইরে থেকে দৌঁড়ে আসলো কয়েকজন, গুলির আওয়াজ শুনে প্রথমেই ঢুকার সাহস পায়নি কিন্তু যখন দেখলো আর আওয়াজ শুনা যাচ্ছে না তখন বুঝতে পারলো আর গুলি চলবে না। তাই কয়েকজন মিলে ঢুকলো আর দেখলো মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে দুইজনের লাশ! তারা আস্তে করে ঢুকতেই সেই লোকটা ইশারা করে লাশ বাইরে নিয়ে যেতে বললো।
লাশ নিয়ে ঘরে যেতেই প্রবেশ করলো এডম, বদ্ধঘরে থাকা লোকটির সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং শক্তিশালী মানুষ যাকে বলে বাঁ হাত! সবাইকে শেষ করে দিলেও এর গায়ে আঁচও লাগতে দেয়না লোকটি, যতো পাগলামির খেলায় মেতে থাকুক না কেনো এডমকে কখনো হাত ছাড়া করেনা। কথায় আছে না ‘জাতে মাতাল তালে ঠিক’ ঠিক তেমনি এও ঠিক আছে, পাগল হলেও নিজের ভালো বুঝে। যে খেলায় নেমেছে সে খেলায় এডমকে কতটা প্রয়োজন সেটা শুধু ওই জানে!
এডমকে দেখেই ইশারায় কাছে ডাকলো, নিরব ভক্তের মতো সেও কাছে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর নিম্নস্বরে বললো
“বস তাহলে এখন আপনি কি করবেন?”
“যে পাখি আমি চুজ করে দিয়েছি সে পাখিতে তার মনোযোগ নেই বরং সে অন্যপাখিতে মজেছে।ঠিকাছে তবে তাই হোক,আমি এই চাল চেলেছি তার মনের অবস্থা জানার জন্য যে ও কাকে বেঁছে নেই স্ত্রী নাকি প্রেমিকা?একদিকে মৃত্যুশয্যায় থাকা স্ত্রী আর অন্যদিকে ছয়বছরের প্রেমিকা যেকিনা একসময় তার প্রান বাঁচিয়েছে অন্তত সায়ানের জন্য তো তাই। আমি ভেবেছি প্রেমিকার মুল্য বেশি হবে কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে নিজ স্ত্রীকে চুজ করলো আসলে রক্ত তো কথা বলে!তারমানে যদি তার স্ত্রীর কিছু হয় তবে সে তো বুমমমম!”
“বস তাহলে ওই মেয়েটিকে কি করবেন?সেতো আমাদের ব্যাপারে সব জানে!”
“যে পাখি কাজেই লাগেনি সে পাখিকে রেখে কি লাভ?বরং ওর অসংযত মুখ আমাদের কাল হতে পারে তাই ওকে শেষ করে দাও। ওর প্রয়োজন শেষ আমাদের!”
“জ্বি বস কিন্তু আমরা তার কোন খোঁজ পাচ্ছিনা, হসপিটাল থেকে বেরিয়ে ঠিক কোথায় গেছে জানা নেই। তবে এতটুকু জানি খান বাড়িতে যায়নি আর না সেই ফ্লাটে! আমরা খোঁজ চালাচ্ছি, যেখানেই পাবো সোজা উড়িয়ে দিবো। টেনশন করবেন না আপনি!”
“আচ্ছা!এইজন্যই আমি তোমায় এতো বিশ্বাস করি এডম! আমি না চাইতেও তুমি সব বুঝে যাও”
এডম কিছু না বলে কামরা থেকে বেরিয়ে পড়লো আর সে সেই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো!চোখেমুখে হাসির ছোঁয়া। কারো দুর্বলতা খুজে পাওয়া একটা আর্ট আর সেই দুর্বলতায় আঘাত করে সাকসেসফুল হলে খুশির আর অন্ত থাকে না। ব্যাস সেই মুখখানা দেখার অপেক্ষায় আছে যখন তার সামনে নিজেকে মেরে ফেলার জন্য প্রাণ ভিক্ষা চাইবে তার সবচেয়ে বড় শত্রু তাও নিজ স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য!হাহাহা হোয়াট আ সিন দেট উইল বি!
_____________________________
গিটারের টুংটাং আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে যায় চন্দ্রিকার, মাথা ধরে উঠে বসে। কাল রাত বেশি কান্না করায় মাথা ভার হয়ে আছে, গিটারের সুমধুর এখনো কানে বাজছে। এই সুরের প্রেমে কোন একসময় পড়েছিলো আর এখন আর সেই মানসিকতা নেই। জীবন বড্ড বিষাদময় হয়ে গেছে, এসব প্রেম-ভালোবাসায় বিশ্বাস ভরসা কোনটিই নেই। মনে হয় এসব ভালোবাসা অনেক দামি যা ওর জন্য নয়, এসব চাওয়াও মহাপাপ!
ভাবনার মাঝেই মৃদু স্বরে গাওয়া গান ভেসে আসলো কানে, কি মধুর কন্ঠ!মৃদু পায়ে দাঁড়িয়ে সেই আওয়াজের পানে ছুটলো চন্দ্রিকা,পাশের ঘরের সামনে যেতেই আওয়াজ যেনো গাঢ় হলো। রুমের ভেতরে না যেয়েই দরজার কাছেই বসে পড়লো হাটু গেড়ে! দরজায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুনতে লাগলো প্রতিটি লাইন…
কেন রোদের মতো হাসলে না
আমায় ভালোবাসলে না,
আমার কাছে দিন ফুরালেও আসলে না।
এই মন কেমনের জন্মদিন
চুপ করে থাকা কঠিন,
তোমার কাছে খরস্রোতাও গতিহীন।
নতুন সকাল গুলো কপাল ছুঁলো তোমারই
দূরে গেলেও এটাই সত্যি তুমি আমারই,
শুধু আমারই…
পাতাভরা সব দু-টুকরোরা
কাল বৈশাখীর মতো মুখচোরা,
সব ভিজে যাক শুধু বেঁচে থাক অভিমান
নতুন সকালগুলো কপাল ছুঁলো তোমারই
বেঁধে রাখতে পারলে তুমিও হতে আমারই
শুধু আমারই …
প্রত্যকটা কথা যেনো ওকে ঘিরে কেউ বেশ আকুতি নিয়ে গাইছে আর সেই মানুষটি আর কেউ নয় বরং শাহেদ। এই লাইনগুলোর মাধ্যমে নিজের সুপ্ত ভালোবাসা আর না পাওয়ার বেদনা যেনো তুলে ধরছে। মানুষটিকে ও বুঝে না, কি চায় সে? কি তার উদ্দ্যেশ্য? মাঝেমাঝে মনে হয় সে খুব আপন কেউ আর পরক্ষনেই ওর ধারণা সম্পুর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়। কিছু বলার আগেই যেনো সব পেয়ে যায় তার কাছ থেকে তবুও মানুষটি এতো বুঝেও যেনো ওকে বুঝে না। ক্লাবের ফ্লোরে দেখা হওয়ার থেকেই খুব অদ্ভুত আচরণ করে সে, চন্দ্রিকার উপর তার আলাদা কর্তৃত্ববোধ! ও চেয়েও সেটার থেকে বেরুতে পারেনা। কেমন যেনো অদ্ভুত এক মায়াজালে বন্দি হয়ে আছে!
এই পর্যন্ত অনেক ছেলে ওর সুযোগ নিতে চেয়েছে। ড্রাংক অবস্থায় বেড টাচ করেছে কিন্তু শাহেদ ওকে সবচেয়ে মোক্ষম সময় পেয়েও ওর সাথে কিছু করেনি, বরং নিজের গায়ের কোর্ট পরিয়ে দিয়ে গাড়িতে সেফ ভাবে রেখেছিলো। শাহেদের কাছে থাকলে নিজেকে খুব নিরাপদ মনে হয়,খুব বেশি দেখা হতোনা শাহেদের সাথে ওর আর না ওর তেমন কোন ইচ্ছে থাকতো ওর দেখা করার। তবে যখনি কোন বিপদে পড়েছে তখনি সবার আগে ওকে পেয়েছে! প্রতিবার নিজ দায়িত্বে ফ্লাটে বা সায়ানের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলো আর যাওয়ার সময় কপালে দীর্ঘসময় ধরে চুমু খেয়েছে তার কিছু না বলেই চলে গেছে। মাঝেমাঝে কিছু কথা মনে লোকটি ওকে ভালোবাসে কিন্তু তার পর মুহুর্তেই মনে হয় সে তাকে ঘৃণা করে প্রচণ্ড ঘৃণা!
চন্দ্রিকার চোখ বেয়ে দুফোটা জল গড়ালো, কষ্টও নয় আবার সুখেও নয়। অদ্ভুত এক অনুভুতির বশে যেনো আটকা পড়ে আছে ও,কিছুক্ষণ পর নিজের সামনে আরেকজনের উপস্থিতি বুঝতে পারলো।চোখ মেলেই শাহেদকে দেখতে পেলো, সে পরম যত্নে ওর চোখের পানি মুছে দিচ্ছে তারপর আলতো স্বরে বললো
“এখনো মাথা ব্যাথা করছে? এখানে বসে আছো কেনো? ফ্লোর ঠান্ডা তাই দ্রুত সর্দিকাশি হতে পারে। চলো রুমে যাবে”
চন্দ্রিকা তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাঁকালো তারপর বললো
“আপনাকে আমি বুঝিনা,প্রতিমুহুর্তে যেনো নতুন গোলকধাঁধায় রুপান্ততিত হন। এমন কেনো আপন?”
চন্দ্রিকার এমন কথা শুনে শাহেদ হাল্কা হাসলো তারপর কপালের চুল সরাতে সরাতে বললো
“আমাকে তোমার বোঝার দরকার নেই, যতো বুঝার চেষ্টা করবে ততো অতলে হারিয়ে যাবে। শুধু শুধু বৃথা চেষ্টা করোনা, এটুকু খালি জেনে রাখো আমি তোমাকে বুঝি! তুমি নিজেকে যতোটুকু বুঝো তার থেকেও বেশি।”
চন্দ্রিকার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো আর চন্দ্রিকা আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।
_________________________
খান বাড়িতে আজ খুশির আমেজ চলছে, ইনান আর সামুর আজ বিয়ে তাও খুব ঘরোয়া ভাবে। পরে অনুষ্ঠান করে তাকে উঠিয়ে নেয়া হবে আপাদত শুধু কাবিন পড়িয়ে রাখবে। যদিও প্রথমে এভাবে কেউ রাজি হয়নি কিন্তু ইনানের জোরাজুরিতে সবাই রাজি হলো। ইনানের ভাষ্যমতে সামুকে খুব কষ্টে মানাতে পেরেছে তাই আবার কখন মত ঘুরে যায় কে জানে? এর রিস্ক না নেয়াই ভালো! এটলিস্ট বউ হিসেবে অভিমান করলেও ছেড়ে যাবে সহজে। যেহেতু সায়ান আর রুশির বিয়েও সে ভাবে হয়নি তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেবি হওয়ার পর যখন সে একটু বড়ো হবে তখন দুইজোড়ার একসাথে রিসেপশন করা হবে আপাদত ঘরোয়া ভাবে এসের বিয়েটা হয়ে যাক।
রুশি কখন থেকে শাড়ি পড়ে সেজেগুজে বসে আছে কিন্তু তার নিচে যাওয়ার অনুমতি নেই। সায়ান নিজে এসে নাকি নিয়ে যাবে নিচে এর পুর্বে এক পা নড়লেও পা ভেঙ্গে ফেলবে। হুহ যত্তসব!
বলে যখন তোমার দরকার তখনি এসে নিয়ে যাবো,এখন যদি সব সাজানো না দেখে তাহলে কি আর বিয়ে বাড়ি ফিল আসে?
সেদিনের পর সায়ানের যেনো কি হয়েছে, যদি বলে আমি ছেলেদের সাথে প্রেম করছি! তার যেনো কোন ভাবান্তরই হয়না।
“আরো বলে যতগুলো পারো করো সমস্যা নেই, তোমার যতো ইচ্ছে প্রেম করতে পারো। দিনশেষে বউ তো আমারই থাকবা তাইনা?আমার থেকে সাজেশন নিও কিভাবে ছেলেদের মন রাখতে ঠিক আছে?ছেলে হিসেবে আমার থেকে ভালো আর কে জানবে তাইনা?”
রুশি অবাক হয়ে বসে ছিলো, কি বলে এই ছেলে? বেশি শকে কি পাগল হয়ে গেছে? এর কি জেলাসি নামক শব্দের সাথে কোন পরিচিতি ঘটে নি?
রুশি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে, সেই কখন নিচে গিয়েছে!
এদিকে সায়ান সবাইকে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে সবকিছু করার, আগের সকল মেড চেঞ্জ করা হয়েছে এবং প্রত্যেকটা সার্ভেন্টের উপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। রুশিকে নিয়ে কোন প্রকার রিস্ক নিতে চায়না ও,সায়ান সবকিছু দেখছিলোই এরমাঝেই সদর দরজা খুলে যায় আর দুজন পরিচিত মুখ ভেসে আসে। সায়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে বিশেষত মাঝ বয়সী সেই নারীর দিকে! আজ এতোবছর পর এভাবে তাকে দেখবে ভাবতে পারেনি।
#চলবে