একজোড়া চড়ুই সূচনা পর্ব

0
3042

একজোড়া চড়ুই?️?️
#সূচনা_পর্ব
#Writer_Afnan_Lara
?
ভাই সালাদের প্লেট আরও ১০পিস পাঠান,শেষ হয়ে গেছে
আর অপু তুই হ্যাবলার মত দাঁড়িয়ে না থেকে বাকি যারা আছে তাদের বল এসে খেয়ে যেতে!
.
আচ্ছা ভাইয়া!
.
পিলারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লাল পাঞ্জাবি পরা রোগা পাতলা ছেলেটি ছুটলো অন্দরমহলের দিকে,তার বড় ভাই তাকে কাজ দিয়েছে সবাইকে ডাকতে আর সেটা না করলে আজ তার হাত থেকে তার কলিজা জান প্রান তার একমাত্র ফোন গায়েব হবে,কিছু থেকে কিছু হলেই বাবা নয়তো ভাইয়া ফোনটা নিয়ে যায় তার থেকে,টিনেজে এই হলো এক সমস্যা
পরিবার বুঝতেই চাই না যে সব কচি ছেলেরা নিব্বা হয় না
কেউ কেউ কাবির সিং ও হয়,কে বোঝাবে এদের!
ফোনের দিকে তাকাতে তাকাতে সে বাসার ভিতর এসে মাঝখানে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বললো যাদের যাদের খিধা লাগছে তারা গিয়ে খেয়ে আসেন
.
তার কথা শুনে ৫০জন মনে হয় আগে থেকেই রেডি হয়ে ছিল তারা ওকে পেরিয়ে ছুটলো খাওয়ার জন্য
সে আর একটুর জন্য তাদের গায়ের বাতাসেই পড়ে যেতো
আম্মুর কথামত তাহলে এখন থেকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই দই খেতে হবে,আসলেই শুকিয়ে যাচ্ছি,আজ তো পদদলিত হয়ে মরেই যেতাম,ইস কিএক্টা অবস্থা!
সুযোগ বুঝে ছাদে উঠে বসলো সে,আর নামবে না নামলেই একটা না একটা কাজ ঘাড়ে এসে পড়বে
আজ যত পিক তুলা হয়েছে সেগুলো পোস্ট করা ছাড়া মনে শান্তি আসবে না
.
“রোস্ট আরেকটা খাবে??এনে দিব?আস্তে আস্তে খাও নাহলে গলায় আটকে যাবে
দেখেছো মুখে লেগে গেছে তোমার,দাঁড়াও আমি টিসু দিয়ে মুছে দিচ্ছি”
.
“তুমিও না অভ্র!এত এত কেয়ার করো না তো,মানুষ দেখলে বলবে বউ পাগল”
.
“হ্যাঁ আমিই তো বউ পাগলই,নয়ত কি আর বলো,আমি তো প্রিয়ার পাগল বর”
.
কত কিউট না কাপলটা??হ্যাঁ অনেক কিউট,তবে এটা আমি বলিনি অন্যরা বলতেসে এই আর কি
আমি কেন বলতে যাবো?
শত শত মানুষে ভর্তি একটা বিয়েবাড়িতে কোণের একটা জায়গায় বসে অভ্র আর তার সদ্য বিয়ে করা বউ প্রিয়া খাচ্ছে,তারা আবিদ আর পিউর বিয়েতে এসেছে,অভ্রর ক্লাসমেট হলো আবিদ
তারই ইনবাইটে এসেছে সে তার নতুন বিয়ে করা বউকে সাথে নিয়ে
উচ্চ স্বরে গান বাজতেসে,দিলবার দিলবার হো দিলবার!
স্টেজের পাশে এক দল মেয়ে দাঁড়িয়ে একজন আরেকজনের চুল ওড়না ঠিক করতেসে,সবার গায়ে লাল আর সাদা জামা আর লাল সাদা ওড়না,সম্ভবত নাচার জন্য রেডি হচ্ছে সবাই,স্টেজ থেকে একটু দূরে লাল রঙের পাঞ্জাবি পরা আরেকদল ছেলেরা প্র্যাকটিস করতেসে,””এই যে বিয়ানসাব” গানে নাচবে ২দলে মিলে
আর খাবারের জায়গায় তো মানুষ ঠেললে ঠেলা যায় না
অভ্র আর তার বউ প্রিয়া খাওয়া শেষ করে চলে যেতে নিতেই আবিদ জোর করে ওদের স্টেজে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে নাচার জন্য আর নয়ত গান,যেকোনো একটা করতেই হবে নাহলে ছাড়বে না সে
এতো মহা বিপদ!
খাওয়ার পর পরই দায়িত্ব পড়ে গেছে কাঁধে,অভ্র গান পারে না তেমন কিন্তু প্রিয়া কিছু কিছু পারে
তো দুজন মিলে ভেবেচিন্তে শেষমেষ গানই ধরলো,ভরা পেটে নাচা অসম্ভব
“আমার সারাটাদিন মেঘলা আকাশ” গানটা গাইছে তারা
সবাই খাওয়া শেষ করে স্টেজের সামনে থাকা গুটিকয়েক চেয়ার দখল করায় ব্যস্ত কারণ এখন নাচগান হবে,মজা হবে,বিয়েতে এই নাচগানই মজা বৃদ্ধি করে,কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই আসে খাওয়ার জন্য,নাচগান তো সব পরে,আগে খাওয়া হচ্ছে মেইন
খাওয়া না হলে বিয়েটা কোনো বিয়েই নয়,গ্রামের বিয়ে হলে তো কথাই নাই!!আগে খাওয়া দাওয়া পরে জান প্রান!
.
অভ্র আর প্রিয়া একজন আরেকজনের হাত ধরে গান গাইতেসে
সবাই whistle দিয়ে আর হাত তালি দিয়ে মনে হয় স্টেজ উড়াই ফেলবে
.
স্টেজ থেকে দূরে বউয়ের বাসা,,সাইড ওয়ালের বাড়ি,উপরে টিন,অবশ্য ২টা রুম পুরো দালানের মত বানানো,উপরে ছাদ ও আছে
বাসার ভিতরে ঢুকার যে সিঁড়ি থাকে,সম্ভবত গ্রাম অঞ্চলের কিছু কিছু বাড়িতে ৩টা সিড়ি পেরিয়ে বাসায় ঢুকতে হয়,সেই সিড়ির পাশে থাকে দুদিকে ২টা সিমেন্টের পিলার,উপরে ঢালু করা টিন থাকে
তো সেই বাম পাশের পিলারটার পাশেই চেয়ারে বসে আছে একটি মেয়ে
গায়ের রঙ শ্যামবর্ণ,চোখে কাজল নেই,ঠিকই তো,সকল শ্যামবর্ণের মেয়েরা কেন কাজল দিবে?
সবার পছন্দ তো এক নয় তাই না!!
পরনে খয়েরী রঙের লং ফ্রক,উপর দিয়ে জিন্সের কোটি,ওড়না কাঁধেই ছিল তার অন্য মনস্কে ওড়না সেই কবেই মাটিতে পড়ে গেছে
খোলা চুল তার,মাঝে মাঝে বাতাসে তা উড়তেসে,আবার বাতাস শেষ হতেই চুল তার আগের জায়গায় ফিরে যাচ্ছে,মেয়েটার চোখ দুটো স্টেজে থাকা অভ্র আর প্রিয়ার দিকে,এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সে,চোখের পাতাও নড়তেসে না তার
হঠাৎ করে কেউ দেখলে বলবে বসে থাকা অবস্থায় মরে গেছে,যাকে বলে Spot dead!
তার হাতে আবার একটা কাঁচের গ্লাস
মেয়েটির চোখের আগুন দেখেই বুঝা যায় যে খুব রেগে আছে,হাতের গ্লাস্টা ভেঙে তার হাত কেটে রক্তে সাদা গ্লাসটা লাল রঙ ধারণ করেছে,কতটা রাগ হলে আর কতটা শক্তি থাকলে মানুষ কাঁচের গ্লাস হাতে রেখে ভাঙ্গতে পারে?ও মাই গড!!
অবশ্য গ্লাসের কোম্পানির মান ছোটখাটো হলে সহজেই হাতে রেখেই আপনি কাঁচের গ্লাস ভাঙ্গতে সক্ষম হবেন
এই দূর্লভ কাজটি করতে সক্ষম হয়েছে যে মেয়েটি তার নাম ছোঁয়া তাবাসসুম,আজ যাদের বিয়ে হচ্ছে তাদের মধ্যে যিনি বর তারই দুইমাত্র বোন হলো ছোঁয়া,মানে এরকম আরও এক পিস আছে,তবে সে বয়সে ছোঁয়ার থেকে একটু বড়,২বছরের
এদিকে তার যে হাত কেটে সাগর হয়ে গেছে সেদিকে তার খেয়াল নেই একদম,শক্ত হয়ে সে স্টেজের দিকে চেয়ে আছে
তবে তার ভাইয়া আর ভাইয়ার বউয়ের দিকে মোটেও নয়,সোজা অভ্র আর প্রিয়ার দিকে
.
শ্রাবণ!!বাসার ভেতর অতিথীদের জন্য আনা কোক শেষ হয়ে গেছে,তাদের বাচ্চারা কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে,অপু নাকি কোক আনেনি,তোর বাবা অপুকে খুঁজেও পাচ্ছে না ১০টা নিয়ে আয় বাবা,তাড়াতাড়ি
.
শ্রাবণ হাতে ১০টা সেভেন আপের বোতল নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে বাসার ভিতর ঢুকতে যেতেই থেমে গেলো
একটা মেয়ে কিনা কাঁচের গ্লাস ভেঙ্গে চুপ করে সামনের দিকে চেয়ে আছে
কাজের চাপ অনেক বেশি,তাই এদিকে নজর না দিয়ে যেতে যেতে বললো “কাঁচের গ্লাস ভেঙ্গে ফেললে ডেকোরেশনের লোক ৫০টাকা বেশি নিবে”
শ্রাবণের কথায় হুস আসলো ছোঁয়ার,স্টেজ থেকে চোখ নামিয়ে হাতের দিকে তাকিয়ে এক ঝাঁকুনি দিয়ে টুকরো সহ গ্লাস নিচে ফেলে দিয়ে হাতে থাকা টিসু দিয়ে হাতটা মুছে নিলো সে,এমন ভাবে মুছলো যেন মাংস খাওয়ার পর হাত ধুলেও যে তেল থেকে যায় অবশিষ্ট সেটাই মুছলো সে
মুছা শেষে আবারও স্টেজের দিকে মন দিলো ছোঁয়া
অভ্র আর প্রিয়ার গান শেষ,তারা এখন নেমে এসে আসন গ্রহন করেছে আবার
সামনে হামটিডামটি দুটো বসেছে,মানে মোটা এক দম্পতি বসেছে
ওদের দেহের আকারের কারণে তাই ঠিকমত অভ্র আর প্রিয়াকে দেখা যাচ্ছে না
ছোঁয়া নিচের থেকে ওড়না নিয়ে পরতে পরতে এগিয়ে গিয়ে ওদের থেকে একটু দূরে একটা চেয়ার টেনে বসলো ধপ করে
যেখান থেকে ওদের ভালো মতন দেখা যায়
সেই ছেলেগুলোর দল স্টেজে উঠতেসে এক এক করে
সবার চোখে কালো চশমা পরনে লাল পাঞ্জাবি,এমন কোনো মেয়ে নেই যে সেদিকে চেয়ে নেই শুধু ছোঁয়াকে বাদে
সে এতসব থেকে খুঁজে অভ্রকেই দেখে যাচ্ছে
আর অভ্র তার আদরের বউয়ের চুল ঠিক করছে
রাগে ছোঁয়া আরেকটা গ্লাস নিলো হাতে
কোথা থেকে সেই ছেলেটা আবার এসে ছোঁ মেরে গ্লাস টা নিয়ে চলে যেতে যেতে বললো “মঘেরমুলুক পাইছে,গ্লাস ভাঙ্গার জন্য আর কোনো বাড়ি পায়নি,ঢং”
আরও কত কি বলতে বলতে চলে গেলো
সেদিকে হুস নেই ছোঁয়ার,কিছু একটার উপর দিয়ে রাগটা ঝাড়তে হবে,গ্লাস হলেও হতো কিন্তু সেটাও নিয়ে চলে গেলো
কোথাকার কোন কিপটার ঘরে বিয়ে খেতে আসলাম,আমার ভাইয়ার জীবনটা ত্যানত্যানা বানাই দিবে এই ছেলে এবং তার পরিবার,অবশ্য এটা মনে হয় এই পরিবারের কেউ না,ডেকোরেশনের লোক হয়ত!তাইতো গ্লাসের প্রতি এত টান!
ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হওয়া থেকে আজ পর্যন্ত তো এই কিপটারে দেখলামই না,যাক গে
সামান্য ৫০টাকা দামের গ্লাস নিয়ে কাড়াকাড়ি লাগাই দিসে,অসহ্যকর!

চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে