এই_ভালো_এই_খারাপ পর্ব-০৮

0
472

#এই_ভালো_এই_খারাপ(৮)
#Jannat_prema

চোখে মুখে সূর্যের কিরণ পড়তেই চোখ মুখ কুঁচকালো ভোর। হাত দিয়ে চোখ ঢেকে পিটপিট করে তাকালো৷ ধীর ভাবে উঠে বসে পুরো ঘরে একবার তাকালো৷ সহসা কপালে ভাজ পড়লো ভোরের। আবদ্ধকে দেখা যাচ্ছে না রুমে। নিজের পাশটা খালি৷ গায়ে ওড়না জড়িয়ে উঠতেই ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজে সেদিকে তাকালো ভোর। আবদ্ধকে দেখে ভোরের হৃদপিণ্ড চলাচল যেনো থেমে গেলো কিছুক্ষণ। উদাম গায়ে কোমড়ে তোয়ালে পেঁচিয়ে বেরিয়ে আসলো আবদ্ধ। তার ফর্সা বুকের কালো লোমে মুক্তর দানার মতো পানি চিকচিক করছে৷ মাথা মুছতে মুছতে বিছানায় তাকালো আবদ্ধ। ভোর তার দিকে ঘোর লাগা নয়নে তাকিয়ে আছে৷ আবদ্ধ বাঁকা হেসে এগিয়ে আসলে ভোরের নিকট। ভোরের সেদিকে খেয়াল নেই৷ সে তো আবদ্ধর বুকের দিকে তাকিয়ে আছে। আবদ্ধ যে কখোন তার একদম কাছে আসলো টের পেলো না সে। আবদ্ধ মাথা মুছে তোয়ালেটা ছুড়ে মারলো চেয়ারের উপর। ভোরের মুখের দিকে ঝুকে তাকিয়ে আছে সদ্য ঘুম থেকে উঠা তার হৃদয়ের রানির দিকে। যে তার পুরোটা জুড়ে জড়িয়ে আছে। ভোরের ঘুমন্ত ফুলো, হালকা তেলতেলে চেহারাটায় যেনো এক আকাশ মুগ্ধতা মিশে আছে। আবদ্ধর চোখে দৃষ্টি রাখলো৷ তার ঘোর এখনো পুরোপুরি কাটে নি। আবদ্ধ হঠাৎ বলে উঠলো,

” এভাবে চোখ দিয়ে গি*লে খাচ্ছিস কেনো? আমি তো তোকে আমার পাশে ঘিষতে নিষেধ করেনি।

ভোরের হুশ আসতেই মাথা নিচু করে ফেললো৷ আবদ্ধর কথার মানে বুঝতে পেরে কান গরম হয়ে উঠলো। নিজ মনে কথাগুছিয়ে বললো,

” তোকে বলোছিলাম না আমার কাছ থেকে দূরে থাকতে৷ কালকে তোর ওমন বিহেভিয়ারে আমি কিছু বলেনি বলে এই না যে তোকে বারবার সুযোগ দিবো৷ ”

আবদ্ধর বুকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে উঠে গেলো ভোর। আবদ্ধ হতভম্ব চোখে তাকিয়ে আছে। সে তো পুরোটা বিষয় না জেনে এতো অভিমান করে আছে।

” এভাবে উদাম গায়ে থেকে কি বুঝাতে চাইছিস তুই? তুই অনেক সুন্দর, হ্যান্ডসাম এটা বুঝাতে চাইছিস? ”

আবদ্ধ কপাল কুঁচকে তাকালো ভোরের দিকে৷ আবদ্ধ মুচকি হেসে বললো,

” তার মানে তুই আমাকে হ্যান্ডসাম, সুন্দর বলছিস? ”

” ককই বলছি। আমি মোটেও এমন কথা বলছি না। ”

তোতলানো স্বর ভোরের। কথাখানা বলেই জামা কাপড় নিয়ে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ভোর৷ আবদ্ধ সেদিক পানে তাকিয়ে হেসে ফেললো।

.

” এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো এখানে? ”

মায়ের কথায় ভয়ে হকচকিয়ে গেলো সকাল৷ বুকে থুথু দিয়ে ঢোগ গিলে মায়ের দিকে তাকালো।
শ্রাবন্তী মেয়ের দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছেন। সকাল মুখে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে বললো,

” ওই আআসলে__”

” কি আসলে আর কি নকলে পরে বলিস। আগে বল তুই আদিল বাবার রুমের সামনে দাড়িয়ে উঁকি ঝুকি মারছিস কেনো? ”

এবার মাকে কি বলবে৷ সে তো এসেছিলো আদিলকে একটু বিরক্ত করতে। আজকে এরা সবাই চলে যাবে৷ সকাল একা হয়ে যাবে। আপুটাও এখন আর এ বাড়িতে থাকবে না। কালকে সকালকে মশার সাথে তুলনা করায় চটে আছে। সকাল একটু আগেই আদিল যেখানে ঘুমিয়েছে সেই রুমের সামনে এসে দাড়ালো। ওমনি কোথা থেকে হাজির হয়ে ধমকে উঠলেন শ্রাবন্তী আক্তার।

” এখন তোর মুখে একটা থাপ্পড় লাগাবো। এমন বোবার মতো দাড়িয়ে আছোস কেনো?”

মায়ের ধমকে কেঁপে উঠল সকাল। মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো,

” ওই আশিক ভাইয়ার গিটারটা আদিল ভাইয়ার ঘরে। ”

” তো? ”

মায়ের প্রশ্নে গুলিয়ে গেলো মেয়েটা। আমতা আমতা করে বললো,

” আশিক ভাইয়া বললো উনার গিটরটা লাগবে৷ আমাকে পাঠালো নিয়ে যাওয়ার জন্য। ”

” সেটা তো আশিক নিজে এসে নিতে পারতো! ”

সকাল বেজায় বিরক্ত হলো মনে মনে। এতো জেরা করার কি আছে এখানে। একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। তবুও সকাল মিথ্যা বললো,

” আশিক ভাইয়ার তো পায়ে ব্যাথা করছে৷ আর আমি তখন উনার রুমে চা দিতে গিয়েছিলাম বিধায় আমাকে বললো গিটারটা একটু এনে দিতে৷ ”

মেয়ের মুখে আশিকের পায়ে ব্যাথা শুনে অস্থির হয়ে বললেন,

” সেকি! আমাকে তো বললো না। আহারে! তোর মাথায় কি এতোটুকু জ্ঞান আসেনি যে ওকে মুভ মলমটা দিতে। এখন সংয়ের মতো দাড়িয়ে না থেকে সর। কোনো কাজ তো করিস না৷ ঢ্যাং ঢযাং করে ঘুরে বেড়াচ্ছিস৷ খালারা কাজ করছে আর বোনঝি বসে বসে খাচ্ছে। মান সম্মানের কতো উন্নতি করছিস তুই। ”

সকাল ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে আছে মায়ের প্রস্থানের দিকে৷ এতো কথা বলার কি আছে? কিন্তু মা যদি আশিক ভাইয়ার কাছে যায়। যদি জিজ্ঞেস করে ওর পায়ে ব্যাথা করছে নাকি? তখন? তখন তো আশিক ভাইয়া সত্যি কথাটা বলবেন৷ সে যে মিথ্যা কথা বলছে, সেটা তো মা জেনে যাবে৷ এতো এতো চিন্তা নিয়ে পিছনে ঘুরতেই কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ার আগে সকালের কোমড় জড়িয়ে ধরলো আদিল৷ সকাল যখন তার মায়ের সাথে কথা বলছিলো তখনই রুম থেকে বের হয়েছে৷ তবে তা দরজা পর্যন্ত ছিলো তার দাড়ানো। শ্রাবন্তী আক্তার যেতেই সে দাড়ালো সকালের পিছনে। আর তখনই কাকতালীয় ভাবে সকালও পিছনে ফিরলো। সকাল চোখ বন্ধ করে আদিলের টিশার্ট খামচে ধরে আছে। বুকের ভিতর ঢিপঢিপ করছে ভয়ে। নাকে বাড়ি খাওয়ায় ব্যাথাও পেয়েছে৷ সকাল চোখ বন্ধ করেই বললো,

” সকালরে তুই শেষ। এবার মা তোকে ঝাটা পিটা করে বাড়ি থেকে বের করে দিবে। তখন তোকে ফুটপাতে থাকতে হবে। কেনো যে কোমড়টা ভাঙ্গতি গেলি৷ ”

আদিল বিরক্ত হলো৷ কর্কশ কন্ঠে বললো,

” লাইক সিরিয়াসলি সকাল? কি পাগলের মতো বকে যাচ্ছো। তুমি এখনো নিচে পড়োনি। ”

সকাল ঝট করে চোখ খুলে তাকালো৷ তার মুখ বরাবর আদিলের চেহরাটা দেখে বিদ্যুৎ বেগে সরে এলো৷ এতোক্ষণ আদিলের এতো কাছে ছিলো বলে অস্বস্তি হচ্ছে। আদিলের কোনো কথা না শুনেই দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসলো সকাল৷ এদিকে আদিল পুরো বেকুব বনে থম মেরে দাড়িয়ে আছে।

.

অনেকটা সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরোলো ভোর। আজকে আবারও শাড়ি পড়েছে সে। খানিকটা লজ্জাও পাচ্ছে এখন৷ তখনকার মুহুর্তটা ভাবলেই নিজেই নিজেকে গালি দিচ্ছে। আবদ্ধর উপর কেনো বারবার দূর্বল হচ্ছে সে৷ তাকে তো কঠিন হতে হবে৷ ছয়, ছয়টি বছর আবদ্ধ তাকে এক মানসিক কষ্টের মধ্যে রেখেছে। তাকে ধোকা দিয়ে পাড়ি দিয়েছিলো অন্যত্র। এতো সহজেই কি সব কিছু ভুলা যায়। রাতের বেলা তার কান্নার সাক্ষী ছিলো, এক আল্লাহ আর তার রুমের প্রতিটা জিনিস। কত রাত ভোর আবদ্ধর জন্য হাহাকার করেছে। সেগুলো চাইলেও ভুলা যাবে না।

আবদ্ধ এতোক্ষণ বারান্দায় দাড়িয়ে তার এসিস্ট্যান্টের সাথে কথা বলার মাঝে আচমকা চোখ আটকে গেলো সবুজ শাড়ি পড়া অপরুপ সুন্দরী তার বউয়ের দিকে। হুট করে বুকের ভিতরটা চিনচিন করছে। কলের ওপাশে স্যারের কোনো কথা না শুনে শাওন ডেকে উঠলো,

” স্যার! স্যার শুনছেন? আজকে কি একটু আসবেন৷ ইমার্জেন্সি প__”

খট করে কল কেটে দিলো আবদ্ধ । শাওনের বলা একটা কথাও তার কান অবধি পৌছালো কিনা বুঝা মুশকিল৷ সে তো স্থির হয়ে আছে৷ আবদ্ধ বুকে হাত দিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো ভোরের দিকে৷ সদ্য গোসল করে আসা রমণীর চুল থেকে এখনো ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরছে। সেদিকে তার কোনো হুস নেই। সে যেনো আকাশকুসুম ভাবতে ব্যাস্ত। সবুজ পাতার উপর পড়া পানিগুলো যেমন মুগ্ধ করে ঠিক তেমন আবদ্ধর ভোরের প্রতি মুগ্ধ করছে। আবদ্ধ হাসলো। এই মেয়েটার প্রতি তো সেই কবে থেকেই মুগ্ধ হয়ে আসছে আবদ্ধ। কোমড়ে উষ্ণ স্পর্শ অনুভব হতেই কেঁপে উঠলো ভোর৷ অতীতের স্মৃতি থেকে বের হয়ে চোখ বড় বড় করে চাইলো আবদ্ধর মুখের দিকে। আবদ্ধ নেশালো চাহনিতে তাকিয়ে আছে। ভোর এমন চাহনিতে ক্ষণে ক্ষণে শিউরে উঠছে৷ আবদ্ধ ভোরকে তার প্রসস্থ বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। ভোর তোতলানো সুরে বললো,

” কিকি করছিস আব__”

তৎক্ষনাৎ ভোরের ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে তাকে থামিয়ে দিলো আবদ্ধ। ভোরের ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে বললো,

” হুশশ। নো সাউন্ড বউ। ”

” ততুই কিকিন__”

শিরশির করে কেঁপে উঠল ভোর৷ আবদ্ধ পরম আবেশে তার ঠোঁট দুটো দখল করে নিলো নিজের মাঝে। ভোর চোখ বন্ধ করে খামচে ধরলো আবদ্ধর শার্টের কলার। পুরো গায়ে যেনো বিদ্যুৎ সংযোগ করে দিয়েছে কেউ৷ আবদ্ধ ভোরকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে ভোরের ঠোঁট দুটোয় চুমু খেতে লাগলো৷ অথচ এর পরে কি হতে পারে সেটা যেনো আবদ্ধ ভাবলোই না।

চলবে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে