Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"গুমোট অনুভুতি পর্ব-১১+১২(প্রথমাংশ ও শেষাংশ)

গুমোট অনুভুতি পর্ব-১১+১২(প্রথমাংশ ও শেষাংশ)

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_১১

মিসেস খান দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতেই সায়ান সোফায় মাথা এলিয়ে দেয়, মাথা প্রচণ্ড যন্ত্রণা করছে একজন। বিজনেসের কাজে এই তিনদিন দেশের বাইরে ছিলো, রাত তিনটায় বাংলাদেশে এসে পৌঁছায় ও।তাই নিজের অফিসের সাথে এডজাস্ট করা বেডরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মাত্রই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখন সাহিল ফোন করে বলে যে “মিসেস খান গাজীপুরের খামার বাড়ির দিকে যাচ্ছেন”

কথাটা শুনে দ্রুত জেকেট পরে বেরিয়ে পড়ে, এই মুহুর্তে ওর ঘুমের প্রয়োজন ছিলো খুব তাই হয়তো মাথা এমন করছে!এ তিনদিন অপরাধ বোধ সায়ানকে কুড়ে কুড়ে খেয়েছে,ওর প্রত্যেকটা মুহুর্ত মনে হয়েছে ও চন্দ্রিকে ঠকাচ্ছে। সেটার অবশ্য যথেষ্ট কারণ রয়েছে!

সেদিন এখান থেকে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ও এই মেয়েটির কথা ভেবেছে, কেনো ভেবেছে তার কারণ জানা নেই ওর কিন্তু ও ভেবেছে! কেয়ারটেকারের কাছ থেকে প্রতিমুহূর্ত এই মেয়েটির খোজ নিয়েছে ও। মেয়েটি কি করছে, ওর মুড এখন কেমন আর ওর শরীরের অবস্থা কেমন!যদি কখনো খুব বেশি মিস করেছে তবে ভিডিও কলের মাধ্যমে এক নজর মেয়েটিকে দেখে নিয়েছে। মেয়েটির হাসিমাখা মুখ,গম্ভীর মুখ, চিন্তিত মুখ বা অবাক চাহনি সব কিছুই যেনো দেখতে খুব সুন্দর লাগে! মনে শত ব্যস্ততার মাঝে একটু প্রশান্তি! কিন্তু কেনো এমনটি করেছে ওর জানা নেই,ও এই প্রথম নিজের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করেছে!

আর যতোবার করেছে ততবার মনে হয়েছে ও চন্দ্রিকে ঠকাচ্ছে, ভীষণ ভাবে ঠকাচ্ছে।এভাবে কোনদিন ও চন্দ্রির খোজ নেয়নি,না কখনো ব্যস্ততার মাঝে ওকে দেখতে চেয়েছে। সবসময় চন্দ্রি ওকে কল করেছে, সত্যি বলতে ও কখনো নিজ থেকে খোজ নেয়নি ওর। তাই নিজেকে ভীষণ ছোট মনে হচ্ছিলো! তাইতো গতকাল সারাদিন ও মেয়েটির খোজ নেয়নি, নিজেকে ব্যাস্ত রেখেছে হাজারো কাজের ভীরে! কিন্তু নিজের একাকিত্ব সময়ে সবার প্রথম এই মেয়েটির কথা মনে পড়েছে, শেষমেশ আর না পেরে মেয়েটিকে শুধু একটি নজর দেখে নিয়েছিলো! ওই ঘুমন্ত মুখ খানায় ছিলো হাজারো মায়ার ভীড়! অবাধ্য মন নিজের অজান্তেই প্রেমে পড়তে চেয়েছিলো কিন্তু ও তা হতে দেয়নি। ওযে ওয়াদাবদ্ধ! আজীবন কাউকে ভালোবাসার ওয়াদাবদ্ধ। কিন্তু কিছুতেই যেনো নিজের অশান্ত মনকে শান্ত করতে পারছে না।

সত্যি বলতে ও দ্রুত পায়ে এখানে মিসেস খানকে ওদের বিয়ের সত্যিটা বলতে বাঁধা দিতে আসেনি। বরং ওর মনে হয়েছে মিসেস খান যদি মেয়েটিকে কিছু বলে?এই ছোট্ট মেয়েটি কিভাবে সামাল দিবে সেটা। আর যাইহোক ও মেয়েটিকে কোন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চায়নি। আর এখানে আসার পর ও তাদের কথা বার্তা প্রায় অনেকটাই শুনেছে! রুশি যখন বলেছে সে মিসেস খান ব্যাবস্থা করে দিলে ও চলে যাবে তখন ওর খুব রাগ হয়েছিলো। মেয়েটি কি ওকে ভরসা করে ওর সাথে থাকতে পারছেনা?আবার যখন খান বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছিলো তখন ও পারেনা ছুটে এসে মেয়েটিকে লুকিয়ে রেখে দেয়।ও ভাবতেই পারছিলো না যে ও মেয়েটিকে কারণে অকারণে দেখতে পারবে না! ওর মনে হচ্ছিলো

“ওর বউকে অন্য কেউ কেনো নিয়ে যাবে?ওর বউ ওর কাছে থাকবে”

তাইতো ওর বউয়ের হাজবেন্ড হিসেবে বলেছিলো

“ওর আপত্তি না থাকলেও আমার ঘোর আপত্তি আছে”

আর যাইহোক ওর বউকে ও কোথাও যেতে দিবে না, কিন্তু নিজের ভাবনায় নিজেই যেনো বোকা বনে গেলো। ওর হঠাৎ হাজবেন্ডের মতো কেনো আচরণ করছে যেখানে মেয়েটিকে কোন অধিকারই দিচ্ছেনা! শুধু মাত্র নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। ওকি তবে নিজের অবাধ্য আবদারের বেড়াজালে মেয়েটিকে জড়িয়ে ফেলছে না? তাকে কি মিথ্যে আশা দিচ্ছেনা?

সায়ান আর ভাবতে পারছেনা, সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এতোদিন তো খুব ভালোই ছিলো ও, নারী নামক সত্তা নিয়ে কোন ভাবনাই ছিলো না ওর। চন্দ্রিকা তার মতো ছিলো আর ও নিজের মতো। কথা ছিলো চন্দ্রিকার গ্র‍্যাজুয়েশন কমপ্লিট হলেই বিয়ে কিরে নিবে দুজন কিন্তু এখন এই মেয়েটির সাথে সাথে চন্দ্রিকে নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যদি চন্দ্রি জেনে যায় তবে কি হবে? বা এই মেয়েটি যদি হুট করে হারিয়ে যায় তবে কি করবে?
এসব অসংযত অনুভুতির কিছুই বুঝতে পারছে না ও!

মাথা যেনো প্রচণ্ড ভারী লাগছে তাই ভাবলো মেয়েটিকে একটু অনুরোধ করবে ওর মাথা টিপে দেয়ার জন্য!তাই চোখ খুলে মেয়েটির দিকে তাকালো, মেয়েটির মুখে একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে যেনো কিছু বুঝার চেষ্টা করছে! সায়ান ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকালো আর মুহুর্তেই দাঁড়িয়ে পড়লো। ওর সবচেয়ে বড় ভয় ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে!সায়ান যেনো বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।

চন্দ্রিকা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে ওর দিকে, চোখ দুটোতে যেন হতাশা, অসহায়ত্ব আর কষ্ট সব একসাথে প্রকাশ পাচ্ছে।ওর দৃষ্টি যেনো বলে দিচ্ছে

“আমার এতোকালের ভালোবাসা, বিশ্বাসের এই প্রতিদান দিলে তুমি?কি দোষ করেছি যাতে তুমি এভাবে শেষ করে দিলে আমায়!”

“চন্দ্রি! আমি…আই কেন এক্সপ্লেইন!”

“কি বলবে কিভাবে আমাকে ধোঁকা দিয়েছো? কি ভাবে আমাকে আশা দিয়ে দিনের পর দিন অন্যের সাথে সংসার করে গেছো? এই জন্যই আমাকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাইছিলেনা তাইনা?কারণ বাইরে তো রঙলিলা বসিয়েছো!আমার এতো ভালোবাসার পরিবর্তে তুমি এই প্রতিদান দিলে?আমি কি এটা ডিজার্ভ করতাম?”

রুশি চন্দ্রি নামটা শুনেই মেয়েটির দিকে গভীর ভাবে তাকালো, তাহলে এই মেয়েটিই চন্দ্রিকা যাকে তার স্বামী ভালোবাসে! মিসেস খান যাওয়ার প্রায় কয়েকমিনিট পরেই এই মেয়েটি এখানে এসেছে তবে বিনাশব্দে দাঁড়িয়ে ছিলো। মেয়েটি খুব সুন্দর দেখতে যাকে বলে অপরুপা,গৌর মুখখানি যেকোন সাধু পুরুষকেও প্রেমে পড়তে বাধ্য করবে। অসম্ভব সুন্দর মেয়েটি! নো ডাউট সায়ান জামিল খান এই মেয়েটিকে ভালোবাসে। ভালোবাসারই কথা! খান বাড়ির বউ হওয়ার জন্য এর থেকে বেটার অপশন হতেই পারেনা। দে আর মেড ফর ইচ আদার!

রুশির মনে এখানে থেকে ওর কোন লাভ নেই,দুজন ভালোবাসার মানুষের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে কি লাভ! তাই দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে ও নিজের রুমের দিকে রওনা দিলো,বুকের বাঁ পাশে হাল্কা চিনচিন ব্যথা করলেও তা পাত্তা দিলো না। যতই তার স্বামী সে এখন অন্যকারো আমানত, আর অন্যের আমানতে রুশি কখনোই নজর দিবে না। কখনোই না!

রুশির কয়েকপা এগুতেই কেউ একজন ওর হাত চেপে ধরে তার দিকে ঘুরালো আর কিছু বুঝে ওঠার পুর্বেই থাপ্পড় মারলো। রুশি যেনো আকাশ থেকে পড়লো, এভাবে কারো কাছ থেকে কখনোই ও মার খায়নি। সামনের মেয়েটি আবার হাত উঠাতেই ও চোখ বন্ধ করে নিলো কিন্তু কোন কিছু অনুভুত না হওয়ায় চোখ খুললো আর দেখলো সায়ান হাত চেপে ধরে আছে তার। চন্দ্রি ওর দিকে তাকাতেই সায়ান চড়া গলায় বললো

“তোমার যা বলার যা করার আমার সাথে করো, এখানে রুশানির কোন দোষ নেই তাই ওর গায়ে তুমি কেনো হাত তুলেছো?সে স্যরি টু হার”

প্রায় সাথে সাথেই চন্দ্রিকা হাত নামিয়ে ফেললো আর বিস্ময় নিয়ে বললো

“তুমি আমার সাথে আগে কখনো এভাবে কথা বলোনি সায়ান! তুমি আমাকে বকা দিচ্ছো তাও এই মেয়ের জন্য?তুমি অনেক বদলে গেছো, অনেকটা!”

চন্দ্রিকার ফুঁফিয়ে কান্না দেখে রুশির বেশ মায়া হলো, মেয়েটির কোন দোষ নেই এখানে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে কেউ কখনো কারো সাথে শেয়ার করতে পারে না আর যদি ভালোবাসা গভীর হয় তবে তো সেটা কল্পনাও করতে পারেনা। তবে এই পরিস্থিতিতে ওরও কোন দোষ নেই, ও না চাইতেও তাদের মাঝখানে চলে এসেছে। তাই রুশির মনে হলো ওর সবটা ক্লিয়ার করা দরকার তাই ও কিছুটা দম নিয়ে মেয়েটির টলমলে চোখের দিকে তাকিয়ে বললো

“দেখুন আপনি যা ভাবছেন তেমন কিছুই না,আপনার ভালোবাসার মানুষ আর আমার মাঝে তেমন কোন সম্পর্ক নেই। যা আপনার তা আপনারি আছে!আমি আপনাদের মাঝে কখনোই…”

রুশি শেষ করার পুর্বেই মেয়েটা যেনো তেড়ে আসলো আর রাগি কন্ঠে বললো

“আমাদের মাঝে তোমাকে কে কথা বলতে বলেছে?তুমি আসোনি বলেও তো এসে গেছো আমাদের মাঝে। আমি সায়ানকে ভালোবাসি কিন্তু তুমি তার সাথে বিয়ে করেছো আর তার বাচ্চার মা হতে চলেছো তাহলে তুমি কি করে আমাদের মাঝে আসোনি বলো?”

কথাগুলো বলে চন্দিকা বসে পড়লো ফ্লোরে, যেনো সে নিঃস্ব হয়ে বসে আছে। একটা মেয়ের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তার জীবনসঙ্গী, সে মানুষটিই তার না হলে জীবনটাই যেনো মুল্যহীন। সায়ান রুশির দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বললো

“আই এম স্যরি!আমি ভাবিনি এমন কিছু হবে।আমি…”

রুশির মাথা নাড়লো তারপর রুমের দিকে আগাতে শুরু করলো,মুখে ফুটে উঠলো তাচ্ছিল্যের হাসি। সেই তো এখানের তৃতীয় ব্যাক্তি হচ্ছে ও! তাই চলেতো ওকেই যেতে হবে। ওতো আর কারো প্রতি অধিকার দেখিয়ে বলতে পারবে যে এটা আমার। না নিজের স্বামীকে না নিজের অনাগত বাচ্চাকে। এর বড় অসহায়ত্ব আর কি হতে পারে?

“কেনো তোমাকে পেয়েও
আমার পাওয়া হলো না?
কেনো এতো অধিকার থাকা
সত্ত্বেও তা জমানো হলো না?
কেনো তুমি, আমি মিলে
আমরা হওয়া হলো না!”

রুশিকে রুমের দিকে এগোতে দেখে চন্দ্রিকাও দাঁড়িয়ে পড়লো,যে অধিকার পাওয়ার জন্য ও এতোদিন ধরে প্রহর গুনেছে। প্রতিনিয়ত স্বপ্ন বুনেছে সায়ানের বউ হওয়ার,সেটা আজ অন্য কেউ!সায়ানের জীবনে অন্যকেউ আছে সেটা মানা যে কতোটা যন্ত্রণার তা ভাষায় প্রকাশ সম্ভব নয়। ও দৌড়ে বেরিয়ে পড়লো সেখান থেকে, এখানে আর এক মুহুর্তও নয়।

আর দুই নারীর দুদিকে চলে যাও নিশ্চুপে দেখলো। যেই মুহুর্তের সবচেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছিলো তাই ঘটেছে আজ। সত্য লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয় তা নিজের স্বচক্ষে দেখলো। কোন দিকে যাবে ও?
এক দিকে এতোকালের ভালোবাসা অপরদিকে দায়িত্ব! দায়িত্ব আর ভালোবাসার বেড়াজালে ও ঝুলে আছে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে,,,

#চলবে

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_১২(প্রথমাংশ)

সায়ান ধীরস্থির ভাবে উঠে দাঁড়ালো, সদর দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে সেটা বন্ধ করে গেস্টরুমের দিকে এগুলো। এই বাড়িতে ওর রুমে বর্তমানে রুশি থাকে তাই গেস্টরুমের দরজার খুললো, রুশির রুমের দিকে একবার তাকিয়ে তারপর রুমে ঢুকে গেলো। এই মুহুর্তে ওর ঘুমের প্রয়োজন তারপর ঠান্ডা মাথায় ভাববে কি করা যায়, আপাদত নিজেকে শান্ত করা প্রয়োজন!

ও কখনোই চায়নি চন্দ্রিকা ওর বিয়ের সত্যিটা জানুক কারণ চন্দ্রিকা খুবই নরম মনের মানুষ তাই যেকোন ভুল করে ফেলতে পারে! সত্যি বলতে ওর কিছুটা চিন্তা হচ্ছে কিন্তু ও এখন চন্দ্রির কাছে গেলেও বিশেষ লাভ হবে না। এর থেকে ভালো ও কিছুটা সময় নিয়ে শান্ত হোক তারপর নাহয় ঠান্ডা মাথায় বুঝানো যাবে!

সায়ানের মাথায় চট করে কিছু একটা আসলো আর তাড়াহুড়া করে উঠে বসলো। আচ্ছা রুশানি ব্যাপারটাকে কিভাবে নিয়েছে?ওতো চন্দ্রিকার বিষয়ে জেনে গেছে,এবং এটাও জানে ও চন্দ্রিকাকে বিয়ে করবে তবে ওকে খারাপ ছেলে ভাবছে?ভাবছে অন্য ছেলেদের ও চরিত্রহীন যে কিনা দুটো মেয়েকে একসাথে রাখছে কিন্তু এমনটা তো চায়নি।মুহুর্তেই যেন সায়ানের মন গ্রাস করলো একরাশ বিষণ্ণতা,হঠাৎ করেই যেনো মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেলো! রুশি ওকে খারাপ ভাববে ব্যাপারটা যেনো ও মেনেই নিতে পারছেনা, এতোটা খারাপ লাগছে কেনো ওর।

তবে কি তাকে গিয়ে বলবে যে সে যা ভাবছে তা সত্য নয়?ও চন্দ্রিকার ততটা কাছে আজ অবদি যায়ই নি কিন্তু তাকে বিয়ে করতে চেয়েছে। ও কাউকে ঠকায়নি শুধু পরিস্থিতির স্বীকার!কিন্তু এটাই বা কিভাবে নিবে রুশি?যদি ভাবে আমি একসাথে দুজনের মন জুগিয়ে চলছি!আচ্ছা আমরা নাহয় স্বামী স্ত্রী না হলাম তবে আমরা ভালো বন্ধু হতে পারিনা?আমি যদি তার বন্ধু হতে চাই তবে সে কি মেনে নিবে আমায়?

এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সায়ানের চোখে ঘুমেরা ভর করলো, তলিয়ে গেলো ঘুমের অতল রাজ্যে।

তার ঠিক পাশের কামরায় রুশি তাকিয়ে আছে দূরের ঐই বিশাল আকাশের দিকে, খণ্ড খণ্ড মেঘেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে সমস্ত আকাশ জুড়ে। সাদা-নীলের এই অদ্ভুত খেলা দেখতে মগ্ন সে,এখন রাত নয় তাই আকাশ জুড়ে তারাদের ভেলা নেই। যদি থাকতো তবে একা থাকতো না, খুব কাছের একজন এর সাথে কথা বলতো প্রাণ খুলে। নিজের জমানো সকল কথার ঝুড়ি খুলে বসতো, আর সে নিশ্চুপে সব শুনে যেতো। মাঝে মাঝে বড্ড ভাবে! আচ্ছা এই ও সেই মানুষটির সাথে এতোএতো কথা বলে, সে কি আদোও একবার হলেও তাকে ভেবে আকাশ পানে তাকায়? তার কথা মনে করে করে তারাদের সাথে কথা কয়?হয়তো না! কিন্তু ও বলে আর আজীবন বলে যাবে।

খুব মনে পড়ে ওই দিনের কথা যখন দুজন পাশাপাশি বসে ছিলো খোলা আকাশের নিচে হাজার তারার ভীড়ে। রুশি তখন খিলখিল করে হেসে হাত বাড়িয়ে বলেছিলো

“ওই যে ওই ছোট্ট তারাটা সেটা হচ্ছি আমি আর পাশের যে একটু বড় তারা সেটা হচ্ছো তুমি। যখন আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হবে তখন ওই তারার সাথে বলবে আর আমি সব শুনতে পাবো”

তখন সে মাথায় হাল্কা গাট্টা মেরে বলেছিলো

“কেনো রে আকাশের সাথে কি তোর কান ফিট করা যে ওই তারাকে কিছু বললেই তুই শুনতে পাবি?”

তখন ও রেগে বলেছিলো

“আরে তুমি বলেই দেখোনা! আমি ঠিক সব শুনতে পাবো”

কথাগুলো ভেবেই রুশির হাসি পেলো, কতোটা অবুঝ ছিলো ও!আচ্ছা সে কি এখন তারাদের সাথে কথা বলে? তবে ও শুনতে পায়না কেনো? বাকি সে বলেই না তাই হয়তো শুনতে পায়না ওর।চেহারা,জায়গা সবকিছুই অস্পষ্ট ওর তবে কথাগুলো আজোও মনে আছে যেনো এইতো সেইদিন ও তার সাথে বসে ছিলো।টাইম ফ্লাইস!এখন আর ও ছোট্টটি নেই বরং বড় হয়ে গেছে আর শিগ্রই মা হতে চলেছে। সে দেখলে হতে হাসি দিয়ে উড়িয়েই দিতো আর বলতো

“তুই মা হবি?এটুকু পেটে বাচ্চা কই রাখবি?হাহাহা”

আজ সবকিছু ঝাপসা ওর কাছে, সে মানুষটি, সে নাম আর সম্পর্ক। সবকিছু ঝাপিয়ে ও আজ অন্য কেউ,সম্পুর্ণ নতুন কেউ!

দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বিছানায় এসে বসলো রুশি, এজীবনে অনেক মানুষকে হারিয়েছে ও,কাউকে হয়তো ইচ্ছে করে আর কাউকে অনিচ্ছাকৃত। কেনো যেনো সবাই ওকে ছেড়ে চলে যায়!

______________________

গাজীপুরে এখন রাত আর এই নির্জন এলাকার জন্য এটি প্রায় গভীর রাত। বাইরে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। দোতলা খামার বাড়িতে এই মুহুর্তে চামচ নড়াচড়ার শব্দ ব্যতীত অন্য কোন শব্দই শোনা যাচ্ছে না। সায়ান এই পর্যন্ত প্রায় তিনবার সিঁড়ির দিকে তাকিয়েছো কিন্তু হতাশ হয়েছে। খাবারের প্রতি কেমন যেনো একটা অনীহা জমে গেছে। সায়ানের দৃষ্টি অনুসরণ করে কেয়ারটেকারও সিঁড়ির দিকে তাকিয়েছো, প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বেশ বুঝতে পারলো বারবার ওইদিকে তাকানোর কারণ। তাই কিছুটা সাহস জোগাড় করে বলেই ফেললো

“স্যার আপনি কি রুশানি ম্যাডাম কে খুঁজছেন?”

সায়ান চামচ নড়াচড়া বন্ধ করে দিলো তারপর গলা পরিষ্কার করে বললো

“তেমন কিছু নয়, আমি জাস্ট ভাবছি এতোক্ষনে তো ডিনার করার কথা তার তাহলে এখনো আসছে না কেনো?”

“স্যার আসলে ম্যাম তো প্রেগন্যান্ট তাই এতোরাত পর্যন্ত না খেয়ে থাকেন না। উনি আগেই খেয়ে নিয়েছেন তাই এখন আর খাবেন না, হয়তো গভীর রাতে আবার কিছু খাবেন!”

কথাগুলো শেষ হতেই সায়ান নিজের ঘড়ির দিকে তাকালো,নয়টা বাজে এখন। তাই বলে এতো তাড়াতাড়ি খাবে?আগে তো এতো তাড়াতাড়ি খেতো না?তবে ওকে ইচ্ছে করে এভোয়েড করছে?সায়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো, তাহলে কি ও এখানে আছে বলেই আজ সারাদিন রুম থেকে বের হয়নি!
সায়ান না খেয়ে উঠে গেলো আর রুমের দিকে চলে গেলো, অজানা মন খারাপ ভর করলো ওর মন জুড়ে। যেটা ক্রমশ সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে যেতে লাগলো, বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা ক্রমশ বেড়েই চলছে। বুক কেমন ভারী ভারী লাগছে ওর!
.
.
.
রাত ১২তা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট, রুশি বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে। কিছুক্ষণ পুর্বেই ঘুমটা হঠাৎ ভেংগে গিয়েছে, এটা ওর নিত্য দিনের অভ্যস। এই সময়টায় কিছু না কিছু একটা খায়া ও, আজ তিনদিন ধরে টানা এই রেওয়াজই চলে আসছিলো তবে আজকের নিয়মটা ভিন্ন।

ও ভেবেছিলো সায়ান চন্দ্রিকার পিছু পিছু এখান থেকে চলে যাবে, কিন্তু ও যে ঘাপটি মেরে বসে থাকবে এখানে তা ধারণার বাইরে ছিলো ওর। আজব প্রেমিকা মুখ ফুলিয়ে চলে গেছে কই তাকে গিয়ে মানাবে তা না করে এখানে বসে আছে কেনো? এই তিনদিনে বাড়িটাকে কেমন নিজের নিজের মনে হচ্ছিলো, হুট করেই আজ যখন সায়ান থেকে গেলো তখন মনে হচ্ছে বাড়িটা অন্য কারো। কেনো যেনো ওর বিরক্তি লাগছে আবার কোথাও না কোথাও ভালোও লাগছে। দুটো সম্পুর্ণ বিপরীত অনুভুতি একই সাথে কাজ করছে,,,

উফফ পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে মনে হচ্ছে, রুশি পেট চেপে ধরে উঠে বসলো। নাহ এখন কিছু না খেলে কিছুতেই ঘুম আসবে না, আর সায়ান নিশ্চই এতো রাতে জেগে বসে নেই। তাই তার সাথে দেখাও হবেনা। নিজেকে কোনরকম সান্ত্বনা দিয়ে নিচে নেমে আসলো, যা ভেবেছিলো ঠিক তাই। পুরো ডাইনিং রুম জুড়ে অন্ধকার আর পিনপিন নিরবতা মানে এখানে কেউ নেই। রুশি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সামনে এগোলো। ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে ফ্রিজ আইস্ক্রিম বের করে এক কামড় খেলো তারপর ফ্রিজ অফ করে সামনে ফিরতেই একটা কালো অবয়ব দেখতে পেলো। ভয়ে রুশির আত্মা কেঁপে উঠলো, হাত থেকে ফোন, আইস্ক্রিম ফেলে দিয়ে দিলো এক চিৎকার তারপর ফ্লোরে বসে পড়লো। সারা শরীর থর থর করে কাঁপছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই মৃদু হাসির শব্দ পেলো সাথে মৃদু আলো চোখে এসে পড়লো।

সামনে তাকিয়ে দেখে সায়ান এক হাত কোমরে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর চোখে মুখে খুশি খেলে যাচ্ছে। রুশি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস নিলো, কি ভয়টাই না পেয়েছিলো! আরেকটু পর হয়তো হার্ট অ্যাটাক করতো। নাক ফুলিয়ে সায়ানের দিকে তাকালো তারপর উঠে দাঁড়ালো তারপর চড়া গলায় বললো

“মারতে চান নাকি মানুষকে? এভাবে কেউ ভুতের মতো সামনে এসে দাঁড়ায়?”

“বাহ তুমি চোরের মতো মতো রাতবিরাতে ফ্রিজ থেকে আইস্ক্রিম চুরি করে খাচ্ছো তাতে কিছুনা আর আমি চোর ভেবে ধীর পায়ে পেছনে এসে দাঁড়ালেই সমস্যা?”

“আমি চোর? আপনি আমাকে চোর বললেন? আপনার খাবার খাচ্ছি বলে খোটা দিচ্ছেন?”

“তা কেনো দিবো? আমি তো বললাম চোরের মতো করে খাচ্ছো আর চোর রা তো চুরি করেই খায় তাইনা?লাইট অফ করে চুপিচুপি কেনো খেতে হবে তোমার? লাইট অন করে খেতে পারোনি!তোমার খাবার কি কেউ নিয়ে যাচ্ছে?”

রুশি মুখ ভেংচি দিয়ে বললো

“সেটা আমার ব্যাপার আমি কিভাবে খাবো না খাবো। আপনার নাক গলাতে হবে না”

“সে নাহয় বুঝলাম তোমার খাবার তোমার ইচ্ছে অনুযায়ী খাবে। তাই বলে আইস্ক্রিম কেনো খাচ্ছো? ঠান্ডা লেগে যাবে না?আর বেবির ক্ষতি হবে না?”

“আমার বেবি আমি বুঝবো। আপনার নাক গলানোর প্রয়োজন নেই”

সায়ান রুশির দিকে ঝুকে বললো

“বেবিটা তো তোমার একার না!আমি বেবির বাবা তাই নাক তো গলাতেই হয়”

“হুহ আমি বেবির বাবা! এই আপনি না কি সুন্দর আপনি আপনি বলতেন?ফুড়ুৎ করে তুমিতে নেমে এলেন কেনো?”

“আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই তোমাকে তুমি করেই বলবো কোন সমস্যা?”

রুশি সায়ানের কথা শুনে নাক ছিটকালো তারপর হাল্কা আওয়াজে মুখ বাকিয়ে বললো

“আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি বলবো তোমার সমস্যা?হুহ ঢং দেখলে বাঁচিনা!পুরুষ গিরগিটির মতো খনে খনে কথা বদলায়”

পরের লাইনটুকু সায়ানের কানে এলোনা, ততক্ষণে রুশি সিঁড়ি অবদি চলে গিয়েছে। রুশির পাগলামি দেখে সায়ান নিঃশব্দে হাসলো, তারপর চিপস হাতে নিয়ে রুশির ঘরের দিকে এগোলো নাহয় মেডাম আবারও খাবারের খোজে নিচে আসবেন!

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_১২(দ্বিতীয়াংশ)

সময়টা বিকাল!পশ্চিম আকাশে সূর্যের উত্তাপ কম। হাল্কা বাতাস বইছে চারদিকে। বিশাল দোতলা বাড়িতে জিনিসপত্র সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, কাচ ভেংগে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সবকিছুর এই এলোমেলো অবস্থা চুপচাপ বসে দেখছে সায়ান। এই সবকিছুই গতোকালের দৃশ্য, চন্দ্রিকা কাল ফিরে এসে পুরো বাড়ি জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে, হয়তো রাগে, ক্ষোভে, বা ব্যাথায়!তারপর নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে আছে।অন্যকেউ হলে সায়ান হয়তো ভয় পেতো কিন্তু ও চন্দ্রিকে খুব ভালো করে চিনে। ও খুব দুর্বল মনের এবং ভীতু,তাই সাহস করে নিজের ক্ষতি কখনোই করবে না বরং তাকে যে কষ্ট দিয়েছে তাকে নিজের কষ্ট বুঝানোর চেষ্টা করবে। সায়ান দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো তারপর একজন মেইডকে ডেকে বললো

“এই সব কিছু ঠিক করোনি কেনো? আর সব নতুন করে আনা হয়নি কেনো?”

মেইড মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে,রীতিমত কাঁপছে।সায়ান কাউকেই বকা দেয়না কিন্তু এই বাড়ির প্রত্যকটা জীব তাকে অদ্ভুতভাবে খুব ভয় পায়।মেইড মিনমিনিয়ে বলে উঠলো

“স্যার চন্দ্রি ম্যাম নিষেধ করেছে, বলেছে এই বাড়ির পরিস্থিতি এমনি থাকবে নাহয় আমাদের সবাইকে ফায়ার করে দিবে”

সায়ান কিছু বললো না, এ বাড়িতে চন্দ্রি কর্তীর মতো। সায়ান কথার মতো চন্দ্রির কথাই এখানে শেষ কথা,যদিও চন্দ্রির জন্য সায়ান আলাদা জায়াগায় থাকার ব্যাবস্থা করেছে কিন্তু মাসের বেশিরভাগ সময় চন্দ্রি এখানেই থাকে। সায়ান চন্দ্রিকে এই বিষয়ে কখনো কিছু বলেনি তবে এই ছাদের নিচে প্রাপ্তবয়স্ক দুজন নারীপুরুষ থাকা ওর পছন্দের ছিলো না তাই ওর অফিসের এটাচড বেডরুমে থাকতো নাহয় খুব রাত করে বাড়ি ফিরতো যাতে চন্দ্রি ঘুমিয়ে পড়ে। মাঝেমাঝে খুব বিরক্ত হতো যখন দেখতো চন্দ্রি ওর রুমে এসে ঘুমিয়ে আছে কিন্তু কিছু বলে নি। চুপচাপ গেস্টরুমে গিয়ে শুয়ে পড়তো!
ও জানে চন্দ্রিকে ও একটা সময় বিয়ে করবে কিন্তু বিয়ের আগে চায়নি কোন ভুল করতে, চায়নি কেউ চন্দ্রির নামে কিছু বলুক বা কোন অশালীন শব্দ জুড়ে দিক। কিন্তু চন্দ্রি এইসব বিষয়ে বড্ড উদাসীন! ওর একই কথা

“আমাদের তো বিয়ে হবেই তবে কেউ যদি এখন আমাকে রক্ষিতা বলে আই ডোন্ট কেয়ার। আমাদের বিয়ের খবরে সে এমনি জবাব পেয়ে যাবে”

তখন সায়ান কিছুটা ভেবে বললো

“ধরো যদি কোন কারণে আমাদের বিয়ে হলো না তখন তুমি কি করবে তাহলে। এই সমাজের মানুষ বড্ড খারাপ। আজ আমার উপর হয়তো তোমায় কিছু বলতে পারছে না কিন্তু আমি কোন একদিন না থাকলে তারা জঘন্য থেকে জঘন্যতম শব্দ ব্যাবহার করবে তোমায় ব্যাখ্যা করতে গিয়ে। আর নারী হিসেবে এর চেয়ে গ্লানির কি হতে পারে?তোমার আত্মসম্মান তোমার রক্ষা করতে হবে,তোমার আত্মসম্মানবোধ থাকতে হবে”

কিন্তু সায়ানের কথা চন্দ্রিকার মাথায় কতটুকু ঢুকেছে তা বোধগম্য হয়নি। চন্দ্রি হঠাৎ টলমলে চোখ নিয়ে বললো

“তাহলে তুমি বলতে চাইছো তুমি আমায় বিয়ে করবে না?আমার হাত মাঝ পথে ছেড়ে দিবে?তুমি তো হাত সারাজীবন ধরে রাখার ওয়াদা করেছিলে তা এতো তাড়াতাড়ি ভুলে যাবে?তুমি কি অন্যকাউকে ভালোবাসো সায়ান?”

“আমি অন্যকাউকে ভালোবাসিনা আর বাসবোও না। আমি তোমার সাথে সারাজীবন থাকার ওয়াদা করেছি তা ঠিক তবে ভাগ্যের উপর কিন্তু আমার হাত নেই। আমি চাই আমাদের বিয়ে হওয়া পর্যন্ত তুমি আর আমি নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখি”

কিন্তু চন্দ্রি কখনোই তা শুনে নি বরং দিন দিন বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছিলো তাই সায়ান চেয়েছিলো সামনের বছর তারা বিয়ে করে নিবে কিন্তু তার মাঝেই ওদের জীবনে রুশি চলে এসেছে। মেয়েটার কোন দোষ নেই, ওর অত্যন্ত জটিল জীবনে না চাইতেও জড়িয়ে গেছে সে। তারউপর রুশির প্রতি এই কয়দিনের অবান্তর অনুভুতি! আচ্ছা একটা মানুষ কি একসাথে দুটো মানুষকে ভালোবাসতে পারে?এটা কি আদোও সম্ভব!আর যাইহোক এতটুকু বুঝদার তো হয়েছে সে যে এই অনুভুতি কোন প্রকার দয়ার নয় বরং অন্যকিছু। তাহলে রুশির প্রতি এই অনুভুতির মানে কি?এটা শুধুই ক্ষনিকের আবেগ নাকি মোহ।

যদি ওর জীবনে চন্দ্রিকা না থাকতো তবে ও হয়তো ভেবেই নিতো যে ও রুশির প্রেমে পড়ে গেছে যাকে বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইড। তবে এই অবান্তর অনুভুতিকে নিছক মোহ ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারছে না, হয়তো বিয়ে করেছে বলে নিজের ভাবতে শুরু করেছে তাই এমন অনুভুতি কাজ করছে। কিন্তু তিনবছরের সম্পর্কে মায়া না বাড়িয়ে কি লাভ? এতে চন্দ্রকার এতো বছরের ভালোবাসাকে অসম্মান করা হবে, ওকে মনে প্রাণে শুধুমাত্র চন্দ্রিকার হতে হবে। নিজের অবাধ্য মনকে বাধ্য করতে হবে, আর যাইহোক চন্দ্রিকাকে ঠকাতে পারবে না ও!বিড়বিড় করে বলতে লাগলো

“আমার তোমাকে ভুলতে হবে, অন্যকারো জন্য হলেও ভুলতে হবে যে আমায় নিজের চেয়েও অনেক বেশি ভালোবাসে”

সায়ান চন্দ্রির রুমের দিকে এগিয়ে গেলো, তারপর হাল্কা করে নক করলো সাথে সাথে দরজা খট করে খুলে গেলো।চন্দ্রিকা টলমলে চোখ নিয়ে আসলো তারপর হাল্কা কন্ঠে বললো

“মরে গেছি কিনা তাই দেখতে এসেছো?তুমি কি করে আমার স্থান এতো সহজে অন্যকে দিয়ে দিলে?সব ভুলে গেছো তুমি!এখন আমি তোমার কাছে পুরোনো হয়ে গিয়েছি তাইনা। তুমি কি ভুলে গেছো তোমার জীবনের সাথে তুমি আমাকে জড়িয়েছো, তুমি নিয়ে এসেছো তোমার কাছে আমায়। আমি কিন্তু আসিনি!তাহলে আজ সব ভুলে গেছো? ভুলে গেছো যে আমার জন্যই তুমি বেচে আছো?সেদিন যদি আমি তোমাকে না বাঁচাতাম তবে কি তুমি আজ এখানে থাকতে! তুমি ওয়াদা করেছো সারাজীবন আমাকে ভালোবাসার অথচ আজ অন্যকে পেয়ে সবটা ভুলে গেছো। তুমি খুব স্বার্থপর! বড্ড স্বার্থপর!আমি তোমাকে ছাড়া কি করে বাঁঁচবো সায়ান ভাই?”

‘সায়ান ভাই’ শুনে সায়ান চমকে উঠলো, আজ বহুদিন পর এই ডাকটা শুনেছে তবে ঠিক আগের মতো নয়। সেই প্রাণবন্ত হাসি মাখা মুখ নিয়ে বলেনি বরং কান্নায় জর্জরিত অবস্থায় বলেছে। সায়ানের খুব খারাপ লাগছে এখন। ওর ছোট্ট পরিকে ও বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছে,হাজারগুন অপরাধবোধ ঘিরে ধরলো ওকে। সায়ান হাটু গেড়ে বসে পড়লো তারপর দু হাতে কান ধরে বললো

“স্যরি পরি!এই ভুল আর হবে না। আমি সত্যিই কোন কিছু ইচ্ছে করে করিনি। ওই মেয়েটিকে আমি তিনবছরের জন্য বিয়ে করেছি, তারপর তার আর আমার রাস্তা আলাদা। কিন্তু ওই মেয়েটি বড্ড অসহায় আর এই পরিস্থিতিতে ও আমার জন্য পড়েছে তাই আমি তাকে সাহায্য করতে চাই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। সে যাতে সমাজে উঁচু করে বাঁচতে পারে, এর বেশি কিছুই আমাদের মাঝে নেই। আর যদি থেকেও থাকে তবে তাকে আমি প্রাধান্য দিবো না, আমার পরির থেকে বড়ো কিছুই হতে পারেনা!”

চন্দ্রিকা সায়ানকে হাত ধরে উঠালো তারপর বললো

“তাহলে আজকের পর থেকে আর ওই মেয়ের কাছে যাবে না, আমার বড্ড কষ্ট হয় তার সাথে তোমাকে দেখলে। প্লিজ যেওনা…”

“হুম! তুমি রেস্ট নাও আমি রুমে যাচ্ছি”

বলে সায়ান আর একমুহুর্তও দাঁড়ায় নি, মনটা এই মুহুর্তে কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কিছু হারানোর ভয় গ্রাস করে রেখেছে যেনো ওকে। খুব সহজে তো বলে আসলো নিজের অনুভুতিকে পাত্তা দিবে না কিন্তু আদোও কি পারবে ও!নাহ পারতে হবে ওকে, ওর ছোট্ট পরির জন্য হলেও ওকে পারতে হবে।

_________________

সামুর সাথে ইনানের কথা বার্তা পাকা নিয়ে ইনানের মা এসেছে মিসেস খানের সাথে কথা বলতে। মিসেস খান তো আজ বড্ড খুশি, উনার ইনানকে প্রথম থেকেই বেশ পছন্দ। নিজের ছেলের মতোই ভাবতেন ইনানকে,এমন ছেলের কাছে যে কেউ চোখ বন্ধ করে মেয়ে তুলে দিবে। সামুর সাথে ইনানের বিয়ের কথায় তিনি বেশ খুশি, ঘর ভর্তি আয়োজন করেছেন। আজই আংটি পরিয়ে যাওয়ার কথা।

ইনান আজ একটা কালো রঙের পাঞ্জাবি পরে এসেছে তাতেই যেনো রাজপুত্র লাগছে। সামু ইনানের সাথে ম্যাচিং করে কালো শাড়ি পরেছে। সামুতো বেশ খুশি, নিজের ভালোবাসার মানুষকে কয়জন নিজের করে পায়?পাশের মানুষটি ওর একথা ভাবতেই যেনো আনন্দ খেলে যাচ্ছে ওর সারা শরীর জুড়ে। ইনান মুচকি হেসে সবার সাথে কথা বলছে কিন্তু হাসির পেছনে মনের মাঝে কতোটা ঝড় বইছে সেটা শুধুমাত্র ও জানে। সামু ইনানের হাতে আংটি পরিয়ে দেয়ার পর ইনান সামুর হাতে আংটি পরিয়ে দিলো।তারপর মাথা নিচু করে প্রায় পরক্ষনেই মাথা উঁচু করে সামনে তাকালো।

নীল শাড়ি পরে আছে কেউ একজন, হাত ভর্তি নীল চুড়ি আর ঠোঁটের কোনের সেই হাসি। তার থেকে দৃষ্টি সরানোই যেনো কঠিন,পিচ্ছি বউ লাগছে তাকে। আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়ে গিয়েছে সে,ঠোঁটের নিচের তিলটা আরো গাঢ়ো হয়ে গিয়েছে। ইনানের ঠোঁট কাঁপছে, বুকের চিনচিন ব্যথাটা বেশ বেড়েছে! মনে হচ্ছে শ্বাস নিতে পারছেনা, দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। হুট করেই দৃষ্টি নামিয়ে ফেললো, আর তাকাতে পারছেনা তার দিকে। বড্ড কষ্ট হচ্ছে ওর। ভালোবাসায় এতো কষ্ট কেনো? আজ এতোদিন পর যখন ও জীবনে এগুতে চাইলো, অন্য কারো সাথে ঘর বাধতে চাইলো তখন কেনো সে সামনে এলো? কেনো আবারও তার সাথে দেখা হলো ওর?
মনে হচ্ছে ঘুরেফিরে সেই একই মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে ও, যেখানে আছে শুধু না পাওয়ার যন্ত্রণা! এখন কি করে বলবে যে সে এই মানুষটিকে ভালোবাসে?যার সাথে মাত্রই সম্পর্কে জড়িয়ে গেলো তাকে কি করে বলবে

“আমি ভালোবাসি!সামনের এই অপরুপাকে ভালোবাসি বড্ড বেশি যতটা বাসলে তাকে ছাড়া নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় ঠিক ততটা”

#চলবে

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ