এসো আমার গল্পে পর্ব-১০

0
1209

#এসো_আমার_গল্পে
#পর্ব_১০
#আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)

স্পর্শীতার হাত থেকে ফোন নিয়ে রেখে দিলো বিভোর। স্পর্শীতা অবাক চোখে বিভোরের পানে তাকালো। বিভোর ওর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে,”চলো!”

“কোথায়?”

বিভোর দাঁতে দাঁত চেপে স্পর্শীতার দিকে তাকালো। স্পর্শীতা তা দেখে কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে সাথে বিভোরও। বিভোর হল রুমে যেয়ে দেখে স্পর্শ বসে বসে ফোনে গেম খেলছে। বিভোর স্পর্শকে খুব ভালো করে চিনে না আর না কথা বলেছিলো কিন্তু তাও বুঝতে অসুবিধা হলো না। বিভোর স্পর্শের পাশে যেয়ে বসলো৷ স্পর্শ বিভোরকে খেয়াল করতেই নড়েচড়ে উঠলো। বিভোর স্পর্শকে অস্বস্তিতে পড়তে দেখেও চুপ রইলো। স্পর্শও চুপ থেকে সরে খেলতে লাগলো।

এর মাঝেই বাড়িতে আগমণ ঘটলো আফতাব সাহেবের। উনি বাড়ি ঢুকে বিভোরকে দেখে ভ্রুকুচকে তাকান পরেক্ষনেই উনার মনে পরে আজ ওদের আসার কথা ছিলো। বিভোর উনাকে দেখে উঠে দাঁড়ায় সালাম করলে উনি সালামের উত্তর দিয়ে সোফায় এসে বসে বিভোর দাঁড়িয়ে না থেকে ইশারায় বসতে বলেন। বিভোর ভদ্র ছেলের মতো বসলো।

রান্নাঘর থেকে স্পর্শীতা আর তাফিদা বেগম ও বেরিয়ে এসেছেন। আফতাব সাহেব স্পর্শীতাকে খেয়াল করলেন কিন্তু কিছু বললেন না। উনি তাফিদা বেগমকে জিজ্ঞেস করলেন,”রান্না শেষ তাফিদা?”

“হুম,শেষ।”

“তাহলে ওদের খেতে দাও, দূর থেকে জার্নি করে এসেছে।”

তাফিদা বেগম কিছু না বলে রান্নাঘর খাবার আনতে চলে গেলেন পিছে পিছে স্পর্শীতাও গেলো। ওদের যেতেই বিভোর আফতাব সাহেবকে জিজ্ঞেস করলো,”কেমন আছেন?”

উনি গম্ভির স্বরে জবাব দিলেন,”ভালো,তুমি?”

“আমিও।”

“স্পর্শীতা কেমন আছে?”

বিভোর প্রথম প্রথম উনার প্রশ্নে অবাক হলো কিন্তু উত্তর দিলো,”ভালো আছে ও।”

উনাদের কথার মাঝেই তাফিদা বেগম, স্পর্শীতা ও মনুর মা খাবার নিয়ে আসলেন। তিনজন খাবার পরিবেশন করে দিলেন সবাইকে। আফতাব সাহেব বিভোর বলে,”খেতে আসো।”

বলতে বলতে নিজেও টেবিলে যেয়ে বসলেন। বিভোর মাথা নাড়িয়ে টেবিলে যেয়ার টেনে বসলো। স্পর্শ ফোন রেখে নিজেও এসে বসলো। তাফিদা বেগম স্পর্শীতাকে বলে,”তুইও বসে পর ওদের সাথে।”

স্পর্শীতা না সূচক মাথা নেড়ে বলে,”না আমি তোমার সাথে খাবো।”

তাফিদা বেগম আর কিছু বলেন না। সবাইকে খাবার বেড়ে দিলেন। সবার খাওয়া শেষ হতেই সবাই যার যার রুমে চলে যায়। বিভোর স্পর্শীতার রুমে আসে।

.
নিজের মার সাথে খেয়ে রুমে আসে।আজ প্রথম খাওয়ার সময় এতোটা কথা বলেছে। হয়তোবা মাকে কাছে পেয়ে এতো গল্প করেছে। নিজের রুমে এসে দেখে বিভোর ফোনে কথা বলছে। স্পর্শীতা ভ্রুকুচকে তাকায় কিন্তু কিছু বলে না।

৯.
পড়ন্ত বিকেল,স্পর্শীতা ঠিক করেছে এখন বাহিরে বের হবে সবার সাথে দেখা করতে যেহেতু কিছুদিন পরেই চলে যাবে এই কয়দিন ওদের সাথে দেখা করতে পারে নাকি?তাই আজই বের হবে।

স্পর্শীতা রেডি হয়ে গায়ে শাল জড়িয়ে বাহিরে গেলো। বিভোরকে বলে বের হয়নি শুধু ওর মা আর ভাই ছাড়া কেউ জানে না ও কোথায় যাবে।

স্পর্শীতা হাঁটছিলো এমন সময় ওর কানে কারো কথা আসলো

“আরে স্পর্শীতা তুমি আসছো শশুড়বাড়ি থেকে?”

স্পর্শীতা এগিয়ে যেয়ে বলে,”জ্বী চাচি।”

“কেমন আছো?”

“আলহামদুল্লিল্লাহ ভালো,আপনি?”

“ভালোই।”

স্পর্শীতা উনার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে চলে যায়।

স্পর্শীতা কিছুদূর যেতেই কারো দৌড়ানোর শব্দে পিছনে ফিরে বিভোরকে দেখে অনেকটা অবাক হয়। মনে মনে ভাবে,বিভোর এইখানে কেনো?ওকেই বা কে বলেছে ও এইখানে?

স্পর্শীতার ভাবনার মাঝে বিভোর এসে ওর সামনে দাঁড়ায় হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,”তুমি এইখানে?আমাকে বলে আসো নি কেনো?”

স্পর্শীতা মুখ বেকিয়ে বলে,”প্রয়োজন মনে করি নি। আপনি কিভাবে জানলেন আমি এইখানে?”

“স্পর্শ বলেছে।”

স্পর্শীতার এখন বুঝতে অসুবিধা হলো না যে স্পর্শ কিছুক্ষনের ব্যবধানে বিভোরের সাথে খাতির জমিয়ে নিয়েছে। মনে মনে স্পর্শকে আচ্ছামত বকে বলল,”আপনি চলে যান।”

বিভোর ভ্রুকুচকে বলে,”কেন?আমি আসাতে অনেক সমস্যা হবে তোমার?”

আড়চোখে বিভোরের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি আমার বান্ধুবির বাসায় যাবো!আপনিও যাবেন?”

বিভোর কোনোরকম ভাবনা ভাবান্তর ছাড়া বলে,”যদি নিয়ে তাহলে তো অবশ্যই যাবো। নিয়ে যাবে কি?”

স্পর্শীতা আর উপায় না পেয়ে রাজী হয়ে যায়। ওদের বাড়ির কিছুদূর যেতেই রাবাদের বাড়ি। স্পর্শীতা বিভোরকে নিয়ে রাবাদের বাড়িতে ঢুকলো।

রাবার মাকে কাজ করতে দেখে উনার কাছে যেয়ে বলল,”আসসালামু আলাইকুম আন্টি।”

স্পর্শীতাকে দেখে রাবার মা উঠে এসে বলে,”স্পর্শীতা তুই এইখানে?কবে আসলি?”

স্পর্শীতা এক গাল হেসে বলে,”আজই।”

উনি একবার বিভোরের দিকে তাকিয়ে বলে,”তোর জামাই?”

স্পর্শীতা মাথা নাড়ায় তারপর বলে,”রাবা কোথায়?”

“ছাদে আছে।”

স্পর্শীতা ছাদে চলে যায়। স্পর্শীতাকে ছাদে আসতে দেখে রাবা। ওর ছাদে আসতেই জড়িয়ে ধরে বলে,”কেমন আছিস স্পর্শী?”

“ভালো আছি,তুই?”

“উম ভালোই।”

মুখ কালো করে বলল রাবা। স্পর্শীতা ভ্রুকুচকে বলে,”কি হয়েছে তোর আবার?”

“কিছু না কবে আসলি?”

“আজ!”

কিছুক্ষন বাদেই রাবার চোখ বিভোরের দিকে পড়লো। বান্ধুবির সাথে কথা বলতে এতোই ব্যস্ত ছিলো যে প্রথমে বিভোরকে খেয়ালই করে নি। বিভোরকে খেয়াল করতেই ওকে বলে উঠে,”আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।”

বিভোর রাবার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসে,বলল,”ওয়ালাইকুম আসসালাম।”

কিছুক্ষন যেতেই বিভোরের মনে হচ্ছে ওর আসাই উচিত ছিলো দুই বান্ধুবি ওর জন্য শান্তি মতো কথাও বলতে পারছে না। ওদের দুইজনকে ফোন কলের বাহানা দিয়ে সরে আসে ওদের মাঝখান থেকে। গ্রামের রাস্তাও ওতোটা চিনে না ও।

কথা বলতে বলতে রাবা বলল,”আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।”

স্পর্শীতা ওর এহেন কথায় অনেক অবাক হয় সাথে খুশিও। বলে,”আন্টি-আংকেল মেনে নিয়েছে তোদের দুইজনকে?”

রাবা লাজুক হেসে বলে,”হ্যাঁ!না মেনে নেওয়ার কি আছে?”

“যাক ভালো। কবে ঠিক হয়েছে।”

“তোরা কয়দিন থাকবি আগে বল সেটা।”

“এক সপ্তাহ।”

“এই এক সপ্তাহর মধ্যেই যা হওয়ার হবে। আগামীকাল সন্ধ্যায় হলুদ আর পরশু বিয়ে। তুই কিন্তু দুলভাইকে সাথে করে নিয়ে আসবি কেমন?”

“আচ্ছা ঠিক আছে দেখি!”

রাবার সাথে বেশ অনেকক্ষন কথা বলে উঠে দাঁড়ায় স্পর্শীতা। বিভোরকে না দেখতে পেয়ে চিন্তা হতে শুরু করে বিভোরের জন্য। বিভোর তো রাস্তাও চিনে না!ফের ভাবলো হয়তোবা চলে গিয়েছে ভালো লাগছিলো না তাই। স্পর্শীতাও আর এক পাঁচ না ভেবে হাঁটা ধরলো নিজের বাসার উদ্দেশ্যে।

গল্প করতে করতে করতে এতোটাই টাইম অতিবাহিত হবে ও বুঝতেই পারে নি। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। অন্ধকার নামতে শুরু করে দিয়েছে এখনো। এই রাস্তাটা এমনিতে ভালো না আর ও একা একটা মেয়ে যাবে!ভেবেই হালকা ভয় লাগতে শুরু করলো কিন্তু ভয়কে পরোয়া না করে সাহস সঞ্চয় করে হাঁটা ধরলো নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে। মাঝপথ পর্যন্ত দোয়াদূরুদ পড়তে থাকে।

হাঁটতে হাঁটতে মাঝ রাস্তায় এসে পড়তেই এক জায়গা থেকে আলো এসে স্পর্শীতার মুখ বরাবর পড়ে। আলো পড়তেই স্পর্শীতা চোখ খিচে বন্ধ করে চলে। ধীরে ধীরে চোখ খুলে একটা বাইক দেখে যেইখান থেকে আলো আসছিলো। বাইকের মধ্যে ব্যক্তিটাকে দেখে ভীষণ রকম অবাক হয় সাথে মনে মনে অনেক ভয়ও লাগে!বিভোরকে ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে। মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছে!আজ বেঁচে বাড়ি ফিরুক জীবণেও এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করবে। বাইকের ব্যক্তিটির স্পর্শীতাকে চিনতে একটুও অসুবিধা হলো না। স্পর্শীতাকে দেখে মনে মনে শয়তানি হাসলো। স্পর্শীতা ভয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। স্পর্শীতাকে ভয়ে দেখে হেসে ওর উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলো……..

#চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে