#ঋতুর_স্মৃতি
#পর্ব_০৩
#Jechi
আমি-কিন্তু এটা তোমার ভুল ধারণা যে আমি তোমার সংসারে আসছি।রিহা আমি তোমার সংসারে আসিনি তুমি এসেছিলে আমার সংসারে।
আমার ৫ বছরে গড়া সংসারটায় তুমি এসেছিলে আমার সতীন হয়ে রিহা আমিতো আসিনি।
রিহা-সতীন হই আর যাই হই রাহাত তো আমারও স্বামী।আমার সন্তানের বাবা রাহাত।হ্যাঁ আমি মানছি আমি ভুল করেছি।কিন্তু আমি কি করতাম বলো আমি অবিবাহিত একটা মেয়ে বিবাহিত একটা ছেলেকে বিয়ে করেছি সংসার করার জন্য আর ওই সংসারে কিনা ওর প্রথম স্ত্রীও থাকবে।
আমি-জানো রাহাত কেনো তোমায় বিয়ে করেছে।কারণ আমি রাহাতকে বলেছিলাম তাই।হ্যাঁ ও যে দোষী না এটা আমি খুব ভালো করে জানি।ও পরিস্থিতির চাপে পরেই এমন করেছে রিহা।আর এমন ও না যে রাহাত বদলায়নি।হ্যাঁ বদলেছে শুধু মাত্র মানুষের এমন নিষ্ঠুর মানসিকতার কারণে।
(কান্না করে)
রিহা-ঋতু তুমি আমার কথাটা একবার ভাবো।
আমি-আমি তোমার কথা ভেবেছি বলেই আবার বেহায়ার মতো এই বাড়ীতে উঠে এসেছি রিহা।
(কাঁদতে কাঁদতে)
রিহা-ঋতু শান্ত হও এমন উত্তেজিত হওনা।এমন করলে বেবির ক্ষতি হবে ঋতু পিলিজ বুঝার চেষ্টা করো।(ঋতুর মাথায় হাত বুলিয়ে)
আমি-হুম!!!সরি রিহা আমি একটু বেশিই সিন- ক্রিয়েট করে ফেলেছি আমি আসছি হ্যাঁ।(এটা বলে আমি রুম থেকে বের হয়ে গেছি।আর নিজের রুমে এসে বসে বসে কাঁদছি।কাঁদছিলাম তখন কেও আমার কাঁধে হাত রাখে তাকিয়ে দেখি রাহাত আমার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
রাহাত-কাঁদছো কেনো ঋতু?
আমি-তোমাকে বলতে হবে?(কাঁদতে কাঁদতে)
রাহাত-কিছু তো একটা বলতে চাও নাহলে তো এমনি এমনি এই রুমে আসতে না।
আমি এবার রুমটার দিকে তাকালাম।এটা রুম টাতে আগে আমি থাকতাম আর এখন।
আমি-সরি আমি ভুলে চলে এসেছি।(বলেই রুম থেকে চলে এলাম আর বাবার রুমটাতে গেলাম)
বাবা-কিরে ঋতু কাঁদছিস কেনো?
আমি-বাবা তুমি আমার আর রাহাতের ডিভোর্সের ব্যবস্থা করো।আল্লাহ না করুক যদি বেবি হওয়ার সময় রিহা সত্যি সত্যি মারা যায় তাহলেতো।
বাবা-না কিছুই হবেনা রাহাত যদি তোকে ফিরে পেতে চায় তাহলে তুই যাবিনা এটা আমি জানি।
আমি-বাবা রিহার বাচ্চার জন্য যদি…..
বাবা-না তা আর হবেনা।তোকে আমি যখন নিজে ১৯ বছর লালনপালন করে বড় করতে পেরেছি তাহলে বাকিদিন গুলোও আমি রাখতে পারবো।
আমি-হুম বাবা।
আজ সকালে আমি সোফায় বসে ছিলাম।তখন দরজার সামনে একটা ছেলে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।
আমি-কাকে চাই?
ছেলেটা-জ্বী আমি হাসপাতাল থেকে এসেছি।
আমি-হুম বলুন।
ছেলেটা-আমি মিসেস রিহার রিপোর্টা এনেছি।
আমি-ওহ আচ্ছা আমাকে দিন।
ছেলেটা-জ্বী এই নিন।(রিপোর্টা এগিয়ে দিয়ে)
আমি ছেলেটার থেকে রিপোর্ট নিয়ে রুমে চলে আসি।আসলে আজ আমি দেখতে চাই রিহার আসলে হয়েছে টা কি।আমি তাড়াতাড়ি রিপোর্টা খুলে যা দেখলাম এতে আমি অবাক হয়ে গেলাম।
সবার সাথে খাবার টেবিলে বসে আছি অন্যমনষ্ক হয়ে।আজ আমার গলা দিয়ে যেনো কোনো খাবার নামতেই চাইছেনা।সবাই এটা লক্ষ্য করে।
রাহাতের বাবা-কি হয়েছে ঋতু খাবার খাচ্ছোনা যে।খাবারটা খেতে ভালো লাগছেনা তোমার।
আমি-না তেমন না আব্বু।কেনো জানিনা আমার কোনোকিছু খেতেই ইচ্ছে করছেনা আজকে।
রাহাতের মা-না ঋতু এই সময়ে না খেয়ে থাকতে নেই।আয় আমি আজ তোকে খাইয়ে দিই।
আমি-না আমার আসলেই খেতে ইচ্ছে করছেনা।
রাহাতের মা-৫ বছরে কত খেয়েছিলি আমার হাত এ আর খেতে ইচ্ছে করছেনা।অবশ্য আমি তোর সাথে যা করেছি তাতে আমার এটাই প্রাপ্ত।
আমি-ঠিক আছে একটু খাইয়ে দাও।
এরপর আম্মু আমাকে খাওয়ানো শুরু করলেন।সত্যি অনেক দিন পর খাবার খাচ্ছি এই হাত দিয়ে।আগে যখনি আম্মু খাইয়ে দিতো তখন মনে হতো আমার নিজের মা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে।
আর এতকিছুর পর আজও ঠিক তাই মনে হচ্ছে।
আমি-আম্মু কালকে তোমাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে তৈরি থেকো।(খেতেখেতে)
আম্মু-ঠিক আছে।
এরপর আমরা সবাই খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গেলাম ঘুমুতে।আর আমিও সেই ২ ঘন্টা থেকে ঘুমানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ঘুমই আসেনা।
তাই আমি ফোনটা নিয়ে আমার আর রাহাতের ৫ বছরে তোলা সব চবি গুলো দেখতে লাগলাম। আর চবিগুলো দেখতে দেখতে একসময় অতীতে ডুব দিলাম যখন আমাদের বিয়ে হয়।
বিয়ের স্টেজে বসে ছিলাম আমি।স্টেজে বসার আগে আমার সে যে এক কান্না।আমি বিয়ে করব না করব না করে একসময় বিয়েটা করেই ফেলি।আর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সবার ভালোবাসা পেয়ে বিয়ের উপরে থাকা ভয়টাই উধাও হয়ে গেলো।
-চলবে