গুমোট অনুভুতি পর্ব-৪২+৪৩+৪৪

0
2099

গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_ ৪২

একজন মাঝবয়সী লোক সেই মাঝবয়সী মহিলাটিকে ধরে নিয়ে আসছে, মহিলার শরীর ততটা সুস্থ বলে মনে হচ্ছে না কিন্তু চোখেমুখে মোহনীয় হাসি!সায়ানের সেই হাসিটা খুব পরিচিত মনে হলো, কোথাও একটা যেনো খুব খুজে পাচ্ছে এই হাসির কিন্তু কার সাথে সেটাই মনে করতে পারছে না। সেই নারীর চোখগুলো খুশিতে চিকচিক করছে, সায়ান চোখেমুখেও খুশি খেলে গেলো!দৌঁড়ে সেই নারীর কাছে গেলো আর হুট করেই তাকে জড়িয়ে ধরলো। সেই নারীও পরম আদরে সায়ানের পিঠে হাত বুলালেন তারপর আলতো করে বললেন

“বাবু! কেমন আছিসরে তুই?”

“প্রিয় আন্টি আমি তো খুব ভালো আছি, তুমি কেমন আছো?”

“আমিও খুব ভালো আছি আর তোদের দেখে আরো ভালো হয়ে গেলাম”

সামু দ্রুতপায়ে নিচে নেমে আসলো,মায়ের রুমে যাওয়া উদ্দেশ্য ছিলো কিন্তু মাঝপথেই নিজের আন্টিকে দেখে থেমে গেলো। ওর মায়েরা দুইবোন ছিলো শুধুমাত্র তাই নানার অতি আদরের ছিলো, বড় মেয়ের নাম সাবিনা আর ছোট মেয়ের নাম প্রিয়ানা। বড় বোনের বিয়ে যখন খান বাড়িতে হলো তখন ছোটবোন মাত্র ইন্টার পরিক্ষার্থী ছিল!

দুবোনের বয়সের পার্থক্য খুব বেশি না হওয়ায় তারা বেস্টফ্রেন্ডের মতো ছিলো তাই বড়োবোনের বিয়ে হয়ে যাওয়াতে ছোটজন যেনো একদম একা হয়ে যায়!সে খান বাড়িতে ছোটজনের আনাগোনা খুব বেশি ছিলো, তখন সায়ানের বাবা জামিল খানের বন্ধু শাহিন জামান প্রায়ই আসতেন এবাড়িতে! প্রথমে কেউ বুঝতে না পারলেও পরে ঠিক বুঝতে পারলো যে প্রিয়ানা যখনি আসতো তখনি সে আসতো, মোটকথা শাহিন তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলো। প্রিয়ানাও মনে মনে পছন্দ করতো কিন্তু প্রকাশের সাহস পায়নি, একসময় পরিবারের সম্মতিতেই তাদের বিয়ে হয়।

সামু এইটুকুই শুনেছে তার মায়ের থেকে, ছোট থেকেই প্রিয় আন্টি খুব প্রিয় ওর কিন্তু তাকে সরাসরি দেখার সুযোগ হয়নি এতো বছর, শাহিন জামান আর তার স্ত্রী লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছেন প্রায় উনিশ বছর, আজ এতোবছর পর তাকে দেখে সামুতো বেশ খুশি! সেও এসে জড়িয়ে ধরলো তাকে তারপর প্রিয় আন্টিকে সোফায় বসালো,তারপর সায়ান আর সামু দুজনই তার সামনে হাটু গেড়ে বসলো।প্রিয়ানা জামান ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে,চোখ ছলছল করছে! মনে হচ্ছে নিজের সন্তানদের দেখছে। সায়ানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো

“বাবু! তোর বউ কই রে?আমাকে দেখাবি না নাকি লুকিয়ে রাখার প্লেন করেছিস?”

“আরেহ না, কি বলছো তুমি? আমি এক্ষুনি রুশিকে নিয়ে আসছি!তুমি বসো।”

সায়ান উঠতেই সামুর মুখ ভেংচি দিয়ে বললো

“বুঝলে প্রিয় আন্টি! তোমার গুলুগুলু বাবু তার বউকে ছাড়া একমুহুর্তও থাকতে পারেনা। বউয়ের আচল ধরে ঘুরে বেড়ায়!”

“তবে রে!”

সায়ান তেড়ে আসতেই সামু তার আন্টির হাত চেপে ধরলো আর আন্টি সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে

“সব ছেলেরাই একসময় বউয়ের আচল ধরে ঘুরে, বিয়ের পর আমাদের সামুর বরও তার আচল ধরে ঘুরবে। তাইনা সায়ান!”

“সেকি বলছো তুমি? ইনান তো এখনি আচল ধরে ঘুরে বিয়ের অপেক্ষা কি করতে হবে নাকি!”

কথাটা শুনে সামুর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেলো, ও কপাট রাগ দেখাতে চেয়েও ব্যার্থ হলো তারপর আন্টির দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে বললো

“তারমানে আঙ্কেল সেই অনেক আগে থেকেই আচল ধরে ঘুরছে তাইনা আন্টি। অনুভুতি কেমন!”

“অসভ্য কোথাকার! ঠাট্টা হচ্ছে আমার সাথে?”

বলেই সামুর কান চেপে ধরালো, আর সামু ছাড়াতে ছাড়াতে বললো

“আহহহহ আন্টি ছেড়ে দাও, বিয়ের দিনও কি কান মলে দিবে আমার?”

সায়ান সিঁড়ি থেকে চেঁচিয়ে বলল

“নাহ আন্টি একদম ছাড়বে না, বরং আরো জোরে ধরো। অল্প বয়সে পেকে গেছে ও!”

“ভাবির কাছে বিচার দিবো কিন্তু ভাই!”

“দে আমিকি তোর ভাবিকে ভয় পাই?”

“আচ্ছা দেখা যাবে!”

সায়ান রুমে ঢুকেই দেখে রুশি চেহারায় একরাশ বিরক্তি নিয়ে বসে আছে আর একের পর এক চকোলেট খাচ্ছে। সায়ান রুশির সামনে গিয়ে বসলো তারপর রুশির হাত ধরে বললো

“আজকে তোমাকে একজনের সাথে দেখা করাবো! সে আমার খুব কাছের মানুষ, ছোট বেলায় আমি মায়ের থেকেও বেশি তার কাছে থাকতে পছন্দ করতাম। চলো দেখা করবে তারসাথে!”

রুশি সায়ানের কথা শুনে খুশিমনে উঠে দাঁড়ালো, সায়ানের প্রিয় মানুষ মানে ওরও প্রিয় মানুষ!ও কৌতুহল নিয়ে সায়ানের হাতে হাত রেখে সাবধানে হাটা শুরু করলো, কয়েক সিঁড়ি উপরেই থাকতেই একজন শাশুড়ি মায়ের সাথে একজন মাঝবয়সী নারীকে দেখতে পেলেন। গায়ের রং ফর্সা নয় বরং উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের, চৌখা নাক আর অমায়িক হাসি! হুট করেই যেনো রুশির তাকে ভালো লেগে গেলো, কি নির্মল দেখতে!তাকে দেখেই তার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো, মনে সে যেনো কত বছরের চেনা ওর!

রুশিকে দেখেই ওর শাশুড়ি মা বলে উঠলো

“এইতো রুশি মা এসে গেছে! রুশি এ হচ্ছে আমার ছোট বোন প্রিয়ানা, তুমি ওকে প্রিয় আন্টি বলে ডাকতে পারো!”

রুশি কাছে যেতেই সেই প্রিয় আন্টি ওকে হাত ধরে পাশে বসালো! তারপর থুতনি ধরে বললো

“বাহ কি মিষ্টি দেখতে!বাবু এই পরী কই থেকে পেলি রে তুই?”

সায়ান এমন কথা শুনে হাসলো, রুশি লাল টুকটুকে শাড়ি পরাতে আসলেই পরী লাগছে!সায়ানের পিঠে হাত রেখে শাহিন জামান বললেন

“আমাদের ছেলেও তো লাখে এক, এমন পরীর মতো বউই তো আসতো তাইনা?”

“তা ঠিক! বাবু ছোট বেলায় এতো সুন্দর ছিলো দেখতে যে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম যাতে আমাকে একটা মেয়ে দেয় আর আমি বাবুকে নিজের মেয়ের জামাই বানাই!”

“তাহলে আপনার মেয়ের সাথে তার বিয়ে দেননি কেন?”

রুশি হুট করেই প্রশ্ন করে বসলো, এতো ভেবে বলেনি মাথায় এসেছে আর বলে দিয়েছে। কিন্তু রুশির প্রশ্নে সবার যে হাসি মিলিয়ে গেছে তা বেশ বুঝতে পারলো। রুশি কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দিবে বুঝতে পারছিলো না তাই মাথা নিচু করে রইলো তখনি সেই আন্টি ওর দিকে তাকিয়ে বললো

“সে সাথে থাকলে তো বিয়ে দিবো! জানো এতোদিনে হয়তো সে তোমার বা সামুর বয়সী হয়ে যেতো কিন্তু… সে যাইহোক তুমি তো আমার আরেক মেয়ের মতো তাহল্র সেই হিসেবে সায়ান তো আমার মেয়ের জামাই হলো তাইনা?আমার মেয়ের সাথে বিয়ে হলে সায়ান এতো মিষ্টি বউ কোথায় পেতো?”

বিনিময়ে রুশি হাসলো, যদিও মেয়ের ব্যাপারটি ক্লিয়ার হয়নি কিন্তু কারো ঘায়ে আঘাত দিয়ে কি লাভ?রুশি আর প্রিয় আন্টি কথায় মেতে রইলো। দুজনের চেহারায় কি অমায়িক হাসি!সায়ানের কোথাও একটা যেনো এই হাসি একই মনে হলো! দুজন হাসলে যেনো একইরকম লাগে খুব সুন্দর!

সন্ধ্যার পর সামু আর ইনানের বিয়ে পড়ানো শুরু হলো,কাছের আত্মীয় ব্যতীত অন্যকেউ এখানে উপস্থিত নেই। সামু নিজের বিয়ের রেজিস্ট্রিতে সাইন করার আগে রুশির দিকে তাকালো কিন্তু রুশিকে হাসিমাখা মুখে থাকতে দেখে ইনানের দিকে তাকালো, সে মাথা নিচু করে আছে।

ইনান সাইন করার সময় রুশির দিকে তাকিয়েছিলো এটা ও খেয়াল করেছে, কোথাও একটা খারাপ লেগেছে ওর কারণ ও জানে ইনান না বললেও সে এখনো রুশিকে ভালোবাসে! ভালোবাসা তো আর এতো সহজে ভুলা যায় না, কোথাও না কোথাও কিছু অনুভুতি থেকেই যায় আর সেটা যদি জীবনের প্রথম প্রেম হয় তবে তো ভোলা অসম্ভব! ইনান রুশিকে ভুলে নি আর হয়তো ভুলতেও পারবে না কিন্তু ও এটা ভেবেই খুশি যে ইনানের হৃদয়ে ওর স্থানও রয়েছে। ভালোবাসায় তো আর কম্পিটিশন হয়না, যে কাকে বেশি ভালোবাসে আর কাকে কম!ও ইনানের জীবনে রুশির স্থান কখনোই নিতে চায়না, ও চায় ইনান ওকে ওর মতো করে ভালোবাসুক আর তাতেই ওর চলবে!
কারো প্রথম ভালোবাসা হওয়া হয়তো ভাগ্যের ব্যাপার কিন্তু কারো শেষ ভালোবাসা হওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার! আর ও ইনানের শেষ ভালোবাসা আর সবচেয়ে বড় কথা আজকের পর থেকে ও ইনানের স্ত্রী তাই ওর থেকে বেশি অধিকার অন্য কারোই নেই আর হবেও না।

সামু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে সাইন করে দিলো, আজ থেকে ওর জীবন ইনানের সাথে জুড়ে গিয়েছে। ছোট থেকে যাকে চেয়েছে আজ সেই মানুষটাকে পেয়েছে। সবার নসিবে ভালোবসার মানুষ থাকে না,ও অনেক সৌভাগ্যবান বলেই তাকে নিজের করে পেয়েছে!

__________________________

রাত প্রায় বারোটা বাজে, অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে প্রায় ঘন্টাখানেক। যেহেতু এটা শুধুমাত্র কাবিনের মতো তাই সামুকে শশুর বাড়ি পাঠানো হয়নি বরং ইনান এখানে থেকে গেছে। রুশি ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল আছড়াচ্ছিলো আর সায়ান খাটে বসে ইম্পর্টেন্ট মিটিং নিয়ে সাহিলের সাথে কথা বলছে। এমন সময় রুশি চিৎকার দিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। সায়ান দৌঁড়ে এসে রুশিকে ধরলো আর চিন্তিত গলায় বলছে

“রুশি কি হয়েছে?ব্যাথা পেয়েছো? কোথাও কষ্ট হচ্ছে?আমাকে বলো?”

“ইট জাস্ট কিকড!”

“হাহ!”

“আপনার বেবি কিক মেরেছে আমাকে! আহহ!আবার মেরেছে!”

“হোয়াট!ও নিশ্চই ফুটবল খেলতে চাইছে!আমিও ফিল করতে চাই, বাবাই আরেকটা কিক মারো তো!”

বলেই সায়ান রুশির পেটে হাত রাখলো কিন্তু অনেকক্ষন যাওয়ার পরও কোন কিছু ফিল হলো না। প্রায় আধঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও বাবু আর কিক মারেনি তাই সায়ান হাল ছেড়ে দিলো আর রুশিকে উঠিয়ে আস্তে করে শুইয়ে দিলো। বিড়বিড় করে বললো

“নিশ্চিত দুষ্টের সেরা হবে”

তখনি সায়ানের ফোনে ফোন আসলো আর ও পিক আপ করলো। অপর পাশ থেকে একজন বলে উঠলো

“স্যার! মেডামের বাবার উপর নজর রেখেছি আমরা কিন্তু সন্দেহ করার মতো কিছু পাইনি। উনি স্বাভাবিকই আছেন আগের মতো তাই ওইদিনের আচরণের কারণ খুজে পাচ্ছিনা!”

“তুমি নজর রাখো তারউপর। সে নিশ্চই জানে কিছু যা প্রকাশ করতে চাইছে না।”

সায়ান ফোন রেখে বারান্দা থেকে রুমে আসলো, রুশি ইতোমধ্যে শুয়ে পড়েছে। ও আলতো করে কপালে ঠোঁট ছোয়ালো তারপর বললো

“গুড নাইট বউ!”

সায়ান কাউচে শুয়ে পড়লো গিয়ে, ও রুশির সাথে ইচ্ছে করেই বেড শেয়ার করেনা কারণ ও চায় রুশি নিজ থেকে বলুক সেখানে যেতে। এদিকে রুশি চায় সায়ান নিজে থেকে আসুক!এই দ্বিধাদ্বন্দ্বে কেউ কাউকে কিছু বলতে পারে না আবার সইতেও পারেনা।সায়ান ঘুমানোর চেষ্টা করলো!

________________________

সামু ফ্রেশ হয়ে আসলো তারপর নিজের চুলগুলো শুকিয়ে বেঁধে নিলো। যদিও ভারী সাজ দেয়নি কিন্তু লেহেঙ্গা আর গয়নায় অস্বস্তি হচ্ছিলো। এখন অনেকটা হাল্কা লাগছে নিজেকে! ইনানকে শুয়ে থাকতে দেখে সামু বেশ কিছুটা জায়গা রেখে শুয়ে পড়লো। যদিও ইনান ওর হাজবেন্ড তবুও জড়তা কাজ করছে,বেশ কিছু সময় যাওয়ার পর ইনান মৃদু স্বরে বললো

“ঘুমিয়ে পড়েছো?”

“উঁহু!”

“অতো দূরে শুয়ে আছো যে?”

সামু জবাব দিলো না,কেনো যেনো বেশ লজ্জা লাগছে ওর!সামুর জবাব না পেয়ে ইনান ওর দিকে এগুলো আর সামু সরতেই নিতেই প্রায়ই পড়ে যাচ্ছিলো যেহেতু একদম কিনারে ছিলো কিন্তু ইনান ধরে ফেললো আর একটানে নিজের কাছে নিয়ে নিলো। সামু হচকিয়ে গিয়ে সরতে নিলে ইনান ওর মাথা নিজের বুকে চেপে ধরলো তারপর বললো

“চুপচাপ এখানে শুয়ে থাকো! নড়লে কিন্তু যা করিনি তা করবো”

“কি করেননি?”

সামু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলো কিন্তু ইনান কর্মকাণ্ডে হতভম্ব হয়ে গেলো। ইনান খুব দ্রুত সামুর অধর ছুয়ে দিলো তারপর বললো

“আরো বাকি আছে,এইটুকুই চলবে নাকি বাকিগুলোও প্রেক্টিক্যালি বুঝাবো”

সামু দ্রুত ইনানের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেললো, বুক এখনো ঢিপঢিপ করছে। ইনানের এমন উদ্ভট আচরণ ওর কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে,ও শার্ট খামচে ধরে চোখমুখ খিচে শুয়ে আছে। ইনান এই অবস্থা দেখে নিঃশব্দে হাসলো, এখন কেমন ভেজা বেড়াল হয়ে আছে অথচ এই নাকি একসময় সাহস করে প্রোপোজ করেছিলো ওকে! ইনান সামুর মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলো!

#চলবে

গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_ ৪৩

রুশির বাবা অতি স্বাভাবিক আচরণে সায়ান বেশ অবাক হচ্ছে, সেদিন রুশির বাবা কিচ্ছু লুকাচ্ছিলো তা সায়ান বেশ বুঝতে পেরেছিলো কিন্তু কি হতে পারে তা গেস করতে পারছে না!সেদিন সাহিল ফোন করে বলেছিলো যে রুশির বাবা মিসেস খানকে দেখে ভয়ার্ত অবস্থায় সেখান থেকে চলে যায় কিন্তু কেনো? রুশির বাবা সায়ানের মাকে চেনার ১% চান্সও দেখতে পাচ্ছে না, তাহলে তার ওইরকম রিয়াকশনের পেছনে কারণ কি ছিলো?সায়ানের আশেপাশে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু তার জবাব পাচ্ছে না, এসব প্রশ্নের জবাব কেবল মাত্র রুশির বাবা দিতে পারবেন! সায়ান ফোন বের করে তাকে কল করলো, কয়েকবার রিং হওয়ার পর অপর পাশ থেকে নারী কন্ঠ হ্যালো বলে উঠলো, সায়ান খুব নম্রতার সাথে জিজ্ঞেস করলো

“আফজাল সাহেব আছেন?”

“হ্যাঁ উনি আছেন! তাকে কি দরকার আপনার?”

“যদি উনাকে একটু দিতেন…”

“উনার জ্বর ছিলো সারা রাত,সকালে মেডিসিন নেয়ার পর এখন ঘুমোচ্ছে তাই এখন তাকে জাগানো যাবে না।আপনি কে?আমাকে বলে দিন, আমি তাকে বলে দিবো”

“আমি সায়ান জামিল খান! তার বড় মেয়ের হাজবেন্ড, উনাকে বললেই হবে”

“ওহ আপনি সায়ান?কেমন আছেন আপনি?আপুকে নিয়ে যাওয়ার পর আর একবারও তো আসলেন না”

সায়ান হঠাৎ কন্ঠের পরিবর্তন বুঝতে পারলো,সায়ান ভ্রু কুচকে বললো

“আপনি তাকে বলে দিবেন আমি ফোন করেছিলাম…”

সায়ান ফোন কানে রাখতেই অপর পাশ থেকে চিৎকার শুনা গেলো!সেই নারীকন্ঠ বলছে

“বাবা এমন করছো কেনো তুমি কি হয়েছে তোমার?সায়ান! আপনি কি একটু আসবেন? বাবা কেমন যেনো করছে!”

সায়ানের কেনো যেনো ভয় লাগলো! রুশি তার পালক বাবাকে খুব সম্মান করে আর ভালোবাসে। সেদিন না বলে চলে যাওয়াতে খুব আফসোস করেছিলো,তারপর ফোন করে কথা বলে ক্ষান্ত হয়েছে। তাই তার কিছু হলে রুশি খুব কষ্ট পাবে!তাই সায়ান কিছু না ভেবেই দ্রুত কোর্ট নিয়ে তা পরা শুরু করলো আর রুশি বলে উঠলো

“কোথাও যাচ্ছেন? কিছু কি হয়েছে?”

সায়ান বলতে চেয়েছিলো কিন্তু থেমে গেলো, এই মুহুর্তে রুশিকে কোন স্ট্রেস দেয়া ঠিক হবে না। তাই মুখে হাল্কা হাসি ফুটিয়ে বললো

“কিছুই হয়নি, কোম্পানিতে যেতে হবে আর অলরেডি লেট হয়ে গেছে তাই তাড়াহুড়ো করছি!”

রুশি এট শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো,মনটা সকাল থেকেই কেমন অস্থির অস্থির লাগছে!ও সায়ানকে হাল্কা জড়িয়ে ধরে বললো

“তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন!”

“হুম,সাবধানে থেকো আর অযথা নিচে যাবে না”

সায়ান যেতে নিলেই রুশি সায়ানকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আর সায়ান থেমে গেলো।নিজের হাত রুশির হাতের উপর রেখে আলতো করে বললো

“কি ব্যাপার, অন্যদিন আমার বউ আমার বউ আমার আশেপাশেও ঘেষে না আর আজ সে আমাকে যেতেই দিচ্ছে। আমার প্রেমে পড়ে গেলেন নাকি মিসেস খান!”

“বাজে বকবেন নাতো!আমি কি ইচ্ছে করে ধরেছি নাকি আপনাকে?আপনার বেবি চাইছে আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরি তাই ধরেছি!”

“আচ্ছা! বেবিটা তাহলে ভারী দুষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। আমার বউকে দিয়ে কতো কিছু করাচ্ছে!”

সায়ান রুশির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে রুশির সামনে হাটু গেড়ে বসলো তারপর পেটের থেকে আঁচল সরাতে গেলেই রুশি হাত চেপে ধরলো আর দাঁতে দাঁত চেপে বললো

“কি করছেন এসব?”

“আমি কি নিজে থেকে করছি নাকি?বেবিই তো বললো আমি যাতে তার সাথে কথা বলি তাকে কিস করি! আমার কি দোষ?”

“বেবি কিভাবে বলেছে আর কখন বলেছে?আমি তো শুনিনি!”

রুশি চোখ ছোট ছোট করে বললো, তা দেখে সায়ান হাসলো আর উঠে দাঁড়িয়ে বললো

“তোমাকে যেভাবে বলেছে আমাকেও সেভাবে বলেছে। এনিওয়ে টেক কেয়ার আর ঠিক মতো খাবার খাবে। আমি কাজ শেষ করে দ্রুত চলে আসবো”

রুশি মাথা নাড়ালো আর সায়ান দ্রুত পায়ে বেরিয়ে পড়লো।সাহিলকে ফোন করে বললো ডাক্তার নিয়ে সেখানে যেতে আর ও বডিগার্ড নিয়ে সেখানে গেলো। বাসার সামনে গিয়ে দরজায় নক করতেই রুশির পালক বাবার মেয়ে নিহা দরজা খুলে দিলো।পরনে টাইট ড্রেস তাও ক্লিভেজ রিভিল করা আর লাইট মেকাপ! সায়ানের নজর পড়তেই দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো,বাবার অসুস্থতায় এমন সাজুগুজুর মানে দেখলো না ও। ভেতরে ঢুকে রুশির বাবার রুমের দিকে গেলো,সেখানে গিয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় দেখলো। সায়ান তার পাশে গিয়ে বসলো, ঘরে প্রচণ্ড গরম অনুভুত হচ্ছিলো। ফ্যান চলতে থাকা অবস্থায়ও সায়ান ঘামছিলো,সায়ান টিস্যু দিয়ে নিজের মুখ মুছছিলো।এমন সময় নিহা পানি এগিয়ে দিলে প্রথমে না করলেও পরে কি ভেবে খেয়ে নিলো। এমন সময় সাহিল ডাক্তার নিয়ে আসতেই সায়ান যেনো হাপ ছেড়ে বাঁচলো। ডাক্তার এসে রুশির বাবাকে দেখে বললো চিন্তার কোন কারণ নেই, ভাইরাল ফিভার তাই মেডিসিন নিলেই ঠিক হয়ে যাবে!তারপর তিনি বেরিয়ে পড়লেন সাহিলের সাথে আর সায়ান সেখানে বসে রইলো রুশির বাবার পাশে। উদ্দ্যেশ্য তার ঘুম ভাঙ্গলে তার থেকে প্রশ্নের উত্তরগুলো জেনে নেয়া যাবে, সায়ান কিছুক্ষণ বসে থাকার পর বুঝতে পারলো ওর মাথা ভারী হয়ে আছে,একসময় সেখানেই নেতিয়ে পড়লো। কিছু আওয়াজ কানে আসছে কিন্তু তা বুঝে উঠার মতো অবস্থায় ও ছিলো না।কখন ঘুমিয়ে পড়েছে ওর খেয়াল নেই!

মৃদু কান্নার শব্দে ওর ঘুম ভাঙ্গে, চোখ মেললেও মাথা ব্যাথায় মাথা ধরে বসে পড়ে। খুবই যন্ত্রণা করছে ওর মাথা,আলতো করে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই রুশিকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পায়,রুশি কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে ওর দিকে, নাহ ঠিক ওর দিকে নয় ওর পাশে তাকিয়ে। ও দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকাতেই দেখে নিহা গায়ে ব্লাংকেট জড়িয়ে বসে বসে কাঁদছে! সায়ান কয়েকমুহুর্তের জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লো, কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না। ও দ্রুত পায়ে দাঁড়িয়ে রুশির দিকে এগুলো কিন্তু রুশি একটা কথাও বললো না, বরং আগের মতোই দৃষ্টি সেদিকে।সায়ান কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো

“তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুই না, আমি কিছুই জানিনা কি হচ্ছে। ট্রাস্ট মি আমি নিজেই বুঝতে পারছি না, আমি কিছুই করিনি”

রুশি সায়ানের দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো তারপর কড়া কন্ঠে বললো

“বাবার রুমে যান”

“রুশি আমি…”

“বাবার রুমে যান বলছি, গো নাউ!”

সায়ান দ্রুত নিজের শার্টের খুলে থাকা বাটনগুলো লাগাতে লাগাতে বেরিয়ে পড়লো,ও বুঝতে পারছে ণ কি হচ্ছে! ওর জানা মতে ও রুশির বাবার রুমে ছিলো কিন্তু এখানে আসলো কি করে?আর ওর কিছু মনে নেই কেনো কি হয়েছে ওর সাথে! ও এখানে এসে কিছুই মুখে দেয়নি, ওয়েট! পানি নিয়েছিলো এর মানে তাতে কিছু ছিলো কিন্তু নিহার পক্ষে ওকে রুমে নিয়ে যাওয়া কি করে সম্ভব! এরমানে অন্যকেউ হেল্প করেছে তাকে কিন্তু কে সে?তবে কিছু যে হয়নি সেটা ও নিজেই বুঝতে পেরেছে কারণ ও ঘুমিয়ে পড়েছে এটা ওর মনে আছে, এখন রুশিকে বুঝাতে পারলেই হলো!

সায়ান রুশির বাবা রুমে আসতেই তাকে বসে থাকতে দেখলো, ও ধীর পায়ে তার কাছে গেলো। রুশির বাবা ওর দিকে না তাকিয়েই বললো

“তুমি খুব বুদ্ধিমান তাই হয়তো কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছো আর আমার উপর যে নজর রেখেছো তা আমি বেশ বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমি তোমাকে কিছুই বলতে পারবো না আর না বলতে চাইছি। তাই অযথা আমার পেছনে সময় নষ্ট করো না, যা যেভাবে চলছে সেটাকে সেভাবেই চলতে দাও। সত্যিটা কারো মঙ্গল বয়ে আনবে না তাই সেটাকে গোপনই থাকতে দাও, সেটা প্রকাশিত হলে সবার পুর্বে নিজের আপনজন হারাবে মনে রেখো!নিজের কৌতুহল দমাতে শিখো, অনেককিছুই অস্বাভাবিক থাকতে পারে আশেপাশে সেগুলোর জবাব না খোঁজাই ভালো!”

সায়ান পাল্টা কিছু বলতে পারলো না, রুশির বাবা যে মুখ খুলবে না সেটা ও বুঝে গেছে। এতোদিন রুশির কাছু জানে এটা শুধু ওর সন্দেহ ছিলো কিন্তু সেটা সত্যি বলেই প্রমাণিত হলো। তিনি এমন কিছু জানেন যা জানা ওর প্রয়োজন কিন্তু সে কেনো বলতে চাইছে না?আর আপনজন বলতে কার কথা বলছে সে?কার জীবনের ঝুঁকি আছে?সায়ানের ভাবনার মাঝেই রুশির বাবা বলে উঠলো,

“আচ্ছা তোমাকে একটা প্রশ্ন করার ছিলো,স্বামী হিসেবে তোমার ভালো জানার কথা। রুশি কি এখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে?কারো সাথে কথা বলে?”

সায়ান অবাক হলো, এমনটা ও কখনো দেখেনি রুশিকে করতে। সায়ান অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো

“নাতো!এমন কিছু চোখে পড়েনি। কিন্তু আপনি হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলেন কেন?”

“রুশিকে যখন চাইন্ড কেয়ার থেকে এখানে নিয়ে আসি তখন রুশির বয়স ছয় বছর!এখানে নিয়ে আসার প্রথমে চোখে না পড়লেও পরে বুঝতে পারতাম রুশি একা একা কথা বলতো, এমনভাবে বলতো যেনো ওর পাশে কেউ বসে আছে আর ও তার সাথে কথা বলছে।এমনকি রাত বিরাতে ওই পাশের মাঠটায় গিয়ে শুয়ে থাকতো আর একা একা কথা বলতো। আমি খুব ভয় পেয়ে যাই আর ভাবি জ্বীনে আসর করেছে তাই কবিরাজ দেখাই কিন্তু লাভ হয়না। পরে এক বন্ধুর পরামর্শে সাইক্রেটিস্ট দেখাই আর সে রুশির ট্রিটমেন্ট করে। সে বলে রুশি অনেকদিন একা ছিলো তারউপর সেই আগুন ওর ব্রেনে বড্ড চাপ সৃষ্টি করেছে। ও কাউকে বড্ড মিস করছে কিন্তু কাকে সেটা ও নিজেও জানেনা বাট ও কারো সাথে কথা বলে যাকে ওর ভালো লাগে! আর এই পরিস্থিতি থেকে ওকে বের করে আনা সম্ভব নয় তাহলে নিজের ক্ষতি করতে পারে তবে যদি একাকিত্ব কেটে যায় তবে এই অভ্যাসে আর থাকবেনা। বড় হওয়ার সাথে সাথে রুশির সেই স্বভাবটা হাল্কা হয়ে গেলেও পুরোপুরি যায়নি,মাঝেমাঝে রুশি আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেনো বলতো!তাই জিজ্ঞেস করেছি এখনো বলে কিনা!”

সায়ান মনোযোগ সহকারে সবটা শুনেছে আর সমস্যাটা বুঝতেও পেরেছে। রুশির অতীত হয়তো সম্পর্কিত এর সাথে কিন্তু রুশির বাবার ভাষ্যমতে আগুন লাগার কারণে সকল কিছু নষ্ট হয়ে গেছে এরমানে রুশির অতীত সম্পর্কে জানা সম্ভব নয়। সায়ান দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো তারপর রুশির বাবাকে বললো

“নাহ এমন কিছুই আমাদের চোখে পড়েনি, আর আমিতো ওর সাথে ছিলাম। এমন কিছুই ও করেনি”

“ডাক্তার তাহলে ঠিকই বলেছিলো! একাকিত্ব কেটে গেলে সবটা ভুলে যাবে”

সায়ান মাথা নাড়লো তারপর তারা দুজনেই চুপ হয়ে গেলো যেনো ভাষাহীনতায় ভুগছে। কিছুক্ষণ বাদে রুশি ঘরে ঢুকে বাবার কাছে গেলো তারপর তার খোঁজখবর নিলো। এরপর সায়ানের হাত ধরে বেরিয়ে পড়লো,গাড়িতে গিয়ে সায়ানের কোর্ট এগিয়ে দিলো ওর দিকে আর সায়ান সেটা পড়তে নিলে রুশি কড়া কন্ঠে বললো

“ওইটা ফেলে দাও!”

সায়ান কারণ জিজ্ঞেস করলো না বরং সাথে সাথে ফেলে দিলো। তারপর আমতাআমতা করে বললো

“বিশ্বাস করো আমাদের মাঝে কিছুই হয়নি আমিতো ঘুমিয়ে…তুমি কি রেগে আছো?”

“উহুম!”

সায়ান অবাক হলো না কারণ রুশি যথেষ্ট বুদ্ধিমতী আর সায়ানের এতোটুকু ভরসা নিজের ভালোবাসার উপর আছে যে রুশি ওকে এক্সপ্লেইন করার চান্স দিবে আর ওকে বিশ্বাস করবে। সায়ান আবারও বললো

“আমাকে ওই রুম থেকে বের করে দিয়ে কি করেছো তুমি?”

“দ্যাটস আ সিক্রেট!শেয়ার করা যাবে না”

সায়ান মাথা নাড়লো রুশি বলতে না চাইলে জোর করবে না, এমনিতেও কি ঘটেছে তা ওর বডিগার্ড থেকে জানা যাবে। ও ওই বাড়িতে ঢুকার পুর্বেই তাদের বলে রেখেছিলো যদি ওর সাড়াশব্দ না পায় তবে নজর রাখতে আর কি হয়েছে তা ওকে বলতে। সায়ান রুশির দিকে তাকিয়ে বললো

“হসপিটাল থেকে চেকয়াপ করেই বাড়িতে যাই, ডাক্তার বলেছিলো গত সপ্তাহে যেতে কিন্তু বিয়ের কারণে যাওয়া হয়নি।একবারে ডাক্তার দেখিয়েই বাসায় যাবো”

রুশি মাথা নাড়লো,তারপর একটু আগের ঘটনার কথা ভেবেই বাঁকা হাসলো!হাতে থাকা ফোনটা নিয়ে খেলতে লাগলো ও!

এদিকে রুশি সায়ান যেতেই নিহা নিচে বসে পড়লো আর নিহার ভাই চিলেকোঠার ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো! নিহা ভাবতেই পারছে না কি থেকে কি হয়ে গেলো! ও ইচ্ছে করেই সায়ানকে আসতে বলেছিলো যেখানে ওর বাবার কিছু হয়নি।ও এটা মানতেই পারছিলো না যে রুশির এতো ভালো স্থানে বিয়ে হয়েছে যেখানে ওই পঁয়ত্রিশ বছরের লোককে ওকে বিয়ে করতে হয়েছে! ও রুশির সংসার ভেঙে ওর উপর রিভেঞ্জ নিতে চেয়েছিলো কিন্তু সব ভেস্তে গেলো!রাগে ওর শরীর ফেঁটে যাচ্ছে!

হসপিটালে পৌঁছে রুশিকে ডক্টরের চেম্বারে বসিয়ে সায়ান একটু আসি বলে বেরিয়ে পড়লো, রুশি ডাক্তারের সাথে কথা বলতে লাগলো এদিকে সায়ান কিছু একটা খুঁজতে লাগলো আর অবশেষে পেয়েও গেলো, ও কিছু না ভেবেই পর্দা ঠেলে সেই ভিতরে ঢুকে পড়লো!

#চলবে

গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_ ৪৪

নর্মাল ওয়ার্ডের বারান্দায় পর্দা দিয়ে কিছু সিট রাখা হয়েছে,কিছু মানুষ হসপিটালের নর্মাল ওয়ার্ডের ব্যয়ভারও বহন করতে না পারলে তাদের এই স্থানে রাখা হয় সম্পুর্ণ অনাদর আর অবহেলায়! যদি ভাগ্যক্রমে ডাক্তার এই রাস্তা দিয়ে যায় আর তাদের দিকে কিঞ্চিত নজর দেয় আরকি! চিকিৎসা বলতে এইটুকুই তারা পায় তারা। বেশিরভাগ রোগি এই অবস্থায় ওইপারে পাড়ি জমায়, কেউবা ভাগ্যের জোরে বেঁচে যায়!

সায়ান পর্দা সরিয়ে এইরকম একটা জায়াগায়ই এসেছে,সামনে প্রায় ষাটোর্ধ একজন নারী শুয়ে আছে ছোটখাটো সিটটিতে,জীর্ণশীর্ণ দেহ, চোখের নিচে কালশিটে পড়ে আছে! মৃত্যুর জন্য যেনো অপেক্ষা করছে! সায়ানের তাকে খুব পরিচিত মনে হয়েছিলো তখন তাই এসেছে এখানে, অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর চিনতে পারলো। আজ প্রায় ছয়বছর পর তাকে দেখছে।মিনু খালা! মাধবপুর চাইল্ড কেয়ারের হেড ছিলেন উনি যদিও আগের সেই সবল নারী আর এখানের এই দুর্বল নারীর মাঝে কোন মিল নেই তবুও সায়ানের চিনতে ততটা কষ্ট হয়নি কিন্তু উনি এখানে তাও এই অবস্থায়!

আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলো না,সায়ান আস্তে করে তার দিকে দিকে এগিয়ে গেলো তারপর তার মাথায় আস্তে করে হাত রাখলো। কাঁপা কাঁপা পল্লবগুলো নাড়িয়ে সে তাকালো,তারপর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সায়ান দূর থেকে একটা চেয়ার টেনে পাশে বসলো তারপর তার হাত চেপে ধরলো বললো

“কেমন আছো মিনু খালা?আমাকে চিনতে পারছো? আমি সায়ান…সায়ান জামিল খান!”

“ত্ তুমি সায়ান!কোন সায়ান?”

“ওইযে যখন ছোট ছিলাম তখন আমাকে আপনার অরফানেজের একটা মেয়ে আমাকে বাঁচিয়েছিলো!তারপর আমি প্রায় আটবছর পরে আপনাদের সেখানে খোঁজ নিয়েছিলাম সেই মেয়ে সম্পর্কে আর প্রায় ছয়বছর আগে তাকে সেখান থেকে নিয়ে এসেছিলাম! ওর নাম পরী ছিলো মনে আছে?আপনিই তো খুঁজে দিয়েছিলেন।”

“তুমি স্ সেই ছেলে!আমি তো তোমাকেই খুজছিলাম”

মিনু খালা উঠে বসে পড়লো আর সায়ানের হাত ধরে বললো

“অবশেষে আমি তোমাকে পেলাম! এখন আমি মরেও শান্তি পাবো, তোমাকে কথাগুলো বলবো বলেই হয়তো আমি বেঁচে আছি।আমি যে পাপ করেছি তার শাস্তি আমি হারে হারে পাচ্ছি কিন্তু আমি আমার প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই”

উনি প্রায় একনিঃশ্বাসে সবটা বললেন তারপর সায়ানের হাত ধরে ছলছল নয়নে তাকিয়ে বললেন

“আমি তোমাকে সেদিন মিথ্যে বলেছিলাম, সত্যি বলতে টাকার লোভে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। তুমি যাকে পরী ভেবে এসেছো সে পরী নয় বরং চন্দ্রিকা ছিলো। সম্পর্কে আমার দুঃসম্পর্কের ভাতিজি, জন্মের সময় মা মরে যাওয়াতে তার বাবা তাকে মেনে নেয়নি দ্বিতীয়পক্ষের সন্তান ছিলো কিনা!আমার মায়া হওয়ায় তাকে এখানে নিয়ে আসি কিন্তু একসময় কেউ একজন টাকার লোভ দেখিয়ে বলে চন্দ্রিকাকে ছোট্ট পরী হিসেবে বলতে আর আমি রাজি হয়ে যাই। টাকার লোভ যেমন ছিলো তেমন চেয়েছিলাম চন্দ্রিকা যাতে ভালো থাকে আর তাই আজ হয়তো আমার এই দশা!চন্দ্রিকা তোমার পরী থেকে পাক্কা দেড় বছরের ছোট, ও সে নয় যাকে তুমি খুঁজছিলে!”

সায়ান থমকে গেলো, এরমানে যাকে এতোদিন ওর জীবনের সেভিয়র ভাবতো সে আসলে চন্দ্রিকা নয় বরং অন্যকেউ। আসলে সায়ান অবাক হচ্ছে না, আর যাইহোক চন্দ্রিকার মতো মেয়ে কারো জীবন বাচাতে পারেনা।কিন্তু তাহলে আসল পরী কে?আর সে এখন কোথায়?সায়ান মিনু খালার দিকে তাকিয়ে দ্রুত প্রশ্ন করলো

“তাহলে সেই ছোট্ট পরী কোথায়?কোথায় পাবো আমি তাকে?”

“আমি নিজেও জানিনা সে কোথায় আছে আর কি অবস্থায় আছে আর এতোগুলো বছর হয়ে গেছে তাই সে ঠিক কেমন দেখতে তাও আমার মনে নেই। তুমি আসার প্রায় অনেক বছর আগে তাকে সেখান থেকে অন্যকেউ নিয়ে গিয়েছে হয়তো। কারণ তোমার মনে নেই হয়তো কিন্তু তুমি থাকা অবস্থাই আশ্রমে হঠাৎ ভয়ানক আগুন লাগে আর তুমি খুব অসুস্থ ছিলে সেই সময় আর সেই মেয়েটি তোমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে আগুনে পড়ে গিয়েছিলো! ততক্ষণে তোমার পরিবার তোমাকে এসে নিয়ে যায় আর ওই মেয়েটির কারণে তুমি অক্ষত অবস্থায় ছিলে।ওই মেয়েটির চিকিৎসার খরচ দিয়ে তোমার পরিবার সেখান থেকে চলে যায় আমরা ট্রিটমেন্ট করাই তাকে কিন্তু সে পুরোপুরি সুস্থ হয়না, এখনো হয়তো তার শরীরে পোড়ার দাগ আছে আর আমি যদি ভুল না হয়ে থাকি তবে পিঠে দাগ আছে হয়তো! যাইহোক আমাদের আশ্রমের অনেক ক্ষতি হওয়াতে আমরা সকল বাচ্চাকে এডপ্ট দিয়ে দিচ্ছিলাম তাই কে কাকে নিয়ে গেছে তা আমাদের জানা নেই শুধুমাত্র চন্দ্রিকা আর কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাইকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। পরী মেয়েটাকেও হয়তো কোন পরিবার নিয়ে গিয়েছিলো! যাইহোক তুমি যখন খোঁজ নিতে এসেছিলে তখন আগের কোন রেকর্ড আমাদের ছিলো না তাই না করে দিয়েছিলাম প্রথমে কিন্তু পরে টাকার লোভে পড়ে আমি মিথ্যের আশ্রয় নেই আর তাই হয়তো আজ আমার এই অবস্থা!”

সায়ান চুপ করে বসে রইলো,সেই ছোট্ট পরী ওকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের প্রান পর্যন্ত সংকটে ফেলে দিয়েছিলো অথচ ও আজ পর্যন্ত তাকে খুঁজেই পায়নি। ওর জীবন বাঁচানোর জন্য তাকে ধন্যবাদ দেয়া হয়নি, তার দায়িত্ব নেয়া হয়নি এমনকি ও জানেও না সে কি অবস্থায় আছে। ওর এই মস্ত বড় ভুলের জন্য সে কি তাকে ক্ষমা করবে?কিন্তু তাকে খুঁজে তো বের করতে হবে!সায়ান ধরা গলায় জিজ্ঞেস করলো

“তার কোন রেকর্ড!আমি তাকে কি করে খুঁজে বের করতে পারি?কিছু তো জানেন আপনি!”

“তার কোন রেকর্ডই নেই কারণ ওই আগুনে সব শেষ হয়ে গিয়েছিলো, আমার শুধু এইটুকু মনে আছে যে তাকে কেউ একজন আশ্রমের দরজায় ফেলে দিয়ে গিয়েছিলো। দামী তোয়ালে দিয়ে পেচানো ছিলো সে আর দেখে মনে হচ্ছিলো কয়েকঘন্টা পুর্বে সে হয়েছে! আর হ্যা…”

সায়ানের থেকে চোখ সরিয়ে উনি যেনো কিছু একটা খুজতে ছিলো আর পেয়েও গেলো।ছোট্ট একটা কৌটা থেকে একট চেইন বের করলো সাথে একটা লকেট! উনি এটা সায়ানের হাতে ধরিয়ে বললো

“এইটা সেই মেয়ের গলায় পরানো ছিলো আর আমি দামী হওয়ায় নিজের কাছে রেখেছিলাম। সেই সময় তোমাকে দেয়ার কথা মনে ছিলো না কিন্তু কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো তোমার সাথে দেখা হবে আর হয়েও গেলো। কোন দিন ওকে পেলে দিয়ে দিও এটা আর হ্যা বলো আমায় ক্ষমা করে দিতে!আমি এখন মরেও শান্তি পাবো।”

সায়ান চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর সাহিলকে ফোন করে বললো তাকে ভালো ওয়ার্ডে শিফট করতে, তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত অলরেডি হয়ে গেছে নতুন করে কিছু করার নেই। সায়ান আসতেই রুশি চিন্তিত মুখে উঠে দাঁড়ালো আর প্রশ্ন করলো

“কোথায় ছিলেন আপনি?সেই কখন থেকে ওয়েট করছি!”

“স্যরি বউ ওয়েট করানোর জন্য”

তারপর রুশিকে আস্তে করে হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো আর মৃদু গলায় প্রশ্ন করলো

“কি বলেছে ডক্টর?”

“বলেছে বাবু আর তার মা দুজনেই সুস্থ আছে!আচ্ছা আপনি কোথায় গিয়েছিলেন বললেন নাতো!”

“একজন পরিচিত মানুষের সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিলো তার সাথেই কথা বলেছিলাম। আচ্ছা তুমি যদি জানতে পারো এতোদিন তুমি ভুল তথ্য জানতে, তুমি যাকে নিজের লাইফ সেভিয়র ভাবতে সে আসলে তোমার জীবন বাচায়নি বরং সে অন্যকেউ ছিলো আর তুমি তাকে খুঁজেই পাওনি এখন পর্যন্ত। কি করতে তুমি?”

“চন্দ্রিকা তাহলে আপনার জীবন বাঁচায়নি তাইনা?”

“উঁহু!ছোট্ট পরী অন্যকেউ ছিলো আর আমি এতোবছর তা জানতামই না”

রুশির কেনো যেনো খুব খারাপ লাগলো আর ভয় হতে শুরু করলো। অনেকটা ভয় নিয়ে প্রশ্ন করলো

“যদি ছোট্ট পরীকে একদিন খুঁজে পান তবে কি করবেন?তাকে বিয়ে করবেন?”

সায়ান রুশির থমকে গেলো আর রুশির দিকে তাকালো, রুশি তখনো নিচের দিকে তাকিয়ে। ও রুশির হাত চেপে ধরে বললো

“আমি অলরেডি বিবাহিত রুশি!নতুন করে বিয়ে করার প্রশ্নই আসেনা,আমার বউ আছে ঘরে। কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার পার্থক্য আমি বুঝি যদিও তুমি আসার আগে ভালোবাসার মানে জানা ছিলো না কিন্তু এখন আমি এটা জানি তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। আমার শ্বাসপ্রশ্বাসে মিশে গেছো তুমি! যদি তাকে কোনদিন খুঁজেও পাই তবে সে আমার দায়িত্ব থাকবে, যদি ভালো অবস্থায় থাকে তবে আমরা দুজন মিলে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো আর যদি না থাকে তবে তার দায়িত্ব নিবো। তুমি তোমার হাজবেন্ডের ঋণ পরিশোধ করতে পাশে থাকবে না?”

রুশি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো, সায়ান ওকে ছেড়ে যাবে এটা ও জানে তবুও কেনো যেনো প্রশ্ন করলো! রুশি মুচকি হেসে বললো

“আমি সবসময় আপনার পাশে থাকবো!”

“প্রমিস করেছেন কিন্তু মিসেস খান! এইযে এই হাত ধরেছেন আর ছাড়া যাবে না কিন্তু, আপনি চাইলেও আমি ছাড়তে দিবো না”

“ওকে!”

রুশি কারের ভেতরে বসলো এমন সময় মেসেজ আসলো ফোনে। ও বের করতেই সায়ান আর নিহার কিছু ছবি দেখতে পেলো যা দেখে মনে হচ্ছে তারা খুব ইনটিমেট!সাথে একটা মেসেজ

“আমি ফোন থেকে সব ডিলিট করে দিয়েছি,তুমিও সেটা ডিলিট করে দাও”

রুশি বাঁকা হাসলো আর মেসেজ করে বললো

“ওয়েল ডান, আমি ওই রেকর্ডিংটা আসলে ডিলিট করতে চাইছিনা। যখন মুড ভালো থাকবে তখন করে দিবো নাহয় কে জানে তুমি আবার কখন কি করো!”

অপরপাশ থেকে মেসেজ আসলো না বরং সোজা ব্লক মেরে দিলো ওকে যা দেখে রুশি জোরেই হেসে দিলো!সায়ান ভ্রু কুচকে বললো

“কি নিয়ে হাসছো?আমাকেও বলো!”

“উঁহু বলা যাবে না সিক্রেট।”

“আজকাল মিসেস খান বড্ড সিক্রেট রাখছে দেখছি! এমনকি কি যা নিজের হাজবেন্ডের সাথেও শেয়ার করা যায়না?আর দুপুরে তুমি কি করে জানলে আমি ওইখানে আছি?আর ওই রুমেই বা কি হয়েছে?”

“সিক্রেট তো বলা যাবে না, আচ্ছা কোন একদিন বলবো ওকে?বাট আজকে না”

সায়ান সায় দিলো আর রুশি ফোন নাড়তে লাগলো!ওর নিজের বুদ্ধিমত্তার জন্য খুব প্রাউড ফিল করছে,ভাবতেই যেনো খুশি খুশি লাগছে। আসলে আজ সকালে সায়ানের কনভারসেশন ও শুনেছিলো কিন্তু নিহার হুট করে ওইখানে সায়নকে যেতে বলার কথা শুনে খটকা লাগলো। ও ভেবেছিলো সায়ান বলবে কোথায় যাচ্ছে তাহলে ও সাথে যাবে কিন্তু সায়ান কিছু বলেনি হয়তো টেনশনে ফেলতে চায়নি তবে রুশি নিশ্চিত হতে পারলো না তাই ওইসময় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরার বাহানায় নিজের ফোনের রেকর্ডার অন করে সায়ানের কোর্টে রেখে দিয়েছিলো। সায়ান ওর সাথে কথায় ব্যাস্ত থাকায় বুঝতে পারেনি, তারপর অনেক্ষন পর সায়ান না আসায় ও টেনশনে পড়ে যায়। এমনসময় নিহা ওর ফোনে কিছু ছবি পাঠায় যা দেখে ওর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ও নিজে তাই সেখানে যায় আর বডিগার্ডদের বলে দরজা খুলতে, তারা সেটা বিনা আওয়াজে খুলতেই ও ভেতরে গিয়ে দেখে নিহা কাঁদছে। ও কিছু না বলে সায়ানের জ্ঞান ফিরতেই তাকে ওই রুম থেকে যেতে বলে আর রুমে ঢুকে সায়ানের কোর্ট থেকে নিজের ফোন বের করে সেই রেকর্ডিং অন করে।

সবটা শুনে বুঝতে পারে নিহা সব আগে থেকেই প্লেন করে রেখেছিলো। ও সায়ানকে ঘুমের মেডিসিন দেয় আর সায়ান ঘুমিয়ে পড়ে। তারপর নিহালের সাহায্যে সায়ানকে রুমে এনে ওর কোর্ট খুলে পাশে রাখে আর ইচ্ছে করে বিভিন্ন এংগেলে ছবি তুলে ওকে পাঠায়। ওর ইচ্ছে ছিলো রুশি যাতে সায়ানকে ছেড়ে দেয় আর আবার এবাড়িতে ফিরে আসে তাহলে নিহালেরও একটা চান্স থাকবে। ওর পালক মাও এতে শামিল ছিলো তাই তিনি আগেই পাশের বাসায় চলে যান আর নিহাল চিলেকোঠায়!রুশি ওই রেকর্ডিং শুনাতেই নিহা ঘাবড়ে যায় কারণ এটা ওর স্বামীর কানে গেলে ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে যা ও এই মুহুর্তে চায়না আর তাই রুশি বলেছে সব ছবি, ভিডিও ওকে পাঠিয়ে তারপর ডিলিট করে দিতে নাহয় ও সব নিহার হাজবেন্ডকে দেখাবে!নিহা ভয় পেয়ে ও যা বলেছে তাই করেছে। আসলে কপাল বলে একটা জিনিস আছে, যেই পঁয়ত্রিশ বছরের লোকের সাথে রুশির বিয়ে দিতে চেয়েছিলো তারা সে এখন নিহার স্বামী! টাকা পয়সা দিক থেকে সুখে থাকলেও মানসিক দিকে থেকে ও সুখে নেই তা দেখেই বুঝা যায়!কথায় আছে না অন্যের জন্য কুয়া খুড়লে সেই কুয়াতে মানুষ নিজেই পড়ে! যা হয়েছে ভালোই হয়েছে এখন নিহা যদি শুধরায় আরকি নাহয় ও এখন আর ছেড়ে কথা বলবে না।

ওর স্বামী, ওর সংসার, সবকিছু ওর!তাতে অন্যকাউকে হস্তক্ষেপ করতে দিবে না আর একচুলও ভাগ দিবে। যা ওর তা নিজের করে কি করে রাখতে হয় তা ওর ভালো করে জানা আছে! অন্যসব দুর্বল নারীদের মতো ভুল বুঝে চলে যাবে না ও বরং সত্যের মোকাবিলা করবে!নিজের অধিকারে অন্যকাউকে ভাগ বসাতে ও দেবে না, কক্ষনো না!সায়ান যেহেতু ওকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছে এর মানে ও আর পিছু হটতে পারবে না, সারাজীবন ওর হয়েই থাকতে হবে সায়ানকে! এটা যদি পসেসিভনেস হয় তবে হ্যাঁ ও সায়ানের প্রতি পসেসিভ খুব বেশিই হয়তো কিন্তু যেটা ওর সেটা ওরই থাকবে!

#চলবে

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে