একগুচ্ছ কদম পর্ব : ৩

0
3286

একগুচ্ছ কদম ?
পর্ব : ৩
লেখা : আহমেদ রিপা

-বলেছিলাম আমাকে নিয়ে খেলতে এসো না কিন্তু তোমরা দুভাই বোন আমার জীবন নিয়ে খেললে যে ছেড়ে কিভাবে দেই ( একা একা বসে কথা বলেছে রিদানশ চোখ তার রিদিতার রুমে ভাবছেন ওর রুমে কিভাবে চোখ আজকে সকালেই রিদানশ রিদিতার পুরো বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে )

চলুন জেনে আসি ৪বছর আগে কি হয়েছিল !
“” এই রিদি রিদি জানিস আজকে দাভাই আসবে কানাডা থেকে আমার যে কি খুশি লাগছে জানিস না ( মোহো )
-তোর দাভাই আসছে আমি কি করবো ( ভ্রু কুঁচকে রিদি )
-তুই নাচবি যা নাচ
-হুহ বাসায় যেতে হবে আমার ভাইয়া অফিস থেকে এসে পড়বে রে !
-তোর ওই ভাইকে তুই এতো ভয় পাস কেন আমিতো পাই না।
-তুই পাবি কেন ভাবিজি ( বলেই হাসতে লাগলাম )।
-যাহ তোর ভাই তো বুঝেও না বুঝার ভান করে ( চোখ দুটো ছলছল করতে লাগলো ) ।
-আচ্ছা মেরি মা এখন কান্না বন্ধ কর ।
-ভাইয়া চলে আসছে চল চল নিচে যাই ( বলেই দৌড়াতে লাগলাম )
-আচ্ছা চল ।

নিচে গিয়েই দেখি একটা লম্বা ফর্সা ইয়াং ছেলে দাঁড়িয়ে আছে । চোখে কি মায়া যে তাকাবে ওই মায়াতেই পড়ে যাবে তার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম কখন যে মোহো ডাকতে লাগল বুঝতে পারলাম না !

-আমার ভাইকে দেখে প্রেমে পড়ে গেলি না কি হুম হুম ( বলেই ধাক্কাতে লাগলো আমাকে আর আমি লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম )
-মোহো মাই সিস ( রিদানশ )
-দাভাই ( বলেই জড়িয়ে ধরলাম ) ।
-কেমন আছিস। আমি চলে এসেছি এইবার তোকে শশুর বাড়ী পাঠিয়ে দিব ওকেহ ( কোনোমতে দৌড়ে উপরে চলে গেল আর এদিকে আমি হাসতে হাসতে বসে পড়লাম আর মোহো চিল্লাতে লাগলো ) ।

নিচে ওই মেয়েটি কে একদম মায়াবী লাগে । মেয়েটি জন্য মনে কিছু নিষিদ্ধ অনূভুতি জাগছে।এই কি তাহলে আমার একগুচ্ছ কদম হবে । ও কি আমার নিষিদ্ধ ভালোবাসার মানুষটি‌ হবে । উফফফ কি ভাবছি আমি এগুলা পাগল হয়ে যাব।

-রিদি কোথায় ছিলে‌ তুমি ( রিদির ভাই মাহিত খান )।
-ভা ভাই মোহোর বাসায় গিয়েছিলাম ( বলেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম )।
-রিদি কোন ক্লাসে পড়ো তুমি
-ভাই কেনো ক্লাস ১০ এ
-তোমার পরিক্ষা সামনে মনে আছে তোমার বাহিরে ভাবা বন্ধ কর ।
-আ আচ্ছা ভাই
-যাও

রুমে গিয়ে শুয়ে পরলাম ভাবতে লাগলাম অচেনা মানুষটিকে নিয়ে।কেন এতো কাছের মনে হলো। তাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে উঠে স্কুলের জন্য রেডি হতে লাগলাম আজকে মোহো আসবে না । আজকে ওর ভাইয়া ওকে দিয়ে আসবে আর আমার ভাইয়ের সময়ই নেই । বলে দেখি ভাইয়াকে যদি নিয়ে যায় !

-ভা ভাই
-বল
-আমাকে আজকে দিয়ে আসবি স্কুলে
-গাড়ি নিয়ে চলে যা আমার কাজ আছে
-আ আচ্ছা ভাই ( চোখ দুটো ছলছল করে ওঠলো মাথা নিচু করে বেড়িয়ে আসলাম )

-দাভাই ওই দেখ মোহো এসে পড়েছে !
-কোথায় ?
-ওই যে।
-(গাড়ি থেকে নামছে কি মায়াবী সেই মুখ চোখ নাক লাল হয়ে আছে মনে হচ্ছে কান্না করেছে।)

-কিরে তোর চোখমুখ লাল কেন কান্না করেছিস ( বলেই আমার মুখ টেনে দেখতে লাগল )।
-আরে না কান্না করবো কেনো বাদ দে এসব ।
-চল তোকে দাভাই এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
-চল ।
-দাভাই এটা রিদিতা আমার বেষ্টু ।
-হেলো কদম সরি রিদিতা কেমন আছো ।
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া । আপনি কেমন আছেন।
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো যাও তাহলে তোমরা ক্লাস শুরু হয়ে যাবে ।
-হ্যা চল মোহো ।

“বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান
আমি দিতে এসেছি শ্রাবনের গান!!
মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ডেকে তারে
এই যে আমার সূরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান”
আজ এনে দিলে , হয়তো দিবে না কাল _
রিক্ত হবে যে তোমার ফুলের ডাল!!
( দেবেশী চক্রবর্তী )

মনে মনে গুনগুন করতে লাগলো রিদানশ। তাকিয়ে আছে রিদিতার যাবার পথে । ভাবছে এই দৃষ্টিতেই যে তার সর্বনাশের শুরু। কি মায়া সেই চোখে । সেদিন থেকে রিদানশের মনে একটু একটু করে রিদিতার জন্য অনূভুতি জাগতে শুরু করে। অপরদিকে রিদিতার মনেও জাগতে শুরু করে রিদানশের জন্য অনূভুতি কিন্তু বুঝতে পারে না। রিদিতার মধ্যে পরিবর্তন আসতে শুরু করে যা রিদিতার ভাই মাহিত খেয়াল করে এবং একদিন রাতে তাকে ডেকে নিয়ে যায়।

-ভাই ডেকেছিলে ?
-হ্যা তোমার পড়াশোনার কি খবর !
-ভালো ভাই
-ইদানিং শুনলাম তোমার পড়াশোনার অবনতি হচ্ছে জানতে পারি কেন?
-ভা ভাই আমি তো ঠিকঠাক মতোই পড়ছি ( বলেই মাথা নিচু করে বসে আছি )
-কালকে থেকে সম্পূর্ন ভাবে তোমার বাহিরে যাওয়া নিষেধ। স্কুলে আমি দিয়ে আসব‌ তোমাকে। অন্যদিকে মন দেয়ার চেষ্টা করো না কারো জন্য ভালো হবে না। আমি তোমাকে ছোট থেকে নিজের সন্তানের মতো বড় করেছি আমি চাই না তুমি কোন ভুল করো । বাপি বাহিরে থাকে আর তোমার সম্পূর্ন দায়িত্ব আমাকে দিয়ে গেছে তুমি কোন ভুল করলে তার দায় সম্পূর্ণ আমার উপর আসবে। তুমি কোন ভুল করলে তার ব্যর্থতা আমার হবে তুমি কি বুঝতে পারছো আমি যা বলেছি ?
-হ্যা হ্যা ভাই আমি বুঝতে পেরেছি আমি তোমার মাথা নিচু হতে দিবো না ভাই ।
-যাও ঘুমিয়ে পড়ো ।

রিদিতা যাবার পরে মাহিত বেলকনিতে এসে দাঁড়ায় ভাবতে থাকে তার ছেলেবেলা !!
ছোট বেলায় রিদিতাকে জন্ম দিতে মাম্মা মারা যায় তখন মনে হয়েছিল কেন আমি বোন চেয়েছিলাম কিন্তু বাপি বুঝিয়েছিল জন্ম মৃত্যু আল্লাহর হাতে । সেই ১২ বছর বয়স থেকে রিদিতাকে একটু একটু করে বড় করতে থাকি ।
রিদিতাকে কখনো সামনে ভালোবাসা দেয়নি । আড়ালে ওর খেয়াল রেখেছি । আর বাপি সেই কলেজে থাকতেই আমাদের এখানে রেখে বাহিরে সেটেল হয়ে যায়। মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে তার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। রিদিতা কখনো বাপির ভালোবাসা পায়নি । ও নিজেও আমার মতোই একা । কলেজ লাইফে ভালোবেসেছিলাম একজনকে সে ভালোবাসেনি আমায় বেসেছে আমার কাছেরই অন্য কাউকে। তাকে ভালোবেসে আর কাউকে ভালোবাসতে পারিনি ।

“আমরা কাউকে এতটাই ভালোবাসে ফেলি
যতটা ভালবাসে ফেললে অন্য কাউকে
ভালোবাসার ইচ্ছটাই মরে যায়
সারাজীবনের জন্য মরে যায় ?”

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে