একজোড়া চড়ুই পর্ব- ০৪

0
1291

একজোড়া চড়ুই?️?️
#পর্ব_৪
#Writer_Afnan_Lara
?
ছোঁয়া এদিকে আয় তো
মেহমানদের জন্য নাস্তা বানাতে আয়
.
আচ্ছা ভাবী আমি যাই এখন,টাটা, তুমি থাকো
.
ছোঁয়া রান্নাঘরে এসে চা বিসকিট,নুডুলস সব রেডি করে নিয়ে হাজির সোফার রুমে,পিউর দাদি,আর ছোঁয়ার মামি কথা বলতেসেন,পাশে শ্রাবণ ও বসে আছে
ছোঁয়া ব্রু কুঁচকে ওর হাতে চা দিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো
আবিদ ভাইয়া বাসার বাইরে তার কিছু বন্ধুদের সাথে কথা বলতেছেন
.
তোমার মাইয়া বড়টা কোথায়?
.
দাদি!ও আসলে ফ্রেশ হতে গেছে
.
নাস্তা কি সব ও বানাইসে?
.
নাহ,আমাদের ছোঁয়া বানিয়েছে
.
দাদি মুচকি হেসে ছোঁয়াকে কাছে ডাকলেন,ছোঁয়া পাশে এসে বসতেই উনি ৫০০টাকার একটা নোট তার হাতের ছোট্ট ব্যাগ থেকে বের করে দিলেন ওকে
ছোঁয়া নিতে চাইলো না এক প্রকার জোর করেই দিলেন উনি
.
ছোঁয়া টাকার নোটটা নিয়ে নাচতে নাচতে বাসা থেকে বেরিয়ে গলির একটা দোকানের দিকে গেলো,আহা আজ সে এক মাসের এমবি ভরবে ফোনে,কি মজা কি মজা!!
bhool to ho gayi, jo kiya so kiya
Tu bacha le balm, aaj mera jiya
Haye re bangle ke peeche teri beri ke neeche
Haye re piya aha re aha re aha re piya
Kanta laga, hai laga Ha aja ha raja
Bangle ke peeche teri beri ke neeche
Haye re piya, o ho piya, hm hm piya
Haye ha piya, o ho, hm hm, ha ha piya
.
হঠাৎ কেউ একজন ওর হাত থেকে ছোঁ মেরে টাকাটা নিয়ে নিলো
.
এই কে রে?
.
আমি
.
অন্ধকারে ভালোমতন দেখা যায় না,আশেপাশের বাড়ির আলোয় কোনোরকম রাস্তাটা ক্লিয়ার দেখা যায় তবে রাস্তার মানুষ নয়
ছোঁয়া ব্রু কুঁচকে ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে সামনে ধরতেই দেখলো শ্রাবন টাকাটা নিয়ে পকেটে পুরতেসে
.
এই এই,এটা আমার টাকা,আপনি নিয়ে গেলেন কেন?দিন বলতেসি
.
জি না,এটা আমার রজনীগন্ধার ক্ষতিপূরন,বুঝলেন?
.
আপনি বেশি বেশি করতেসেন কিন্তু!
.
চুরি করলে এমনটা তো হবেই!তা এত রাতে নেচে নেচে কাঁটা লাগা গানটা গাইতে গাইতে কই যাচ্ছিলা??কে কাঁটা লাগাইসে?
.
শুনছেন আমার গান?
.
হুম,বড় হয়ে মাহফুজুর রহমানের মতন হবেন দোয়া করি
.
আপনার দোয়া লাগবে না আমার হুহ!
আমার এমবির টাকাটাও নিয়ে গেলো,বেয়াদব একটা!
.
ছোঁয়া মন খারাপ করে বাসায় এসে নিজের রুমে ঢুকলো,আজ আর এফবিতে যাওয়া হবে না,কাল বরং বাবাকে বলে টাকা নিয়ে এমবি নিবো
.
ছোঁয়া!!
.
কি মা?
.
ইতি কি কোনো কাজই করবে না?সেই কখন ছাদে গেসে যত ডাকি আসতেসেই না
তুই গিয়ে ওকে ডেকে আন না,কাল বৌভাতে যে সব মশলাপাতি লাগবে সব কিছুর লিস্ট করতে হবে,তুই তো পারবি না ইতি পারবে
.
আচ্ছা যাচ্ছি

বুঝার চেষ্টা করো মিতুল!আমি কাল সকালেই তোমার সাথে মিট করবো,ঢাকায় এভাবে আসা হবে আমি বুঝতেই পারিনি,হ্যাঁ তুমি তোমার বাসার বারান্দায় এসে দাঁড়াইও আমি হাজির হবো
ওকে,সরি তো,বুঝতেসো না কেন?আজ সময় পেলাম না,দাদুর খেয়াল রাখতে হচ্ছে বলে তোমার সাথে দেখা করতে পারিনি
.
ছোঁয়া লুকিয়ে শ্রাবণের কথা শুনছে,ছাদে যাওয়ার সময় বাইরে শ্রাবণের কথা শুনতে পেয়ে দেখতে এসে দেখলো এই অবস্থা
“ওরেহ রে,এই টিচার দেখি প্রেম ও করে,তাও আমার বাসার পিছনের সাইডে লুকিয়ে??”
ছোঁয়া ফোন বের করে ভিডিও করে নিলো,তার শত্রুর বিপক্ষে যেকোনো কিছু পেলেই মোবাইলবন্দি করে নেয় সে
এই অস্ত্র ভবিষ্যতে কাজে লাগানো যাবে
ছোঁয়া শয়তানি হাসি দিয়ে ছাদের দিকে গেলো ইতিকে ডাকতে,ইতি ছাদে দাঁড়িয়ে রিয়ানের সাথে কথা বলছে আর চুল নিয়ে খেলা করছে,ছোঁয়া ওকে আসতে বলে নিজেও নিচে নেমে আসলো,নিজের রুমের দিকে চলে যাওয়া ধরতেই থেমে গেলো অভ্রকে দেখে
অভ্র একা এসেছে,সাথে প্রিয়াকে দেখা যাচ্ছে না,সে আবিদের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত
ছোঁয়াকে দেখতে পেয়ে হালকা হেসে বললো “এক গ্লাস পানি হবে?’
.
ছোঁয়া দৌড়ে গিয়ে পানি এনে দিলো ওকে
.
অভ্র পানি খেয়ে ছোঁয়াকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবিদ প্রশ্ন করলো প্রিয়াকে কেন আনেনি
.
অভ্র হেসে দিয়ে বললো”ব্যাটা!আমার বউয়ের খবর বাদ দে,আগে বল তুই রুমে যাবি কবে?”
.
আরে ধুর,সবে ৯টা বাজে,এত রাতে কেউ ঘুমায় নাকি?
.
অভ্র আবিদের ঘাড়ে হাত দিয়ে বললো “ছোঁয়া!যাও নিজের রুমে,আমাদের দোস্ত দোস্তের পার্সোনাল কথা আছে”
ছোঁয়া এতক্ষণ ড্যাবড্যাব করে অভ্রকেই দেখে যাচ্ছিলো
হঠাৎ অভ্রর আদেশ শুনে নিজের রুমে এসে দরজা লাগালো সে
তারপর ড্রয়ার থেকে একটা ডাইরি বের করে সেটার ৭৩নাম্বার পেইজ থেকে একটা ছবি বের করলো,ছবিটা অভ্রর
ছোঁয়ার ভালোবাসা ছিল অভ্র,অবশ্য এখনও সে অভ্রকেই ভালোবাসে,সেই ২বছর থেকে সে ভালোবেসে এসেছে এই একজনকেই
আফসোস! অভ্র কখনও ওকে ভালোবাসেনি,অভ্রর পরিবার নাকি শ্যামলা মেয়ে একদম পছন্দ করে না
কোনো একদিন অভ্র ও হেসেছিল ছোঁয়ার সাথে হাঁটতে হাঁটতে
তবে সেটা ছিল আবেগ
বাস্তব তো এই যে কঠিন চেয়ে কঠিনতর,এভাবে তার চেহারার রঙ এত বড় একটা বাস্তব তুলে ধরবে তা জানা ছিল না ছোঁয়ার
তা যদি সে জানতো তবে প্রথম যেদিন অভ্রকে আবিদের বাইকে দেখেছিল,সেদিন চোখ ফিরিয়ে নিতো,অভ্রকে পানি দেওয়ার সময় অভ্র যখন ওর দিকেই অপলক দৃষ্টিতে চেয়েছিল তখন সে চাহনিতে বোঝা উচিত ছিল এই চাহনির সময় বেশ অল্প,অস্থায়ী
হয়ত অভ্রর দোষ নেই!তার পরিবারের বিরুদ্ধে সে কেন যাবে
আমি তো আহামরি কিছু না যে আমার বিরুদ্ধে না গিয়ে সে তার পরিবারের বিরোধীতা করবে
আমি সেটা বুঝে নিয়েছি তাই তো আজও অভ্রকে সেই সম্মান দিই যা তার প্রাপ্য
তবে নিজের ভালোবাসার মানুষকে এভাবে চোখের সামনে অন্যের হতে দেখা বেশ কষ্টের,সয্য করতে পারি না
আমার শরীরে সমস্ত দাগ সে রাগের প্রমান,রাগ হলেই শরীরকে কষ্ট দিই তাহলেই রাগ গায়েব হয়,তবে প্রিয়া সুখী হোক এটাই চাই,সুখী হবেই বা না কেন,তার যে সাদা চামড়া,অভ্র খুশি আর তার সাথে তার পরিবারও
আমার শুধু ভয় হয় ইতি আপুর বিয়ে হয়ে গেলে যখন বাবা আমার জন্য বিয়ের সব প্রস্তুত করবেন তখন তো একের পর এক রিজেক্ট করে চলে যাবে,অভ্রর পরিবার আমাকে পছন্দ করেনি বাকি পরিবার কি করবে?
সেই অপমান কিভাবে সইবো তাই ভাবী সারাক্ষণ
ইতি আপু তো বিএ পাস করলেই তার বিয়ে হয়ে যাবে রিয়ান ভাইয়ার সাথে
তখন তো আমার পালা!
.
অভ্র চলে যাচ্ছে,ছোঁয়া জানালা দিয়ে উঁকি মেরে অভ্রর চলে যাওয়া দেখছে,অভ্র বাইকে বসতেই ছোঁয়ার দিকে তাকালো হুট করে
.
ছোঁয়া চমকে লুকিয়ে পড়লো,এভাবে অভ্র ওর অবস্থান বুঝতে পারবে তা সে একদমই ভাবতে পারেনি
অভ্র হেসে দিয়ে চলে গেলো
ছোঁয়ার খুব কষ্ট হচ্ছে
কেন সে অভ্রর হলো না?কি দোষ ছিল তার,শুধু এই রঙ,এই রঙ!!
.
ছোঁয়া রেগে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো,যতদূর চোখ যাচ্ছে হেঁটে যাচ্ছে সে
যেতে যেতে ধাক্কা খেলো শ্রাবণের সাথে
.
কি হলো?এবার কি চুরি করতে আসছেন?আমি ৫০০টাকা দিব না বলতেসি!
.
ছোঁয়ার চোখ মুখ দেখে শ্রাবণ আর কিছু বললো না,চোখ লাল হয়ে আছে আর তা থেকে পানি বেয়ে বেয়ে পড়তেসে
ছোঁয়া শ্রাবণের কথায় পাত্তা না দিয়ে হেঁটে চলে গেলো
শ্রাবণ ও আর পিছন ফিরে তাকালো না,দোকানে এসেছিলো দাদির জন্য প্রেসারের ঔষুধ কিনতে

পরেরদিন সকাল সকাল একটা ৩তলা বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবণ,হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ আর একটা চকলেটের বক্স
.
বারান্দায় এসে মিতুল মুচকি হেসে হাত দিয়ে ইশারা করে নিচে নেমে গেলো সে শ্রাবণের কাছে
সাড়ে ৩বছর হলো ওদের সম্পর্কটার!!
এতটা দিন পর দেখা হলো তাও শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও পারলো না মিতুল
আশেপাশে সব বাসা বাড়ি
কখন কে কোথায় থেকে সব দেখবে কে জানে
বাবাকে বললে বিপদ!
.
শ্রাবনের হাত থেকে গিফট নিয়ে হেসে চেয়ে রইলো সে
কতদিন ধরে শ্রাবনকে সে দেখেনি,শ্রাবন ছুটি পেলেই যখন আসে তখনই ওর সাথে দেখা করতে আসে
এদিকে সকাল হতেই ছোঁয়ার মা এক চিৎকার করলেন,ছোঁয়া আবার হাত কেটে বসে আছে,মা এই নিয়ে কতবার যে চিৎকার দেয়,ছোঁয়া এর জন্যে চড় ২/৩টা ও খেয়েছে,এখন সে ছাদের এক কোণায় বসে আছে চুপটি করে
হাতে পোলার আইসক্রিমের খালি ডিব্বা,সেটায় পানি আর শেম্পু দিয়ে মিক্স করে বাবল ফুলিয়ে বাইরে ফেলছে
সবাই বৌভাতের কাজ নিয়ে ব্যস্ত,বাসার পাশের উঠানে সবে কাজ হচ্ছে
ইতি ছাদে এসে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”কি সমস্যা তোর??রেডি হোস না কেন??আজকে যে আবিদ ভাইয়ার বৌভাত তা জানা আছে তোর??
.
আমি তো রেডিই
.
এটা রেডি??মুখে ফেয়ার এন্ড লাভলি কি তোর বোন লাগাবে?
.
কিছু লাগাবো না,এত রঙঢং করে কি হবে আমি তো আর অভ্রকে পেলাম না
.
তাই তো ছোট থেকে তোকে বলসি ক্রিম মাখ ক্রিম মাখ
.
আপু প্লিস,যে আমাকে বিয়ে করবে সে আমার ঘুম থেকে ওঠা চেহারা দেখেই প্রেমে পড়বে,সাময়িক ফর্সা হয়ে কি লাভ একদিন না একদিন সবাই জানবে সত্যিটা
আর আমি এত লুকোচুরি পারি না
.
তোর যা খুশি কর যা

তোমার ছোট মেয়েকে সামলাও,ডেইলি ওর এমন কাটাকাটি দেখে আমার খাওয়া দাওয়া উঠে গেসে,কেন এমন করতেসে সে??
.
আমি কি করতে পারি??বড় টাকে রেখে তো ছোট টাকে আগে বিয়ে দিয়ে দিতে পারি না
.
তুমি ওরে বুঝাও,কসম দাও তাহলে আর করবে না ও তোমার কথা রাখবে
.
অবশেষে বাবা এত কাজ ফেলে ছাদে আসলেন,ছোঁয়া এখনও বাবল ফুলাচ্ছে
বাবা ওর পাশে বসে ওর হাত টেনে দেখে বড় একটা নিশ্বাস ফেললেন
.
মা তুই নিজেকে এমন আঘাত কেন করিস?তার জন্য যে তোর রঙটাকে সবচেয়ে বেশি অবহেলা করেছে??
যার কাছে তোর মনের মূল্য নেই তোর বাহ্যিক রুপের কথা ভেবে যে তোকে বিয়ে না করে আরেকজনকে বিয়ে করে নেয় সে তোকে ভালোবাসেনি কখনও বাসতো ও না
.
বাবা আমি তো ভালোবেসেছি
.
জানি মা,কিন্তু কিছু করার নেই,সব আল্লাহর হাতে,হয়ত আল্লাহ তোর জন্য এমন কাউকে রেখেছেন যে তোর মনটাকেই ভালোবাসবে
একটু বুঝ মা আমার,এভাবে নিজেকে কষ্ট দিস না,তুই তো আমারই মেয়ে,আমার কষ্ট হয় তোর শরীরে এমন ক্ষত দেখলে
এখন কসম দে আর কখনও এমন করবি না
.
বাবা চলো এখন,বৌভাতের সব রেডি করতে হবে তো
পিউ ভাবীকে সাজিয়ে দিতে হবে
.
ছোঁয়া কসম না দিয়েই চলে গেলো,রাগ কমানোর একমাত্র উপায় কিনা কসম দিয়া অফ রাখবে এটা অসম্ভব
.
গন্ডারটা নেই মনে হয়,চলে গেসে,আহা শান্তি!!
.
ছোঁয়া মুখটা ধুয়ে চলে গেলো আবিদের রুমে,আবিদ ভাইয়া ওর সাথে কথা বলতেসে না যখন থেকে শুনছে ছোঁয়া হাত কেটেছে
ছোঁয়া পিউকে সাজানোয় হেল্প করতেছে,ইতি গেছে ছবি তুলতে,ক্যামেরাম্যান কে দিয়ে ইচ্ছেমত পিক তুলবে যেন আগামী ৫/৬মাসের ফেসবুকের প্রোফাইল পিক রেডি থাকে,একের পর এক পোস্ট করবে
.
নাও তোমাকে সাজিয়ে দিলাম,এবার চলো স্টেজের দিকে,তোমার বর অপেক্ষা করছে তোমাকে দেখার জন্য
.
ছোঁয়া?আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আবিদ তোমার সাথে রাগ করেছে,কি হইসে?
.
কিছু না তো,হুদাই ও রাগ করে এখন তুমি চলো তোমার আম্মু আব্বু আর শুটকি থুক্কু তোমার ছোট ভাই চলে আসছে
.
ও আজীবন এমন শুটকিই থাকবে,আমিও শুটকি ডাকি?
.
হিহি!
.
ছোঁয়া চুল বেঁধে বাসা থেকে বের হয়ে দেখলো সবার আগে শ্রাবণকে
শ্রাবণ কয়েকটা ছেলের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে