একগুচ্ছ রক্তজবা পর্ব-০৯

0
1256

#একগুচ্ছ রক্তজবা
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৯

কাব্য নামের সেই ভাইয়াটা সবার সাথে কুশল বিনিময় করে আম্মুর সাথে উপরে চলে যায়।আমি আর সুজন ভাইয়াও কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি সাথে সাফাও আছে।সাফা আমার এক বছরের জুনিয়র মানে সাফা ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে আর আমি সেকেন্ড ইয়ারে।আর ভাগ্যক্রমে তিনজন একই কলেজে পড়ি,আমরা তিনজন গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছি গাড়ির জন্য।ড্রাইভার গাড়ি বের করছে গ্যারেজ থেকে।গাড়ি গেটের কাছে আসতেই আমরা গাড়িতে উঠে বসব এমন সময় চোখ যায় ড্রাইভিং সিটে।ড্রাইভিং সিটে বসা মানুষটাকে দেখে আমি ত খুব অবাক,পাশে তাকিয়ে দেখি সুজন,সাফা দুজনেও বেশ অবাক হয়েছে।সুজন ভাইয়া অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করে,,,

“ভাইয়া তুই আজ গাড়ি নিয়ে বের হলি?তুই ত বাইকেই চলাচল করিস,আজ হঠাৎ গাড়ি!বুঝলাম না কিছু।”

সাদাফের সোজাসাপটা উত্তর,,,

“ইচ্ছে হয়েছে তাই গাড়ি নিয়েছি,চুপ করে এবার গাড়িতে বস সবাই।”

সাফা এবার চিল্লিয়ে বলে উঠে,,,

“মানেহ?তুমি আমাদের কলেজে নিয়ে যাবে?”

“এত অবাক হওয়ার কী আছে?আমি কী তদের কলেজে নিয়ে যেতে পারব না নাকি?এবার বেশি কথা না বলে গাড়িতে বস।”

এতক্ষণ আমি নিরব দর্শক হয়ে সবটা দেখছিলাম।সাদাফের কথায় সাফা আর সুজন গাড়িতে উঠে।সুজন সাদাফের পাশে বসতে নিলে সাদাফ বলে উঠে।

“তুই পিছনে বস সাফার সাথে।আর সাবিহা এখানে এসে বসো।”

সাদাফের কথায় সুজন মুচকি হেঁসে পিছনে সাফার পাশে বসে।সাফা এবার সুজন ভাইয়াকে খোঁচা মেরে বলে উঠে।

“তোর কী আক্কেল নাই হুম!ভাইয়ার পাশে ভাবিকে বসতে না দিয়ে নিজে বসতে যাচ্ছিলি।”

“সরি রে কথাটা একদমই মাথায় ছিল না।”

আমি ওদের সব কথাই বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে শুনছি।কিন্তু গাড়িতে উঠছি না,এবার সাদাফ আমার দিকে তাকিয়ে ধমকে বলে উঠে।

“দাঁড়িয়ে আছো কেন?তোমাকে কী দাওয়াত দিতে হবে গাড়িতে বসার জন্য!”

আমি উনার কথায় তাড়াতাড়ি মাথা দুই পাশে নেড়ে না বুঝাই।তারপর উনার পাশে গাড়িতে বসি,আমি বসতেই উনি বলেন সিট বেল্ট লাগাতে।আমি উনার কথায় সায় দিয়ে সিট বেল্ট লাগিয়ে নেই আর উনি গাড়ি স্টার্ট দেন।

বেশ কিছুক্ষণ পর কলেজ ক্যাম্পাসে এসে উপস্থিত হই আমরা।গাড়ি থামতেই আমি সিট বেল্ট খুলতে থাকি।ততক্ষনে সুজন ভাইয়া আর সাফা গাড়ি থেকে নেমে পাশে দাঁড়িয়ে আছে।সাদাফ এবার গাড়ি থেকে মাথা বের করে সুজন ভাইয়াকে বলেন।

“তরা যা সাবিহা একটু পর আসছে।”

সাফা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সুজন সাফার মুখ চেপে ধরে হেঁসে বলে উঠে।

“আচ্ছা ভাইয়া আমরা যাচ্ছি,আর বউমনি তোমার ক্লাস শেষে আমাকে কল দিও।”

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলে সুজন ভাইয়া সাফাকে টেনে নিয়ে চলে যায়।আর সুজন তৃপ্তির হাসি হেঁসে মনে মনে বলে উঠে।

“ভাইয়ার আচরনে মনে হল ওদের সম্পর্কটা আগের থেকে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে।দোয়া করি ভাইয়া যেন ভাবিকে মেনে নিয়ে সুখে সংসার করতে পারে।”

______________________________________

গাড়িতে বসে হাত কচলাচ্ছি,আর ভেবে চলেছি উনি আমাকে এভাবে আটকে কেন দিলো?কিছু বলবেন উনি?কিন্তু কী বলবেন?এই প্রশ্নটা উনার দিকে ফিরে যেই করতে যাব তখন উনিই বলে উঠেন।

“কাব্য আমার মামাত ভাই,সবসময় আমার জিনিসে হাত দেয়া অর স্বভাব।তুমি আমার স্ত্রী ত আমি চাই না কাব্য ভুল করেও তোমার সাথে কিছু করুক।তাই স্বামী হিসেবে তোমাকে একটা অনুরোধ করছি কাব্যর থেকে দূরে থাকবে।কোন কথা বলবে না অর সাথে,আর বিয়ের পর আমাদের মধ্যে যা হয়ে এসেছে তা যেন বিন্দুমাত্র কাব্য জানতে না পারে।অয় এসব জানতে পারলে আমাদের মাঝে ঝামেলা করতে পারে।”

উনি একসাথে কথাগুলো বলে থামলেন।আর আমি উনার সব কথা মন দিয়ে শুনছিলাম।উনার মুখে আমার স্ত্রী শুনে মনের ভিতরে সুখের বাতাস বয়ে গেলো।

“আমার এই অনুরোধটা কী তুমি রাখবে?”

উনার কথায় আমি হাতে ইশারায় বলি।

“এভাবে অনুরোধ কেন করছেন?আপনি আমার স্বামী আদেশ করবেন।সে অধিকার আপনার আছে তাই এভাবে অনুরোধ করবেন না।”

“বুঝি নি কী বললে!”

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ব্যাগ থেকে খাতা বের করে লিখলাম।

“আপনি আমার কোন কথাই বুঝতে পারেন না।এখন মনে হচ্ছে আমার সবসময় একটা খাতা আর কলম হাতে রাখতে হবে আপনার সাথে কথা বলার জন্য।”

লিখে খাতাটা উনার দিকে এগিয়ে দিলাম তাতে উনি একটু হাসলেন।হাসিটা কেমন অস্বাভাবিক ছিল মনে হল জোর করে হেসেছেন।

“আর কয়টা দিন তারপর আর তার প্রয়োজন হবে না।”

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালে উনি হকচকিয়ে উঠেন।

“মানে আর কয়টা দিন এভাবে একটু মেনেজ করো ততদিনে আমি শিখে নিব তোমার ইশারায় বলা কথাগুলো।”

বিনিময়ে আমি হাসলাম,উনি আবারও বলে উঠেন।

“বললে না ত আমার অনুরোধটা রাখবে কী না!”

আমি এবার উনার হাত থেকে খাতাটা নিয়ে লিখলাম।

“আপনি এসব নিয়ে চিন্তা করবেন না আমি কাব্য ভাইয়ার থেকে দূরেই থাকব।উনি কিছু জানবেন না গত কয়দিনে আমাদের মধ্যে কী হয়েছে।আর আপনি আমাকে এভাবে অনুরোধ না করে আদেশ করবেন।আপনি এভাবে অনুরোধ করলে নিজের কাছে বড্ড ছোট মনে হয় নিজেকে।”

লিখে উনার দিকে এগিয়ে দেই,লেখাটা পড়ার পর উনার ঠোঁটের হাসি প্রসারিত হয়।সেটা দেখে আমারও ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে।উনি এবার আমার খাতাটা এগিয়ে দিয়ে বলেন।

“যাও এবার।”

আমিও খাতাটা নিয়ে ব্যাগে ভরে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যাই।

আর সাদাফ গাড়ির সিটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বাঁকা হেঁসে বলে উঠে।

“মেয়েটা বড্ড বেশি বোকা,যা বুঝালাম তাই বুঝল।অবশ্য এর পিছনে আমার এমন নিখুঁত অভিনয়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
কাব্যর থেকে লুকানোর জন্যই এসব নাটক করা।ভাগ্য ভালো গতকাল মামা বিকালে ফোন করে জানিয়েছে কাব্য আমাদের বাড়িতে আসছে আজ।নয়ত আমি জানতেও পারতাম না কাব্য আসছে আমাদের বাড়িতে।আর কাব্য এসে যদি দেখত আমি সাবিহার সাথে এমন খারাপ আচরন করি তবে আমি রাতারাতি ভিলেন হয়ে যেতাম।আর সেটা কাব্য নিজে করত।মিডিয়া যেমন হিরো বানিয়েছে তেমনি মিডিয়া আমাকে ভিলেনও বানিয়ে ফেলত।কোন দুঃখে যে কাব্যটা সাংবাদিক হতে গেলো।এই কাব্যর জন্য এখন এই বোবা মেয়ের সাথে স্বামী স্ত্রীর ন্যাকা অভিনয় করতে হচ্ছে।বিরক্ত লাগছে এসবে তবে যাই হোক কাব্য আর জানবে না যে আমার আর সাবিহার সম্পর্ক অস্বাভাবিক।সাবিহার মুখও কী সুন্দর করে বন্ধ করে দিলাম।
উফফ সাদাফ তোর কত্ত ট্যালেন্ট,তুই বিজনেস না করে নায়ক কেন হলি না?এমন অভিনয় করে ত সারা বাড়ি এওয়ার্ড দিয়ে ভরিয়ে ফেলতে পারতি।”

শেষের কথাটা আফসোসের সাথে বলে সাদাফ গাড়ি স্টার্ট দেয়,উদ্দেশ্য অফিস যাওয়া।

____________________________________

পাঁচটা ক্লাস করে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে আসি আমি আর আমার বান্ধবী তামান্না।তামান্না আমার মাথা খেয়ে ফেলছে একদম,হঠাৎ করে বিয়ে করে ফেললাম ওকে দাওয়াত দেই নি কেন?দাওয়াত না দিলেও জানাতে পারতাম।জানাই নি কেন?
এমন নানা প্রশ্ন করে মাথা খাচ্ছে বাঁচাল মেয়েটা।
আসলে আমার বিয়েটা এমনই হুট করে হয়েছে যে কাউকেই জানানো হয় নি।কবুল বলে আর রেজিস্ট্রি পেপারে সই করেই বিয়ে হয়েছে আমাদের।এর বেশি কিছু হয় নি,না হয়েছে গায়ে হলুদ আর না এসেছে কোন আত্মীয় স্বজন।কথাগুলো ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একটা গাছের নিচে বসি আমি।তখন তামান্না হঠাৎ করেই চিৎকার দিয়ে বলে উঠে।

“দোস্ত আইসক্রিম,খাবি?”

আমি মাথা নেড়ে সায় জানালাম।খুব গরম লাগছে আর এখন আইসক্রিম হলে মন্দ হবে না।

“তবে উঠ আইসক্রিম খাব।”

আমি হাতের ইশারায় বলি।

“গরম লাগছে খুব এখন রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে না।তুই বরং নিয়ে আয় আমি এখানেই আছি।”

তামান্না আমার ইশারা বুঝতে পেরে আমাকে আর জোড় করল না,তামান্না চলে যায় আইসক্রিম আনতে।আর আমি ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে লক খুলছিলাম তখন পাশ থেকে হঠাৎ কেউ কানের কাছে মুখ নিয়ে চিল্লিয়ে উঠে।
ভয়ে আমার হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে যায়।আমি ভয় পেয়ে পাশে তাকিয়ে যাকে দেখি তাতে আমার চক্ষু চড়কগাছ।

#চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে