একজোড়া চড়ুই পর্ব -১৪

0
1320

একজোড়া চড়ুই?️?️
#পর্ব_১৪
#Writer_Afnan_Lara
?
হাতই তো ভেঙ্গেছে,পা তো আর ভাঙ্গেনি ওকে তাহলে কাল থেকে স্কুলেও যেতে পারবো
কিন্তু কথা হলো স্টুডেন্টদের আঁকা শেখাবো কি করে,ধুর ধুর!
জানালা দিয়ে খালি আরেকটা দালান দেখা যায়, ভাল্লাগে না এখানে,একটু গ্রামীন পরিবেশই খুব ভালো,চোখ মেলে তাকালেই মনটা ভালো হয়ে যায়,চারিদিকে সবুজ আর সবুজ
পাখির ডাক,সেইরকম একটা ফিলিং,অবশ্য এখানেও সব আছে তবে এই এরিয়া বাদে
আর এখানে দেখো ছাতার মাথাও নাই
আজকের দিন কি আর শেষ হবে না??যেদিন এক্সিডেন্ট হয়েছে সেই দিনটা শেষ করতেই আমার ১২/১৩/১৪টা বেজে যাচ্ছে আর বাকি ২০দিন কেমনে শেষ দিব,আম্মুউউউ
.
কিরে ছোঁয়া চিৎকার করস কেন?
.
ভালো লাগতেছে না কিছু,তোমাদের বাসায় কিছু নাই,বাসার চারপাশেও কিছু নাই,আমি একটু ঘুরবো
.
যা আরওয়া বা ফুয়াদকে নিয়ে ঘুরে আয়,খাগড়াছড়িতে অনেক অনেক কিছু দেখার আছে
.
না আমি একাই যাবো
.
তা হচ্ছে না,তোর এই ভাঙ্গা হাত নিয়ে তোকে একা কোথাও যেতে দিলে তোর মা আমাকে দিয়ে পাপড় বানাবে
আর এক কাজ কর তুই রেডি হয়ে নে,আমরা সবাই এখন আরওয়ার বেস্টির বার্থডে সেলিব্রেটের জন্য তার বাসায় যাবো,দাওয়াত আছে
.
না আমার ওসব ভাল্লাগে না,সব পুচকি থাকবে ওখানে আমার আরও বোরিং লাগবে,আমি বরং একাই ঘুরে আসি এদিক ওদিক থেকে
.
তোকে বিশ্বাস নেই,ফুয়াদ সাথে থাকার পরও এক্সিডেন্ট করে বসে আছিস একা হলে তো আল্লাহ জানে কি হবে”!
.
আরে ফোন আছে না?ফোন করে দিব,আমি একাই ঘুরতে যাবো,তুমি এত টেনসন নিও না
.
কিন্তু আমরা তো ফিরতে ফিরতে রাত ১০টা বেজে যাবে বা তার উপরে
তুই একা বাসায় কি করে থাকবি,না ছোঁয়া মা কথা কাটাকাটি করিস না চল আমাদের সাথে
.
না আমি ঘুরে ফিরে আবার চলে আসবো,একা থাকতে পারি সমস্যা নাই,টিভি আছে না??
.
এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারি না আমি
.
ছোঁয়া খালামণিকে কোনোরকম মানিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে পড়লো
.
মনে মনে তার শয়তানি,এখন বাসা থেকে বের তো হলো কিন্তু শ্রাবণকে কল করবে কি করে,বাঁ হাত দিয়েই চেষ্টা করতেসে,প্রায় ১০মিনিট পর সে কল করতে পারলো শ্রাবণের নাম্বারে,এত দেরি হতো না,তার ফোন লক ছিল তাই লক খুলতেই সময় লেগে গেলো অনেক
শ্রাবণ কল ধরছে না,মন চাচ্ছে ফোনের ভিতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দুমদাম মাইর শুরু করে দিতে
ফোন করতে করতে ছোঁয়া একটা রিকসা ডেকে নিলো,অনেক কষ্টে উঠে বসলো,এবার শ্রাবণ রিসিভ করেছে
রিসিভ করার সাথে সাথে ছোঁয়া ওকে বকলো ৩মিনিট ধরে তারপর বললো বাসার নিচে আসতে,তাকে ধরে উঠাবে শ্রাবণ,এসব বলতে গিয়ে আরও একবার বকলো কারণ শ্রাবণের বাসায় তো আবার লিফট নাই
শ্রাবণ হাসতে হাসতে বাসার নিচে এসে পড়েছে,দূর থেকে ছোঁয়ার রিকসা দেখা যাচ্ছে
ছোঁয়া রিকসা থেকে নেমে বাসার দিকে চেয়ে মুখটা বাঁকা করে বড় করে শ্বাস নিলো
.
তা হঠাৎ?
.
কেন আসতে পারি না?
.
পারেন অবশ্যই পারেন,তবে এখন সময়টা কত জানা আছে?
.
সন্ধ্যা ৬টা বাজে
.
কথাটা বলে ছোঁয়া আবার রিকসায় উঠতে গেলো
শ্রাবণ এসে ওর হাত আটকালো
.
সরি সরি,তোমার যতক্ষন ইচ্ছা ততক্ষণ আমার বাসায় থাকিও,রাগ করিও না প্লিস
.
দরকার নাই,আপনার বাসায় আর আমি যাবো না
.
ছোঁয়া শ্রাবণের কোনো কথায় শুনতেসে না,রাগ করেছে তো করেছেই
শ্রাবণ রিকসাআলাকে কোনোমতে বিদায় তো করলো
কিন্তু ছোঁয়াকে আটকাতে পারছে না ছোঁয়ার এক কথা সে আর বাসায় ঢুকবে না
কোনোদিন আসবেও না এখানে,সোজা আবার হাঁটা ধরেছে সে
শ্রাবণ বাধ্য হয়ে ওকে কোলে তুলে নিয়েছে শেষমেষ
হুট করে এমন করায় ছোঁয়া তার রাগ এক পাশে রেখে শ্রাবণের দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো
.
এমন করে তাকানোর কি আছে?কথা শুনো না তাই কোলে নিতে বাধ্য হলাম,ফাঁকা রোড,তুমি আর আমি আর কি চাই,কেউ দেখারও নাই
.
আজ আপনার বাড়িআলা এসব দেখবে না?
.
ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন বাড়িআলা তার গ্রামের বাড়ি গিয়েছে
.
আচ্ছা সব পরোক করে তাহলে কোলে নিছেন আমি তো ভাবলাম আমার রাগ ভাঙ্গাতে
যাই হোক নামান আমাকে,আমি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারবো
.
উহু,শক্ত করে ধরুন,আমার বাসার পিচ্চি মেহমানকে কোলে করে বাসায় নিবো আজ
.
পিচ্চি বললেন কেন?পিচ্চির কি দেখলেন?আই এম এনাফ ম্যাচিউর
.
হ্যাঁ হ্যাঁ তা তো অবশ্যই,আপনি অনেক ম্যাচিউর তাই তো রোডের মাঝখানে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে হাত ভেঙ্গে বসে আছেন
.
শ্রাবণ ছোঁয়াকে এনে সোফায় বসিয়ে দিয়েছে তারপর গেছে রান্নাঘরের দিকে
ছোঁয়া গোল হয়ে বসে আছে সে এখন আড্ডা দিবে,একটা অভ্যাস হয়ে গেছে এই আড্ডা দিতে দিতে
এ সময়ে কারেন্টাও গেলো,ছোঁয়ার মন চাচ্ছে নিজের চুল নিজে ছিঁড়তে তারপর নিজের রাগটা সামলিয়ে এদিক ওদিক তাকালো,এতক্ষণে অন্ধকার ও নেমে গেছে
শ্রাবণ মোমবাতি এনে টেবিলে রেখে বললো”বাড়ি ফিরবে কখন?”
.
আপনার বাসায় আসাটাই আমার মস্ত বড় ভুল হয়েছে,না আসতেই যাওয়ার কথা বলতেছেন বারবার,বাই
.
ছোঁয়া হাতের ব্যাগটা নিয়ে ছুটলো বাইরের দিকে
শ্রাবণ দৌড়ে এসে ওকে আটকালো,অন্ধকারে ছোঁয়ার হাত ধরে আটকাতে গিয়ে ছোঁয়ার কোমড়ে হাত দিয়ে বসলো শ্রাবণ
ছোঁয়ার গা কেঁপে উঠেছে ততক্ষণে সাথে শ্রাবণ ও বুঝতে পেরেছে সে হাত না ধরে কোমড় ধরেছে দুজনেই দূরে সরে গেলো
.
ঢং করতে হবে না,আমি যাচ্ছি,আপনি দুপুর থেকে কেমন পর পর হয়ে যাচ্ছেন!হুহ!
.
শ্রাবণ ছোঁয়ার হাত খুঁজে বের করে ওর হাত টেনে ধরলো,তারপর বলল”সরি”
.
খালামণিরা কেউ বাসায় নেই,সবাই আরওয়ার ফ্রেন্ডের বাসায় গেছে,আমাকেও যেতে বলেছিল আমার বোরিং লাগবে সেখানে তাই আমি আর যাইনি,এখানে এসেছি আর আপনি তো শুরু করলেন কখন যাবো কখন যাবো তো ঠিক আছে এখনই যাচ্ছি
.
সরি তো! এত কথায় কথায় রাগ করো কেন বলোতো??
.
চা খাবো আর
.
নুডুলস
.
আপনি জানলেন কি করে?
.
কারণ মেয়েরা কারোর বাসায় এসে প্রথম যেটা রান্না করে সেটা হয় তার প্রিয় খাবার
আর তুমি আমার বাসায় এসে প্রথমদিন নুডুলস রেঁধেছিলে
.
আচ্ছা
.
ছোঁয়া এবার শ্রাবণের সাথে রান্নাঘরের দিকে গেলো,তাকের উপর বসে পা দোলাচ্ছে সে আর শ্রাবণ নুডুলস সিদ্ধ করতেছে
.
কি করছেন এতক্ষণ?
.
আমি তো বই পড়তেছিলাম,প্রেমাতাল
.
আমিও পড়ছি বইটা,মুগ্ধ তো আমার ক্রাশ!
.
অভ্র?
.
আরে সে তো অতীত,অতীত মনে করিয়ে দেন কেন??আচ্ছা প্রেমাতাল কি নতুন পড়তেছিলেন?এটা তো অনেক আগের
.
আমি এটা অনেক অনেকবার পরেছি,বেশ ভালো পড়তে তাই তো মন চাইলেই পড়ি
.
হুমমম বুঝলাম!
.
নাও ধরো চা,নুডুলস হতে এখনও দেরি
.
এ কেমন বিচার?মানুষ আগে কিছু মুখে দিয়ে তারপর চা খায় আপনি দেখি এই চিরন্তন সত্যকে পুরা উল্টায় দিলেন
.
কি করবো বলো,আমি নুডুলস রান্নায় এত পারদর্শী না
.
আমাকে বলতেন
.
ছোঁয়ার কথা শুনে শ্রাবণ ছোঁয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য করে একটু হাসলো
.
হাসার কি আছে?যে রান্না পারে সে বাম হাতেও পারে বুঝলেন?
.
হইছে হইছে
এখন এই বিসকুট খেয়ে চা খান আপনি তো আবার খালি মুখে চা খান না
.
আপনি প্লিস বিয়ে করেন
.
মানে?কিসের মধ্যে কি বলতেছো??আমি বিয়ে করবো কেন?আর আমি বিয়ে করলে তোমার কি লাভ?
.
আমার মনে হচ্ছে আপনার সাথে রোজ আড্ডা দিতে দিতে একটা এট্রাকশান কাজ করতেছে,যতই দিন বাড়বে ততই এটা বাড়বে
পরে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে আমাদের দুজনের জন্যই
.
এত কম বয়সে এত পাকা পাকা কথা বললো তুমি হায়রে তোমার বয়সে আমি প্রেম কি জানতাম না
.
আপনি ২০বছরে প্রেম কি জানতেন না?
.
না,আমার কাছে পড়ালেখা ছিল মেইন
.
তাহলে মিতুল আসলো কই থেকে?
.
একটা সময় মানুষ পড়ালেখার কাতার পেরিয়ে প্রেমময় যুগে পা রাখে
.
ভালো,এত লজিক দিতে পারেন আপনি,আপনার বউ ঝগড়ার সময় শুধু কাঁদবে
.
সেটা নাহয় তখন দেখা যাবে,এক কাজ করো বরং তুমি বিয়ে করে নাও তাহলে আর অভ্যাসের দরুন আমার বাসায় আসবা না বারবার
.
আরেহ আমি তো করতামই,কথা হলো
১.ইতি আপুর বিয়ে হয়নি
২.আমি কাইল্লা ভূত
আমাকে কেউ পছন্দ করবে না
.
শুনো বালিকা এক কাজ করলে কেমন হয়?
.
বলেন শুনি তারপর বলি
.
আমরা দুজনে বিয়ে করে নিই চলো,তুমিও ছ্যাকাখোর আর আমিও ছ্যাকাখোর
দশে দশে কাটা
.
আপনার আম্মু আমাকে পছন্দ করে না,করবেও না,বড় ছেলের বউ কিনা কালো হবে?আমি জেনেশুনে আন্টির মনটা ভাঙ্গতে পারি না আর ইতি আপু আমাকে কাঁচা গিলেই ফেলবে আর…
.
হইছে হইছে আর কারণের প্রমান দেখাতে হবে না
তোমার আর আমার মিলবে না সেটা জানা আছে আমার,মজা করে বললাম তুমি সিরিয়াসলি নিয়ে নিছো
.
আমি সিরিয়াসলি নি নাই,নিলে চিল্লাই বলতাম
ও মাই গড ও মাই গড জীবনে এই প্রথম কেউ আমাকে প্রোপোজ করেছে
.
হাহা!নাও নুডুলস ও হয়ে গেছে চলো সোফার রুমের দিকে
.
মোমবাতি আর নাই?
.
আছে খুঁজতে হবে,তবে আমার মনে হয় এটা শেষ হওয়ার আগেই কারেন্ট চলে আসবে
.
আচ্ছা!
আমি কি কাল থেকে স্কুলে আসতে পারবো না?
.
হুম পারবে,তুমি আর্ট ক্লাস না করিয়ে রফিক স্যারের পরিবর্তে বাংলা ক্লাসটা করাতে পারবে,কারণ রফিক স্যার ট্রেনিংয়ে গেছেন আর তা না পারলে ছুটি নিতে হবে তোমার
.
না ছুটি নিব না,ইতি আপুর বিয়েতে ছুটি নিতে হবে,আমি বরং বাংলা ক্লাসই করাবো
.
গুড!
.
শ্রাবণের মায়ের ফোন এসেছে তাই সে ফোন নিয়ে আরেক রুমে চলে গেছে
ছোঁয়া গালে হাত দিয়ে শ্রাবণের অপেক্ষা করতে করতে সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়েছে,ডাক্তার যে ঔষুধ দিয়েছিলো সেটাতে আরও আগে ঘুম আসার কথা ছিল তাও দেরিতে হলেও ঘুমটা এসেই গেলো
শ্রাবণ কথা শেষ করে এসে দেখলো ছোঁয়া সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছে
ওর বাম হাতে মশা ৩টা এক কাতারে বসে রক্ত চুষে যাচ্ছেই তো যাচ্ছেই
শ্রাবণ কাছে এসে ফু দিলো তাও গেলো না
মশাগুলো খুব ভালো করেই জানে শ্রাবণ এখন তাদের টাচ করবে না কারণ টাচ করলেই ছোঁয়া জেগে যাবে
তাই তারা সুযোগের সদ্য ব্যবহার করছে
শ্রাবণ এখন কি করবে ভাবতেসে
ওদিকে ছোঁয়া হাতটা উপর করে সোফার সাথে লাগিয়ে ধরে ফেললো ব্যস একসাথে ৩টা মশাই সোফার চাপা খেয়ে নিহত হয়েছে
তাদের মাস্টারমাইন্ড ও কাজে লাগলো না শেষমেষ
শ্রাবণ হেসে দিয়ে উঠে গেলো কয়েল জ্বালাতে
ছোঁয়া মশার কামড়ের যে চুলকানি সেটাতেই জেগে গেলো,বিড়বিড় করে মশাকে গালি দিয়ে হাতের দিকে চেয়ে রইলো সে
শ্রাবণ হাতে কয়েল নিয়ে আসতেছে
.
কি হলো জেগে গেলে?
.
আপনার বাসায় অনেক মশা
.
সন্ধাবেলায় সবার বাসায় মশা থাকে এটা আর নতুন কি
.
ছোঁয়া চোখ মুখ ডলে ঠিক হয়ে বসে বললো”আপনার আর মিতুলের কাহিনী বলুন,একটু শুনি”
.
দরকার নেই,অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি একদম পছন্দ না আমার,অন্য কিছু বলি?
.
ছোঁয়া ব্রু কুঁচকে বললো “বলুন!”
.
তুমি যে বললে আমার মা তোমাকে পছন্দ করে না এটা কিন্তু ভুল,মা তোমার আগে ইতিকে দেখেছে আর তাই তার কাছে ইতিকেই ভাল্লাগে
যেমন ধরো আমি একটা বাংলা মুভি দেখলাম,তারপর তার সেম কাহিনীতে বানানো হিন্দি একটা মুভি দেখলাম
কিন্তু প্রথমে বাংলাটা দেখায় আমার এখন আর হিন্দিটা একটুও ভাল্লাগেনি
ঠিক তেমনই আগে তুমি যেটা দেখে ফেলো তোমার কাছে সেটাই ভালো লাগবে এরকম আরেকটা আর তোমার ভাল্লাগবে না
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে